নিরবতায়_হৃদয়_কোনে,১০,১১

0
210

#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে,১০,১১
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১০

মধ্যাহ্ন ভোজের সময়। সূর্য উপর থেকে খাঁড়াভাবে কিরণ দিচ্ছে। মাথার উপর ত্রিমাত্রিক যন্ত্রটি গটগট আওয়াজ তুলে কার্য সম্পাদন করে চলেছে।
ঘন্টার আওয়াজ পেতেই শিক্ষার্থীরা ছুটে চললো টিফিন করতে। ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু এগোতেই সামনে নির্ভীক দাঁড়ালো। বলল,
-“চল, খিদে পেয়েছে।”

মিতালী সোজাসাপটা উত্তর দিলো,
-“তুই খেয়ে আয়, আমি এখন খাবোনা।”

ভ্রু জোড়া নিমেষেই কুঞ্চিত হয়ে এলো। তীক্ষ্ণ চোখে পরোখ করে নির্ভীক বলল,
-“একা একা খাবার খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। এখন চল, বিয়ের পর জামাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে আমার টাকা সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিবি।”

মিতালী তো বোঝাতে চায়নি তার কাছে টাকা নেই। তবুও ছেলেটা কিভাবে যেন বুঝে গেলো। এই মুহূর্তে নির্ভীক তাকে না নিয়ে খেতে যাবেনা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল,
-“চল।”

স্কুলের পাশেই একটা হোটেলের মতো জায়গায় গিয়ে বসলো দুজন। সিঙ্গারা আর চায়ের অর্ডার দিয়ে মিতালীর পাশের চেয়ারে ধপ করে বসলো নির্ভীক। ফোন ঘেঁটে সেদিনের তোলা একটা ছবি বের করে মিতালীর সামনে ধরলো। মিটিমিটি হেসে রগড় করে বলল,
-“দেখ আমার সাথে এক পেঁচা মুখো মহিলা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।”

মিতালীর নজর পড়তেই থা*বা বসালো ফোনে। নির্ভীক ফোন সমেত হাত সরিয়ে নিলো। অল্প শব্দে হেসে বলল,
-“পারবি আমার সাথে?”

মিতালী ক্ষে*পে গেলো। বি*দ্রু*প করে বলল,
-“আমাকে পেঁচা মুখো বলেছিস না? দেখবো তোর বউ কেমন হয়।”

নির্ভীক রে*গে গেলো। মিতালীকে সাবধান করে বলল,
-“বউ নিয়ে কথা বলবিনা খবরদার! আর যাইহোক আমার বউ পেঁচা মুখো হবেনা। সে হবে আমার চোখে সেরা সুন্দরী।”

ভেংচি কাটলো মিতালী। বলল,
-“তুই একটা বিরক্তিকর পারসন। এই বিরক্তির বস্তাকে কোনো মেয়ে সহ্য করবেনা।”

নির্ভীক কুটিল হেসে বলল,
-“তোর গলায় ঝুলে যাই, কী বলিস?”

আৎকে ওঠা গলায় মৃদু চেঁচালো মিতালী। বলল,
-“নাহ্! একদমই না।তোর সাথে থেকে এমনিতেই আমার অর্ধেক চুল পড়ে গিয়েছে। আমার গলায় ঝুলে পড়লে দেখা যাবে ছিলা চান্দি নিয়ে ঘুরতে হবে আমাকে।”

নির্ভীক চোখেমুখে বিশেষজ্ঞ ভাব নিলো। গলা পরিষ্কার করে ইশারায় কাছে ডাকলো মিতালীকে। বলল,
-“কাছে আয়।”

এই বলে নিজেই মাথা ঝুঁকিয়ে মিতালীর কাছাকাছি গেলো। ফিসফিস করে বলল,
-“আমার থুতু দিলে চুল পড়া কমে যায়।”

পিঠে থা*প্প*ড় পড়তেই সোজা ভদ্র হয়ে বসে নির্ভীক। তার ভাব উধাও হয়ে গেলো। প্লেট থেকে একটা সিঙ্গারা তুলে মিতালীর দিকে বাড়িয়ে দিলো।
ওর হাত থেকে সিঙ্গারা নিলোনা মিতালী। প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
-” তোর থুতুর বিজ্ঞাপন অন্য কোথাও দিস। ভালো ইনকাম হবে। ”

নির্ভীক দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

★★★

সময়টা বিকেলের মধ্যভাগ। তেজস্বী সূর্যের ম্লান হয়ে আসা রক্তিমা আভা। একটুপরই পশ্চিমে হে*লে পড়বে জলধারার কোল ঘেঁ*ষে।
সকালের ঝকঝকে মসৃণ চেহারা আর নেই। বেলার সাথে পাল্লা দিয়ে চামড়ায় রুক্ষতা আর ক্লান্তি ভাব হা*না দিয়েছে। স্কুল ছুটি হতেই দুজনে একসাথে বের হলো। অর্ধেক পথ এগোতেই ইশরাকের দেখা মিললো। বন্ধুদের সাথেই বেরিয়েছে। চাকরির অফার আসলেও সে ঠিক করলো কিছুদিন ঘোরাফেরা করবে। নির্ভীক আর মিতালীর সাথে দেখা হতেই বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে এগিয়ে এলো সে।
নির্ভীক বলল,
-“ভাইয়া কোনদিকে যাচ্ছিলে?”

-“বন্ধুদের সাথেই এসেছিলাম। তোদের সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ি যাওয়া যাবে।”

মিতালী দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলল,
-“নির্ভীক থাক তাহলে। আমার তো টিউশন আছে।”

ইশারক অবাক হয়ে বলল,
-“সে কি? আমি ভাবলাম একসাথে তিনজনে কিছুক্ষণ সময় কাটাবো।”

নির্ভীক বলল,
-“সাড়ে চারটা থেকেই ওর টিউশন আছে। আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকি।”

কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলেও অধর প্রসারিত করে ইশরাক বলল,
-“চলো, তোমায় পৌঁছে দিয়ে আসি।”

মিতালী বাঁধ সাধলো।
-“না না ভাইয়া। আমি যেতে পারবো। আপনারা বাসায় চলে যান।”

নির্ভীক বলল,
-“ভাইয়া তুমি বরং বাড়ি যাও, আমি মিতালীকে পৌঁছে তারপর বাড়ি যাবো।”

-“ঠিক আছে।”
এই বলে ইশরাক বাড়ির পথে রওনা দিলো। একবার পেছন ঘুরে মিতালীকে পরোখ করে মৃদু হাসলো। মাথা দুদিকে ঝাঁকিয়ে আর দাঁড়ালোনা।

★★★

পুরো বাড়িতে মা- বাবা আর মাহা ছাড়া কেউ নেই। গতকালের বি*চা*র*টা মাহবুবের আত্মসম্মানে লেগেছে। তাই সে বাড়ি ছেড়ে বাজারের একটা কলোনিতে উঠেছে।
এতে মিতালীর খুব একটা যায় আসেনা। তাদের ইচ্ছে হলেই নিজেদের জন্য বরাদ্দ অংশে এসে থাকতে পারে। গোসল সেরে আসতেই মা ভাত দিলেন। খেতে খেতেই মাহার পড়ালেখার ব্যাপারে খোঁজখবর নিলো।দুদিন যাবত মেয়েটার পড়ায় মন নেই। মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে।
মিতালী জিজ্ঞেস করলো,
-“খাওয়াদাওয়া, পড়ালেখা সব ঠিকমতো করিস?”

মাহার কান পর্যন্ত হয়তো কথাটি পৌঁছালোনা। সে আনমনে প্রশ্ন করলো,
-“আচ্ছা আপু, কেউ কি কারো মনে বাস করতে পারে?”

মাহার কথায় ভারি চমকালো মিতালী। বোনের উড়ুউড়ু মন কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে বুঝতে সময় লাগলোনা তার। সরাসরি কোনো জিজ্ঞাসাবাদে না গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
-“মনে বাস করতে হলেও একটা পর্যায় লাগে। আগে নিজেকে উপযুক্ত পর্যায়ে নিতে হবে। আর সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে পড়াশোনা সবার আগে জরুরি। আমি চাই আপাতত পড়াশোনায় মন দে।”

মাহা অতটা ও অবুঝ নয়। সুক্ষ্ম ইঙ্গিতে সে অনেক কিছুই বুঝলো। সত্যিই তো, পড়ালেখা না করলে ওরকম একটা শিক্ষিত মানুষ তাকে কেন পছন্দ করবে? পড়ার টেবিল ছেড়ে আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মাহা। টুপ করে চুমু খেয়ে বলল,
-“এজন্যই তোমায় এত ভালোবাসি আপু। আমার সব রকম স*ম*স্যা*র কি সুন্দর সমাধান করে দাও।”

মিতালী মৃদু হেসে বলল,
-“খুব ভালো অবস্থান না হলে এ সমাজ তোমাকে পাত্তা দেবেনা। আজ যারা অ*ব*হে*লা করবে, তোমার শক্ত পজিশন দেখে তারাই তোমার পাশে ঘুরঘুর করবে। তুই খুব বেশি ছোট না। নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে চলাফেরা করবি।”

মাহা আর অপেক্ষা করলোনা। একছুটে পড়ার টেবিলে চলে গেলো। ভালো কিছু করতে হলে, বাবা- মায়ের দুঃখ দূর করতে হলে তার পড়াশোনা প্রয়োজন।
তাছাড়া মানুষটাকে তার লাগবে। এটা জীবন-ম*র*ণের ব্যাপার।
★★★

সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনে এগোতেই একটা রিকশা এসে থামলো। রিকশাচালক লোকটি বললেন,
-“আম্মাজান যাইবেন?”

মিতালী মৃদু হেসে বলল,
-“না চাচা, আমি হেঁটেই যাবো।”

লোকটি কপালের ঘাম মুছে বললেন,
-“এদিকে আর ভাঁড়া পামুনা। আপনে উইঠা পড়েন, কই যাইবেন নামাই দিয়া আসি।”

মিতালী সংকোচ করে বলল,
-“না চাচা, আপনি কষ্ট করে গাড়ি চালাবেন। আমি চড়ব, অথচ আপনার পারিশ্রমিক দিতে পারবোনা।”

লোকটি এবার হাসলেন। বললেন,
-“আরেকদিন দেহা ওইলে দিয়া দিয়েন।”

জোরাজোরিতে মিতালী রিকশায় চড়ে বসলো।
তখনই পেছন থেকে ডাক পড়লো। ইশরাক হাত উঁচিয়ে ডাক দিলো,
-“এই রিকশা যাবেন?”

এগিয়ে এসে মিতালীকে না দেখার ভান করে বলল,
-“ওহ্ মিতালী উঠেছো! আমি দেখিনি। রিকশা পাচ্ছিলাম না বলে এসেছি। আচ্ছা তুমি যাও।”

মিতালী বলল,
-“আপনি যান রিকশায় করে। আমি হেঁটে চলে যাবো।”

অতঃপর রিকশাচালককে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“উনাকে নিয়ে যান চাচা। আপনার ভাড়াটা ও পেয়ে যাবেন।”

ইশরাক বাঁধ সাধলো।
-“না না, তুমিই যাও। আমি পরে আসছি।”

রিকশাচালক একবার ইশরাকের দিকে তাকালেন, ফের মিতালীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“দুইজনেই দ্যাখতাছি দুইজনরে চেনেন। তয় এক লগে যাইতে সমিস্যা কী?”
ইশরাককে বললেন,
-“ওডেন মামা। দুইজনরেই নামাইয়া দিমু।”

ইশারাক মিতালীর দিক থেকে ক্লিয়ার হওয়ার জন্য বলল,
-“আমি পাশে বসলে তোমার কোন সমস্যা হবে না তো?”

মিতালী দ্বিধা নিয়ে একটু চেপে বসলো। ইশরাক পাশে বসলো। চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালিয়ে বলল,
-“চলুন চাচা।”

-“কোথায় নামবে?”

-“হু? এইতো একটু সামনে একটা টিউশন আছে।”
পরপরই মিতালী ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করলো,
-” আপনি কোথায় নামবেন?”

-“আমি? কোথাও না তো!”

মিতালী বুঝতে না পেরে দ্বিধান্বিত চোখে তাকালো। বলল,
-“সরি? বুঝলাম না।”

নিজের জবাবে নিজেই ভড়কে গেলো ইশরাক। একটু হেসে বলল,
-“মজা করলাম। বন্ধুর সাথে দেখা করার আছে।”

মিতালী আর কোনো কথা বললোনা। উনার সাথে কখনো তেমন ভাবে কথা বলা হয়নি। তাই সহজ হতে পারছেনা। ইশরাক উশখুশ করছে। কথা বলতে চাইছে, কিন্তু কী বলবে বুঝতে পারছেনা।
হুট করেই এক অযাচিত প্রশ্ন করে বসলো,
-“প্রেম-ট্রেম কর?”

মিতালী কপাল কুঁচকে তাকালো। এমন প্রশ্নে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।
ইশরাক ভ্রু উঁচিয়ে আবারও জানতে চাইলো।
প্রতিত্তোরে মিতালী ঘাড় নাড়িয়ে ‘ না’ বোধক উত্তর দিলো।

-“গুড গার্ল।”

-“জি?”

ইশারাক বলল,
-“এসব নিয়ে এখন চা*প নিও না। পড়াশোনা কর।”

এবার একটু নয়, অনেকটাই বিরক্ত হলো মিতালী। তখন থেকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন সাথে একগাদা জ্ঞান দিচ্ছে। চোখেমুখে বিরক্তির আঁচ লক্ষ করে ইশারাক মিটিমিটি হাসলো। বলল,
-“বাহ্, বিরক্ত হলেও দেখছি তোমায় ম*ন্দ দোখায় না।”

নিজের গন্তব্য এসে যেতেই মিতালী নেমে পড়লো। ইশারাকের দিকে না ফিরেই বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো। রিকশা কয়েক মিটার সামনে যেতেই ইশরাক বলল,
-“চাচা, আর যেতে হবেনা। এখানেই থামুন।”

পকেট থেকে দুজনের ভাড়া মিটিয়ে কৃতজ্ঞতা সূচক হেসে বলল,
-“ধন্যবাদ চাচা।”

লোকটি একগাল হেসে বললেন,
-“আপনে গো মনমালিন্য হইছে। আমি তো শুধু নিজের ভাড়াটাই নিছি।”

ইশারাক ঝাঁকড়া চুলে ঝাঁকুনি দিয়ে হাসলো। লোকটিকে কিছু বললোনা। লোকটিও আর বোঝার চেষ্টা করলেন না। বড়লোকের ব্যাপার, তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছেন এটাই ঢের।
উনি এই এলাকার নন। জীবিকার তাগিদে অনেকেই অনেক জায়গায় গিয়ে কাজ করে। এতে সুবিধা হলো উনি দুজনের কাউকেই চিনলেননা। লোকটিকে ইশরাক আগে থেকেই কিছু একটা বুঝিয়ে সামনে পাঠিয়েছিলো।

★★★

বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফেরার পথে ইশরাকের মুখোমুখি হলো মাহা। হুট করে তার পা জোড়া থমকে গেলো। মৃদু কম্পনের জোর ধরে আর সামনে এগোতে পারলোনা। ধকধক করে উঠলো হৃৎপিণ্ড। আড়চোখে তাকে দেখার তৃষ্ণা মেটালো। ইশরাক জোরালো গলায় ডাকলো,
-“আরে মাহা, কোথাও গিয়েছো?”

ভড়কে গেলো মাহা। জবাব দিতে কন্ঠ নালি ঈষৎ
কেঁপে উঠলো। আড়ষ্ট ভঙ্গিতে উত্তর করলো,
-“বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিলাম।”

-“এখন শরীর ঠিক আছে?”

মাহার মন ফুঁপিয়ে উঠে বলতে চাইলো “আপনি কেন আমায় নিয়ে ভাবছেন? ভাববেন না, একদম ভাববেন না আমায় নিয়ে। নিজেকে প্রস্তুত করতে দিন। আমি একদিন আপনার সামনে নিজেকে হাজির করে হুট করেই আপনাকে চেয়ে বসবো। ”
কিন্তু বলতে পারলোনা। শব্দগুচ্ছ তুমুল অবরোধ ঘোষণা করলো। মিইয়ে যাওয়া স্বরে জবাব দিলো,
-“জি ঠিক আছি।”

মাহা আর দাঁড়ালোনা। সে প্রস্থান করতেই কপালে ঢেউ খেলানো ভাঁজের সৃষ্টি হলো। মেয়েটা তাকে দেখে কি ভ*য় পেলো, নাকি লজ্জা?
না না, শা*লিদের হতে হয় প্রাণখোলা। শা*লিকে হাত করতে পারলেই বউয়ের মন পাওয়া যাবে। তাকে সহজ হতে হবে।

★★★

ভিড়ভাট্টাহীন সন্ধ্যের নির্জন, শান্ত প্রকৃতির গা ছুঁয়ে পাশাপাশি হাঁটছে দুজন মানব-মানবী। মাঝপথে থেমে পড়লো মিতালী। নির্ভীককে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“চা খাওয়াবি?”

নির্ভীক পা থামিয়ে আশেপাশে তাকালো। সন্ধ্যার সময় অনেক দোকানই বন্ধ থাকে। অদূরে একটা টং দোকানে মিটিমিটি আলো জ্বলতে দেখে বলল,
-“আয় আমায় সাথে।”

মিতালী পিছুপিছু গেলো। দুটো চা নিয়ে ফের রাস্তায় নামলো। চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
-“চা ঠিক জমছেনা। সাথে কিছু হলে ভালো হতো।”

-“বিস্কিট নিবি?”

-“উঁহু, কবিতা নেবো।”

নির্ভীক অল্প শব্দ করে হাসলো। বলল,
-“কবে থেকে আমার গলায় কবিতা এতটা পছন্দ করা শুরু করেছিস?”

মিতালী অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-“আমি কখন বললাম তোর গলায় কবিতা আমার পছন্দ! শুধু চা টুকু জমছিলো না,তাই কবিতা চাইলাম।”

নির্ভীক আবার ও হাসলো।

“বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অর্থ-পদ চায়
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণসিংহাসন
জয়ের শিরোপা আর খ্যাতির সম্মান,
কে চায় সোনার খনি তোমার বুকের এই স্বর্ণচাঁপা পেলে?
তোমার স্বীকৃতি পেলে কে চায় মঞ্চের মালা
কে চায় তাহলে আর মানপত্র তোমার হাতের চিঠি পেলে,
তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বলো কে চায় বৃক্ষের ছায়া
তোমার শুশ্রূষা পেলে কে চায় সুস্থতার ছাড়পত্র বলো,
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ চায় শ্রেষ্ঠ পদ
কে চায় তাহলে বলো স্বীকৃতি বা মিথ্যা সমর্থন,
তোমার প্রশ্রয় পেলে কে চায় লোকের করুণা
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণমুদ্রা কিংবা রাজ্যপাট?
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অন্য কিছু চায়,
কে আর তোমার বুকে স্থান পেলে অন্যখানে যায়!”

——মহাদেব সাহা।

আবৃত্তি করতে গিয়ে বিশাল এক ঘোরে ডুবে গেলো নির্ভীক। সর্বদা তার দৃষ্টি ছিলো পাশে থাকা নমনীয় রমণীর পানে।

#চলবে…….

#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১১

শরৎ বিদায় নিয়ে প্রকৃতিতে ধরা দিলো হেমন্তের ছোঁয়া। একটু-আধটু ঠান্ডা আবহাওয়া, শীতের পূর্বাভাস। আবছা কুয়াশায় ঢেকে আছে মাঠঘাট। শিউলি ফুলের মৌ মৌ সুগন্ধি জানান দেয় হেমন্তের উপস্থিতি। নিত্যদিনের মতো আজও কাজের উদ্দেশ্যে বের হলো মিতালী। প্রথম টিউশন শেষ দিয়েই নির্ভীকের অপেক্ষায় দাঁড়ালো। নির্ভীক রিকশায় চড়ে এসেই বলল,
-“উঠে পড়।”

মিতালী রিকশায় চেপে বসতেই চালক প্যাডেল ঘুরিয়ে স্কুলের পথে রওনা হলো।
সব শিক্ষকদের ডাক পড়লো অফিস কক্ষে। মাস পূর্ণ হওয়ায় হাতে হাতে খাম ধরিয়ে দেওয়া হলো। বেতন হাতে তুলে ছোট্ট একটা সিগনেচার দিয়ে যে যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে গেলো। এখানে খাটুনি হিসেবে বেতন একটু কম, তবে মাস শেষ হতেই হাতে বেতন পেয়ে আনন্দিত হলো মিতালী। তাছাড়া সপ্তম – অষ্টম শ্রেণীর গণিত ক্লাস তার। বেশ কয়েকটা স্টুডেন্ট এই মাস থেকেই প্রাইভেট পড়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। দুটো ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের একই সাথে না পড়ালে সময় হয়ে উঠবেনা। রিতু আর তার চাচাতো-বোনকে সকাল আটটা থেকে পড়াতো। এখন তাদের সাথে কথা বলে প্রাইভেট সাতটায় নিয়ে আসতে হবে। সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নয়টা স্কুলের স্টুডেন্টদের পড়াবে। রিতুর পরিবার মানতে না চাইলে ছে*ড়ে দেবে তাদের পড়ানো।

আজ তিনটে টিউশনের দুটোর টাকা হাতে পেলো। বেতন আর টিউশনের টাকা থেকে চার হাজার আলাদা করে নির্ভীকের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে প্রশ্ন করলো নির্ভীক,

-“কিসের টাকা?”

-“মনে নেই? তোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাহার ফর্ম পূরণ করলাম।”

টাকা নিতে সরাসরি নাকচ করলে মিতালী মানবেনা। বেশ শক্ত ধাঁচের মেয়ে সে। জোর করে হলেও টাকা সে ফেরত দেবে। তাই নির্ভীক একটু ঘুরিয়ে বলল,
-“আপাতত তুই ঝা*মে*লা সেরে নে। আমার যখন টাকার প্রয়োজন পড়বে, হাত খালি থাকবে তখন নাহয় দিস।”

নির্ভীকের হাতে চার হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে মিতালী বলল,
-“যখন তুই চাইবি, তখন আমি না ও দিতে পারতে পারি। তোর টাকা দিয়ে বাকি যেটা থাকবে, সেটা দিয়ে আমি সব সামলে নেবো।”

নির্ভীক কথা বাড়াতে চাইলোনা। রেখে দিলো টাকা। এগুলো সে খরচ করবেনা। দুদিন পর হয়তো মিতালীর আবার টাকার প্রয়োজন পড়তে পারে। তখন আবার তাকে এগুলো ফেরত দেবে।
আট হাজার টাকা থেকে নির্ভীককে দিয়ে অবশিষ্ট রইলো চার হাজার। টাকার খামটি সযত্নে বাবার হাতে তুলে দিলো মিতালী।

মতিন সাহেব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। মিতালী ইশারায় বোঝালো,
-“খুলে দেখো।”

মতিন সাহেব খাম খুলে টাকা হাতে নিলেন। মিতালী বলল,
-“বেতনের টাকা।”

ঝরঝর করে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন মতিন সাহেব। আনন্দাশ্রু ঝরিয়ে মেয়েকে কাছে টে*নে নিলেন। উৎফুল্ল মেজাজ হুট করেই ব্যথাতুর কন্ঠে রূপ নিলো।
-“আমার মায়ের পয়লা চাকরির টেকা আমি হাতে নিছি। আমি তোমগো রোজগার খাইয়া যামু আশা কইরা পড়ালেখা করাইনাই। আমিতো আল্লাহর কাছে চাইছিলাম আমার রোজগারে আমার আম্মারা পড়ালেখা করবো। সুন্দরভাবে চলবো।”

মিতালী বাবার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
-“তুমি খুশি হওনি?”

দ্রুত চোখ মুছে নিলেন মতিন সাহেব। ত্রস্তব্যস্ত গলায় বললেন,
-“মেলা খুশি আব্বা। এই যে আব্বার চোখে পানি, এইডা আনন্দে ঝরতাছে।”

রোজী বেগম দরজায় দাঁড়িয়ে বাবা – মেয়ের আনন্দ সিক্ত মুহূর্ত দেখে আঁচলে চোখ মুছলেন।
এই একমাস বহুকষ্টে রাস্তার ধার থেকে শাকপাতা নিয়ে এসে রান্না করেছেন রোজী বেগম। কোনোদিন শুধু আলু সেদ্ধ দিয়ে ভাত খেয়েছেন।
তবুও সুখে আছেন, আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে আছেন।
★★★

স্কুল থেকে ফেরার সময় মাহার পথ রোধ করে দাঁড়ালো ইশরাক। অস্বস্তিতে গাঁট হলো মাহা। তাকে পরোখ করে ইশরাক বলল,
-“মাহা মনি আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছো? নির্ভীকের সাথে তো ভীষণ সুন্দর হেসে হেসে কথা বলো। তাহলে আমার বেলায় লজ্জা কেন?”

এতক্ষণ যাবত খুব একটা লজ্জা না পেলেও এবারে মিইয়ে গেলো মাহা। নত দৃষ্টি আরেকটু খানি নত হলো। ইশরাক একটা চকলেট বাড়িয়ে দিলো। মৃদু হেসে বলল,
-“এটা তোমার জন্য। চলো কথা বলতে বলতে তোমায় বাড়িতে দিয়ে আসি।”

মাহা চকলেট নিতে হাত বাড়ালোনা দেখে ইশরাক নিজেই ওর হাতে চকলেট গুঁজে দিলো। শরীর শিরশির করে উঠলো মাহার। যেন মুহুর্তেই বিদ্যুৎ খেলে গেলো। অনুভূতিটি ঠিক কেমন ছিলো? ভালো নাকি অস্বস্তির, সে বুঝলোনা। সামনে পা বাড়াতে গিয়েই টের পেলো পাশাপাশি আরও একজোড়া পা চলছে। ইশরাক মাহাকে সহজ করার জন্য প্রথমেই পড়ালেখার ব্যাপারে কথা তুললো। একসময় মাহা এতটাই সহজ হয়ে উঠলো যে খিলিখিলিয়ে হাসতে হাতে কবে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলো টেরই পেলোনা।
ইশরাককে বিদায় দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো মাহা। তার মনে সাতরং এর রংধনু দেখা দিয়েছে। মানুষটা কি সুন্দর করে কথা বলে। তাকে কি সুন্দর ইমপ্রেস করে নিয়েছে। তার ভাবানায় বিভোর হয়েই সে ঘরে প্রবেশ করলো। এদিকে ইশারাক দাঁড়িয়ে রইলো। একপলক তার প্রেমকে দেখার তৃষ্ণায় ইতিউতি করে উঁকি দিলো। মাহা তার সাথে সহজ হয়ে উঠেছে। এবার তার মাধ্যমে মিতালীর কাছে পৌঁছাতে খুব একটা সমস্যা হবেনা। মিতালীর সমস্ত খবরাখবরই নেওয়া যাবে।
উঠান থেকে শুকনো জামাকাপড় নিতে বের হলো মিতালী। তখনই তাকে এক ঝলক দেখে নিয়ে বিদায় নিলো ইশরাক।

★★★

চেয়ারম্যান বাড়ির বড় খাবার টেবিলে গোল হয়ে চেয়ার পেতে বসলেন পুরুষ, বাচ্চারা। মহিলারা খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। মালিহা আস্তে আস্তে খাবার চিবুচ্ছে দেখে তার আম্মু মিনা ধমকে উঠে বলল,
-“দ্রুত খাবার চিবাও। তোমার এখনও হোমওয়ার্ক বাকি আছে।”

মালিহার মুখখানা চুপসে একটুখানি হয়ে গেলো। হোমওয়ার্ক, পড়ালেখা করতে তার ভালোলাগেনা। তবুও আম্মু প্রতিদিন তাকে পড়তে বসায়।
ছোট্ট মালিহার বেজার মুখে তাকিয়ে ইশরাক বলল,
-“ভাবি! এমনভাবে আমার ছোট্ট আম্মুটাকে বকছো কেন?”

মালিহার চোখজোড়া টলটলে জলে ভরে উঠলো। ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে ফেললো। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নরম সুরে প্রতিবাদ করলো।
-“চাচ্চু তোমার ভাবি খুব পঁচা। আমায় প্রতিদিন পড়ায়, আমার ভালোলাগেনা। একটু গল্প ও করেনা আমার সাথে।”

ইশরাক খাওয়ার মাঝেই কিছু একটা ভাবলো। অধর কোনে দেখা মিললো সূক্ষ্ম হাসির মেলা। মালিহার গালে হাতের নরম ছোঁয়া দিয়ে বলল,
-“এখন থেকে আর আম্মুর কাছে পড়তে হবেনা। তোমার জন্য মিস আসবে। সে খুব মজা করে পড়ায়।”

মালিহা চোখ পিটপিট করে বলল,
-“সে কি গল্প করবে?”

ইশরাক ও মালিহার মতো চোখ পিটপিট করে ঢং করে বলল,
-“হ্যাঁ, সে দারুণ গল্প জানে।”

গদগদ কন্ঠ মালিহা বলল,
-“চাচ্চু আমি তোমার হাতে খাবার খাবো।”

ইশরাক মালিহার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো। সযত্নে তার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মালিহা পা দুলিয়ে খাবার চিবুচ্ছে আর নানারকম কথা বলছে।
মালিহাকে ঘরে পাঠিয়ে দিতেই ইশরাকের বাবা প্রশ্ন ছুঁ*ড়*লে*ন,

-“কোথা থেকে মিস ঠিক করলি?”

ইশারাক খাবার প্লেটে হাত চালিয়ে নিয়েই বাবার প্রশ্নের জবাব দিলো,
-“ভাবছি মিতালীকে মালিহার মিস হিসেবে ঠিক করবো। ব্যাপারটা কেমন হবে?”

চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
-“তুমি বললেই তো হচ্ছে না। তার ও তো মতামত থাকতে পারে।”

নির্ভীক খাওয়া থামিয়ে বলল,
-“আমার মনে হয়না মিতালী পড়াতে আসবে। দিনের বেলায় ওর একদণ্ড জিরোবার সময় নেই।”

ইশরাক বলল,
-“সন্ধ্যার পর পড়িয়ে দেবে না হয়।”

নির্ভীক ফের বলল,
-“সারাদিনের ধকল সহ্য করে আবার রাতে ও খাটুনি খাটবে?”

-“মিতালী অনেক দূরদূরান্তে টিউশন করতে যায়। সেখান থেকে একটা টিউশন ছেড়ে দিয়ে মালিহাকে পড়ালেই হবে। সে দিনে সময় না পেলে না হয় সন্ধ্যের পর পড়িয়ে যাবে।”

ইশরাকের কথায় খানিক বিরক্ত হলেও প্রকাশ ঘটালোনা নির্ভীক। বলল,
-“চাচা-চাচি সন্ধ্যার পর ও কে বান্ধবীর বাড়ি পর্যন্ত থাকতে দেন না। আর টাকার জন্য তো আরও আগেই থাকতে দেবেন না। নিরাপত্তার ও একটা ব্যাপার আছে।”

ইশরাক বলল,
-“সমস্যা কোথায়? আমি না হয় পৌঁছে দেবো।”

চেয়ারম্যান সাহেব এতক্ষণ যাবত দুজনের বাক্যালাপ শুনে গেলেন। এবারে মুখ খুললেন,
-“তোরা অযথা ত*র্ক করিসনা। মালিহা পড়তে চাইলে আমি মিতালীকে বলে দেখবো। সে যদি পড়াতে রাজি হয়, তখন না হয় পড়াবে।”

নির্ভীক আর ইশারাক কেউই কথা বলল না আর।
একজন প্রেমিক কখনো অন্যজন প্রেমিকের চোখকে ধুলো দিতে পারেনা। এ কয়েকদিন ইশরাকের আচরণ বেশ লক্ষ করেছে নির্ভীক। সে মনে মনে যে ভ*য়ের আ*শ*ঙ্কা করছে, তা যেন সত্যি না হয়। সে মনে প্রাণে চায় তার ধারণা ভু*ল প্রমাণিত হোক। ইশরাকের মনে যেন মিতালীর জন্য কোন অনুভূতি না জন্মে। তবে সে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
মিতালীর প্রতি এর বেশি ভাবনাচিন্তা দেখালে নির্ভীক সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদে যাবে। খোলাখুলি কথা বলবে ইশরাকের সাথে। যাকে একটু একটু করে মন গোপনে লালন করেছে, যার জন্য সুপ্ত অনুভূতির পাহাড় আকাশ ছুঁয়েছে, তাকে অন্যকারো হতে দেখা যায় না।

দ্রুত খাবার শেষ করে উঠলো নির্ভীক। ঘরে ফিরেই ফোন হাতে নিলো। ডায়াল করলো কাঙ্ক্ষিত নম্বরে। কানে বাজলো কাঙ্ক্ষিত সেই মধুময় সুর।

মিতালী বলল,
-“কিরে এখন ফোন করলি। জরুরি কোন কথা আছে?”

নির্ভীক জবাব দিলোনা। পাল্টা প্রশ্নে গেলো। গভীর আবেগ নিয়ে বলল,
-“তুই কি কখনো কারো মায়ায় জড়িয়ে আমাকে ছেড়ে দিবি?”

মিতালী খুঁজে পেলোনা এমন অযাচিত প্রশ্নের কারণ। বলল,
-“বুঝলাম না তোর কথা।”

-“তোর জীবনে যদি এমন কেউ আসে, যে তোকে সবরকম ভাবে সুখী করতে সক্ষম। ধর তুই তার মাঝে ভীষণভাবে আটকে গেলি, তখন কি আমায় ভুলে যাবি?”

মিতালী কৌতুহলী স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোর কী হয়েছে রে, সোজাভাবে বল।”

নির্ভীকের হুশ ফিরলো। সে কথা কা*টা*তে বলল,
-“কিছু না, এমনিই।”

মিতালীর বিশ্বাস হলোনা কথাটি। তাই বলল,
-“কিছু না হলে কেন এত অস্থিরতা।”

“বুকের ভেতর থমকে গেলে মন,
আমিই আমার অচেনা কেমন!
তখন, আলগোছে যে আয়না মেলে চাই,
দেখি, সেই সেখানে কোথাও আমি নাই।
আমার বন্ধঘরের অন্ধকারে, কোথাও আলো নেই।
আমি আমার খোঁজে নিরুদ্দেশ, তাই মনটা ভালো নেই।
আমার মনটা ভালো নেই।”

সাদাত হোসাইন

নির্ভীকের গলায় আবৃত্তি শুনে মিতালী নরম সুরে বলল,
-“কী করলে তোর মন ভালো হবে?”

নির্ভীকের কঠোর আদেশ,
-“আজ আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলবি।”

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here