ধোয়ার-নেশা,০২,০৩

0
1206

#ধোয়ার-নেশা,০২,০৩
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (২)

অনিকশাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে অন্ত্রীশা নিজের মায়ের রুমের দিকে এগুলো। নিজের রুমের দরজাটা পার হতেই কেউ একজন তার মুখ চেপে ধরেছে। অন্ত্রীশাকে দেয়ালের দিকে সরিয়ে নিয়ে এসে বললো,

“” কোনো সাউন্ড হবেনা। আমি যা করতে চাই চুপচাপ তা করতে দাও””

অন্ত্রীশার রুমের দরজা খুলা থাকায় রুমে জ্বলে থাকা লাইটের আলো বাহিরে কিছুটা এসে পড়েছে। তার মাধ্যমেই মুখ চেপে ধরা লোকটার চেহারা দেখতে পেলো অন্ত্রীশা। কিছুটা ঝাপসা হলেও তার চুমুবাবুর মুখটা সে বেশ বুঝতে পারছে। চোখের চাহনি তার মধ্যে নেই এপাশ ওপাশ ঘুরপাক খাচ্ছে। কণ্ঠে অনুনয় ছিলো নাকি ধমকানি ছিলো তা নিয়ে বেশ কনফিউজড। কেন এসেছেন উনি? তাও এতো রাতে,এই বৃষ্টিতে ভিজে! মাথার মাঝারি সাইজের চুলগুলোও ভিজে কিছুটা ল্যাপ্টে রয়েছে কপালে। মনে হচ্ছে কপালে কিছুটা চিন্তার ভাজ নাহয় অস্থিরতার ভাজ রয়েছে। কিন্তু ল্যাপ্টে যাওয়া চুলগুলোর জন্য ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা!

অন্ত্রীশা খানিকটা ভয় পেয়েই হাতগুলো ঘুটিয়ে নিয়েছিলো নিজের জামার আড়ালে। হালকা আকাশী কালারের জামা পড়েছিলো সে। কিন্তু পালকের মুখটা দেখেই অন্ত্রীশার ভয় কেটে গেলো। কেন কেটে গিয়েছে সে জানেনা। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে এই মানুষটাকে দেখে ভয় পাওয়ার কোনো মানেই হয়না!

পালক অন্ত্রীশার মুখ থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো। চোখে চোখ পড়তেই চোখটাও সরিয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার বা হাতটা টেনে ধরে বললো,

“” তোমার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ আশা করেছিলাম!””

অন্ত্রীশা পালকের কথার পিঠে কি বলবে বুঝতে পারলোনা। তার যে কেন ভয় পাচ্ছেনা সেটা তো সে নিজেই বুঝতে পারছেনা।

পালক নিজের পকেট থেকে একটা মেহেদির কোন বের করে অন্ত্রীশার হাতে দিতে শুরু করেছে। অন্ত্রীশা তখনো পালকের দিকেই চেয়ে ছিলো। এতো ঝাপসা আলোতে চেহারাটা ভালো করে বুঝা যাচ্ছেনা বলে খুব রাগ হচ্ছে। তার যে এই মুখটার সবকিছুকে মন ভরে দেখে নিতে ইচ্ছে করছে। হাতে হঠাৎ ঠান্ডা কিছুর উপস্থিতি পেয়ে অন্ত্রীশা নিজের হাতের দিকে তাকালো। তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো।

পালক একটা ব্রু উচু করে বললো,

“” হাসছো কেন? মেহেদী দেওয়াটা কেমন হচ্ছে সেটা বড় কথা নয় কে দিয়ে দিচ্ছে সেটা বড় কথা,বুঝেছো? আর এমন বাচ্ছাদের মতো শব্দ করে হাসছো কেন? তুমি জানোনা শব্দ করে হাসতে নেই?””

পালকের কথাই অন্ত্রীশা হাসিটাকে আটকানোর চেষ্টা করছে৷ তার কি দোষ? এভাবে ল্যাপ্টে মেহেদী দিয়ে দিলেতো হাসি পাবেই। যেটা সে পারেনা সেটা তাকে কেন করতে হবে? এমন তো নয় যে আমি বায়না ধরেছি! বাচ্চামী করছেন আপনি অথচ বলছেন আমাকে!

অন্ত্রীশার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটাতেই হয়তো পালক হুট করে ওর জামাতে হাত দিয়েছে। কমড়ের সাইড দিয়ে কাটার দাড় ধরেই জামার সামনের পার্টটা উচু করতেই অন্ত্রীশা ঝট করে পালকের হাত চেপে ধরে বললো,

“” কি করছেন?””

পালক নিজের হাত থেকে অন্ত্রীশার হাতটা সরাতে সরাতে বললো,

“” আমি এক কথা দুবার বলতে পছন্দ করিনা অন্ত্রীশা। আমি যা করতে চাই তা করতে দাও!””

পালকের এবারের কথাতেও অনুনয় ছিলো নাকি ধকমের সুর ছিলো তা বুঝতে পারেনি অন্ত্রীশা। তবে এটা বুঝতে পেরেছে তার হাতদুটো অবশ হয়ে আছে আর সেই হাত কিছুতেই পালককে বাধা দিতে পারবেনা,কিছুতেই না৷ কিন্তু কেন??

পালক জামাটা কুচকিয়ে উচু করে ধরতেই অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। মনের ভেতর এক অজানা অপরাধ ফিল হচ্ছে এখনো তো তাদের বিয়ে হয়নি! এসবে সম্মতি দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে?? অন্ত্রীশার ভাবনাগুলো দ্রুত বয়ে যাচ্ছে তবে এই অপরাধের ফিলিংসটাকেও তার কেন এতো বেশি ভালো লাগছে???

অন্ত্রীশা পেটের সাইডের দিকে আবার ঠান্ডা কিছুর ছোয়া পেয়ে চোখ মেলে ফেললো। হালকা মুচকি হেসে মনে মনে বললো,ছি! আমি এসব কি ভাবছিলাম?

“” মেহেদি শুকানোর আগে জামাটা ছাড়বেনা। এভাবেই ধরে রেখো প্লিজ!””

পালক নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের অনুনয়ের কথাটা শেষ করেই হেটে চলে গেলো। অন্ত্রীশা জামাই হাত রেখে ভাবনায় ডুব দিলো। এই বৃষ্টিতে এতো কষ্ট করে এসেছেন আমাকে মেহেদী পড়াতে?? জাস্ট মেহেদী পড়াতে? আমার সাথে দুটো কথাও তো বলেননি। একটাবার আমার মুখটার দিকেও তাকালেননা। আমার কেন মনে হচ্ছে হুট করে রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে আপনি আমাকে চিনবেনও না। আর সেই অচেনা মেয়ের সাথেই আপনি এমন অদ্ভুত কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন?

অন্ত্রীশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘুরতেই দরজায় অনিকশাকে দেখতে পেলো। এতো গভীর নয়নে সে কি দেখছে?? এবারও কি আপু সব দেখে ফেলেছে???

অন্ত্রীশা কিছুটা লজ্জা নিয়ে আবার নিজের রুমে ঢুকে যাচ্ছে। অনিকশার নজর অন্ত্রীশার পেটে। লাইটের আলোতে মেহেদীর কালচে রঙে পালক লেখাটা যেন জ্বলজ্বল করে যাচ্ছে!

“” এভাবে পেট বের করেই শুয়ে থাকবি? সামনে যে তোর বড় বোন দাড়িয়ে আছে তাতে কি তোর একটুও লজ্জাবোধ লাগছেনা? যা ধুয়ে আয়।””
“” উনিতো ধুতে বলেনি আপু!””
“” ধুতে বলেনি বলে ধুবিনা? এভাবে পেট বের করে হেটে বেড়াবি? সবাইকে দেখাবি তোর বর তোর পেটে বসে আছে?””

অন্ত্রীশা কিছুটা মন খারাপ নিয়েই ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো।

মেহেদী ধুয়ে পরিষ্কার করে আসতে আসতে অনিকশা ঘুমিয়ে পড়েছে। অনিকশার এই একটা অভ্যাস অন্ত্রীশাকে বেশ ভাবায়। একটা মানুষ বিছানায় শুতে শুতে কি করে ঘুমিয়ে পড়ে? সে তো পারেনা। কম করে হলেও তার ১ ঘন্টা চোখ বন্ধ করে ভুলভাল,আবিজাবি জিনিস ভাবতে ভাবতে এপাশওপাশ করতে হয় তারপর যদি ঘুমপুরুষ এসে হাজির হয়। তবে এখন তার হাবিজাবি জিনিসগুলো চুৃুমুবাবুকে ঘিরেই ঘুরপাক খায়।

অন্ত্রীশা আপুর পাশে শুতেই দরজায় নক করার শব্দ পেলো। এতো রাতে আবার কে এলো? অন্ত্রীশা কে বলে চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেলো। যদি পালক এসে থাকে? তাহলে তো আপুর সামনে আবার নির্লজ্জ হতে হবে।

অন্ত্রীশা নিশব্দে দরজার কাছে গিয়ে সিটকিনিতে হাত দেয়।

“” দুলাভাই,আপনি?””
“” অনি কি ঘুমিয়ে পড়েছে?””
“” হুম! ডেকে দিবো?””

অরিদ সাহেব উকি দিয়ে অনিকশাকে দেখতে দেখতে বললো,

“” না,থাক। ওর কাঁচা ঘুম ভেংগে গেলো খুব রাগ করবে।””
“” আপুকে এতো ভালোবাসেন তাহলে ঝগড়া করেন কেন?””

অন্ত্রীশার কথার উত্তর হিসেবে হালকা হেসে উঠলো অরিদ।

“” আসি,তুমি দরজাটা আটকে ঘুমিয়ে পড়ো।””

অরিদ চলে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” আপুকে ছাড়া ঘুম আসবে তো?””
“” চেষ্টা করলে আসতেও পারে।””
“” আমার কাছে একটা প্রস্তাব আছে,আপনি চাইলে গ্রহন করতে পারেন।””

অরিদ বেশ বিস্ময় নিয়ে পেছনে ঘুরে দাড়ালো। এক কদম এগিয়ে এসে বললো,

“” আজকে আমার শালির মুখে কথার খই ফুটছে দেখি। কোনো বিশেষ কারন আছে নাকি?””

অন্ত্রীশা কিছুটা লজ্জা নিয়ে বললো,

“” না,তেমন কিছুনা।””
“” আচ্ছা লজ্জা পেতে হবেনা। মজা করছিলাম। তা বললেনা তো তোমার প্রস্তাবটা কি?””
“” আপনি চাইলে আমি অরিদ্রার সাথে ঘুমুতে পারি। আর আপনি..””
“” তুমি কি তোমার আপুকে দিয়ে আমাকে মার খাওয়াতে চাচ্ছো?””

অন্ত্রীশা নিজের রুম ছেড়ে বাইরে এসে দাড়িয়ে বললো,

“” ভালোবাসার মানুষের মারের মধ্যেও ভালোবাসা থাকে। আপনি এতো দিনেও বুঝেননি দুলাভাই?””
“” তুমিতো দেখছি চারদিনের মধ্যেই ভালোবাসার উপর পিএইচডি করে ফেলেছো অন্ত্রীশা। পালক কি তার পালকের যাদু করে গেলো আমার শালীর উপর?””

অন্ত্রীশা আবার লজ্জামাখা মুখে বললো,

“” অরিদ্রা একা আছে,আমি গেলাম!””
“” কিন্তু তোমার বোন যদি আমাকে বের করে দেয়?””

অন্ত্রীশা মুচকি হেসে বললো,

“” আপুকে এতো ভয় পান? আচ্ছা আপনি ভেতরে যান আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।””
“” মানে?””

অরিদকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো,

“” মাঝে মাঝে ভালোবাসায় কিছুটা জোর প্রয়োগ করতে হয়,দুলাভাই। অধিকাংশ মেয়েগুলোই চায় তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে জোর করে ভালোবাসুক,সে আশায় ইচ্ছে করেই মুখ ফুটে ভালোবাসা চায়না!””

অরিদ বিস্ময়ভরা চোখে অন্ত্রীশার দিকে চেয়ে রয়েছে। এই দুটো বোনকে সে কিছুতেই বুঝেনা। একজন তো রাগের ক্ষেত নিয়ে বসেছে যখন তখন যা তা সবজি লাগাতে থাকে তো আরেকজন অতিরিক্ত স্বল্পভাষী। প্রয়োজন ছাড়া নিজের কথার ঝুড়ি থেকে কথা বের করেনা!

অন্ত্রীশা পুনরায় একটা মিস্টি হাসি উপহার দিলো অরিদকে। আর সাথে সাথে দরজাটা বাহির থেকে সিটকিনি লাগিয়ে দিলো যাতে তার বোন চাইলেও দুলাভাইকে বের করতে না পারে!

অরিদ মনে মনে হাজার হাজার কোটি কোটি ধন্যবাদ দিলো অন্ত্রীশাকে! অনিকশা যতই তার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করুক কিন্তু সে যে একটা রাতও অনিকশাকে ছাড়া কাটানোর কথা চিন্তা করতে পারেনা। অরিদ অনিকশার পাশে নিশব্দে শুয়ে পড়লো। কপালে হালকা চুমু একে দিয়ে ভাবনায় ডুব দিলো।

অনার্স ১ম বর্ষের নবীনবরনেই প্রথম দেখেছিলো অনিকশাকে। যদিও তখন অরিদ লাস্ট ইয়ারের। কিন্তু একি ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় ফ্রেন্ডের জোরাজুরিতে তাকেও যেতে হয়েছিলো। তবে সে ভার্সিটির বাইরে দাড়িয়েই ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছিলো আর ঠিক তখনি রিক্সা থেকে অফহোয়াইট কালারের খুবই হালকা কাজের জামা পড়া একটা মেয়েকে নামতে দেখে। চুলগুলো বেনি করে পেছনেই ছেড়ে রেখেছে,পুরোমুখটাতে মেকাপের কোনো ছিটেফুটাও নেই। নবীনবরনে সাদামাটাভাবে আসাতে অরিদ বেশ অবাকই হয়েছিলো। আর সেই অবাকই তাকে বার বার সেই মেয়েটির দিকে তাকাতে অস্থির করে তুলছিলো। তারপর থেকে টানা তিন বছর সে এই মেয়েটিকে দেখার জন্য রোজ ভার্সিটির এই গেইটের সামনে দাড়িয়ে থেকেছে। কিন্তু মুখ ফুটে কখনো বলতে পারেনি সে ভালোবাসার কথা। এই তিন বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছিলো অনিকশার। কিন্তু পরিবর্তন আসেনি অরিদের ভালোবাসার। একদিন হুট করেই অনিকশা অরিদের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,

“” বিয়ে করবেন আমায়? এক্ষুনি করতে হবে!””

অনিকশার এমন কথা হজম করতে বেশ কষ্ট হয়েছিলো অরিদের। মুখ দিয়ে কোনো কথা আসেনি। মনে হয়েছিলো এই মেয়ে তার কন্ঠ দিয়ে অরিদের কন্ঠকে খেয়ে ফেলেছে। অরিদ শুধু মাথা দুলিয়ে উপর নিচু করে হ্যা বলেছিলো!

সেদিন,ঠিক তখনি অরিদ আর অনিকশার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। তারপর দু পরিবার সামলিয়ে নিয়ে বেশ ভালোই চলছিলো অরিদ আর অনিকশার নতুন সংসারের। অনিকশা শুধু একটা কথাই বলতো,

“” আমাকে বেশি বেশি ভালোবাসোনা কেন? আমার যে বেশি বেশি ভালোবাসার খুব প্রয়োজন। আরেকটু বেশি ভালোবাসবে প্লিজ?””

অনিকশার এমন হুটহাট কথাই অরিদকে বেশ ভাবাতো। সে অনেকবার জানতে চেয়েছিলো হুট করে বিয়ে করার কারন কিন্তু সে সবসময় ব্যর্থ হয়েছে। দুমাস কাটতেই অনিকশা চেন্জ হতে থাকে। ছোটখাটো জিনিস নিয়ে রেগে যেতে থাকলো,সামান্য জিনিস নিয়ে তুমুল জগড়া বাধিয়ে ফেলতে থাকে। এর মধ্যেই জানতে পারে অনিকশার পেটে নতুন অতিথির আগমনের বার্তা। অরিদ ভেবেছিলো হয়তো এবার অনিকশা আবার আগের মতো অরিদের কাছে ভালোবাসা পাওয়ার আবদার করবে কিন্তু না অনিকশা দিন দিন তার থেকে দুরত্বই তৈরী করে যাচ্ছে।

অরিদের চোখ চিকচিক করছে। অনিকশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“” ভালোবাসি অনি,খুব বেশি ভালোবাসি!””

এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো অনিকশার চোখ থেকে। সেতো ঘুমুইনি তাহলে জাগবে কোন কারনে? আজ যে তার চোখে ঘুমরা নেমে আসেনি। অরিদের ফিস ফিস কথাটা অনিকশার বুকে গিয়ে লাগলো। ভালোবাসার কথা শুনেও কি কারো চোখে পানি আসে? তাহলে তার কেন আসলো? অনিকশার ইচ্ছে হলো সেও অরিদকে জড়িয়ে নিয়ে বলতে,আরেকটু ভালোবাসোনা আমাকে,আমার যে তোমার বেশি ভালোবাসার প্রয়োজন!

অন্ত্রীশার ঘুম ভাংলো আপুর ডাকে। ঘুমঘুম চোখেই তাকিয়ে রইলো অনিকশার দিকে!

“” তোর কল এসেছে,নে ধর!””
“” আমার কল তোমার ফোনে?””

অন্ত্রীশার হাতে ফোনটা গুজে দিয়ে মেয়ের দিকে এগুলো অনিকশা।

অন্ত্রীশা ফোনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো স্ক্রিনে পালক নাম উঠে আছে। এতো সকালে উনি কল দিয়েছেন কেন? আমার সাথে কথা বলবেন বলে? কিন্তু এতো সকালে কি কথা বলবেন? অন্ত্রীশা চোখটা ভালো করে মুছে নিয়ে,কন্ঠটা স্বাভাবিক করে বললো,

“” হ্যালো?””
“” তোমার সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। রুমে কেউ থাকলে তাকে বের করে দরজা আটকিয়ে আমাকে জানাও!””

এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা যার জন্য দরজা আটকিয়ে নিতে হবে? অন্ত্রীশা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে আপুকে টেনে বাইরে বের করে দরজা আটকিয়ে নিলো।

“” আটকিয়েছি বলুন!””

চলবে

#ধোয়ার_নেশা

#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৩)

এমন কী ইম্পর্ট্যান্ট কথা যার জন্য দরজা আটকিয়ে নিতে হবে? অন্ত্রীশা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে আপুকে টেনে বাইরে বের করে দরজা আটকিয়ে নিলো।

“” আটকিয়েছি বলুন!””

“” একটু লাইনে থাকো তো…””

যেখানে পালকের কন্ঠস্বর শুনার জন্য অন্ত্রীশা আকুল সেখানে ইম্পর্ট্যান্ট কথা মানে তো মহাআকুলতা। ফোনটা কানে নিয়েই বেশ মনোযোগী ভঙ্গিমায় বসে রয়েছে অন্ত্রীশা। এদিকে এক,দুই,তিন,পাঁচ,দশ,বিশ,চল্লিশ মিনিট পার হতে চলেছে কিন্তু ওপাশ থেকে কারো কন্ঠস্বর আর ভেসে আসছে না। অন্ত্রীশা খুবই সুক্ষমনো সংযোগ করে বুঝার চেষ্টা করছে ফোনের ওপাশে আদৌ কেউ আছে নাকি নেই। কী এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিল যার জন্য তাকে খালি রুমে দরজা আটকে নিতে হলো অথচ যে বলবে সে লাইনে দাঁড় করিয়ে বেপাত্তা হয়ে গেছে।

লাইনে থাকতে থাকতে অন্ত্রীশার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। বার বার ফোন চেক করে যাচ্ছে ওপাশ থেকে লাইনটাও কাটা হয়নি, এক এক করে সেকেন্ড বেড়ে গিয়ে মিনিটও বেড়ে যাচ্ছে। অন্ত্রীশা কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতেই বলে উঠলো,

“” আমি কি কলটা কেটে দিবো?””

কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনি দেখে অন্ত্রীশা এবার বেশ হতাশ হলো। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলো তার জীবনে যেন এমন লাইনে থাকা ইম্পর্ট্যান্ট মুহুর্ত আর কখনো না আসে!

অন্ত্রীশা কল কাটবে কী কাটবেনা ভেবেই পাচ্ছেনা। ফোনটা কানে নিয়ে বসা থেকে শুয়ে পড়লো। এক সময়ে তার চোখদুটো বন্ধও হয়ে আসলো।

“” তোমাকে বলেছিলাম লাইনে থাকতে,আমার জন্য তুমি সামান্য লাইনেও থাকতে পারো না? কেমন মেয়ে তুমি? আবার আমাকে বিয়ে করার জন্য ধেই ধেই করে নাচছো? তোমাকে বিয়ে তো দুরে থাক তোমার সাথে কথা বলতেও আমার গা গুলাচ্ছে। ইডিয়েট কোথাকার! খবরদার কারো কাছ থেকে যদি আমার নাম্বার নিয়েছো আর আমাকে কল দিয়েছো! তাহলে ফোনের ভেতর থেকেই তোমাকে আমি গুলি করে মেরে ফেলবো! যত্তসব!””

অন্ত্রীশা লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে পড়লো। শরীর ঘেমে গেছে। ওড়না দিয়ে গলা মুছতে মুছতে ভাবলো,এ আমি কেমন স্বপ্ন দেখলাম??

অন্ত্রীশার পাশেই পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিতেই দরজায় অনর্গল নক করার শব্দ পেলো। দৌড়ে দরজা খুলতেই অনিকশা ঝাঝালো কন্ঠে বললো,

“”দু ঘন্টা যাবত কী এতো কথা বলছিস শুনি? যার জন্য আমাকে রুম থেকে বের করে দিলি??””
“” আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম আপু,কথাতো হয়নি!””
“” কথা হয়নি মানে? তুই তো কানে ফোন লাগিয়েই আমাকে বের করে দিলি!””

অন্ত্রীশার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওর হাত থেকে নিজের ফোনটা ছিনিয়ে নিলো অনিকশা! ফোনের লাইটটা অন করেই দেখতে পেলো পালক এখনো কলে কানেক্ট আছে। নামের নিচটাতেই কল টাইমে ২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড উঠে আছে। যদিও বা সেকেন্ডটা এখনো চলছে!

অনিকশা বেশ করুণ নয়নেই অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” বিয়ে হওয়ার আগেই আপুকে মিথ্যে বলা শিখে গেলি?””
“” কি মিথ্যে বললাম?””

অন্ত্রীশার কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না অনিকশা। পালকের কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে ফেললো৷ নিজের রুমে এসে ফোনটা ঢিল মেরে ফেলে দিতেই অরিদ বলে উঠলো,

“” আমার রাগ ফোনের উপর ঝাড়ছো কেন, অনি? তুমি চাইলে আমাকে বকতে পারো! এখন তো তোমার বকা না খেলে আমার পেটের ভাত হজমই হয়না। দেখো আজকের নাস্তাটা এখনো হজম হয়নি,পেটটা কেমন ফুলে আছে!””
“”সুঁই দিয়ে ফুটো করে ফেলো দেখবে পেটটা তরতর করে কমে যাচ্ছে,যত্তসব হেয়ালিপনা করার আর সময় পায় না।””

অরিদ নিজের ল্যাপটপটা ফেলে উঠে অনিকশার কাছে এগিয়ে আসে।

“” তোমার রাগের ক্ষেতের সবজি বুনা কবে শেষ করবে বলো তো? এতো সবজি বুনছো অথচ মাটির উর্বরতা কমার নামই নাই। কোন মাটি দিয়ে ক্ষেত বানিয়েছো বলো তো!””

অনিকশা রক্তরাঙা চোখ নিয়ে চলে যেতে নিলেই অরিদ ওর হাতটা আকড়ে ধরে।

“” আজকের এই দিনটাই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম অনি,বুকের ভেতরে প্রথম মোচড়টাও আজকেই দিয়েছিলো। আজকের দিনটা কি আমাকে দিবে? একটু তোমাকে মন ভরে দেখার জন্য? লাস্ট কবে তুমি আমার চোখে চোখ রেখে হাসি দিয়েছিলে তোমার কি মনে পড়ে?””

অরিদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকলেও এখন আর ইচ্ছে করছে না। অরিদ তাকে কতটা ভালোবাসে সেটা হয়তো সে অরিদের থেকেও ভালো করে জানে। যে ছেলে শুধু একপলক দেখার জন্য রোজ ভার্সিটির গেটে দাড়িয়ে থেকে তিনটা বছর পাড়ি দিয়ে দিয়েছে সে ছেলের হৃদয়ের অনিকশা কতটা জায়গা জুরে ছিলো তাও অনিকশার অজানা না। আর সেই জানা থেকেই হয়তো এতটুকু বুঝতে পেরেছিলো অরিদ তাকে ফিরাবে না। আর সেই বিশ্বাসেই সে হুট করেই অরিদকে বিয়ের কথা বলে ফেলে। বিয়েটাও হয়ে যায়,কোনো সাজসজ্জা ছাড়াই!

অরিদ চাইলেই সেদিন অনিকশাকে ফিরিয়ে দিতে পারতো। যেখানে আজকালকার ছেলেরা চার,পাঁচ বছরের রিলেশনে গিয়েও বিয়ের কথায় পিছিয়ে যায় সেখানে তো অরিদের সাথে ভালোবাসার কোনো আদান-প্রদানও হয়নি,তবুও মানুষটা একটা টু শব্দ করেনি,একটাবার নিজের ফ্যামিলির কথা,ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি। অনিকশার জাস্ট এক কথায় বিয়ে করে ফেললো। কতটা ভালোবাসলে এমন কাজ করতে পারে ভাবলেই অনিকশার বুকটা কেঁপে উঠে। অরিদের ভালোবাসার বিনিময়ে এই চারটা বছরে সে অরিদকে কী দিয়েছে? শুধু অবহেলা আর অবহেলা! কিন্তু কেন? কেন সে অরিদের বুক ভরা ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে পারেনা?? অনিকশার লালচে চোখটা আরো লাল হয়ে আসলো তবে রাগে নয়,না পারার ব্যর্থতায়!

“”আমি মনে করতেও চাইনা। আজ অন্ত্রীশার গায়ে হলুদ,একটু পরেই মেহমানে বাড়িভর্তি হয়ে যাবে। আর এমন পরিস্থিতিতে তোমার এসব মাথায় আসে কী করে অরিদ?””
“” বেশি সময় নিবো না,অনি। এক ঘন্টা দিলেও চলবে! তোমার তাতেও সমস্যা হলে ৩০ মিনিট দিও? তোমার সাথে এক রিকশায় ঘুরতে ইচ্ছে করছে খুব,প্লিজ অনি!””

অরিদের এই আবেগ মেশানো কথাগুলো অনিকশার বুকে তীরের মতো গিয়ে বিঁধে। এতো আবেগ মেশানো কথা এই মানুষটা কোথা থেকে পাই? শুনলেই চোখটা ভিজে আসে। আর নিজের প্রতি ঘৃনা আসে। কিন্তু কোনো মানুষই চায় না সে নিজেকে ঘৃণা করুক অনিকশাও তাই! তাইতো সে যতটা পারে অরিদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে থাকে। আর সামনাসামনি হলেই কোনো ইস্যু দেখিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয় তবুও যেন মানুষটা তার আবেগ থেকে কিছুটাও নিজেকে সরাতে পারে না। এতো কেন ভালোবাসে সে আমাকে? আমি কি আসলেই এগুলো পাওয়ার যোগ্য??

অনিকশা জোর করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তির্যক কন্ঠে বললো,

“” আমি আমার একটা মিনিটও তোমার এইসব ফালতু কাজে ব্যবহার করতে চাই না!””

অনিকশা দ্রুত পদে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। পেছনে ফিরে তাকানোর সাহস নেই। সে জানে তার এই কথাটাই কতটা কষ্ট পেয়েছে অরিদ। কষ্টে মুখটা মলিন হয়ে এসেছে যা সে দেখতে পারবে না।

বাড়ি ভর্তি মেহমানের কদরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনিকশা। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার অরিদ ওর পিছু পিছু ঘুরঘুর করেছে কিন্তু সেদিক থেকে নিজেকে আড়াল করাটাই শ্রেয় মনে করলো অনিকশা। মানুষটাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলবে জানলে সে কখনোই বিয়ে করতে চাইতো না। সেদিনের সেই ছোট্ট ভুল আজ এত বড় ইস্যু হয়ে দাড়াবে কখনোই ভাবতে পারেনি সে।

অন্ত্রীশাকে হলুদ শাড়ীতে বেশ লাগছে। শুনেছে এই সবই নাকি পালক নিজে কিনেছে। সাথে ফুলের গয়নাগুলোও সে নিজের হাতে বানিয়েছে ভাবতেই মনের ভেতর আনন্দরা দোল খেয়ে যাচ্ছে অন্ত্রীশার! বার বার ফুলগুলোকে ছুঁয়ে দেখছে মাঝে মাঝেতো নাকে নিয়ে গন্ধও শুঁকছে। অন্ত্রীশার মনে হচ্ছে ফুলের মধ্যে সে পালকের গন্ধ পাচ্ছে,কী আবেগী সেই সুবাস।

অন্ত্রীশার এমন কান্ডে বেশ বিরক্ত হচ্ছে পার্লার থেকে আগত মেয়েগুলো। ঠিকমতো সাজাতেও পারছে না। এতো নাড়াচাড়া করলে কি সাজানো যায়? কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না!

“” উফ! আল কতক্ষন তোমাল সাজুগুজু দেখবো খালামনি? তুমি এমন কললে সাজানো কিভাবে শেষ হবে? বাল বাল ফুলগুলো খুলে নিয়ে নাকে শুঁকছো কেন? ফুলগুলোও তো নষ্ট কলে দিচ্ছো! আমি কখন সাজবো?””

অরিদ্রার কথায় হেসে ফেলে অন্ত্রীশা।

“” কী করবো মামনি? এইগুলোর গন্ধটা এতো বেশিই ভালো যে আমার তো নাক থেকে সরাতেই ইচ্ছে করছে না। কী করি বলো তো?””

অন্ত্রীশার কথায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে অরিদ্রা তা বুঝতে পারলো অন্ত্রীশা। অরিদ্রার গাল টিপে দিয়ে বললো,

“” আচ্ছা আর দুষ্টুমী করবো না। এই যে চুপটি করে বসছি। তুমি উনাদের বলো আমাকে ঠিকঠাক মতো সাজিয়ে দিতে। এই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।””

অনিকশা শাড়ীর কুচি ঠিক করায় ব্যস্ত! কিছুতেই কুচিটা মনের মতো হচ্ছে না। বিয়ের এতো বছর পরও শাড়ী পড়া শিখতে না পারায় সেদিন আম্মু হালকা করে ঝেড়ে দিয়েছিলো। আর আজকেও একি ঝাড়ি খাওয়ার সাহস পেলো না অনিকশা। তাই নিজে নিজেই শাড়ী পড়ার চেষ্টা করছে। যদিও বা কুঁচিগুলো তার হাতের অবাধ্য হচ্ছে। কিছুতেই সমান মাপে কুঁচি নিতে পারছে না। হঠাৎই অরিদ এসে অনিকশার হাত থেকে কুঁচিগুলো কেড়ে নিয়ে বললো,

“” আমাকে ডাকলেও পারতে। তোমার কাছাকাছি থাকার একটা বাহানা তো পেতাম!””

অরিদ নিজের হাত দিয়ে ছোট ছোট করে কুঁচি আংগুলে গেথে নিচ্ছে। কুঁচি থেকে নজরটা অরিদের দিকে পড়তেই সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেললো অনিকশা। মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে। একদিনেই এতো শুকিয়ে গেছে? সারাদিন কি কিছু খাইনি? নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে গিয়ে তো ওর খাবারের দিকে খেয়াল রাখাও হয়নি।

অরিদ কুঁচি গুছিয়ে অনিকশার কোমরে গুঁজে দিয়ে বললো,

“” তোমার চুলটা একটু বেনি করে দিবো?””
“” না,আমি খোপা করবো।””
“” অহ!””

অরিদের মলিন মুখ নিয়ে চলে যেতে নিলেই অনিকশা বলে উঠলো,

“” খোপা করলেতো ফুলও লাগাতে হবে। আমি তো ফুল কিনতেই ভুলে গেছি। বেনিই করে ফেলি,কী বলো অরিদ?””

অরিদ উৎসাহী কন্ঠে বললো,

“” আমি করে দেই?””
“” পারবে তো?””
“” আগেও তো করে দিয়েছিলাম,অনি!””

বেনি করা শেষে অনিকশাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে অরিদ বললো,

“” তোমার এই বেনুনিটাই যথেষ্ট আমাকে ঘায়েল করার জন্য!””

অনিকশা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নিজের ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিতেই বুঝতে পারে পালক কল করেছে।

“” হ্যালো?””
“” আপু,অন্ত্রীশার সাজ কি শেষ হয়েছে? সবার আগে ও কে আমি দেখতে চাই। আপনি কি ওর রুমে গিয়ে একটু ভিডিও কল দিবেন? আমি অপেক্ষায় আছি।””

পালকের মুখে আপু শব্দটা এতো বেনান লাগছে কেন?

“” আপু,কিছু বলছেন না যে?””
“” দিচ্ছি!””
“” ও যেন জানতে না পারে আমি ভিডিও কলে আছি। একটু খেয়াল রাখবেন!””

অনিকশা অন্ত্রীশার রুমে ঢুকে বেশ অবাক হলো। গায়ে হলুদ একজনের হলেও কনে দুজনকে দেখতে পাচ্ছে। হালকা মুচকি হেসে নিজের মেয়ের কাছে গিয়ে বললো,

“” আজকে কি আমার মা’টারও গায়ে হলুদ নাকি? খালামনির মতো সেজেছো যে?””
“” খালামনিল সাজটা আমাল খুব পছন্দ হলে আমাল কি দোষ?””

অনিকশা অরিদ্রাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,

“” না,আপনার তো দোষের কিছু নাই। সব দোষ আপনার খালামনির।””

অরিদ্রার গালে দুটো চুমু খেয়ে অন্ত্রীশাকে বললো,

“” দেখি এদিকে ঘুরে বস তো!””

অন্ত্রীশা ঘুরে বসতেই পালককে ভিডিও কল দিলো অনিকশা!

“” ওয়াও,ভাবীকে কী সুন্দর লাগছে রে,ভাইয়া। কিন্তু তুই ভাবীকে না দেখে জানালা দিয়ে কী দেখছিস?””

হঠাৎ পাপড়ির ডাকে জানালা থেকে সরে এসে পালক বললো,

“” কিছুনা। তুই এখানে কী করছিস?””
“” তুই তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করতে দিলি না। একটু হলুদ ও লাগাবি না বলে দিয়েছিস। হলুদ ছাড়া বিয়েটা কেমন পানসে পানসে লাগছে না? তাই তোর গালে একটু হলুদ লাগাতে আসলাম।””

বলেই পালকের গালে হলুদ লেপে দিলো পাপড়ি।

“” আরে কি করছিস? বলেছি না হলুদে আমার এলার্জি?””
“” বিয়ের হলুদে এলার্জি হয় না ভাইয়া। হলেও কি সমস্যা? ভাবী এসে ভালো করে দিবে।””

পালকের গালে হলুদ লাগিয়ে পাপড়ি আবার ল্যাপটপে তাকিয়ে বললো,

“” ইশ! ভাবীরা কত মজা করছে। আর তুই? তোর গায়ে হলুদ নিয়ে আমার কত প্লেন ছিলো জানিস? তুই সব ভেস্তে দিলি। তুই না আসলেই একটা তুই।””

পালক টিস্যু দিয়ে গালটা মুছতে মুছতে বললো,

“” তোরটা তো পড়েই আছে। তোর বিয়েতে পুরো বাড়ি হলুদ দিয়ে সাজিয়ে নিবো। তখন তুই খুশিতে হাত-পা ছড়িয়ে নাচিস!””
“” ধ্যাত,নিজেরটাতে কি মজা করা যায় নাকি?””

গায়ে হলুদের পালা শেষ করতে করতে মাঝরাত্রি হয়ে এসেছে প্রায়। অন্ত্রীশাকে গোসল করিয়ে ওর রুমের দিকেই এগুচ্ছে অনিকশা। এতক্ষণে বাড়িটা মনে হয় একটু শান্ত হলো। অন্ত্রীশাকে রুমে দিয়ে এসে নিজেও আরেকবার শাওয়ার নিবে ভাবতে ভাবতেই দরজা খুললো অনিকশা। রুমটা অন্ধকার দেখে একটু বিরক্তই হলো সে। এতো ব্যস্ততাই রুমের লাইটটাও দেওয়া হয়নি। সে দেইনি বলে কি অন্য কেউ দিতে পারলো না? এই রুমে কি সন্ধ্যের আলোটাও জ্বালানো হয়নি? মা তো এমন ভুল করবে না। যদি ভুল না করেই থাকে তাহলে লাইটটা বন্ধ করলো কে?

অনিকশা ভাবনায় ডুবে লাইট জ্বালাতেই ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

“” এতো লেট করলে কেন অন্ত্রীশা? তোমার অপেক্ষা করতে করতে তো আমি শুকিয়ে গেছি।””

ছেলে কন্ঠ পেয়ে অন্ত্রীশা আর অনিকশা দুজনেই অবাক। সামনে তাকাতেই দুজনের মুখ হা হয়ে গেলো। পালক বসে আছে সামনে,মেঝেতে পাগুলো ভাজ করে। আর পালকের সামনে তিন চারটে বোতল দেখা যাচ্ছে। দেখে তো মনে হচ্ছে মদের বোতল!

পালক বসা থেকে উঠে এসে অন্ত্রীশার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। অন্ত্রীশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় হাতটা ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। বা হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশার পেটের দিকটা জড়িয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“” নেশা করেছো কখনো??””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here