নবযাত্রা পর্ব ০১

0
1070

নবযাত্রা
পর্ব ০১
~আরিফুর রহমান মিনহাজ


শহরতলীর এই বৃহৎ বাজারটা হাটবার ছাড়াও থাকে বেশ রমরমা। সপ্তাহে দুই হাটবারে তো প্রায় ঠেলাঠেলি লেগে যায় শহর আর গঞ্জের হাটুরেদের আনাগোনায়। বাজারের পৃথক পৃথক অংশ জুড়ে সবজি-তরকারি,মাছ মাংশের পসরা আর নির্দিষ্ট একটি ছাড়া ছাড়া জায়গা মাছ কাটুরেদের দখলে। গন্ডারের শিংএর মতোন বাঁকানো দা আর বটি নিয়ে ওরা মাছ কাটে নিরবিচ্ছিন্নভাবে। কাটতে থাকে অদ্ভুত একরকম নিমগ্ন দ্রুততার সাথে। তেঁতুল কাঠের পাটাতন আর চাপাতির অবিরাম ঘাত-প্রতিঘাতে ওদের কারো কারো কপাল বেয়ে ঘাম ঝরে। সে ঘাম ফস করে শার্টের হাতায় মুছে নিয়ে আবারো নিমগ্ন হয় কর্তনযজ্ঞে। কাটাকাটি শেষে পাশের বালতিতে ঝপ করে একবার হাত ডুবিয়ে কর্তিত মাছ-মাংশ পলিতে ভরে বাড়িয়ে দেয় হাটুরের দিকে। হাটুরেরা সাবধানে সেটি হস্তগত করে ব্যাগে ভরেন। কিছু কিছু খুঁতখুঁতে মানুষকে দাম নিয়ে নিষ্ফল হম্বিতম্বি করতে দেখা যায়। যারা দাম জানে তারা নীরবে মিটিয়ে কেটে পড়ে। আর যারা কালেভদ্রে বউয়ের বাঁশডলা খেয়ে মাছ-কাটুরেদের দরবারে ধর্ণা দেয় তারা তারা আঁতকে উঠে বলে,
– এ্যাঁ? একটা মাছ কাটার দাম তিরিশ টেকা? টেকা কি ভূতের পাছা দিয়ে বের হয় হারামজাদা?
বাস,লেগে যায় তর্কাতর্কি। মাছ-কাটুরে বলে,
– মাছ কিনছেন তিন কেজিঅলা। সবাই জানে কেজিপ্রতি দশ টাকা কইরা মাছ কাটন। হুদাই ঝামেলা কইরেন না। দিলে তিরিশ টাকাই দেয়,না দিলে লাগবোনা। মাগনা কইরা দিলাম,যান।
– মাগনা দিবি মানে? আমি কি ফকিন্নি নাকি? এই ল। বিশ টেকাই রাখ।
কাটুরে অপারগ। চোখমুখ বেজার করে কয়,
– না পারমুনা। ওই মিয়া আরো দশ টেকা দিয়া যান। আষ্টশ টাকা দিয়া মাছ কিইন্না তিরিশ টেকা কাটন খরচ দিবার না পারলে বাজারে মাছ কাটতি কয় কে? ঘরে গিয়া বউ দিয়া মাছ কাটান।
কেউ ফিরে এসে রেগেমেগে দশ টাকা ছুঁড়ে দিয়ে যায়,আবার কেউবা সোজা হেঁটে চলে যায়। এ নিয়ে সেদিন একটা হৈচৈ লাগিয়ে দিয়েছিল রাকিব। হৈচৈ থেকে ধস্তাধস্তিতে পরিণত হবার আগেই কোথা থেকে পুলিশ এসে হাজির৷ ধরপাকড় করে নিয়ে গেল রাকিব সহ আরো কয়েকজন মাছ-কাটুরেদের। পরে অবশ্য বিষয়টার একটা সুরাহা সিটি কর্পোরেশন করেছিল। মাছ কাটার নির্দিষ্ট দামের একটা ছোট ঝুল-ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছিল। রাকিবও ছাড়া পেয়েছে দুইদিনের মাথায়। দু’দিন চৌদ্দশিকের ভেতর থেকে কর্মস্থলে ফিরে দারুণ একটা উত্তেজনা অনুভব করতে থাকে সে। অন্তর্দৃষ্টিতে সে দেখতে পায় পুরো বাজারের মাছ-কাটুরে সহচররা তাকে সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেছে। কদাচিত মধ্যদুপুরের তপ্ত অবসরে ছেলেপুলেরা চা-বিস্কিট ‘অফার’ করে। ভালোই লাগে তার। রক্তে রক্তে একটা নেতৃত্বের অতৃপ্ত অমেয় স্বাদ অনুভব করে যেন! বলাবাহুল্য,এই মাছ-কাটুরেরা সকলেই তরুণ। কিশোরও আছে জনাকয়েক। শহরে ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা ঘিঞ্জি বস্তিগুলোই এদের আবাসস্থল। কাজের সন্ধানে চট্টগ্রাম শহরে এসে একাজ-ওকাজ করার পর এই মাছ কাটার কাজটাকেই তাদের আরামদায়ক ও টাকা উপার্জনের দারুণ মাধ্যম বলে মনে হয়েছে। বছর-পাঁচেক আগে রাকিবও এদের মতোই কাজের সন্ধানে শহরময় ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে এখানে এসে থিতু হয়েছে৷ ওর আদিনিবাস রাজশাহী জেলার ভারত-সীমান্তবর্তী জনপদ পদ্মাতটস্থ চর-খিদিরপুর গ্রামে। দীর্ঘদিন যাবৎ সর্বনাশা পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে অবশেষে সর্বস্ব হারিয়ে প্রথমে ঢাকা এরপর চট্টগ্রাম শহরে পাড়ি জমায় স্বপরিবারে। মা আর একপাল ছোট ভাইবোন নিয়ে ঠাই নেয় চট্টলার শহরতলীর একটি বস্তিতে। ওর বয়স তখন সবে আঠারো। ঠোঁটের ওপর জোড়া গোঁফের রোঁয়াটে ভাব তখনো স্পষ্ট। সারা গালে দাড়ি তখনো গজায়নি। কণ্ঠস্বরটা ভেঙে পুরুষালি হয়ে উঠেছে মাত্র। পুরো পরিবারের দায়িত্ব তার স্কন্ধে। প্রথমে বছরখানেক রাজমিস্ত্রীর জোয়ালি দিয়েছিল, তাতে ওই একপাল ভাইবোনের ভরণপোষণ সম্ভব হচ্ছিল না দেখে তাকে ভিন্ন ধান্দায় নামতে হলো। ছোট একটি বাজারে প্রবীন এক মাছ কাটুরের কাছে মাসকতক থেকে আয়ত্ত করে নেয় চটপট মাছ কাটার বিভিন্ন কলাকৌশল। পরে নিজেই দা-পাটাতন কিনে নিয়ে উঠে আসে বড় বাজারে। কাজটা অবিশ্যি এতটা সহজেই হয়ে যায়নি।বাজারে একটি স্থান পেতে তাকে অনেকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কাকুতিমিনতি,অনুরোধ-উপরোধ করতে হয়েছে। তবে শেষমেশ জায়গাটা সে হাসিল করেই সেরেছে। ছোট বাজারে বসে একটা মাছ কাটবে আর একটা বিড়ি ফুঁকবে এমন অভিপ্রায় তার ছিল না। যাহোক, সে থেকেই তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। কাজটা নেহাত মন্দ নয়। আয় হয় বেশ৷ শহরের বউ-ঝিরা বেজায় কুঁড়ে কি-না! এক কেজি তেলাপিয়া মাছ কাটার অবসরও তাদের হয় না। রাকিব মাঝেমধ্যে ভাবে,অদূর-ভবিষ্যতে বউঝিরা রান্নাও করতে চাইবে না। বাজারের একটা অংশে রাঁধুনের দোকান বসবে। সাইবোর্ডে লেখা থাকবে,
‘এখানে অভিজ্ঞতা বাবুর্চি দ্বারা অল্প সময়ে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সুস্বাদু রান্না করা হয়’
বউরা কর্তাদের আদুরে গলায় বলবে, “ওগো,আজকে শরীরটা না কেমন ম্যাজম্যাজ করছে। বাজারের শেষমাথায় রান্নার দোকান আছে।ওখান থেকে রাঁধিয়ে নিয়ে এসো কেমন?”
ভয়ঙ্কর চিন্তাভাবনা।


বড় রাস্তা থেকে আচমকা পশ্চিমের দিকে যে রাস্তাটা বয়ে গেছে সে রাস্তার দিয়ে মিনিট দুই হাঁটলেই বহুদূর হতে এঁকেবেঁকে ছুটে আসা একটি রেললাইন দেখা যায়। রেললাইনের ধারঘেঁষেই একটি কচুরিপানা-মজা কালো জলের পুকুর আর তার পাশেই মাজাভাঙা বৃদ্ধের মতোন নুয়ে নুয়ে দাঁড়িয়ে আছে দূর-বিস্তৃত সার-সার জরাজীর্ণ টিনের বাড়ি। আরেকটু এগুলেই দেখা মেলে একটি স্যাঁতসেঁতে সরু গলির। গলির দুপাশে টিনের বাড়িগুলো ক্ষুদার্ত জানোয়ারের মতো চেপে এসেছে দু’দিক থেকে। পাশাপাশি দু’জন হাঁটা দুষ্কর। একটা মেটে দুর্গন্ধে চারিপাশের আবহাওয়াটা কেমন রুদ্ধ হয়ে থাকে সারাক্ষণ।
ঘড়িতে সময় রাত দশটা। রাকিব ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে চিরচেনা গলিতে ঢুকে পড়ল। মনে হলো আলোর বাতিঘর থেকে হুট করে ভূতুড়ে নগরীতে প্রবেশ করল। দুপাশের ঘরগুলোর বেড়া আর কাঠের ফাঁক গলে ছুটে আসা আলোকরশ্মি পথটাকে কোনোমতে হাঁটার যুগ্যি করে তুলেছে। অপরিচিত কেউ এলে জমাটবদ্ধ বৃষ্টির পানিতে তৈরি হওয়া পিচ্ছিল পথে চিৎপটাং হবে নিশ্চিত। সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে ধীরপায়ে চারিধারে তাকাতে তাকাতে এগুলো সামনের দিকে। গলির শেষমাথায় ওর ঘর৷ হাঁটতে তার আবছা-আবছা কানে আসে বস্তিবাসীর দিনান্তের সাংসারিক সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না আর টানাপোড়েনের গল্প। রাত্রির নিঝুম নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে কোনো একটা ঘরে বাচ্চা কেঁদে উঠে ট্যাঁ ট্যাঁ করে। ঝালমুড়িঅলার বাচ্চাটা নিশ্চয়! গতমাসেই বিইয়েছে তার বউটা। খুশি হয়ে পুরো বস্তির আণ্ডাবাচ্চাদের ঝালমুড়ি গিলিয়েছিল সে। আরেকটা ঘর থেকে একজোড়া দম্পতির অশ্রাব্য গালাগালমিশ্রিত কলহের সুর ভেসে আসছে। প্রায়ান্ধকার গলির ভেতরে সাবধানে পা ফেলে ফেলে এগুতে এগুতে আচানক সুমুখে একটা আবছায়া দেখে দাঁড়িয়ে যায় রাকিব। পরক্ষণেই চিনতে পেরে বুকে থুথু ছিটিয়ে ক্লান্ত নিঃশ্বাস ফেলে একটা,
– ও তুইনিহি? আমি ভাবলাম…
– তা কারে খুঁজতেছিলা এমন চোরের মতোন?
অন্ধকার থেকে ছুটে আসে তীক্ষ্ণ একটি নারীকণ্ঠ। একটু লাফানোর মতো করে পা বাড়িয়ে এগিয়ে আসে মূর্তিটি।
– ছিঃ গা দিয়া কেমুন মাছের গন্ধ বাইর হইতেছে। ডোবা থিকা গোসল কইরা আসোনাই ক্যান?
– করমু গোসল। গামছাডা লিয়া আহি। তর বাপ কই খাদিজা?
– ঘরেই আছে। মাল খাইয়া টাল হইয়া রইছে। আমারে দেখলে হুদাই মাতলামি করবো, এলিগা বাইরা ঘুরতাছিলাম। ঘুমায়া পড়লেই ঘরে যামুনে।
– অ…। আচ্ছা তুই ঘরে গিয়া ক আমার লাইগা একটা গামছা পাডাইতে।
– ক্যান, আমি কি তর বউ লাগি? আমি যামু ক্যা?
– সর তাইলে চক্ষের সামনে থে৷ ধাড়ি মাগী কুনঠাঁইকার একটা কাম কইরে পারে না আবার…
বলতে বলতে রাকিব বাঁ হাতে খাদিজাকে ঠেলে সুমুখে এগুতে যাচ্ছিল। খাদিজা শরীর বাঁকিয়ে কুঁকড়ে উঠে চাপাস্বরে আর্তনাদ করে উঠল। চকিতে রাকিব একপা পিছনে এসে বলল,
– কী অইল রে এইখানে?
– কিছু না। আচ্ছা তুই ঘাটে যা। আমি গামছা লিয়া আইতেছি।
বলেই খাদিজা নিমিষে অন্ধকারে হারিয়ে গেল।

ডোবার কুচকুচে কালো জলে ঝপঝপ করে লাগাতার তিনচারটে ডুব দিয়ে রাকিব কসকো সাবান দিয়ে গা ডলতে ডলতে বলে,
– ঢাকার বস্তিগুলার অবস্থা আরো খারাপ বুঝলি? পানির কী কষ্ট! এইখানে তাও শান্তিতে দুইডা ডুব দেওন যায়।
খাদিজা রুষ্ট গলায় বলে,
– ভালো কইরা সাবান ডল গায়ে। একটা সাবান শেষ কইরা ফেললেও তোর গা থিকা মাছে গন্ধ যাবি না। খাটাশের খাটাশ,দুইন্নায় কি কামের অভাব হইছে?
– সেইডা নিয়া তোর এতো মাথাব্যথা কীয়ের? আমি যা কামাই তুই তার কোণাডাও কামাতি পারস না। ফ্যানের তলে মেশিন চালায়া যে দুই চার টেহা কামাস তাও তো বাপরে মাল খাতি দেওয়া লাগে।
খাদিজা চুপ। অমাবশ্যার মিশমিশে কালো আকাশটার পানে তাকিয়ে ওর মনের বৈরিতাকে সে সীমাহীন শূন্য আঁধারে মিলিয়ে দিতে চায়৷ রাকিবের কথা সত্যি বটে৷ গার্মেন্টসের নিম্নশ্রেণীর কর্মী খাদিজা। দিনভর খেটে,ওভারটাইম করে যে আয়টুকু হয় তা দিয়ে না সংসার খরচ পোষায় আর না বাপের নেশার খরচের জোগান হয়। তারমধ্যে গার্মেন্টস মালিকদের শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে, কাজ বন্ধ করে, মিছিল-মিটিং করে ন্যায্য পাওনার দাবি নিয়ে পথে বসতে হয়৷ কদাচিত পুলিশের ঠ্যাঙানিও খেতে হয়৷… একটা দীর্ঘশ্বাস মনের কোণে কেলাসিত হয়ে নিঃসৃত হবার আগেই খাদিজা রাকিবের স্বরে চমকে উঠে,
– গামছা দে।
ওর গা থেকে সাবানের সুবাস ভেসে আসছে। কিন্তু কাল হতে না হতেই আবার তথৈবচ, ময়লা জামাকাপড়,উসকোখুসকো চুল, ভকভক করে ছুটে আসা মাছের বোটকা গন্ধের সঙ্গে ঘামের গন্ধ মিলেমিশে একাকার। ভেবেই নাক কুঁচকে গামছাটা ছুঁড়ে মারল খাদিজা৷ প্রস্থানোদ্যত হয়ে বলল,
– গেলাম আমি।
– গামছা নিতে গেছিলি। আম্মায় কিছু কইছে?
খাদিজা যেতে যেতে পেছনে ফিরে তাকায় তেরছাভাবে,
– তোদের ঘরে যামু আর তোর আম্মায় বাঁকা কথা হুনাইব না এইটা কখনো সম্ভব?
রাকিব মাথা মুছতে মুছতে বোকাটে ভঙ্গি করে বলে,
– হ তাও কথা৷ আম্মায় তরে খুব ভালা পায় কি-না!

আজকের দিনটা একটু নির্ঝঞ্ঝাট বলেই বোধহয় ঘুমটা ভাঙল একটু বেলা করে। তা-ও একঝাঁক মেয়েলি কণ্ঠের উৎকট চেঁচামেচিতে। সকাল সকাল মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে গেল রাকিবের। গতকাল হাটবার ছিল। সারাদিনে দুদণ্ড অবসর হয়নি বলে শরীরের মাংসপেশিগুলো কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে। আড়মোড়া ভেঙে খাট থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পরনের লুঙ্গিটা খুলে আঁটো পরে নিয়ে ভেজানো দ্বার খুলে বের হলো সে। বাইরের খরখরে রোদ্দুরে চোখ ধাতস্থ হতেই দেখতে পেল,দু’জন পৌঢ়া রমণী যথারীতি তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা লাগিয়ে দিয়েছে। একজন তার মা অন্যজন খাদিজার মা। খাদিজা নির্বিকার চিত্তে দরজার চৌকাঠে মোড়া পেতে বসে ছিল। পেছনে আরেকটি মোড়ায় বসে তার চুল আঁচড়ে দিচ্ছিল পাশের বাসার সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত মেয়েটি৷ রাকিবকে একপলক দেখেই মেয়েটির চোখ ঝিকমিকিয়ে উঠল। রাকিব সেদিকে একপলক তাকিয়ে ঝগড়ার দিকে মন দিল। মিনিট এক হাঁ করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল ঘটনা কী! বুঝতে পারল,ঘটনা বিশেষ কিছু না৷ রাকিবের কনিষ্ঠ বোন লাকি কোনো একটা কারণে খাদিজার মাকে গালি দিয়েছিল। খাদিজার মা সেটি সহ্য করতে না পেরে বালিকা লাকিকে একটা রামচিমটি দিয়েছে৷ চিমটি দেবার সময় তো আর লাকি মুখ বাড়িয়ে বসে ছিল না;নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টার ফলে নখের আঁচড়ে মুখের চামড়া ছড়ে গিয়েছে। শীর্ণ মুখটা ফুলে উঠে বিশ্রী দেখাচ্ছে লাকিকে। ফলেই এই ঝগড়ার অবতরণ। তবে ঝগড়া এখন লাকির ক্ষততেই সীমাবদ্ধ নেই। বহু পাকদণ্ডী অতিক্রম করে করে প্রসঙ্গান্তর হয়ে চলেছে অনবরত। সময়ের স্রোতে বিলীন হয়ে যাওয়া পুরনো দোষত্রুটিগুলো উঠে আসছে আবারো। সেই সঙ্গে খিস্তিখেউড়ের প্রাচুর্য তো দুইপক্ষতেই আছে। রাকিব কিছু একটা বলে মা’কে নিরস্ত করতে যাবে এমনসময় খাদিজার বাবা টুটুল বয়াতি লুঙ্গির গিঁট মারতে মারতে রক্তচক্ষু করে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। আফিমের নেশায় চোখ-মুখ তার অস্বাভাবিক রকমের উগ্র। পা টলতে টলতে বেরিয়ে রাকিবের উদ্দেশ্যে বলল,
– কীরে শালা? মারে লেলায়া দিয়া মজা দেহস খাড়ায়া খাড়ায়া? উঁ? তোগো জ্বালায় ঘুমাইতেন পারুম না?
খাদিজার মা সমর্থন করল স্বামীকে৷
– হ সবকিছুর মূলে ওই রাকিব্বা।
মেয়েলোকের সঙ্গে বচসা করা রাকিবের সাজে না। এতক্ষণে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়ে তার পুরুষালি মন ক্রুদ্ধ জানোয়ারের মতো ফুঁসে উঠল। একে তো ঘুম-ভাঙা বিরক্তি তার ওপর ওই মদখোর হারামজাদার ওপর তার দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত পুরনো আক্রোশ তো আছেই। সবমিলিয়ে উন্মত্ত হয়ে রাকিব বেগে ছুটে গিয়ে টুটুল বয়াতির উরুতে কষে দিল এক লাথি। মুখে বলল,
– আমি লেলায়া দিছি না? শালা মদখোর শুয়োর।রাতভর যে তুই বউ-ঝি মেরে পুরা বস্তি মাথায় করস তখন কই থাকে ঘুম?
লাথি খেয়ে বেচারা চিৎ হয়ে পড়ে হাউকাউ করতে লাগল। খাদিজা কিংবা খাদিজার মা কেউই এগিয়ে এল না। রাকিব মা আর ভাইবোনদের আরেকপ্রস্থ গালমন্দ করে ঘরে ঢুকে গেল। মিনিট দশেক পরেই এপাশের পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে এলেও খাদিজাদের ঘর থেকে টুটুল বয়াতির অনবরত হম্বিতম্বি ভেসে আসতে লাগল।
– কোপাব। সবকটাকে কুপায়া লাশ করে ফাঁসিতে ঝুলব। আমার নাম টুটুল বয়াতি…ইত্যাদি ইত্যাদি।
এপাশে রাকিবের ভয়ে সকলে চুপ। রাকিবকে ঘরের সবাই যমের মতো ডরায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম সে, না ডরিয়ে উপায় নেই। লাকি চা বানিয়ে নিয়ে এলো। দুধচা-এর মধ্যে আকণ্ঠ একখানা বেলাবিস্কুট ডুবিয়ে কটরমটর করে খেতে খেতে রাকিব ঘরের তত্ত্ব তালাশ করল। এটা-ওটা জিজ্ঞেস করার পর রান্নাঘরে কোণায় নড়বড়ে সিঙ্গেল খাটটার আলুথালু অবস্থা দেখে শুধালো, ‘সাকিব্বা কনে গেছে’। সাকিব তার ছোট ভাই। বয়স সতের-আঠারো। নাসিরাবাদের ওদিকে অটো চালায়। সীমা অতিক্রমের কারণে দু’দিন পরপর পুলিশ অটোর ব্যাটারি খুলে নিয়ে যায় আর মোটা টাকা ঘুষ দিয়ে সেটি তুলে নিয়ে আসতে হয়। উপরন্তু, যৌবনের উষ্ণ হাওয়া গায়ে লাগতে-না-লাগতেই স্বভাবচরিত্রও গোলমেলে হতে শুরু করেছে। কয়দিন শোনা গেছে লালগলিতে আনাগোনা করে এখন শোনা যাচ্ছে কোথায় নাকি বিয়ে করে বসে আছে। তা ভালো,কিন্তু বউ নাকি তার থেকে সাত বছরের বড়। পাশাপাশি হাঁটলে নাকি মা-ছেলে বলে মনে হয়। এসব অবশ্য শোনা কথা। সত্যতা এখনো সামনে আসেনি। সাকিব পারতপক্ষে বড় ভাইয়ের সামনে আসে না। রাকিবও তার ওপর বেজায় ক্ষিপ্ত। অটো চালিয়ে ওর ইনকাম তো কম হয় না,তারপরও সংসারের এক পয়সা খরচের বেলায় তাকে ধারেকাছে পাওয়া যাবে না। নেমকহারাম কোথাকার! রাকিবের মা শরমিন বেগমের চোখেমুখে এখনো যুদ্ধপরবর্তী বিধ্বস্ততা। তেরছা গলায় বললেন,
– আয়নাই রাইতে।
সবার ছোট সাকি। ওর বয়স সাত। ফোকলা দাঁত মেলে হেসে সে বলল,
– আম্মায় কইছে ভায়ে বউয়ের কাচে গেচে।
ওমনি শরমিন বেগম আরক্ত চোখে দাঁত খিঁচিয়ে মেয়ের গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,
– কখন কইছি হারামজাদি? যা সর সামনেত্থে…
চড় আর গাট্টা খেয়ে সাকি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে তাকিয়ে রইল। রাকিব ঠোঁট টিপে মুখ ফেরাল। শালার দিনটাই খারাপ আজকে। আমলাসে নাকি একটা বিদেশি সিনেমা এসেছে। ভাইবেরাদরা মিলে সেটি দেখতে যাওয়ার কথা। চটপট প্রস্তুত হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রাকিব। গলির মুখেই দেখা খাদিজার সঙ্গে। ডোবায় স্নান সেরে ফিরছে সে। সদ্যস্নাত খাদিজাকে বেশ দারুণ দেখাচ্ছে। ওর মাজামাজা শ্যামল রংটা আরো পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। ভেজা চূর্ণকুন্তল মুখের দু’ধারে লতিয়ে আছে। দীঘল আঁখিপল্লব ঘিরে থাকা ক্লান্তিহীন সতেজ দৃষ্টি। পাতলা টেপা ঠোঁটজোড়ায় ভাষাহীন বাঙময়তা। ছোপ ছোপ জল-ছাপপূর্ণ জামাটি ভেদ করে ওর আঠারোতে ঠেকে থাকা যৌবন উদ্ভিন্ন হয়ে যেতে চাইছে।
– আজ তর ছুটি? রাকিব বলল।
খাদিজা ঠোঁট উলটে বলল,
– হ ছুটি।
যেন ছুটি হওয়াতে সে বিশেষ খুশি না। কাজে থাকলেই ভালো থাকে। ‘তুই কই যাস? বাজারে?’ ফিরতি প্রশ্ন করে খাদিজা।
– না, ফিলিম দেখতে। বিদেশি।
বলতে গিয়ে একটু ভাব বেড়ে যায় রাকিবের। পরক্ষণেই গলাটা খাদে নামিয়ে বলে,
– তর বাপের কী অবস্থা? অবশ্য, জায়গা বরাবর মারতি পারলে কামের মতো কাম হইতো। বুড়াবয়সে যে ভীমরতিতে ধরছে ওইটা বন্ধ হয়া যাইত।
খাদিজার ঘনকালো পক্ষ্মপল্লব-বেষ্টিত চোখজোড়া নীরব রোশে ফোঁস করে উঠে। তবে কি-না, কথা তো সত্যি। এমনটা হলে সে নিজেও কম খুশি হতো না। ওই বাপ নামের মানুষটার প্রতি তার বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই। একটা সময় গ্রামেগঞ্জে গানটান গেয়ে ভালো পয়সা কামালেও যৌবন থেকেই নেশা আর পরনারীর আসক্তি তাকে অচিরেই ধ্বংসের পদপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। গাঁয়ে থাকাকালীন অনেকদিন তার কোনো খোঁজখবর ছিল না। লোকমুখে রটেছিল, পরের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়ে সংসার পেতেছে বয়াতি। কামাইহীন সংসারের বিরামহীন অভাব-অনটন আর জঠর যখন সুতীব্র ক্ষুদার জ্বালায় তিক্ত হয়ে উঠল তখন ওরা মা-মেয়ে ঠিক করেছিল‘শহরে যাবে’। কিন্তু শহরের এসে ওদের দুর্দিন যেন আরো ঘনীভূত হয়ে এলো। কাজ নেই,মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের নিশ্চয়তা নেই; এক নলা ভাতের জন্য সত্য সত্যই পৃথিবীটা গদ্যময় হয়ে উঠছিল। চারিদিকে শহুরে গৃধিনীর নখর যেন দুর্বার বেগে তাদের অস্তিত্বে আঘাত হানছিল। ওরা কোনোমতে টিকে ছিল। একটা সময় যখন খাদিজা বহু কায়ক্লেশে গার্মেন্টসের চাকরিটা জুটিয়ে ফেলল, সুদিন ফিরে এলো। কিন্তু তাও বেশিদিন স্থায়ী হলো না। একদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই খাদিজা দেখল, বস্তির খুপরি ঘরে তার কুখ্যাত বাপজান উপস্থিত। মা বেঁকে বসেছিল,অমন বেঈমান,লুচ্চা মিনসের সঙ্গে একঘরে সে আর থাকবে না। কিন্তু বাপ-ন্যাওটা খাদিজাই মুখ বুজে থেকে নিজের চূড়ান্ত অশান্তি ডেকে এনেছিল। কয়দিন পর সেটা বুঝতে পারলেও ততদিনে আর কিছুই করার ছিল না। খুব চাতুর্যতার সাথে সবকিছু নিজের আয়ত্তাধীন করে নিয়েছিল বয়াতি। এখন খাদিজার মাসোহারার পুরো টাকাটাই তুলে দিতে হয় তার হাতে। নইলে এমন প্রকটলীলা আরম্ভ করে যে তা বলবার মতো নয়। বাধ্য হয়ে খাদিজা ওভারটাইমে কাজ করে। ওর এমন করে জ্বলে ওঠা দেখে রাকিব বলল,
– কী? খুব লাগছে না? আমার যদি ইরাম বাপ হইতো? তাইলি পরে কবেই জবাই কইরা ভাসাই দিতাম।
– হইছে। তর ভাসান লাগব না। যেই কাজে যাইতেচস সেই কাজে যা।
– তুইও চল। একলগে ফিলিম দেকমু।
– তর লগে ফিলিম দেহার এট্টুও স্বাদ নাই আমার।
– তয় কার লগে আছে? কালাচানের লগেনি দেখবি?
– ধুর, জানি না।
নির্লিপ্তভাবে চলে যায় খাদিজা। রাকিব খুব ফুরফুরে মেজাজে শিষ বাজাতে বাজাতে বের হয়ে যায় বস্তি থেকে। বেশ জব্দ করা গেছে খাদিজাকে। কালাচান হলো অত্র বস্তিরই একজন বিপত্নীক বাসিন্দা। বয়স চল্লিশের কোঠায়। দিনভর রিকসা চালায় আর রাতে বসে নিজের একলা ঘরে হেঁড়ে গলায় গান গায়। খাদিজাকে সে খুব ভালো পায়। বেশ নরম-গরম করে কথা বলে। না বুঝে একবার খাদিজার বাপের কাছে গিয়েছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। মাতাল বয়াতি তাকে নিষ্ঠুরভাবে ঠেঙিয়ে বিদেয় করেছে। সে থেকে কালাচানের কথা বললেই খাদিজা বেমক্কা ক্ষেপে যায়৷ রেললাইন পেরিয়ে রাস্তায় উঠেই একটা ভাসা ভাসা চিন্তা রাকিবের সমস্ত মনটাকে দখল করে নেয়। সেই, চিন্তার পুরোটা জুড়ে খাদিজার হাতছানি। খাদিজার কথা মনে হতেই অকারণে হৃৎপিণ্ডটা তার ধুকপুক ধুকপুক করে। সাদামনে বলতে গেলে সে রূপবতী নয়,তবু ওর চোখদুটিতে কী যে অমোঘ আকর্ষণ! ওর ছিপছিপে গড়নটি যখন একটা চাপা আবেদন নিয়ে কাছে আসে তখন তার নিজস্ব গন্ধে বুকের ভেতরকার সমস্ত শিরা-উপশিরা টনটনিয়ে উঠে। কেন? খাদিজারও কি তাই হয়? নইলে ওর সঙ্গে কথা বলতে গেলে কেন কথার ফোয়ারায় অকৃত্রিম ঔদার্য ধরা পড়ে? ফিলিম দেখতে আর যায় না রাকিব। রাস্তায় রাস্তায় উদাসভাবে ঘুরে বিরক্ত হয়ে আবার ফিরে আসে বস্তিতে। কিছুই যেন ভালে লাগে না।


দিন যায়৷ রোজ নিয়ম করে বস্তির পুরুষেরা নিজেদের পুঁজি নিয়ে বেরিয়ে পড়ের নগরের অলিতে-গলিতে। কেউ বাদাম বেচে, কেউ শরবত বেচে,কেউবা ফুচকা আবার কেউ কেউ মৌসুমি ফলের দোকান দিয়ে অভিনব কায়দায় কাস্টমারকে আকর্ষণ করে। দিনের আলো ফুটবার আগেই মহিলাদের তটস্থ, নিঃশব্দ-পদসঞ্চারে ঘরগুলো জেগে উঠে আড়মোড়া ভেঙে। আর দিনের আলো ফুটবার পর কর্তারা যখন বেরিয়ে পড়ে তখন ওদের আসল রূপ প্রকাশ পায়। হৈচৈ,হাঁকডাক, বাচ্চাপিটানো আর পড়শির সঙ্গে একহাত হয়ে না গেলে ওদের দিনটা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
রাকিব যায় মাছবাজারে। চাপাতি হাতে চোখের নিমিষেই একটি মাছকে কেটে টুকরো টুকরো করে টাকা গুনে ডেক্সে ভরে। এরপর কোনোদিন-বা রাত্রে দোস্তদের সঙ্গে একটু মৌজমাস্তি করে টলতে টলতে বাসায় ফিরে হাত-পা টান টান করতে মড়ার মতো ঘুম দেয়৷ কোনো- কোনোদিন খাদিজাদের ঘরটা অতিক্রমকালে ভেসে আসে ওর মায়ের কান্নাকাটি আর চেঁচামেচি;সঙ্গে বয়াতির তর্জনগর্জন তো আছেই।
– তর মাইয়্যারে ক টেকা দিতে। টেকা কই রাখচে বাইর করতে ক তারাতারি।
খাদিজার মা রোরুদ্যমান কণ্ঠে বলে,
– কইত্তে দিবো টেকা? সব তো লিয়া ফেলচছ ওইদিন। কেমনে খাই,কেমনে চলি হেই খবর আছে তোর?
– চোপ চোপ। মা’গী… গতর বেইচ্চা খাস আরকি। চিনি না তোরে?
খাদিজার মা ভাঙবে,তবু মচকাবে না৷ বলে,
– আর তুই যে আমার মাইয়্যার কামাই নিয়া বেইশ্যাপল্লী গিয়া ফূর্তি করস তখন?
পরক্ষণেই ভেসে আসে অজস্র গালমন্দ আর মারধরের আভাস…

এরপর একদিন আচমকা শোনা যায় খাদিজার মা আর নাই। মরে গেছে। রাত্রে ভালো মানুষ ঘুমিয়েছিল,সকালে যখন বেলা বাড়ল, আফিমের নেশায় চুর হয়ে থাকা বয়াতি বউয়ের জঘনে লাথি মেরে টেনে টেনে বলে উঠল,
– কীরে শালি। এখনো ঘুম? উঠ, উঠ… চা দে। মরে গেল নাকি!… এই খাদিজা। তর মারে ডইকা দিয়া যা।
খাদিজা কাজে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। বাপের চেঁচামেচিতে মাকে ডাকতে এসে দেখে, মায়ের অসাড়-বিবশ দেহজুড়ে নেমে এসেছে মৃত্যুর শীতলতা। নেশা কাটার পর বয়াতি দেখতে পেল,তার মেয়েটা মায়ের নামে আছড়ে পড়ে পড়ে মাতম করছে আর মূর্ছা যাচ্ছে। সারা ঘরভর্তি মানুষ।
রাকিব খবরটা পেয়েছিল দুপুরের ঝোঁকে। তৎক্ষনাৎ ছুটে এসেছিল সে। খাদিজা কাঁদতে কাঁদতে নিঃসাড় হয়ে গেছে ততক্ষণে। বস্তির জনাকয়েক দায়িত্ববান পুরুষ দুপুরে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে আর যায়নি দাফন-কাফনের এন্তেজাম করার জন্য। বিকাল-নাগাদ শেষকৃত্য সম্পন্ন হলে বারবার মায়ের কবরে ছুটতে চাওয়া খাদিজাকে ধরে নিজের ঘরে নিয়ে এলো রাকিব। বেচারির আর আপনজন বলতে কেউ রইল না।
শরমিন বেগম অল্পস্বল্প চোখের পানি খরচ করে বেদনাহত গলায় নানান ঘটনা দিয়ে বর্ণনা করতে লাগলেন, ওদের দু’জনের মধ্যে শুধু ঝগড়াই ছিল না;সৌহার্দ্যও ছিল। দু’জনে অনেকগুলো বছর সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়েছিল।
শোকে মুহ্যমান খাদিজা অবসন্নভাবে ঢুলতে ঢুলতে সেসব সত্য-মিথ্যা কথা বাষ্পিত নয়নে শুনে যেতে লাগল। সত্যি, মৃত্যু কতকিছু বদলে দেয়!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here