নতুন জীবন (১ম পর্ব)

0
5168

আজ ধর্ষিতার খাতায় নাম লিখানোর এক বছর পূর্ণ হলো।
আজকের দিনে রাসেল নামক শিক্ষকের মুখোস পরা এক এক নর পশু আদিবাকে ধর্ষণ করে চুপচাপ পালিয়ে যায়।

গত বছর এই দিনে আদিবা সকাল বেলা নাস্তা বানিয়ে,
বরকে নাস্তা খাইয়ে অফিসে বিদায় দিয়ে প্রাইভেট পড়তে স্যারের ভাড়া বাসায় চলে যায়,যেখানে স্যার প্রাইভেট পড়ায়।কিন্তু রুমে গিয়ে দেখে কেউ আসেনি।আদিবা জানতোনা যে,আজ স্যার সবাইকে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।আদিবা যখনি বাইরে আসতে যাবে ঠিক তখনি রাসেল আদিবার মুখ চেপে ধরে নিয়ে খাটে শুইয়ে ফেলে।
অনেক ধস্তাধস্তির পরও আদিবা রাসেলের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি।শেষমেস ধর্ষিত হয় আদিবা।রাসেল আদিবাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।অনেক দিন যাবত আদিবার দিকে রাসেলের কুনজর ছিলো।
মেয়েটা দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী।সুযোগ বুঝে সুন্দরের মাঝে কলংকের দাগ লাগিয়ে দিলো এই নর পশু।

আদিবা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে খাটের এক কোনে।জ্ঞান ফিরতেই আদিবা ওর নিস্তেজ শরীর নিয়ে এক পা দু পা করে চলে গেলো ওর স্বামীর ঘরে।গিয়ে বাথরুমে ঢুকে পানি ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।কিন্তু কিছুতেই দাগ গুলো মিশছেনা,না ওর গায়ের দাগ না মনের দাগ।আয়নায় মুখ টা দেখতেই নিজেকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে।
আদিবার বর অফিস থেকে ফিরতেই আদিবা আদিব এর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।খুলে বল্লো সব কিছু।চিৎকার করে কাঁদছে আদিবা।আর বুকের সাথে শক্ত করে ধরে আছে আদিবকে।
কিন্তু কথা গুলো শেষ হবার সাথে সাথে আদিবা খেয়াল করলো ওর শরীর থেকে আদিবের হাত দুটো সরে যাচ্ছে।যেই হাত দুটো আদিবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো।

আদিব আদিবাকে ওর বুক থেকে সরিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
আদিবা খাবার রেডি করলো আদিবের জন্য।আদিব খিদে নেই বলে চলে গেলো ঘুমোতে।রাতে আদিবা যখন আদিবের বুকে ঠাই নিয়ে কাঁদার জন্য আদিবের কাছে আগালো।আদিব আদিবাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বল্লো।সরো ঘুমাতে দাও।আদিবার আর বুঝতে বাকি রইলোনা।আদিব ওকে আর মেনে নিতে পারছেনা।আদিবা কেঁদে বালিশ ভেজাচ্ছে।আর আদিব বলে উঠলো,কাঁদতে হলে অন্য রুমে গিয়ে কাঁদো।এখানে ঘেনঘেন করোনা।সকালে অফিস আছে।আমি ঘুমাবো।এই বলে আদিব ঘুমিয়ে গেলো।আর আদিবা বালিশে মুখ গুঁজে আস্তে আস্তে কাঁদতে থাকলো,যাতে কোন রুপ সাউন্ড আদিবকে ডিস্টার্ব না করে।

সকালে আদিব নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলো।আদিবাও না খেয়ে চোখের জল ঝড়াচ্ছে।
আয়নায় সামনে গিয়ে নিজেই নিজেকে বলছে।

-আমার নিজেরই তো তোকে সহ্য হয়না।
ঘৃণা হয় তোকে আমার।
আর আদিব তোকে কি করে ভালবাসবে?
তুই ঘৃণারই যোগ্য।

গ্লাস ছুড়ে আদিবা আয়না ভেঙে ফেলে।
হঠাৎ করেই ওর কানে আসে কলিং বেলের আওয়াজ।
দৌড়ে দরজার কাছে যায় আদিবা,
আদিব বুঝি আমার কান্না থামিয়ে আমাকে নাস্তা খাইয়ে দিতে এসেছে।এই ভেবে চোখে জল আর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি নিয়ে দরজা খুলে দেয় আদিবা।
দরজা খুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
আদিবা।দেখে দরজার অপর প্রান্তে আদিবার মা আর বাবা।আদিবা ঝাপিয়ে পড়ে দুজনের বুকে।কাঁদছে আদিবা।
ওর বাবা মা ও কেঁদেইই চলেছে।
কিছু ক্ষণ পর চোখের জল মুছে আদিবার মা বলে,

-মারে,আদিব আমাদের একটু আগে ফোন করে সব বলেছে।তুই ধৈর্য্য ধর।সব ঠিক হয়ে যাবে।

আদিবা মনে মনে ভাবছে,আদিব আমাকে কত্ত ভালবাসে।আমার কষ্টের কথা ভেবে মা বাবাকে আমার কাছে আসতে বলেছে।
আমি আসলেই সেদিন মা বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে কোন ভুল করিনি।
আচ্ছা ওর জায়গায় যদি রঙ্গন থাকতো?ও কি আমায় মেনে নিতো?নিতোইতো।হ্যাঁ নিতোই।

রঙ্গন কে?রঙ্গন হচ্ছে আদিবার ভালবাসার মানুষ।যাকে নিয়ে আদিবা হাজারো স্বপ্ন দেখেছিলো।কিন্তু বাবা মায়ের কথা রাখতে স্বপ্ন গুলোকে সে নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করে।এরপর বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলে আদিবের সাথে আদিবার বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের দু বছরের মাথায় এমন অঘটন ঘটে আদিবার সাথে।

আদিবার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে ওর মা ওকে বলে,
-যা মা রেডি হয়ে নে।আমরা তোকে নিয়ে যেতে এসেছি।
-নিয়ে যেতে এসেছো মানে?
-হ্যাঁ রে মা আদিব তোকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে বলেছে।

এই বলে আদিবের মা আঁচলে মুখ চেপে কাঁদতে থাকলো।
আদিবা আদিব কে ফোন দিলো।

-তুমি আমার মন ভালোর জন্য আমাকে আমাদের বাসায় পাঠাচ্ছো না?তুমি কখন আসবে?অফিস শেষ করে তাহলে আমরা এক সাথেই যাবোনে।মা বাবাকে রেখে দেই এখন তবে,কেমন?
-না।তুমি উনাদের সাথে চলে যাও।আর আমি তোমাদের বাসায় আসবোনা।তোমার শাড়ী গহনা যা কিছু আছে সব প্যাক করে নিয়ে যাও।
-আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা আদিব।কি বলছো তুমি বুঝতেই পারছিনা কিছু।
-না বোঝার মত কিছু বলিনি আমি।তুমি তোমার বাবা মায়ের সাথে চলে যাও।এ বাসায় আর এসোনা।আমি তোমায় কোন ভাবেই আর এক্সেপ্ট করতে পারবোনা।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও।

এই বলে আদিব মোবাইল অফ করে রেখে দেয়।
আদিবা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা আদিব যে এমন কিছু বলবে।

আদিবার বাবা মা আদিবকে অনেক রিকুয়েস্ট করেছে।কিন্তু আদিবের একই কথা,আমার পক্ষে ওকে এক্সেপ্ট করে নেয়া পসিবল না।দয়া করে আপনাদের মেয়েকে আপনারা নিয়ে যান।

আদিবার বাবা মা আদিবাকে তাদের সাথে বাসায় নিয়ে যায়।আদিবা সুইসাইড করতে গিয়েও করতে পারেনি।ওড়নাটা ফ্যানের সাথে বাঁধা মাত্রই ওর বাবা দেখে ফেলে।আর সাথে সাথে স্ট্রোক করে।
তাই আর নিজেকে শেষ করতে পারেনি আদিবা।কারণ ওর কিছু হলে ওর বাবা’ও মরে যেতে পারে।এই ভেবে।

আদিব আদিবাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়।ডিভোর্সের কিছু দিন পর আদিব বিয়েও করে নেয়।
এদিকে আমাদের সমাজে একটা ধর্ষিতা এবং ডিভোর্সি মেয়ের কেমন দাম থাকতে পারে তা আর কারো অজানা নয়।
প্রতিবেশীদের কটু কথায়,নানান অপবাদে কান্না করা ছাড়া আদিবার আর কিছুই করার ছিলোনা।শুধু মাত্র মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছে মেয়েটা।
আদৌ কি একে বেঁচে থাকা বলে?
জানা নেই।

আজ এক বছর পূর্ণ হয়েছে আদিবা ধর্ষণের।
ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে আদিবার।
এই আজকের দিন টার জন্য ওর জীবনের আজ এমন দূর্গতি।বিকেল বেলা অতীত ভাবতে ভাবতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে আদিবা।
হঠাৎ করেই স্বপ্নের মাঝে একটা মুখ ওর চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠে।
উঁহু,এ তো আদিব নয়।তবে কে?

নতুন জীবন (১ম পর্ব)
#শ্রুতি_হাসান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here