ধোঁয়ার_নেশা,১২,১৩

0
808

#ধোঁয়ার_নেশা,১২,১৩
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (১২)

কাটার পর্ব কিছু দূর এগুতেই পালক হালকা নড়ে উঠে। তাতে যেন অন্ত্রীশা বেশ মজাই পাচ্ছে। পালক আবার চুপ করে গেলে অন্ত্রীশাও তার কাজ চালিয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই পালকের সাদা টি-শার্টটাকে দু টুকরো করে ফেলেছে অন্ত্রীশা। দুটো পার্টকে দুপাশে ঠেলে দিয়ে পালকের পিঠটাকে নগ্ন করে নিয়েছে। পিঠের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অন্ত্রীশা ছোট্ট করে হাসি দিলো। যে হাসির মধ্যে রয়েছে প্রাপ্তির ছোঁয়া!

পালকের পিঠে আলতো করে দুটো চুমু খেয়ে নিয়েছে অন্ত্রীশা। তারপর নিজের দুহাত পালকের পিঠে দুপাশে মেলে দিয়ে নিজেও উপুত হয়ে শুয়ে পড়লো। আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে যে কষ্টগুলো দিচ্ছেন না? সবকিছুর শোধ আমি তুলবো কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় নয় জাগ্রত অবস্থায়। আপনাকে আমার ভালোবাসার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ফাসির রায় শুনাবো। যেখানে আমি নিজেই জজ,উকিল এমন কী আমি নিজেই মক্কেল। আপনাকে সেখান থেকে কেউ ছাড়িয়ে আনতে পারবে না৷ কারো ছায়া সেখানে পড়তে দিবো না,হুহ!

কারো গরম নিশ্বাসের শব্দ পালকের ঘুমটাকে হালকা করলেও কিছুটা মাতালতা জাগিয়ে দিচ্ছে। এক ভালোলাগা সুড়সুড়ির সাথে তার অবচেতন মনকেও জাগ্রত করে দিচ্ছে। সেই অবচেতনতার মধ্য দিয়েই পালক নড়ে উঠেছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের একটা হাত দিয়ে অন্ত্রীশার বা হাত,যেটা পালকের বুক স্পর্শ করে জড়িয়ে ছিলো,সেটা টেনে নিচ্ছে। ঠোঁটের কাছটাতে নিয়ে ভোরের ঘুমজড়িত বাসি ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,

“” পত্রীকন্যা,এভাবে আমার কাছে আসতে এতো সময় কেন নিলে? জানো আমার কতটা কষ্ট হয়েছে তোমাকে ছাড়া প্রতিটা সেকেন্ড,মিনিট,ঘন্টা কাটাতে? আমি কতরাত ছটফট করেছি তোমাকে ছোঁয়ার জন্য? তোমার শরীরের উষ্ণ ছোঁয়ায় ্ জড়িয়ে নেওয়ার জন্য?””

পালক অন্ত্রীশার হাতটা নিজের চোখগুলোতে ছুঁয়িয়ে বললো,

“” জানো এই চোখগুলো কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে?””

পালকের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই অন্ত্রীশার ঘুম উধাও হয়ে গিয়েছে। চুপ করে পালকের পিঠের উপর শুয়ে থেকে পালকের কথা শুনছিলো!

“” নাহ!””

পালক অভিমানের সুরে বললো,

“” তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনি তাই না? ভালোবাসলে এভাবে আমাকে কষ্ট দিতে না। এভাবে আমাকে একা ছেড়ে যেতে পারতে না।””

অন্ত্রীশা এবার পালককে আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়েছে। ফিসফিস করে বললো,

“” আপনার পত্রীকন্যা চলে গিয়েছে তো কী হয়েছে আমি তো আছি? আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না,এই আপনার চোখ ছুঁয়ে প্রমিস করলাম! আপনি তাড়িয়ে দিলেও না।””

অন্ত্রীশার এমন কথায় পালকের হুশ ফিরলো। সাথে সাথে চোখ মেলে বললো,

“” অন্ত্রীশা তুমি? তুমি আমার উপরে কী করছো? সর বলছি। এখনি সরবে!””
“” কাবাডি খেলা তো এখনো শুরুই হয়নি!””

পালক অন্ত্রীশাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারছে না। সোফার স্পেসটা এতো বড়ও নয় যে অন্ত্রীশাকে পাশে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে পড়বে। এখন পাশে সরানো মানে ওকে উপুত করে মেঝেতে ফেলে দেওয়া।

“” অন্ত্রীশা আমি কিন্তু সরতে বলেছি,আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আমি চাচ্ছি না তুমি ব্যথা পাও।””
“” আমিতো চাচ্ছি ব্যথা পেতে! নাহলে হাডুডু জমবে কিভাবে?””

পালক রেগে যাচ্ছে,খুব খারাপভাবেই রেগে যাচ্ছে,কিন্তু সে রাগ দেখাতে পারছে না। কেন পারছে না বুঝতে পারছে না। এমন তো তার অনিকশার সাথে ঘটতো। রিলেশনে থাকার সময় প্রায় অনিকশার কাণ্ডে পালক রেগে যেতো কিন্তু কখনোই সে অনিকশাকে রাগ দেখাতে পারেনি। এতে অনিকশা যেন হতাশই বেশি হতো। ও তো মাঝে মাঝে বায়নাও ধরতো তার রাগ দেখার জন্য। কিন্তু সে কখনোই তার এই বায়নাটি পূরণ করতে পারেনি। পারবে কিভাবে? ভালোবাসার মানুষটা তার ছোট কথাতে সামান্য কষ্ট পাক,এটাও সে কখনো ভাবেনি। কিন্তু অনিকশা তো তার ভালোবাসার মানুষ ছিলো তাই রাগ দেখাতে পারেনি,অন্ত্রীশাতো তার ভালোবাসার মানুষ না,আর কখনও হবেও না। তাহলে সে কেন রাগ দেখাতে পারছে না? তাকে দেখাতেই হবে,অবশ্যই দেখাতে হবে।

পালক ভাবনায় ভাসতে ভাসতেই একপাশে কাত হয়েছে। সাথে সাথে অন্ত্রীশাও টুপ করে নিচে পড়ে গিয়েছে।

পালক সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললো

“” ইউ আর মাই ওয়াইফ,বাট নট মাই লাভ,ওকে?””
“” তাহলে আমাকে বিয়ে করেছিলেন কেন?””
“” আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করিনি,অন্ত্রীশা! তুমি নিজে থেকেই বিয়েতে রাজি হয়েছো।””

অন্ত্রীশা শ্বশুরবাড়িতে চলে আসার পর অনিকশারাও চলে আসে নিজেদের বাড়িতে। অরিদের কোনো ভাইবোন না থাকার সুবাদে শ্বশুর শাশুড়ি নিজের মেয়ের মতোই আদর করে অনিকশাকে। অনিকশাও উনাদের ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে মেয়ের মতোই উনাদের সবকিছুতেই আগলে রাখে। অরিদের বউ হয়ে না উঠলেও শাশুড়ির কাছে বেশ অল্পদিনেই অতি আদুরে বউমায়ের পদবীটা গ্রহন করে নিয়েছে। এতে অরিদের ভালোবাসা আরো দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে দেয় অনিকশার প্রতি।

শাশুড়ির মাথায় তেল দিয়ে রুমে ঢুকতেই অরিদকে বিছানার ঠিক মাঝখাটাতে বসে থাকতে দেখলো। দুগালে দুহাত দিয়ে বসে আছে। ঠোঁটদুটোও বাইরে বের করে বাচ্চাদের মতো বসে আছে৷ মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে দিবে!

“” এভাবে বিছানার মাঝখানে বসে আছো কেন? আমি কি মেঝেতে ঘুমাবো?””

অনিকশার কণঠ শোনার অপেক্ষায় যেন বসে ছিলো অরিদ। বসা থেকে উঠে এসে অনিকশাকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে।

অরিদের এমন কাণ্ডে অনিকশা বিরক্ত হলেও সাথে সাথে ভয়ের আশঙ্কাও পাচ্ছে। চার বছরের সংসার জীবনে অরিদকে এভাবে কাঁদতে দেখেনি। কখনও কাঁদেনি তা নয়৷ কিন্তু সেটা আড়ালেই ছিলো। তবে আজ এমন করছে কেন? কোনো খারাপ সংবাদ নয় তো?

অনিকশা অরিদকে সান্ত্বনার বাহানায় ভীতু কণ্ঠে বললো,

“” কী হয়েছে,অরিদ? কোনো দুঃসংবাদ?””
“” হুম! পৃথিবীর সবথেকে দুঃসংবাদ,অনি। আমি কিছুতেই এটা মানতে পারছি না!””

অরিদের কথায় অনিকশার ভয়ের আশঙ্কা আরও বেড়ে যাচ্ছে। তবে কি কারো মৃত্যু সংবাদ পেতে যাচ্ছে সে? মৃত্যুর সংবাদ ছাড়া পৃথিবীতে আর কী ভয়ংকর দুঃসংবাদ হতে পারে?

“” অরিদ,এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদা বন্ধ করে বলবে কী হয়েছে?””

অরিদ অনিকে আরো জোরে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“”কাল থেকে আগামী সাতদিন আমি মৃত থাকবো,অনি!””
“” মানে?””
“” আমার অফিসের কাজের একটা প্রজেক্টের বাহানায় সাতদিনের জন্য পঞ্চগড় যেতে হবে,অনি।””
“” ওহ! তাই বলো,আমি তো ভেবেছিলাম কিনা কী!””

অরিদ অনিকশাকে ছেড়ে দিয়ে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে বললো,

“” তোমার কাছে এটা ওহ মনে হলো? এতো ভয়ংকর একটা নিউজ দিলাম কোথায় তুমি কেঁদে কেটে গোসল করে ফেলবে,তারপর আমি তোমাকে সান্ত্বনা দিবো তা না তুমি ওহ! বলে সব শেষ করে দিচ্ছো?””

অনিকশা অরিদের কাছ থেকে সরে এসে বালিশ ঠিক করতে করতে বললো,

“” এটা মোটেও ভয়ংকর সংবাদ নয়,অরিদ!””
“” ভয়ংকর নয়তো কি? যেখানে আমি এতো বছরে তোমাকে ছাড়া একটা রাত কাটাইনি সেখানে সাতদিন,সাতরাত আমি কিভাবে কাটাবো? কাটাতে হলে তো আমাকে মৃত হয়েই কাটাতে হবে তাই না,অনি?””
“” উল্টাপাল্টা কথা বন্ধ করে লাইট অফ করে শোও। আমার ঘুম পাচ্ছে!””

অরিদ্রাকে শোয়া থেকে উঠিয়ে কোলে নিতে নিতে অরিদ বললো,

“” আজ কোনো ঘুম হবে না অনি,আজ আমরা শোক রাত পালন করবো। নাহলে আমি কাল চাকরি ছেড়ে তোমার কাছে বসে থাকবো!””
“” তুমি অরিদ্রাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?””
“” আম্মুর রুমে,তোমার মেয়ে যে দুষ্টু হয়েছে,দেখা যাবে আমাদের শোক রাতের মাঝখানে উঠে গিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিবে।””

পরপর তিনদিন আতিশের দেখা না পেয়ে পাপড়িও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে শারীরিক নয় মানসিক। মানসিক যন্ত্রনায় সে ছটফট করছে। তার উপর পাপড়ির কলও রিসিভ করছে না আতিশ! এতে যেন পাপড়ির মানসিক যন্ত্রনা তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে তিনটা দিন উনি কিভাবে থেকেছেন? উনার কি একটুও আমার কথা মনে পড়ে না? উনি নাহয় আমাকে ভালোবাসেন না আমি তো বাসি? আর আমি এটা খুব ভালো করে জানি,আপনিও জানেন আমার ভালোবাসার পরিধির কতটা!

আতিশের বাসায় পাপড়ির কখনো আসা যাওয়া হয়নি। তবে মাঝে মাঝেই ও কে কলেজে নিয়ে যাবার সময় পালক এই বাসাটা থেকেই আতিশকেও নিয়ে যেতো। সে সুত্রেই আজ পাপড়ি আতিশের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। প্রচুর ভয় পাচ্ছে। যতটুকু জানে এ বাসায় আতিশ একাই থাকে। পড়ালেখা করতেই এখানে এসে থাকা। মা, বাবা গ্রামে থাকেন।

ধীরে ধীরে বাসার ভেতরে ঢুকে গেলেও দরজায় টোকা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না পাপড়ি। বুকের ভেতরে ধকধক ঘন্টা বেজে যাচ্ছে তার। একে তো কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসেছে তার উপর আতিশের অনুমতি ছাড়া তার বাসায় চলে এসেছে,উনি কি আমাকে ধমকাবেন? যদি মাইর দেন? খুব জোরে মারবেন কি? ভাবতেই পাপড়ি ঘেমে নেয়ে ফেলছে। পরনের এস কালারের সাথে সাদা কম্বিনেশনের কলেজ ড্রেসটাও অধিকাংশই ঘেমে একাকার!

পাপড়ির ইচ্ছে হলো দৌড়ে বাসায় চলে যেতে। কিন্তু এত দূর এসেও যদি তার আতিশ ভাইকে না দেখা হয় তাহলে যে তার এতো সাহস সব বিফলে যাবে! পাপড়ি চোখ বন্ধ করে নিজের পরনের ড্রেসটা হাত দিয়ে আকড়ে ধরে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে দরজায় হাত দিতেই তা নড়ে উঠলো। দরজাটা খোলা পেয়েই পায়ে পায়ে ভেতরে এগুতেই আতিশের দেখা পেলো পাপড়ি।

মাথায় কারে হাতের আদুরে স্পর্শ পেয়ে আতিশের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে,

“” পাপড়ি,তুমি? থুক্কু তুই? তুই এখানে কী করছিস?””

আতিশের কণ্ঠে পাপড়ি ভড়কে গেলো। আতিশের মাথার কাছটাতেই বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো আতিশের মাথায়।

আতিশ শোয়া থেকে উঠে ধমকের কণ্ঠে বললো,

“” কলেজে যাসনি তুই? আর এখানে কিভাবে এলি? তাও আবার আমার রুমে? এতো সাহস তুই কই পেলি?””
“” আপনাকে দেখতে!””
“” আমাকে দেখতে মানে? আমার কি দুটে পা গজিয়েছে নাকি দুটো নাক উঠেছে যে তোকে দেখতে আসতে হবে? আজ তোকে পিটিয়ে সোজা করে দিবো। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এগুলো করা?””

পাপড়ি যতটা না ভয় পাচ্ছে তার থেকে বেশি অভিমান নিয়ে বললো,

“” আপনি আমাকে তুই করে বলবেন না,প্লিজ! খুব বাজে লাগে।””
“” তোকে তুই বলবো না তো কী বলবো? আপনি করে বলতে হবে? তুই কি রানী ভিক্টোরিয়া?””
“”এতকিছু জানিনা,আপনি তুই করে বলবেন না মানে বলবেন না ব্যস!””
“” মুখে মুখে তর্ক করছিস? তাও আবার রুমে এসে,আমার সামনে দাঁড়িয়ে? তুই জানিস আমি তোর থেকে কত বড়?””
“” না।””
“” ৮ বছরের বড়। এখন তুইই বল ৮ বছরের ছোট মেয়েকে তুই ছাড়া অন্য কিছু বলা যায়?””

পাপড়ি আতিশকে হুট করেই জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো,

“”যায়। আমাকে আপনি তুমি করে বলবেন। আপনার তুমি বলাটাতে আমি ভালোবাসা খুঁজে পাই। নিজেকে আপনার বউ বলে মনে হয়!””

পাপড়ির এমন হুট করা কাজে স্তব্ধ হয়ে যায় আাতিশ। পাপড়ি তাকে কতটা ভালোবাসে তা অনেক আগেই সে বুঝে গিয়েছিলো। কিন্তু তার প্রকট যে এতো বেশি হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি সে।

সেদিনের পালকের কথায় বেশ অভিমান হয়েছিলো অন্ত্রীশার। পালকের সাথে দুদিন ধরে কথা হয়নি তার। তার যে কথা বলতে ইচ্ছে করেনি তা না। কিন্তু কথা বলা হয়ে উঠেনি। হয়তো ভেতরে ভেতরে সংকোচবোধটা বেশি করে জেগে উঠেছে। আবার এমনও হতে পারে তার মনটা চাইছে পালক নিজে থেকে এসে তার সাথে কথা বলুক। কিন্তু পালক তার সাথে কথা বলবে কী তেমন দেখাও হয় না। অফিসের কাজে সকালে বের হয়ে, আসে মাঝরাতে। ইচ্ছে করেই দেরি করে আসে? নাকি সত্যি কাজের ব্যস্ততা। তা বুঝা হয়ে উঠেনি অন্ত্রীশার।

আজ হঠাৎ দুপুরের দিকে পালককে বাসায় চলে আসতে দেখে বেশ অবাকই হলো অন্ত্রীশা। খুশিও হয়েছে। আজ সে তার চুমুবাবুর রাগ ভাংগাবে।নিশ্চয় ভাংগাবে।

অন্ত্রীশা ওয়াড্রভ থেকে একটা শাড়ী বের করলো। গুনগুন করতে করতে গোসল ছেড়ে বের হতেই নাকে সিগরেটের উদ্ভট গন্ধ এসে বাড়ি খাচ্ছে। গন্ধের পথ ধরে বারান্দার যেতেই দেখলো পালক এক হাত দিয়ে বেলকনির গ্রিলটা চেপে ধরে আছে। অন্য হাতে সিগারেট! এতোদিন পর পালকের হাতে সিগরেট দেখে অন্ত্রীশা বিস্মিত। পালকের কাছে গিয়ে বললো,

“” আপনার সিগারেট খাওয়ার কারণটা জানতে পারি?””

পালক মাথা ঘুরিয়ে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই অন্ত্রীশা ভয় পেয়ে গেলো এক কদম পিছিয়ে গিয়েছে। পালকের চোখদুটো লাল টকটক হয়ে আগুন ধরছে।

অন্ত্রীশা পুনরায় প্রশ্ন করার জন্য ঠোঁট নাড়াতেই পালক ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়েছে। নিজের ধোঁয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার তাড়নায় থাকলেও আজ সে ব্যর্থ হলো। অন্ত্রীশা নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে পালককে ছাড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। ওর ডান গালে!

চলবে

#ধোঁয়ার_নেশা

#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১৩)

অন্ত্রীশার এমন হুট করে হাইপার হয়ে যাওয়াটা হজম করতে পারছে না পালক। একটু আগে তার সাথে কী হয়েছে বুঝার আগেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” আপু,তুমি?””

পালকের সাথে সাথে অনিকশাও হতভম্ব। অন্ত্রীশার এমন কঠিন রুপ সে আগে কখনও দেখেনি। হঠাৎ কী এমন হলো যে সে পালককে চড় মেরে বসেছে? স্বামী তার বউকে চুমু খাবে এটাই স্বাভাবিক,এতে এতো রাগের কী আছে? তবে কি অন্ত্রীশাও বুঝতে পেরেছে পালক তাকে ভালোবাসে না???

অনিকশা দরজার কাছটাতে দাঁড়িয়েই পালকের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ত্রীশার ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নটা যেন তার কাছে পৌঁছোয়নি। অন্ত্রীশা দরজার কাছটাতে এগিয়ে গিয়ে বেশ স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,

“” আপু,তুমি কখন এলে?””

এতো কাছ থেকে অন্ত্রীশার ডাকে এবার অনিকশা অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। কিছুটা আনমনা হয়েই বললো,

“” এইদিকে একটা কাজে এসেছিলাম তাই ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।””
“” ওহ! আচ্ছা।””

কিছুক্ষণ আগেও যে মেয়েটা রাগে ফেটে যাবার উপক্রমে ছিলো সেই মেয়েটার এতো ঠান্ডা মেজাজটা অনিকশার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে। অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” তুই ঠিক আছিস তো,বোন?””
“” আপু,তুমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসো আমি আসছি!””

অনিকশাকে রেখেই অন্ত্রীশা আবার জোরে জোরে কদম ফেলে নিজের রুমের দিকে ছুটছে। পালক এখনও বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে আছে,হাতে জ্বলন্ত সিগরেট! যেটা আগুনের রেখা ফুটিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিচ্ছে!

অন্ত্রীশা পালককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পুনরায় পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে বসে পালকের গালে।

“”ইচ্ছে করছে আপনাকে আরো কয়েকটা থাপ্পড় মারি। পৃথিবীতে যতগুলো সিগারেট আছে ততগুলো থাপ্পড় মারি। লজ্জা করে না অন্যের জন্য সিগারেট খেয়ে আমাকে বিষাক্ত করতে? আর কখনও যদি এই দুর্গন্ধ জিনিসটা ছুঁয়ে আমাকে ছুঁতে আসেন তাহলে এই সিগারেটের মতো আমিও আপনাকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিবো!””

অন্ত্রীশা নিজের বক্তব্য পেশ করে হনহন করে বেরিয়ে এলো।

একটা মেয়ের কাছ থেকে পরপর তিনটা থাপ্পড় খেয়েও এতোটা শান্ত কী করে আছে বুঝতে পারছে না পালক। তার তো রাগ করা উচিত,এমন রাগ যে রাগে অন্ত্রীশা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কিন্তু তার কেন রাগ হচ্ছে না? কেন সে অন্ত্রীশার হাতটা শক্ত করে ধরতে পারেনি? কেন সে অন্ত্রীশার চড়ের বিপরীতে সেও চড় মারতে পারেনি? তবে কি সে চাইছিলো অন্ত্রীশা তাকে মারুক? মারতে মারতে তাকে শেষ করে দিক? কিন্তু কেন?

“” পাপড়ি ছাড় আমাকে। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। এমন গায়ে পড়া মেয়েগুলো আমার একদম পছন্দ না!””
“” না ছাড়বো না। আপনি আমার কল রিসিভ করেননি কেন? এই তিন দিনে আমার কী অবস্থা হয়েছে জানেন? আমি মানসিক সিক হয়ে পড়েছি। কাউকে কিছু বলতেও পারছিলাম না।””

পাপড়ি তার অভিমানির কথার সুরের সাথে আতিশকে আরো বেশি করে জড়িয়ে নিচ্ছে। পারলে সে আতিশের মধ্যে ডুকে যায়।

পড়ালেখা আর চাকরির টেনশনে আতিশের জীবনে কোনো মেয়ের আগমন ঘটেনি। যেহেতু কোনো মেয়েকে নিয়ে তার চিন্তার রাজ্যে চিন্তারা বিচরণ করেনি সেহেতু কোনো মেয়েকে ছোঁয়াও তার দ্বারা সম্ভব হয়নি। আর এভাবে জড়িয়ে ধরাও সে কল্পনা করেনি। তাই এমন হুট করে পাপড়ির জড়িয়ে ধরাটা আতিশের ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। পাপড়ির ঘেমে যাওয়া শরীর থেকেও এক অদ্ভুত ভালো লাগার সুঘ্রান পাচ্ছে সে। ভেতরে ভেতরে অনেক কিছুই ভালোমন্দ করার চিন্তাভাবনারাও জমা হচ্ছে। সে চাইলেই যে এই বদ্ধ ঘরে অনেক কিছুই করতে পারে এটাও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। এই মুহুর্তে পাপড়ির মধ্যে ভালোমন্দ আলাদা করার বোধশক্তি নেই। সে এখন আতিশের ভালোবাসা চায়। আতিশের ভালোবাসায় ডুব দিতে চায়।

নিজের জাগ্রত হওয়া পুরুষত্বকে বিসর্জন দিয়ে পাপড়িকে ছাড়িয়ে নিলো নিজের থেকে। আতিশ চায় না এই ছোট্ট পবিত্র মেয়েটার শরীরে কোনো কলংকের দাগ বসাতে। ও কে ভালোবাসারই কোনো যোগ্যতা নেই নিজের মধ্যে তাহলে তাকে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে কিভাবে জড়াবে? আর পালক? পালক কি কখনো মানবে এটা? বন্ধু হওয়ার সুবাদে সে তো জানে আমি কেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ এখানে এসে থেমেছি?? কোনো ভাই চায় না তার বোনকে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন পরিবারে বিয়ে দিতে। সব ভাই চায় তার বোনটাকে একটা রাজপ্রাসাদের রানী বানিয়ে দিতে। যেখানে সে সুখ দুখের গল্প করতে করতেই দিনরাত পার করে দিবে। আর পাপড়ি? দেখতেও তো কোনো রাজকুমারীদের চেয়ে কম নয়!

আতিশ বেশ ঝাঝালো কন্ঠে ধমকিয়ে উঠলো পাপড়িকে,

“” তোর লজ্জা করে না আমাকে জরিয়ে ধরতে? তোর কি মনে হয় তোর মতো পিচ্ছি মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? এক রাত আদর করলে পরের রাতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তোর মতো শুটকি মেয়ে কখনোই আমার বউ হতে পারে না। আমার তো নাদুসনুদুস বউ চাই। আর তুই তো বয়সেও অনেক ছোটো। দেখা যাবে তোকে শিখাতে শিখাতে বাসর রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে গেছে। পরে তো আমার বাসর রাতও করা হবে না। সব থেকে বড় কথা তুই পালকের বোন মানে আমারও বোন। এক্ষুনি বাসায় যাবি নাকি আমি পালককে তোর কীর্তিকলাপ দেখানোর জন্য ডেকে আনবো?””

আতিশের কথায় পাপড়ি ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চোখে পানি টলমল করছে। মনে হচ্ছে চোখের দুটো পাপড়ি এক হওয়ার সাথে সাথে পুরো পৃথিবী ডুবে যাবে।

“” এখনো দাড়িয়ে আছিস কেন? আমার কথা কি তোর কানে ঢুকেনি?””

পাপড়ি অসহায়ভঙ্গিতে আতিশের হাতটা চেপে ধরে বললো,

“” আমি আপনার বোন না বউ হতে চাই। আমি সব শিখে নিবো। আমি বেশি বেশি খেয়ে মোটা হবো। আপনি যা বলবেন তাই শুনবো তবুও আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিয়েন না প্লিজ! আমি এ অবস্থায় বাসায় যেতে পারবো না। দেখুন আমি তো এখনি নিশ্বাস নিতে পারছি না। আর আপনি না থাকলে নিশ্বাস কিভাবে নিবো? আমি আপনাকে ভালোবাসি আতিশ!””

পাপড়ির মুখে ভালোবাসি কথা শুনতেই ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে আতিশ। কিছুটা উগ্র হয়ে বললো,

“” তুই যদি এক্ষুনি আমার সামনে থেকে না যাস,তুই আর কোনোদিনও আমার মুখ দেখতে পারবি না। কোনোদিনও না।””

আতিশ উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে। তারও যে এখন পাপড়ির মতো নিশ্বাস আটকে আটকে আসছে! তারও যে চোখ ভিজে আসছে। তারও যে বুকের ভেতরে জ্বলেপুরে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সমুদ্রের অথৈ জলে ডুবে মরে থাকতে। আর কত সে নিজের ব্যর্থতা বয়ে বেড়াবে? ব্যর্থতার গ্লানি টানতে টানতে সে আজ নিশ্ব হয়ে গেছে। একেবারে নিশ্ব হয়ে গেছে। আজ তার আফসোস হচ্ছে খুব বেশিই আফসোস হচ্ছে,তার গরীব ঘরে জন্ম নেওয়ার জন্য।

“”তুমি কি কিছু বলবে? নাকি এভাবে হনুমানের মতো তাকিয়ে থাকবে? আমি কল কেটে দিলাম।””
“” এই না না,অনি। তুমি এখন কল কেটে দিলে আমি বিষ না খেয়েও মরে যাবো। পরে,দেখবে নিউজ পেপারে প্রথম পৃষ্ঠায় আমার ছবি দিয়ে শিরোনাম দিয়েছে,বউয়ের ভিডিও কল কেটে যাওয়ায় বিষপানহীন যুবক মৃত!””
“” এইসব ফালতু ফালতু কথা তুমি কোথায় পাও অরিদ? শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।””
“” আজ দুদিন পর তুমি আমাকে কল দিলে তাও ভিডিও কল,এই রাগ দেখানোর জন্য? আমিতো ভাবলাম তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে না পেরে এতক্ষনে পাগল হয়ে গেছো। যেমনটা আমি।””
“” আবার?””
“” আচ্ছা সরি বউ। এতো রাগ করো কেন? আমি যে তোমাকে ঘন্টা ঘন্টায় কল দিচ্ছি,ভিডিও অডিও,মেসজ,কোনোটারই তো রিপলাই করো না। আজ নিয়ে তিনদিন হলো তোমাকে ছেড়ে পঞ্চগড়ে পড়ে আছি। তিনদিনে মাত্র তিনবার কথা হয়েছে তোমার সাথে তাও পাঁচ মিনিটের বেশি হবে না। এতো ব্যস্ততা কী নিয়ে জানতে পারি?””
“” আমার কি এখন তোমার কাছে জবাবদিহি করতে হবে অরিদ?””
“” আরে,তুমি তো আবার রেগে যাচ্ছো। আচ্ছা এসব বাদ। একটা চুমু দাও না লক্ষী বউ!””

অনিকশা অরিদের আবদারকে তোয়াক্কা করেই বললো,

“” তুমি আসবে কবে?””
“” তুমি বললে আমি এখনি চলে আসবো। আসবো অনি?””
“” তোমার কাজ শেষ?””
“” না। কিন্তু তোমাকে কষ্ট দিয়ে কাজ করতে মন চাইছে না। অনি, আমি চাকরিটা ছেড়ে চলে আসি?””
“” আসো। আমিও সবকিছু গুছিয়ে অরিদ্রাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো।””

অনিকশার এমন উত্তরে অরিদের মুখটা চুপসে গিয়েছে। মন খারাপ করে বললো,

“” আচ্ছা আসবো না।””

অরিদের অমন মন খারাপ হওয়া মুখটা অনিকশার দেখতে ইচ্ছে করছে না। কলটা কেটে দিবে ভেবেও কাটলো না। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললো,

“” খেয়েছো?””
“” হুম! তুমি খেয়েছো বউ?””
“” সত্যি খেয়েছো?””
“” না।””
“” তাহলে মিথ্যে বললে কেন?””
“” নাহলে তুমি খাওয়ার বাহানা দিয়ে কল কেটে দিবে। তোমাকে তো আমি চিনি। সবসময় আমাকে দূরে রাখার কৌশলে ডুবে থাকো। এতদিন পর কল দিলে অথচ আমার দিকে একটু ভালো করে তাকালেও না। তাকালে ঠিক বুঝতে পারতে,তোমার থেকে দুরে থেকে এই তিনদিনেই আমার কী হাল হয়েছে! আমার বোধহয় আর, এই জন্মে তোমার ভালোবাসা পাওয়া হবেনা,অনি!””

অরিদের কথাগুলো অনিকশার শরীরে কাঁটা হয়ে বিঁধছে। অসহ্য ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। কাঁটাগুলো কি শরীর ভেদ করে তার হৃদপিন্ডেও ঢুকে গেছে? হয় তো তাই হবে। নাহলে চামড়াই ব্যথা না হয়ে হৃদপিন্ডে ব্যথা অনুভব হচ্ছে কেন?

কে বলেছে সে অরিদকে দেখেনি? দেখেছে,খুব ভালো করে দেখেছে। এই যে ছেলেটা না খেয়ে,না ঘুমিয়ে চোখের নিচে গর্ত করে ফেলছে এটাও সে ভালো করে দেখেছে। তার ফর্সাগালগুলো যে রোদে পুরে কালচে হয়ে গেছে,এটাও সে দেখেছে,তার ঠোঁটগুলো যে শুকিয়ে বিবর্ন হয়ে গেছে এটাও সে দেখেছে। কিন্তু সে যে দেখেছে এটাই তো দেখেনি অরিদ। এখানেই তো ফারাক রয়ে গেলো। বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে অনিকশার। তার ভেতরটাও যে অরিদের জন্য পুড়ে সেটা কি সে কখনো প্রকাশ করতে পারবে না? কোনোদিনও না? আর কত মানুষটাকে এভাবে দূরে রাখবে???

“” কী গো,ক্যামেরা অফ করে রাখলে কেন? ভালোবাসা দিবে না বলে একটু দেখতেও দিবে না? এমন করলে কিন্তু সত্যি সত্যি আমি সব ছেড়েছুঁড়ে চলে আসবো। আমি আর এভাবে থাকতে পারছি না। একটু দূরে এসেছি বলে তুমি বেশি বেড়ে গেছো না? শুনেছি ভালোবাসার গভীরতা বাড়াতে মাঝে মাঝে নাকি প্রিয় মানুষের কাছ থেকে দূরে আসতে হয়। আমিতো তাও করেছি এবারও কি তোমার ভালোবাসা পাওয়া থেকে ব্যর্থ হবো? অনি? ও অনি,বউ ক্যামেরাটা অন করো না।””
“” সারাক্ষণ ভালোবাসা ছাড়া তোমার কি আর কোনো কথা নেই? করবো না অন। তুমি এভাবেই থাকো।””
“” যার যেটার অভাব সে তো সেটার পিছনেই ছুটবে,অনি! এতো রাগ না? এবার এসে নেই না। তোমার সব রাগ আমি বস্তায় ভরে রেললাইনে রেখে আসবো। রেলগাড়ি পিষে দিয়ে যাক, আমার অনির সব রাগ!””
“” আমি রাখলাম!””
“” অনি!””
“” হুম!””
“” আমি আর এভাবে তোমার অবহেলা নিয়ে থাকতে পারছি না। তুমি কী করবে আমি জানি না। কিন্তু আমার অনির ভালোবাসা আমার চাই। ফিরে এসে যেন আমি আমার অনিকশা,আমার বউকে পাই। যার মধ্যে গিজগিজ করবে অরিদের জন্য ভালোবাসারা!””

অরিদ তার কথা শেষ করে টুপ করে লাইন কেটে দিয়েছে। সে জানে এখন লাইন না কাটলেও অনিকশা লাইন কেটে দিতো। সবসময় তার ইচ্ছে রাখবে না সে। এখন থেকে আমার ইচ্ছাও তোমাকে রাখতে হবে অনি। রাখতেই হবে!

অনিকশাকে বিদায় দেওয়ার পর পালকের সাথে আর কোনো কথা হয়নি অন্ত্রীশার! সে চায়ও না কথা বলতে! যেকোনো জিনিসেরই একটা সীমনা থাকে। কিন্তু পালক সেটারও অতিক্রম করে ফেলেছে। যে জিনিসটার ধারে কাছেও কখনো যাই না অথচ তার ধোঁয়াই কি না আমার পেটে দিবে? কেন আমি কী করেছি উনাকে? সবসময় আমার সাথে এমন কেন করবেন উনি? এমনি এমনি তো একটু কথাও বলতে আসে না যখন আসবে তখন তাকে ধোঁয়া নিয়ে আসতে হবে? তাও আবার অন্যের সামনে? এমন হুটহাট চুমু খেয়ে বসে যে আপু দেখে ফেলে! আমি নাহয় জানতাম না উনি চুমু খাবেন কিন্তু উনিতো জানতেন? তাহলে দরজাটা লাগিয়ে আসলে কী হয়? উনার নাহয় লজ্জা বলতে কিছু নেই,কিন্তু আমার তো আছে? বড় আপু হয় আমার। আমার আপু মানে তো উনারও আপু তাই না???

শুয়ে একমনে হাজারও ভাবনায় ডুবে থাকলেও এবার যেন তার টনক নড়ে উঠেছে। শোয়া থেকে উঠে বসে পড়লো অন্ত্রীশা। আবার বিড়বিড় করে বললো,আরে তাইতো,এই ব্যাপারটা তো আমার মাথায় কখনো আসেনি। উনি যখনই আমার কাছে তখনি আপু চলে আসে। এটা কি সত্যি এক্সিডেন্টলি ঘটে নাকি কারো ইচ্ছাকৃত সাজানো ঘটনা?

টেনশনে অন্ত্রীশা বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। পায়চারি করতে করতে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকে পরপর সাজিয়ে নিচ্ছে। খুটে খুটে সব বুঝার চেষ্টা করছে। অজান্তেই অন্ত্রীশার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো,তবে কি আপুর সাথে পালকের??? ওহ মাই গড! এটা কী করে হতে পারে? না আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না!

পালক সোফাতে শুয়ে শুয়ে অন্ত্রীশার কর্মকান্ড দেখছিলো। একবার বসছে তো আরেকবার শুয়ে পড়ছে। আবার শোয়া থেকে উঠে পায়চারি করছে। তো আবার গিয়ে বসে পড়ছে। এক পর্যায়ে অন্ত্রীশা জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতেই পালক বেশ অবাক হলো। হয়েছেটা কী এর?

অন্ত্রীশা সারারাত ছটফট করে কাটিয়ে দিয়েছে। সারারাতে একটা মিনিটের জন্যও চোখ বন্ধ করতে পারেনি সে। নানান প্রশ্ন তাকে জর্জরিত করেছে । আর এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই সকাল সকাল অনিকশার বাসার উদ্দশ্যে রওনা দিয়েছে অন্ত্রীশা!

“” অনতি,তুই?””
“” এমন চমকে গেলে যে, আপুর বাসায় কি বোন আসতে পারে না?””

অনিকশা মুখে হাসি ফুটিয়ে অন্ত্রীশাকে ভেতরে এনে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো,

“” তা না। বিয়ের পর তো এই প্রথম আমাদের বাড়ি এলি,তাও না জানিয়ে,তাই একটু অবাক হয়েছি।””
“” অরিদ ভাইয়ার কী খবর? অরিদ্রাকে দেখতে পাচ্ছি না যে?””

ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে অন্ত্রীশার পাশে এসে বসেছে অনিকশা। ঠোঁটে আগের হাসিটা এখনো লেগে আছে।

“” ওর দাদা দাদির সাথে হাঁটতে বেড়িয়েছে। তুই তো ঘেমে গোসল করে ফেলেছিস। একটু বোস আমি সরবত বানিয়ে আনছি।””

অনিকশা উঠতে নিলেই অন্ত্রীশা ওর হাত চেপে ধরে বললো,

“” আপু,তোমার সাথে আমার কথা আছে৷ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা। একটু বসবে প্লিজ?””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here