ধোয়ার_নেশা,০৪,০৫

0
950

#ধোয়ার_নেশা,০৪,০৫
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৪)

পালক বসা থেকে উঠে এসে অন্ত্রীশার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। অন্ত্রীশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় হাতটা ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। বা হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশার পেটের দিকটা জড়িয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“” নেশা করেছো কখনো??””

পালকের এমন আচরণে অন্ত্রীশা স্তব্ধ হয়ে গেলো। এভাবে হুট করে এতোটা কাছে টেনে নিবে সে তো ভাবতেও পারেনি। ভাববেই বা কিভাবে? এই মাঝরাতে তার রুমে পালকের উপস্থিতি পাবে সেটা তো কল্পনাও করেনি। পালকের নিশ্বাসের শব্দে অন্ত্রীশার জান যায় যায় অবস্থা। এর মধ্যে নেশার কথা শুনে মনে হচ্ছে এখনি টুপ করে জানটা বিদায় জানাবে! নেশায় তো সে কবেই ডুব দিয়েছে যার কাছে এই মদের নেশা অতি নগন্য!

পালকের ছোয়াতে অন্ত্রীশা ভালো লাগা খুঁজে পেলেও তা তো সে নিজের বোন তাও বড় বোনের সামনেই মাখাতে পারে না। কিছুটা অস্থিরতা নিয়েই পালকের কোল থেক উঠে যেতে চাইলো। হালকা নড়ে উঠতেই পালক ওকে এবার দুহাতে ঝাপটে ধরে বললো,

“” এতো ছটফট করছো কেন? এখনো তো কিছুই করলাম না,ছটফটি! বললে না তো নেশা করেছো নাকি?””

অন্ত্রীশার উত্তর শোনার অপেক্ষা না করেই অনিকশার দিকে তাকালো পালক,

“” হবু বউয়ের সাথে ব্যাচলর পার্টি করার মনের মনি কোঠায় একটা ইচ্ছে জেগেছিলো। অনেক আগে থেকেই। তাই ভাবলাম ইচ্ছেটাকে মাটি চাপা না দিয়ে বরং পুরণ করে নেই। আপু,আপনিও কি আমাদের সাথে জয়েন করবেন? যদিও বা আপনি বিবাহিত। আমার তরফ থেকে কোনো সমস্যা নেই। আপনি চাইলে জয়েন করতে পারেন!””

পালকের মুখে আপু ডাকটি সম্মানের নাকি তাচ্ছিল্যের বুঝে উঠতে পারছে না অনিকশা। পালকের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘুরে দাড়ায় সে। নিজের ছোটবোনের ঘনিষ্ঠ সময়ে সেখানে থাকাটা খুবই খারাপ দেখাচ্ছে। কেউ দেখাতে চাইলেই যে তাকেও দেখতে হবে এমন তো কথা নেই!

অনিকশা চলে যেতেই পালক মদের বোতলটায় হাত দেয়। গ্লাসে ঢেলে নিয়ে মুখের সামনে ধরতেই অন্ত্রীশা নিজের হাত দিয়ে আটকে বললো,

“” যেটাতে আপনি অভ্যস্ত নয় সেটা কেন করতে চাচ্ছেন? এই মাঝরাতে বমি করে আমার রুমটা নোংরা করতে চাচ্ছেন? আপনার দেওয়া শাড়িটা জড়িয়ে রাখতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে তার উপর রুম পরিষ্কার করা আমার জন্য খুবই কষ্টের হবে!””

অন্ত্রীশার এমন কথায় ওর দিকে চোখ পড়ে পালকের। খুবই বিস্ময়ের চাহনি। মিসেস তানিয়া বেগম এ পর্যন্ত ডজন খানেক মেয়ের ছবি দেখিয়েছিলো পালককে। গুনে গুনে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে তাদের বাড়িতেও পালককে নিয়ে হাজির হয়েছিলো। কিন্তু প্রত্যেক বারই পাত্রীদের সামনেই দাঁড়িয়ে উঠে সবার সামনে বলেছিলো পাত্রী তার পছন্দ হয়নি। আর যেখানে তার বিয়ে করার ইচ্ছেই ছিলো না সেখানে মেয়ের ছবি দেখে কী লাভ আর মেয়েকে দেখেই কী লাভ? তাই অন্য সব মেয়েদের মতো অন্ত্রীশার ছবিটাও হয়তো তার রুমের কোনো এক কোণে পড়ে রয়েছে। অন্যদের মতো এবারও সে একই কাজ করবে ভেবেই অন্ত্রীশাদের বাড়িতে আসা হয়েছিলো। পাত্রী কে, কোন পাশে বসে ছিলো,কী পড়েছিলো কিছুই সে দেখেনি। কখনো দেখার প্রয়োজনও মনে করেনি!

অন্ত্রীশার নজর ড্রিংকস ভর্তি গ্লাসে থাকলেও পালকের নজর তার দিকে। লাইটের দিকে মুখ করে থাকায় অন্ত্রীশার মুখটা খুব ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে। ছোট ছোট চোখের উপরে জোড়া ব্রু,দেখে মনে হচ্ছে দুটো কালো রংধনু একসাথে সুখ দুখের কথা বলছে। তার মাঝখান দিয়েই চিকন,সরু নাক। অতটা খারা না হলেও বোচাও বলা যাবে না। নাকের সামনের দিকে বিন্দু বিন্দু ঘামের সমাবেশ। তার নিচেই গোলাপী আভার চিকন ঠোঁট,ঠোঁটের উপরের হালকা পশমও জন্মগ্রহন করে আছে,বয়স বোধহয় খুবই ছোট হবে যার কারনে তেমনভাবে ভেসে উঠেনি,এমনটা খুব কম মেয়েরই থাকে। অন্যদের দেখতে কেমন দেখায় পালক জানে না কিন্তু তার হবু বউটাকে বেশ মানিয়েছে মনে হচ্ছে,নাকের মধ্যে ঘামের সমাবেশের কিছু সদস্য ঠোঁটের উপরে বসে আছে,মনে হয় নাকের জায়গায় তারা ঠাঁই পাইনি। গালগুলোর চোখের নিচ দিয়ে একটু ফোলা হলেও ঠোঁটের দিকে এসে মিশতে মিশতে চেপে এসেছে। ঠোটের নিচের থুতনিটা ধার বেয়ে এসে কিছুটা ভেতরে ঢুকে গর্ত সৃষ্টি করেছে,যার ফলে থুতনিটা অনেকটা লাভের উপরের শেপটার মতো দেখাচ্ছে! কপালের কাছটাতে বেবি হেয়ারগুলো কপালের সাথে ল্যাপ্টে আছে,হয়তো সবেই গোসল করে এসেছে তাই। সব মিলিয়ে অন্ত্রীশাকে সুন্দরী কন্যাদের কাতারেই ফেলা যায়। তবে এত সুন্দর মুখটার কোথাও তিলের দেখা না পেয়ে একটু মন খারাপ হলো পালকের। একটা তিল থাকলে হয়তো আরো বেশি ভালো লাগতো। পালক চোখটা বন্ধ করে অন্ত্রীশার মুখে কোনো এক জায়গায় তিল বসিয়ে নিলো। কিন্তু পরক্ষণেই চোখ খুলে বিড়বিড় করে বললো,

“” না,বেমানান দেখাচ্ছে!””
“” কী?””

অন্ত্রীশার মুখে কী শুনে পালক হুঁশে এলো। তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে দাঁড়ালো। যে পথ দিয়ে এসেছিলো সেই পথে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

“” গ্রিল ছাড়া বেলকনি আমার একদম পছন্দ না। তোমার আব্বুকে বলে দিও।””

পালকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অন্ত্রীশা মুচকি হেসে মনে মনে বললো,

“” আমার তো এবার নেশায় গোসল হয়ে গেছে, চুমুবাবু!”

অনিকশা রুমে ঢুকেই দেখলো অরিদ্রার পাশেই অরিদ শুয়ে আথে,সোজা হয়ে শুয়ে হাতের কব্জীর অংশটা দিয়ে চোখটা ঢেকে আছে। লাইটের আলোতে ঘুমুতে পারে না অরিদ! খুব করেই জানে অনিকশা। তবুও এমনভাবে শুয়ে আছে যেন সে গভীর ঘুমে মুগ্ন।

অনিকশা অরিদ্রার অন্যপাশে শুয়ে পড়লো। উল্টো দিকে কাত হয়ে শুলেও পরক্ষণে ইচ্ছে করেই সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো। তার কপালে চুমু না খাওয়া পর্যন্তও যে অরিদ ঘুমুবে না এটা অজানা নয় অনিকশার। যতই সে ঘুমের বাহানা করুক। তার সাথে বাহানার দিক দিয়ে তো অনিকশা অনেকটাই এগিয়ে!

কয়েক মিনিট যেতেই অরিদের ঠোঁটের ছোয়া পেলো অনিকশা। চোখ বন্ধ করেই অনিকশা বললো,

“” সেদিন যদি আমি তোমার কাছে না যেতাম,তুমি কি আসতে আমার কাছে?””
“” তুমি এখনো ঘুমোওনি,অনি? কতরাত হয়েছে জানো? একটু পরেই তো ফজরের…””
“” আমি একটা প্রশ্ন করছি অরিদ!””
“” কী?””
“” সেদিন আমি তোমাকে বিয়ের কথা না বললে কি তুমি আমাকে বিয়ের কথা বলতে.””
“” এগুলো এখন কেন টেনে আনছো অনি?””

অনিকশা শোয়া থেকে উঠে বসে অরিদের মুখোমুখি হয়ে বললো,

“” আমি যা জানতে চাইলাম তার উত্তর দাও।””

অরিদ ঠোঁটদুটো প্রসস্থ করে অনির গালটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে বললো,

“” আমি তোমাকে আমার সারা জীবনের সংগী হিসেবেই চেয়েছিলাম,অনি!””

অনিকশা রাগে অরিদের হাতটা সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো,

“” না,তুমি মিথ্যে বলছো,যে তিন বছর পার করেও ভালোবাসি বলতে পারেনি সে বিয়ের কথা কিভাবে বলতো?””
“” অনি, অরিদ্রা উঠে যাবে,শান্তু হও প্লিজ! আমার লক্ষী বউ!””

অনিকশা বসা থেকে উঠে পড়ে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,

“” খবরদার,তুমি আমাকে বউ বলে ডাকবে না। যে ছেলেটা আদৌ বিয়ের কথা বলতেই পারতো না সে ছেলেটার বউ বলে ডাকার কোনো অধিকার নেই!””

অরিদ ও বিছানা থেকে নেমে অনিকশার সামনে এসে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,

“” ছুঁবে না, তুমি আমাকে। যেখানে তুমি বিয়ের কথা বলতেই পারতে না সেখানে আমার এক কথাই তুমি কেন বিয়ে করলে আমায়? সেই দিনের সেই ছোট্ট আবদার রাখতে গিয়ে আজ আমরা এখানে এসে থমকে গিয়েছি। তুমি কেন সেদিন আমাকে ফিরিয়ে দাওনি? বলো কেন দাওনি? সেদিন যদি আমাকে ফিরিয়ে দিতে তাহলে আজ হয়তো আমার জায়গায় তোমার জীবনে অন্য কেউ থাকতো,তোমার জীবনটা আরো সুন্দর হতে পারতো,আর অরিদ্রা! অরিদ্রার আম্মুও হয়তো অন্য…””

অনিকশাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো অরিদ। খুব যত্ন সহকারে আগলে ধরে বললো,

“” আমার খুব লোভ হয়েছিলো সেদিন। তোমাকে পাওয়ার লোভ,নিজের করে পাওয়ার! হয়তো সেদিন তোমাকে বিয়ে করার কোনো চিন্তাভাবনা আমার ছিলো না,কিন্তু এতটুকু জোর দিয়ে বলতে পারবো,তোমার জায়গায় তুমি না থাকলে এ জায়গাটা শুন্যই পরে থাকতো। এখানে অন্য কারোর অস্তিত্বের আগমন কখনোই ঘটতো না””
“” আমি বিশ্বাস করিনা,তুমি আমাকে ভুলানোর জন্য এসব মিথ্যে বলছো,অরিদ!””

অরিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিদ্রা বলে উঠলো,,

“” পাপাই,মামনি,তোমলা আমাকে লেখেই আদল আদল খেলছো? আমি ঘুমিয়ে পললেই তোমাদেল আদল আদল খেলতে হয়? তোমলা এত দুষ্তু কেন? আমাকে কখনোই আদল আদল খেলায় নেও না। তোমাদেল সাথে আলি!””

অরিদ্রার কণ্ঠ পেয়ে অনিকশা নিজেকে সরিয়ে নিলো অরিদের বুক থেকে। অরিদ্রার দিকে তাকিয়ে বুঝলো,তাদের ঝগড়ার কারণেই হয়তো ওর ঘুম ভেংগে গেছে,উঠে বসে আছে,গালদুটো ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে আছে। অনিকশা আর অরিদের চোখাচোখি হতেই দুজনে একসাথে হেঁসে উঠলো!

অন্ত্রীশার বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় যেতে ইচ্ছে হলো না পালকের। তাই পথ ঘুরে বাল্যকালের বন্ধু আতিশের বাসার দিকে রওনা দিলো। ছোটবেলা থেকেই একসাথে হেসে,খেলে বড় হয়ে উঠা। স্কুল,কলেজ ভার্সিটিও একসাথে। অন্ত্রীশার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ওর সাথে দেখা হয়নি পালকের। কালকে একটা নতুন সূচনার আগে আতিশের সাথে দেখা করাটা খুবই দরকার। এ কয়দিনে মনের ভেতরে জমে থাকা হাজারও কথা সেগুলো তো ওর উপর ঢেলেই হজম করতে হবে। সে তো তার কথা হজম করার বন্ধু!

ফজরের আজানের সাথে সাথেই আতিশের বাসায় হাজির হলো পালক।

“” এতো ভোরে আমার বাসায়। কি হয়েছে? সবকিছু ঠিক তো?””

আতিশের বিছানায় শরীরটা মেলে দিয়ে হাসি মুখেই পালক বললো,

“” অনেকদিন দেখা হয় না,তাই ভাবলাম একটু দেখে যায়। তোর চাকরির কী হলো?””

পালকের পাশে আতিশও শুয়ে পড়লো,

“” নতুন কোনো খবর নেই। আজকেও একটা ইন্টারভিও আছে। চাকরির বাজারের যে অবস্থা!””

দুজনে বেশ কিছুক্ষন সুখদুখের গল্প করার পর পকেটে হাত দিলো পালক। একটা সাদা খাম বের করে আতিশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“” নে,এটা ধর!””

আতিশ খামটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পালকের হাত পিছিয়ে দিয়ে বললো,

“” আমি আর তোর বোনকে পড়াতে পারবো না,পালক!””

পালক মুচকি হেসে আতিশের বালিশের নিচে খামটা রাখতে রাখতে বললো,

“” তোর সাথে কথা বলে আমি যেমন আমার মনের জ্বালা মিটাই। তার বিনিময়ে তোর পেটের কিছুটা জ্বালা কমানো আমার জন্য ফরয। আর তাছাড়া এটা তো এমনি এমনি নিচ্ছিস না,পাপড়িকে পড়ানোর জন্য তোর যে সময়টা ব্যয় হয় তার জন্য!””

আতিশ মনে মনে বললো,ছাই পড়াই। পাপড়ি পড়লে তো পড়াবো। সারাক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে কোন ভাবনায় হারায় আল্লাহই জানে!

“” কিছু বললি?””
“” না। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলবি?””
“” কী?””
“” যে কুপিটা নিভে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে তাতে কেরোসিন কেন ঢালছিস? এতে যে তোর সাথে অন্যরাও জড়িয়ে পুড়ে যেতে পারে তা তুই বুঝতে পারছিস না?””

আতিশের কথার পিঠে পালক বড় করে একটা হামি দিয়ে আরাম করে শুয়ে বললো,

“” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে,দোস্ত! আমাকে দু ঘন্টা পর জাগিয়ে দিস তো। নাহলে বিয়ে ভেংগে গেলে তোর পুড়ে যাওয়া পুড়ানী কন্যারা বিয়ের আগেই জ্বলে যাবে!””

পালকের দিকে তাকিয়ে আতিশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেও শুয়ে পড়লো।

অন্ত্রীশা বিয়ের শাড়ী দেখে বেশ আশ্চর্যিত! মিষ্টি কালার শাড়ির মধ্যে সাদা মুক্তো পাথরের ভারী কাজ। এমন মিষ্টি বেনারশী পড়ে বিয়ের কনে হয়তো সেই প্রথম সাজবে। কেমন লাগবে তাকে? মিষ্টি কনের মতো মিষ্টি লাগবে তো?

অন্ত্রীশার হাজারও ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটালো অনিকশার আগমনে। রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দিলো। দ্রুত পদে অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর হাত থেকে বেনারশীটা কেড়ে নিয়ে তীর্যক কন্ঠে বললো,

“” এই বিয়ে তুই কিছুতেই করতে পারিস না,অনতি!””

চলবে

#ধোয়ার_নেশা

#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৫)

অন্ত্রীশার হাজারও ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটালো অনিকশার আগমনে। রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দিলো। দ্রুত পদে অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর হাত থেকে বেনারশীটা কেড়ে নিয়ে তীর্যক কন্ঠে বললো,

“” এই বিয়ে তুই কিছুতেই করতে পারিস না,অনতি!””

অনিকশার কথায় অন্ত্রীশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। বেশ অবাক হয়েই বললো,

“” কেন,আপু? কি হয়েছে?””

অনিকশার ভীষন রাগ হচ্ছে! কেন হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না,কার উপর রাগ হচ্ছে এটাও বুঝতে পারছে না। কিন্তু রাগটা অন্ত্রীশার উপর ঢালতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওর উপর ঢালাটা কি ঠিক হবে?? একটুও ঠিক হবে না! অনিকশা নিজের রাগগুলোকে বড় করে ঢুক গিলে খেয়ে ফেললো। চোখ বন্ধ করে রাগী লুকটাকে ঢেকে নিয়ে শান্ত হয়ে বললো,

“” এটা কোনো বেনারশী হলো,অনতি? এতো বড় ঘরের ছেলে অথচ তার পছন্দ দেখ,কী নিচু! দেখে তো মনে হচ্ছে হাজার টাকাও হবে না। এমন নিচু মনের ছেলে আমার বোনের হাসবেন্ড হবে? কিছুতেই না। তুই তো আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করিস। হ্যাঁ তোর গায়ের রংটা আমার তুলনায় একটু কালো,কিন্তু অন্য সব দিক দিয়ে আমার থেকে এগিয়ে!””

অন্ত্রীশা আপুর কথায় এবার বেশ বিরক্ত হলো। সামান্য শাড়ী দেখেই বুঝে ফেললো পালকের মন নিচু? শুধু কালার আর দাম দেখেই সব কিছু বুঝা যায়? সে যে এটা নিজ থেকে পছন্দ করেছে এটা দেখলো না? এটাতে যে তার স্পর্শ আর ভালোবাসা মিশে আছে। ইশ! আপুটা যে কেন ভালোবাসাগুলো দেখতে পায় না। না অরিদ ভাইয়ার ভালোবাসা দেখতে পায়, না পালক ভাইয়ার! ছি! ছি!!ছি!!! উনি কি আমার ভাই লাগে নাকি? অনলি পালক!

অন্ত্রীশা পালক নামটা উচ্চারণ করাতে লজ্জায় ঠোঁটদুটো নড়ে উঠছে। অনিকশা কপালটা কুঁচকিয়ে বললো,

“”তুই হাসছিস কেন? এমন ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে তোর হাসিটা কেমন লাগছে,জানিস?””
“” আপু ব্লাউজটা কেমন টাইট টাইট লাগছে! বোতাম খুলে যাবে নাতো?””
“” আমি তোকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলছি আর তুই কিনা বোতাম নিয়ে পড়ে আছিস? দেখি এগুলো সব খোল। অমন নিচু মনের মানুষের সাথে তোর বিয়ে হতে পারে না৷ আমি বেঁচে থাকতে তো নাই।””

অনিকশা অন্ত্রীশার কাছে ঘেষে ব্লাউজে হাত দিতেই বললো,

“” আপু,তোমাকে খুব অশান্ত লাগছে। কি হয়েছে বলবে? তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?””

অন্ত্রীশার এমন কথায় অনিকশা ওর ব্লাউজ থেকে হাত সরিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ বোনের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে থেকে ওর বাহু চেপে ধরলো। ড্রেসিং টেবিলের কাছ থেকে টেনে নিয়ে অন্ত্রীশাকে ওর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসেছে। অন্ত্রীশার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো,

“” এ বিয়েটা করিস না,বোন।””
“” কিন্তু কেন?””
“” কারন…. কার… পালক তোর থেকে বয়সে অনেকটা বড়!””
“” উফ! আপু মাত্র ৪ বছরের বড়।””
“” ৪ বছর তোর কাছে মাত্র মনে হচ্ছে? এটা অনেক বড়! এত বড় ছেলেকে তোর বিয়ে করতে হবে না। আমি তোর জন্য ওর থেকেও ভালো ছেলে এনে দিবো।””
“” আপু,অরিদ ভাইয়াও তোমার থেকে ৪ বছরের বড়। তাহলে তুমি কেন অরিদ ভাইয়াকে বিয়ে করেছো? তুমি করতে পারলে আমি করতে পারবো না?””
“” আমি আর তুই এক? আমিও তো তোর থেকে ৪ বছরের বড়। আমার থেকে তুই বেশি বুঝিস?””

অন্ত্রীশা এবার আপুর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে বললো,

“” এসব ছোটখাটো কারণ দেখিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করার থেকে বিরত রাখতে পারবে না। আমার আজকে তোমার কথা রাখতে ইচ্ছে করছে আপু,তুমি একটা বড় কারণ দেখাও তাহলে আমি বিয়ে করবো না,প্রমিস!””

অন্ত্রীশার কথায় অনিকশার মুখটা চুপসে গেলো। কী বলতে এসে কী বলছে সে? ভেতরের কথাগুলো আর কতদিন অন্ধকারে বন্দী করে রাখবে? এবারও কি সে মুক্তি দিতে পারবে না??

অন্ত্রীশা বিছানা ছেড়ে উঠে আবার আয়নার সামনে দাড়ালো। ব্লাউজ আর পেটিকোটে নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে তাই দেখার জন্য। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ভাবলো,খুবই বিচ্ছিরি লাগছে,কিন্তু মুভিতে নায়িকাদের তো এমন বিচ্ছিরী লাগে না। তার ও তো ওদের মতো মেদহীন পেট!

“” তোর কি মনে হয় পালক তোকে পছন্দ করে?””

অনিকশার কথায় অন্ত্রীশা আয়না দিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

“” অবশ্যই,নাহলে অমন পাগলামি করবেন কেন?””
“” উফ! তুই বুঝতে পারছিস না। পালক ওগুলো তোকে ভালোবেসে নয়,অন্য কারণে করছে!””

অন্ত্রীশা বোনের কাছে এসে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। অনিকশার কাঁধে নিজের থুতনিটা ভর করে রেখে বললো,

“” আমি জানি,আপু! উনি এ রকম পাগলামী করার ছেলেই নয়। উনার আরেকটা রুপ আছে,যেটা আমার খুব পরিচিত। ওটাকে কাছ থেকে দেখতে হলে যে উনাকে বিয়ে করা জরুরী!””

এসব কি বলছে অনতি? ও জানে মানে? কী জানে ও? আর কিসের সাথে পরিচিত বলছে? কি বুঝাতে চাচ্ছে ও? তাহলে কি পালককে ও আগে থেকে চিনে? ওর সাথে কি পালকের কোনো কানেক্ট আছে? কিন্তু এটা কী করে হতে পারে? সে রকম হলে তো আমার জানার কথা! অনিকশার মাথা ঝিম ধরে আসছে। এই মুহুর্তে ও কোনো ঝিমে ডুকতে চায় না তাই পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো,,,

“” তুই কি পালককে আগে থেকে চিনিস অনতি?””

অনিকশার প্রশ্নের উত্তরে অন্ত্রীশা ছোট্ট একটা হাসি উপহার দিতেই দরজায় কড়া নড়ে উঠে।

“” পার্লারের মেয়েরা এসে গেছে,আপু!””

অন্ত্রীশা দৌড়ে দরজা খুলে দিতেই ৫/৬জন মেয়ে রুমে ঢুকে গেলো। হাতে বড় বড় বক্স! হয়তো এগুলোর মধ্যে সাজসরন্জাম লুকায়িত!

অন্ত্রীশা বেশ উৎসাহে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটাতে বসে পড়লো। এতক্ষণে পার্লারের মেয়েগুলোও অন্ত্রীশাকে নিয়ে বিজি হয়ে পড়েছে। অনিকশা বেশ কিছুক্ষণের জন্য বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” আপু,বাবাকে একটু পাঠিয়ে দিবে প্লিজ? বলবে উনি আমার শাড়ীর কুচি ধরে না দিলে আমি কুচি খোলা রেখেই শাড়ী পড়বো। আর অমন খোলা কুচি নিয়েই বিয়ের পিড়িতে বসে পড়বো!””

লিয়াকত খন্দকার মেয়ের দিকে না তাকিয়েই মেঝেতে বসে পড়লেন। মেয়ের শাড়ীর কুচিতে হাত দিতেই অন্ত্রীশা বললো,

“” বাবা,আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে তুমি একবারও আমার সাথে কথা বলোনি। রাতের বেলা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেও আসোনি। এখন দেখ,আমাকে দেখতে কেমন লাগছে সেটাও দেখলে না,আমি কি দেখতে অনেক পচা হয়ে গেছি?””

লিয়াকত সাহেব অশ্রুসিক্ত নয়নে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” কি করবো,বল! তোর দিকে তাকালেই শুধু চোখে পানি চলে আসছে। কী যে হলো! মনে হয় কঠিন ব্যামো হয়েছে। তোকে বিদেয় করেই চক্ষু হসপিটালে যেতে হবে!””

অন্ত্রীশা এতক্ষন দাড়িয়ে থাকলেও এবার বাবার কাছ ঘেষে বসে পড়লো।

“” দেখি চোখে কী হয়েছে?””

অন্ত্রীশা চোখে হাত দিতেই লিয়াকত সাহেব নিশব্দে কেঁদে উঠলেন।

“” তুমি কি চাচ্ছো আমার এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট হয়ে যাক?””

লিয়াকত সাহেব চোখের পানি মুছে অন্ত্রীশার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

“” আমার ছোট্ট রাজকন্যাটাও তার নতুন রাজ্যে পাড়ি দিবে। সুখে থাকিস! নতুন রাজ্যের রানী হলেই চলবেনা,সেখানকার সবার সুখদুখের সাথী হবে কেমন? সব থেকে ভালোরানী হয়ে দেখাবে!””

অন্ত্রীশা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“” তুমি আমার বেস্ট বাবা! আর বেস্ট বাবার মেয়ে অবশ্যই বেস্ট রানী হবে!””

বড় মেয়ের হুট করে বিয়ে হওয়ার কারণে তেমনভাবে বড় করে অনুষ্ঠান করা হয়নি লিয়াকত সাহেবের। তাই ছোট মেয়ের বিয়েতে কোনো কিছুর কমতি হোক সেটা উনি চান না। নিজে এই বুড়ো বয়সেও দাঁড়িয়ে থেকে দুহাতে সব সামাল দিচ্ছেন। এই মুহুর্তে ছেলের অভাব বুঝতে পারছেন লিয়াকত সাহেব। অরিদ যদিও জামাই হিসেবে একটা চমৎকার ছেলে। হাতে হাতে সব দিক দিয়েই সামলে দিচ্ছে। কিন্তু দুদিন পর তো সেও তার রাজ্যে পাড়ি দিবে। বাড়িটা একদম শুন্য হয়ে যাবে। এত বড় বাড়িতে দুজন বুড়াবুড়ি বন্দী হয়ে থাকাটা কতটা কষ্টকর হবে এখন বুঝতে পারছেন! চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর খোঁজে গেলেন।

বরপক্ষ চলে এসেছে শুনে অনিকশা অন্ত্রীশার পাশ থেকে উঠে এসেছে। পাশের রুমেই পালকদেরকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিয়ের কাজটা শেষ করেই স্টেজে নেওয়া হবে। তারপর খাওয়া দাওয়া বাকি কাজ সারা হবে।

অনিকশা দুর থেকেই বরকে দেখতে লাগলো,সেও হালকা মিষ্টি কালারের মধ্যে সেরওয়ানি পড়েছে। অনিকশার কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই শরীরটা রাগে রিরি করছে। এটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি মিষ্টির দোকান যে সবাই নিজেরাই মিষ্টি সেজে বসে আছে? অনিকশার ইচ্ছে হলো বড় করে হা করে পালক আর অন্ত্রীশাকে টুপ করে খেয়ে নিতে। খেতে নিশ্চয় বিচ্ছিরী স্বাদ হবে। ভাবতেই অনিকশার বমি বমি পেলো।

“” অনি,চলোনা আমরাও দ্বিতীয়বারের মতো বিয়েটা সেরে ফেলি!””

অরিদের কন্ঠ পেয়ে অনিকশা পেছন ঘুরতেই ওর চোখ আটকে গেলো অরিদের দিকে! অরিদও মিষ্টি কালারের পান্জাবী পড়ে আছে,দেখতে কোনো অংশে তামিলের নায়কের চেয়ে কম লাগছে না! টিন এজের যে কোনো মেয়ে আজ অরিদকে দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে। শত শতবার প্রেমে ডুবে ডুবে বলবে,তোমার প্রেমে আমি হাবুডুবু খেতে চায়,তুমি কি আমাকে পারমিশন দিবে,মিষ্টি বালক??? তার তো টিন এজ না,তাহলে ওর ও কেন আজ অরিদের প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে??

অরিদ অনিকশার চোখের সামনে হাতের আংগুলের সাহায্যে তুরি বাজাতেই ওর হুশ এলো।

“” কী মজা!কী মজা!পাপাই,মামনিকে বিয়ে কলবে! আমি আজ দুতো বিয়ে দেখবো!””

অরিদ্রার হাত তালির আওয়াজে অনিকশার মন ভালো হয়ে উঠলেও পরক্ষণেই রেগে গেলো।

“” তোমরা বাপ বেটি আজ মিষ্টি কালারে মাতিয়েছো কেন? কি কুৎসিত লাগছে। আমার মেয়েটার গায়ে যদি মশা বসে?””
“” কি করবো বলো! তুমিতো তোমার রঙে আমাকে রাঙাতে দাওনা। তাই ভাবলাম তোমার পছন্দের রঙে নিজেকে সাজিয়ে মনটাকে সান্ত্বনা দেই।””

অনিকশা অরিদ্রাকে কোলে নিতে নিতে বললো,

“” বাড়িটাকে তোমরা সবাই মিলে মিষ্টির দোকান বানিয়ে ফেলেছো! যত্তসব!””

পাপড়িকে দেখতেও আজ ভারি সুন্দর লাগছে। কিন্তু যার জন্য এত কষ্ট করে সাজলো সেই তো এলো না। তাহলে কি লাভ এই সাজ রেখে? পাপড়ির ইচ্ছে হলো নিজের নামের মতো নিজের সাজগোজগুলোকে ঝরিয়ে ফেলে দিতে! চোখের পানি দিয়ে সব ঘেটে দিতে। মানুষটা এত কেনো অবহেলা করে আমাকে? কিচ্ছু ভালো লাগছে না আমার। কিচ্ছু না!

ভাইয়ের পাশে মুখ গোমড়া করেই বসে রইলো পাপড়ী। আর ক্যামেরাম্যান তার সেই গোমড়ামুখের ছবি তোলাই ব্যস্ত!

বিয়ের রীতিনীতি শেষ করে অন্ত্রীশাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দশ্যে বেরিয়ে পড়লো বরপক্ষ!

বাড়ির কাছে গাড়ি থামতেই সবাইকে ফেলে পাপড়ি নেমে আসলো। দৌড়ে ছাদে উঠে আতিশের নাম্বারে ডায়াল করলো। রিং বেজেই যাচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স আসছে না। এদিকে পাপড়িও দমে যাচ্ছে না। কলের পর কল তো মেসেজের পর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ওপাশ থেকে কল আসতেই পাপড়ি চট করে রিসিভ করে বললো,

“” আপনি আসেননি কেন?””
“” আমার ইন্টারভিউ ছিলো,পাপড়ি!””
“” আপনার সবসময় ইন্টারভিউ থাকে। পৃথিবীর সব ইন্টারভিউ কি আপনি একাই শেষ করবেন? ভাইয়া তো আপনার ছোটবেলার বন্ধু তাও আসলেন না? ভাইয়ার কত মন খারাপ হয়েছে জানেন?””
“” তোমার ভাইয়ার মন খারাপ হয়েছে আর জানাচ্ছো তুমি?””
“” ভাইয়াতো বিজি তাই আমি…””
“” এতগুলো কল কেন দিয়েছো? তোমাকে মানা করেছি না আমাকে এত কল দিবে না? আমি ডিস্টার্ব ফিল করি। কথা শুনো না কেন? তোমার জন্য শান্তিমতে ঘুৃমাতেও পারলাম না। তুমি শুধু পালকের বোন বলে কিছু বলতে পারছি না না হলে থাপড়িয়ে সোজা করে দিতাম! সব কিছুতে বাড়াবাড়ি!””

আতিশের ধমক খেয়ে পাপড়ি ফুঁপাতে লাগলো। উনি কি জানেন না আমি কেন কল দেই? নাকি জেনেও না জানার ভান ধরে থাকেন???

“” অমনি শুরু করে দিলে? মানুষকে ডিস্টার্ভ করা আর ফুঁপানি ছাড়া আর কি কিছু শিখনি? পড়াও তো মাথায় ঢুকে না। পালকের বোন বলে তোমাকে আমার এত কষ্ট করে পড়াতে হচ্ছে! নাহলে কবেই ছেড়ে দিতাম। এরকম গোবর মার্কা স্টুডেন্ট আতিশ কখনোই পড়ায় না!””

বেশ বিরক্ত আর তাচ্ছিল্যভাবেই কথাগুলো বলে আতিশ কলটা কেটে দিলো। আমি দিনে হাজারটা ইন্টারভিও দিয়েও এতোটা টায়ার্ড হয় না যতটা না তোমার ফুঁপানি শুনে হই। পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের জিনিস কি জানো পাপড়ি? ভালোবাসার মানুষের চোখের পানি! আর তুমি সেটাই বারবার করো,আমাকে কষ্ট দাও খুব কষ্ট!! তোমার চোখের পানি মুছার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। আমি চাই না তোমার চোখের পানি মুছতে গিয়ে আমি আমার আর পালকের সম্পর্কটা নষ্ট করতে!

অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষণ পালকের রুমের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই বসে ছিলো। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে এসেছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভিড়ানোই আছে। কেউ আসবে না ভেবে পালকের রুমটা ঘুরে ঘুরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। প্রতিটা জিনিসের গন্ধ নিতে নিতে ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। ৩ টা বেজে ২৫ মিনিট। এতো রাত হয়ে গেলো উনি এখনো এলেন না?? কখন আসবেন উনি?? হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে অন্ত্রীশা দৌড়ে বিছানার মাঝে গিয়ে বসে পড়লো। বড় করে ঘোমটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকটা ঢিপঢিপ করছে! নিশ্বাসটা বন্ধ করে অন্ত্রীশা পায়ের আওয়াজ শুনতে লাগলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here