?#নিখোঁজ_প্রেমের_শহরে-২,৩
লেখনীতে, আতিয়া আদিবা।
পার্ট:২
ক্ষণিককাল বর্ষা ঘুমের দেশে বিচরণ করলো। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে একটা স্বপ্নও দেখে ফেললো। পাত্রপক্ষ ফোন করেছে। কন্ঠে মিষ্টতা ধরে রেখে বলছে,
হেফাজত সাহেব। আপনার মেয়েকে আমাদের খুব পচ্ছন্দ হয়েছে। এমন মেয়ে হাজারে একটা পাওয়া যায়। কিন্তু ছেলে নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত মনে করছে না। এখন কি করি বলেন তো?
বর্ষাদের ড্রইং রুমটা সুন্দর। কদিন আগেই নতুন একসেট সোফা বানানো হয়েছে। সেগুন কাঠের সোফা। এখনো রুম দিয়ে সেগুন সেগুন গন্ধ বেরুচ্ছে। দেয়ালে তিনটে পেইন্টিং টাঙ্গানো আছে। সামনে শোকেস এর ওপর একটা ৩৬ ইঞ্চির টিভি। এঘরে সারাদিন টিভি চলে। ড্রইং রুম দিয়ে বারান্দায় যাওয়ার দরজার পাশে একটি সুইং চেয়ার রাখা। রিটায়ারমেন্টের পর থেকে হেফাজত করিম দিনের বেশিরভাগ সময় এই সুইং চেয়ারে আধশোয়া অবস্থায় দুলে দুলে বই পড়ে কাটান। মুখ ভর্তি পান থাকে। তিনি যে আগ্রহ নিয়ে টিভি দেখেন বিষয়টা তাও না। প্রোগ্রাম গুলো নিয়ে তার অভিযোগের শেষ নেই! উনার ভাষ্যমতে, প্রোগ্রাম হতো তাদের সময়। বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো চ্যানেল ছিলো না। ঘরের মা বেটিরা সারাদিনের কাজকর্ম, পড়াশোনার পার্ট চুকিয়ে একসঙ্গে টেলিভিশন দেখতে বসতো। আহা! কি দিন ছিলো! এখন টিভির প্রোগ্রাম মানেই যতসব অর্ধনগ্নতার কারবার। এত অভিযোগের পরেও এবাড়িতে সারাদিন টিভি চলে। হেফাজত করিম গল্পের বই পড়ার মাঝের বিরতিতে টিভির স্ক্রীণে চোখ মেলেন।
গায়ে পাতলা চাদর জড়িয়ে ঘুম ঘুম চোখে বর্ষা টিভির ঘরে এলো। তার মা রুমানাকে এখন এঘরেই পাওয়া যাবে। স্বামীর সাথে গুটুর গুটুর করে গল্প করা তার স্বভাব। রুমানাকে পাওয়া গেলো। হেফাজত করিমের সাথে নিচু গলায় কথা বলছিলো। বর্ষাকে দেখে দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। হেফাজত হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন,
ঘুম হয়েছে মা?
হয়েছে।
ঈর্ষা বলল তোর মাথা ব্যাথা করছে। মাথা ব্যাথা কমেছে?
একটু কমেছে। পুরোপুরি কমে নি।
স্ত্রীর দিকে তাঁকিয়ে হেফাজত বললেন,
রুমানা যাও। চা বানাও। বর্ষা মা, চা খা। চা হলো মাথাব্যথার যম। আমার ঠ্যাং ব্যাথা হলেও আমি চা খেতাম। হা হা হা।
রুমানা স্বামীর কথায় মিটিমিটি হাসছেন। এই ভদ্রমহিলা স্বামীসঙ্গ অত্যন্ত পচ্ছন্দ করেন।
তুমি বসে রইলে কেনো? যাও। চা বানাতে যাও। ঈর্ষা চা খাবে নাকি ওর কাছে শুনে নিও। দুই মেয়েকেই সমান ভাবে ট্রিট করতে হবে। একজনকে বেশি, আরেকজনকে কম এমন ডিস্ক্রিমিনেশন আমার বাসায় চলবে না। বুঝেছো?
বুঝেছি।
তোমার সোনার গয়নার ক্ষেত্রেও সেইম হিসাব। এক আনি এদিক সেদিক হওয়া চলবে না।
রুমানা কোনো উত্তর দিলো না। উঠে চা বানাতে গেলো। বর্ষার কাছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। ছেলের বাড়ির থেকে হয়তো এখনো ফোন করে নি। তবে ঈর্ষা যে বলল বাবা রেগে আছেন?
বর্ষা সহজ গলায় জিজ্ঞেস করল,
বাবা তুমি আমাকে ডেকেছিলে?
হ্যাঁ। ডেকেছিলাম। তোর সাথে দরকারি কিছু কথা ছিলো।
বলো।
দরকারি কথা বলার আগে তোকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা দরকার। ছোট খাটো বক্তৃতাও বলতে পারিস।
হু।
হেফাজত সাহেব গলা কেশে পরিষ্কার করে নিলেন। তারপর বললেন,
শোন মা, কোনো মা বাবাই সন্তানের খারাপ চায় না। সন্তানের ভালোর জন্য তারা নিজেদের জীবনটুকুও দিতে এক পায়ে খাড়া। বকের মতো। বক এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে জানিস তো?
হু।
আমি, তোর মা, কেউই তোর খারাপ চাইনা।
হু।
তুই কি বিয়ের ব্যাপারে বন্ধুদের সাথে কোনো কথা বলেছিস?
আমার একটাই বন্ধু বাবা। শাহানা।
ওইতো। শাহানাকে কিছু বলেছিস?
না।
বলিস না। বিয়ের ব্যাপারে আগেভাগে কারো সাথে কথা বলা উচিত না।
আচ্ছা।
মেয়েটাকে এমনিতেও আমার পচ্ছন্দ না। বিয়েতে বন্ধু বান্ধব না আসাই ভালো।
ছেলের বাড়ি থেকে ফোন করেছিলো?
এখনো করেনি। তবে করবে। মেয়ে আমার পচ্ছন্দ হওয়ার মতো। বানের জলে ভেসে এসেছে নাকি যে পচ্ছন্দ করবে না? তুই চিন্তা করিস না।
আমি চিন্তা করছি না।
ছেলেকে তোর পচ্ছন্দ হয়েছে তো?
বর্ষা কোনো উত্তর দিলো না। এ প্রশ্নের উত্তর সে জানে না।
রুমানা ট্রেতে চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। হেফাজত করিম স্ত্রীকে শুধালেন,
ছোট মেয়েকে দিয়ে এসেছো?
দিয়েছি।
ঠিকাছে দাও, বর্ষাকে চায়ের কাপটা দাও। আহারে! বেচারির মাথা ব্যাথা।
বর্ষা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হেফাজত করিম বিস্মিত স্বরে বললেন,
কই যাচ্ছিস?
তুমি আর মা চা খাও। একসাথে গল্প করো। আমি রুমে যাচ্ছি। টিভির সাউন্ড কানে লাগছে। একটু আরাম করে চা খাবো।
বর্ষা ড্রইং রুম থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের বারান্দায় চলে এলো। ছোট্ট বারান্দা। একটি চেয়ার পাতা। এক কোণায় বেশ কয়েকটি ফুলের টব রেখে দেওয়া। ফুলগুলো ঘ্রাণ ছেড়েছে। খুব মিষ্টি সুবাস বাতাসে। অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে। রাতটুকু পাতলা কুয়াশার পর্দায় ঘেরা থাকে। হিমালয়ের কনকনে বাতাস শহর কিছুটা ছুঁয়ে যায়। শরীরে হীম শীতল অনুভূতিরা খেলা করে। এরকম রাতে বুকটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। অতীতের কত কথা, কত স্মৃতি উঁকি ঝুঁকি দেয়। মস্তিষ্ক একাই সচল হয়ে ওঠে। কত পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলাতে থাকে।
বর্ষা কড় গুণে গুণে হিসেব করলো। সাত বছর আগের কথা!
নিউ টেনে উঠে নিজেকে বেশ বড় বলে মনে হচ্ছিলো বর্ষার। স্কুলের গন্ডি পেরোবার সময় চলে এসেছে। ক্লাসের শেষ তিনটি বেঞ্চ বর্ষা এবং তার বন্ধুদের দখলে। বারো জনের বৃহৎ একটি সার্কেল। ক্যাপ্টেন ক্লাসে পিন পতন নীরবতা বজায় রাখতে বোর্ডে নাম লিখে। ব্ল্যাক বোর্ডে চক দিয়ে ঘসঘস করে নাম লিখে। এক নম্বরেই বর্ষার নাম। পুরো ক্লাসে বর্ষা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। বান্ধবীরা মুখ চাপিয়ে খিলখিল করে হাসে।
টিফিন পিরিয়ডে এদের গল্পের একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে থাকে প্রেম, ভালোবাসা। বারো জনের মাঝে ছয়জন প্রেম করে। তাদের গল্প শুনে বাকি ছয়জন। থেকে থেকে হাসির রোল পরে যায়। গল্পের বিষয়বস্তু মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম করে ফেলে। এ পর্যায়ে অনেকে কান বন্ধ করে বলে, আমি আর শুনবো না। আর শুনবো না। বাকিরা হাত শক্ত করে ধরে বলে, তোকে শুনতেই হবে। আরেক দফা হাসির রোল!
জীবন স্বাভাবিক ভাবেই তার সরল গতিতে চলছিলো। একদিন হঠাৎ সেই ছেলেটি বর্ষার জীবনে আসলো। জীবন তার গতিপথ হারালো। রং রুটে এগুতে লাগলো। এগুতেই লাগলো!
বর্ষা জানতো না এ রাস্তার শেষ সীমানা কোথায়? ফিরে আসার উপায়ই বা কি?
যদি সম্ভব হতো, কড় গুণে গুণে ঠিক সাত বছর আগে সে আবার ফিরে যেতো। জীবনকে তার গতিপথ হারাতে দিতো না। মোটেও না।
ঈর্ষা বারান্দার দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। নিচু স্বরে ডাকলো,
আপা।
বল।
তোমার কি মাথা ব্যাথা কমেছে?
কেনো?
ঈর্ষা বলল,
ওই ঘরে অনেক মশা। পা জ্বলে যাচ্ছে কামড়ে। আমি এই ঘরে পড়ি?
ছোটবোনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বর্ষার হঠাৎ মায়া লাগলো। সে চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,
ঠিকাছে। পড়।
লেখনীতে, আতিয়া আদিবা।
চলবে
? #নিখোঁজ_প্রেমের_শহরে (৩য় পর্ব)
শিহাবের ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে ঘরে প্রবেশ করে কমলা। মেয়েটির এক হাতে থাকে কর্ণফ্রেক্স এর বাটি, আরেকহাতে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ। প্রতিদিন সকালে শিহাবের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া তার অন্যতম দায়িত্ব।
শিহাবের বয়স সাতাশ। শান্ত স্বভাবের ছেলে। রাগ বলতে তার মাঝে কিছু নেই। সবসময় হাসিখুশি। তবুও এ বাড়িতে আসার প্রথম দিন থেকে শিহাবকে দেখে কমলা ভয় পায়। বুক দুরুদুরু করে তার।
আজকেও কর্নফ্রেক্স দিতে আসা মাত্রই কমলার বুক দুরুদুরু করতে শুরু করলো। শিহাব বাসি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
গুড মর্নিং কমলা। হাও আর ইউ?
কমলা কোনো উত্তর দিলো না। সে আলগোছে বাটি আর মগ বিছানার পাশের টি টেবিলে রেখে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।
শিহাবের মন খারাপ হয়ে গেলো। মেয়েটা তাকে দেখে ভয় পায়। অথচ ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আজ পর্যন্ত কমলার সাথে উঁচু গলায় কোনো কথা সে বলে নি, ধমক দেওয়া অনেক দূরের বিষয়! শুধু কমলা কেনো কারো সাথেই উচ্চস্বরে কথা বলতে পারে না সে।
শিহাব কফির মগে চুমুক দিলো। কি চমৎকার স্বাদ! শিহাবের মতে, এরকম চমৎকার স্বাদের কফি একমাত্র তার মা রেহণুমা বানাতে পারেন। আর কেউ পারে না। কোথাও পাওয়াও যায় না। ঢাকার বিখ্যাত কফিশপ ক্রিমসন কাপ অথবা নর্দান ক্যাফে তেও না।
শিহাবের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের তালিকায় শুধুমাত্র একজনের নাম আছে। তার মা, রেহণুমা বেগম। সকালে জাগনা পাওয়ার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যাবতীয় যা কাজকর্ম সব মায়ের সাথে আলোচনা করে নেয়। কি রঙের শার্ট পরে অফিসে যাওয়া হবে, স্যালারির কোন অংশ কোন খাতে ব্যবহার করা হবে, দুপুরে কি দিয়ে খাবে ইত্যাদি। এমনকি শিহাবের ব্যাংক একাউন্টের নমিনিও তার মা।
নাস্তা শেষ করার সাথে সাথে কমলা আবার ঘরে ঢুকলো। শিহাব তার দিকে তাঁকিয়ে হাসলো। কমলা গোমড়া মুখে বলল,
খালাম্মা আফনারে ডাকে।
মাকে বলো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
খালাম্মা এক্ষণি যাবার কইছে।
শিহাব ভ্রুঁ কুচকে বলল,
ইম্পোর্ট্যান্ট কিছু?
কমলা উত্তর দিলো,
জানি না।
‘জানি না’ বলে সে এক মূহুর্তও দাঁড়ালো না। যেরকম ফুড়ুৎ করে এসেছিলো, ঠিক তেমনি ফুড়ুৎ করে চলে গেলো।
শিহাবদের বাড়িটা বিশাল বড়। ডুপ্লেক্স। ওপর তলায় তিনটা ঘর। একটি মাস্টার বেডরুম। সেখানে তার মা বাবা থাকে। বাকি দুটো ঘরের একটিতে সে থাকে, অপর ঘরটি তার বোন শিরিনের। অবশ্য শিরিনের ঘর এখন বেশিরভাগ দিন বন্ধ করে রাখা হয়। সপ্তাহে দুই দিন খোলা হয় পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে। শিহাবের বড় বোনের বিয়ে হয়েছে দুই বছর হলো। শুভ কাজ সম্পন্ন হওয়ার তিন মাসের মাথায় তার হাজবেন্ড নিয়াজ গ্রিন কার্ড পেয়ে গেলো। এখন তারা আমেরিকার নিউ জার্সিতে থাকে।
নিচতলার পুরো অংশটুকুই ড্রইংরুম বলা যেতে পারে। দুই সেট সোফা আছে। দুটোই কাঠের। দেয়ালে ৪২ ইঞ্চির টিভি। সদর দরজার দুপাশে দামী মূর্তি রাখা। পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা চারিদিক। শুধু দক্ষিণ দিকটায় রান্না বান্নার যত আয়োজন। রান্নাঘরের চুলায় সারাদিনই কিছু না কিছু চড়ানো থাকে। খাবারের গন্ধে ম ম করে পুরো বাসা। রান্নার জন্য আলাদা লোক আছে। তবুও খুন্তি নেড়েচেড়ে দেওয়া রেহণুমার স্বভাব। প্রতিটি আইটেম বার বার চেকে দেখেন লবণ ঠিক আছে কিনা? ঝালের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলো কিনা? তার ছেলে আবার ঝাল খেতে পারে না।
ফ্রেশ হয়ে শিহাব নিচে নেমে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতেই দেখলো বেতের চেয়ারে তার মা বসে আছেন। মায়ের মুখ গম্ভীর। মনে হচ্ছে প্রচন্ড সিরিয়াস মুডে আছেন। বাবাকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। এসময়টায় তিনি পেপার পড়ায় ব্যস্ত থাকেন। বিছানায় পায়ের ওপর পা তুলে হেলান দিয়ে পেপার পড়েন। পাশে রেডিও চলতে থাকে। শিহাব রেহণুমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
‘মা, আমাকে ডেকেছো?’
‘হু। বোস।’
শিহাব বসলো।
ইম্পোর্ট্যান্ট কোনো কথা মা?
মোটামুটি ইম্পোর্ট্যান্ট।
শিহাব হাসলো।
রেহণুমা আগ্রহ ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
গতকাল মেয়েটাকে দেখে আসলি, ভালো কি মন্দ কিছুই তো বললি না।
মা, তুমি তো জানই আমি ভালো মন্দ বিচার করতে পারি না। তাই বলতে পারছি না।
মেয়েকে তোর পচ্ছন্দ হয়েছে?
হয়েছে।
মেয়ের তোকে পচ্ছন্দ হয়েছে?
জানি না।
মেয়ের তোকে পচ্ছন্দ হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করবি না?
সেরকম সুযোগ পাইনি। বর্ষা আমার সাথে খুবই ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো।
সেই ইন্টারেস্টিং বিষয়টা কি?
ও আমার সাথে চুক্তিতে যেতে চাচ্ছিলো।
কেমন চুক্তি?
চব্বিশ ঘন্টার জন্য বিয়ের চুক্তি।
রেহণুমা চোখে কপালে তুলে বলল,
চব্বিশ ঘণ্টার জন্য বিয়ে?
হু।
তুই কি বলেছিস?
আমি তাকে বলেছি ভেবে দেখবো।
তুই বর্ষাকে বলেছিস ভেবে দেখবি?
হু।
চব্বিশ ঘণ্টার জন্য বিয়ে করায় তোর মত আছে?
আছে।
প্রত্যুত্তরে রেহণুমা কি বলবেন ভেবে পেলেন না। রাগ দমিয়ে শান্ত গলায় তিনি বললেন,
যাও। তোমার ঘরে যাও।
শিহাব বলল,
মা, তুমি কি আমার কথায় রাগ করেছো? প্লিজ, রাগ করো না। এরকম বিয়ে সত্যি সম্ভব। এধরণের বিয়েকে ‘মুতা ম্যারেজ’ বলে। যদিও শিয়া স্কুলের একটা গ্রুপ ছাড়া বাকি ইসলামিক স্কুলগুলো এই জাতীয় বিয়েকে নিষিদ্ধ করেছে। তবে ইরানে এখনো মুতা ম্যারেজ এর প্র্যাকটিস আছে। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং কিন্তু।
এসব কথা তোকে কে বলেছে?
বর্ষা বলেছে।
রেহণুমা উঠে দাঁড়ালেন। তার রাগ ক্রমশ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি চাচ্ছেন না তার রাগ এখন মাত্রা ছাড়িয়ে যাক। তার জন্য এই কথোপকথন বন্ধ করা প্রয়োজন।
শিহাব, এই বিয়ে নিয়ে তোমাকে আর ভাবতে হবে না। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমি এবং তোমার বাবা নিবো। তুমি বরং ঘরে যাও।
ঠিকাছে।
দুপুরে কি দিয়ে খাবে আজকে?
মুরগীর মাংস।
আচ্ছা।
শিহাব আর কোনো কথা বলল না। নিজের ঘরে ফিরে গেলো। সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে ‘ওগি এন্ড দ্যা ককরোচেস’ এর নতুন একটি সিডি কিনে এনেছে। সেটা চালিয়ে দিলো। অফিস যেদিন বন্ধ থাকে সেদিন সে কার্টুন দেখেই দিন কাটায়।
রেডিওতে পুরানো দিনের হিন্দি গান বাজছে। কিশোর কুমারের গাওয়া ‘মেরে মেহবুব কেয়ামাত’। বজলুল সাহেব গানের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে পা নাচাচ্ছেন। সাথে পেপার পড়ছেন।
রেহণুমা এসে কঠিন গলায় বলল,
গান বন্ধ করো।
বজলুল সাহেব গান বন্ধ করলেন। স্ত্রীকে তিনি বেশ ভয় পান। ভয়ার্ত কণ্ঠে বললেন,
কি হয়েছে?
এই মেয়ের খোঁজ তোমার কোন বন্ধুর মাধ্যমে পেয়েছিলে?
কোন মেয়ে?
বর্ষা।
ও। শম্ভু বলেছিলো। ওর বন্ধুর মেয়ে। অনেক ভালো মেয়ে। আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছে। আইনের ছাত্রীরা এমনিতেই অনেক বুদ্ধিমতী হয়।
তোমার বন্ধু শম্ভু যেনো এ বাড়িতে পা না ফেলে।
বজলুল সাহেব নিচু কণ্ঠে শুধালেন,
কি হয়েছে গিন্নি?
তোমার বন্ধুর এনে দেওয়া বুদ্ধিমতী মেয়ে আমাদের ছেলেকে সুন্দর একটি চুক্তিপত্রে সাক্ষর করাতে চেয়েছে।
কিসের চুক্তিপত্র?
চব্বিশ ঘণ্টার জন্য বিয়ের চুক্তিপত্র।
বলো কি? শিহাবকে বলেছে?
হু।
শিহাব কি বলেছে?
ওর বলাবলির কি আছে এখানে? বলাবলির কথা আমাদের। মেয়ের বাড়ি কি তুমি ফোন করবে নাকি আমি করবো? থাক! তোমার মেয়ের বাড়ি ফোন করতে হবে না। তুমি গুছিয়ে কথা বলতে পারো না। আমি ফোন করছি।
বজলুল সাহেব কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। তার আগেই রেহণুমা নিচতলায় নেমে আসলেন। সোফায় বসে টেলিফোনের পাশে রাখা ছোট্ট নোটবুকটা হাতে নিলেন। গভীর মনোযোগের সাথে বর্ষাদের বাড়ির নাম্বার খুঁজতে লাগলেন।
চলবে…