#ধোয়ার_নেশা০৮,০৯
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৮)
অন্ত্রীশাকে তার কথা শেষ করতে না দিয়ে ওর ঠোঁটদুটো নিজের ঠোঁটের আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছে পালক। ঘটনার আকস্মিকতাকে কাটিয়ে উঠতে না পেরে অন্ত্রীশা পালককে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ওর কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে ল্যাপ্টে নিলো পালক। আজও যে নিজের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকা ধোঁয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ঢেলে দেওয়া তার মুখ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে!
পালক অন্ত্রীশাকে ছেড়ে দিতেই অন্ত্রীশার কাশি শুরু হয়ে গেছে। কাশতে কাশতে চোখে পানি চলে এসেছে। অনিকশা হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকেই অন্ত্রীশার সামনে পানির গ্লাস ধরে বললো,
“” মানা করেছিলাম না বিয়ে করতে? এই তোর স্বামীর ভালোবাসা? যে ভালোবাসার ছোঁয়াই তুই কেশে কেশে মরণ দেশে চলে যাচ্ছিস?””
অন্ত্রীশা পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,
“” আপু,তুমি এখানে?””
“” এখানে মানে? ধোঁয়ার ঠেলায় কি সব গিলে খেয়ে ফেলেছিস? আমি এখানে আসছি ২ ঘন্টা পার হতে চললো।””
অন্ত্রীশা নিজের কাশি নিয়ন্ত্রে রাখার জন্য বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। মাথা কেমন ভনভন করছে। তার মাথায় কি মাছিরা বাসা বেঁধে নিয়েছে? এতো কেন ভনভন করছে,পেটের ভেতরটাও কেমন গুড়মুড় করছে। মাছিরা কি মাথা থেকে পেটের ভেতরেও চলে গেলো? উফ! কি অসহ্য অনুভূতি হচ্ছে!
অনিকশাও অন্ত্রীশার পাশে গিয়ে বসলো। অন্ত্রীশার মাথায় হাত রেখে স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“” তুই ঠিক আছিস তো অনতি?””
পেটের ভেতর গুড়মুড়ের শব্দে গলার ভেতরটাও জ্বালা করছে। শব্দটাকে আটকাতে পেটে বাম হাত দিয়ে চেপে ধরেছে অন্ত্রীশা। বোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,তবে কি আপু আজকেও উনাকে চুমু খেতে দেখে ফেলেছে? উনার সাথে আমার সব লজ্জার ঘটনাগুলো আপুর সামনেই কেন ঘটে?
“” হুম,ঠিক আছি। তুমি হঠাৎ আমার রুমে এলে যে কিছু লাগবে?””
অনতি মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে আবার বললো,
“” এই বিয়েটা তোর জন্য ঠিক হয়নি রে অনতি,আসলে বিয়ের কোনো সমস্যা না। সমস্যাটা তো পালকের। এখনও সময় আছে বোন,তুই চাইলে আমি সব কিছু ঠিক করে দিতে পারি। তোদের তো সেরকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও হয়নি!””
অনিকশার কথায় অন্ত্রীশা বেশ বিরক্ত হলো। মুখে কিছুটা বিরক্তভাব ফুটিয়ে একটা কঠিন কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু তার আগেই মুখ ভর্তি করে বমি করে বসলো অনিকশার শরীরে!
“” আপনি সত্যি যাবেন না?””
অন্ত্রীশার কথায় পালক একবার ওর দিকে ঘুরে আবার খোলা আকাশে মনোনিবেশ করলো। আজকের সূর্যটা খুব বেশি প্রকট তাপ দিচ্ছে। গরমটাও ভালোই পড়েছে। ভাপসা গরমে পালকের শার্ট ভিজে চুপসে আছে নিজের শরীরের সাথে। কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তার। মনে হচ্ছে তার ভেতরের প্রকট যন্ত্রনার রশ্মির তাপের কাছে সূর্যের এই তাপ কিছুই না। তাই তো এই রোদেও সে ছাদের কিনার ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। বিষে যদি বিষের ক্ষয় হয় তাহলে আজ সে তার ভেতরের যন্ত্রনার তাপটাও রোদের তাপ দিয়ে ক্ষয়ে শেষ করে নিবে।
“” এমন কাঠফাঁটা রোদে দাঁড়িয়ে আছেন যে? মাথা ব্যথা করবে।””
আকাশের দিকে তাকিয়েই পালক বলে উঠলো,
“” আমাকে নিয়ে কেউ চিন্তা করুক এটা আমি পছন্দ করি না। তোমার আব্বু তোমার জন্য ওয়েট করছে!””
“” আপনিও চলুন না আমার সাথে। বিয়ের পর একা বাপের বাড়ি গেলে মানুষ নানান কথা শুনাবে।””
পালক দুহাত পকেটে পুড়েই অন্ত্রীশার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“” প্রতিবেশিরা কথা শুনানোর জন্যই সম্পর্ক গড়ে তুলে! তুমি কি এখান থেকে যাবে নাকি আমিই চলে যাবো?””
পালকের এমন শক্ত কথায় অন্ত্রীশার মন খারাপ হয়ে এলো। গলাটাও ধরে এসেছে বোধহয়। তার মন খারাপের সাথে সঙ্গী হতেই হয়তো হালকা সবুজ শাড়ীটা গাড় সবুজ রঙে বদলে গিয়েছে। অন্ত্রীশা ধীর পায়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। আপনি খুব পঁচা,আমি এতো সহজে আপনাকে কিছুতেই ক্ষমা করবো না। আপনাকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো। আমার মনের ভেতরে জমে থাকা ভালোবাসার আগুনে পুড়িয়ে আপনাকে শেষ করে দিবো!
**ওহে উত্তম পুরুষ,
শুনলাম আপনি নাকি তালাশ টিম নিয়ে আমাকে তালাশ করে বেড়াচ্ছেন? আমাকে খুজে পাওয়া আপনার কাম্য নয়। এসব গোয়েন্দাগিরি বন্ধ করুন। সবে তো আপনাকে কলংকিত করার জন্য নীল নকশায় কালো রং ঢেলেছি,ওগুলোকে শুকোতে দিন তারপর তো আপনাকে কলংকিত করবো৷ আপনি যে কলংকিত হওয়ার জন্য এতো উতলা হয়ে যাবেন তাতো আমি বুঝতে পারিনি!
জানেন,আপনাকে যখন চিঠি লিখতে বসি তখনি আকাশ ভেংগে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। তখন ইচ্ছে হয় বৃষ্টি মেখে দুজন কলংকের দাগে দাগিয়ে নিতে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। আসবেন আমার কাছে? আমি নাহয় বৃষ্টি হয়ে আপনাকে ছুঁয়ে দিবো?
আপনি তালাশ টিম থেকে বেরিয়ে এসে যদি আমাকে কিছু লিখতে চান তাহলে সে ব্যবস্থা আমি করে দিবো। তবে হ্যাঁ,নজরদারী করা যাবে না। তাহলে কিন্তু আমি বৃষ্টি না হয়ে বজ্রপাত হয়ে যাবো,তারপর আপনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে নিজেও বিলিন হয়ে যাবো।
ইতি
পত্রী কন্যা
চোখে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই পালক আকাশের দিকে তাকালো। আকাশের দিকে মুখ করে দুহাত দুদিকে মেলে দিয়েছে। চোখটা আবার বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটাকে বরণ করে চিৎকার করে বললো,
“” তুমি কি আজও আমাকে চিঠি লিখছো পত্রী কন্যা? দেখো আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছে। তোমার উত্তম পুরুষের গায়ে মেখে দেওয়া কলংকের দাগগুলো ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তো চাই না তোমার প্রেমের কলংক এভাবে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাক। আমি তো চাই তুমি তোমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে আমাকে ভিজিয়ে নাও৷ কেন চলে গেলে? যদি যাবারই ছিলো তাহলে কেন এসেছিলে? আমার যে তোমাকে বড্ড প্রয়োজন পত্রীকন্যা। আমার যে খুব ইচ্ছে তোমার সাথে তোমার ইচ্ছেতে প্রতিটা বৃষ্টির ফোঁটার সাথে অনুভূতির অতলে ডুবে যেতে। তুমি কি তোমার ইচ্ছেগুলো আমাকে আর জানাবে না? বৃষ্টিতে হারিয়ে যেতে যেতে আমাকে চিঠি লিখবে না? আজকের এই বৃষ্টিতে ভিজে আরেকটা চিঠি লিখবে পত্রীকন্যা? যে চিঠিতে থাকবে তোমাকে ভুলে যাওয়ার ঔষধ!
“” এমন ভুতের মতো সাজছিস কেন? আজকে কি তোর বিয়ে?””
হঠাৎ আতিশের কন্ঠ পেয়ে পাপড়ি লাফিয়ে উঠলো। আতিশ আসবে দেখেই সে আজ হালকা কাজের একটা সাদা আর লাল কম্বিনেশনের লেহেংগা পড়েছে। সেদিন বিয়েতে তো উনাকে সাজ দেখানোই হয়নি তাই চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পরছিলো। চোখে কাজল দেওয়া হলেও ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়া শেষ হয়নি,উপরের ঠোঁটে শেষ করে সবেই নিচের ঠোঁটে লিপস্টিক ছোঁয়া দিতেই আতিশের কন্ঠ পেয়ে হাত থেকে লিপস্টিকটা পড়ে গিয়েছে।
আতিশ মাথার চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে পাপড়ির কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“” কাক ভিজা ভিজে গেছি, তোর জন্যা আমাকে কত কষ্ট করে আসতে হলো। যদি ঠিকঠাক মতো না পড়িস না তাহলে আজ একটা মারও মাটিতে পড়বে না। যা বই নিয়ে আয়!””
পাপড়ির কানে আতিশের কথা পৌঁছালেও তা মাথায় প্রবেশ করেনি,সেতো এখন আতিশের চুল ঝাড়া দেখায় ব্যস্ত। ইশ! উনার মাথা ভর্তি এই চুলগুলোকে আমি কবে ছুঁয়ে দেখবো?
“” কি হলো এভাবে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলি কেন? যা বই নিয়ে আয়।””
পাপড়ি বই আনার বদলে আতিশের দিকে নিজের তোয়ালেটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“” ভালো করে মুছে নিন,নাহলে সর্দি লেগে যাবে।””
আতিশ চুল ঝাড়া বন্ধ করে পাপড়ির দিকে তাকালো। পাপড়ির একদম কাছে এসে ওর ঠোঁটে নিজের বৃদ্ধ আংগুল ছুঁয়িয়ে দিচ্ছে। আতিশের স্পর্শ পেয়েই পাপড়ি চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। ঠোঁটের সাইডে ছড়িয়ে থাকা লিপস্টিকটা মুছতে মুছতে বললো,
“”তুই তো দেখতে এমনি পেত্নীদের মতো, সাজলে তোকে পেত্নীদের থেকেও বেশি বিশ্রী লাগে। যা এখনি ধুয়ে আয়। এক্ষুনি!””
পাপড়ি লজ্জা পেলো ভীষণ লজ্জা! যে লজ্জায় সে আনন্দ খুঁজে পেয়েছে। যে লজ্জা সে আতিশের ছোঁয়াতে পেয়েছে। আপনি এভাবে ছুঁয়ে দিয়ে আমাকে আরো খারাপ কিছু বললেও আমি মন খারাপ করবো না,আতিশ ভাইয়া!
পাপড়ি ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েও আবার পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো। আতিশকে উদ্দশ্য করে বললো,
“” আপনি আমাকে তুই করে বলছেন কেন?””
“” পালকও তো তোকে তুই করে বলে তাই।””
“” ভাইয়াতো বোনকে তুই করে বলতেই পারে। তাই বলে আপনিও বলবেন?””
“” হুম,ওর বোন মানে তো আমারও…. “””
আতিশের কথার মাঝখানেই পাপড়ি চিৎকার করে উঠলো,
“”ননননননননননননা””
“” কি না?””
“” আমি আজকে পড়বো না। আপনি এখনি চলে যাবেন। এখন মানে এখনি।””
আতিশ বেশ আরাম করে পাপড়ির বিছানায় বসে পড়লো।
“” আমি কি তোর কেনা ক্রীতদাস? তুই বললেই আমি তোকে পড়াতে ছুটে আসবো,আবার তুই বললেই আমি বেরিয়ে যাবো? আমাকে তোর এতো সস্তা মনে হয়? এখনি যদি বই নিয়ে না বসিস তাহলে আমি আর কোনোদিনও এ বাড়িতে পা রাখবো না!””
পাপড়ির ইচ্ছে হলো নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলতে। যাকে মন,প্রাণ উজার করে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখছে সে কিনা এতদিনে তাকে তুমি থেকে তুইতে চলে গিয়ে বোন বানাতে চাচ্ছে? এইটা দেখা বাকি ছিলো? তার অগোচরে ভালেবাসার এই প্রতিদান পাচ্ছে?
“” জানালা বন্ধ করে দিচ্ছো যে বৃষ্টির শব্দ ভালো লাগছে না?””
জানালা লাগাতে লাগাতেই অন্ত্রীশা উত্তর দিলো,
“”শীত শীত লাগছে তো তাই। আর এখন তো ঘুমিয়েও পড়বো। জানালা খুলে ঘুমালে আমার সব বই ভিজে যাবে। অরিদ্রা কি ঘুমিয়ে পড়েছে,দুলাভাই?””
“” না,ওর আম্মুর কাছে বকুনি খেয়ে এখন ভাত খাচ্ছে। শুনলাম তুমি খাওনি? কী? কারো সাথে অভিমান হয়েছে বুঝি?””
“” আমার আবার অভিমান? সে তো আমার কাছে ধরাই দেয় না! আপনি বসুন না। বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?””
অরিদ ঠোঁটে দুষ্টুমীর হাসি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“” এখন তো তুমি অন্য কারো দখলে হয়ে গেছো। তার অবর্তমানে তোমার রুমে ঢুকতে সাহস পাচ্ছি না। যদি সে রাগ করে।””
অন্ত্রীশা বিছানা পরিষ্কার করে অরিদকে বসতে দিয়ে বললো,
“” রাগের আগে আরেকটা শব্দ সুপ্ত থাকে,জানেন তো?””
অরিদ অন্ত্রীশার দিকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
“” তোমার ঐ সুপ্ত শব্দটার আগেও আরেকটা জিনিস সুপ্ত থাকে ঐটা জানো তো?””
অন্ত্রীশা নিজের প্রশ্নের পিঠে পাল্টা প্রশ্ন পেয়ে থতমত খেয়ে গেলো।
অরিদ অন্ত্রীশার আরেকটু পাশে এসে ওর নাক টিপে বললো,
“” ভালো লাগা আর ভালোবাসা দুটো ভিন্ন হলেও এটা মনে রেখ,ভালো লাগা থেকেই কিন্তু ভালোবাসার সৃষ্টি। যদি ভালোই না লাগে সেখানে ভালেবাসা কখনোই জন্ম হতে পারে না। ভালোবাসাটা নাহয় পরেই চেয়ো আগে ভালো লাগাটা তৈরি করো। তার জন্য কিন্তু নিজের যত্নটা নেওয়াও জরুরী। তুমি চাইলে,আমি আমার ছোট বোনকে নিজের হাতে খায়িয়ে দেবো।””
অন্ত্রীশা অরিদের দিকে চেয়ে রইলো। কত ভালো মানুষটা অথচ আপু কেন উনাকে সহ্য করতে পারে না? আমি এত দুর থেকেও উনার ভালোবাসার সুঘ্রান পাই আর ও উনার পাশে থেকেও পায় না?
“” কি! তুমি কি চাও ভাই তার বোনকে খায়িয়ে দিক?””
অন্ত্রীশা হেসে উঠে মাথা নাড়াতেই অরিদ রান্নাঘরের দিকে ছুটলো।
“”অরিদ্রা কোথায় অরিদ? আমিতো ওকে এখানেই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম!””
অরিদ বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
“” অন্ত্রীশা একা একা ঘুমাবে দেখে অরিদ্রাকে ওর রুমে দিয়ে এসেছি। তাহলে ভয়টা কেটে যাবে।””
“” ভয় কেটে যাবে মানে? ও কি আজকেই প্রথম একা ঘুমাচ্ছে?””
অরিদ বিছানা ঝাড়ুটা রেখে অনিকশার কোমরটা জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে বললো,
“” বিয়ের পর তো একা ঘুমাচ্ছে! আমি যেমন তোমাকে ছাড়া একা থাকলে ভয় পাই অনতিও তেমন ভয় পাচ্ছে। এটাকে ভুতের ভয় বলে না গো সখি! বিয়ের ভয় বলে””
অরিদ একটা চোখ টিপ দিতেই অনিকশা ওর হাতটা সরিয়ে বললো,
“” এসব ফালতু কথা বলতে নিষেধ করেছি না?””
“” এটা মোটেও ফালতু কথা না অনি,ভালেবাসার কথা। আজকে মনটা ভালেবাসা দিয়ে ডুবে আছে। তুমি কি একটু ভালোবাসা ধার নিবে? নাহলে তো আমার তরি ডুবে আমি অক্কা পেয়ে যাবো!””
অরিদের দিকে রাগী লুক দিয়ে অন্ত্রীশা বেরিয়ে যেতে নিলেই অরিদ পেছন থেকে ডেকে উঠলো,
“” কোথায় যাচ্ছো?””
“” অরিদ্রার সাথে আমিও আজকে অনতির কাছে শুবো। ওর বিয়ের ভয় আমি পাটা আর পুতা দিয়ে পিষে ছাড়বো।””
অনিকশা বিড়বিড় করতে করতে অন্ত্রীশার রুমের দিকে এগুচ্ছে। রুমের দরজা খুলতেই অনিকশা ভরকে গেলো। পালক অরিদ্রার কপালে চুমু খাচ্ছে। পালক কখন এলো? আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি আর ও তো বলেছিলো আসবে না। তাহলে এত রাতে এখানে কি করছে???
অনিকশা বাইরে দাড়িয়েই অন্ত্রীশাকে খুঁজছে। রুমে তো দেখতে পাচ্ছি না,এতোরাতে গেলো কোথায়? আমি কি ভেতরে যাবো? নাকি চলে যাবো? কিন্তু অরিদ্রা??
অনিকশা অরিদ্রার দিকে তাকাতেই পালকের চোখে চোখ পড়ে গেছে। এখন এভাবে চলে যাওয়াটা খারাপ দেখাবে ভেবেই অনিকশা ভেতরে ঢুকে পড়লো। অরিদ্রাকে কোলে নেওয়ার উদ্দশ্যে হাত বাড়াতেই পালক ওর হাতের কব্জীর অংশটা চেপে ধরে বললো,
“” কেমন আছো,পত্রী কন্যা?””
চলবে
#ধোঁয়ার_নেশা
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৯)
অনিকশা বাইরে দাঁড়িয়েই অন্ত্রীশাকে খুঁজছে। রুমে তো দেখতে পাচ্ছি না,এতোরাতে গেলো কোথায়? আমি কি ভেতরে যাবো? নাকি চলে যাবো? কিন্তু অরিদ্রা??
অনিকশা অরিদ্রার দিকে তাকাতেই পালকের চোখে চোখ পড়ে গেছে। এখন এভাবে চলে যাওয়াটা খারাপ দেখাবে ভেবেই অনিকশা ভেতরে ঢুকে পড়লো। অরিদ্রাকে কোলে নেওয়ার উদ্দশ্যে হাত বাড়াতেই পালক ওর হাতের কব্জীর অংশটা চেপে ধরে বললো,
“” কেমন আছো,পত্রী কন্যা?””
অনিকশা পালকের দিকে তাকাতে গিয়েও তাকালো না। ভয় হচ্ছে তার ভীষন ভয়! ঐ চোখে তাকালেই যে তার ভেতরটা অপরাধবোধে ফেটে যায়! অনিকশা অরিদ্রার দিকে তাকিয়েই বললো,
“” হাত ছাড়ো পালক!””
পালক হাত ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। অনিকশার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটের এক কোণটা বাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
“” আগে তো হাত না ধরার কারণে আমার সাথে অসংখ্য ঝগড়া করেছো। আর আজ হাত ধরাতেও রাগ দেখাচ্ছো? তোমরা মেয়ে জাতিরা এমন কেন বলো তো? আমার তো মনে হয় তোমরা কী চাও সেটা তোমরা নিজেরাও জানো না!””
অনিকশা নিজের অন্যহাত দিয়ে পালকের হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় বললো,
“” পালক আমার লাগছে,ছাড়ো। আমি তোমার তেতো কথা শুনার জন্য আসিনি। অরিদ্রাকে নিতে এসেছি। আর তুমি আসছো জানলে আমি আসতামও না।””
“” সত্যি আসতে না?””
“” হুম!””
“” কিন্তু আমি যে চাই তুমি আসো!””
অনিকশা পালকের হাতের বাধন থেকে ছুটতে না পেরে পালকের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বললো,
“” হাত ছাড়ো,প্লিজ! অন্ত্রীশা দেখলে ব্যাপারটা কত জঘন্য হবে বুঝতে পারছো? অরিদও হয়তো এতক্ষনে এদিকে আসছে!””
অরিদের নাম শুনেই পালকের চোখ,মুখ শক্ত হয়ে এলো। অনিকশাকে টেনে নিজের কাছটাতে এনে বললো,
“”অরিদ তোমার কোন তৃষ্ণা মিটিয়েছিলো যে একদিনেই বিয়ে করে নিলে।””
“” পালক,ঠিকভাবে কথা বলো। ও আমার স্বামী!””
পালকের রাগ হচ্ছে! এতো বেশি রাগ হচ্ছে যে শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরা ফুলে ফেপে উঠছে। এই চার বছরের সবটা রাগ এখন ঢেলে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ কোনো নিয়ন্ত্রণের বাধা তার মানতে ইচ্ছে করছে না। কার ভালো হবে,কার খারাপ হবে,কে কী ভাববে তার কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। নিজের রাগগুলোকে আর কত পুষে রাখবে? এবার কি তবে রাগ ঢেলে দেওয়ার সময় এসেছে??
“” পালক,আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? ছাড়ো বলছি। এতো রাতে এভাবে সিন ক্রিয়েট করো না!””
অনিকশার কথা গায়ে মাখছে না পালক। ওকে টানতে টানতে অন্ত্রীশার খোলা বারান্দায় নিয়ে এসেছে। যেখানে গ্রিল দিয়ে বন্দী করা হয়নি বেলকনির স্পেসটাকে। আশেপাশে তেমন গাছ না থাকায় এখান থেকে মেঘে ঢাকা পুরো আকাশটাকে দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির সাথে সাথে কালো মেঘেরাও আজ নিচে নেমে আসছে। পালকের ইচ্ছে হচ্ছে সেও আজ এই কালো মেঘের বৃষ্টির সাথে নিজের জমিয়ে রাখা সবটা রাগ ধুয়ে ফেলতে।
অনিকশাকে বেলকনির ঠিক কর্নারে দাঁড় করিয়ে ওর হাতটা ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“” আমার আজ সব প্রশ্নের উত্তর চাই পত্রীকন্যা। ইচ্ছে তো করছে নিজের সবটা রাগ আর অভিমান দিয়ে তোমাকে জ্বালিয়ে ফেলি। কিন্তু বেহায়া মন যে তার পত্রীকন্যাকে কষ্ট দিতে নারাজ। কেন সেদিন তুমি আমাকে ফেলে চলে এলে? কেন সেদিন অন্য কারো দখলে চলে গেলে? কি দোষ ছিলো আমার? অনিকশা আমার সব উত্তর চাই!””
পালকের হাত থেকে ছাড় পেয়ে অনিকশা পালিয়ে আসতে গেলে ওর হাতটা চেপে ধরে ফেললো পালক,,
“” সেদিন যদি বুঝতে পারতাম এই যাওয়াই তোমার শেষ যাওয়া তাহলে কখনোই তোমাকে পালাতে দিতাম না! আজ আমি আমার উত্তর না নিয়ে তোমাকে ছাড়বো না।””
বাতাসের সাথে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো বাড়ি খেয়ে পালক আর অনিকশাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। অনিকশা যাতে পালাতে না পারে তার ঠিক সামনেই পালক দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিছুটা দুরত্ব রেখেই দাঁড়িয়েছে সে। অন্যের দখলধারীকে সে কখনোই ছুঁতে চাইনা। যখন নিজের দখলে ছিলো তখনই সে ছোঁয়ার সাহস পায়নি,তাহলে আজ কিভাবে পাবে??
বৃষ্টির পানি মুখ চুয়ে চুয়ে নিচে পড়ছে পালকের। পালকের চোখের দিয়ে তাকিয়ে অনিকশার গলা শুকিয়ে এলো। চোখগুলো লাল রক্তবর্নের আকার ধারণ করে আছে। ঐ চোখ দেখেই বুঝতে পারছে আজ সে পালকের প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারবে না৷ পালকের রাগ দেখার সৌভাগ্য তার কখনও হয়নি,আজ সেটাও হয়ে গেলো।
পালক বেশ তীক্ষ্ণ কন্ঠে চিৎকার করে বললো,
“” কি হলো বলছো না কেন? আমার কি দোষ ছিলো?””
“” এভাবে চিৎকার করছো কেন? আমি তোমার কোনো উত্তর দিতেই বাধ্য নই””
পালকের রাগ এবার আরো বেড়ে গেলো। অনিকশার দিকে রাগে ফুসতে ফুসতে এগুতেই অনিকশা বেলকনির অর্ধাংশ দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলো। কিছুটা বাহিরের দিকে বেকে গিয়ে,চোখ বন্ধ করে ফেললো,
“” পালক,তুমি ভুলে যেও না অন্ত্রীশা আমার ছোট বোন।””
“” তুমিও ভুলে যেও না তোমার বোন আমার বউ!””
“” মানে?””
“” আমার উত্তর চাই!””
“” তুমি অনতিকে কষ্ট দিতে পারো না৷ এখানে ওর তো কোনো দেষ নেই। আমাদের মাঝখানে ওকে কেন আনছো?””
“” তুমিও তো আমাদের মাঝখানে অরিদকে এনেছো,কেন এনেছো?””
“” পালক তুমি এখন হুশে নেই,আমি রুমে যাবো। সরো এখান থেকে!””
“” তুমি কোথাও যাবে না। আগে আমার উত্তর দিবে তারপর যাবে। নাহলে আজকে আমি সব ধ্বংস করে দিবো!””
“” আমি জানি তুমি এমন কিছু করবে না।””
“” এতো কিছু জানো তাহলে এটা কেন জানলেনা তুমিহীনা আমি কিছুই না। বুকের ভেতরটা জ্বলেপুরে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমাকে একটু বিষ এনে দাও আমি খেয়ে মরে যাই। মনটা তাও এটাভেবে শান্তি পাবে সে তার পত্রীকন্যার হাতে জীবন বলি দিয়েছে!””
পালকের কথায় অনিকশার কান্না পাচ্ছে,চোখ ঠিকরে পানি বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে,হয়তো বেরিয়েও এসেছে যা বৃষ্টির সাদা পানির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আমি তো এমনটা চাইনি। এই পৃথিবীতে হয়তো আমিই সবচেয়ে পাপী যে দুটো মানুষকে কাঁদিয়ে এখনো বেঁচে আছে।
“” পালক,এমন ছেলেমানুষি কথা কেন বলছো? সব ঠিক হয়ে যাবে। অনতি আর তুমি অনেক সুখী হবে। অনতি অনেক লক্ষী একটা মেয়ে।””
“” আমার লক্ষী মেয়ে চাই না। আমার পত্রীকন্যাকে চাই। যদি সে অলক্ষী হয় হোক। আমিও ওর সাথে মিশে অলক্ষী হয়ে যাবো।””
“” এটা কখনোই সম্ভব না পালক! জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে পড়েছো। সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার শুরু করো!””
পালক অসহায় সুরে বললো,
“” তাহলে তোমাকে ভুলে যাওয়ার ঔষধের নাম বলে দাও।””
অরিদ নিজের হাতে খায়িয়ে দিচ্ছিলো বলে অন্ত্রীশা মুখ বুঝে খেয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু তা বেশিক্ষণ পেটে রাখতে পারেনি। পালকের দেওয়া ধোঁয়ার বিষগুলো কুন্ডুলী পাকিয়ে অন্ত্রীশার পেটে ক্ষণে ক্ষণে হামলা করছিলো। এই হামলার ফল হিসেবে সে বমি করে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। পর পর দুবার বমি করাতে শরীরটা অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে আসে অন্ত্রীশার। মাথাটাও ভারী হয়ে আসছিলো। শরীরটাকে ঠান্ডা করতেই অন্ত্রীশা দ্বিতীয়বারের মতো সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে। মাথায় টাওয়ালটা বেঁধেই বারান্দার দিকের দরজাটা আটকাতে এগুলো। বৃষ্টির ঝাপটাই আর বাতাসের ধাক্কায় দরজা একটু পরে পরে বাড়ি খাচ্ছে দেওয়ালের সাথে। অন্ত্রীশা দরজার কাছে দাড়িয়েই অবাক।
“” আরে কী করছেন,আপু তে পড়ে যাবে!””
হঠাৎ অন্ত্রীশার কন্ঠ পেয়ে পালক অনিকশার থেকে সরে এসে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। অনিকশাও সে ফাঁকে পালকের কাছ থেকে ছুটে এসে বললো,
“” তোর বরটা তো আমাকে ভয়ই পায়িয়ে দিয়েছিলো। পালক যে আসবে অরিদকে বলিসনি? তাহলে তো আর অরিদ্রাকে রেখে যেতো না। তোর কি বুদ্ধীসুদ্ধী কিছু হবে না? আর অরিদটাও হয়েছে মাথামোটা!””
অনিকশা কাঁপুনি আর ভীত কন্ঠে অন্ত্রীশাকে দুই,চারটে কথা শুনিয়ে চলে গেলো।
অন্ত্রীশা পালকের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“” আপনি না বলেছিলেন আসবেন না,তাহলে আবার এলেন যে? আমাকে মিস করছিলেন?””
পালক অন্ত্রীশাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে ওর হাত চেপে ধরে ফেললো অন্ত্রীশা! দুজন দুদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
“” ভিজেই তো গেছেন। থাকুন না কিছুক্ষণ!””
“” আই হেইট রেইন।””
“” আপনাকে দেখে তা মনে হচ্ছে না। আমার জন্য নাহয় অপছন্দ জিনিসটাকে একটু পছন্দ করলেন।””
“” অপছন্দ আর ঘৃণা দুটো শব্দ এক না অন্ত্রীশা! আমি চেন্জ করবো,হাত ছাড়ো।””
অন্ত্রীশা পালকের হাত ছেড়ে দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরেই বললো,
“” আমরা কি বন্ধুও হতে পারি না?””
“” না।””
“” কেন?””
“” সব কেন এর উত্তর হয় না।””
পালক সেখানে আর একদন্ডও দাড়ালো না। রুমের দিকে পা বাড়ালো। অনিকশার কাছে থেকেও তার যতটা না অসস্থি হচ্ছিলো অন্ত্রীশার উপস্থিতিতে তা দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে। মেয়েটার কথার মধ্যে কিছুতো আছে যা পালকের সব কিছুকে থামিয়ে দিতে চাই।
অনিকশা অরিদ্রাকে বিছানাতে শুয়িয়ে দিতেই অরিদ চেঁচিয়ে উঠলো,
“” তোমরা মা,বেটি কি বৃষ্টিতে ভিজে এলে নাকি? আমাকে কেন নিলে না অনি? ইশ! তোমার সাথে সে কবে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম!””
অনিকশা অরিদের কাছে এসে ঝাপটে জড়িয়ে নিলো। ধরে আসা গলায় বললো,
“” একটু ভালেবাসবে অরিদ? একটু না অনেকখানি ভালেবাসতে হবে। যে ভালোবাসায় মনে হবে আমি এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো পৃথিবীতে চলে গিয়েছি। যেখানে অনুভূতি নামের কোনো শব্দ থাকবে না।””
অনিকশা কথা শেষ করতেই অরিদ ওকে কোলে তুলে নিয়েছে। গুটিগুটি পায়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজের ভরটা ওর উপর ছেড়ে দিলো। কপালে অরিদের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই অনিকশা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।
অরিদ পলকহীনভাবে চেয়ে আছে। বৃষ্টির পানিগুলো এখনো বিন্দু বিন্দু জমে আছে অনিকশার মুখে। ঠোঁটজোড়াও ভিজে। চোখের পাপড়িগুলোও ভিজে একটা আরেকটার সাথে লেগে আছে। এরকম চেহারায় বেশ আবেদনময়ী লাগছে অনিকশাকে। যেকোনো ছেলেকেই কামুকতায় মাতিয়ে দিবে। তাকেও দিচ্ছে। তবে তারটা পবিত্র কামুকতা। কেননা সেতো তার বউ! তারা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ!
অরিদ্রা আসার পর অনিকশাকে এতোটা কাছে পাওয়া হয়নি অরিদের। আজ তার খুব লোভ হচ্ছে অনিকশার মধ্যে নিজেকে ডুবে দেওয়ার তার ইচ্ছেপুরনের অন্য পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়ার তবে সেটা অনুভূতিহীন নয়,অনুভূতির সাগরে ডুবে থাকা পৃথিবীতে। যে সাগরে শুধু তারা দুজন ডুবে ডুবে মিলিয়ে যাবে।
অনিকশার নাকে একটা চুমু খেয়ে অরিদ বললো,
“” কাউকে ভুলতে নয় আমার ভালেবাসার ক্ষুধা পাবে যেদিন সেদিনই তোমাকে ভালোবাসবো। আর সেদিন আসবে,খুব শিঘ্রই আসবে,আমিতো সেদিনের অপেক্ষায় আছি,অনি। আমি যে তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি। আমার নিজের ভালেবাসার উপর সম্পুর্ন আস্থা আছে। জামাটা চেন্জ করে ঘুমিয়ে পড়ো। ঠান্ডা লেগে যাবে!””
অরিদ অনিকশার উপর থেকে সরে এসে অরিদ্রার পাশে শুয়ে পড়লো। এই প্রথম সে তার ভালেবাসার মানুষটার অবাধ্য হলো। বেশ অভিমানও হচ্ছে। তবে অনির উপর নয় নিজের উপর! এই অবাধ্যটা তার আরও আগে হওয়া উচিত ছিলো। তাহলে হয়তো আজ তাকে এভাবে নির্ঘুমে রাত কাটাতে হতো না। লোভ আসলেই মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। তাকেও দিয়েছে। ভালেবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার লোভে নিজের ভালোবাসাগুলো ধ্বংস করে ফেলেছে!
পালক চেন্জ করে এসেও অন্ত্রীশাকে রুমে দেখতে পায়নি। হয়তো বৃষ্টিতে ভিজছে। হয়তো তারও বৃষ্টি পছন্দ। পালক অন্ত্রীশাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অন্ত্রীশা আসলে নাহয় নিচে শোয়া যাবে! চোখ বুঝতেই পালক তার রঙিন অতীতে ডুবে যাচ্ছে।
পত্রীকন্যা তার তৃতীয় চিঠি একটা বোরকা পরিহিত মেয়ের হাতে পাঠিয়েছে। সেই তাদের চিঠি আদান প্রদান করবে বলে চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুরো চিঠিতেই কড়া করে বলা হয়েছে তাকে খোঁজার কোনো চেষ্টা যেন না করে!
পত্রীকন্যা কড়া চিঠিতেও হাজার হাজার ভালোবাসার ঘ্রান পেলো পালক। সেই ঘ্রানে মাতাল হয়েই নিজেও চিঠি লিখতে বসে পড়লো।
***প্রিয় ডিস্টার্ভিং গার্ল,
এতো কেন ডিস্টার্ব করছেন আমাকে? আপনার জ্বালায় আমি ঘুমুতে পারছি না,খেতে পারছি না,পড়তে পারছি না,গোসলও করতে পারছি না। আমি আজ তিনদিন ধরে গোসল করছি না। গোসল করতে গেলেই আপনি আমাকে ডিস্টার্ভ করছেন। আপনার নীল নকশা কি সিল মারা হয়েছে? আর কত সময় নিবেন সিল মারতে? আমি ঠিক করেছি আপনার সাথে আমিও আপনাকে কলংকিত করবো তারপর একসাথে দুজন গোসল করে সেই কলংকের দাগ ধুবো!
আপনি কি জানেন? এইবার আপনার হিংসে আমাকে এতোই প্রজ্বলিত করেছে যে আমি পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা দিয়েছি। দুদিন পর নোটিশ বের্ডে টপ নোটিশ লেটারেই ফলাও করে লিখে দিবে,প্রখর মেধাবী পালক প্রেমে কলংকিত হয়ে সবার মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছে। সবাই কলংকিত পালকের থেকে দুরে থাকুন!
পত্রীকন্যা আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না। এই ভয়াবহ ডিস্টার্বে আমি খারাপভাবে আহত হচ্ছি! আমার উপর মায়া না হোক প্রিন্সিপালের উপর একটু মায়া করবেন। উনার হাসি হাসি মুখটা চুপসে দিবেন না।
ইতি
পত্র পুরুষ
ঘন্টাখানিক পার হওয়াতেও যখন অন্ত্রীশার আগমনের কোনো লক্ষন দিলো না পালকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। এতক্ষণে বৃষ্টিরবেগও তো কমে এসেছে। ও এখনও বারান্দায় কী করছে? ও যা খুশি তাই করুক,আমার কী? পালক আবার চেখ বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু কপালের ভাঁজটা কমার বদলে আরো বেশি কুঁচকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কাটানোর পর পালক উঠে বসলো। এই মেয়েটা করছে কী? এর জ্বালায় তো আমি অতীতে ডুবতেও পারছি না। ধ্যেত!
পালক বিছানা ছেড়ে বিরক্ত নিয়েই বারান্দার দিকে এগুলো। দরজায় পা রাখতেই পালকের বুকটা কেঁপে উঠলো। অন্ত্রীশা ভেজা মেঝেতে পড়ে রয়েছে!
পালক দৌড়ে অন্ত্রীশার কাছে গেলো। এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে ফেলেছে,,
“” অন্ত্রীশা,কী হয়েছে তেমার? তুমি ঠিক আছো তো?””
অন্ত্রীশার গালে হালকা করে থাপ্পড় দিতেই অন্ত্রীশা কিছুটা নড়ে উঠলো,অস্পষ্ট স্বরে বললো,
“” সব কেন এর উত্তর হয় চুমুবাবু! আপনি আমাকে ভুল বুঝাচ্ছেন!””
পালক অন্ত্রীশাকে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে হাতের তালু মালিশ করতে করতে বললো,
“” তোমার তো জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বৃষ্টিতে ভেজার কী দরকার ছিলে? উফ! হাতটা এতো ঠান্ডা হয়ে আছে কেন?””
“” আমাকে বন্ধুও বানাবেন না তাও এতো অস্থির হচ্ছেন? বন্ধু বানালে না জানি কত অস্থির হতেন। আর বউ ভাবলে কি করতেন?””
“” এসব আজেবাজে কথা বাদ দাও তো। তোমার তো কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। নিশ্বাস নিতেও কি কষ্ট হচ্ছে?””
পালকের কথার জবাব দেওয়ার শক্তিটুকুও আর পাচ্ছে না অন্ত্রীশা। কিন্তু তার যে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে। এই প্রথম উনি তাকে প্রশ্ন করছেন,নিজের ইচ্ছেই কথা বলছেন।
পালক অন্ত্রাীশাকে ছেড়ে পায়চারি শুরু করে দিয়েছে। কী করবে সে? ওর বড় কিছু হয়নি তো? ও কি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে? কথা বলছে না কেন? আমি কি কাউকে ডাকবো? কিন্তু কাকে ডাকবো?
অন্ত্রীশার সাদা জামাটা ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে,শরীরের সাথে মিশে গেছে। মাথার চুলগুলোও ভিজে গলার সাথে অগোছালোভাবে ল্যাপ্টে আছে। এই জ্বরের মধ্যে এই অবস্থায় থাকলে তো শরীরের তাপমাত্রা হুড়হুড় করে বেড়ে যাবে। জামাটা চেন্জ করা দরকার! অন্ত্রীশাতো কথাই বলতে পারছে না কিভাবে চেন্জ করবে? তাহলে কে করে দিবে? অনিকশাকে ডাকবো? না না ওকে ডাকা যাবে না! ওর আম্মুকে ডাকবো? কিন্তু উনি যদি বুঝে যান আমাদের বিয়ের সম্পর্কটা অন্যদের মতো সাজানো না। কষ্ট পেলে? উনাকে কেন কষ্ট দিতে যাবো? উফ! তাহলে কাকে ডাকবো? টেনশনে মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে পালকের।
যে মেয়েটাকে বউয়ের স্বীকৃতি দিতে পারবো না সে মেয়েটার জামাতে হাত দেওয়া কি ঠিক হবে? পালক আর কিছু ভাবতে পারছে না। সব ভাবনা দূরে ঠেলে অন্ত্রীশার গলায় পেচানো ভেজা ওড়নায় হাত দিলো!
চলবে