#ধোয়ার_নেশা,পর্ব (১০)
#রোকসানা_রাহমান
ওড়না চেপে ধরতে গিয়েও ধরতে পারছে না পালক। এক অপরাধবোধ তাকে খুব করে পেচিয়ে ধরছে। এভাবে কখনও অন্য একটা মেয়ের গলা থেকে ওড়না খুলতে হবে সেটা কি সে কখনো ভেবেছিলো? না ভাবেনি। যার ওড়নায় হাত দিতে গিয়েই হাত কেঁপে উঠছে তার জামাটা সে কিভাবে খুলবে? এতো কেন বিবেক নাড়া দিয়ে উঠে আমার? ও তো আমার বউ হয় তবুও এতো কেন এতোটা অসস্থি আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে? তবে কি শুধু সম্পর্কের নামই সব কিছু নয়? সম্পর্কের টানটা ফুটে উঠতে দুজনের মধ্যে অনুভূতিটাও খুব জরুরী? আচ্ছা ওর জায়গায় যদি পত্রীকন্যা হতো? তাহলেও কি আমার ভেতরটা এমন হাজারও তুচ্ছ প্রশ্নের সম্মুখীন হতো? না হতো না,কখনোই না। ও তো আমার ভালোবাসার মানুষ হতো!
পালক চোখটা বন্ধ করে অন্ত্রীশার ওড়নাটা খোলার চেষ্টা করতেই ওর হাতটা চেপে ধরে অন্ত্রীশা!
“” আমি হুশে আছি,এখনো বেহুশ হয়নি!””
অন্ত্রীশার ঠোঁট কেঁপে উঠা কথায় পালক দ্রুত চোখ মেলে ফেললো। ওর চোখে চোখ পড়তেই অন্ত্রীশা আবার বলে উঠলো,
“” এমনভাবে ছুচ্ছেন যে,আপনার কাছে নিজেকে পঁচা নর্দমার কীট মনে হচ্ছে। আমার শরীরটা কি এতোটাই নগন্য? ছুঁলে আপনার হাত পঁচে যাবে? দুর্গন্ধ বের হবে?””
অন্ত্রীশার কথার পিঠে পালক কী বলবে বুঝতে পারছে না। নিজেকে এতো ছোট করে বলছে কেন? আমি কি ওসব ভেবেছি? যাকে ভালোবাসি না সে বউ হলেই কি সবকিছুর অধিকারানি হয়ে যাবে? নাকি তার কাছে নিজের সবকিছুর অধিকার নিয়ে নিতে হবে? অন্যদের কাছে বিয়ে মানে কি আমি জানি না। কিন্তু আমার কাছে বিয়ে মানেই শরীরকে ভোগ করা নয়। একজন নারীর শরীরের প্রতিটা অঙ্গে লুকিয়ে আছে হাজারও অনুভূতি। যা সম্পুর্নভাবে অনুভব করার জন্য প্রয়োজন দুপক্ষের অসীম ভালোবাসার সম্মতি!
“” আমাকে উঠতে একটু হেল্প করবেন প্লিজ? আমি নিজেই চেন্জ করতে পারবো। আমি চাই না আমাকে ছুঁয়ে আপনি ভয়াবহ পঁচা রোগে আক্রান্ত হোন!””
কারো অনুরোধের পেছনেও যে এমন তাচ্ছিল্য থাকতে পারে তা পালকের জানা ছিলো না। সে কোনটাকে গ্রহণ করবে,অনুরোধ নাকি তাচ্ছিল্য?
“”তুমিতো ঠিকমতো কথাও বলতে পারছো না। চেন্জ করবে কিভাবে?””
“” দুর্বলতা মেয়েদের প্রধান বৈশিষ্ট হলেও কঠিন মুহুর্তে তারা দুর্বলতাকে বশ করে, নিজেকে কঠিন হতে কঠিনতর রুপে সাজিয়ে বিজয় লাভ করে!””
অন্ত্রীশার এক একটা কথা পালকের পশম দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। ও কি ইচ্ছে করেই আমাকে অপমান করছে নাকি অন্য কিছু বুঝাতে চাচ্ছে?
“” প্লিজ!””
পালক অন্ত্রীশাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিতেই ও বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। উঠতেই মাথাটা ঝাকি খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মাথার উপরের ভাগ আর নিচের ভাগ দুভাগ হতে চাচ্ছে। চোখটা ঝাপসা হয়ে অন্ধকার হয়ে আসতেই অন্ত্রীশা আবার বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।
“” তুমি ঠিক আছো তো?””
অন্ত্রীশা ছলছল নয়নে পালকের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চোখ দিয়েই পালককে বলতে চাচ্ছে, ঠিক নেই আমি,একটুও ঠিক নেই। আপনি কি সেটা বুঝতে পারেন না??
অন্ত্রীশা মনে সাহস নিয়ে আবার উঠে দাঁড়ালো। ওয়াড্রভ থেকে একটা সুতির জামা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে। পুরো শরীরটা কেঁপে কেঁপে তাকে বুঝাচ্ছে সে কতটা দুর্বল। কিন্তু এই মুহুর্তে সে দুর্বল হতে চায় না। আর এই মানুষটার সামনে তো নয়ই।
অন্ত্রীশা নিজের জামাটাকে আকড়ে ধরেই ধীর পায়ে এগুচ্ছে। নিশ্বাসগুলোর গরম তাপ নিজেই অনুভব করছে। কয়েক কদম এগুতেই অন্ত্রীশার পায়ের কাঁপনটা বেড়ে গেলো। চোখের সামনের সবকিছু আবার ঝাপসা গয়ে আসছে। অন্ত্রীশা মনে মনে নিজের দুর্বলতাটাকে প্রকাশ করতে না চাইলেও তার শরীরটা ঠিকই চাচ্ছে। অন্ত্রীশার মনের বিরুদ্ধে গিয়েই ঢলে পড়তে গেলেই পালক এসে জড়িয়ে ধরলো।
“” আমি বলছিলাম তুমি পারবে না!””
পালক অন্ত্রীশার চোখে চোখ রেখে কথাটা বলতেই অন্ত্রীশার ভেতরটা তুফান বয়ে গেলো। এই মুহুর্তে পালককে খুব নিজের মনে হচ্ছে!
পালকের চোখে চোখ পড়তেই অন্ত্রীশা নিজের চোখদ্বয় বন্ধ করে নিয়েছে৷ ঐ চোখে সে কখনোই চোখ রাখবে না। তাহলে যে তার ভেতরটা অনেক কিছুই করতে চাইবে! অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করেই বললো,,
“” বলছি তো আমি পারবো। আপনি কি বুঝতে পারছেন না? ছাড়ুন আমাকে!””
“” জিদ করছো কেন? জিদ করলেই কি তুমি সব পারবে?””
অন্ত্রীশা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় বললো,
“” হুম! আমাকে পারতে হবে। সব পারতে হবে। আপনি আমাকে এভাবে ধরে আছেন কেন? নর্দমার কীটকে এভাবে ধরে থাকলে তো আপনার শরীরে ভয়াবহ পঁচা রোগ দেখা দিবে!””
এ পর্যায়ে পালকের ভীষন রাগ হচ্ছে। এতো তেতো কথা এই মেয়েটা বলে কিভাবে? দেখতে এতো মিস্টি অথচ কথা? চেহারার সাথে কথাগুলো কিছুতেই মানাচ্ছে না।
অন্ত্রীশা জোর করে ছোটার চেষ্টা করতেই ওকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে নিলো পালক। কিন্তু ওর হাতদুটো অন্ত্রীশার বাহুর দিকে চেপে ধরে আছে। চোখটা অন্ত্রীশার দিকে তাক করা!
অন্ত্রীশা মেঝের দিকে তাকিয়েই পুনরায় কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“” ছাড়ুন আমাকে। আমি পার….””
অন্ত্রীশার কথা শেষ হওয়ার আগেই পালক ওর জামার পেছনে থাকা চেইনটা টান দিয়ে খুলে চিৎকার করে উঠলো,
“” আমি যে বলছি,তুমি পারবে না। সেটা শুনতে পারছো না? খুব জেদ দেখাচ্ছো আমাকে? আর একটা কথা বললে, তোমাকে তুলে নিয়ে খোলা বারান্দা দিয়ে ঢিল মেরে নিচে ফেলে দিবো। চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে। নড়লেই মাইর খাবে!””
পালকের ঘুম ভাংতেই বিছানাটা শুন্য পেলো। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো ৮ টা বেজে ১২ মিনিট। খুব বেশি সকাল তো হয়নি তাহলে ও উঠে গেলো কেন? ও কি সুস্থ হয়ে গেছে? কিন্তু কাল রাতেও তো ও বেশ ভালোই অসুস্থতাই ভুগেছে। শরীরের তাপমাত্রাটাও তো অত্যাধিক বেশি ছিলো। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে সুস্থ হলো?? ধুর! আমি কেন এতো ভাবছি ওকে নিয়ে? ওর মনে হয়েছে ও উঠে গেছে তাতে আমার কী?
পালক আড়মোড় ভেংগে উঠে দাঁড়াতেই বিছানায় নজর আটকে গেলো একটা চেইনের উপর। অন্ত্রীশা যে জায়গাটায় শুয়ে ছিলো সেখানে একটা ছেড়া চেইন পড়ে আছে। সূর্যের আলোতে চিকচিক করে বেশ বুঝিয়ে দিচ্ছে সে সোনার তৈরি!
“” আমার শালীকে এতো বেশি অত্যাচার করা কি ঠিক হচ্ছে,ছোট ভাই?””
পালক ছেলে কন্ঠ পেয়ে পেছনে ঘুরতেই অরিদকে দেখতে পেলো। ঠোঁটে সৌজন্যমুলক হাসি এনে বললো,
“” মানে?””
“” ভরটা একটু কম ছাড়ো। শালীতো আমার ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছে না।””
অরিদের কথার অর্থ পালক বুঝে উঠতে পারছে না। কিসের অত্যাচার,আর কিসের ভরের কথা বলছেন উনি? আমি কখন ওকে অত্যাচার করলাম? ও কি সবাইকে এসবই বলে বেড়িয়েছে?
অরিদ পালকের কাছ ঘেষে এসে ওর কাধে হাত রেখে বললো,
“” মজা করছিলাম,ছোট ভাই! ব্রেকফাস্ট রেডি। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি আবার বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারি না!””
পালক আবার একটু হাসির চেষ্টা করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। এই লোকটাকে সে বিয়ের দিনই যে প্রথম দেখেছিলো তা নয়। কিন্তু তাদের মধ্যে সামনাসামনি কথা হলো এই প্রথম। নিজের মধ্যে জড়তা কাজ করছে। এই তো সে ব্যক্তি যার জন্য সে তার পত্রীকন্যাকে হারিয়ে ফেলেছে।
“” পালক!””
পালক ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়েও থেমে গেলো। অরিদের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই অরিদ আবার ওর কাছে চলে আসলো।
“” তোমাকে একটাবার জড়িয়ে ধরি?””
অরিদের এমন অদ্ভুত কথায় পালক ওর দিকে অদ্ভুতভাবেই তাকিয়েছে। পালকের উত্তরের অপেক্ষা না করেই অরিদ ওকে জড়িয়ে নিলো।
অরিদের এমন ব্যবহারে পালক বেশ বিব্রত হচ্ছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। তারও কি অরিদকে জড়িয়ে নেওয়া উচিত? কিন্তু এমন হুট করে জড়িয়ে ধরার কারণ কী? এমন ও তো নয় তাড়া দুজন খুব পরিচিত। হ্যাঁ অনিকশার স্বামী হওয়ার সুবাধে পালক ওকে চিনে কিন্তু তাদের মাঝে কখনো কথা হয়নি। তাহলে কোন সম্পর্কের টানে জড়িয়ে ধরেছে? অরিদের তো আমাকে চেনারও কথা নয়৷
পালককে খুব শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে অরিদ ধরা গলায় বললো,
“” তুমি আমাকে ভাই বলেই ডেকো। দুলাভাইতো অনি ডাকেই। তুমি নাহয় ভাই বলে ডাকলে!””
“” জ্বী!””
পালককে ছেড়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো অরিদ। বেশ কিছুক্ষণ কাটার পর ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বললো,
“” তোমার জন্য খাবার টেবিলে ওয়েট করছি। তাড়াতাড়ি চলে এসো!””
অরিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে পালক। হাসি হাসি মুখটার জায়গায় একটা অভিমানের ছায়া দেখতে পাচ্ছিলো পালক। কিন্তু কিসের অভিমান? ঠোঁটে হাসি থাকলেও চোখদুটো যে নোনা পানিতে চিকচিক করছিলো সেটাও খুব ভালো করেই নজরে পড়েছে পালকের। পালকের চোখেও কিছুটা পানি জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু কেন? তারও কি অভিমান হচ্ছে? নাকি ভালো লাগছে? লোকটা জড়িয়ে ধরার পর থেকে একটা নতুন সম্পর্ক সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সত্যিই অরিদকে সে বড় ভাই বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তার তো রাগ উঠার কথা। এই লোকটিই তো তার পত্রী কন্যাকে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে। তবুও কেন তার একটুও রাগ হয়নি?
“”মাথা ব্যথা কমেছে মামনি? খেতে হবে না?””
লিয়াকত সাহেবের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে অন্ত্রীশা। চোখটা বন্ধ করেই বললো,
“” তোমার আদর খেয়েই তো আমার পেট ঢোল হয়ে গেছে। আবার কী খাবো,আব্বু?””
অন্ত্রীশার কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন লিয়াকত সাহেব। বেশ কিছুক্ষণ হাসির পর্ব শেষ করে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“” আল্লাহ কোন মানুষদেরকে বেশি পছন্দ করেন, তা কি তুমি জানো,মা?””
“” যে ঠিকমতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,আর ভালো কাজ করে।””
অন্ত্রীশার উত্তরে এবারও লিয়াকত সাহেব হেঁসে উঠলেন,তবে উচ্চস্বরে না।
“” তোমার উত্তর পুরোপুরি সঠিক হয়নি,মা। আল্লাহ ধৈর্যশীল মানুষকে সব থেকে বেশি পছন্দ করেন।””
“” সত্যি?””
“” হুম। আর আমি জানি আমার মেয়েও যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল! তুমি তোমার ধৈর্য্য হারিয়ো না। দেখো আল্লাহ তোমার জন্য সব থেকে বেস্ট উপহারটা বেছে রেখেছেন। আর বেস্ট উপহারটা পেতে হলে তো তোমাকে অবশ্যই বেশি ধৈর্য্য ধরতে হবে। তুমি কি চাওনা বেস্ট উপহারটা নিতে?””
অন্ত্রীশা শোয়া থেকে উঠে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার বাবাটা তার সবকিছু কিভাবে বুঝে ফেলে? বাবা,মা সম্পর্ক সৃষ্টির সময় কি তাদের মধ্যে আরেকটা ইন্দ্রীয় যোগ করে দেওয়া হয়? যার সাহায্যে উনারা সন্তানের না বলা কথাগুলো বুঝে ফেলে?
“” আমার আম্মাজান চুপ হয়ে গেলো যে?””
অন্ত্রীশা বাবাকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
“” আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ধৈর্যশীল হয়ে দেখাবো,আব্বু। আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বেস্ট উপহারটাতো আমার চাই ই চাই।””
লিয়াকত সাহেব ঠোঁটে হাসি রেখেই বললো,
“” মনে হচ্ছে,তোমার পেটে ক্ষুধারা আবার হাজির হয়েছে?””
অন্ত্রীশাও হাসি হাসি মুখে বললো,
“” ঠিক বলেছো। তবে আমি তোমার হাতে আয়েশ করে খাবো৷ তোমার রুমে,ঠিক এই জায়গাটাতে বসে।””
অরিদ আর পালক পাশাপাশিই খাবার টেবিলে বসে আছে। দুজনেই চুপচাপ। অনিকশা আর মিসেস মনিরা খন্দকার টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরেই লিয়াকত সাহেব চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
অনিকশা, অরিদ আর পালকের সামনে নাস্তার প্লেট রেখে চলে যেতে নিলেই ওর হাত চেপে ধরে অরিদ।
“” কোথায় যাচ্ছো? এইখানটাই বসো।””
অরিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে অনিকশাকে ওখানে বসিয়ে পাশের চেয়ারটাতে নিজে বসে পড়লো।
অরিদ এমন জোর করে অনিকশাকে বসিয়ে দিলো যে এখন উঠতেও পারছে না। এক পাশে অরিদ তো অন্যপাশে পালক। এভাবে দুজনের মাঝখানে বসে অনিকশা ঘামতে শুরু করেছে।
“” খাচ্ছো না কেন?””
অরিদের কথায় অনিকশা পরোটা ছিড়ে মুখে পুড়তেই পালক পাশ থেকে বললো,
“” তোমার পাশে বসে নাস্তা তো করছি,কিন্তু তোমাকে বউ বলে ডাকতে পারছি না। চোখের সামনে নিজের পত্রীকন্যার হাত অন্যজন ধরে আছে। এটা দেখার পরও কি আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে,পত্রীকন্যা?””
পালকের কথা শুনে অনিকশার খাবার মুখে আটকে গিয়েছে। বুকে জ্বালা ধরিয়ে কেঁশে উঠতেই পালক আর অরিদ একসাথে পানিভর্তি দুটো গ্লাস এগিয়ে ধরলো। কার গ্লাসটা সে নিবে? এমন পরিস্থিতে তাকে না পড়লেই কি হতো না? অরিদের জোরকে পাশে রেখে কি সে উঠে যেতে পারতো না??
অরিদ নিজের গ্লাসটা ফেরত নিয়ে নিজেই ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেললো। অনিকশা অরিদের এমন ব্যবহারে থ হয়ে গেলো।
অরিদ খালি গ্লাসটা টেবিলে রেখে অনিকশার দিকে চেয়ে নিচু স্বরে বললো,
“” তুমি বিব্রত হও এমন কোনো কাজই আমি করবো না,অনি। পানিটা খেয়ে নাও!””
কিছুক্ষণ পরেই শ্বশুড়বাড়ির উদ্দশ্যে পা বাড়াবে অন্ত্রীশা। আবার কবে আসবে কে জানে? ভাবতেই অন্ত্রীশার বুকে চাপা কষ্ট হচ্ছে। আব্বু,আম্মু,আপু,দুলাভাই সবাইকে খুব মিস করবে সে। খুব মিস করবে।
দুপুরের খাবার শেষ করে পালক বিছানায় নিজেকে মেলে দিয়েছিলো। হয়তো খুব টায়ার্ড ছিলো তাই চোখে ঘুম নেমে আসে। রাতেও তেমন একটা ঘুম হয়নি। নিজের রুম ছাড়া অন্য কোথাও সে ঘুমুতে পারে না। তবে আতিশের সাথে সে মাঝে মাঝেই ঘুমিয়েছে। ওর বিছানাই এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করে পালক।
পালকের ঘুম ভাংগে চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে। চোখ মেলে পাশ ফিরতেই অন্ত্রীশার দিকে চোখ আটকে গেলো। পাতলা মিষ্টি কালারের জর্জেটের শাড়ি পরেছে সে। দুহাত ভর্তি মিষ্টি রঙের চুড়ি। চুড়ি হাতে দিয়ে মাথা আচড়ানোর ফলেই এতো শব্দ করছে। অন্ত্রীশার এমন সাজে বেশ অবাক হলো পালক। একটু পরেই তো এ বাড়ি ছেড়ে যাবে। কোথায় সে মন খারাপ করে বসে থাকবে তা না সাজুগুজুতে ব্যস্ত!
পালক অন্ত্রীশার থেকে চোখ সরাতে গিয়েও আবার থেমে গেলো। এবার চোখ আটকেছে অন্ত্রীশার শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে থাকা পেটে!
“”বিয়ের পর তুমি যখন আমার সাথে রাগ করবে তখনি আমি টুপ করে শাড়ী পরে ফেলবো। পেট বের করে পরবো। নাভীটাও বের করে পরবো। আমি তো শুনেছি,মেয়েরা শরীর দেখিয়ে নাকি ছেলেদের যাদু করতে পারে। আমি নাহয় আমার মেদহীন পেটের মধ্যে থাকা গর্তহীন নাভী দেখিয়ে তোমার রাগ ভাংগাবো। কী গো তোমার রাগ ভাংবে তো? না ভাংলেও মিছেমিছি ভাংগাবে। নাহলে কিন্তু আমি ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিবো।”” এমনি হাজারও দুষ্টুমিষ্টু কথা দিয়ে সাজিয়ে কত চিঠি লিখেছিলো তার পত্রীকন্যা। আমিতো আজো রাগ করে আছি তোমার উপর। তাহলে তুমি কেন আমার রাগ ভাংগাতে আসছো না,পত্রীকন্যা?
অন্ত্রীশা আয়নায় পালকের চেয়ে থাকা দেখে বেশ আনন্দিত হচ্ছিলো। একটু দুষ্টুমীর বাহানা টুপ করে শাড়ীটা টেনে পেট ঢেকে ফেললো। এভাবে পেট ঢেকে ফেলায় পালকের ভাবনাও কেটে গিয়েছে। কিছুটা লজ্জাবোধ নিয়েই চোখটা সরিয়ে ফেললো।
অন্ত্রীশা ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে হাঁটা ধরতেই পালক বলে উঠলো,,
“” তুমি আর কখনো শাড়ি পরবে না অন্ত্রীশা। যাও এখনি এটা চেন্জ করে আসো!””
পালকের এমন কথায় অন্ত্রীশা থেমে গেলো। বড় বড় পা ফেলে পালকের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছুটা সামনের দিকে ঝুকে এসে পালকের চোখে চোখ রেখে বললো,
“” কেন পরবো না?””
“” আমি বলছি তাই!””
অন্ত্রীশা এবার তার ছোট ছোট চোখগুলো বড় বড় করে ফেললো। মুখে রাগ এনে পালকের দিকে আরেকটু ঝুকলো,,,
“” আপনি বললেই আমায় শুনতে হবে? কেন শুনবো আমি? কে হোন আপনি? আপনি কি আমার কিছু হোন? নাকি আমি আপনার কিছু হয় যে আপনার কথা আমায় পালন করতে হবে। আপনার হুকুম আমাকে মানতে হবে। আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে কি আমি আপনার ক্রীতদাসী হয়ে গেছি? না শুনলে আমাকে মারবেন? কী দিয়ে মারবেন? চাবুক দিয়ে??””
অন্ত্রীশার এমন রাগ ঝরানো কথায় পালককেও রাগিয়ে দিলো। অন্ত্রীশাকে টেনে বিছানায় ফেলে দিয়েছে। ওর উপর উঠে ওর বাহুজোড়া চেপে ধরে বললো,
“” আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে। তুমি শাড়ী পরবে না মানে পরবে না।””
“” ১০০ বার পরবো,১০০০ বার পড়্রবো,১০০০০০ বার পরবো। শুনবো না আপনার কথা আমি,কি করবেন আপনি?””
অন্ত্রীশার আগুন ঝরানো চাহনি যেন পালককে পুড়িয়ে দিচ্ছে৷ পারছে না সে চোখে চোখ রাখতে। তবুও জোর করে তাকিয়ে রইলো।
“” বলছেন না কেন? কী করবেন আপনার হুকুম না মানলে?””
পালক অন্ত্রীশার কথার উত্তর না দিয়েই নিজের ডান হাতটা ওর শাড়ীর কুঁচিটা খামচে ধরলো। অন্ত্রীশার চোখে চোখ রেখেই শাড়ীর কুঁচি টেনে খুলে ফেললো!
চলবে