নক্ষত্র_বন্দনা,পর্ব_২৯ প্রথমাংশ
লেখায়_জারিন
১৬৩.
কোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ইরিন, শায়লা, নাফিজ শেখ। নক্ষত্র এদের অপেক্ষা করতে বলে কোথাও একটা গেছে। শায়লার সাথে কথা বলছিল ইরিন। হঠাৎ পরিচিত একটা কন্ঠস্বরের ডাকে পেছন ফিরে তাকালো সে।
‘হেই…সুইটহার্ট! কি খবর তোমার?’
ইরিন তাকাতেই চোখের সানগ্লাসটা খুলে তার চিরচারিত স্বভাবসুলভ মিষ্টি করে হাসলো। বিপরীতে ওয়াসিফের এমন সম্বোধনে বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেললো ইরিন। ইরিন কেবল ভাবে সুন্দর মত দেখতে মানুষটা নিজের এত কুৎসিত চরিত্র নিয়ে আজও কি করে হাসিমুখে এদের সবার মুখোমুখি হয়! আল্লাহ যাকে এত সুন্দর রূপ দিয়েছে তার ব্যবহার কি করে এতটা নির্লজ্জের মত হয়। এই যে বয়স প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই মানুষটার…কিন্তু কেউ দেখলে বয়সটা সহজে ধরতেই পারবেন না। ২৮/৩০ বছর বয়সী যুবকের মত আজও নিজের বাহ্যিক রূপ ধরে রেখেছে।অথচ, সে ১৪ বছর বয়সী এক সন্তানের বাবা।
ক্রিস্টিনার রেখে যাওয়া সন্তানকে ওয়াসিফ নিজের মত বাবার আশ্রয়হীন বড় করেনি। আপন করে নিজের পরিচয় দিয়েছে ছেলেটাকে। স্নেহ ভালোবাসায় বড় করে তুলছে। তার সাথে লন্ডনেই থাকে। অথচ, এই সন্তান যখন জানবে তার বাবা কত বড় অপরাধী…কি হবে তার মনের অবস্থা? এসব ভাবলে খারাপ লাগে ইরিনের। ঐ পরিবারের সাথে নক্ষত্রদের পরিবারের কারও যোগাযোগ নেই তেমন। নুপুর ও ওয়াসিফ সবটা স্বীকার করার পর থেকে নাফিজ শেখ সম্পর্ক ছিন্ন না করলেও যোগাযোগ রাখেন না। কেবল কোর্টে কেসের হিয়ারিং এ এলে মুখোমুখি হয় এরা।
একটা সময় যে মানুষটাকে দেখলেই মুগ্ধতায় চোখ জুড়িয়ে যেত, আজ তাকে দেখলে রাগে..বিরক্তিতে চোখ কুচকে আসে। জ্বালা করে। মরণ যন্ত্রণা দেয় অন্তরে। এসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইরিন।
শায়লার ভীষণ রাগ হলো ওয়াসিফের এরূপ আচরণে। এই ছেলেটা ও তার মায়ের জন্য তার পরিবারের সবার জীবনই কম বেশি বিষিয়ে গেছে। একসময় যে ওয়াসিফকে ভাতিজার চাইতেও বেশি নিজের ছেলের মতই আদর স্নেহ করতো, মেয়ের জামাই বলে ভেবে রেখেছিল সেই ছেলেটাকে দেখলেই এখন ঘৃণায় বিষিয়ে উঠে সমস্ত মন প্রাণ। আর ইরিনের সাথে এত কিছুর করার পরেও তার এমন উগ্র, অসভ্য আচরণে রাগ ছাড়া আর অন্য কোন অনুভূতি কাজ করে না ওয়াসিফের জন্য শায়লার মনে। ভাগ্যিস নক্ষত্র এখানে উপস্থিত নেই। নয় তো এতক্ষণে খুব বাজে কোন পরিস্থিতি তৈরী হতো ওয়াসিফের এমন অশোভনীয় আচরণের জবাবে।
‘এতগুলো বছর পরেও বিন্দুমাত্র সুধরালে না তুমি তাই না?’ রাগীস্বরে বললেন শায়লা।
‘সুধরানোর কি আছে মামী? আমি কি কোন অপরাধ করেছি? হোক এক্স…তারপরেও তো ইরিন একসময় আমার গার্লফ্রেন্ডই ছিল, তাই না ডার্লিং?’ শেষ কথাটা ইরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো ওয়াসিফ।
‘আপনার সাথে ইরিনের কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিলই না কোন কালে তো প্রেমিকা বা প্রাক্তন প্রেমিকা সে হয় কি করে?’
পেছন থেকে একটা অপরিচিত কন্ঠস্বর বললো কথাটা। ওয়াসিফ অবাক হয়ে পেছন ফিরলে একটা নতুন মুখের মুখোমুখি হলেও ইরিনের কাছে তা খুব পরিচিতই ঠেকলো। ব্যক্তিটি আর কেউ নয় রাফিদ। ইরিন অবাক স্বরে কিছু বলতেই যাচ্ছিল তার আগেই ওয়াসিফ বললো,
‘আচ্ছা! তো আপনাকে কে বলেছে এই কথা?’ রাফিদ যেন কোন কৌতুক বলেছে এমন ভাবে হেসে প্রশ্ন করলো ওয়াসিফ।
‘ইরিন বলেছেন। তার যার সাথে সম্পর্ক ছিল তার নাম আশরাফ মেহতাজ বলে পাওয়া গেছে। আপনার নাম তো ওয়াসিফ রায়হান, রাইট? এই জন্যই তো ইরিনের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলার অভিযোগ করেছেন আপনারা পরে। আমি কি কিছু ভুল বলেছি মি. ওয়াসিফ রায়হান চৌধুরী?
‘না…ঠিক আছে। কিন্তু আপনি..? ওয়াসিফ বিব্রত ভংগিতে প্রশ্ন করলো।
‘রাফিদ মোহসিন। ইরিনের উকিল।’
‘কিন্তু, ইরিনের লয়ার তো আতাউর জামান…’
‘ছিলেন…এখন আমি এই কেস হ্যান্ডেল করছি।’
‘হোয়াট? ‘ প্রবল মানসিক ধাক্কা খেয়েছে সেভাবে চেঁচিয়ে বললো ওয়াসিফ। তার এমন প্রতিক্রিয়ায় মুচকি হাসলো রাফিদ। ওয়াসিফকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ইয়াহ। এ্যানিওয়ে…হেরারিং এর সময় হয়ে যাচ্ছে। ভিতরে যাওয়া যাক..চলুন। ‘
তারপর ইরিন ও শায়লাকে বললো, ‘ভেতরে চলুন ইরিন।আন্টি আসুন।’
ইরিন ভেতরে যাবে কি রাফিদের কথায় ওয়াসিফের চাইতেও বড় ধাক্কা ইরিনের মস্তিষ্কে লেগেছে। স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ওয়াসিফ ও রাফিদের কথোপকথন শুনছিল সে। শায়লা ভেতরে যাওয়ার জন্য ইরিনকে তাড়া দিতেই ইরিন হঠাৎ উত্তেজিত স্বরে রাফিদকে বললো,
‘কিন্তু রাফিদ আপনি কবে.. কিভাবে কি? আমি তো এসব কিছুই..’
‘মি. নক্ষত্র জানেন। আফটারঅল কেস তো মূলত আপনার হয়ে উনিই করেছেন, তাই না? তাই কেস নিয়ে ডিরেক্ট তার সাথেই কথা হয়েছে আমার।’ ইরিনের কথা কেড়ে নিয়ে মুচকি হেসে বললো রাফিদ।
‘কিন্তু পুতুলের বাবাই কই?’ ইরিন প্রশ্ন করে।
‘এই তো একটু আগেই দেখা হয়েছিল আমার সাথে।আপনাদেরকে ভেতরে গিয়ে বসতে বলেছেন। উনি একটু দরকারি কাজে গেছেন। হিয়ারিং শুরুর আগেই চলে আসবেন। ‘ রাফিদ বললো।
‘আচ্ছা…চলুন।’ ইরিন বললো।
ততোক্ষণে ওয়াসিফের উকিল ব্যারিস্টার ইমরান খান এসে উপস্থিত হয়েছে সেখানে। ওয়াসিফ তার সাথে কেস নিয়ে আলোচনা করছিল। তা দেখে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় রাফিদ আস্তে করে ওয়াসিফের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললো, ‘দ্যা গেম ইজ আবাউট টু এন্ড। বি প্রিপেয়ার ফর দ্যা লাইফলং প্রাইজ মি. ক্রিমিনাল। ‘
কথা শেষ করে রাফিদ এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না। ওয়াসিফকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলো কোর্টরুমের উদ্দেশ্যে।
১৬৪.
কোর্টে কেস চলছে। তবে আজ সেটা ভিন্ন আঙ্গিকে। জজসাহেব, ওয়াসিফ, ওয়াসিফের উকিল এবং সেখানে উপস্থিত সকলেই হকচকিয়ে গেছে আজ । ওয়াসিফ মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।কারণ, কাঠগড়ার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াসিফ এবং তার বিপরীতে সম্মুখের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে মারিয়।
ওয়াসিফ আজ এমনিতেও অনেক বিচলিত ছিল হঠাৎ ইরিনের উকিল বদলে গেছে জেনে। আর এখন মারিয়াকে চিনতে পেরে সেও ভয়ে পেয়ে গেছে। ঘামছে সে। এত নিখুঁত পরিকল্পনা সাজানোর পরেও মারিয়ার কথাটা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল একদম। ইরিনও পুলিশকে বলতে ভুলে গিয়েছিল। তাই এতদিন মারিয়ার বিষয়ে কোন কথাই উঠেনি কেস চলাকালীন।
রাফিদকে নিজের জীবন কাহিনী বলতে গিয়ে কথায় কথায় মারিয়ার কথাটা বলেছিল ইরিন। কিন্তু তখনো ইরিনের একবারও মনে হয়নি মারিয়া এই কেসের এতবড় একটা সাক্ষী হতে পারে।তবে ইরিনের মনে না হলেও সেটা বেশ ভালোভাবেই রাফিদের মাথায় ক্যাচ করে যায়। ফলে সে মারিয়াকে খুঁজে বের করে এবং আজ কোর্টে উপস্থিত করে।
জজ সাহেবের সামনে পেশ করা হয়েছে একটি ছবি। আধুনিক যুগে যেটি সেল্ফি নামে পরিচিত। ছবিতে তিনজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। যেখানে সামনে মারিয়া এবং তার পেছনে ইরিনের কোমড় জড়িয়ে ধরে পাশে ওয়াসিফ দাঁড়ানো। ছবিটির নিচে মোবাইল ফাংশন অনুযায়ী তারিখ ছাপা। যা প্রমাণ করে ধর্ষণের পাঁচদিন আগেও ওয়াসিফ হোটেল এক্সটোরিয়াতেই ছিল। মারিয়ার দেশ ছেড়ে যাওয়ার সেদিনের ফ্লাইট ডিটেইল এবং তার উপস্থিত সাক্ষ্য সেদিন ওয়াসিফের হোটেলে উপস্থিত থাকার ব্যাপারটি জোরালোভাবে প্রমাণ করেছে।
এছাড়াও মনিরার জবানবন্দী অনুযায়ী ওয়াসিফই আশরাফ মেহতাজ। মনিরা এও বলেছে যে নক্ষত্র তাকে কোন প্রকার অর্থ প্রদান করেনি বা জোর জবরদস্তি করে বয়ান নেয়নি। কেবল কিছু সময়ের জন্য নিজের অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তারপর, সসম্মানে বাড়ি পৌঁছে দেয়। ভিডিওটির উদ্দেশ্য ছিল কেবল যাতে করে পরবর্তীতে মনিরা কোর্টে সত্যি না বললে প্রমাণসরূপ ভিডিও ক্লিপটা দেখানো যায়।
এছাড়াও ওয়াসিফ’ আশরাফ মেহতাজ’ নামে বেশ কয়েকবার হোটেল এক্সটোরিয়াতে থেকেছে। সেই সূত্রেই মনিরার সাথে তার পরিচয়। তবে ওয়াসিফ নামটা সেবারই মনিরা জানতে পারে। এরপর ইরিনকে ওয়াসিফের রুম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজটাও সেই করে নিজ দায়িত্বে। ইরিনের কেস নিয়ে পুলিশের হোটেলে আসার ব্যাপারটা সামলে নেওয়ার কাজটাও সে করে। তাকে টাকা দিয়ে এসব কাজ করানো হয়েছিল। হোটেলবয়কেও মনিরাই টাকা দিয়েছিল।
এসব ছাড়াও আজ আবারও ঘটনার উদ্দেশ্য হিসেবে তাদের পারিবারিক দ্বন্দের কথা উল্লেখ করে ওয়াসিফ এবং নুপুরের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেন শায়লা এবং নাফিজ শেখ।
এছাড়াও আতাউর জামানের ব্যাংক একাউন্টে আশরাফ মেহতাজ নামের একাউন্ট থেকে পাঁচ লাখ টাকা ট্রান্সফার করা হয় কেসের দ্বিতীয় হিয়ারিং এর কিছুদিন আগে। যার ফলে আতাউর জামান নক্ষত্রের করা মুনিরার বয়ানের ভিডিওটিতে নক্ষত্রের উপস্থিতির বিষয়টি ইচ্ছা করে এড়িয়ে গেছেন। যাতে তা জোরপূর্বক বলানো হয়েছে বলে মনে হয়। এছাড়াও একজন সরকারি উকিল হয়েও আতাউর জামানের অঢেল সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে তার আয় বৃত্তান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলে রাফিদ। সব অভিযোগ ও প্রমাণের দেখে জজ সাহেব ওয়াসিফকে প্রশ্ন করলেন।
‘এসব বিষয়ে নিজের পক্ষে আপনার কিছু বলার আছে, ওয়াসিফ?’
ওয়াসিফ একদম চুপ হয়ে আছে। নিজের ভুলের জন্য এখন ভীষণ রাগ লাগছে তার নিজের উপর। ইমরান খানও বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। পরিস্থিতি বিপদজনক আঁচ করতে পেরে ওয়াসিফের উকিল প্রতিবাদ করে বললেন।
‘মাননীয় বিচারক, আমার মক্কেল এতসব মিথ্যা অভিযোগের সম্মুখিন হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্তবোধ করছেন। তাই নিজের পক্ষে কোন কিছু বলার মত অবস্থায় তিনি নেই। কিন্তু, আমি উনার উকিল হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার বিপক্ষীয় বন্ধু মি. মোহসিন যেসব প্রমাণ পেশ করেছেন সেসব কিছুই সত্যি নয়। আজকাল ছবি এডিট করা কোন ব্যাপারই নয়। তাছাড়া, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আগেও মিথ্যা প্রমাণ পেশ করা হয়েছিল যার মিসেস. ইরিনের স্বামী মি. আদৃত রাওনাফ জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছি আমরা।
মনিরাকে আজও হয় তো ভয়ভীতি দেখিয়ে…
‘অবজেকশন, মাই লর্ড। ‘ রাফিদ মি. খানের কথার বিরোধিতা করলো। তারপর আবার বললো, মনিরাকে কোনপ্রকার ভয়ভীতি দেখানো হয়নি, মাননীয় বিচার প্রতি। না আগেরবার আর না এবার। মনিরা সুস্থ মস্তিষ্কে নিজের জবানবন্দি দিয়েছে যে মিসেস. ইরিনের সাথে যা ঘটেছিল সবটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। ওয়াসিফ মনিরাকে টাকার প্রলভন দিয়ে এসব করিয়েছে।’
‘আচ্ছা, মানলাম আপনার কথাই সত্যি। তাহলে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিন আপনি। মারিয়া নামক যে সাক্ষীকে আপনি আজ কোর্টরুমে হাজির করেছেন, তার কথা কেন বয়ানে বলেননি মিসেস. ইরিন? আর এত বছর যেখানে উনার আগের উকিল কোন প্রমাণ দিতে পারেননি সেখানে আপনি হুট করে এসে এমন একজন সাক্ষীকে কি করে হাজির করলেন? এটা কি খুব বেশিই নাটকীয় পর্যায়ের ব্যাপার মনে হচ্ছেনা মি. মোহসিন?’
‘ধন্যবাদ,আমার বিপক্ষীয় বন্ধুকে এই প্রশ্নের জন্য। অনুমতি দিলে উত্তরটা আমি মাননীয় বিচারপতিকেই দিতে চাই। ‘
‘অনুমতি দেওয়া হলো।’
‘আসলে কি বলুন তো মাননীয় বিচারপতি, একজন আইনের ব্যক্তি যদি নিজ কাজে সততা না দেখায় সত্যি সেখানে কখনোই প্রকাশ্যে আসে না। প্রথমত আমি ব্যারিস্টার আতাউর জামানের বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ এনেছি তা খঁতিয়ে দেখার অনুরোধ করছি। মিসেস ইরিনের যখন বয়ান নেওয়া হয় তখন তিনি মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত ছিলেন যে কেবল পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে যা যতটুকু বলা যায় তাই বলেছিলেন। কিন্তু, মারিয়ার কথা উনি বলতে ভুলে যান। আমি অবশ্যই স্বীকার করবো এটি উনার ভুল। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেই মাননীয় আদালত তা গ্রহণ করবে বলে আশা করি। এরপর মিসেস. ইরিনকে আর কোন জিজ্ঞাসাবাদ না করায় ঘটনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও আর সামনে আসেনি। দূর্নীতিতে চাপা পড়ে গেছিল। কিন্তু, আমি যখন কেসটি নেই তখন নতুন করে নিজের মত তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করি। যার ফলে মারিয়ার কথা প্রকাশ্যে উঠে আসে। এখন মাননীয় আদলত ও বিচারপতির কাছে আমার অনুরোধ সকল তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত আসামী মি. ওয়াসিফকে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।প্রয়োজনে ছবিটিকেও পরীক্ষণের জন্য অনুরোধ করা হলো। ‘
অবজেকশন, মাননীয় বিচারপতি। ‘ মি. খান প্রতিবাদ করে বললেন।
‘অবজেকশন, ওভাররুলড।’ জজ সাহেব বাঁধা দিলেন।
‘ধন্যবাদ।’ রাফিদ কৃতজ্ঞাজ্ঞাপন করে বললো।
সব শুনে এবং যাবতীয় অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জজ সাহেব ওয়াসিফকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠনোর আদেশ দেন। তিনদিন পর আবার কেসের হিয়ারিং এর তারিখ দেওয়া হয়। ছবিটিকেও এডিট করা কিনা সেই সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, নুপুরের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ভিত্তিতে কোন প্রমাণ না থাকায় এ অভিযোগ নাকচ করা হয়।
১৬৫.
‘কেমন আছিস দোস্ত?’ শুকনো হেসে ইরিনকে জিজ্ঞেস করলো মারিয়া।
ইরিন এখনো এই চমকের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি যেন। মারিয়ার প্রশ্নে কিছুসময় তার মুখপানে তাকিয়ে রইলো ইরিন। আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরে সশব্দে কেঁদে ফেললো সে।
মারিয়া হকচকিয়ে গেল আচমকা ইরিনের এমন আচরণে। কিছুসময় পর নিজেকে সামলে নিয়ে সেও জড়িয়ে ধরলো ইরিনকে। পিঠে হাত রেখে বললো, ‘এই মেয়ে কাঁদিস কেন? আমি কি কান্না করার মত কোন প্রশ্ন করেছি তোকে?’
‘আমি সত্যিই আশা করিনি রে দোস্ত..এতগুলা বছর পরে এইভাবে তোকে পাবো। থ্যাংক ইউ সো মাচ।’ কাঁদতে কাঁদতে বললো ইরিন।
‘আমিই বা কোথায় ভাবছিলাম যে এভাবে দেখা হবে তোর সাথে? তোর দেওয়া নাম্বারে অনেকবার কল দিয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। সিম বন্ধ বলতো সবসময়। তোর ফেইসবুক আইডিতেও পাই নাই তোকে। কি করে খুঁজতাম বল?’ মারিয়া ইরিনকে শান্ত করতে করতে বললো।
‘সিম ওয়াসিফ ভেঙে ফেলছিল,আইডি ডিলিট করে দিয়েছিলাম ওই ঘটনার পরে। কিন্তু, বিশ্বাস কর এতগুলা বছরে আমার ভুলেও একটাবার মনে হয়নি তোর কথা। আমি খুব স্বার্থপর রে দোস্ত। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিস।’
‘মিথ্যা খুব ভয়ংকর রে দোস্ত। নিজের মানুষকে ভরসা না করতে পারা আরও ভয়ংকর। তুই যদি নক্ষত্র ভাইয়াকে একবার ভরসা করে বলতে পারতি তাহলে হয় তো এতসব হতোই না হয় তো। তবুও, ভাগ্যের ফের বোঝা দায়।’
‘তবে, সত্যি বলতে দোষ ওর একার ছিল না। আমি স্বামী হিসেবে ওকে জানলেও বন্ধুর মত কখনো ওর মনের খবর জানতে চাইনি। তাই পুতুলের আম্মুও আমাকে নিজের মনের কথাগুলো শেয়ার করতে পারেনি ঠিক মত। ‘ ইরিনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো নক্ষত্র।
‘তাহলে আপনি মানছেন কমতি আপনার তরফ থেকেও ছিল, মি. নক্ষত্র?’ পেছনে দাঁড়িয়ে বললো রাফিদ।
নক্ষত্র হেসে ফেললো তার কথায়। সম্মতিসূচক মাথা ঝাঁকিয়ে আলতো হেসে বললো, ‘ইয়াহ। আসলে কি বলুন তো মি. রাফিদ তালি কখনো এক হাতে বাজে না। ভুল আমারও ছিল কিছু।যেটা বুঝতে অনেকগুলো সময় লেগে গেছে। তাই পুতুলের আম্মুকে আমি একা সব দোষের ভাগিদার করতে পারিনা।’
‘আচ্ছা, এসব ছাড়ুন। মি. রাফিদ এসব কি করে করলেন আপনি? মারিয়াকেই বা কোথায় পেলেন?’ ইরিন তাদের কথার মাঝে বাঁধা দিয়ে প্রশ্ন করলো।
‘সেসব পরে বলি…তার আগে কিছু লিগ্যাল কাজ বাকি আছে সেগুলো কমপ্লিট করবেন চলুন।তারপর, কোথাও বসে ধীরে সুস্থে সব বলবো, ওকে?’ রাফিদ বললো।
‘আচ্ছা।’ আলতো হেসে সম্মতি জানালো ইরিন।
১৬৬.
একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে এসেছে ইরিন, নক্ষত্র, রাফিদ এবং মারিয়া। কোর্টের কাজগুলো শেষ করতে করতেই দুপুর হয়ে গেছে তাদের।তাই দুপুরের খাবার খেতে খেতেই বাকি কথা বলবে বলে রাফিদ। সবার সম্মতিতেই তারা এখানে একত্রিত হয়েছে। ইরিনের যেন তর সইছে না আর। সবটা না জানা পর্যন্ত শান্তি হচ্ছে না ওর। তাই লাঞ্চ অর্ডার করার পর সে ঝটপট প্রশ্ন করলো, ‘আচ্ছা…বলুন না রাফিদ, কোথায় পেলেন আপনি মারিয়াকে? আপনিই বা হঠাৎ কিভাবে এলেন এই কেসে? আর এতসব প্রমাণই বা কিভাবে যোগাড় করলেন আপনি?’
‘উমম…..আস্তে ইরিন। বাচ্চাদের মত একসাথে এত প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিবো কিভাবে?’
‘বয়স হলে কি হবে…বাচ্চা তো বাচ্চার মতই আচরণ করবে। সো ডোন্ট গেট সো স্ট্রেসড মি. রাফিদ।’ নক্ষত্র বললো ইরিনকে খোঁচা মেরে।
‘এই পুতুলের বাবাই…আপনি কিসব বলতেছেন এসব! আমি কেন বাচ্চা হবো? আমি যে আপনার বাচ্চার মা সেটা কি ভুলে গেছেন আপনি?’ ঈষৎ রাগে ফুঁসে উঠে বললো ইরিন।
‘মেয়ের ঘুমের যা ছিরি….বাচ্চার মা কে সেটা সে ভুলতে দিলে তো!’ ভেংচি কেটে বললো নক্ষত্র।
‘পুতুলের বাবাই, আপনি কিন্তু…
রাফিদ আর মারিয়া এতক্ষণ হাসছিল স্বামী স্ত্রীর এমন খুনসুটিতে। এবার ইরিনের প্রতিবাদী রূপ দেখে রাফিদ পরিস্থিতি সামলে নিতে বললো, ‘আরে…আরে…স্টপ। নইলে আমি আমার ভাগের গল্পটুকু বলি কি করে!’
রাফিদের কথায় চুপ হয়ে গেল ইরিন। গম্ভীর গলায় বললো, ‘হুম..বলুন।’
ইরিনের সম্মতি পেয়ে মুচকি হাসলো রাফিদ। তারপর ইরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ইরিন….আমি যখন জানতে পারি যে হোটেল এক্সটোরিয়ার কেসের ভিকটিম আপনি অথচ মারিয়ার মত জলজ্যান্ত চাক্ষুষ প্রমাণ থাকতে পুলিশ এখনো এই কেস নিয়ে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি তখনই খটকা লাগে আমার। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই এ ব্যাপারে আমার তরফ থেকে কোন সাহায্য করা যায় কিনা। তাই, প্রথমেই যাই আতাউর স্যারের কাছে। আপনার বন্ধু বলে পরিচয় দেওয়ায় আর যেহেতু একই পেশায় আছি আমরা…আগে থেকেই চেনা জানা থাকায় উনি আমাকে কেসের কাগজ পত্র বের করে দেন। আমি সেসব ঘেঁটে পুলিশকে দেওয়া ইরিনের বয়ানে কোথাও মারিয়ার কথা উল্লেখ পাই না। তাই একখানা নকল চিঠি নিয়ে আমি হাজির হই মি. নক্ষত্রের অফিসে। উনাকে পরিচয় দেই আপনার নতুন উকিল হিসেবে।
‘নকল চিঠি মানে?’ নক্ষত্র ঝটকা লাগার মত উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন করে। রাফিদ চোরা হেসে বলে, ‘আতাউর স্যার আমাকে এই কেস হ্যান্ডওভার করেননি। আপনি সন্দেহ করতেন…কথা বাড়তো তাই সহজ রাস্তা হিসেবে নকল সাইন করা লেটারটা আপনাকে দেখিয়েছিলাম। ‘
‘আইনের লোক হয়ে চিটিং করেছেন আপনি!’ গম্ভীর গলায় বললো নক্ষত্র।
‘কি করবো জনাব…সোজা আঙুলে ঘি উঠে না বলেই তো আঙুল বাঁকাতে হয়। এতে আঙুল কিন্তু সম্পূর্ণ নির্দোষ! ‘ রসিকতার স্বরে হেসে বললো রাফিদ।
‘আরে আপনি ছাড়ুন তো এসব। বাকিটুকু বলুন। ‘ ইরিন তাড়া দিয়ে বললো।
‘আচ্ছা। তো যা বলছিলাম…মি. নক্ষত্রের থেকে আমি কেস ডিটেইলস যতদূর জানা সম্ভব জানার চেষ্টা করি। তখন বুঝতে পারি, মারিয়ার কথা মি. নক্ষত্রও জানেন না। তারপর যখন মুনিরার ভিডিওতে দেওয়া জবানবন্দীর শুনি এবং আতাউর স্যারের সব জেনে বুঝেও ভুল করার ব্যাপারটা ধরতে পারি তখনই মূল খটকা লাগে। আমার বুঝতে বাকি থাকে না কেসটা ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এতে করে দুটো বিষয়েই তার লাভ ছিল।
সত্যি বলতে, দূর্নীতি তো ভাই সব জায়গাতেই কম বেশি আছে। এসব কাজে তো আছেই। তাই আমার মনে সন্দেহ জাগে যে আতাউর স্যার নির্ঘাৎ কোন ঘাপলা করেছেন। লোক লাগিয়ে খবর বেরোয় আশরাফ মেহতাজের সাথে আতউর স্যারের নিয়মিত যোগাযোগ হয়।উনার ব্যাংকে এক ধাক্কায় পাঁচ লাখ টাকা ট্রান্সফার হয়।এছাড়াও মাসে মাসে মি. নক্ষত্রও তাকে মোটা অংকের টাকা দেন কেসের জন্য। আর একজন সরকারি উকিল হয়েও উনার যা সম্পত্তি সেটা অনেক বেশি। সব মিলিয়ে আমার কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে আতাউর স্যার দূর্নীতি করেছেন।
আমি মি. নক্ষত্রের থেকে সাইন করা একটা নোটিশ নিয়ে যাই আতাউর স্যারের কাছে। যেটা ছিল উনাকে এই কেস থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নোটিশ। উনি প্রথমে রাগারাগি করেন কিন্তু পরে আমার উনার দূর্নীতির কথা প্রকাশ করার হুমকিতে চুপ করে যান।
এরপর আমি যাই মারিয়ার খোঁজে। আপনাদের কলেজ থেকে মারিয়ার এড্রেস বের করি। ভাগ্যিস ওটা তাদের নিজস্ব বাসা। ঠিকানা বদলায়নি তাই। সেখানে গিয়ে মারিয়ার মাকে পাই। সব বুঝিয়ে বলার পর আন্টি আপনাকে চিনতে পারেন। কিন্তু, বাঙালিয়ানার ধারা বজায় রেখে উনি মারিয়াকে এ কেসে জড়াতে দিতে চান না। অনেক কথা খরচ করতে হয়েছে আমাকে। অনেক বুঝিয়ে উনাকে রাজি করাই। উনি মারিয়ার ফোন নাম্বার দেন। এরপর আমি মারিয়ার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে সোজা সিংগাপুরে গিয়ে পৌঁছাই। ‘
এটুকু বলে রাফিদ পানির গ্লাসটা হাতে তুলে নিল।এতক্ষণ ধরে কথা বলে গলা শুকিয়ে এসেছে তার। ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানিটুকু শেষ করলো সে। তার অবস্থা দেখে মারিয়া বললো, ‘এর বাকিটুকু আমি বলি না হয়?’
রাফিদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। মারিয়া বলতে শুরু করলো।
‘সিংগাপুরে আমার বাসায় আসেন উনি। সেখানে বসেই উনি তোর ব্যাপারটা খুলে বলেন। সত্যি বলতে আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে তুই সেদিন মিথ্যা বলেছিলি।আর ঐ লোকটা যেভাবে তোকে টাচ করছিল, আমার সাথে পরিচিত হয়েছিল আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি তোরা নাটক করছিলি। সেদিন ফিরে আসার কয়েকদিন পর আমি তোর মোবাইল নাম্বারে কল দেই। পাই না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও আনরিচেবল। আর এর মধ্যে দেশেও আসা হয়নি। তাই তোর খোঁজ না পেয়ে ভুলেই বসেছিলাম তোর কথা। তারপরে মি. রাফিদের থেকে তোর খোঁজ পাওয়া।কিন্তু, এত সব কিছুর মাঝে তুই আমার কথা উল্লেখ করিসনি শুনে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। তবে কথায় আছে না…রাখে আল্লাহ, মারে কে! ঠিক তেমনি আমার ল্যাপটপের পুরোনো ছবির ফোল্ডারে আমি আমাদের সেদিনের সেল্ফিটা সেভ করে রেখেছিলাম।ওয়াসিফের কথা শুনে আমি উনাকে ছবিটা দেখাই আর দুজনেই কনফার্ম হই তোর সাথে থাকা সেদিনের লোকটা ওয়াসিফই ছিল। এরপর, উনি আমাকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমার হাজবেন্ড মুবিনেরও আপত্তি ছিল না, তাই আজ এখানে আসা। গতকাল এসেছি দেশে। তারপর আজ সোজা কোর্টে এসে হাজির। ‘ বেশ উৎফুল্ল স্বরে বললো মারিয়া।
‘এর মাঝে আমি আবার ইতালি গেছিলাম। ওয়াসিফ যে হোটেলে থাকার কথা উল্লেখ করেছিল সেখানে। ওয়াসিফ সত্যিই পাক্কা খিলাড়ি। ১০ দিনের জন্য হোটেলরুম ফুল পেমেন্ট এডভাস দিয়ে বুক করেছিল। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজেও ওয়াসিফের হোটেলে চেক ইন করা দেখা যায়। সেখানে তার পিএ লারাও ছিল। ওয়াসিফ হোটেল থেকে কিভাবে বেরিয়েছে বা আবার ঢুকেছে জানি না। সিসিটিভি ফুটেজে ওকে আর দেখা যায়নি ১০ দিন। তবে ওই দশদিন লারা ছিল ওখানে এটা কনফার্ম। সমস্ত খাবার আর সার্ভিসিং এর অর্ডার সেই দিত। তবে, হোটেল থেকে বেরিয়েও ছিল ওয়াসিফের সাথে একেবারে চেক আউট করে। সন্দেহ করার কোন স্কোপই সে রাখেনি!
তবে একটা কথা কি জানেন তো ইরিন…চোর যতই চালাক হোক পালানোর সময় কোন না কোনভাবে তার একটা চিহ্ন রেখেই যায়। ‘ এটা প্রকৃতির নিয়ম বলতে পারেন। হ্যাঁ কখনো সেটা সহজেই চোখে পড়ে আবার কখনো চোখের সামনে থাকলেও কেউ বুঝতে পারেনা বা সময় লাগে। ওয়াসিফ এত নিখুত প্ল্যান করলেও মারিয়ার কথাটা সেও ভুলে যায়। আর আপনিও সেই সময় ওমন একটা পরিস্থিতিতে বয়ান দিতে গিয়ে কেবল ওয়াসিফের সাথে আপনার সম্পর্ক ও চলে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, আর ধর্ষণের অংশটুকুর ডিটেইলস। বাকি এর বাইরে হোটেলে কবে কি হয়েছিল সেটা উঠে আসনি আপনার বয়ানে। তাই এতদিন এই কেস এভাবে ঝুলে আছে। অবশ্য টাকা খাওয়ার পর সাক্ষী হিসেবে মারিয়ার কথা বলা হলেও সেটা কতটা কাজে আসতো আমি জানি না।তবে এবার আশা করি কেস ক্লোজ হবে ইন শা আল্লাহ। মাত্র তিনদিনের অপেক্ষা।’
ইরিনের বিস্ময় যেন আকাশচুম্বী। কাটছেই না যেন। রাফিদের কথার শেষে এক সময় মাথায় হাত রেখে আর্তনাদ করে বললো, ‘হায়…আল্লাহ! আমি এতবড় ভুল কিভাবে করেছি! এতগুলা বছরেও আমার মারিয়ার সাথে দেখা হওয়ার কথাটা মনে আসে নাই। ও…আল্লাহ!!’
‘ভুল করায় তো তুমি অল রাউন্ড, পিএইচডিধারীনি। সারা জীবন এই করেই পার করলা।’ চাপা স্বরে ইরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো নক্ষত্র।
ইরিন এবার আর্তনাদ ছেড়ে ফুঁসে উঠে বললো, ‘হ্যাঁ, এখন তো সব আমার দোষ। কে বলছিল আপনার আমাকে বিয়ে করতে? আপনি বিয়ে করার পর থেকেই আমার এই ভুল রাজ্যে অভিষেক ঘটছে। একচুয়্যালি আপনাকে বিয়ে করাটাই আমার ভুলের শুরু। জীবনটা পুরা ত্যাজপাত্তা (তেজপাতা) করে ছেড়েছি আপ… রাগে না বুঝেই যা মনে আসছিল বলছিল ইরিন। তার কথার সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে নক্ষত্র মাঝখান থেকে বললো,
‘বিয়ে করাটা ভুল ছিল বলেই তো ডিভোর্স চাইছো তুমি।’ চাপা রাগের স্বরে বললো নক্ষত্র।
পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পেরে রাফিদ বললো , এখন কথাটথা সব বাদ। আ’ম সো হ্যাংরি।নিন…খাওয়া শুরু করুন এবার। যা হওয়ার তিনদিন পরে কেসের রায় বের হলেই দেখা যাবে। ‘
মারিয়াও সায় দিল রাফিদের কথায়। কথা ঘোরাতে জুড়ে দিল ইরিনের সাথে তার বন্ধুত্বের গল্প। নক্ষত্রকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘জানেন ভাইয়া….কলেজে আমরা বন্ধুরা ইরিনকে ‘ ইরিধান ‘বলে ডাকতাম। ইরিন রেগে বোম হতো এই নামে ডাকলে।.তারপর…
ইরিন বাঁধা দিয়ে বললো, এই তুই থামবি? কি সব বলতেছিস..’
মারিয়া পাত্তা দিলো না ইরিনের বারণের। সে নিজের মত বলতে শুরু করলো। একের পর এক হাসি মজার গল্পে মেতে উঠলো সে। সাথে বাকিরাও। ইরিন কখনো লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে তো কখনো শোধ বোধ করতে মারিয়ার কাণ্ডকারখানার গল্প শুনিয়ে দিতে লাগলো। সব মিলিয়ে গম্ভীর পরিবেশটা হালকা হয়ে এলো তাদের।
এখন শুধু অপেক্ষার প্রহর শেষ হবার অপেক্ষা। ওয়াসিফের পরিণত হয় তা দেখার অপেক্ষা।
চলবে…