#ধোয়ার_নেশা,পর্ব (১১)
#রোকসানা_রাহমান
পালকের এমন আকস্মিক কাণ্ডে অন্ত্রীশা ভূত দেখার মতো চমকে গিয়েছে,চোখদুটো বড়বড় করে পালকের দিকে তাকিয়ে আছে,
পালক ছোট্ট হাসি নিয়ে বললো,
“” আমার কি আরো কিছু করতে হবে,অন্ত্রীশা?””
“” নাহ! আমাকে করতে হবে।””
পালক একটা ভ্রূ উঁচু করে গম্ভীর গলায় বললো,
“” তোমাকে করতে হবে মানে?””
অন্ত্রীশা নিজের শরীরের সবটুকু জোর দিয়ে পালককে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। অন্ত্রীশার ধাক্কার জন্য পালক মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। বিছানায় হাল্কা গড়িয়ে গিয়ে কাত হয়ে পড়েছে। অন্ত্রীশা নিজের খোলা শাড়ীকে পেঁচিয়ে নিয়ে পালকের উপর উঠে,ঠিক ওর পেটের উপর বসে পড়লো।
“” অন্ত্রীশা কী করছো?””
“” আপনি কিছু করে দেখালেন তো আমারও কিছু করে দেখানো উচিত। নাহলে তো আপনাকে অপমান করা হবে,তাই না?””
অন্ত্রীশা নিজের কথাটা শেষ করতেই পালককে একটা চোখ মেরে দিলো। তাতে পালক হা করে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বেশিক্ষণ হা করে থাকতে পারেনি। তার আগেই নিজের উপর অন্ত্রীশার হামলা এসে পড়েছে।
অন্ত্রীশা নিজের দুটো হাত দিয়ে পালকের শার্ট টেনে ছিড়ে ফেলতে শুরু করেছে। আমাকে আপনার কথা শুনাতে হবে তাই না? আমাকে শাড়ী পড়তে দিবেন না? আমার উপর জোর দেখানো হচ্ছে? সামান্য একটা সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছিলাম তার বিপরীতে ডিরেক্ট না করে দিয়েছেন! এতো ভাব আসে কোথা থেকে? সব কিছুতে নিজের কর্তৃত্ব ফোটানো? নিজে যা বলবেন তাই করতে হবে?
পালক অন্ত্রীশার পাগলামীকে আটকাতে চাচ্ছে। ওর দুটো হাত চেপে ধরে থাকলেও অন্ত্রীশাকে দমাতে পারছে না। হঠাৎ করে এতো শক্তি ওর মধ্যে এলো কী করে?
অন্ত্রীশা এতক্ষণ চোখ মেলে থাকলেও এবার চোখ বন্ধ করে নিলো। তার মনে হচ্ছে,চোখ মেলে থাকাই শক্তির ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করলে আরেকটু বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে। চোখ বন্ধ করেই পালকের শরীরে খামচিয়ে শার্টের অবস্থা বেহাল করে দিচ্ছে। বোতামগুলোও আলগা হয়ে এসে,খুলে যাচ্ছে।
“” আরে কী করতে চাচ্ছো কী তুমি? আমার শার্ট ছিড়ছো কেন?””
অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিলো,
“” আপনাকে ধর্ষণ করবো তাই!””
“” হোয়াট,কি উদ্ভট কথা বলছো? থামো বলছি,নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে,অন্ত্রীশা!””
“” আমি তো চাই ই খারাপ হোক। দেখি আপনি কত খারাপ হতে পারেন।””
অন্ত্রীশার পাগলামী আর সহ্য হচ্ছে না পালকের। বিরক্ত হচ্ছে,একি সাথে রাগও হচ্ছে। মেয়েটা কি হঠাৎ করে পাগল হয়ে গেলো? সত্যি সত্যিই ধর্ষণের মতো বাজে কাজটা ওকে দিয়ে সম্ভব? তার কি এটাও দেখা বাকি ছিলো? বউয়ের হাতে স্বামী ধর্ষণ! আচ্ছা যদি সত্যি সত্যিই এমন হয় তাহলে কী হবে?
পালক আর কিছু ভাবতে পারছে না। একটা মেয়ের কাছে সে কিছুতেই ধর্ষণ হতে চায় না! পালক অন্ত্রীশার হাত ধরে ও কে সরানোর চেষ্টা করছে। দুজনের ছুটাছুটি,হাতাহাতিতে দুজনেই গড়িয়ে ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেলো। তবুও দস্তাদস্তি থামেনি!
“”আম্মু,দেখো খালামনিলা মালামালি খেলছে। খালামনি তো পালছে না,তুমি একতু হেলেপ কলো! নাহলে আংকেলটা জিতে যাবে!!””
অরিদ্রার কথায় অনিকশা, বিছানার অপর পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখ,মুখ কুঁচকে ফেললো!
দস্তাদস্তিতে পড়ে গিয়ে পালক অন্ত্রীশার উপরেই ছিলো। ওর হাতদুটো চেপে ধরে ওকে আটকিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি অরিদ্রার আগমন ঘটে। সাথে সাথে অনিকশার!
পালক দ্রুত অন্ত্রীশাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে। এই প্রথম সে অনিকশার সামনে লজ্জা পাচ্ছে। খুব বেশি বিব্রতিকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন? আমি তো সবসময় চেয়েই ছিলাম ওর সামনে অন্ত্রীশাকে নিয়ে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে। তাহলে আজ কেন এমন লাগছে? তবে কি এবারের ঘটনাটা কৃত্রিমভাবে তৈরি ছিলো না তাই? ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়াতেই পালক হেসে উঠে,অন্ত্রীশা আমাকে ধর্ষণ করতে সফল না হলেও আমার শার্টকে ঠিক ধর্ষণ করে ফেলেছে!
অন্ত্রীশাও বেশ লজ্জিতভাবে নিজের শাড়ী গুটিয়ে ঠিক করার বাহানায় নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। ছি! ছি!!ছি!!! আমার সব লজ্জিত ঘটনাগুলো এমন বাজেভাবে শেষ হয় কেন? সবসময় আপুর সামনেই পড়তে হয় কেন?
অনিকশা,অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর শাড়ী নিজের হাতে নিয়ে বললো,
“” হয়েছে,আর লজ্জা পেতে হবে না!””
এবার যেন অন্ত্রীশার চোখ,মুখ সব লাল হয়ে আসলো। তার আপুটা তাকে লজ্জা পেতে ও দেখে ফেলেছে।
“” এভাবে শুয়ে থাকলে তোর ইন্টারভিউ কে দিবে? আমি দিয়ে দিবো?””
আতিশ চোখ মেলেই পালককে হাতভর্তি ফলফলাদিসহ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।
আতিশের পাশে ওগুলো রেখে ওর পাশে নিজেও শুয়ে বললো,
“” জ্বর বাধালি কিভাবে?””
“” আমি গরমে হাঁপিয়ে উঠছি,পালক। আমাকে ছাড়!””
“” সামান্য জ্বরের জন্য তুই আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিস? এই তোর বন্ধুত্ব? ছি! আতিশ,তুই তো দেখি…””
“” হ্যাঁ,আমি বন্ধু নামের কলংক। রাগে আমার গরম দ্বিগুন হারে বেড়ে যাচ্ছে। আজকে আমার কত ইম্পর্ট্যান্ট ইন্টারভিউ ছিলো জানিস? এই চাকরিটা আমার নিশ্চিত হতো! এই জ্বরের জন্য আমার চাকরিটা গেলো!””
পালক আতিশের পায়ের উপর নিজের বা পা’টা উঠিয়ে কিছুটা আয়েশ করে শুয়েছে। জ্বরটা যে খুব জোরালোভাবেই ওকে চেপে ধরেছে তা ওর শরীরের তাপমাত্রায় বুঝা যাচ্ছে।
“” ডক্টর দেখিয়েছিস?””
“” না।””
“” কেন?””
“” এমনি!””
পালক আতিশের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
“” আমার অফিসে জয়েন করছিস না কেন? আর কতগুলো জয়েনিং লেটার পাঠাতে হবে? তোর কি মনে হয় তোকে লেটার পাঠানোই আমার প্রধান কাজ? আমি বসে বসে শুধু তোর লেটারই লেখে যাবো?””
“” তুই জানিস আমি কেন জয়েন হচ্ছি না। তবুও কেন ঐ কথা বলছিস?””
“”বন্ধু হয়ে বন্ধুর অফিসে কাজ করলেই কি ছোট হয়ে যায়?””
“” অন্যদেরটা জানি না,কিন্তু আমার কাছে হয়ে যায়।””
“” আরে বাবা,আমি তো তোকে এমনি এমনি চাকরি দিচ্ছি না। তোর যথেষ্ট যোগ্যতা আছে,তোর মতো লোকের আমাদের অফিসে প্রয়োজন!””
“” আমার যোগ্যতা শুধু তোর চোখেই ধরা পড়লো? অন্যদের চোখে পড়ছে না কেন? যদি তেমনি হতো তাহলে এখনও আমি বেকার পড়ে থাকতাম না!””
“” আতিশ,তুই কিন্তু…””
“” তুই যদি এটা বলার জন্যই এসে থাকিস,তাহলে এখন যেতে পারিস। আমি এ ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।””
আতিশ রেগে যাচ্ছে বুঝতে পেরে পালক ওকে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে বললো,
“” তোর মতো বন্ধু সবার ভাগ্যে জোটে না। আমি কত লাকি রে,আতিশ!””
“” আমি কি তোর বউ? এভাবে ঝাপটে ধরে আছিস কেন? নাকি বউয়ের ঘোর এখনো কাটেনি? দেখি ছাড় আমাকে!””
“” না,ছাড়বো না। তোকে জড়িয়ে ধরলে আমি যে প্রশান্তি পাই তা বউকে জড়িয়ে ধরলেও পাবো না।””
“” তুই যদি আমার সব প্রশান্তি নিয়ে নিস,আমার বউয়ের কী হবে? পরে তো আমার বউ প্রশান্তির অভাবে দুদিনেই ভেগে যাবে,পালক!””
“” তোর বিয়ে করা লাগবে না। তোর এতো বিয়ের শখ থাকলে আমাকে করে নিতে পারিস!””
আতিশ,পালকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“” পাগল নাকি? তোর নাহয় বউয়ের আদর লাগবে না। কিন্তু আমার তো লাগবে। চাকরিটা পেলেই বউ নিয়ে চলে আসবো!””
পালক শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে। গলার কাছটাতে থাকা বোতামটা খুলে নিতে নিতে বললো,
“” এমনভাবে বলছিস যেন মেয়েরা তোকে বিয়ে করার জন্য এক পা নয় দুপা তুলে দাঁড়িয়ে আছে!””
“” হুম!””
“” হুম কী? তুই কি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছিস?””
পালকের উত্তরে আতিশ ছোট একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তার আবার প্রেম!
অন্ত্রীশাকে পালকদের বাসায় রেখেই পালক বেরিয়ে পড়েছিলো। বেশ কিছুক্ষন শাশুড়ির সাথে গল্প চালিয়েও যেন মনটা ভালো করতে পারছে না অন্ত্রীশা! একেই তো নিজের বাড়ির সব ভালোবাসার মানুষগুলোকে ছেড়ে এসেছে। তার উপর নিজের বরটার ও বাসায় আসার নাম নেই। ও জানে বাসায় থাকলেও হয়তো নিজেদের মধ্যে তেমন কোনো কথা,তেমন কোনো বিশেষ মুহূর্ত,কোনো দুষ্টুমী খেলায় তারা মেতে উঠতো না। তবুও মানুষটা চোখের সামনে থাকলেও ভেতরে ভেতরে ভালো লাগা কাজ করে। আচ্ছা উনি কি এমনি থাকবেন? আমার সাথে এমন অবহেলাই করে যাবেন? নাকি অন্য কিছু হওয়ার সম্বাবনা আছে?? উনার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তাহলে কী হতো? সে কি আমাকে কোনো ভালেবাসার রাজ্যে নিয়ে যেতো? নাকি আমি এখনকার মতো অন্য পুরুষের ভালোবাসার রাজ্যে যেতেও এমন ছটফট করতাম???
অন্ত্রীশা পালকের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়েই ভাবনায় ডুবে আছে। তবে এই বারান্দাটা তার রুমের বারান্দার মতো খোলা নয়। কালো গ্রিল দিয়ে আটকানো। নিচে দু চারটা টপে ফুলের গাছ আছে,ফুলও ফুটে আছে। সবগুলোই গোলাপ ফুল। কিন্তু প্রত্যেকটা গাছে ভিন্ন ভিন্ন কালারের ফুল ফুটে আছে। অন্ত্রীশার ইচ্ছে হলো সব কয়টা গাছ থেকে একটা করে ফুল ছিড়ে নিজেকে সাজাতে। ফুলে হাত দিয়েও ছিড়লো না। সে কেন সাজবে? আর কার জন্যই বা সাজবে? তার সাজ দেখার জন্যতো উনার সময়,ইচ্ছে,রুচি কিছুই নেই।
“” তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে কেন?””
পালকের কণ্ঠে অন্ত্রীশা পেছনে ঘুরে তাকালো। সাদা হাফ হাতার টি-শার্ট পরে আছে। চাঁদের আলোতে সাদা টি-শার্টটা আরো বেশি আলো দিচ্ছে। এমন একটা ভাব যেন চাঁদ তার সব জোসনা উনার টি-শার্টেই ঢেলে দিয়েছেন।
পালক তার পরনের ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়েই অন্ত্রীশার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“” সেদিন তোমার সাথে যা ঘটেছিলো তা অন্য মেয়ের সাথে ঘটলে কখনোই বিয়েতে রাজি হতো না। তুমি কেন রাজি হলে? তোমাদের ফ্যামিলি যথেষ্ট কনজার্টিভ,শিক্ষিত এবং মর্যাদাপুর্ন,আর সেই ফ্যামিলির মেয়ে হয়ে এমন ডিসিশন কিভাবে নিলে তাও এতো সহজ ও দ্রুততার সাথে?””
“” হঠাৎ এই প্রশ্ন?””
“” হঠাৎ নয়,বিষয়টা আমার মাথায় শুরু থেকেই ছিলো। কিন্তু প্রশ্ন করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে উঠেনি…””
“” আজ বুঝি সেই পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে? তা কিভাবে হলো? আর আপনার সেই পরিবেশটা কেমন শুনি?””
“” তুমি কথা ঘুরাচ্ছো কেন? আমি আমার কৌতুহল থেকে প্রশ্নটা করেছি,ইচ্ছে হলে উত্তর দিবে নাহলে দিবে না!””
অন্ত্রীশা এতক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বললেও এবার পালকের দিকে তাকিয়ে বললো,
“” আপনি দেখতে আমার প্রেমিকের মতো তো তাই ভাবলাম আপনাকে বিয়ে করে প্রেমিকের শোক কাটাবো!””
অন্ত্রীশা তার উত্তর দিয়ে সেখান থেকে পদত্যাগ করছে। পালক তখনও অন্ত্রীশাকে দেখেই যাচ্ছে। অন্ত্রীশার থেকে চোখ সরিয়ে সেও ভাবনায় ডুব দিলো। নিয়তি আমাদের কোথায় নিয়ে এসেছে,একজন প্রেমিকের শোক ভোলার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে,আর আমি? আমি কেন ওকে বিয়ে করেছি? অনিকশাকে ভুলার জন্য নাকি ওর সামনে নিজের কষ্টটাকে দেখানোর জন্য নাকি ওকে হিংসে জ্বলতে দেখার জন্য??
পালকের ভাবনার ঘোর কাটলো,রুমের ভেতর থেকে আসা চিকন ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে! মনে হচ্ছে কেউ কোনো ভারী জিনিস হ্যাঁচড়িয়ে সরানোর চেষ্টা করছে। শব্দটা নিজের রুম থেকে আসছে বুঝতে পেরেই পালক রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে।
ভেতরে ঢুকেই সে অন্ত্রীশাকে দেখতে পেলো। সে লম্বা সোফাটা বাইরে থেকে ভেতরে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সোফার একটা কোণা দরজায় আটকে থাকায় সে কিছুতেই ভেতরে ঢুকাতে পারছে না। ভেতরে ঢোকাবে কী নাড়াতেও পারছে না।
গলার ওড়নাটা গলা থেকে খুলে কাঁধের দিক থেকে বাকা করে নিয়ে কোমড়ে বেধেছে,অন্ত্রীশা! সামনে থেকে দেখতে না পেলেও তার মনে হলো এটা কোনো বিবাহিত মেয়ে না,সদ্য যৌবনে পা দেওয়া যুবতি নারী।
পালক অন্ত্রীশার কাছে এগিয়ে বললো,
“” কী করছেন? ব্যথা পাবেন তো। এতো ভারী জিনিস টানাটানি করছেন কেন?””
অন্ত্রীশা বিরক্ত নিয়ে পালকের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে চোখের সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে বললো,
“” আপনাকে টানাটানি করতে পারছি না তাই!””
“” মানে?””
“” এতো প্রশ্ন করছেন কেন? আপনাকে উত্তর দিতে গিয়ে আমার সব শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে।””
“” উত্তর দিলে শক্তি শেষ হয়ে যায়?””
“” উফ! আবার প্রশ্ন করছেন কেন? আমাকে একটু হেল্প তো করতে পারেন।””
“” কিন্তু এটা দিয়ে কী করবে?””
“” কাবাডি খেলবো।””
“” কাবাডি!””
“” জ্বী,আমার কি কাবাডি খেলাও নিষেধ?””
অন্ত্রীশার দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে সোফাতে হাত দিলো পালক। ওর নির্দেশানুযায়ী রুমের এক সাইডে রাখা হয়েছে সোফাটা।
অন্ত্রীশা বিছানা থেকে একটা বালিশ সোফাতে রাখতেই পালক বললো,
“” তুমি কি সোফাই ঘুমাবে?””
“” না,আপনি ঘুমাবেন। আমার তো আপনার বিছানাটাই বেশ পছন্দ হয়েছে।””
“” কিন্তু তুমিতো বলেছিলে কাবাডি খেলবে!””
“” খেলবোই তো সময় হলে ঠিক খেলবো। আপাতত আপনাকে ঘুমানোর জন্য ধার দিলাম!””
পালক সোফা থেকে বালিশটা নিয়ে মেঝেতে ফেলে বললো,
“” আমি ধার করা জিনিস পছন্দ করি না। তোমার জিনিস তুমিই রাখো।””
“” আমার জিনিস কেউ ফেরত দিক এটাও আমার পছন্দ না।””
“” তুমি আবার ঝগড়া করতে চাচ্ছো?””
“” আপনি যদি চান আমি ঝগড়া করি তাহলে করতে পারি। আমি তো আপনার ক্রীতদাসী। আপনার হুকুম পালন করা আমার জন্য ফরজ!””
অন্ত্রীশাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো পালক। চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়ে।
আতিশের অসুস্থতার জন্য আজকে পড়াতে আসেনি পাপড়িকে। একে তো তাকে দেখতে পাইনি তার উপর অসুস্থ শুনে পাপড়ির ঘুম আসছে না। ভেতরটা কেমন কেমন জানি তেতো হয়ে আসছে। যতক্ষণ না আতিশের দেখা পাবে ততক্ষণ কি তার ভেতরের তেতো ভাবটা যাবে? কখন দেখবে সে তার আতিশ ভাইকে? কাল যদি সুস্থ না হয় তাহলে তো কালও দেখা হবে না। তাহলে কি কাল আমি উনাকে গিয়ে দেখে আসবো? কিন্তু উনি যদি রেগে যান? আমাকে দেখলেই তো উনার রাগ কড়কড় করে। পাপড়ি ছটফট করতে করতে বিছানা নষ্ট করে ফেলছে,তবুও চোখে ঘুম আসছে না।
আতিশকে কল দেওয়ার চিন্তায় ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ২ টা বেজে ৪২। এতো রাতে কল দেওয়া ঠিক হবে না ভেবে ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিলো। আর ঠিক তখনি দরজায় নক পড়লো। এতো রাতে আবার কে? পুনরায় নক পড়তেই পাপড়ি উঠে দরজার কাছে এগুচ্ছে।
“” ভাবী, তুমি? এতো রাতে? কোনো সমস্যা?””
“” তোমার কাছে কেঁচি হবে?””
“” কেঁচি?””
“” আরে সিজার। হবে?””
“” এতো রাতে সিজার দিয়ে কী করবে?””
“” থাকলে বলো নাহলে চলে যাই””
পাপড়ির কাছ থেকে কেঁচি নিয়েই অন্ত্রীশা নিজের রুমে ফেরত এসেছে। দরজা বন্ধ করে ধীর পায়ে পালকের উপর উঠে বসলো। পালক উপুত হয়ে শুয়ে থাকায় বেশ সুবিধাই হলো অন্ত্রীশার। বাম হাত দিয়ে আলতোভাবে টি-শার্টের কিনার ধরে ঠিক মাঝ বরাবর কেচি দিয়ে কাটা শুরু করে দিয়েছে!
চলবে