ধোঁয়াশা,২য় পর্ব

0
1140

ধোঁয়াশা,২য় পর্ব
সাহেরা_খান
লকড_রুম_মিস্ট্রি_থ্রিলার

ওসি সাহেব ভীষণ বিরক্ত বোঝাই যাচ্ছে। তিনি পুনরায় তল্লাশি করার জন্য নিজেই ভিতরে প্রবেশ করেন। আরেকবার পার্থর সাথে কথা বলার জন্য ম্যানেজার সাহেবকে বললেন,

‘মি. পার্থকে ডেকে নিয়ে আসুন।’

ওসি সাহেব নিজে ভিতরে প্রবেশ করে পুরো ঘর খুঁটিয়ে দেখলেন। বাথরুমে ঢুকতেই দেখলেন শুধু দেয়াল না, পুরো ফ্লোরও যাচ্ছেতাই অবস্থা করে রেখেছে। নিজেও খোঁজ করলেন কিছু পান কি না। কিন্তু কোনো ক্লু না পেয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবলেন। ভাবনা থেকে অন্য রাস্তা মাথায় আসতেই বেরিয়ে আসলেন। ততক্ষণে পার্থও এসে গেছে৷ ওসি সাহেব ঠান্ডা মাথায় তাকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘আপনার বাবাকে কেন খুন করলেন মি.পার্থ?’

ওসি সাহেব প্রশ্নটি করে পার্থকে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। পার্থের মুখভঙ্গি দেখে হয়তো কিছু আন্দাজ করা যেতে পারে। তবে কথাটি শুনে পার্থের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। মুখটা রাগে লাল হয়ে যাচ্ছিল। একে তো নিজের বাবাকে হারিয়েছে তারপর ওসি সাহেব ওকেই খুনি সাব্যস্ত করছে। চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করল সে। এমনভাবে তাকাল মনে হলো চোখ দিয়ে অগ্নি নির্গত হচ্ছে। ও উত্তর না দিয়ে নিজেও ঠান্ডা মাথায় প্রশ্ন করল,

“সন্দেহ করা দোষের কিছু নয় অফিসার। এরকম ঘটনা অহরহ ঘটে আমি জানি। কিন্তু এভাবে সরাসরি আমাকে খুনি সাব্যস্ত করে ফেললেন কেন? কোন যুক্তিতে? নিশ্চয় ব্যাখ্যা দেবেন আপনি। আমি আপনার ভুল ধারণা নিজ দায়িত্বে ভেঙে দেবো।”

অফিসার হাসলেন। তিনি বললেন,

“আপনি খুব চালাক মি. পার্থ। অনেক বেশি ম্যাচিউরড আসলে। তবে আপনার কী মনে হয়? আমরা জানতে পারব না? আসল খুনি কে? ভালোয় ভালোয় বলছি, স্বীকার করে নিন। আপনি ছাড়া আর কাউকে পাচ্ছি না যে বন্ধ ঘরে সাত্যকি বাবুকে খুন করবে।”

তিনি আরো একটু ভেবে বললেন,

“আপনি একমাত্র কাছের লোক ছিলেন যার দ্বারা কাজটি করা সম্ভব। এছাড়া অন্যদের কোনো মোটিভ পাচ্ছি না। আপনার বাবার ওপর কীসের রাগ ছিল?”

পার্থ অফিসারের ছেলেমানুষী কথা শুনে হেসে খুন। ও তাচ্ছিল্যের সাথে বলল,

“আপনার এরকম ভাবনা কেউ শুনলে বাংলাদেশ পুলিশের ওপর থেকে তাদের আস্থা উঠে যাবে৷ কাল রাতে আমি ড্যাডের সাথে জন্মদিন উদযাপন করলাম আর সেই আমি কি না তাকে খুন করব? তা-ও কি না বন্ধ ঘরে! কেমনে সম্ভব। আপনি কোন অ্যাঙ্গেল থেকে এরকম কথা বলছেন?”

ওসি সাহেব খুব আস্তে করে বললেন,

“খুব সহজ। আপনার বাবার নিশ্চয় রুমের এক্সট্রা চাবি থাকবে বা নিজেই চাবি বানিয়ে রেখেছিলেন। তারপর লক খুলে ভিতরে প্রবেশ করে আপনার বাবাকে খুন করেছিলেন।”

ওসি সাহেব এর ঠুনকো যুক্তি শুনে পার্থ হতাশ হয়ে বলল,

“এক্সট্রা চাবি ড্যাডের কাছেই থাকে। অন্য কারো কাছে রাখেননি। এমনকি আমার ঘরের চাবিও অন্য কারো কাছে নেই। আর আপনার অজ্ঞতা এটাই যে, ড্যাড শুধু লক নয় দরজার ছিটকিনিও লাগিয়ে রাখেন। ধরেন আমি চাবি দিয়ে লক খুলেছিলাম বুঝলাম, কিন্তু ছিটকিনি কে খুলে দেবে?”

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মিস্ত্রি নিজে থেকেই বলল,

“স্যার, ছিটকিনি আমাগো ভাঙ্গা লাগছে। দরজায় তাকায় দেহেন।”

ওসি সাহেব ঘরে ঢোকার উত্তেজনায় খেয়াল করেননি বিষয়টি। এবার নিজেই বোকা বনে যাচ্ছেন। তিনি এরকম বেকুব বনে যাওয়ায় নিজের ওপর হতাশা প্রকাশ করলেন। কোনো সম্ভাবনা না থাকায় বিরক্তি চোখে অন্যদের বললেন,

“তল্লাশি চালান। ঘরের প্রতিটি কোণা দেখবেন। আগে মি. পার্থর রুম চেক করেন।”

বুয়া ইতস্ততভাবে কিছু বলতে চাইলো। সেটা খেয়াল করে ওসি সাহেব বললেন,

‘আপনি কিছু বলবেন?’

বুয়া সাহস পেয়ে উত্তর দিলো,

“ছুডু সাহেবের কুনু দোষ নাই। আমি রাইত তিনডা তামাত জাগনা আছিলাম। বড়ো সাহেবের ঘর তো টেবিলত সামনে পড়ে। বেবাক সময় আমি এইহানেই আছিলাম। ছুডু সাহেব গ্যালে দেখতাম না এডি!”

ওসি সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন,

“খুন কয়টায় হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসুক তখন বোঝা যাবে।”

ওসি সাহেব এর সন্দেহ করাটা কারো কাছে অমূলক লাগেনি। তবে পার্থ হতাশ হয়ে বসে পড়ে। শোকে সে পাথর হয়ে যাচ্ছে। বুকের বাঁ পাশটায় চিন চিন ব্যথা হচ্ছে। ও মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে। এই কান্না যে কোনো অভিনয় নয় তা অন্তত ওসি সাহেব বুঝতে পারছেন। মনে মনে নিজের ওপর অসন্তুষ্ট হলেও সান্ত্বনা দিলেন। আইনের চোখে সবাই সমান যতক্ষণ না নির্দোষ প্রমাণিত হবে।

*
সবাই পার্থের রুমে ভীড় করে। এক এক করে সবকিছুই এলোমেলো করে ফেলে। পার্থের ঘরে এমন কোনো কিছুই মেলেনি যা দিয়ে তাকে দোষারোপ করা যায়। সেখান থেকে এসে সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন সবাই। কিন্তু কোনো ক্লু পাওয়া গেল না। পার্থর ঘর শেষে অন্য ঘরেও খোঁজ করা শেষ হলো। সবাই হতাশ হয়েই ফিরে এলো।

ড্র‍য়িং রুমে বসে ওসি সাহেব আবার আলোচনায় বসলেন। পার্থকে জিজ্ঞেস করলেন,

“আপনার কি কাউকেই সন্দেহ হয় না? একটু ভেবে বলেন। হয়তো কোনো পারিবারিক শত্রু আছে। অনেক আগে কোনো ঘটনা ঘটেছিল যার জন্য প্রতিশোধ নিয়েছে এখন। অথবা কখনো কোনো লোকের কথা বলেছে কি না আপনার বাবা, যার থেকে বিপদের আশঙ্কা ছিল।”

পার্থ বোকার মতো তাকিয়ে থাকল। বাবার সাথে এতটা ঘনিষ্টতা ছিল না তার। আলোচনা করবে এসব বিষয় নিয়ে সেরকম সুযোগ ছিল না। নিজে ব্যস্ত ছিল লেখাপড়া নিয়ে। আর তার বাবা ছিল ব্যবসায় নিয়ে। এতে টুকটাক যেটুকু কথা হতো তা-ও সাধারণ কথা। ও হতাশ হয়ে বলল,

“বাবার সাথে এতটা ঘনিষ্টতার সুযোগ ছিল না। আমরা দুজনেই ব্যস্ত থাকতাম নিজেদের কাজে। এরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি কখনো। সব সময় স্বাভাবিকই ছিল।”

ওসি সাহেব ম্যানেজার এর দিকে তাকিয়ে বললেন,

“আপনি অন্তত আমাদের সাহায্য করেন। কিছু তো বলেন। এত বড়ো একজন ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি, অথচ চিহ্নিত শত্রু থাকবে না তা হয় না কি!”

ম্যানেজার সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

“এত বছরে আমি এরকম শত্রু সত্যিই দেখিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ঠিকই তাই বলে খুন করে রাস্তা পরিষ্কার করার মতো কাউকে পাচ্ছি না।”

ম্যানেজারের কথায় যারপরনাই বিরক্ত হলেন ওসি সাহেব। তার মস্তিষ্কে বিচরণ করছে হাজারটা প্রশ্ন। কারো কাছে কোনো ক্লু নেই এটা কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি! এতটা নিখুঁত খুন কখনোই সম্ভব নয়। কিছু না কিছু তো আছেই। ম্যানেজারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললেন,

“মাথায় চাপ দিন, ভেবে বের করুন। দ্রুত ক্লু লাগবে আমার।”

ম্যানেজার সাহেব নিরুত্তাপ দাঁড়িয়ে রইলেন।

ম্যানেজারের এই অপরিবর্তনীয় মুখাবয়ব চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে ওসি সাহেবকে। আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করেও, কারো কোনো সহযোগিতা না পেয়ে তিনি তার দলকে নির্দেশ দিলেন থানায় ফিরে যেতে।

পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট হাতে আসলে যদি কিছু বোঝা যায়। তবে তিনি হতাশ হয়ে আফসোস করে বললেন,

“যদি ছুরিটা পাওয়া যেত তাহলে ভালো হতো। কিন্তু খুনি অনেক সতর্ক। কোনো ক্লু রাখেনি। না কোনো ছাপ আর না হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি।”

এস আই অর্ণব গম্ভীর গলায় বলল,

‘যদি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যেত ঘরের ভিতর, তাহলে সমাধান হতো সহজে।’

ওসি সাহেব কথাটি শুনে বললেন,

“ভালো কথা মনে করেছেন। ভিতরে না শুধু, বাইরেও তল্লাশি চালান। রাস্তার মধ্যে যতগুলো সিসিটিভি আছে, ফুটেজ সংগ্রহ করেন সেখান থেকে। দেখেন সন্দেহজনক কাউকে পাওয়া যায় কি না।”

এস আই অর্ণব বেশ খুশি হয়ে আশ্বস্ত করলেন। ওসি সাহেব সবাইকে নিয়ে থানায় ফিরে আসেন। তিনি প্রথমেই কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরি হয়েছে কি না। ল্যাবের ডাক্তার রাতের মধ্যে দিতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

ওসি সাহেব বেশ মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাবতে আরম্ভ করলেন। তিনি একটি নোটস বানালেন। কর্মপদ্ধতিগুলো নিজের মতো করে লিখে রাখলেন। ঠিক সেভাবেই এগিয়ে যেতে চান। সাত্যকি বাবুর বড়ো কোনো শত্রু আছে কি না তার খোঁজ নিতে হবে। কোনো আশ্চর্যজনক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে কি না তা-ও খোঁজ নেওয়া দরকার। বিজ্ঞান কি এমন কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে? যা দিয়ে বন্ধ ঘরে ঢুকে কোনো প্রমাণ না রেখে নির্দ্বিধায় বেরিয়ে আসতে পারে। মাথা নাড়ালেন তিনি, নিজের মনেই বললেন, “নাহ্, এরকম কিছু হলে জানতে পারব না? এত উন্নত হয়ে গেছে বিজ্ঞান যে এত বড়ো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে!”

মাথায় জট বেঁধে আছে। কিছুতেই ছাড়াতে পারছেন না। খেতে বসেও মনোযোগ দিতে পারছেন না। শুধু একটা কথায় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। না কোনো গর্ত, না কোনো ট্রাপডোর, আবার না কোনো সুযোগ আছে লক খুলে ভিতরে প্রবেশ করার। খুনটা হলো কীভাবে!

*

ওসি সাহেব গোপনে নিজস্ব খোঁজারু লাগিয়ে দিলেন, ম্যানেজার এর পিছনে। ব্যাটার ভাবগতিক সুবিধের লাগে না। নিপাট ভদ্রলোক অথচ কথায় পুরো শিয়াল পণ্ডিত ভাব। এত বছর চাকরি করেছেন অথচ ঝামেলা লাগেনি দুজনের মধ্যে, অবাক করা বিষয়! তিনি কিছু ভেবে, অন্য কাউকে কল দিয়ে নির্দেশ দিলেন, সাত্যকি বাবুর পুরো ব্যবসায়িক কার্যক্রম এর খোঁজ নিতে। তার সাথে কার ওঠাবসা ছিল বা কোনো শত্রু আছে কি না খুঁজে দেখতে বললেন। যেহেতু ম্যানেজার সাহেব কোনো তথ্যই দেয়নি। আবার সবাইকে জানিয়ে তদন্ত করলে খুনি সতর্ক হয়ে যেতে পারে। তিনি এমন ভাব করবেন যেন পুলিশ কোনো কূল কিনারা পাচ্ছে না। গোপনে তদন্ত করে যদি কিছু বের করতে পারেন। মনে মনে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে প্রতীক্ষায় থাকলেন রিপোর্ট এর জন্য।

*

এস আই অর্ণব নিজে সিসিটিভি ফুটেজ ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে হাজির হলেন। রিপোর্টটি বের করে ওসি সাহেব এর হাতে ধরিয়ে দিলেন। তিনি যত্ন সহকারে রিপোর্ট খুলে পড়া শুরু করলেন।

পড়া শেষ হতেই মুখ তুলে অর্ণবকে বললেন,

“প্রফেশনাল কোনো খুনি না। তবে তার প্রচুর রাগ ছিল সাত্যকি বাবুর ওপর। তাই সে ক্রোধে অন্ধ হয়ে ইচ্ছেমতো নিজের রাগ ঝেড়েছে। এমনভাবে আঘাত করা শুরু করেছিল তাতে সাত্যকি বাবু প্রতিহত করার সুযোগ পাননি।”

এটুকু বলে তিনি থামলেন। অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আবারও বললেন,

“করবেন-ই-বা কীভাবে! তিনি বোধহয় নিয়মিত স্লিপিং পিল সেবন করতেন। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মোট ২৯ বার আঘাত করেছে খুনি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে খুনটা হয়েছে রাত ২ টায়।”

ভ্রু কুঁচকে অর্ণব বলল,

“স্যার, ঘুমের ঔষধ কি কেউ দিতো না কি তিনি নিজে খেতেন? এই ব্যাপারে খোঁজ নিলে হয় না? অন্য কোনো গভীর ষড়যন্ত্র চলছে কি না এর ভিতর।”

ওসি সাহেব যদিও সন্দেহ করছেন না এটা নিয়ে কারণ ডোজ কম মাত্রায় ছিল। হয়তো বয়স হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেয়েছেন। যদি মেডিসিন দিয়ে খুন করবে তাহলে কষ্ট করে ছুরি ব্যবহার করত না। তারপরও তিনি তদন্তের স্বার্থে খোঁজ নিতে বললেন। এস আই অর্ণব দ্রুত বেরিয়ে গেলেন জানার জন্য।

*
রাত ৮ টা বাজে। এস আই অর্ণব এখন বসে আছে সাত্যকি বাবুর ব্যক্তিগত ডাক্তার মনোয়ারুল ইসলামের সামনে। যাবতীয় প্রেস্ক্রিপশন খুঁটিয়ে দেখছেন। কম্পিউটারে তথ্য জমা থাকায় অসুবিধে হয়নি খুঁজে পেতে। অর্ণব প্রতিটি প্রেস্ক্রিপশন দেখে ছবি তুলে নিয়ে চলে এলো।

ওসি সাহেব এর সামনে মুখ ভার করে বসে আছে অর্ণব। কোনো লাভ হয়নি। নিজের ঘুমের সমস্যার জন্য সাত্যকি বাবু প্রতিনিয়ত মেডিসিন খেতেন। ওসি সাহেব হতাশ হয়ে পড়ছেন। তিনি পুনরায় সাত্যকি বাবুর বাড়িতে খোঁজ নিতে বললেন। এছাড়া পার্থ, বুয়া, দারোয়ান সবার পিছনে লোক লাগিয়ে রাখতে বললেন। ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখার চেষ্টা করা হয় যেন। এতে যদি কোনো ক্লু পাওয়া যায়।

*
তিন দিন ধরে লাগাতার পরিশ্রম করে সব তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় খোঁজারু। ম্যানেজার এর মাধ্যমে সব তথ্য সংগ্রহ না করে অন্য কর্মকর্তার মাধ্যমে বের করল। সাত্যকি বাবুর ব্যবসায়িক পরিধি অনেক লম্বা। ১৩ টি কোম্পানি, মিল, কারখানা ছাড়াও অনেক ব্যবসায় ক্ষেত্র রয়েছে। বাঘা বাঘা লোকের সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। যাদের মোটিভ আছে তাকে খুন করার।

খোঁজারু ওসি সাহেবকে সব তথ্য পাচার করে দিলো। এছাড়া সবার ডিটেইলস দিয়ে বলেও দিলো, কার কার খুনের মোটিভ কী হতে পারে।

ওসি সাহেব এস আই অর্ণবকে নিয়ে আলোচনায় বসলেন। পার্থদের বাড়ি পুনরায় খোঁজাখুঁজি করেও লাভ হয়নি। ‘যেই লাউ সেই কদুই’ আছে। তিনি এখন পর্যন্ত পাওয়া সব তথ্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। অর্ণবও সাথে সাহায্য করে যাচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজগুলো চেক করে দেখল সে। পরিচিত লোকজন বা অচেনা মানুষ দেখেও মনে হলো না তারা কোনো কু-মতলব নিয়ে এসেছে। কাউকেই পাওয়া গেল না সন্দেহ করার মতো। সবই স্বাভাবিক ছিল। হুট করে ওসি সাহেব বললেন,

“হ্যারি পটারের আলখাল্লা আবিষ্কৃত হয়েছে না কি? না ডরিমনের দরজা বলেন তো?”

অর্ণব টাস্কি খেয়ে বোকার মতো তাকিয়ে থাকল। সে কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল,

‘কী বলছেন স্যার?’

ওসি সাহেব হেসে বললেন,

“কোনো ক্লু যেহেতু পাচ্ছি না। এজন্য মনে হচ্ছে কেউ হ্যারির আলখাল্লা পরে খুন করল কি না। আপনি দেখেননি ওটা পরে ভ্যানিশ হয়ে যেত সে? আমি তো ভীষণ মজা পাই দেখলেই। ইশ! এরকম কিছু আবিষ্কার হলে সহজে বুঝতে পারতাম।”

অর্ণবের মুখের হাসি চওড়া হলো কথা শুনে। সে হাসতে হাসতে বলল,

‘এগুলো আবিষ্কার না হোক সেটাই চাই।’

ওসি সাহেব নিজেও চান না। এমনিতেই যেভাবে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে চারদিকে। ডরিমনের দরজা বা ওয়ার্ম হোল আবিষ্কার হলে দুনিয়া আর দুনিয়া থাকবে না। শুধুই ত্রাসের রাজত্ব হবে। তিনি সব তথ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিলেন প্রত্যেকটি লোকের সাথে দেখা করার।

তিন দিন হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো কূল কিনারা না করতে পারায় সরকার থেকে চাপ দিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নিউজটি ভাইরাল হয়ে গেছে। এত বড়ো ব্যবসায়ীর নিরাপত্তা নেই আর সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে! এসব নিয়ে টিভি, পত্রিকা উঠে পড়ে লেগেছে। বুদ্ধিজীবীদের কর্মকাণ্ডে আরো যন্ত্রণা বেড়েছে। তারা তো আরেক কাঠি সরেস। বিভিন্ন সেমিনার, সভা, মিছিল করে যাচ্ছেন। মানবাধিকার সংগঠন কর্মীরা চুপ করে নেই। নিজেদের ইচ্ছেমতো গল্প সাজিয়ে যাচ্ছে। উপরমহল থেকে চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। দ্রুতই খুনিকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে বলা হয়েছে। ওসি সাহেব চরম বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন। তিনি কি কম চেষ্টা করছেন। এখনো সেই তদন্ত নিয়েই পড়ে আছেন। তিন দিন হতে চলল, বাড়ি যাননি। ঠিকমতো খাওয়া, গোসল পর্যন্ত হচ্ছে না। যে সূত্র পাচ্ছেন তা-ই বিবেচনা করে অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন। তিনি নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী খোঁজারু থেকে কল দিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। কোনো ছোটো সূত্র হলেও যেন মিস না যায়। সাথে সাথে তাকে জানাতে বলেছেন।

*

তথ্য যা-ই আসছে হাতে সব যাচাই করা হয়ে গেছে। তিনি আর কোনো কূল কিনারা না পেয়ে হতাশ হয়ে বসে পড়েন। প্রত্যেকটা সাস্পেক্টকে জেরা করা হয়েছে। তাদের পিছনে লোক লাগানো হয়েছে। কিন্তু সবাই ধোয়া তুলসীপাতা বের হয়েছে। কারোরই কোনো সন্দেহজনক আচরণ দেখা যায়নি। তদন্ত খুব জোর দিয়ে করা হয়েছে তারপরও কিছু মেলেনি।

কিন্তু হঠাৎ-ই ওসি সাহেব…।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here