নিভৃতে যতনে
Part_01
Writer_Asfiya_Islam_Jannat
“দেখুন! আমার এই বিয়েতে মত নেই৷ আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি একজনের সাথে গভীর সম্পর্কে লিপ্ত আছি। ইভেন তার অংশ আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে।”
কথাটা বলে আমি হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংকসের স্ট্রো-টা ঘুরাতে থাকি আর আড়চোখে সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকাতে থাকি। বুঝার চেষ্টা করি তার প্রতিক্রিয়া। আমি যে মাত্র তাকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা জানালাম আদৌ কি সে আমার কথা শ্রবণ করেছে কি না সন্দেহ। কেন না সে দিব্বি ফোন গুতিয়েই চলেছে। তার মধ্যে কোন ভাবান্তর এই নেই। মনে তো হচ্ছে যে এই মোবাইল গুতানো ছাড়া এই পৃথিবীতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর দুটো নেই। অথচ তার জায়গায় এখন অন্য কেউ থাকলে নির্ঘাত হার্ট ফেল করতো। আমি এক রাশ বিরক্তি আর হতাশা নিয়ে কোল্ড ডিংক্সের স্ট্রো-টা চিবুতে শুরু করি আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মানুষটির দিকে তাকিয়ে রই। মিনিট দুই-এক এর মাঝেই সে মোবাইলটা অফ করে নিজের পকেটে ভড়ে নেয়। বা হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে উঠে,
— তা আজ হলুদের দিন এসে কথাটা বলার কারণ?
কথাটা শুনে আমি মুখ থেকে স্ট্রো-টা সরিয়ে নেই। একটু নড়েচড়ে বসে চেহেরায় মলিন ভাব এনে বলি,
— সময় ও সুযোগের অভাবে আগে বলতে পারি নি। আজ কোন মতে পার্লারে যাওয়ার নাম করে এইখানে এসেছি আমি।
আমার কথাটা শুনে তার ভ্রু কুটি কুঞ্চিত হয়ে আসে। সে দৃঢ় গলায় বলে,
— তা এখন আমি কি করতে পারি?
— আমি চাই আপনি বিয়েতে নাকচ করে দিন। মানে আপনার পক্ষ থেকে বিয়েটা ভেঙ্গে দিন।
সে ভ্রু কুঁচকে রেখেই জিজ্ঞেস করে,
— আর আমি তা কেন করবো?
তার কথা শুনে আমি বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই। এমন এক ফালতু প্রশ্ন করার জন্য মনে মনে শ’খানেক গালিও দিয়ে ফেলি।কর্কশ কন্ঠে বলে উঠি,
— আপনি কি বুঝতে পারছেন না ব্যাপারটা? আমি অন্য কাউকে ভালবাসি। আপনার ধারণারও বাইরে যে আমাদের সম্পর্কটা আসলে কতটা গভীর।
— সেটা কি আমার ধারণা করার কথা?
— না! আপনার ধারণা করার কথা না। কিন্তু তাও আমি আপনাকে ধারণা দিতে চাচ্ছি৷ আমার ফ্যামিলিকে আমার সম্পর্কে জানানোর আগেই তারা আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে এবং তখন চেয়েও আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না। সবকিছু এত দ্রুত হচ্ছিল যে আমার কি করা উচিৎ তা বুঝে উঠতে সময় লেগে যায় আর বিষয়টা এত দূর এগিয়ে যায়।
কথাটা বলে আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। মনে মনে, দোয়া-দরুদ পড়তে থাকলাম যাতে ব্যাটা আমার কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নেয়। কিন্তু হ্যায় ভাগ্য! সে তো আমার দিকে এখনো ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন সে আমার কথায় বিন্দু মাত্র বিশ্বাস করে নি। সে কিছুক্ষণ আমার মুখ পানে চেয়ে থেকে হঠাৎ ‘চ’ শব্দ উচ্চারণের মত করে উঠে। বা হাত দিয়ে নিজের কপালের কিনারা ঘষতে ঘষতে বলে,
— অহ আচ্ছা।
আমি তার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলি,
— অহ আচ্ছা কি?
সে হঠাৎ সোজা হয়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
— তা তোমার এই প্রেমিক পুরুষের নাম কি?
তার এমন প্রশ্ন শুনে আমি ভড়কে খেয়ে যাই। আমি আমতা আমতা সুরে বলি,
— ইয়ে মানে..
হঠাৎই যেন মস্তিষ্ক একদম ফাঁকা হয়ে যায়। মনের মধ্যে হাজার জোর দিয়েও কোন ভালো নাম খুঁজে বের করতে পারলাম না। হঠাৎ একটা ওয়েটারের নেম প্লেটের দিকে নজর যেতেই আমি চট করে বলে উঠি,
— সাব্বির! আমার প্রেমিক পুরুষের নাম সাব্বির।
কথা বলে একটু হাসার চেষ্টা করলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে,
— অহহ আচ্ছা। তা তোমার কি আর কিছু বলার আছে?
আমি সোজাসাপটা উত্তর দিয়ে বলি,
— না নেই।
— ওকে দ্যান। আমার কাজ আছে বায়।
বলেই সে উঠতেই নিলে আমি চট জলদি বলে উঠি,
— আরেহ আমার উত্তর? দেখুন আপনি কিন্তু আমার শেষ ভরসা। আপনার উপর কিন্তু এখন চার চারটা জীবন নির্ভর করছে৷ দেখেন এই বিয়ে হলে কিন্তু আমি আপনি কেউ এই সুখী হবো না৷ তার উপর আমার করা এই পাপের দায়ভার আপনি কেন নিবেন?
সে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
— কে বলেছে তোমাকে আমি কোন পাপের দায়ভার নিচ্ছি?
কথাটা শুনে আমি একটু উৎফুল্ল সুরেই বলে উঠি,
— তার মানে আপনি এই বিয়ে করছেন না তাই না?
সে বাঁকা হেসে বলে,
— বিকেলে উত্তরটা পেয়ে যাবে।
আমি চটজলদি বলে উঠি,
— আপনার নিকট আরেকটা রিকুয়েষ্ট। আমাদের যে দেখা হয়েছে আর এতক্ষণ যাবৎ ধরে যা যা কথা হয়েছে তা যেন আমার বাসার কেউ না জানে।
সে আবার তার সেই বিখ্যাত ভ্রু কুঁচকানো দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রয়। অতঃপর ছোট করে ‘হুম’ বলে সে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে চলে যায় আর আমি তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেই। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে দীর্ঘ হাসি। অতঃপর মনে মনে বলে উঠি,
— কি ভাব রে ভাই। ভাব দেখলে বাঁচি না।
কথাটা,ভেবে যেই না ভেংচি কাটতে যাব ঠিক এমন সময় হৃদি আপু আমার পিঠে এক চাপড় মেরে বলে,
— এই মেয়ে! এই বাচ্চা কোথ থেকে লডিং হলো?
আমি চোখ মুখ কুঁচকে হৃদিপুর পিঠেও চাপড় মেরে বলি,
— প্লে-স্টোর থেকে। তুমি উৎসাহ দিলে ঠুস করে ডাউনলোড ও করে ফেলবো।
হৃদিপু আমার পাশে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— আস্তাগফিরুল্লাহ!
কথাটা শুনে আমি হেসে ফেলি। আমার সাথে তাল মিলিয়ে হৃদিপুও হেসে উঠে। কিছুক্ষণ পর হৃদিপু বলে উঠে,
— তা কি মনে হয়? বিয়েটা ভাঙ্গবে তো?
আমি নিশ্চিন্তে বলি,
— না ভেঙ্গে যাবে কই?
হৃদিপু একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বলেন,
— কিন্তু পোলা তো কোন রিয়েকশনই দিল না। আমার জানা মতে হলুদের দিন এসে নিজের হবু বউয়ের মুখ থেকে এইসব শুনার পর কোন ছেলের এই ঠিক থাকার কথা না কিন্তু এইখানে তো সে ঠান্ডা মাথায় বসে ছিল। আচরণ অতি স্বাভাবিক ছিল। তাই কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে।
— আরেহ ধুর! পোলা হয়তো শোকডের ঠ্যালায় কোমাতে চলে গেসিল। তাই রিয়েকশন দিতে ভুলে গেসিল হয়তো। হয় এমন ব্যাপার না।
— বাই দ্যা রাস্তা পোলাটা কিন্তু কিউট ছিল সিয়া। শ্যামলা হলেও দেখতে কিন্তু সেই। চাইলে বিয়েতে রাজী হলেই পারতি।
কথাটা শুনে আমি রেগে গিয়ে বলি,
— আপু তুমি জেনে শুনে এইসব কেন বলছো? তুমি ভালো করেই জানো আমি এখন বিয়ে করতে রাজী না। এই বিয়ে নামক প্যারায় আমি এখন জড়াতে চাই না। তার উপর আমার যে কিছু মানুষদের প্রুভ করার আছে।
হৃদিপু আমার একপাশ জড়িয়ে ধরে বলে,
— আই নো মাই বইনা। চিন্তা করিস না সব ঠিক হবে। শুধু এখন আল্লাহ এর কাছে দোয়া কর পোলাটা যাতে বাসায় কিছু না জানায়। নাহলে চাচ্চু তোকে…
আমি হৃদিপুকে বলতে না দিয়ে বলি,
— তেমন কিছুই হবে না আপু। আর যদি হয়ও তাহলে বড়োজোর কি হবে? মারবে বা বকবে। ব্যাপার না।
— মন খারাপ করিস না।
— করছিও না।
হৃদিপু আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোন বেজে উঠে। হৃদিপু ফোনের দিকে তাকাতেই জিভ কেটে বলে,
— উপস! চাচী আবার ফোন দিয়েছে। এই সিয়া চল! চল! এইভাবেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
আমি ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বলি,
— হুম চলো।
______________________
“তোমার ভাঙ্গা গাড়িতে আমি যাব না
কারোর ঘরের ঘরণী আমি হব না
করব না তো কোনদিন ও বিয়ে”
বাসায় ঢুকতে ঢুকতে এই গানটা গুন গুন করে গাইছিলাম ঠিক এমন সময় কর্কশ এক কন্ঠে কানে এসে বারি খায়।
— বিয়া করবি না তো কি আমার পোলার ঘাড়ে বইসা বইসা ওর জীবন নড়ক করবি? আমার সংসার তো ধ্বংস করসোস এই, এইবার তো রেহাই দে আমগো। আর কত করবি? এইবার বিদায় হ।
কথাটা শুনে আমি থমকে যাই। পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি সোফায় পায়ের উপর পা তুলে নাসরিন বেগম পান কাটছেন আর কর্কশ কন্ঠে আমায় কথাগুলো বলছেন। আমি দুই পা এগুতেই নিলেই হৃদিপু আমার হাত টেনে ধরে। আমি একবার হৃদিপুর দিকে তাকিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলি,
— কেন আমাকে দেখি আপনার পিত্তি জ্বলে নাকি? জ্বলে বলুন তাতে আরেকটু ঘি ঢেলে দেই। আর এইটা আমারও বাড়ি আর আমার বাড়িতে আমি থাকবো কিনা সেটা আমার ব্যাপার।
নাসরিন বেগম তেতে উঠে বলে,
— মুখে মুখে আবার কথা কস। দেইখা যা ওসমান! দেইখা যা! তোর মাইয়ার কান্ড দেখে যা। অপয়া তো ছিল এখন নির্লজ্জ,বেহাইয়াও হইসে।
নাসরিন বেগমের চিৎকার শুনে রুম থেকে আম্মু, রেহানা চাচী আর মালিহা ফুপু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। রুম থেকে বড় বাবাও বেড়িয়ে আসে। তার পিছু পিছুই নিজের চশমা ঠিক করতে করতে বাবা বেড়িয়ে আসে। সবাই একসাথে জড়ো হতেই বাবা কঠোর গলায় নাসরিন বেগমকে জিজ্ঞেস করে,
— মা কি হয়েছে? চেঁচাচ্ছ কেন?
নাসরিন বেগম ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে বলে,
— দেখোস না তোর মাইয়া আমার লগে কেমনে কথা কয়। আমার মুখে মুখে তর্ক করে।
বাবা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
— এইসব কি?
আমি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। হৃদিপু পিছন দিক দিয়ে আমায় ইশারা করতে থাকে কথা বলার জন্য কিন্তু আমি আগের ন্যায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রই। বাবা আবার বলে উঠে,
— কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমায়। এইসব কি হচ্ছে?
আমি তাও কোন কথা বলছি না। নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছি। তা দেখে বাবা রেগে যায় আর হুংকার দিয়ে আমার নাম উচ্চারণ করে উঠেন,
— সিয়াশা! কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি তোমায়৷
আমি এইবার বাবার দিকে ঘুরে স্মিত হেসে বলি,
— যে বিচার দিয়েছে তার থেকেই না হয় পুরো ঘটনাটা শুনে নিন।
বলেই আমি রুমের দিকে এগুতে থাকি৷ আমার পিছু পিছু হৃদিপুও চলে আসে৷ এরই মধ্যে পিছন থেকে নাসরিন বেগম বলে উঠে,
— দেখছিস মাইয়া কতটা নির্লজ্জ হইসে। বড় গো সামনে কেমনে কথায় কয়। এই অপয়াকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায় কর। ছিঃ ছিঃ কি দিন আইলো গো। আগে দেখতাম বিয়ার দিন আইলে মাইয়ারা কাইন্দা কুল পায় না আর এই নির্লজ্জ মাইয়া রে দেখো।
বড় বাবা বলে উঠে,
— আহা মা! থাম তো। এই রেহানা যাও মায়ের জন্য এক গ্লাস লেবু শরবত নিয়ে আসো।
রেহানা চাচী দৌঁড়ে চলে যায় রান্নাঘরে দিকে লেবু পানি আনার জন্য। রুমে ঢুকার আগে শুধু বাবার কথাটা শুনতে পারলাম,
— এই মেয়েকে বিদায় করতে পারলে বাঁচি। রোজ রোজ আর তামাশা ভালো লাগে না।
আমি রুমে ঢুকে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করে দুই হাত দিয়ে মাথা চেঁপে ধরি। মাথায় আপাতত আগুন ধরে আছে। সবকিছু এখন ভাঙ্গচুর করতে পারলে শান্তি হতো। হৃদিপু আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। শান্ত কন্ঠে বলে,
— তুই কেন দাদীর সাথে লাগতে গেলি আজ? তুই জানিস না সে কেমন?
আমি চোখ খুলে হৃদিপুর দিকে তাকিয়ে বলি,
— আর সে যে আমায় বললো তার বেলায় কিছু না? একটা মানুষ আর কত সহ্য করতে পারে আপু? তুমি বলো!
হৃদিপু কিছু বলতে যাবে তার আগেই মা রুমে এসে বলে,
— সহ্য না হলেও করতে হবে তোকে। আর তুই কেন বার বার তাদের কথা বলার সুযোগ করে দিস বলতো?
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলি,
— তাদের মুখের বলি কি আর নতুন করে ফুটেছে নাকি?
মা আমার পায়ের কাছে বসে বলে,
— যেভাবে যা চলছে তা চলতে দে না। কথা কেন বলতে যাস তুই? তুই জানিস না তুই একটা বললে তোকে দশটা কথা শুনানো হবে।
— তাই বলে কি চুপ করে থাক নাকি?
— যদি থাকতে হয় তাহলে থাকবি।
আমি এইবার মলিন মুখ করে বলি,
— মা তুমিও এখন আমায় দূরে সরিয়ে দিচ্ছ?
মা আলতো করে আমার পায়ে বারি দিয়ে বলে,
— ধুর পাগল! আমি কেন তোকে দূরে সরিয়ে দিব। আমি তো শুধু তোকে বুঝাচ্ছি। মা তো সবসময় তোর ভালোই চায় রে৷ তাই বলছি চুপ থাকতে। আর তো একদিন। এরপর তো চলেই যাবি।
আমি মুখ ফোঁসকে বলে উঠি,
— আর যদি না যাই?
কথা বলতেই হৃদিপু আমার হাত চেপে ধরে। আমি একবার আপুর দিকে তাকিয়ে মায়ের দিকে তাকাই। মা হালকা হেসে বলে,
— তখনেরটা তখন দেখা যাবে৷ তা তুই এখন রেস্ট নে। বিকেলে পার্লারের মেয়েরা আসবে তোকে সাজাতে।
কথাটা বলে মা রুম থেকে বেরিয়ে যান। আর আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আনমনে বলি,
— বিয়েটা তো হচ্ছে না মা।
_______________________
বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা হতে এসেছে। বাসার পরিবেশ এখনো সর্বশান্ত। আমি রুমের ভিতর পায়চারী করছি আর হৃদিপু বিছানায় বসে নখ কামড়াচ্ছে। আমি আর থাকতে না পেরে হৃদিপুকে বলে উঠি,
— আপু তুমি প্লিজ একবার বাইরে গিয়ে দেখে আসবে? এতক্ষণে তো বাসায় তোলপাড় লেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু কিছু হচ্ছে না কেন?
হৃদিপু তেতে উঠে বলে,
— এই নিয়ে পাঁচবার ঘুরে আসছি। কোন খোঁজ নাই। আবার বলছিস যেতে তুই? বাইরে যে কত পোলাপান আছে জানিস? চাচ্চুর আমায় এইভাবে ঘুরঘুর করতে দেখলে আমার ইন্না-লিল্লাহ ভাই।
আমি এইবার বিপাকে পড়ে যাই। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ঠিক এমন সময় দরজায় কড়া আঘাত পরে। হৃদিপু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলতে হুর হুর করে দুই-তিনটা মেয়ে রুমের ভিতর ঢুকে পরে এবং তার পিছু পিছুই আম্মু আর রেহানা চাচী রুমে এসে হাজির হয়। তাদের হাতে সাজসজ্জার ডালা। মা আমার সামনে এসে হলুদের লেহেঙ্গাটা ধরিয়ে দিয়ে বলে,
— যা তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে। একটু পরই সকল মেহমানরা আসতে শুরু করবে।
চলবে