নিরবতায়_হৃদয়_কোনে,০৮,০৯

0
248

#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে,০৮,০৯
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৮

ভাদ্রমাসের পূর্ণিমা, আকাশে মস্ত বড় রাজকীয় চাঁদের ঝলমলে আলো। রাত গভীর হচ্ছে, কিন্তু ধরনীতে অন্ধকারের ছিটেফোঁটা ও নেই। অপরূপ সৌন্দর্য্যের উজ্জ্বল রাতে ঘুমে তলায়নি নির্ভীক। ফোন হাতে নিয়ে বিরতিহীন ভাবে পায়চারি করছে। কোথাও যদি চাকরির দেখা মেলে। অনেকক্ষণ পর পরিচিত নাম্বার রিসিভ হতেই একটু আশার আলো দেখলো সে।
কিন্তু তার সমস্ত আশাকে নিরাশা করে চূর্ণ করে দিলো অপরূপাশের ব্যক্তিটি।
ভেবেছিলো মিতালীকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে, কিন্তু পারলোনা।
ফোন রেখে আবার ও পায়চারি করলো। ভেবেচিন্তে লম্বা শ্বাস নিয়ে আরও একটি নাম্বারে ডায়াল করলো। তৃতীয়বার রিসিভ হলো।
সালাম দিলো নির্ভীক।
ওপাশ থেকে বেশ ভারী কন্ঠস্বর শোনা গেলো। রাশভারি গলায় সালামের জবাব দিলেন লোকটি। স্বাভাবিক বাক্যালপ শেষ করেই নমনীয় হলো নির্ভীক। ছোট স্বরে ইতস্তত করে বলল,
-“আঙ্কেল আপনার স্কুলে কোনো শিক্ষক কোটা খালি আছে?”

ভদ্রলোক নির্ভীকের মায়ের মামাতো ভাই। তার পরিচালনায় একটা কিন্ডারগার্টেন চলে।
তিনি উৎফুল্ল মেজাজে বললেন,
-“তুমি চাকরি করবে না-কি? আমরা কিন্তু দক্ষ শিক্ষক খুঁজছি।”

নির্ভীকের ঠোঁটে এক চিলতে স্বস্তির হাসি দেখা গেলো। ভদ্রলোককে বলতে নিচ্ছিলো “চাকরি আমার বন্ধুর জন্য”।
তার পূর্বেই ভদ্রলোক আবারও বললেন,
-” তোমার পরিচিত দক্ষ কেউ থাকলে বলতে পারো। আমাদের শিক্ষক কোটা খালি আছে।”

এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। দারুণ এক লো*ভনীয় অফার অনায়াসে লুফে নিলো নির্ভীক। সে সিদ্ধান্ত নিলো চাকরি সে ও করবে। তখন আর মাঝখানে খুব বেশি দূরত্ব আসবেনা। সে মিতালীর কথা বলে দিলো।
-“আঙ্কেল আমার একজন বন্ধু আছে, ভালো স্টুডেন্ট। ও কে ও নিয়ে আসি?”

ভদ্রলোক খুশি হয়ে বললেন,”বেশ, তাহলে কালই দুজনে একবার এসো।”

-“জি আঙ্কেল।”
বিনয়ের সাথে ফোন রাখলো নির্ভীক। পরপরই ফোন লাগালো মিতালীর নাম্বারে। দ্রুতই ফোন রিসিভ হলো।
মিতালী বলল,
-“ফোন দিয়েছিস কোন সুখে?”

একটু চুপ থেকে নির্ভীক বলল,
-“মন খা*রা*প?”

মিতালী বিরক্ত হয়ে বলল,
-“মন খা*রা*প হলে কী করবি?”

-“নিমিষেই যাদু করে তোর মন ভালো করে দেবো।”

মিতালী আরও একটু বিরক্তিবোধ করলো। বলল,
-“ওহ্ প্লিজ! তোর কবিতা শুনে এই মুহূর্তে আমার মন ভালো হবেনা।”

নির্ভীক বলল,
-“আমি মজা করার মুডে নেই। সত্যিই তোর মন ভালো করার ক্ষমতা এই মুহূর্তে আমার আছে।”

-“আচ্ছা, দেখি কেমন মন ভালো করিস।”

মিতালীকে একটু চমকে দিয়ে বলল,
-“চাকরি ম্যানেজ। তুই আর আমি, দুজনেই একসাথে চাকরি করছি।”

ভীষণ অবাক হলো মিতালী। তার হতভম্ব ভাব কাটলোনা। একইভাবে বোঝার চেষ্টা করলো।
-“মানে!”

একটু একটু করে সন্ধ্যা থেকে একটু আগ পর্যন্ত নিজের কর্মসাধনের কথা জানাতেই মিতালী বুঝতে পারলো। সত্যিই তার মন ভালো হয়ে গেলো। মিষ্টি হেসে বলল,
-“সত্যিই তো! যাদু করে আমার মন ভালো করে দিলি।
এজন্য তোর একটা উপহার তোলা রইলো।”

নির্ভীক বলে বসলো,
-“উপহার চুজ করার অধিকারটা কিন্তু আমিই নিলাম। একদিন চেয়ে বসবো কিন্তু।”

মিতালী হেসে ফেললো। রিনিঝিনি ঝংকার তুললো নির্ভীকের কর্ণধারে। একবার চোখের তৃষ্ণা মেটানোর লালসা জাগলো মনে।
মিতালী মিষ্টি করে আবদারের সুরে বলল,
-“এবার একটা কবিতা শোনা।”

নির্ভীক কটাক্ষ করে বলল,
-“একটু আগে কী বলেছিলি, আমি কি ভুলে গিয়েছি?”

-“প্লিজ!”

এমন সুমিষ্ট স্বরের আহ্লাদী আবদার না রেখে পারলোনা নির্ভীক। গলায় কবিতার টা*ন ধরলো।

“কোথায় পেয়েছ তুমি এই হাসি, প্রাণ কেড়ে
নেয়া এই দুটি চোখ-
কোন বনহরিণীর কাছে পেলে এই চকিত চাহনি!
এই চোখ দেখে আমি বহুদিন খুঁজেছি উপমা
কখনো সবুজ বন, কখোন উদার আকাশ-
কোনদিন জলভরা মেঘ তোমার চোখের সাথে
মনে মনে মিলিয়েছি আমি,
কিন্তু তোমার চোখের কাছে দেখেছি এসব কিছুই স্তিমিত।”
“মহাদেব সাহা”

মিতালী ঢিমে স্বরে প্রশ্ন করলো,
-“কবিতাটি আমার জন্য?”

শীতল কন্ঠে জবাব আসলো,
-“শুধু কি এই কবিতাটিই তোর জন্য মনে হলো? আর কোনোটি মনে হয়নি?”

চমকে উঠলো মিতালী। গভীর অন্ধত্বের ঘোর থেকে বেরিয়ে সুর পাল্টে ফেললো। চটপটে স্বরে বলল,
-“কিজানি, আমি অতটা মর্মার্থ ধরতে পারিনা। তা কাল কখন বের হচ্ছি আমরা?”

নির্ভীক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেয়েটা যেনো বুঝেও বুঝলোনা। নাকি বুঝতে চায়না।
সময়টা বলেই বিদায় নিলো সে।
সেদিনের পাশাপাশি তোলা দুজনকে একই ফ্রেমে বন্দী দেখে না পাওয়ার তৃপ্তি মেটাতে চাইলো। একবুক প্রেম নিয়ে দু’ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে আওড়ে নিলো মনঃ কথন।

“তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের
মতো মনোরম
একটি তুচ্ছ বাক্যালাপ অন্তহীন নদীর কল্লোল,
তোমার একটুখানি হাসি অর্থ
এককোটি বছর জ্যোৎস্নারাত
তুমি যখন চলে যাও পৃথিবীতে আবার হিমযুগ নেমে আসে।”

——মহাদেব সাহা।

★★★

সাদামাটা সুতোয় গাঁথা জামা গায়ে জড়িয়ে দু’পায়ে চলনসই একজোড়া জুতা পরে বের হলো মিতালী। যাওয়ার আগে মাকে হু*ম*কি দিতে ভুললোনা। বলে গেলো,
-“তুমি যদি এদিকওদিক গিয়েছো আমি শুনেছি, তবে আজকের পর আর আমার দেখা পাবেনা।”

রোগ-শোকে বার্ধক্য থলথলে চামড়ার শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন রোজী বেগম। মেয়ের কথার নড়চড় করার সাহস পেলেননা। তবে চিন্তা ও গেলোনা। মিতালী চাকরির সুসংবাদ মাকে দিতে ভুললোনা। একটু স্বস্তি পেলেন রোজী বেগম।

মাহা টিউশন শেষ করে স্কুলের জন্য তৈরী হয়ে নিলো। দুবোন একসাথেই বের হলো।
নির্ভীকের সাথে দেখা হতেই তারা আলাদা হয়ে গেলো। মাহা এগোলো নিজ স্কুলের পথ ধরে।
নির্ভীক রিকশা ডাকলো। পাশাপাশি চড়ে তার ভীষণ প্রেম প্রেম পেলো। এই শরতের দিনে সে ঠকঠক করা ঠান্ডায় কেঁপে উঠলো।
পাশ থেকে মিতালী টের পেলো নির্ভীকের নিমেষহীন উচাটন। চট করে তার একখানা হাত মুড়িয়ে নিলো নিজের হাতের মুঠোয়। অবলীলায় ত্রস্তব্যস্ত ভাবে নির্ভীকের হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভীতিকর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোর হাত এমন ঠান্ডা হয়ে আছে কেন? এমন কাঁপছিস’ই বা কেন?”

নিথর হয়ে আসা গভীর স্বরে নির্ভীক বলল,
-“আমার প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে। এই মুহূর্তে একটা চাদর লাগবে।”

মিতালীর ললাটে চিন্তার গভীর ছাপ পড়লো। এমুহূর্তে শরীরে জড়ানো ওড়না ছাড়া বাড়তি একটুকরো কাপড় তার কাছে নেই। তাবে কী করে নির্ভীকের শীত নিবারন করবে?
নির্ভীক নির্দ্বিধায় চেয়ে রইলো তার প্রতিটি অস্থিরতা মুহূর্ত। মিতালীকে চিন্তা মুক্ত করতেই সে রিকশা থামিয়ে নেমে পড়লো। হুট করে নির্ভীকের এমন নেমে পড়ায় ভড়কে গেলো মিতালী।
নির্ভীক হেসে বলল,
-“চা খেলে ঠিক হয়ে যাবে। তুই এখানে বস, আমি চা নিয়ে আসছি।”

মিতালীর কথা না শুনেই চা নিতে চলে গেলো নির্ভীক। রিকশাওয়ালা মামা বিরক্ত হলেন। তার বিরক্ত হওয়া সাজে বটে। এভাবে মাঝরাস্তায় রিকশা থামিয়ে কে দাঁড়িয়ে থাকবে?
উনাকে বেশি বিরক্ত না করে ত্রস্ত ভঙ্গিতে ফিরলো নির্ভীক। হাতে দুটো ওয়ান টাইম কাপ। রিকশায় চড়ে বসলো। চায়ে চুমুক দিয়েই মিতালী জিজ্ঞেস করলো,
-“এখন কেমন লাগছে?”

-“ভালো লাগছে।”
ছোট করে উত্তর দিয়ে মনে মনে বলল নির্ভীক,
-“যদি তুমি জানতে কী আমার অসুখ,
তবে বুকের খাঁচায় বন্দী করে বলতে
কাটুক সময় এভাবেই কাটুক।”

মিতালী নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো একবার নির্ভীকের হাত ছুঁয়ে দিলো।
একটু কেঁপে উঠেই স্বাভাবিক হলো নির্ভীক।
স্কুলে পৌঁছে ভাড়া মেটালো। সরাসরি অফিস কক্ষের সামনে গিয়ে স্থির হয়ে সর্ব প্রথম অনুমতি চাইলো। অনুমতি নিয়ে দুজনে ভেতরে প্রবেশ করলো।
হারুনর রশীদ কথা বলেই দুজনকে দুটো ক্লাসে পাঠালেন।
এখান থেকেই তাদের যাত্রা শুরু।

★★★

আকাশে মেঘ করেছে, ভারী বর্ষনের পূর্বাভাস। ঝড়ো বাতাসে আকাশ রঙের ইউনিফর্ম ভেসে বেড়ালো। বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে খাটো করে নিলো মাহা। বাড়ি ফেরার সময় এমন আবহাওয়ার মানে কি?

-“ইশরাক তাড়াতাড়ি চল।”

মাহা আশেপাশে তাকালো। কে কথা বললো?
তার থেকে কিছুদূর দুটো ছেলেকে এগিয়ে আসতে দেখলো দ্রুত পায়ে। মুহূর্তেই সকল বিরক্তি মুগ্ধতায় রূপ নিলো। স্থির হলো চোখজোড়া। গ্রামে পরিপূর্ণ আধুনিকতার বেশধারী যুবককে দেখে কিশোরী মনে আবেগ জন্মালো। দৃষ্টি ফেরালোনা সে, চেয়ে গেলো অবিরাম।

বন্ধুর কথায় সায় জানিয়ে দ্রুত এগিয়ে গেলো ইশরাক। কতবছর পর সবার সাথে দেখা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে আকাশের এমন মেঘ মেঘ বদন দেখতে হবে, কে জানতো?
আশেপাশে না তাকিয়ে প্রস্থান করলো। চতুর্দিকে দৃষ্টি ফেরালে হয়তো নজরে পড়তো কারো সুপ্ত গভীরতম চোখে সে এক ঢোক নে*শা পানীয় হয়ে রইলো।

লোকটি চক্ষু অগোচরে হারিয়ে গেলো, কিন্তু মাহার পা জোড়া এগোলোনা। অন্তঃকোণে ঘনঘন উচাটন হলো। অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনে কেঁপে কেঁপে উঠলো সে।
বাড়ি ফিরে নিজেকে ঘরবন্দী করলো। বুকের নিচে চাপা পড়লো নিরীহ বালিশ। চিনচিনে ব্যথাভাব কমাতে থম ধরে পড়ে রইলো। তার কিছু ভালোলাগছেনা। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা থাকলেও খাওয়ার ইচ্ছে হলোনা। তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কী এই অযাচিত কান্নার কারণ? সে জানেনা। শুধু জানে তার কাঁদা উচিত। অন্তঃকরণে প্রজাতির দল সুখ সুখ পাখা ঝাপটালো।
বুকের ভেতরে একদল অনুভূতিরা হৈচৈ করে বলল “তাকে আরও একবার দেখি, অনন্তকাল দেখি।”

★★★

প্রথম ক্লাস খুব ভালো কা*ট*লো মিতালীর। স্টুডেন্ট অল্পস্বল্প। যতটুকু বুঝতে পারলো তাদের শ্রম দিতে হবে। এই ছোট বাচ্চাদের গড়ে তোলার দায়িত্ব তাদের।
রান্না বসিয়ে গোসল নিলো সে। গ্রামাঞ্চল হলেও একটা বিশেষ সুবিধা হলো তাদের এলাকায় বাড়ি বাড়ি গ্যাস লাইনের ব্যবস্থা আছে। গোসল নিয়ে চুলায় আলুভাজি বসিয়ে দিলো। অবশিষ্ট থাকলে সকালে সবাই মিলে রুটির সাথে খাওয়া যাবে। আজই মাহবুবের দিকে খাওয়ার পনেরোতম দিন। ভাত নিয়ে রুমে ফিরলো। আসার পর থেকেই মাহাকে কেমন ঘাপটি মে*রে শুয়ে থাকতে দেখে কপালে, গলায় হাত ছুঁয়ে দেখলো। নাহ্ জ্বর-টর আসেনি। নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“কী হয়েছে মাহা? খা*রা*প লাগছে?”

মাহা ব্যাপারটা লুকিয়ে গেলো। মৃদু শব্দে বলল,
-“আমার বুকের ভেতর আইঢাই করছে, পেট গুড়গুড় করছে। বোধ করি আমি ম*রে-টরে যাবো।”

মিতালী ব্যস্ত হয়ে বলল,
-“কিছু নিয়ে ভ*য় পেয়েছিস, সোনা? বল আমাকে কেন খা*রা*প লাগছে?”

গাল থেকে মিতালীর হাত সরিয়ে দিয়ে মাহা চোখ বুঁজে ফেললো। ধীর স্বরে বলল,
-“এখন একটু ভালোলাগছে, আমায় এখন বিরক্ত করোনা।”

মিতালী চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো।
রাতে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘর থেকে বের হলো। সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে। মিতালী সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। মাহবুব কিছু নিয়ে হয়তো রে*গে আছে। তার রা*গ সুঁচ হয়ে বাবা-মাকে আ*ঘা*ত করতে ভুললোনা।
দুর্বৃত্ত গলায় বলল,
-“এই কু*ফা গুলার খাওন আইতে না আইতেই আমার রোজগার কইমা গেলো। একের পর এক বি*প*দ মাথায় চাইপ্পা বসে। ফকিন্নির জাত।”

ভাতের প্লেটে ঝোলে মাখোমাখো হাত। লোকমা উঠছেনা হাতে, তবে চোখের পানি টপটপ করে ভাতের প্লেটে ঠিকই স্থান নিচ্ছে৷ বাবা মায়ের এই করুণ কান্না মিতালীর ভেতরটা নাড়িয়ে দিলো। দুমড়েমুচড়ে উঠলো অন্তঃস্থল। তার গলার স্বর চওড়া হলো।
-“কোন সাহসে আব্বা আর মাকে তুমি কথা শোনাচ্ছো? তোমাকে তো কেউ বলেনি তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে।”

মাহার শরীর ও আজ প্রচন্ড রা*গে থরথর করে কেঁপে উঠলো। উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বলল,
-“খোদার কসম, আমার আব্বা আর মায়ের চোখ থেকে যদি দ্বিতীয়বার অশ্রু ঝরে, তোমায় র*ক্ত*ক্ত করতে আমার সময় লাগবেনা।”
মাহবুব, পিয়ালী দুজনেই আহত বাঘের মতো গর্জে উঠলো। মিতালী আজ বাঁধা দিলোনা মাহাকে। কথা বলতে দিলো। চুপ থাকাকে এরা দুর্বলতা মনে করে বারবার আ*ঘা*ত করতে আসে। খুব শীঘ্রই এর একটা বিহীত হবে। সন্তর্পণে ফোনের রেকর্ড অপশন অন করে নেয় সে। এরা মি*থ্যা*বা*দী। আজ কী বলেছে, আগামীকাল তা ভুলে যাবে। শক্ত প্রমাণ না থাকলে ধূ*র্ত শেয়ালের মতো ট*প*কা*তে সময় লাগবেনা।
হঠাৎ মাহবুবের হাত থেকে একখানা জুতা এসে পড়লো মাহার শরীরে।

#চলবে…..

#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৯

অঝোর ধারায় তুমুল বৃষ্টি, ভারী বাতাসের সাথে টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টির ছন্দ। প্রকৃতিতে শীত শীত ভাব।
উত্তেজিত মাহবুব আ*ক্রো*শ ফে*টে পড়ে। মুখেমুখে ত*র্ক করা মাহাকে পায়ের জুতা খুলে ছুঁড়ে মা*রে।
আচমকা আক্রমণে অনেকটা ব্যথা পেলো মাহা। এবার খেঁকিয়ে উঠলেন মতিন সাহেব। বাবা – ছেলের মাঝে পিয়ালী যোগ হলো। আর স্থির থাকতে পারলোনা মিতালী। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। সেই সীমা যখন অতিক্রম হয়ে যায়, তখন চুপ থাকা যায়না। পিয়ালীর সাথে এক কথা দু’কথা করে হাতাহাতি লেগে গেলো। মাহবুব দু’বোনের গায়েই হাত তু*ল*লো। রোজী বেগম ধরতে আসলে তাকেও ছাড় দিলোনা। স*জো*রে ধা*ক্কা মে*রে দূরে সরিয়ে দিলো। সি*ট*কে পড়লো রোজী বেগম। পুরো বাড়িতে হাহাকার, শো*কে*র ছায়া। এমন পরিস্থিতিতে বুকে ব্যথা উঠলো মতিন সাহেবের। বুক চা*প*ড়ে পড়ে গে*লে*ন।

ভারী বর্ষনের ঝুমঝুমি শব্দে বাড়ির বাইরে পর্যন্ত শব্দ গেলোনা। এক পর্যায়ে থামলো নি*র্ম*ম অত্যা*চার। সবাই ব্যস্ত হলো মতিন সাহেবকে নিয়ে।

★★★

গাছের ফাঁকফোকর গলে সূর্যের টুকরো আলো ঝলমলিয়ে পড়লো ধরণিতলে। গতরাতের বৃষ্টির পানি ঝপাৎ করে শুষে নিলো বালুযুক্ত মাটি। নাস্তা সে*রে*ই বাড়ি থেকে বের হলো মিতালী। আজ শুক্রবার হওয়ায় স্কুল যাওয়ার তাড়া নেই। চরণ জোড়া চেয়ারম্যান বাড়ির চৌকাঠ মাড়ালো। সবাই নাস্তার টেবিলে। সবার আগে নির্ভীকের চোখ পড়লো।
হঠাৎ মিতালীকে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
-“কিরে, তুই এখন?”

নির্ভীকের কথায় একে একে সবার দৃষ্টি মিতালীর উপর পড়লো। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
-“আরে মিতালী, আসো আসো।”

মিতালী হালকা হেসে ভেতরে প্রবেশ করলো। বলল,
-“আপনার কাছেই এসেছি চাচা। কথা ছিলো।”

ইশরাকের মা বললেন,
-“বসো, সবার লগে নাস্তা করো।”

মিতালী বলল,
-“আমি নাস্তা করেই বেরিয়েছি, চাচি।”

ইশরাক খানিক অবাক হলো। মেয়েটাকে কত ছোট দেখে গিয়েছিলো। নির্ভীকের সাথেই স্কুলে যেতে দেখতো। অথচ সেই কিশোরী মেয়ে এখন পরিণত এক যুবতী। কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজের দেখা মেলে। আলতো হেসে জিজ্ঞেস করলো,
-“এটা সেই পিচ্চি মিতালী না? কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে নির্ভীকের জন্য এসে দাঁড়িয়ে থাকতো!”

ইশরাক ভাইয়ের কথায় খানিক লজ্জা পেলো মিতালী। হাসলো লজ্জিত ভঙ্গিতে। ইশরাক খানিক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজেও হাসলো। নাস্তা শেষ করে চেয়ারম্যান সাহেব মিতালীর মুখোমুখি বসলেন। সেখানে মোটামুটি সবাই উপস্থিত ছিলো। তিনি বললেন,
-“কী কথা বলবে? বলো।”

মিতালী সময় নিয়ে কথাগুলো গুছিয়ে নিলো। সর্বপ্রথম নিজের হাত বাড়িয়ে লম্বা হাতা গুটিয়ে নিলো। কালছে দাগ দেখিয়ে গতরাতের ঘটনা বিবৃতি করলো। শেষে বলল,
-“আমি এর উচিত বিচার চাই চাচা। আমি মানি এমনকি এই গ্রামের সকলেই জানেন আপনার বিচার সম্পর্কে। সবার মতামত আর ভোটের ভিত্তিতেই আপনি আজ বিচারকের আসনে আছেন। আমার বিশ্বাস আমিও ন্যায়বিচার পাবো।”

ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলো যেন। চেয়ারম্যান সাহেব প্রচন্ড ক্ষু*ব্ধ হলেন। এই ছেলে বে*য়া*দ*বি*র সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে বসেছে। এবার এর উপযুক্ত বিচার করা প্রয়োজন। এতদিন তাকে সুযোগ দেওয়া হলেও এবার আর নয়। বাবা মায়ের সাথে অ*স*ৎ আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। আজ যদি তিনি ন্যায় বিচার না দেন, তবে অদূর ভবিষ্যতে নিজেও অ*বি*চা*রে*র শি*কা*র হবেন বলে মনে করেন। মিতালীকে আস্বস্ত করে বললেন,
-“শীঘ্রই তুমি বিচার পাবে।”

মিতালী শীতল অথচ দৃঢ় কন্ঠে বলল,
-“শীঘ্রই নয় চাচা, আমি আজই বি*চা*র চাই। আপনি হয়তো নির্ভীকের কাছে শুনেছেন আমার চাকরির ব্যাপারে। তাই অন্যদিন আমার সময় হবেনা।”

মিতালীর কথায় সম্মত হলেন চেয়ারম্যান সাহেব। বললেন,
-“আমি বিকেলেই তোমাদের বাড়িতে যাবো।”

মিতালী প্রসন্ন কন্ঠে বলল,
-“এখন তবে উঠি চাচা।”

নির্ভীক মামার সামনে নিজের জ্ব*ল*ন্ত রা*গ সংবরণ করে রাখলো। মিতালীর উদ্দেশ্যে বলল,
-“আমিও বের হবো, চল একসাথে যাওয়া যাক।”

সায় দিলো মিতালী। দুজন যখন রাস্তায় নামলো তখনই তরতর করে রা*গ ঝরে পড়লো। হড়বড়িয়ে বলল নির্ভীক,
-“মিতা, এবার কিন্তু ওই মাহবুবকে আমি মে*রেই ফেলবো। অ*স*ভ্য লোক পেয়েছেটা কী?”

মিতালী ঠান্ডা গলায় বলল,
-“শান্ত হ। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

অস্থির হয়ে পড়লো নির্ভীক। দিকবিদিকশুন্য হয়ে মিতালীর হাত টে*নে ধরলো। চক্ষু সম্মুখে মা*রে*র দা*গ স্পষ্ট। ব্যথাতুর কন্ঠে উগ্রতা। লালে রঞ্জিত চোখের সফেদ অংশ। হুংকার ছেড়ে বলল,
-“তোর গা*য়ে হাত তুলেছে। আর তুই আমাকে শান্ত থাকতে বলছিস?”

-“কেন এত ডেস্পারেট হচ্ছিস? আমি বলছি তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”

নির্ভীক কান দিলোনা মিতালীর কথায়। আলতো হাতে মিতালীর হাত মুঠোয় পুরে নিলো। একবার আদুরে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,
-“খুব কি ব্যথা করছে?”

মিতালী স্পষ্ট ব্যথা দেখতে পেলো নির্ভীকের চোখে। কাতরতা উপছে পড়ছে তার চোয়ালে। মিষ্টি করে হাসলো মিতালী। আশ্বস্ত করে বলল,
-“ব্যথা করছেনা। এত চিন্তা করিসনা।”

-“চল তোকে ঔষধ কিনে দিই।”

মিতালী এবার শব্দ করেই হাসলো। বলল,
-“এটুকু আ*ঘা*তে কিছু হবেনা। তারচেয়ে বরং তুই একটা কবিতা শোনা।”

অন্য সময় হলে খুশিতে গদগদ হয়ে কবিতার আসর জমিয়ে ফেলতো নির্ভীক। কিন্তু আজ বিষন্ন মনকাননে কবিতা সুর পেলোনা। মুখ ভার করে বলল,
-“এখন ভালোলাগছেনা।”

আর ঘাটালোনা মিতালী।

★★★

সেদিন মাহবুব যেমন বি*চা*র ডাকার পর মিতালীকে সংবাদ দিয়েছিলো, ঠিক তেমনিভাবে মাহবুবকে আজ বি*চা*র সভায় আমন্ত্রণ জানালো মিতালী। মাহার শরীরে জ্বর আসলো। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা মেয়েটা। মাহবুবের ভেতরটা মো*চ*ড় দিয়ে উঠলো। গতকাল অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে গভীর আ*ঘা*ত করে বসেছে মেয়ে দুটোকে। মিতালীকে যতটুকু চেনা আছে, তাতে বোঝা গেলো তার কপালে খা*রা*প কিছু লিখা আছে।
বাড়ির উঠান সদৃশ জায়গায় আজও চেয়ার পাতা হলো। এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত আছেন। চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে তার ছেলে ইশরাক আর ভাগ্নে নির্ভীক ও উপস্থিত আছে।
চেয়ারম্যান চাচা গলা পরিষ্কার করে বিচার কার্য আরম্ভ করলেন।
মাহবুবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“তোমার নামে আজ বিশাল অভিযোগ এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এখানে উপস্থিত হওয়া। সমস্যা সম্পর্কে তুমি কি অবগত? না-কি আমাকে কিছু বলতে হবে।”

অবুঝ বালকের মতোই না বোঝার ভান ধরলো মাহবুব। অজানা ভঙ্গিতে বলল,
-“আমি কিছুই বুঝতাছিনা। আপনে কী কইতাছেন, পরিষ্কার কইরা কন।”

চেয়ারম্যান সাহেব দুর্বোধ্য হাসলেন। মাহবুবকে অবগত করার ভঙ্গিতে বললে,
-“গতরাতে তুমি নাকি বাবা- মায়ের সাথে খা*রা*প আচরণ করেছ? এতটুকুতেই সমস্যা সীমাবদ্ধ নয়, তুমি যুবতী মেয়ে দুটোর গায়ে ও হাত তু*লে*ছো। এই অভিযোগ কি সত্য? আমরা তোমার মতামত জানতে চাই।”

মাহবুব কূ*ট*কৌ*শ*লে বলল,
-“কি বইলা আপনের কান ভারী করছে সেইটা আমার জানা নাই। আমার জানামতে আব্বা- আম্মার লগে খা*রা*প ব্যবহার করছি, এমন কিছু মনে পড়েনা।
বাকি রইলো ওগো গায়ে হাত তো*ল*ন। ওরা কি করছিলো? আমি যে বড় ভাই, আমারে পর্যন্ত রেহাই দেয় নাই। আমার গালে থা*প্প*ড় উঠাইছে মিতালী।”

সবার মুখেমুখে গুঞ্জন পড়ে গেলো। মাইয়া মানুষের এত বাড় ভালানা। সবার কথা কর্ণধারে পৌঁছাতেই কুটিল হাসলো মাহবুব। মিতালীর ভাবভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলোনা।
চেয়ারম্যান চাচা গম্ভীর স্বরে বলল,
-“মিতালী, তুমি কি বড় ভাইয়ের গায়ে হাত তু*লে*ছো?”

মিতালী প্রশ্নের জবাব দিলোনা। উল্টো বলে বসলো,
-“চাচা, মহামান্য ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করুণ আমাদের নিয়ে আর কিছু বলার আছে কি-না? কারণ একটুপর আর তার বলার মুখ থাকবেনা।”

মিতালীর উপর তাচ্ছিল্য হাসলো মাহবুব। বলল,
-“কইলে তো শ্যাষ ওইবোনা। যা কর্মকাণ্ড আমার চোখে পড়ে। ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ!”

নির্ভীকের শরীরে র*ক্ত টগবগ করে উঠলো। তাগড়া যুবকদের র*ক্ত গরম থাকে। এরা নিজের সম্পর্কে কোনো মি*থ্যা আরোপ সহ্য করতে পারেনা। আর যদি সে মি*থ্যে আরোপ প্রিয় মানুষকে নিয়ে হয়, তবে একদমই সহ্য করেনা। ইশরাক হাত চেপে ধরলো নির্ভীকের। ধীর স্বরে বলল,
-“শান্ত হ। দেখতে থাক মেয়েটার কতটুকু জো*র আছে ভেতরে। মনে রাখিস সবসময় কিন্তু বি*প*দে ওর খুঁটি হয়ে দাঁড়াবার মতো কেউ থাকবেনা। মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।”

ভাইয়ের কথাটা ভীষণ মনে ধরলো নির্ভীকের। মুহূর্তেই শান্ত হলো সে।
মিতালী ফোন ঘেঁটে গতরাতের রেকর্ড করা অডিও ক্লিপ অন করলো। যেখানে স্পষ্টতই সবার কথোপকথন শোনা যাচ্ছে। মাহার প্রতিবাদী কন্ঠ, পিয়ালী- মাহবুবের বি*শ্রী গা*লি*গা*লা*জ, মতিন সাহেবের হাঁক-ডাক। যেখানে স্পষ্ট শোনা গেলো বাবাকে খাবার খোঁটা দিচ্ছে মাহবুব। আকস্মিক আ*ঘা*তে*র শব্দ হতেই শব্দ করে কেঁদে উঠলো মাহা। পরপরই মা*র*ধ*রে*র শব্দ হলো।

সবাই যখন মাহবুবের দিকে দৃষ্টি ফেললো। তখন সে চো*রা ভঙ্গিতে কাচুমাচু দৃষ্টি লুকাতে ব্যস্ত। দল যখন মিতালীর দিকে ভারী হলো তখন আরও একটি মি*থ্যার আশ্রয় নিলো। বলল,
-“মিতালী যে আমারে চ*ড় মারলো? পিয়ালীর গা*য়ে হাত তু*ল*লো? সেই বিচার করবেন না?”

মিতালী মাহবুবের মুখোমুখি হলো। ঠান্ডা গলায় শুধালো,
-“খুব শক্ত চ*ড় দিয়েছিলাম বুঝি?”

আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল মাহবুব,
-“মা*রি*স নি?”

মিতালী সবার উদ্দেশ্য বলল,
-“আমি কোনো সাধু মেয়ে নই। এই লোকের স্ত্রীর গায়ে আমি হাত তু*লে*ছি আত্মরক্ষার জন্য। সেটা আমি স্বীকার করি। সে ও কিন্তু আমাদের ছেড়ে দেয়নি।
কিন্তু এই কু*রুচি*পূর্ণ লোকের গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটা আমার মস্তিস্ক ভাবতে পারেনি। বাকি যাচাই-বাচাই প্রমাণের জন্য উনার মেয়ে মাহবুবাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। নিষ্পাপ বাচ্চা নিশ্চয়ই মি*থ্যা বলবেনা।”

ভড়কে গেলো মাহবুব। ক্রু*দ্ধ স্বরে বলল,
-“আমার বাইচ্চা মাইয়ারে এসবে জড়াইবিনা, কইয়া দিলাম।”

চেয়ারম্যান সাহেব মাহবুবের কথা অগ্রাহ্য করে মাহবুবাকে ডাকলেন। পিটপিট করে নরম চোখে তাকালো মেয়েটি। যেন ফুলের আদলে গড়ে ওঠা চেহারা। তার মধ্যে ভীতি লক্ষ করে কন্ঠের ভীত নরম করে কোমল স্বরে কাছে ডাকলেন চেয়ারম্যান সাহেব। জিজ্ঞেস করলেন,
-“তেমার ফুফি কি বাবাকে চ*ড় মে*রে*ছে?”

মাহবুবা তটস্থ দৃষ্টিতে একবার বাবার অভিমুখে চাইলো। রাঙানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে শাঁসালো মাহবুব। চেয়ারম্যান সাহেব ব্যাপারটা লক্ষ করেই বললেন,
-“মেয়েকে শাঁসিয়ে লাভ নেই।”
মাহবুবাকে বললেন,
-“তুমি বলো দাদুভাই।”

মাহবুবা আরও একবার বাবাকে দেখলো, ফের ফুফির দিকে দৃষ্টি দিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। “না” ভঙ্গিতে দু’পাশে মাথা নাড়ালো।
সব পরিষ্কার হয়ে যেতেই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন চেয়ারম্যান সাহেব। ঘৃ*ণি*ত দৃষ্টিতে একবার মাহবুবকে দেখে পূণরায় পিয়ালীর দিকে নজর দিলেন। তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“বাড়ির বউদের আচরণ হতে হয় নমনীয়। নিষ্ঠার সাথে পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। আফসোস! তোমার মুখের ভাষাটাই ঠিক নেই। নিজেকে শুধরে নাও, আবার ও বলছি নিজের ব্যবহার মার্জিত কর।”

নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো পিয়ালী। এবারে মাহবুবের শা*স্তির ব্যাপারে কথা হলো। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো
মাহবুবের মুখে কালি মেখে গলায় জুতার মালা আর কলসি বেঁধে পুরো গ্রাম চত্ত্বর দেওয়ানো হবে।
আৎকে উঠলো মাহবুব, পিয়ালী।
চেয়ারম্যান সাহেব জোরালো কন্ঠে বললেন,

-“এখানে যতজন যুবক, মধ্যবয়স্ক উপস্থিত আছেন সবার উদ্দেশ্যে কথাটি। শুধু মাহবুব নয়, এরপর থেকে যিনিই বাবা-মায়ের সথে অ*স*ৎ আচরণ করবেন, তার পরিণামই এমন হবে।”

ভেতরে ভেতরে অনেকেই সতর্ক হয়ে গেলো। হাসিতামাশার সাথে জুতার মালা প্রস্তুত হলো। মাহবুবের গলায় ঝুলিয়ে সর্বপ্রথম বাবা – মায়ের পায়ে ফেললো তাকে। গ্রামের ছোট-বড় সকল কিশোর-যুবক হৈহৈ করতে করতে মাহবুবের পেছনে ছুটলো। অনেকেই মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করলো। এর গতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গিয়ে স্থির হবে।
মুখ নিচু মাহবুবের। আজকের পর থেকে মিতালীর প্রতি তার দশগুণ ক্ষো*ভ জন্ম নিলো।
অপরদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখলো অন্য এক পুরুষ। তার মনে সূক্ষ্ম ভালোলাগার বীজ বপন হলো। চোখের পরতে পরতে মুগ্ধতা। অন্তঃকরণে শুরু হলো প্রলয়ঙ্কারী উচাটন। সে তো এমন নারীই পছন্দ করে।
ইশরাক নির্নিমেষ চেয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,
-“বিধ্বংসী।”

না বুঝেই প্রশ্ন করলো নির্ভীক,”কিছু বললে?”

ইশরাকের ঘোরলাগা উত্তর,”হুঁ?”

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here