নারী_লোভী #পর্বঃএক।

0
1146

#নারী_লোভী
#পর্বঃএক।

“দোস্ত তোর বউকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।ওকে আমি বিয়ে করতে চাই তুই ওকে ছেড়ে দে।আমি তোর বউকে তোর চেয়ে ভালো রাখবো,তুই তো তোর বউকে সময় দিতে পারিস না আমি তোর বউকে বিয়ে করে সবসময় সময় দিবো।”

সিহাব তার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড রিয়াজের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলো।সে ভাবতে পারছে না রিয়াজ তাকে এমন কথা কোনোদিন বলবে।সিহাব কোনো উত্তর না দিয়ে চলে আসতে লাগলো।রিয়াজ পিছন থেকে বলতে লাগলো
->আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড।আর তুই আমার কোনো আবদার ফেলতে পারিসনি।আর আমি জানি এটাও ফেলতে পারবি না।
সিহাব চোখ বন্ধ করে ফেললো।সিহাব চিন্তিত মুখে বাসায় ঢুকলো।তখন ওর স্ত্রী তাসফিয়া এসে বলল
->কি হয়েছে মন খারাপ কেন?
->কিছু হয়নি।আচ্ছা রিয়াজের সাথে তো তুমি প্রতিদিন কথা বলো ওকে তোমার কেমন মনে হয়?
->সত্যি বলতে ওর কথা বার্তা দেখে মনে হয় যে সে আমায় পছন্দ করে তাই আমি আর কথা বলিনা।তাই সারাদিন সে মেসেজ দেয়।আমি উত্তর দিইনা।কেন কিছু হয়েছে?
->না এমনি।
সিহাব নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো।আজ থেকে ছয় মাস আগে তাসফিয়ার সাথে সিহাবের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে তাই কাউকে বলার সময় পায়নি।সিহাব আর রিয়াজের বন্ধুত্ব প্রায় সাত বছর ধরে।সিহাব মধ্যেবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও রিয়াজ বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান।সিহাব ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়ার পর নিজের বাবার ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে তাই আর পড়ালেখা করেনি।কিন্তু রিয়াজ এখনো পড়াশোনা করে।
রিয়াজ সিহাবের বিয়ের কথা শোনার পর সিহাবকে বলে
->বাহ বন্ধু বাহ তুই আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড তুই বিয়ে করলি অথচ আমায় জানালি না।এই বন্ধু ভাবিস আমায়।
সিহাব তখন রিয়াজের কাধে হাত রেখে বলে
->আরে দোস্ত রাগ করিস না।আসলে হুট করে বিয়েটা হয়ে গেছে তো তাই কাউকে বলার সময় পাইনি রে।
->আচ্ছা ঠিক আছে কোনো ব্যাপারনা।তাহলে চল আমায় ভাবির সাথে দেখা করা একটু ভাবির হাতের রান্না খাবো।
->আচ্ছা ঠিক আছে চল।
সিহাব রিয়াজকে নিয়ে বাসায় আসে।বাসায় আসার পর তাসফিয়াকে সে রিয়াজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।রিয়াজ তাসফিয়াকে দেখেই ওর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে সেটা তাসফিয়ার একদম ভালো লাগে না তাই সে বলে
->ভাইয়া আপনি বসুন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
->আহা ভাবি এত তাড়া নেই।একটু বসুন আপনার সাথে একটু গল্প করি।
->না ভাই আমার গল্প করার সময় নেই।
তাসফিয়া রান্না ঘরে চলে যায় তখন রিয়াজ বলে
->ভাবির আচরনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
->শোন ওই একটু এরকমই।পরপুরুষ দেখলে তাদের সামনে আসেনা।
->আমায় কি পরপুরুষ মনে হয় আমি তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড তোর ভাইয়ের মতো।সে হিসেবে আমার সাথে কথা বললে ক্ষতি কি?
->আচ্ছা ঠিক আছে কথা বলবে।
সিহাবের মা রিয়াজকে বাসায় আসতে দেখে সিহাবকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বেশ ধমকের সুরে বলে
->তুই ওকে এই বাড়িতে কেন নিয়ে এসেছিস?
->আসলে মা বিয়েতে তো কাউকে বলেনি তাই রিয়াজ আমার বিয়ের কথা শুনে আমার বউকে দেখতে চেয়েছিলো।যতই হোক বন্ধু বলে কথা না তো আর করতে পারি না।
->তুই আবারো ভুল করতে যাচ্ছিস।কি দরকার তোর বউয়ের সাথে পরিচয় করার।একবার কি করেছে তোর সাথে সেটা কি ভুলে গেছিস?
->মা সে এটা করে ভুল করেছে আর আমার কাছে মাফ চেয়েছে।আর আমার বিশ্বাস সে আর কিছু করবে না।
->তোর এই সহজে মানুষকে বিশ্বাস করার ব্যাপারটা তোর বিপদ ডেকে নিয়ে আসে।যা পারিস কর।
সিহাব ওর মায়ের রুম থেকে বের আসতেই তাসফিয়ার মুখোমুখি হলো।তাসফিয়া বলল
->কি হয়েছে মা কি যেন বলছিলো?
->তেমন কিছু না চলো।
সিহাব কিছু না বলায় তাসফিয়া আর কথা বাড়ালো না।তাসফিয়া রান্না করতে চলে গেলো।
তাসফিয়া খাবার রান্না করে নিয়ে আসে।রিয়াজ খাবার খাচ্ছিলো আর তাসফিয়ার রান্নার প্রশংসা করছিলো।সেদিন রিয়াজ বাসায় যাওয়ার পর শুধু তাসফিয়ার কথা ভাবতে থাকে।তার চেহারা বার বার রিয়াজের চোখে ভাসতে থাকে।এক মুহুর্তে ভুলে যায় যে তাসফিয়া একজন বিবাহিত মেয়ে তাও সে তার বেস্টফ্রেন্ডের স্ত্রী।
রিয়াজ ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করছিলো এমন সময় তাসফিয়া তারিন নামের এক মেয়ের আইডি চোখে পড়ে।রিয়াজ আইডি ঢুকে মিচুয়াল ফ্রেন্ডলিস্টে সিহাবকে দেখে বুঝে যায় এটাই তাসফিয়ার আইডি।রিয়াজ তাসফিয়ার আইডিতে রিকুয়েষ্ট পাঠায় কিন্তু তাসফিয়া কোনো রেসপন্স করেনা।তখন রিয়াজ ইনবক্সে নিজের পরিচয় দেয়।তাসফিয়া তখন সিহাবকে বলে
->তোমার ফ্রেন্ড আমার আইডি মেসেজ দিয়েছে কি করবো?
->কথা বলিও তবে নিজে থেকে মেসেজ দিবেনা।
->সেটা তো কখনোই করবো না।আমার তো তুমি ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা।
সিহাব হেসে উঠে তাসফিয়াকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দেয়।তাসফিয়া তখন বলে
->আমি ফেসবুক চালায় শুধু মাত্র গল্প পড়ে সময় পার করি।এছাড়া আমি আর কারো সাথে কথা বলিনা।তুমি আমার আইডির পাসওয়ার্ড রাখতে পারো সমস্যা নেই।
->আমি আমার বউটাকে বিশ্বাস করি।আমার বউ আমায় ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতেই পারেনা।
->হি হি ঠিক বলেছো।যখন আমাদের বাবু হবে তখন আর এসব চালাবো না।তখন বাবুকে নিয়ে সময় পার করবো।
->খু্ব শীঘ্রই তোমার সে আশা পূরন হবে ইনশাআল্লাহ।
তাসফিয়ার মুখে লজ্জার ভাব দেখা যায়।এভাবে চলছে দুইজনের মিষ্টি ভালোবাসার দিনগুলো।তাসফিয়া প্রতিদিন সিহাবের বাসায় আসার অপেক্ষা করতে থাকে।এই অপেক্ষা করার বিষয়টা তাসফিয়ার খুব ভালো লাগে।দিন শেষে যখন সিহাব বাসায় ফিরে আসে তখন তাসফিয়ার মনে হয় এই মুহুর্তে ওর দীর্ঘসময়ের অপেক্ষার অবসান হলো।সিহাব বাসায় এসেই তাসফিয়াকে একবার জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দেয়।সিহাব বলে,তার এই কাজটা নাকি তার সারাদিনের ক্লান্তি দুর করে দেয়।তাসফিয়া নিজেও তো এমনটায় চায়।এরপর বাকি সময় টুকু দুইজন হাসি ঠাট্টা দুষ্টুমি আর গল্প করে কাটিয়ে দেয়।

রিয়াজ প্রতিদিন তাসফিয়ার সাথে মেসেজে কথা বলে।তাসফিয়া বেশ ভদ্র হবে ওর মেসেজের রিপ্লাই দেয়।রিয়াজ তাসফিয়াকে বলে
->ভাবি আপনার সাথে না সিহাবকে মানায়নি?
->কেন?
->আরে ভাবি বুঝো না।সিহাব দেখতে শ্যামলা আর তুমি হলে ধবধবে ফর্সা।তোমার সাথে কি ওর মানায়।তোমাকে বরং কোনো এক রাজপুত্রের সাথে মানায়।
->হাহাহা তাই নাকি?আল্লাহ ওর জন্যেই আমাকে সৃষ্টি করেছে তাই তো আমি ওর হয়েছি।
->কিন্তু তারপরেও তোমার উচিত ছিলো ওকে বিয়ে না করা।আমি যদি তোমায় পেতাম তাহলে সবসময় রাজরানী করে রাখতাম।
->তুমি একটা বিয়ে করো।তারপর তাকে তুমি রাজরানি করে রেখো কেমন?আমায় এসব না বললেও চলবে।আমি এভাবে অনেক ভালো আছি।

রিয়াজ বিভিন্ন ভাবে তাসফিয়াকে ইমপ্রেস করতে চায় কিন্তু তাসফিয়া আগের মতোই থাকে।ওর কোনো কথা গায়ে মাখে না।রিয়াজ তাসফিয়াকে বলে
->আচ্ছা ভাবি সিহাব তো সারাদিন বাইরে গাধার মতো খাটে।তোমাকে তো সময় দেয়না সারাদিন এতে তোমার কষ্ট হয় না।
->কষ্ট হবে কেন?সিহাব যে গাধার মতো খাটে সেটা তো আমার আর ভবিষ্যতে আমাদের জীবনে যে আসবে তার সুখের জন্য।
->হুমম বুঝলাম।কিন্তু সারাদিন তো তুমি একা থাকো তাই হয়তো একাকিত্ব তোমায় ঘিরে ধরে তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমার সাথে কথা বলে তোমার একাকিত্ব দুর করবো।
->আমি কি বলেছি যে আমায় একাকিত্ব ঘিরে ধরে আমি তো এমনিতে অনেক ভালো আছি।যার মনে তার স্বামীর ভালোবাসা থাকে তাকে কখনো একাকিত্ব ঘিরে ধরেনা।তাই এসব বলবেন না।
->ঠিক আছে বলবো না।তবে আমি চাইছিলাম আমরা দুইজন এমন বন্ধুত্ব করবো যার সাথে সব শেয়ার করা যায়।
->ভার্সিটিতে পড়ো তোমার তো অনেক মেয়ে বন্ধু থাকার কথা।তাদের একজনকে এমন বন্ধু বানিয়ে নিলেই পারো।
->সবাই তো আর তোমার মতো না।আমি চাইছিলাম সিহাব তো আমার ছেলে বেস্টফ্রেন্ড আর তার স্ত্রী হিসেবে তুমি না হয় আমার মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড হলে।
->সরি ভাই।আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড আমার স্বামী তাই দ্বিতীয় কাউকে আমি চাই না।আর আমায় মেসেজ দিবে না ভাই তুমি।এবার মেসেজ দিলে ব্লক করে দিবো।
তখন রিয়াজ বলে
->সিহাব একটা মেয়েকে পছন্দ করতো জানো সেটা?
->হুম জানি বিয়ের আগে সব বলেছে আমায়।সে শুধু পছন্দ করতো এর বেশি কিছু না।প্রেম তো আর করেনি।এমন হতেই পারে।আর মেসেজ দিবেননা।
এরপর থেকে তাসফিয়া রিয়াজের সাথে আর কোনো কথা বলে না।

চলবে,,,,,।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here