ধোঁয়াশা,৪র্থ পর্ব
সাহেরা_খান
লকড_রুম_মিস্ট্রি_থ্রিলার
অরিত্র কাজে লেগে যায় দ্রুতই। প্রথমেই দারোয়ান আর বুয়ার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে। তাদের গ্রামের বাড়ি গিয়ে নিজেই সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আসে। এতেই দুই দিন চলে গেছে। তাদের পারিবারিক অবস্থা, অতীত, বর্তমান অবস্থা সব খবর নিয়েছে। কারো সাথে তাদের কোনো বড়ো অঙ্কের লেনদেন হয়েছে কি না তারও খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েনি। সিসিটিভি ফুটেজ এর মাধ্যমে সন্দেহজনক আচরণও ধরা পড়েনি। দুজনেই পার হয়ে যায় এই পরীক্ষায়। এস আই অর্ণবকে কাজে লাগিয়ে দিয়ে এই ব্যাপারে সফল হয়েছে সে। সবার সবকিছুই স্বাভাবিক আর পরিষ্কার পাওয়া যায়।
তবে অরিত্র এবার তাদের সাথে সরাসরি কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রত্যককে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সে। কিছুক্ষণ ভেবে আবার সিদ্ধান্ত পাল্টায় অরিত্র। প্রথমে একবার পুরো বাড়ি ঘুরে দেখার চিন্তা করে সে। যদিও বাড়ি ত্যাগ করে অন্য বাড়িতে চলে গেছে পার্থ। কারণ পুলিশ বাড়িটি বসবাসযোগ্যই রাখেনি। তদন্তের নামে বাড়ির বেহাল দশা করে ছেড়েছে তারা।
*
রায় বাড়িতে এসে আগে চারপাশে খুঁজে দেখল অরিত্র। মাটিতে কোনোভাবে ক্লু ফেলে গিয়েছে কি না খুনি, তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। বাড়িটি যেভাবে তৈরি করেছে তাতে কারো সৌখিনতার রাজকীয় প্রকাশ ঘটেছে। দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। সারা বাড়ির আশেপাশে খুঁজে কিছুই পেল না সে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ১০০ তে ১০০ দেওয়া যাবে। অরিত্র ভাবছে, এত পরিচ্ছন্ন হওয়ার কারণ কী! কেউ কি ক্লু সরানোর জন্য লুকিয়ে কাজটি করে গেছে। বাড়িতে কেউ নেই। ভিতরে বিদ্ধস্থ অবস্থা, তবে বাইরে বেশ পরিষ্কার। কিছু খুঁজে না পেয়ে সে ভিতরে প্রবেশ করে। বাড়ির বেহাল দশা দেখে অরিত্র আফসোস করতে থাকে। কবে সে এরকম একটা বাড়ি নিজেই বানাবে। পরিষ্কার রাখার জন্য লোকও রাখবে। কী আবোলতাবোল ভাবছে সে! এটা ভেবে মাথায় আলতো টোকা মারে।
প্রথমেই সাত্যকি বাবুর ঘরে ঢোকে অরিত্র। প্রতিটি ইঞ্চি যেভাবে খুঁড়েছে তাতে ও নিজেও কিছু পেল না। ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকতেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। সব অংশ ভেঙে ফেললেও এক অংশ এখনো আগের মতো আছে। ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলিয়ে, বাড়ি দেখা শেষ হলেই সে ফিরে আসে।
*
থানায় বসে আছে অরিত্র। নকশা যোগাড় করে রাখতে বলেছিল সে। ওসি সাহেব বেশ করিৎকর্মা লোক। তিনি নকশা সামনে বিছিয়ে দিলেন। অরিত্র খুব গভীরভাবে পরীক্ষা করল। নাহ্, অস্বাভাবিক কিছুই নেই। ভোজবাজির মতো উদয় হয়েছিল না কি খুনি? নিজেকে প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর বের করল। ওসি সাহেবের সাথে কিছুক্ষণ আলাপ সেরে নিয়ে, সে দ্রুত বের হয়ে যায় থানা থেকে।
রায় বাড়ির সবার বয়ান শোনার জন্য উপস্থিত হয় পার্থর নতুন বাড়িতে। পার্থদের বাড়িতে ঢুকে চক্ষুচড়কগাছ হয়ে গেল। এই বাড়িটিও নতুন। শুধু তাই নয় আধুনিকতার উজ্জ্বল ছাপ আছে। ও মুখ কুঁচকে ভাবল, এরকম বড়োলোক হওয়ার মজাই আলাদা। আর কত বাড়ি আছে এদের আল্লাহ্ জানে!
বাড়ির ভেতরে এগোতে এগোতে কিছু একটা মনে পড়তেই এস আই অর্ণবকে কল দিল সে। বাড়ি তৈরির কারিগর কারা ছিল এবং পার্থ কোন বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করেছে এই দুটো ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলল।
*
প্রথমেই অরিত্র দারোয়ান এর সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে আলাদা করে ডেকে নিলো। দারোয়ান ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছে সে এসব ভেবেই অস্থির। অরিত্র চুপচাপ মতিগতি লক্ষ করছে। বিচলিত ভাব দেখে সে ভীষণ মজা নিচ্ছে। আগে সাস্পেক্টকে দুশ্চিন্তায় ফেলে সত্য উদঘাটন করার বহুল প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করল সে। শুধু বলেছিল,
‘সেদিনের কাজটা কি ঠিক হয়েছিল আপনার?’
বাস! মোকলেস এটাই ভেবে পাচ্ছে না সেদিন সে কী কাজ করেছে। এখন ভিতরে ভিতরে চিন্তায় ঘাম বের হয়ে যাচ্ছে। সে মিনতি করে বলল,
“স্যার, বিশ্বাস করেন, আমার কোনো দোষ নাই। আমি তো ছোটো সাহেবের কথায় পাহারা দেওয়া বাদ দিয়ে ঘর সাজাইছিলাম। তার জন্মদিন ছিল, তাই না করিনি। আর তো কিছু মনে পড়ে না, যা আমি করছি।”
অরিত্র দারোয়ান এর চোখের কোণে জলের আভাস পেয়ে বলল,
“আপনি যান। বুয়াকে পাঠিয়ে দেন।”
অরিত্র আর কিছু না বলায় অবাক হয়ে মোকলেস দ্রুত চলে যায়। যেন কেউ তাড়া করেছে তাকে। পালাতে পারলেই বেঁচে যাবে সে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বুয়া এসে হাজির হয়। আমেনা বুয়া পান খেয়ে গালের অবস্থা করুণ করে ফেলেছে। অরিত্র দেখেই বিরক্ত হলো। চারপাশের লাল রং দেখে গা ঘিন ঘিন করে ওঠে তার। ও দ্রুত মুখ পরিষ্কার করে আসতে বলল। বুয়াও তড়িঘড়ি করে ছুটে যায়। পরিষ্কার করে তবেই সে ফিরে আসে। অরিত্র তাকে দেখে বলল,
“দেখতে শুনতে তো বেশ ভালোই। বয়সও অল্প। তা বিয়ে না করে এ বাড়িতে পড়ে আছেন কেন?”
বুয়া অবাঞ্ছিত প্রশ্ন শুনে ছ্যাঁৎ করে ওঠে। ময়মনসিংহের মানুষ হওয়ায় মুখে কোনো লাগাম নেই। যা মনে আসলো তাই বলে দিলো।
“আইনহে কিতা কইন? বিয়া হরতাম ক্যারে! জামাইডা গ্যাছে গা, পুলাপানডিও নাই। হের লাইগ্যা কত যন্ত্রণায় আছি। শোকথন উঠতার হারলাম না। আর আইনহে ক্যাবা কইন এডি?”
অরিত্র কড়া গলায় বলল,
“সাত্যকি বাবু বিপত্নীক ছিলেন। তার তো বউয়ের দরকার ছিল। তো সেটা কি আপনার সাথে মেটানোর চেষ্টা করত? যার জন্য আপনি ক্ষুব্ধ হয়ে খুন করে দিয়েছেন।”
বুয়ার চোখ এত বড়ো হয়ে গেল যে, এখনি বিস্ফোরিত হবে ভাব। সে নিজের মুখে থাপ্পড় মেরে বলল,
“তওবা, তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ্। এডি কিতা কইলেন আইনহে? মরুইন না ক্যান আমনে। এডি শুনার আগে আমি মরলাম না ক্যারে! বদমাস ব্যাডাইন কিতা কয়! ওমন ভালা মাইনষের নামে এরুম কতা কইলেন, আইনহের জিহ্বা খইসা পড়ল না ক্যান!”
বুয়ার রাগ দেখে অরিত্র তীক্ষ্ণ চোখে মাপছে তাকে। সে সত্যি বলছে কি না। এটা কোনো অভিনয় নয় তা বেশ বুঝতে পারল সে। এজন্য অরিত্র মাফ চেয়ে চলে যেতে বলল তাকে। বুয়া রাগে থরথর করে কাঁপছে তখনও। মুখ ঝামটা দিয়ে চলে যাওয়ার আগে অরিত্র তাকে পার্থকে ডেকে দিতে বলে। কিন্তু সে বলল,
“হেতে গুমায়। পোলাডা কত্ত দিন খায় না, গুমায় না। হেতে শোকের মানুষ। ডাকতাম না। আইনহে যান গা।”
অরিত্রর প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো। মহিলার সাহস কত! ও সিভিল ড্রেসে আছে। পুলিশের লোক না বলে, গোয়েন্দা হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় বোধহয় পাত্তা দিচ্ছে না। আবার যে কথা বলেছে হয়তো এজন্যও চটে আছে, ভেবে নিলো। ও নিজেই উঠে গিয়ে পার্থর ঘর খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই মস্ত বাড়িতে একটা ঘর সনাক্ত করা মুশকিল হয়ে গেল অরিত্রর জন্য। কিছুক্ষণ খুঁজে বিরক্ত হয়ে দারোয়ানের কাছে পার্থর ঘর কোনটা জিজ্ঞেস করতেই সে জানায় পার্থ বাড়িতেই নেই। কিন্তু ঘরে সে ছিলই । ঘরে বন্দি থাকায় তাকে জোর করেই পাঠানো হয়েছে। বুয়া মিথ্যে বলেছে বুঝতে পেরে আরো চটে যায় সে। তবে এই মুহূর্তে তাকে আর কিছু বলল না অরিত্র। পার্থকে না পেয়ে সে ম্যানেজার এর সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে কল দিতেই বিকেল ৫ টায় কফিশপে যাওয়ার সময় বেঁধে দেন ম্যানেজার সাহেব।
*
এস আই অর্ণবকে কল দিয়ে আপডেট জানতে চায় অরিত্র। তিনি জানালেন পার্থর বন্ধুর সাথে কথা হয়েছে সাব্জেক্ট এর ব্যাপারে। অরিত্র চুপচাপ কিছুক্ষণ ওপারের কথা শুনলো তবে কোনো গুরুত্ব দেখালো না। ওর ভাবনায় ছিল এরকমটাই। সিক্স সেন্স তাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল অবশ্য।
সবার কল লিস্ট হাতে পেয়ে গেছে অরিত্র। নিজের কেবিনে বসে মনোযোগ দিয়ে দেখছে সে। কে কার কার সাথে কথা বলেছে মার্ক করে রাখা আছে। নামের লিস্ট ছাড়াও অনেক তথ্য দিয়েছে। কাজ দেখে অরিত্র সন্তুষ্ট হলো। কারো কল লিস্টে কোনো গণ্ডগোল নেই। অন্য কোনো সিম ব্যবহার করেছে কি না তা নিয়ে সংশয়ে পড়ল সে। বিকেল হয়ে যাওয়ায় আর গবেষণা করতে পারল না। দ্রুত ম্যানেজার এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে চলে গেল সে।
*
কফির মগে ধোঁয়া উড়ছে। আসার পর থেকে নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছেন ম্যানেজার সাহেব। যেন কোনো বিশেষ কিছু নেই। স্বাভাবিক ব্যাপার হওয়ায় তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না৷ অরিত্র বেশ মজা করে বলল,
‘আপনার নার্ভ খুব শক্ত দেখছি, মি.?’
প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে চুপ করে থাকল সে। ম্যানেজার সাহেব নড়েচড়ে বসে বলল,
‘সাহজাহান খন্দকার।’
অরিত্র মাথা নাড়িয়ে বলল,
“ওকে মি. খন্দকার এখন বলেন, আপনি পুলিশকে আগে কেন কল দিয়েছিলেন? যেখানে নিজেরা লক ভেঙে দেখতে পারতেন।”
ম্যানেজার সাহেব অতি সতর্ক চোখে তাকিয়ে বললেন,
“আসলে এত বড়ো একজন ব্যবসায়ী তিনি, তাই রিস্ক নিতে চাইনি। পদে পদে বিপদ পাড়ি দিয়েছি তো। এজন্য ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এখন সচেতন হয়ে গেছে। সে-ই আমাকে সাহায্য করে। মনে হয়েছিল নিজেরা খোলা ঠিক হবে না।”
“আপনি ঠিক কী বিপদ পাড়ি দিয়েছেন পদে পদে?”
অরিত্র কথাটি ধরে বসে। কিন্তু ম্যানেজার ঘাবড়ালেন না। স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন,
“আমি স্যারের ডান হাত ছিলাম এজন্য সব আমাকে সামলাতে হতো। কত ধরনের বিপদ সামনে আসত। ব্যবসায় করতে গেলে বিপদ আসবে না তা হয় না কি!”
‘বিপদগুলো কি বৈধ ছিল না অবৈধ?’
অরিত্রের প্রশ্ন শুনে ম্যানেজার কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলেন। তিনি বললেন,
“কাগজপত্র সব পরিষ্কার আছে। আপনি চেক করে দেখতে পারেন। বস ভীষণ সৎ লোক ছিলেন। ক্যারিয়ারে কোনো কলঙ্ক নেই। আমরা সবসময় আইনিভাবেই সামলেছি।”
“তাহলে আপনার স্যার খুন হলেন কেন? মোটিভ কী আর কার থাকতে পারে?”
“স্যারের তো শত্রুর অভাব নেই। হয়তো কেউ নিজের কাঁটা ভেবে সরিয়ে দিয়েছে।”
অরিত্রর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ম্যানেজার সাহেব চুপ হয়ে গেলেন। অরিত্র কড়াস্বরে জিজ্ঞেস করল,
“সেই শত্রু কারা? আপনি ক্লিয়ার করে কিছু বলছেন না কেন? আমি কি ভেবে নেবো, তাদের সাথে আপনার হাত ছিল?”
ম্যানেজার সাহেব তিক্ততা অনুভব করলেন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“যার নুন খেয়েছি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কোনো খায়েশ জাগেনি। আমি কিছুই জানি না এই ব্যাপারে। পরিচিত শত্রু এরকম কাজ করতে পারে ভাবতেই পারছি না। তারা কেন এত বড়ো ঝুঁকি নেবে! আমি নিজেই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। এজন্য জোর দিয়ে কিছু বলতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে আমি গোপনে খোঁজ নিয়েছি কিন্তু কোনো ক্লু পাইনি।”
অরিত্র কিছু ভেবে জিজ্ঞেস করল,
“মি. পার্থের ব্যাপারে কী মতামত আপনার? তার সাথে কথা হয়নি এখনো। বাড়িতে পাইনি। সে কি জড়িত থাকতে পারে? সাত্যকি বাবুর স্ত্রীর মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল? বাপ-ব্যাটার দ্বন্দ্ব ছিল না তো?”
“আমার জানামতে ম্যামের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল। পার্থর সাথেও কোনো ভেজাল ছিল না। দুজনে জন্মদিন পালন করল কত আনন্দে।”
“হতে পারে না এটা অভিনয় ছিল? ভিতরে কী ঘটেছে তা আমরা জানি না হয়তো। সে নিজেও ইঞ্জিনিয়ার। বাড়ির নকশায় গোলমাল পাইনি। কিন্তু লকড রুমে তো সম্ভব না, কাছের কেউ জড়িত না থাকলে।”
“পুলিশ পুরো ঘর তছনছ করেছে। কিছুই তো পেল না। কীভাবে হলো এটা? আপনার কোনো ধারণা আছে?”
ম্যানেজার কোনো কথা না বলে পালটা প্রশ্ন করে। অরিত্র কোনো উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ বদলে ফেলল। সে বলল,
“কফিটা দারুণ হয়েছে। আপনার সাথে দেখা না হলে মিস করতাম। ধন্যবাদ আপনাকে এজন্য। ইচ্ছে আছে মাঝে মধ্যেই এখানে আসার।”
ম্যানেজার সাহেব এর মুখ ভোঁতা হয়ে গেল। তিনি চুপচাপ কফিতে মনোযোগ দিলেন। কফি শেষ হতেই দুজনে উঠে পড়ে।
*
অরিত্র বাসায় ফিরে আসে। নিজেকে পরিপাটি করে সে সারাদিনের কর্ম সম্পর্কে নোট করা শুরু করে। কী কী তথ্য সংগ্রহ করেছে, কোনটা কাজে লাগবে এসব নিয়ে ভাবতে আরম্ভ করে। পছন্দের তথ্যগুলো খাতায় লিপিবদ্ধ করতে শুরু করে সে।
সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো যাদের :
১. দারোয়ান মোকলেস — নিতান্তই গরীব, ভদ্রলোক সে। তার ক্যারিয়ারে এরকম কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
২. আমেনা বুয়া– ডেঞ্জারাস একজন মহিলা। সাধারণ কেউ হলে হয়তো আমাকে থাপ্পড় খেতে হতো। বেঁচে গেছি আজ। সে-ও নিজের ক্যারিয়ার পরিষ্কার রেখেছে।
সন্দেহ থেকে বাদ পড়েনি যারা :
১. পার্থ– তার সাথে দেখা হলে নিশ্চিত হতে পারব।
২. ম্যানেজার সাহেব — ঘাগু মাল (?)
যে সব তথ্যতে সন্দেহ পাওয়া গিয়েছে তা হলো :
১. বাড়ির ভিতরই ঘাপলা আছে। পুলিশের অবহেলা ছিল আমার ধারণা।
২. পার্থ ইঞ্জিনিয়ার নয় শুধু, মেধাবীও হাই লেভেলের।
৩. ম্যানেজার এর মতিগতি স্পষ্ট হচ্ছে না। দুই কূলেই বসবাস মনে হচ্ছে।
আগামীকাল যা যা করতে চাই :
১. বাড়ি তৈরির কারিগরদের সাথে দেখা করতে হবে।
২. সাত্যকি বাবুর ঘর, ওয়াশরুম মিস্ত্রি দিয়ে তল্লাশি করতে হবে আবার।
৩. পার্থর সাথে দেখা করতে হবে।
৪. এস আই অর্ণব এর সাথে আলাদা কথা বলতে হবে।
অরিত্র এগুলো নোট করে নিজেকেই বলল, এটুকুতেই রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আপাতত সব কাজ রেখে দিয়ে মাথা ঠান্ডা করার জন্য বিশ্রামের প্রস্তুতি নিলো সে।
চলবে..