ধোঁয়াশা,৩য় পর্ব
সাহেরা_খান
লকড_রুম_মিস্ট্রি_থ্রিলার
হঠাৎ-ই ওসি সাহেব ভাবলেন কেইসটা গোয়েন্দা বিভাগে ট্রান্সফার করলে কেমন হয়! যেহেতু তারা কোনো কূল কিনারা করতে পারছেন না। এতে পিবিআই এর সাহায্য নিলে হয়তো কোনো সুরাহা হবে। তৎক্ষনাৎ তিনি অর্ণবকে জানালেন কথাটা। অর্ণবও বেশ খুশি হয় সিদ্ধান্তে। এই কেইসে যতটা নাকানিচুবানি খাচ্ছে তারা আর কোনো কেইসে খায়নি। খুনি হিসেবে সন্দেহের তালিকা করতে পারলেও বদ্ধ ঘরে খুনটার কোনোরকম কোনো ক্লু মিলছে না। দুজনে তাই একমত হয়ে উপরমহলে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।
ওসি সাহেব সকল তথ্য ফাইল করে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধও জানালেন।
*
উপরমহল থেকে ব্যাপারটা বিবেচনা করে কেইসটি পিবিআই এর নিকট হস্তান্তর করা হয়। নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে একজনকে নির্বাচন করা হয়। সদ্য যোগদান করা গোয়েন্দা কর্মকর্তা প্রথম কেইসটি হাতে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়। কর্মস্থলে ঢোকার সাথেই এত বড়ো একটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি সে।
৩০ বছর বয়সী যুবকটি লেখাপড়া শেষ করে শখের বশে এই পেশায় নিয়োজিত হয়। নানারকম রহস্য উদঘাটনের প্রতি ঝোঁক সেই ছোটো বেলা থেকে। গোয়েন্দা বই, মুভি, নাটক দেখে তারও ইচ্ছে জাগে গোয়েন্দা হওয়ার। লেখাপড়া শেষ করে ট্রেইনিং এর মাধ্যমে এখন সে পরিপূর্ণ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। মেধা, পরিশ্রম এর মাধ্যমে নিজের জায়গা তৈরি করে নিলেও, এখন তার কাজের মাধ্যমে সেই স্থান ধরে রাখার পালা। চ্যালেঞ্জ নিতে সে ভীষণ পছন্দ করে। কেইসটা ডিটেইলস পড়ে কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করে নেয়। অনেক পছন্দ হয়েছে তার। ভীষণ আগ্রহী হচ্ছে সে। বন্ধ ঘরে খুন হয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অথচ কোনো ক্লু বা খুঁত রাখেনি খুনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে খুনি প্রফেশনাল না। তাহলে এতটা নিখুঁত কাজ কীভাবে করল! পুরো তথ্য মাথায় গেঁথে নিয়ে চলল থানার উদ্দেশ্যে। নিজের কাজ যত দ্রুত শুরু করবে, তত দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছাবে। থানা থেকেই শুরু করা উচিত মনে করল সে। ওসি সাহেব এর সাথে কথা বলে ক্লিয়ার হয়ে নিলে কাজ করতে সুবিধে হবে। যেহেতু তিনিই ছিলেন দায়িত্বে। যুবকটি নিজের মটর সাইকেল স্টার্ট দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়।
*
এস আই অর্ণব ওসি সাহেব এর কেবিনে নক করে। ফাইল থেকে মুখ তুলে চিৎকার করে বললেন,
‘কাম ইন।’
অর্ণব ভিতরে প্রবেশ করে বলল,
“স্যার গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা এসেছেন কেইসের বিষয়ে কথা বলতে। আপনাকে খুঁজছেন। বসিয়ে রেখেছি আমি। আসতে বলব?”
ওসি সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“আরে নিয়ে আসলেই পারতেন। দ্রুত যান আপনি।”
অর্ণব বের হয়ে যায়। মিনিট দুই পরেই একজন সিভিল পোশাকের যুবককে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। হাস্যরত ওসি সাহেব আন্তরিকভাবে তাকে আপ্যায়ন করেন। তিনি নিজের পরিচয় দিতে বললেন,
“আমি হাতেম আকবর। আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগল। যেকোনো প্রয়োজনে বিনা দ্বিধায় বলতে পারেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমি ও আমার টিম।”
ওসি সাহেব এর আন্তরিকতা যুবকটির কাছে অনেক ভালো লাগে। কোনো কৃত্রিমতা ছিল না বলেই হয়তো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় সে। ওসি সাহেব বেশ গোছালো ও সৌখিন মানুষ তা বোঝাই যাচ্ছে। কোনো কিছুই অপরিষ্কার নেই। সবকিছুই সুন্দর করে সাজানো। নানারকম সৌখিন জিনিসপত্র দিয়ে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলেছেন। মনোযোগ সরিয়ে ওসি সাহেবকে সে বলল,
“আমি আরবাজ অরিত্র মির্জা। মি. সাত্যকি হত্যা মামলার দায়িত্বে আছি। আপনার কাছ থেকে আন্তরিক সাহায্য পাবো বলে আশাবাদী।”
ওসি সাহেব এরমধ্যে যুবকটিকে খুঁটিয়ে দেখে নিয়েছেন। আনুমানিক ৬ ফুট + উচ্চতার যুবকটির গায়ের রং চোখে পড়ার মতো। উজ্জ্বল রং এর সাথে চাপ দাড়ি বেশ মানিয়েছে। বিশেষ করে চোখ দুটো অনেক আকর্ষণীয়। যে কেউ তাকালেই হয় নেশায় পড়ে যাবে না হলে ধন্দে পড়বে নিশ্চিত। চোখের দৃষ্টির গভীরতা মাপতে গেলেই বিপাকে পড়ে যাবে। তিনি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। ফোর্সের লোক হয়েও এমন রূপের রহস্য কী! যেখানে কাঠিন্য, রুক্ষ ভাব থাকার কথা সেখানে রয়েছে প্রেয়সীর হৃদয়ে ঝড় তোলার উপাদান। ওসি সাহেব হেসে বললেন,
“অবশ্যই মি. মির্জা। আপনি এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করবেন না প্লিজ। আমিও মন থেকে চাই রহস্যটার মীমাংসা হোক।”
অরিত্র গম্ভীর কিন্তু আন্তরিক কণ্ঠে বলল,
“অরিত্র বলে ডাকতে পারেন। রহস্য খোলাসা করার দায়িত্ব যেহেতু পেয়েছি, সেহেতু বের করেই ছাড়ব। এখন আপনি আমাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুলে বলুন পুরো ঘটনাটি। যা কিছু জড়িয়ে আছে সাথে।”
ওসি সাহেব অবাক হয়ে বললেন,
“এ টু জেড ফাইলেই বন্দি করে দিয়েছিলাম। কোনো তথ্যই স্কিপ করিনি।”
অরিত্র হেসে বলল,
“তারপরও আপনার মুখ থেকে একবার ডিটেইলস শুনতে চাই। আমি পড়েছি। মনোযোগ দিয়েই পড়েছি কিন্তু আমার মনে হলো অনেক কিছু বাদ পড়েছে। এজন্য চাই আপনিও বলেন, আমি প্রশ্ন করে খটকা দূর করে নেবো।”
ওসি সাহেব বেশ ভাবলেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গুছিয়ে নিয়ে বললেন,
“প্রথম কলটি আসে সকাল ১০ টার দিকে। জানতে পারলাম সাত্যকি বাবুকে ডেকে লাভ হচ্ছে না। তিনি না কি দরজা খুলছেন না। খুব ভোরে ওঠার অভ্যেস তার। কিন্তু ১০ টা বেজে গেলেও বাইরে আসেননি। তাই তারা নিজেরা রিস্ক না নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন।”
অরিত্র বাধা দিয়ে বলল,
“কল কে করেছিল? আর নিজেরা কেন রিস্ক নিতে চাননি? এত দেরি হওয়ায় তাদের কি উচিত ছিল না নিজেদের খোঁজ নেওয়া? তারপর বাজে কিছু হলে না হয় খবর দিতো।”
ওসি সাহেব বিভ্রান্তবোধ করলেন। তিনি এরকম ভেবে দেখেননি। তাড়াহুড়োয় প্রশ্ন করতেই ভুলে গিয়েছিলেন। তবে ভেবে বললেন,
“সাত্যকি বাবু অনেক বড়ো একজন ব্যবসায়ী তাই তারা সাহস করেনি হয়তো। কলটা দিয়েছিল সাত্যকি বাবুর ম্যানেজার সাহেব। তিনিই জানিয়েছিলেন।”
অরিত্র সরাসরিই বলল,
“না, মিলছে না ব্যাপারটা। যদি অপরিচিত কেউ হতো তাহলে তারা আগে পুলিশকে কল দিতো। কিন্তু আপনজন হিসেবে তার ছেলে ছিল। ঘরের দরজা ভেঙে না দেখে আগেই পুলিশকে ডাকল। ম্যানেজার কী মনে করে ডেকেছিল সেটা জানতে হবে। তারপর বলুন আপনি।”
ওসি সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“আমরা গিয়ে দেখি সেখানে সাত্যকি বাবুর ছেলে মি. পার্থ, ম্যানেজার সাহেব, বুয়া আর দারোয়ান উপস্থিত আছে। সবাই চিন্তিত অনেক। এরপর মিস্ত্রি ডেকে পাঠালাম৷ তারা এসে দরজা ভাঙে। আমি আর এস আই অর্ণব মিলে আগে ভিতরে ঢুকি। আর দেখতে পাই লাশ হয়ে আছেন সাত্যকি বাবু।”
কণ্ঠে বিষাদের সুর টের পায় অরিত্র। একজন অনাত্মীয়র জন্য দরদ দেখে সে বেশ অবাক হলো। ফোর্সের লোকদের যেখানে সেখানে আবেগ দেখাতে নেই। তবে তাদের যে আবেগ নেই তা আবার ভুল ধারণা। অরিত্র পরিবেশ সহজ করার জন্য বলল,
“আপনি ঠিক কীরকম অবস্থায় লাশটি দেখেছিলেন? আশেপাশের কোনো অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েছিল?”
ওসি সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“হাত দেওয়ার আগেই ছবি তোলা হয়েছিল। সব অ্যাঙ্গেল থেকে তুলেছিল। অস্বাভাবিক কিছু ছিল না৷ কারণ সাত্যকি বাবুর মেডিসিন এর প্রভাবে হুশ ছিল না। সে কোনোরকম ঝামেলা করেনি। ঘরের প্রতিটি জিনিস একদম ঠিকঠাক ছিল।”
অরিত্র ছবিগুলো দেখেছে তারপরও শুনতে চাচ্ছে বিস্তারিত। ও বলল,
“প্রতিটি কোণায় ভালো করে দেখেছেন। কিন্তু আপনারা কোনো ট্রাপডোর বা ক্লু পাননি। একদম কিছুই না তাই তো?”
ওসি সাহেব মাথা নেড়ে সায় জানালেন। অরিত্র এবার জিজ্ঞেস করল,
“সাস্পেক্ট হিসেবে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তাদের মধ্যে বেশি সন্দেহ কাকে হয়? সিরিয়ালি বলেন। তারা কী করে, কোথায় থাকে, ফ্যামিলিসহ সবকিছু চাই। এগুলো কিন্তু মিস গেছে ফাইলে।”
ওসি সাহেব খুব বেশি জানেন না। শুধু সাস্পেক্টদের পিছনে লোক লাগানো হয়েছিল। তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নেওয়া হয়নি। খুব কাছের কেউ বা বাড়ির ভিতরে আর ব্যবসার সাথে যুক্ত তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক গর্ত থেকে গেছে তাতে এখন বুঝতে পারছেন। গাফিলতির কারণে হয়তো কোনো ক্লু মিস করে গিয়েছেন। তিনি হতাশ হয়ে বললেন,
“আমরা আসলে শুধু ভিতরের মানুষকে নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করেছি। বাইরের বলতে ব্যবসায়ী কিছু ছিল। তবে তাদের মোটিভ থাকলেও কোনো প্রমাণ নেই যে তারা কাজটি করেছে। তবে আমাদের ম্যানেজারকে বেশ সন্দেহ হয় কিন্তু তার বিরুদ্ধেও কিছু পাওয়া যায়নি।”
অরিত্র ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হলেও প্রকাশ করল না। তারা যে কতটা গাফিলতি করেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। শুধু সামনে যা ছিল সেগুলো নিয়ে জট পাকিয়েছে। ছাড়াতে তো পারেইনি উলটো অকাজ হয়েছে। সে আবারও জিজ্ঞেস করল,
“ম্যানেজার এর মোটিভ কী হতে পারে? আর মি. পার্থ? তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন? সে কোন বিষয়ের ছাত্র ছিল? কী করে সে? সবার কল ডিটেইলস কেন বের করেননি?”
ওসি সাহেব খাবি খাওয়ার অবস্থায় পড়লেন। তিনি কল ডিটেইলস শুধু ম্যানেজার আর কয়েকজন ব্যবসায়ীরগুলো বের করেছিলেন। তাতে কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। পার্থকে সন্দেহ করলেও তার ব্যাপারেও কিছুই মেলেনি। তাকে বাইরেই রেখেছিল। সে খুনি হলে কার সাথে যোগাযোগ করবে! এসব ভেবে অনেক কিছুই বাদ দেওয়া হয়েছিল। ওসি সাহেব মিনমিনিয়ে বললেন,
“মি. পার্থকে সন্দেহ করে আমরা খোঁজ নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই পাইনি তাই এত ঘাঁটাঘাঁটি করিনি। আর বেশি দেরি না করে পিবিআইতে হস্তান্তর করে দিলাম। সে ইঞ্জিনিয়ার হলেও এখনো কোনো কিছুতে যুক্ত হয়নি। লেখাপড়া শেষ করে আপাতত ঘুরে বেড়াচ্ছিল।”
অরিত্র কিছু ভেবে জিজ্ঞেস করল,
“ইঞ্জিনিয়ার! কোন বিষয়ের উপর স্টাডি করেছে? বাড়ির নকশা কি দেখেছিলেন? আমি এটাও পাইনি।”
এবার তিনি পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়লেন। ভিতরে ভিতরে লজ্জা পাচ্ছেন অনেক। এত ঘাটতি ছিল তদন্তে ভেবেই লজ্জা পাচ্ছেন। এরকম কোনো দিন হয়নি। ঘরের ভিতর কোনো ক্লু না পেয়ে তিনি অনেক হতাশ ছিলেন। যার জন্য মনোযোগ হারিয়েছিলেন। কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ায় ছোটো খাটো বিষয় বাদ পড়ে গেছে। তিনি লজ্জিত কণ্ঠে বললেন,
“পুরো বাড়ির বেহাল দশা করে ফেলেছি। ঘর ছাড়াও বাথরুমও যাচ্ছেতাই অবস্থা করা হয়েছিল। এজন্য কোনো নকশা দেখার প্রয়োজন মনে হয়নি। আপনি চিন্তা করবেন না। যা যা লাগবে সব ব্যবস্থা করে দেবো। মি. পার্থর সাথে মিট করেন। সে খুব কো-অপারেটিভ।”
অরিত্র মাথা নাড়িয়ে চুপ করে থাকল। ও শুধু ভেবেই যাচ্ছে। আর কোনো অসঙ্গতি আছে কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। হুট করে প্রশ্ন করে বসল,
“মি. পার্থ কি সিঙ্গেল? আর তার মায়ের মৃত্যু কী কারণে হয়েছিল তার উল্লেখ ছিল না। এছাড়া বাড়ির বুয়া আর দারোয়ান এর ব্যাপারেও কোনো স্পষ্ট তথ্য ছিল না। মানে যাচাই করা হয়নি। তারা যা বলেছে হুবহু তুলে দিয়েছেন।”
ওসি সাহেব এবার নড়েচড়ে বসলেন। তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন,
“আমরা যতদূর জানতে পেরেছি মি. পার্থর কোনো সম্পর্ক নেই। তার একজন বন্ধুর সাথে কথা হয়েছিল। জন্মদিন পালন করার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। তখন সে জানায় এরকম কেউ নেই তার লাইফে।”
অরিত্র হতাশ হয়ে বলল,
“আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। যা যা ঘাটতি আছে আমি নিজেই পূরণ করে নেবো। আমাকেই নামতে হবে। আমি সবার সাথে কথা বলতে চাই। আমাকে তাদের যোগাযোগ এর ঠিকানা দিন। নাম্বার আছে তো না কি?”
ওসি সাহেব লজ্জাবনত মুখ করে বললেন,
“অবশ্যই আছে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন সব ব্যবস্থা করছি। তবে আপনি কি একাই কাজ করবেন?”
অরিত্র গালভরা হাসি দিয়ে বলল,
“আপাতত একাই কাজ করতে চাই। যদি দরকার হয় তখন না হয় সাথে নেবো কাউকে। দেখি একা চেষ্টা করে নিজের মেধা কতটুকু আছে। এটাই আমার প্রথম কাজ। নিজেকে একটু পরীক্ষা করে দেখতে চাই।”
ওসি সাহেব হেসে ওকে শুভকামনা জানালেন। নাম্বার, ঠিকানা সব নিয়ে বেরিয়ে আসে অরিত্র। এবার সে মনস্থির করে বাসায় ফেরার। আজকে যতটুকু পেয়েছে সেগুলো আগে গবেষণা করে দেখবে। তারপর না হয় অন্য কিছুতে হাত লাগাবে।
*
সব তথ্য নিয়ে বসে পড়ে অরিত্র। নিরিবিলি কাজ করার উদ্দেশ্যে নিজের ঘরটাকে সেভাবে প্রস্তুত করে। প্রথমেই সে খাতা কলম নিয়ে বসে। একটা লিস্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়। টুকিটাকি সব তথ্য আর মনের প্রশ্নগুলোকে জড়ো করে লিখে রাখার ব্যবস্থা করে।
< ১ম কর্মদিবস >
ভিক্টিম :
সাত্যকি রায়, বিপত্নীক (?) বয়স ৫৭। ক্যারিয়ারে কোনো কলঙ্ক নেই। একমাত্র ছেলে উত্তরাধিকারী। প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক। প্রকাশ্য কোনো শত্রু ছিল না তার। বন্ধ ঘরে ২৯ বার ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। মেডিসিন সেবন করতেন নিয়মিত। ঘরে কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। শেষ সময় কাটিয়েছেন ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে নিজের বাড়িতে। সে নিজের কামরায় চলে যাওয়ার পরে কেউ যায়নি আর সেখানে। খুনটা হয়েছে রাত ২ টা নাগাদ।
সাস্পেক্ট লিস্ট :
১. পার্থ (সাত্যকি বাবুর একমাত্র সন্তান)
বয়স ২৮, অবিবাহিত এমনকি কোনো সম্পর্কে নেই সে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার (?)।
ভীষণ ম্যাচিউর, বন্ধুবৎসল, বাবার সাথে কোনো ঝামেলা ছিল না। রাতে জন্মদিন পালন করেছে উভয়ের সাথে। ৬ টা থেকে রাত ১০ টা অবধি বাইরে ছিল। তারপর ১২ : ৩০ পর্যন্ত সাত্যকি বাবুর ঘরে ছিল সে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই বাবাকে ডাকতে যায় পরে ফিরে আসে। এরপর বুয়াকে পাঠায়। ম্যানেজারকে আগে কল দেয় সে। পুলিশ দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলেও সন্দেহ করে তাকে। সে হয়তো চাবি দিয়ে ভিতরে ঢুকেছিল কিন্তু দেখা যায় ছিটকিনি থাকায় সম্ভব নয়।
২. সাত্যকি বাবুর ম্যানেজার (?)। লোকটির নাম জানতে পারলাম না। বয়স ৪৫ বছর। ১৮ বছর ধরে কাজ করছেন। নিপাট ভদ্রলোক তবে শিয়াল পণ্ডিত ভাব আছে। (ওসি সাহেব এর মতে)
তিনি আগে দরজা না ভেঙে পুলিশকে কল দিয়েছিলেন। সব তথ্য অনুযায়ী কোনো খুঁত নেই তার।
৩. আমেনা (বুয়া) ১১ বছর ধরে কাজ করেন। স্বামী, সন্তান কেউ নেই। ময়মনসিংহের বাসিন্দা। রাত তিনটা পর্যন্ত জেগে কাজ করেছিলেন। তিনি পার্থকে সাপোর্ট করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী সে। কাউকেই আসতে যেতে দেখেননি কারণ ডাইনিং থেকে সাত্যকি বাবুর ঘর দেখা যায়।
৪. মকলেছ (দারোয়ান) ১৫ বছর কাজ করছে। জন্মদিন পালনের সময় সে-ও সেখানে উপস্থিত ছিল। এই সুযোগে কেউ ভিতরে ঢুকেছিল কি না বাড়িতে! (?) নকশা দেখলে আর বাড়ির চারপাশে দেখলে জানা যেতে পারে কিছু।
আগে ঘর থেকে শুরু করি তারপর বাইরে নজর দেওয়া যাবে।
অরিত্র
০০-০০-০০
তালিকা তৈরি করে একনজরে সবটা দেখে নিল আরেকবার। আবারও তথ্য নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে সে। নতুন কোনো প্রশ্ন, অসঙ্গতি চোখে পড়ে কি না তার জন্য। যদিও সে নতুন কিছুই পেল না। তবে পরের কাজ ভেবে রেখে আপাতত ছুটি নিলো।
চলবে…