ধোঁয়াশা,৫ শেষ পর্ব
সাহেরা_খান
লকড_রুম_মিস্ট্রি_থ্রিলার
সকাল হতেই অরিত্র কেসের ব্যাপারে ভাবতে বসে। আনমনে কফিতে চুমুক দিয়ে পায়চারি করছিল বিশাল বারান্দা জুড়ে। আচমকা ওর চিন্তিত মুখে একছটা হাসি খেলে গেল। তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে বাড়ি তৈরির কারিগরদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। প্রথমেই সে কারিগর দলপতির সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কথা বলে নিজের সব সন্দেহ দূর করার পর সে রায় বাড়ির পথ ধরে।
মিস্ত্রিসহ সাত্যকি বাবুর বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় অরিত্র। বাড়িতে ঢুকেই সোজা চলে যায় সাত্যকি বাবুর ঘরে। ওয়াশরুমের সামনে দাড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল, “যত গণ্ডগোল এখানেই ছিল। পুলিশ যদি আরেকটু কষ্ট করত তাহলে এত ভেজাল হতো না।”
মিস্ত্রিদের যে কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে তার নির্দেশ দিতেই তারা নিজেদের কাজ শুরু করে। ভেতরের ভালো অংশটুকু দেখিয়ে দিয়ে বলল কীভাবে কাজ করতে হবে। প্রায় ৩০ মিনিট পরে মিস্ত্রি কাজ শেষ করে। চোখের সামনে সফলতা দেখতে পেয়ে অরিত্রর মুখের হাসি চওড়া হয়। এখন শুধু খুনিকে পাকড়াও করার পালা। কীভাবে খুন করেছে তা জানা হয়ে গেল। কী কারণে খুন করেছে আর কে করেছে এটা জানতে পারলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।
বিজয়ের হাসি দিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে নিজেই অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়।
*
অরিত্র দাঁড়িয়ে আছে এস আই অর্ণব এর সামনে। তাকে কল দিয়ে ডেকে এনেছে সে। কিছু প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে এই সাক্ষাৎ। অরিত্র আলাপের সুরে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছেন মি. অর্ণব? কত দিন হলো পেশায় আছেন?”
অর্ণব মিষ্টি করে হেসে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ্ স্যার, ভালো আছি। বেশি দিন হয়নি চাকরির বয়স।”
অরিত্র হেসে বলল,
“সেটা আগেই বুঝেছি। আপনাদের তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই শিওর হয়েছিলাম। এরপর নিজে খোঁজ নিয়ে আরো ভালো বুঝেছি। আপনারা গাফলতিতে ১০০ তে ১০০ পাওয়ার যোগ্য।”
শেষের কথাটি শুনে অর্ণবের মুখ চুপসে যায়। সূক্ষ্ম অপমান করা হয়েছে তাদের। সে মিনমিনিয়ে বলল,
‘স্যার ডেকেছিলেন কেন, তা যদি বলতেন।’
অরিত্র মুখটা গম্ভীর করে জিজ্ঞেস করল,
‘ওয়াশরুমে যখন আপনি ঢুকেছিলেন তখন কি দরজা বন্ধ ছিল?’
অর্ণব প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। সে গভীর চিন্তা করে বলল,
“তল্লাশির সময় ওয়াশরুমে আমিই ঢুকেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে সেটা ভেজানো ছিল। ছিটকিনি বা কোনো ধরনের লক ছিল না।”
“ধন্যবাদ আপনাকে। এটুকুই জানার ছিল আমার। আপনি আসতে পারেন।”
অর্ণব কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও নিজেকে বিরত রাখে। বুঝতে পারল অরিত্র কিছুই বলবে না। তার আচরণ দেখেই সিদ্ধান্ত নেয় ফিরে যাওয়ার।
*
অর্নব চলে যেতেই পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করে অরিত্র কল দেয় অন্য কাউকে। তাকে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হতে বলে নিজেও রওনা দেয় সেদিকে। তার সাথে কথা বললে হয়তো অনেক কিছুই পরিষ্কার হবে। মনে মনে যাকে সন্দেহ করছে সে এখনো পর্যন্ত নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেছে। কোনো কারণ নেই যদিও তাকে সন্দেহ করার। কিন্তু কী কারণে যেন অরিত্রর মন তাকেই কেন্দ্রবিন্দুতে পাচ্ছে। চোখ বন্ধ করলেই স্পষ্ট ছবিটা ভেসে ওঠে। ছবিটি এতবার দেখেছে যে পুরো মুখস্থ হয়ে গেছে। ভাবনা থেকে বের হয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে মন ফেরায় সে। নিজের গন্তব্যে পৌঁছল সে খানিকক্ষণ পরে।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটির পরিচয় নিশ্চিত করে অরিত্র বলল,
“চলেন, বসে আড্ডা দেই কিছুক্ষণ। এখানে কফি ভালো বানায় কারা?”
সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন অফিসারকে দেখে ভড়কে আছে ছেলেটি। সে ভেবেছিল হয়তো অফিসারটি অন্যরকম হবে দেখতে। অল্প বয়সি তার উপর সিনেমার নায়ক নায়ক ভাব। তাকে ফোর্সের অফিসার হিসেবে ঠিক মানাচ্ছে না। ভ্রু কুঁচকে রাখায় অরিত্রও ভাবনায় পড়ে গেল। ওর বোধগম্য হচ্ছে না কেন ছেলেটি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ও আবারও বলল,
“কোনো সমস্যা যদি না থাকে তাহলে কফিশপে বসি? ভীষণ রোদ পড়েছে আজকে।”
ছেলেটির ধ্যান ভাঙতেই সে অপ্রস্তুত হেসে বলল,
“আমি দুঃখিত। প্লিজ চলুন আমার সাথে।”
অরিত্র এখন কিছুটা অনুমান করতে পেরেছে। হেসে মজার সুরে জিজ্ঞেস করল,
“আমাকে দেখে ভড়কে গিয়েছিলেন তাই তো? মোটা, ভূড়িওয়ালা টাইপের কাউকে আশা করেছিলেন না কি?”
ছেলেটি বিস্মিত হয়ে গেল। মনের কথা ধরে ফেলায় সে-ও এখন মিটিমিটি হাসছে। অরিত্র হাসি দেখে বলল,
“পুলিশকে সিনেমাতে আমরা সাধারণত এরকমভাবে দেখেই অভ্যস্ত। এজন্যই সাধারণ জনগণ ফিট কাউকে দেখলে অবাক হয়। যেন রূপকথার গল্প থেকে উঠে এসেছি।”
ছেলেটি কিছু না বলে সোজা কফিশপে ঢুকে পড়ে। পছন্দমতো টেবিল খুঁজে নিয়ে বসে দুজনে। কফির অর্ডার দিয়ে আলাপ শুরু করে অরিত্র। কথায় কথায় ছেলেটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিলো ও। কাজের কথায় আসার উদ্দেশ্যে অরিত্র বলল,
“তো মি. সাজ্জাদ আপনি আমাকে মি. পার্থর জন্মদিন সেলিব্রেশনের পুরো ঘটনা ডিটেইলস বলুন প্লিজ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কোনো কিছু স্কিপ না যায় যেন।”
সাজ্জাদ নড়েচড়ে বসল। প্রথমে সে সেদিনের পুরো ঘটনা মনে করার চেষ্টা করল। সাজ্জাদ একে একে বিস্তারিত বর্ণনা করা শুরু করে, পার্থর আসা থেকে শুরু করে বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। অরিত্রও পুরোটা মনোযোগ দিয়ে শুনে নেয়। এরপর সন্তুষ্ট হয়ে কফি পান করে সে। কফি শেষ হতেই সাজ্জাদকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে আসে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সে পার্থর সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
*
বুয়া কটমট করে তাকিয়ে আছে অরিত্রর দিকে। অরিত্র বেশ নরমস্বরে বলল,
“খালা আপনি একটু মি. পার্থকে ডেকে দিন প্লিজ। তার সাথে দেখা করতে চাই। কোনো অজুহাত চলবে না কিন্তু আজকে।”
বুয়া খেঁকিয়ে ওঠে। সে বলে,
“আইনহে আবার আইছুইন। পারথ বাবায় আইনহের লগে দেহা হরত না। হ্যায় বাড়িত নাই।”
মেজাজ বিগড়ে যাওয়ায় অরিত্র কড়াস্বরে বলল,
“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন। আমি এখানে মজা করতে আসিনি। দুই মিনিটের মধ্যে যদি পার্থকে ডেকে না এনেছেন আপনি, আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। সোজা থানায় নিয়ে খুনের কেইসে ফাঁসিয়ে দেবো বলে দিলাম।”
বুয়া এবার ভড়কে যায়। অরিত্রর ঠোঁট কাঁপছে রাগে। সে পড়িমরি করে ছুটে যায় পার্থকে ডাকতে।
বিষণ্ণ চেহারা নিয়ে পার্থ উপস্থিত হয় অরিত্রর সামনে। পায়ের ওপর পা তুলে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে ও। পার্থ সোফায় বসে বুয়াকে কফি দিতে বলে। চোখ মুখ দেখে অরিত্র অনুমান করে নেয় সে অসুস্থ। ও নিজেই জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছেন মি. পার্থ? আপনাকে দেখে সুস্থ মনে হচ্ছে না। ডক্টর কল করি?”
পার্থ মাছি তাড়াবার ভঙ্গি করে বলল,
“অসুবিধে নেই অফিসার। আমি ঠিক আছি। এই সামান্য মাথা ব্যথা করছে। আপনার যা বলার আছে বলতে পারেন।”
অরিত্র পার্থকে সূক্ষ্ম নজরে দেখছে। ছেলেটার জন্য ওর ভীষণ মায়া হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ও সরাসরি প্রশ্ন করল,
“আপনার বাবাকে কেন খুন করলেন? কীসের এত রাগ ছিল তার ওপর? ২৯ বার আঘাত করেছিলেন। কতটা রাগ, ক্ষোভ থাকলে একটা মানুষ এতটা নির্মম হতে পারে।”
পার্থ স্বাভাবিকভাবেই বসে আছে। সে মোটেও চমকে ওঠেনি। পুলিশ বোকা বনে গেলেও পিবিআই এর দুর্ধর্ষ অফিসার বোকামি করবে না সেটা ও টের পেয়েছিল। নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছে। এখন সে মরতে ভয় পায় না। সবকিছু তো আগেই শেষ হয়ে গেছে। হারাবার কিছুই নেই। পুরোনো যন্ত্রণা আবারও চাড়া দেওয়ায় চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে গাল। অবাধ জলকে ঠেকানোর চেষ্টা করল না সে। প্রতিনিয়তই দগ্ধ হচ্ছে। অরিত্রর কাছে সব বলতে পারলে হয়তো তার শান্তি হবে। একারণেই সে সিদ্ধান্ত নিলো বিস্তারিত বলার। হাত দিয়ে চোখ মুছে হালকা হেসে বলল,
“একজন সন্তানের কাছে তার বাবা-মা কতটা পূজনীয় তা সবাই জানে। সেই ভালোবাসার বাবাকে ২৯ বার আঘাত করার কারণ নিশ্চয় স্বাভাবিক ছিল না। অন্যকারো কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে মোটেও তা নয়।”
অরিত্র কাঁধে হাত দিয়ে আশ্বস্ত করে ওকে। বুয়া কফি দিয়ে যাওয়ায় আগে সেটা শেষ করতে বলে। অরিত্রর কোনো তাড়া নেই এ-ব্যাপারে। পার্থকে মোটেও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না। বিদ্ধস্থ ছেলেটিকে আগে সুস্থ করার তাগিদ অনুভব করল ও।
বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেছে। পার্থকে মেডিসিন দেওয়াতে সে সামান্য সুস্থবোধ করে। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলতে শুরু করে।
*
ছোটো বেলায় মাকে হারানোর পরে মানুষ হয়েছি বুয়ার কাছে। কোনোকিছুর অভাব না থাকলেও মা-বাবার অভাব ছিল ভীষণ। মা তো ছিলই না। বাবা সে তো থেকেও না থাকার মতো ছিল৷ একাকিত্ব ঘিরে থাকলেও পাত্তা দিতাম না তেমন। বন্ধু ছিল বেশ কয়েকজন। আনন্দেই সময় কেটে যেত। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পরে অনাথ আশ্রমের প্রতি একটা টান সৃষ্টি হয়। ভালো লাগত অনেক, ওদের সাথে সময় কাটাতে। আমি নিজেও অনাথ ছিলাম। এভাবেই সেখানে পরিচয় হয় তামান্নার সাথে। ভীষণ ভালোবাসতাম তাকে। লেখাপড়া শেষ হতেই ড্যাডকে জানালাম ব্যাপারটা। সে খুব সহজেই মেনে নিয়েছিল। তাই আনন্দের সীমা ছিল না। যদিও ও মুসলিম ছিল এই ভয়ে ছিলাম আমি। তারপরও ড্যাড মেনে নেওয়ায় জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষটা আমিই ছিলাম।
জন্মদিনে প্ল্যান ছিল সারাদিন তামান্নার সাথে কাটাবো। বন্ধুদের সাথে রাতে সময় দিয়ে ড্যাডের সাথে জন্মদিন উদযাপন করব। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজালাম। হুট করে তামান্না বলল, ‘আমার সাথে দেখা করতে পারবে না।’ আমি তো বিরক্ত হলাম খুব। ও জানাল আমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। সন্ধ্যায় মেসেজ পেলাম ওর। ড্যাড ওর সাথে দেখা করতে চায়। সেটা আমাকে জানাতে নিষেধও করেছে। রাত ৮ টায় আমি ওর নাম্বারে কল দেওয়ার চেষ্টা করি। ও রিসিভ করেনি। চিন্তায় পড়ে যাই। ট্রাকারের মাধ্যমে দেখলাম আমাদের ভুতুড়ে বাড়িতে ফোনের লোকেশান দেখাচ্ছে। বাড়িটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত হওয়ায় কেউ-ই যায় না ভয়ে। ওর লোকেশান সেখানে কেন এটা ভেবেই দ্রুত ছুটে যাই।
পার্থ থেমে যাওয়ায় অরিত্র বুঝতে পারে বিভীষিকা হয়েছিল সেখানে। পার্থর কান্না ওর হৃদয় স্পর্শ করে। অরিত্র পার্থকে সময় দিলো ধাতস্থ হওয়ার। সে নিজেই সামলে নেয়। তারপর আবারও বলতে শুরু করে,
“আমি ভাবতেই পারিনি এত জঘন্য কিছুর সম্মুখীন হবো। ভিতরে ঢুকতেই দেখি আগাছার ভিতর ছিন্নভিন্ন শরীরটা পড়ে আছে। শরীরটা আর শরীর ছিল না। শুধু ধর্ষণ করেনি ওকে। খুবলে খেয়েছে। চেনাই যাচ্ছিল না। তামান্নার শরীরের পারফিউমের গন্ধেই শিওর হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর বাড়ির ভিতরে দেখে নিশ্চিত হয়েছিলাম।”
পার্থর আহাজারি শুনে অরিত্র মাথা নিচু করে থাকল। ও নিজেও শুনতে পারছে না আর। ওর এই দশা, তাহলে ছেলেটা কীভাবে সহ্য করেছিল! পার্থ মাথা তুলে পাগলের মতো হাসতে হাসতে বলল,
“ওই লোকটা এতটা পিশাচ, সে ভেবেছিল তার ছদ্মবেশী নোংরা চেহারা কেউ ধরতে পারবে না। কিন্তু সে জানতেও পারল না তার ছেলেই উদঘাটন করেছে বিদঘুটে সত্যটি। ওই বাড়ি তল্লাশি করে অনেক কিছুই পেয়েছিলাম। মুখোশধারী ছিল সে। সব প্রমাণ ছিল সেখানে। বাইরে ভালো মানুষ সেজে থাকা লোকটি ওই বাড়িতে ঢুকলে হিংস্র নরপিশাচ হয়ে যেত। নিত্য নতুন মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা ছাড়াও অনেক কুকীর্তি করেছে সে। তবে তা কেউ জানত না। বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশ নিত সে।”
অরিত্র সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
“আপনার অবস্থা বুঝতে পারছি। আপনি সব প্রমাণ নিয়ে থানায় যেতে পারতেন। মানুষের সামনে মুখোশ টেনে খুলে দিলে আরো ভালো হতো। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত হয়নি। একজন আইনের লোক হয়ে আমি আপনাকে সমর্থন করতে পারি না। যদি সাধারণ মানুষ হতাম; তবে বাহবা দিতাম।”
পার্থ মানসিক রোগীর মতো হাসতে হাসতে বলল,
“আমি জানি অফিসার। কিছু বোঝাতে হবে না। আপনি আমাকে অ্যারেস্ট করতে পারেন। এমনিতেও জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা কাজ করছে। এখন ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে আপত্তি নেই। একটা নরপিশাচকে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছি তাতেই আমি খুশি।”
অরিত্র হতাশ হয়ে পার্থকে বলল,
“প্লিজ মি. পার্থ এভাবে হাল ছাড়বেন না। হয়তো আপনার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। তাই বলছি নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়ে চেষ্টা করেন ভালো থাকার।”
অরিত্র আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। অরিত্র বের হয়ে গেলেও পার্থ হতভম্ব হয়ে বসে থাকল। তখনও সে অনুধাবন করতে পারছে না তাকে কী বলে গেল।
*
পিবিআই অফিসে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলো অরিত্র। চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। সবাই সাত্যকি বাবুকে ছিঃ ছিঃ করল। সারাদেশের মানুষ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। যারা সুবিচার চেয়েছিল তারাই আফসোস করতে শুরু করে।
পার্থ বোকার মতো টেলিভিশন এর দিকে তাকিয়ে আছে। ব্রেকিং নিউজ দেখে কী বলবে তা ভাবতে পারছে না। টিভিতে প্রচার করা হচ্ছে সাত্যকি রায় এর মৃত্যুর কারণ।
ব্রেকিং নিউজ…
“বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাত্যকি রায় মোটেও খুন হননি। তিনি অতিরিক্ত মাদকাসক্ত হওয়ায় নিজেই নিজের শরীরের ২৯ বার ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলেন। তার ঘরে তদন্ত কর্মকর্তা খুনের কোনো আলামতই খুঁজে পাননি।”
পার্থ হেসে ফেলে বলল,
‘ইউ আর জিনিয়াস মি. অরিত্র।’
সমাপ্ত