নক্ষত্র_বন্দনা,পর্ব_২৬

0
605

নক্ষত্র_বন্দনা,পর্ব_২৬
লেখায়_জারিন

১৫১.

‘আজ তাহলে উঠি। পরশু কোর্টে দেখা হচ্ছে ইন শা আল্লাহ।’

কথাটা বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রাফিদ। তার সাথে উঠে দাঁড়ালো টেবিলের বিপরীতমুখে বসে থাকা নক্ষত্রও। আলতো হেসে হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য। রাফিদ সহাস্যমুখে হাত মেলাতেই নক্ষত্র বললো,

‘আপনার কনফিডেন্স দেখে সত্যি খুব ভালো লাগছে মি. রাফিদ। মন থেকে আপনার সফলতা কামনা করছি।’

‘থ্যাংক্স মি. নক্ষত্র। আই অলসো হোপ সো। প্রিপারেশন তো সেভাবেই নিয়েছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’ মিষ্টি হেসে বললো রাফিদ।

‘পুতুলের আম্মুকে কেন জানাচ্ছেন না আপনি এ ব্যাপারে? আপনারা তো ভালো বন্ধু, রাইট?’

‘ভালো বন্ধু বলেই এত শর্ট টাইমে এত চেষ্টা..এত আয়োজন। নইলে শুধুমাত্র উকিল হিসেবে এত অল্প সময়ে এত কষ্ট আমি কখনোই করতাম না একজন ক্লাইন্টের জন্য। আর না জানানোর যে বিষয়টা….এটা আমি আমার তরফ থেকে সারপ্রাইজ রাখতে চাই তার জন্য…তাই!’

‘বাহ! বন্ডিংটা তো তাহলে বেশ ভালোই মনে হচ্ছে আপনাদের।’ কিছুটা রুক্ষস্বরে বললো নক্ষত্র।

তার বলার ধরণে কি যে একটা ভেবে মুচকি হাসলো রাফিদ। হাসি হাসি মুখেই বললো, ‘ আলহামদুলিল্লাহ। আমি খুশি তাকে পেয়ে। বন্ধু হিসেবে আর কি! ‘ অনন্দিত স্বরে হাসিমুখে বললো রাফিদ।

নক্ষত্রর আর কিছু বললো না রাফিদের এমন কথার বিপরীতে। কপট হেসে কথোপকথনের ইতি টানলো ওখানেই। ঠিক তখনই কেবিনের দরজা খুলে কেবিনে ঢুকলেন জব্বার আলী। তার হাতে মাঝারি সাইজের একটা ব্যাগ। কেবিনে ঢুকে তিনি নক্ষত্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘নক্ষত্র বাবা….বাড়ি থেইকা দুপুরের খাবার পাঠাইছে। আসো…খাইয়া নাও। ‘

‘হুম। ‘ নক্ষত্র বললো।

রাফিদ ল্যাপটপের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তা দেখে নক্ষত্র বললো, ‘ মি. রাফিদ, আজ আমার এখানেই লাঞ্চ করে যান প্লিজ।’

আচমকা নক্ষত্রের এমন নিমন্ত্রণে তার দিকে চমকে তাকালো রাফিদ। মূহুর্তের মাঝেই চকম কাটিয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আলতো করে হাসলো সে।বিনম্র গলায় বললো , ‘আজ না…অন্য কোন দিন। কেসের জন্য কিছু পেপারস রেডি করা বাকি। হাতে সময় কম। যেতে হবে আজ।’

‘ওকে। বাট এরপর আর কোন ছাড়াছাড়ি নেই কিন্তু। সোজা আমার বাসায় দাওয়াত থাকবে আপনার।’ আন্তরিকতার সুরে বললো নক্ষত্র।

নক্ষত্রের এমন আন্তরিকতায় আরও একবার তার প্রতি মুগ্ধ হলো রাফিদ। নক্ষত্রের নিমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করে হাসিমুখে বললো, ‘শিওর। বাট নাও আই হেভ টু লিভ, মি. নক্ষত্র। ‘

‘বেস্ট অব লাক।’ রাফিদকে শুভ কামনা জানিয়ে বললো নক্ষত্র। ‘

‘থ্যাংক্স। আই উইল গিভ মাই বেস্ট ইন শা আল্লাহ। সো,লেটস হোপ ফর দ্যা বেস্ট। ‘

‘অফকোর্স। ‘ নক্ষত্র সহমত প্রকাশ করলো রাফিদের কথায়।

এবার,রাফিদ আর দেরি করলো না। বিদায় নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

জাব্বার আলী খাবার বের করে টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছিলেন। তা দেখে হঠাৎ নক্ষত্র বলে উঠলো, ‘আপনি কখনো পুতুলের আম্মুর হাতের রান্না খেয়েছেন, মি.রাফিদ?’

রাফিদ প্রায় বেরিয়েই যাচ্ছিল।নক্ষত্রের কথায় দরজায় দাঁড়িয়েই পিছু ফিরে তাকালো।চোখে মুখে ফুটে উঠা বিব্রতভাব নিয়ে অপ্রস্তত স্বরে বললো, ‘না…খাওয়া হয়নি কখনো।’

‘আসুন….আজ তবে ওর হাতের রান্না খেয়ে যান। ওর রান্নার হাত কিন্তু মাশাল্লাহ…ভীষণ ভালো। ‘

‘কিন্তু…’

‘কাজ তো চলতেই থাকে মি. রাফিদ। এমনিতেও এটা লাঞ্চ টাইম। লাঞ্চ তো করবেনই নিশ্চই। আজ আমার সাথেই করুন না হয়! প্লিজ…আই ইনসিস্ট।’

নক্ষত্রের এমন করে করা অনুরোধ আর ফেলতে পারলো না রাফিদ। আলতো হেসে বললো, ‘ওকে।’

১৫২.

দুজনেই সোফায় বসে খাবার খাচ্ছে। নক্ষত্র চিংড়ির মালাইকারীর বাটি থেকে তরকারি নিয়ে রাফিদের প্লেটে তুলে দিয়ে বললো, ‘এটা টেস্ট করুন। পুতুলের আম্মু রেঁধেছে।’

রাফিদ মনে মনে এতক্ষণের চেপে রাখা প্রশ্নটা করেই ফেললো এবারে। কৌতুহলী স্বরে নক্ষত্রকে জিজ্ঞেস করলো, ‘খাবার তো সম্ভবত আপনার বাড়ি থেকে পাঠানো হয়েছে, রাইট?’

‘ইয়াহ।’ খেতে খেতে জবাব দেয় নক্ষত্র।

‘তাহলে এটা ইরিনের রান্না কি করে হয়? তিনি তো আপনার বাড়িতে থাকেন না।’

‘এটাও ওর একটা ট্রিকস।’

‘কেমন ট্রিকস?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রাফিদ।

‘আমার অগোচরে আমার প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশের। যেটার অধিকার আমি ওকে দেইনা আর।’

‘বুঝলাম না।’

‘পুতুলের আম্মু আমার অফিস জয়েন করেছে পর থেকে যখনই ওর বাড়িতে স্পেশাল কোন আইটেম বা আমার পছন্দের কিছু রান্না হয় সেটা সে আমার জন্যও নিয়ে আসে।আর এটাও আমার পছন্দের একটা আইটেম। ‘

‘আপনি এই নিয়ে কিছু বলেননা তাকে?’ অবাক স্বরে প্রশ্ন করে রাফিদ।

‘পুতুলের আম্মু জানে না, আমি এটা জানি।’ বাঁকা হেসে বলে নক্ষত্র।

‘মানে?’ থতমত খাওয়া স্বরে প্রশ্ন করে রাফিদ।

রাফিদের প্রশ্নে নক্ষত্র একপলক জব্বার আলীর দিকে তাকালো। তিনি গ্লাসে পানি ঢালছিলেন। নক্ষত্রের রাফিদকে বলা কথাটায় তিনিও চমকে তাকিয়েছিলেন নক্ষত্রের দিকে।ভয়ে তার চোখমুখ চুপসে গেছে। কারণ,তিনি নিজেও জানতেন না যে, ইরিনের পাঠানো খাবারটাও যে তিনি বাড়ি থেকে পাঠানো খাবারের সাথে নক্ষত্রকে পরিবেশন করেন…সেটা নক্ষত্র জানে। অথচ এই নিয়ে কখনো তাকে কিছু বলেনি নক্ষত্র। তবে তিনিও কিছুটা জানেন নক্ষত্র আর ইরিনের সম্পর্কের টানাপোড়নের ব্যাপারে। ইরিনের অফিস জয়েন করার পর তার প্রয়োজনগুলোর খেয়াল রাখার দায়িত্ব যে নক্ষত্র তাকেই দিয়েছে।

নক্ষত্র মুচকি হাসলো জব্বার আলীর চুপসে যাওয়া ভয়ার্তক মুখের দিকে তাকিয়ে। রাফিদের চোখ মুখে রহস্য উদ্ধারের মত উত্তেজনা ছেয়ে আছে। নক্ষত্র রাফিদকে ইশারায় খাবারের বাটিগুলো দেখিয়ে বললো, ‘এই আলাদা বাটিটা পুতুলের আম্মুর পাঠানো…যেটা আমার বাড়ি থেকে আসা লাঞ্চবক্সের নয়। তাছাড়া, ওর হাতের রান্না স্বাদ আমার ভালোই জানা।’

রাফিদ বিস্ময়মাখা চোখে তাকিয়ে দেখলো বাটিগুলোকে। সত্যিই…সবগুলো বাটির থেকে একটা বাটি আলাদা। যেটায় চিংড়ির মালাইকারী পাঠানো হয়েছে। সে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে বেশ উত্তেজিত স্বরে বললো, ‘এই…আপনাদের না ঝগড়া চলছে! তাহলে আপনি জেনে বুঝেও ইরিনের পাঠানো খাবার কেন খান?’

নক্ষত্রের মুখের হাসিটা বিস্তৃত হলো রাফিদের এমন কথার ধরণ ও ভাবে। সে হেসে ফেললো ভালো মতই। রাফিদ তা দেখে ভড়কে গেল। চোখ মুখে সেটা স্পষ্ট ফুটে উঠলো।তার এমন চাহনী দেখে হাসিমুখেই নক্ষত্র বললো,

‘একটা মজার ব্যাপার কি জানেন মি. রাফিদ? বিয়ের পর থেকে এই সাড়ে ছয় বছরে আমার আর পুতুলের আম্মুর মাঝে কোনদিন ঝগড়া হয়নি। একবারের জন্যও না। আমি রাগ করলে…চেঁচামেচি করলে সে চুপ থাকতো নয় তো শান্ত সুরে কথা বলতো। আর আমিও শান্ত থাকার চেষ্টা করতাম যখনই পুতুলের আম্মু কোন কারণে রাগ হতো। যদিও সে সুযোগ তার খুব কমই হয়েছে।’

‘কিন্তু, আপনি তো তাকে এসবের অধিকার দেন না। তাহলে তার থেকে কিছু কেন নেবেন আপনি?’ চোখ ছোট ছোট করে জেরা করার মতই প্রশ্ন করে রাফিদ। নক্ষত্র তাতেও হাসলো। রাফিদের প্রশ্নের জবাবে বললো,

‘ওর হাতের রান্না ভালো। তাছাড়া, আমি খাবার নষ্ট করতে পছন্দ করি না। তাও আবার সেটা যদি হয় আমার পছন্দের কোন খাবার।’ অনেকটা নিজের দিকটা চেপে গিয়ে কৈফিয়ত দেওয়ার ভংগিতে বললো নক্ষত্র শেষ কথাটা ।

এরপর জব্বার আলীর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতেই বললো, ‘আপনি ভাবলেন কি করে কাকা যে, বউয়ের হাতের রান্না আর মায়ের হাতের রান্নার তফাৎ আমি বুঝবো না?’

‘ইয়ে…না…মানে…ইরিন মা’য় তো কইছিল তুমি বুজবানা। আর তুমিও কহনো কিসু কও নাই..তাই ভাবছি যে..’ কিছুটা লজ্জিত স্বরে বললেন জব্বার আলী।

‘৫ বছর একসাথে সংসার করেছি….তাও যদি বউয়ের হাতের রান্নার স্বাদ না চিনি তাহলে আর কিভাবে কি!’ নক্ষত্র রসিকতার স্বরে বললো।

‘বউ মানেন তাহলে তাকে?’ রাফিদ চট করেই প্রশ্ন করে ।

তার প্রশ্নে মূহুর্তের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে গেল নক্ষত্র। সেটা খেয়াল করে জব্বার আলী বললেন, ‘তোমরা খাও…আমি যাই এহন। কিছু লাগলে ডাইকো আমারে। ‘

‘আচ্ছা…যান। আপনিও খেয়ে নিন গিয়ে। আর হ্যাঁ, পুতুলের আম্মু খেয়েছে? ‘

‘ মনে হয়। ক্যান্টিনে তো যাইতে দেখলাম এইখানে আসার সময়। ‘

‘অহ…আচ্ছা। ঠিক আছে। আপনি যান এবার। ‘

নক্ষত্রের কথায়’ হ্যাঁ ‘সূচক মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন জব্বার আলী। তিনি যেতেই রাফিদ আবারও অস্থির গলায় প্রশ্ন করলো, ‘বউ মানেন ইরিনকে? এভাবে খেয়াল কেন রাখেন তার….ভালোবাসেন তাকে এখনো?’

রাফিদের এমন অস্থিরতা দেখে নক্ষত্র মনে মনে কিছু একটা ভাবলো। কয়েকমূহুর্ত সময় নিয়ে রাফিদের দিকে চোখ তুলে তাকালো। শুকনো হেসে বললো, ‘পুতুলের আম্মু এখনো আমার স্ত্রী। ডিভোর্স কিন্তু হয়নি আমাদের। তাছাড়া,ওকে আমি কখনোই নিজের স্ত্রী বলে অস্বীকার করিনি…তো বউ না মানার তো কোন প্রশ্নই আসে না।’

‘ভালোবাসেন এখনো? আগের মতই?’ থেমে থেকে দুবারে প্রশ্ন করে রাফিদ। তার এমন প্রশ্নে নক্ষত্র বিষন্ন চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ উহু। আগের থেকেও বেশি ভালোবাসি। কারণ সে তো এখন শুধুমাত্র আমার স্ত্রী নয়। আমার সন্তানের মা। সম্পর্কের অগ্রগতিতে ভালোবাসা এক থাকে কি করে তাহলে?’

‘এতই যখন ভালোবাসেন তাহলে স্ত্রীর অধিকার…প্রাপ্য মর্যাদা কেন পায় না সে? কেন নিজের সন্তান, সংসার ছেড়ে আলাদা থাকতে হচ্ছে তাকে?’ রাফিদ আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে কিছুটা কঠিন স্বরে প্রশ্ন করে। তার বিপরীতে শান্ত স্বরে জবাব দেয় নক্ষত্র।

‘ওকে ভালোবাসতে কষ্ট হয় এখন আমার। আমার ভালোবাসার পালকে হাজার টনের ভারী পাথর বেঁধে দিয়েছে সে।সেই পাথরের ভারে আমার ভালোবাসা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ডানা মেলে উড়তে পারেনা। বিশ্বাস ভেঙেছে বারংবার। এই কষ্টের বিনিময়ে আমি কেবল তাকে আমার থেকে দূরে করে দিয়েছি।’

‘ভালোবাসাও কি বিনিময় প্রথার অন্তর্ভুক্ত মি.নক্ষত্র?’

‘অবশ্যই না। তবে, যে ভালোবাসা বুঝে না… আগলে রাখতে পারেনা তাকে সামনাসামনি উজাড় করে ভালোবাসতে নেই। তাকে ভালোবাসতে হয় একান্তভাবে। হৃদয়ের অন্তঃস্থলে ভালোবাসা পুষে রেখে তারপর ভালোবাসতে হয়। ‘

‘এটুকু করলেই তো হয়….এত অবহেলা…এত অবিচার কেন তাহলে?’

‘অভিমান! অভিমানী মন ভালোবাসার অপমান সহ্য করতে পারেনা কখনোই। পুতুলের আম্মু আমাকে ভালোবাসে ঠিকই….কিন্তু নিজের ভুলে আমার ভালোবাসাকে সে অপমান করে গেছে বারবার। আর বিশ্বাসকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। কে জানে…আজও করছে হয় তো।’ শেষ কথাটা আনমনে আউড়ালো নক্ষত্র।’

‘ইরিনও কি তবে অভিমানে ছেড়ে এসেছিল আপনাকে?’

রাফিদের এমন প্রশ্নে বিষন্নতায় শুকনো হাসে নক্ষত্র। রাফিদের কৌতুহল বাড়ে। মনের ভেরত নক্ষত্রকে জানার, বুঝতে চাওয়ার ইচ্ছাটা তীব্র তৃষ্ণায় রূপ নেয়। সে চাতকের মত নক্ষত্রের মুখপানে চেয়ে থাকে। অপেক্ষা করে উত্তরের আশায়।

১৫৩.

দুপুরের খাওয়া শেষ করে অফিসের ছাদে উঠে এসেছে রাফিদ আর নক্ষত্র। রাফিদের মাথায় আজ নক্ষত্রকে নক্ষত্রের মত করে জানার, তার কথাগুলো শোনার ভূত চেপেছে । তাই সব কাজ ফেলে আজ তার সাথে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাফিদ। ইরিনের ভাষ্যমতে নক্ষত্রের যে চিত্রপট রাফিদের সামনে উঠে এসেছে সেটার বিপরীতে নক্ষত্রকে জানতে চায় সে। এক পক্ষের কথা শুনে কখনো কোন কিছু বিচার করতে নেই। রায় দিতে নেই। রাফিদ এটা খুব ভালো করেই জানে…বুঝেও। তাই সে নক্ষত্রের দিক থেকেও গল্পটা কেমন তা জানতে চাইছে।

নক্ষত্রকেও খুব করে চেপে ধরেছিল সবটা শুনবে বলে। নক্ষত্র জানে ইরিন সব বলেছে রাফিদকে। রাফিদই জানিয়েছে এ কথা। তাই আর আপত্তি করেনি। খোলা বইটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে পাতা উল্টে যাচ্ছে অতীতের প্রকাশিত গল্পের ওপাশের অংশটা। তাদের এই কথোপকথনের সঙ্গী হয়েছে ঝিমিয়ে আসা ক্লান্ত দুপুরের আর ধোঁয়া উঠা গরম কফি।

ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে তারা। নক্ষত্র কফিতে চুমুক দিয়ে ছোট করে একটা শ্বাস ফেললো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো তার পক্ষের গল্পটা।

‘সত্যি বলতে পুতুলের আম্মুর প্রতি আমার রাগ অভিমানের কারণ এটা ছিল না যে, সে আমাকে স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারেনি। ওয়াসিফের ব্যাপারটা জানার পর আমার রাগ হয়েছিল ভীষণ। সেটা শুধুই এই কারণে যে পুতুলের আম্মু আমাকে ভরসা করে কোনদিন নিজের মনের কথাটা বলতে পারেনি। বিয়ের আগে আমারও মনে হতো পুতুলের আম্মু আমাকে পছন্দ করেনি। ওর মত সুন্দরী মেয়ের আমাকে পছন্দ না করাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু, আমার কখনো এটাও মনে হয়নি পুতুলের আম্মু আমার অর্থ সম্পদের লোভে পড়ে বিয়েতে মত দিয়েছে। সত্যিও ছিল এটা।

বিয়ের পর প্রথম রাতে ওর আচরণে আমার ধারণাকে আমি আরও নিশ্চিত ভেবে নিলেও, পুতুলের আম্মুর বাবারর বাড়িতে ফিরানিতে গিয়ে সেটা নিছক মনের ভ্রান্ত ধারণা বলে মনে হয় আমার। আমিও সেটাই বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। প্রথমদিকে ইরিনের জড়তা থাকলেও আমাদের সম্পর্কটা ভালোই চলছিল। আমরা স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর মতই সংসার করছিলাম। পুতুলের আম্মু কখনো আমাকে ওর প্রতি কোনরকম অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি। আমার প্রতিও তার দায়িত্ব পালনে কমতি ছিল না কোন। ভালো তো বিয়ের আগেই বেসে ফেলেছিলাম মেয়েটাকে। বিয়ের কথা ফাইনাল করতে গিয়ে প্রথম দেখেই তার প্রেমে পড়েছিলাম। বিয়ে পর্যন্ত আসতে আসতে ভালোওবেসে ফেলেছিলাম তাকে। জীবনের প্রথম নারী আকর্ষণ.. প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা এগুলোর অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। মন থেকে কখনো মুছে না যাওয়ার মত গাঢ় ।

বিয়ের পর তাকে কাছে পেয়ে সেটা আরও গাঢ় হয়েছিল দিনকে দিন। বিয়ের ছয় মাস পর একরাতে আমিও টের পেলাম, মেয়েটাও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। আমি তাকে পুরোপুরি নিজের করে পেয়ে গেছি। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ….আমি সুখী ছিলাম তার সাথে।

‘ভালোবেসেছিলেন বলেই কি তাকে পুনরায় গ্রহণ করেছিলেন অতসব কিছুর পরেও?’

‘ভালোবাসা?! হ্যাঁ, সেটাও একটা কারণ ছিল। তবে, মূল কারণ ছিল অন্যকিছু। পুতুলের আম্মুকে যে অবস্থায় আমি প্রথম দেখেছিলাম হোটেলে আমি ভেবেছিলাম দুঃস্বপ্ন দেখছি কোন। অতিরিক্ত চিন্তায়, বাকি সব ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার অবচেতন মন ভুলভাল ভেবে নিয়েছে। কিন্তু, বিশ্বাস করতে হয়েছিল সবটাই বাস্তব ছিল। ওকে যখন এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাচ্ছিলাম আমার মাঝে বিশ্বাস ভঙ্গের ব্যাথাটাই বেশি ছিল। পুতুলের আম্মু সত্যিই পরকীয়ায় জড়িত ছিল। অথচ আমি ঘুণাক্ষরের টের পাইনি কিছুই। আমার সন্তানকে গর্ভে নিয়ে সে অন্যকাউকে ভালোবেসেছে। তাকে বিশ্বাস করেছে আর ওই লোকটা ওকে এত বিশ্রিভাবে ছুঁয়েছে।আহত করেছে। আবার সে এসব সহ্য করতে না পেরে নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতে উদ্যত হয়েছিল। আমার সন্তানের কথাও ভাবেনি একবারের জন্যও। অথচ, আমি তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম যে কোন সময় স্বেচ্ছায় আমাকে ছেড়ে যেতে। এসব ভাবতেই রাগে ঘৃণায় ওকে ওখানেই মেরে ফেলতে ইচ্ছে করেছিল আমার। কিন্তু, পারিনি…কারণ সব কিছুর পরেও সে আমার সন্তানের গর্ভধারিণী ছিল।

এরপর, আমি আমার সন্তান হারালাম। পুতুলের আম্মুর অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। আমার তখনও ওকে আমার সন্তানের খুনি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। তবুও, আমি ওকে বাঁচানোর জন্য যা করা সম্ভব ছিল সব করেছি।কারণ, ওর সাথে আরও একজন আমার সন্তানের খুনি ছিল। তাকে না চিনিয়ে দেওয়ার আগে আমি ওকে মরতে দিতাম কি করে?

‘তারপর?’

‘আমি যখন রাগে ঘৃণায় পুতুলের আম্মুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম, সেই মেয়েটাই আবার আমাকে বাধ্য করেছিল তার দিকে ফিরে তাকাতে। আমি সাক্ষী হয়েছিলাম তার প্রতিটি ঘুম ঘোরের, যখন সে নিজের সাথে ঘটনাগুলো দুঃস্বপ্নে আউড়ে যেত। ছটফট করতো।আমাদের সন্তানকে বাঁচানোর জন্য আকুতি মিনতি করতো। প্রচন্ড কষ্টে আর্তনাদ করে উঠতো। ঘুম ভেঙে গেলে ভয়ে অস্থির হয়ে পাগলামো করতো। ওর এই কষ্টের সামনে আমি আমার রাগ ঘৃণাকে জায়গা দিতে পারিনি। তবে, ছেড়েও দিতে পারিনি একেবারে। তার যে অবস্থা ছিল, সেই সময় আমি সাথে না থাকলে হয় তো অবহেলা আর নিজের প্রতি ঘৃণায় মেয়েটা সত্যিই মরে যেত। স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে এই মরণদশা থেকে উদ্ধার করার দায়িত্বটা পালন করতে পিছ পা হইনি আমি।

‘হুম…ডক্টর সুব্রতও বলছিলেন, হাজবেন্ড হিসেবে আপনি সত্যিই অনন্য।’

রাফিদের এমন কথায় নিজের প্রতি নিজেই উপহাস করে হাসলো নক্ষত্র। কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,’হয় তো।তবে ভালোবাসার পুরুষ হিসেবে বোধয় আমি অতি তুচ্ছ..নগন্য। তাই বোধয় পুতুলের আম্মু আমাকে ভালোবাসতে না পেরেই ওসব করেছিল।’

‘ইরিন আপনাকে খুব ভালোবাসেন মি. নক্ষত্র। আপনিও জেনেন সেটা। তাহলে কেন অযথা তাকে কাছে টেনে নিচ্ছেন না? এই দূরত্ব কেন?’ নক্ষত্রের কথার বিপরীতে মনে মনে আউড়ায় রাফিদ। নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ এরপর দায়িত্বের খাতিরেই পুতুলের জন্ম, তাই না?’

‘না। ক্ষোভ থেকে। ‘ নক্ষত্রের অকপট স্বীকারক্তি।

‘কিসের ক্ষোভ?’ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে রাফিদ।

‘পুতুলের আম্মুর কষ্টগুলো আমাকেও কষ্ট দিত খুব। রাগ, ঘৃণা যতই থাকুক ভালোবাসাও তো ছিল।সময়ের দোলাচলে ভালোবাসা খুব বড়জোর অবশ হয়ে অনুভব করতে না পারা এক অস্তিস্ত্বে রূপ নেয়। কিন্তু, পড়ে থাকে ঐ হৃদয়ের কালকুঠুরিতেই। আমরা কেবল অন্ধকার ঘেরা সে কালকুঠুরিতে উঁকি দিয়েও দেখিনা বলেই তার অস্তিস্ত্ব বুঝি না। হয় সময়ের সাথে নতুন ভালোবাসায় মেতে উঠি…নয়তো ভালোবাসা মরে গেছে বলে দুঃখ করি। কষ্ট পাই। তবে কষ্টটাও কিন্তু সেই ভালোবাসার জন্যই! আবার, সুযোগ পেলে অবশ হওয়া ভালোবাসাটাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। নতুন উদ্যমে জেগে উঠে পুরোনো ভালোবাসার মানুষ বা বস্তুটার জন্য।

পুতুলের আম্মুর জন্য আমার ভালোবাসাটা অবশ না হলেও ঝিমিয়ে পড়েছিল বেশ অনেকটাই। তবে,লাইফ সাপোর্টে বেঁচে থাকা প্রাণের মতই সেও মনের কোথাও না কোথাও ধীরিগতিতে নিজের সঞ্চালন বজায় রেখেছিল।আমি দায়িত্ব মনে করে ওকে নিজের কাছে রাখলেও ওর জন্য হওয়া কষ্টের কারণ ছিল ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটুকুই।আমিও বুঝতাম সেটা। ওর অপরাধবোধ, শারিরীক অসহায়ত্ব, মানসিক যন্ত্রণা…আত্মদহন সবটাই আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল।আমি ভালোবাসা প্রকাশ না করলেও ভালোবেসেই তার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। পুতুলের আম্মু যদি আজীবনও প্যারালাইজড থাকতো তাও আমি তাকে এভাবেই নিজের কাছে রেখে দিতাম। তখন সম্পর্কটা কেমন হতো আমি জানি না।তবে, আমি হয় তো সব অতীত পেছনে ফেলে তাকে আবারও প্রকাশ্যে ভালোবাসার সুযোগটা ফিরে পেতাম।

কিন্তু আমার এত চেষ্টা, এত কষ্ট, এত যন্ত্রণাকে অবহেলা করে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। নিজের জীবন শেষ করে আমাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল সে। কিংবা নিজের অসহায়ত্ব, অপরাধবোধ থেকে মিছে মুক্তি লাভের চেষ্টা ছিল ওটা তার।সেসব করেও ক্ষান্ত হয়নি সে। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ডিভোর্স চেয়ে বসে। এর আগেও সে ওয়াসিফের কথায় আমাকে ডিভোর্স পেপার সাইন করে পাঠিয়েছিল। আত্মহত্যার চেষ্টায় যে রাগ নতুন করে চড়াও হয়েছিল, ডিভোর্সের কথাটা আমার রাগকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

সেদিন থেকে আমি পুতুলের আম্মুকে অনেকটাই এড়িয়ে চলতে শুরু করি। ভালোবাসা ভুলে গিয়ে কেবল দায়িত্বের খাতায় জায়গা দেই তাকে। শুধুমাত্র তার অসুস্থতার কারণে, প্রয়োজনে কাছে যাওয়া হতো। প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বেশি হতো না আমাদের। কারণ অবশ্য আমিই ছিলাম। পুতুলের আম্মুও এতসব কিছু পরে নিজের অপরাধবোধের কারণে আমার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। বলতে গেলে দূরত্ব দু দিক থেকেই ছিল। ‘

এটুকু বলে নক্ষত্র থামলো। মিনিট খানিক নিরবতার পর রাফিদ বললো, ‘ক্ষোভটা কি শুধুমাত্র এই কারণেই ছিল?’

‘উহু। পুতুলের আম্মু এতকিছুর পরেও আরও একটা ভুল করে বসে। তার মায়ের কথায় প্রভাবিত হয়ে ডাক্তারের নিষেধ করার পরেও বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওর মনে হয়েছিল বাচ্চা হলেই বোধয় আমি ওকে আবার আগের মত ভালোবাসবো। মাফ করে দিবো।

আমি সব জেনেও কিছু বলিনি তাকে। তাদের দুজনের কনভার্সেশনে আমার সামনে প্রকাশ পেয়েছিল আমার প্রতি করা প্রতারণার জন্য পুতুলের আম্মুর আত্মদহন। আমাকে বুঝতে পারার ব্যাপারটা। আমিও অবশ্য সেদিন একটা ভুল করে বসি। বোকার মত দ্বিতীয়বার পুতুলের আম্মুকে বিশ্বাস করার ভুল। এবং আমার এই ভুলকে আমার দ্বিতীয় ভুলের কারণ করে দিয়ে সে এক নোংরা প্রচেষ্টা চালায়। আমাকে সিডিউস করে কনসিভ করার চেষ্টা করে। কিন্তু, সেটা যখন সফল হয় না। আমাকে আমার দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। তার এই বিশ্বাসভঙ্গ আমার অতদিনের ধৈর্য্য, দমিয়ে রাখা কষ্ট, যন্ত্রণা..রাগকে বাজেভাবে উষ্কে দিয়ে আমার ক্ষোভে পরিণত করে।

আমি অমানুষ হয়ে উঠি। সেদিন কি কষ্টটাই না দিয়েছিলাম তাকে। এতটা ভালোবেসেও তাকে এর আগে কখনো কাছে টেনে নেইনি, যতটা কষ্ট দিয়ে সেদিন নিজের সাথে মিশিয়েছিলাম। নিজের কাছেই অচেনা হয়ে উঠেছিলাম আমি। পুতুলের আম্মু সেদিন জিজ্ঞেস করেছিল, ‘ভালোবাসা মরে গেলে বুঝি মানুষ অমানুষ হয়ে উঠে?’

আমি তাকে বলিনি, ভালোবাসা কখনো মরে না। মরে যায় শুধু ভালোবাসার স্বচ্ছলতা। স্বস্তির অভাব এসে হানা দেয় তাতে। ভীষণরকম কষ্ট হয় ভালোবাসতে। আর মানুষ তখন সেই অভাবেই স্বভাব নষ্ট করে ফেলে। হিংস্র, অমানুষ হয়ে উঠে।

আমিও সেরাতের পর হিংস্র হয়ে উঠি তার প্রতি। যতদিন না আমি আমার উদ্দেশ্য সফলের আভাস পাই আমার হিংস্রতায় আহত হতে থাকে আমার একসময়কার স্বচ্ছল ভালোবাসা। আমি জানি এই ভুলটুকুর সম্পূর্ণ দায় আমার। বাট সি প্রোভোকড মি। পুতুলের আম্মু আমাকে এতটা হার্ট না করলে হয় তো আমিও ওমন ভুল করতাম না। তবে, এটা আমি স্বীকার করতে বাধ্য, আমার এই ভুলের মাসুল পুতুলের আম্মুর জন্য অনেক বেশি ভারী ছিল। মেয়েটা আমার সন্তানকে জন্ম দেওয়ার জন্য প্রচুর কষ্ট করেছে। কিন্তু, সেই কষ্টেও আমি তাকে ভালোবেসে সান্ত্বনা দেইনি। আগলে নিয়ে ভরসা দেইনি। কেবল স্বামী ও অনাগত সন্তানের প্রতি পিতার দায়িত্ব পালন করেছি। ‘

‘তার এত কষ্টের পরেও তাহলে কেন এই অবহেলা? এত কষ্টের পরেও কি সে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়?’

‘অভিমান বোঝেন, মি. রাফিদ?’

‘অভিমান কি ভালোবাসার চাইতেও বড়? ক্ষমতাধর?’ পাল্টা প্রশ্ন করে রাফিদ।

‘পুতুলকে জন্ম দিতে গিয়ে ওর আম্মু যত কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করেছে তার একটা বিশেষ কারণ ছিলাম আমি। মেয়েটা আমাকে ভালোবেসেছিল বলেই নিজের সন্তানের চাইতেও আমার সন্তান জন্ম দিচ্ছে ভেবেই এত কষ্ট সহ্য করেছে। কখনো সেসব আমার সামনে প্রকাশ করেনি। আমি বুঝতাম। কিন্তু, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এই অসময়ে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্তটা আমি মানতে পারিনি। নিজের প্রতি রাগ হয়েছিল আমার। আর তার প্রতি অভিমান। সে যদি একটাবার আমার বিশ্বাসকে জিতিয়ে দিত, এত দূরত্ব…এত টানাপোড়ন কখনোই তৈরী হতো না আমাদের মাঝে। আমি তো সবকিছুর পরেও মেনে নিয়েছিলাম তাকে। তবুও আমার ভালোবাসা, বিশ্বাসকে…এমনকি আমাকেও ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আরেকটা ভুল করে বসলো সে । কি হতো যদি আরেকটু অপেক্ষা করতো, সময় দিত সম্পর্কটাকে। আমাকে!’

‘আপনি বলছেন অভিমান করে তাকে নিজের স্ত্রীর অধিকার ও মর্যাদা থেকে দূরে করে দিয়েছেন। কিন্তু, আপনার কি একবারও মনে হয়নি যে, এতগুলো সময়…এত কষ্টের পর….বারবার মাফ চাইবার পরেও তাকে এভাবে নিজের অধিকার থেকে দূরে রাখা….এটা নিছকই আপনার অন্যায় জেদ?’ অনেকটা রাগমিশেল গলায় উচ্চস্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় রাফিদ।

রাফিদের এমন প্রশ্নে চমকে উঠে নক্ষত্র। বড্ড অসহায় চোখে রাফিদের দিকে তাকায় সে।অতঃপর, নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করে, ‘সত্যিই কি তাই? এটা তার অভিমান নাকি অহেতুক জেদ?’

সহসা জবাব খুঁজে পায় না নক্ষত্র। হতাশ হয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আকাশের দিকে ফিরে তাকায় বিষন্ন চোখে।
সূর্য ডুবি ডুবি করছে। একটু পরেই ঝুপ করে সন্ধ্যা নামবে। পৃথিবীর একাংশ নিমজ্জিত হবে অন্ধকারের পরে। ঠিক যেমন অন্ধকারে ডুবে গেছে ইরিনের প্রতি তার অনুভূতিগুলো। নক্ষত্র অনুভব করে সেগুলোর অস্তিস্ত্ব কিন্তু আলো ফেলে দেখে না। অভিমান যে বড্ড জেদি। পিছু ফিরে দেখতে নারাজ। নক্ষত্রও পিছু ফিরে চায়না….পাছে অন্ধকারেও ভালোবাসা হাতছানি দিয়ে না ডাকে…এই ভয়ে!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here