নিরালায় ভালোবাসি,১৩,১৪

0
1078

#নিরালায় ভালোবাসি,১৩,১৪
তুহিনা পাকিরা
১৩ .

নীরব যখন কলেজে পৌঁছায় ইচ্ছে তখন ক্লাসে। তাই নীরব ক্যাম্পাসের মাঠে একাই বসে থাকে। এই একই কলেজে এক সময় ওউ পড়াশোনা করেছে। এখন অবশ্য অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ওই যে কিছুটা দূরে টবে থাকা কুন্দ ফুল গুলো এখন বোধহয় সংখ্যায় বেড়েছে। বকুল ফুল গাছটা আর দেখা যাচ্ছে না। গাছটা বোধহয় কেটে দিয়েছে। ওই গাছটা ওদের বন্ধুদের যে কতো নাম লেখা আছে তার হিসেব নেই। হয়তো সেই বেঞ্চ গুলোও নীরবকে ডেকে উঠে বলতে পারে, কী রে কী রকম চলছে দিনকাল? আমাদের মনে পড়ে তোর? এখনও কতো স্যার এক ঝটকায় দেখলেই বলে দেবে, আরে তুই নীরব না! কেমন আছিস?

ইচ্ছের ক্লাস শেষ হয় প্রায় আধা ঘন্টা পর। ক্লাস থেকে বেরোতেই সর্বপ্রথম নিতু এসে ওকে আর রক্তিমা কে ডাকে। নিতু বলে, ” চল ক্যান্টিনে চল। আমি যেহেতু তোদের বড়ো দিদি তাহলে আজকের ট্রিট আমার তরফ থেকে। তোদের জিজুর জন্ম দিন আজ। কিন্তু তিনি তো বহুত ব্যস্ত। ব্যাস আমিও, পকেট থেকে তিন হাজার বার করে কথা বলেছি।”

রক্তিমা ইচ্ছের কাঁধে হাত রেখে হাসতে যাচ্ছিল তার আগেই নীরব গিয়ে ইচ্ছেকে সাইডে নিয়ে যায়। ব্যাস এর ফলে যা হবার তাই হলো। রক্তিমা গিয়ে সোজা ইউনিয়ন কে ধাক্কা। ইউনিয়ন এর ছেলেটা সেই মুহূর্তে হাঁ করে জল খাচ্ছিল। কিন্তু ধাক্কার ফলে পুরো মুখময় জলে জলময়। তার মধ্যে নাকে মুখে জল ঢুকে যাওয়ার দরুন সে খুকখুক করে কেশে উঠলো। নিতু পুরোটাই হাঁ করে দেখলো। কিছুই করতে পারলো না। বেচারি রক্তিমা যে কান্ডটা করলো তাতে তার হাত পা কাঁপছে। শুনেছে এই ইউনিয়ন মারাত্মক রাগী। একটা বকা দিলেই হয়তো ও ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই দেবে।

– ” ওই কে রে? ” রক্তিমাকে চোখের সামনে দেখেই নিখিল বুঝেছে এই মেয়েই কাজ টা করেছে। তাই গম্ভীর গলায় বলল, ” এই মেয়ে ঠেললে কেনো আমাকে?”
রক্তিমাও ভয়ের চোটে ফাঁকা হলের দিকে হাত দেখিয়ে বলে, ” আমি না তো, ওই যে ঐখানের লোকটা।”

নিখিল হলের দিকে তাকিয়ে দেখে কেউ একটা দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। ওকে জলে ভিজিয়ে আরামে কথা বলা নিখিলের সহ্য হলো না। রক্তিমার স্কার্ফের শেষ অংশ দিয়ে মুখের বড়ো দাঁড়ি গুলো কোনো মতে মুছে নিখিল এগিয়ে গেল সেই দিকে। রক্তিমার ইচ্ছে করলো এই ইউনিয়নের মাথা ফাটিয়ে দিতে। ওর পছন্দের স্কার্টটা ভিজিয়ে দিল। ” যতসব” বলেই ও নিতুর কাছে চলে গেলো।

নিখিল গিয়ে ফোনে কথা বলা লোকটার হাতের বোতলটা কেড়ে বোতলের ক্যাপ খুলতেই অবাক, এ যে নিউ লাইবেরিয়ান। পিছন থেকে দেখলে মনে হবে কোনো স্টুডেন্ট। অবশ্য সামনে থেকেও তাই মনে হয়। কিন্তু মাথার মধ্যে দুই একটা পাঁকা চুল দেখলে বোঝা যায়, অবিবাহিত এই স্যারের বিয়ে হওয়া মুশকিল। কিংবা হলেও হতে পারে।

– ” কী করছো এটা? বোতলটা এই ভাবে হাতে নিলে কেনো?”

স্যারের ধমকে ইউনিয়নের ভয় হলো বটে। ” আসলে স্যার দেখলাম আপনার জলের বোতল খালি তাই ভাবলাম একটু জল এনে দিই।”

– ” চোখে দেখো না এতে জল ভর্তি। তবে আনলে এনে দাও। এই ঠাণ্ডা কনকনে জল আমি খেতে পারছি না। যাও নিয়ে যাও।”
কোনো মতে নিখিল ওখান থেকে পালিয়ে বাঁচে। অপরকে এতদিন হুকুম করে কতো কি করানো ছেলেটা শেষে জল আনতে ক্যান্টিনে যায়।

অপর দিকে ইচ্ছে আর নীরব বসে রয়েছে ক্যাম্পাসের মাঠে। ইচ্ছে চুপ চাপ ঘাসের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আর নীরব ইচ্ছের হাতের আঙ্গুল নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। কখনো আঙ্গুল দিয়ে হাতে আঁকি বুঁকি করছে, কখনো বারবার ইচ্ছের হাতের পাঁচ আঙুলকে গুনে সংখ্যা বাড়াচ্ছে। যেমন এই মুহূর্তে নীরবের গোনা মতে ইচ্ছের আঙ্গুলের সংখ্যা 75 টা।

-” এই ইচ্ছে তোর কী শরীর খারাপ?”

মাথা তুলে নীরবের দিকে দেখে ইচ্ছে। হ্যাঁ ওর শরীর একটু খারাপ বৈকি। গা হাত গুলো কেমন ম্যাজম্যাজ করছে, কেমন একটা জ্বর জ্বর ভাব। গলাও ব্যথা করছে। একটু আগেই ক্লাসে খুব কাশছিল। কিন্তু নীরবকে সে কিছুই বলতে পারলো না। ইচ্ছে এতদিনে এটুকু বুঝেছে যে নীরব ওর কথা না বলার কারণ টা এখনও জানে না। আর যখন থেকে বুঝেছে তখন থেকেই একটা ভয় ওকে জড়িয়ে রয়েছে। নীরব যদি কখনো সেই কারণ জানতে পারে তাহলে নির্ঘাত ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। কিন্তু বিয়ের আগে ও ভেবেছিল নীরব ওকে দয়া করে বিয়ে করছে। যদিবা নীরব ওকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে, তা ইচ্ছে জানে। কিন্তু কোনো দিন তার সিকি ভাগ ও ইচ্ছেকে বুঝিয়ে দেইনি।

– ” কী রে কী জানতে চাই….”
কথাটা নীরবের মুখ দিয়ে আর বেরোতে পারলো না। হুট করেই মনে পড়ে গেলো কিছুক্ষণ আগে বাড়ির ঘটনা।

– ” ইচ্ছে শোন, ”
ইচ্ছে কী শুনবে তার আগেই নীরব নিজের দুই হাতের মুঠোয় ইচ্ছের মুখ ধরে নিলো। অবাক তো ইচ্ছে হলো তবে কোথাও যেনো আনন্দ হলো, ভালো লাগলো। মনে হলো আজ সে খুব খুব খুশি।

– ” আমি তোকে এতদিন কথা না বলার জন্যে খুব বকেছি তাই না। আসলে কী বলতো আমি জানতাম না যে তুই কথা বলতে …, ”

ইচ্ছের করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় নীরব। ইচ্ছের মনটা হুট করেই কেঁদে উঠলো। নীরব নিশ্চয়ই তাকে আর মানবে না। বোবা মেয়েকে নিয়ে কেই বা সংসার করে। কিন্তু নীরব এর মনের কথা গুলো হয়তো ইচ্ছে জানে না। যেই ছেলেটা ইচ্ছে কথা বলতে পারে না শুনে শুধু এটা ভেবেছে যে সে ইচ্ছেকে কথা না বলার জন্যে কতো বকেছে। যার মনে একবারও এটা আসেনি যে একটা বোবা মেয়েকে নিয়ে সে কীকরে থাকবে। সে আর যাই হোক কারোর খুঁত সে ধরবে না।

– ” এই ইচ্ছে তুই কি এখন কাঁদবি নাকি? একদম কাঁদবি না, সবাই ভাববে আমি তোকে বকেছি। আর নাহলে আমার অদেখা শালী এসে বলবে , ” এই আপনি বুঝি আমার বন্ধুকে মারধর করেন?”

নীরবের বলার ভঙ্গিতে না চাইতেও ইচ্ছে হেসে ফেলে। নিস্তব্ধ হাসি, তবে প্রাণবন্ত। নীরব একভাবে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করেই ওর মাথায় নিজের ঠোঁট ঠেকিয়ে বলে, ” এইভাবে হাসবি তুই। তোকে মন খারাপ দেখলে কেমন যেনো পেঁচি পেঁচি লাগে। আর শোন তোর কথা বলার দরকার নেই। তোর ভাব ধারা দেখে তোকে বোঝার দায়িত্ব আমার। তুই খালি সারাদিন হাসিখুশি থাকবি। আর একটু বউ বউ হবি। তুই বউদের মতো ঝগড়া করিস না আমার সাথে। সে ঠিক আছে। কিন্তু আমি চাই তুই আমার সঙ্গে মারপিট করবি। চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বাজারে পাঠাবি, ছুটির দিনে ঘর পরিষ্কার করতে হেল্প করাবি, তোকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া করাবি। মনে থাকবে?

ইচ্ছে হাঁ করে নীরবের দিকে তাকিয়ে রইল। সেই মুহূর্তে নিতু আর রক্তিমা ওদের সামনে গিয়ে বসে। নিতু বললো, ” শুধু চুল কেনো মাঝে মাঝে ঘুরতে না নিয়ে গেলে কি অফিস থেকে রাত করে বাড়ি ফিরলে ঘরের দরজা খুলতে ভুলে যাবি। ”

রক্তিমা বললো, ” বাহ্ জিজু বাহ্।”

– ” আরে তোমরাই আমার শালিক পাখি মানে শালী আরকি।”

নিতু মাউন্টেন ডিউ এর ক্যান খুলে নিজের গলা ভিজিয়ে ইচ্ছের দিকে এগিয়ে দিলো। কিন্তু ইচ্ছে নীরবের দিকে তাকিয়ে ঠিক ক্যান টা নিতে পারলো না। উল্টে নীরবই হাতে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, ” কবে থেকে এইসব ইচ্ছে খাচ্ছে শালিক পাখিরা?”

– ” কেনো? ওর কী খাওয়া বারণ নাকি? ” নিতুর কথায় রক্তিমা বলে,

– ” হ্যাঁ। তুমি জানোনা নিতু দি?”
মাথা নাড়ে নিতু, যার মানে ও জানে না। কী করে জানবে ইচ্ছে কে দিলে ও তো না বলেনি কোনো দিন। ”

নীরব চোখ গরম করে ইচ্ছের দিকে তাকালো।

– ” কাল থেকে রোজ বাসক পাতার রস তোর খাদ্য তালিকায় বাড়লো। এখন বাড়ি চল। বাড়িতে গেস্ট এসেছে। আসার সময় তোকে নিয়ে যেতে বলেছে। ”

কথা টুকু বলেই নীরব উঠে দাঁড়ালো। ইচ্ছেও ঠোঁট ফুলিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ও কী করবে মাউন্টেন ডিউ পেলে ওর আর কিছুই লাগে না। তাই তো মাঝে মাঝেই খেয়েছে। তবে বেশি না অল্প। দুই ঢোক। নিতু আর রক্তিমা ইচ্ছেকে বাই বলে বিদায় দিলো।

নীরব আর ইচ্ছে ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর আগে নীরব হাত বাড়িয়ে কারোর চোখ পড়ার আগেই টপাটপ চার পাঁচটা কুন্দ ফুল তুলেই হাত বন্ধ করে নিলো। তার পাশেই ফুল গাছে হাত দিতে নিষেধ করা সাইন বোর্ড যেনো নীরবের কাজে অখুশি হয়ে বলে দিলো, তোর পুরোনো অভ্যেস এখনও যাইনি ফুল চোর?

কিন্তু জড় বস্তু আজ পর্যন্ত কথা বলতে পারেনি। তাই কথা গুলো নীরব কী আশেপাশের কেউই শুনলো না। তবে ইচ্ছে ভ্রু কুঁচকে নীরবের দিকে তাকিয়ে ইশারায় ওকে বোর্ডের দিকে তাকাতে বোঝালো। কিন্তু নীরব স্মার্টলি এগিয়ে গিয়ে বলে,

– ” বই চুরি, ফুল চুরি কোনো চুরিই নয়। তুই জানিস না?”
ইচ্ছে ঘাড় নাড়ে, যার মানে সে জানে না। নীরব ওর মাথায় টোকা দিয়ে বললো, ” বউ আপনি কিচ্ছু দেখেননি। এখন বাড়ি চলুন। ”

(চলবে)

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১৪ .

বিকেলের হাওয়ায় বারান্দার ইরার আপন নীড় হাওয়ার শন শন শব্দে ঝনঝন করে নড়ছে। সাথে বেচারাও নড়ছে। মাঝে মাঝে ডানা ঝাপটে বলে চলেছে ,”ইছে, ইছে, ।”

বারান্দার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে বাইরের প্রকৃতিতে হারিয়ে রয়েছে ইচ্ছে। শীতের শেষ আর বসন্তের শুরু, এই আবহাওয়ার মধ্যে এক মাধুর্য্য রয়েছে। আচ্ছা সবাই কী তা অনুভব করে? সকালের ভোরের আলোর সাদা আকাশটাকে দেখে দিন শুরু থেকে শুরু করে বেলার রোদের আলোর ছটার মাঝেও এক আলাদা অনুভুতি লুকিয়ে আছে। আর বিকেল শুরুর মুহূর্তকে বলে বোঝানো আর যাই হোক আমার কম্ম নয়। বিকেলের হাওয়া মৃদুমন্দগতিতে শুধু বয়ে চলে এমন না। সেই বাতাস যেনো কানে কানে বলে যায়, “শোনো হে রমণী শোনো, তোমার চেনা এই আকাশটা বহু দিনের পুরোনো। এই যে তোমার দেখা এই শহরে ছিল এক উপন্যাস এর প্রেমিকা। ছিল কোনো কাব্যিক। যার বুনোন শৈলী তোমার চোখে ভাসে, তবে তুমি তো বোঝো না হে রমণী। ওই যে পাখির গুঞ্জন, তারা রোজ গায় কবির প্রেমের হাজারো গান। সেই গানেরই প্রেমে তুমি
অপেক্ষায় রও যেই মুহূর্তের, ওই রাস্তার ধারে হেঁটে যাওয়া তোমার প্রেমিক সে আজ কখন আসবে? এসে কী তবে ভালোবাসি বলবে? নাকি না দেখেই চলে যাবে?”

প্রকৃতির সত্তা থেকে ইচ্ছে যখন বেরিয়ে এলো তখনও ইরা ” ইছে” করে ডেকে চলেছে। ইচ্ছের বড্ড রাগ হলো। ইচ্ছে নাম যদি পারিস তবে ‘ ইচ্ছে ‘ ডাক ‘ ইছে ‘ কেনো ডাকবি রে? যদি বা ইরা হলো ইচ্ছের সতীন। আগে ছিল না এই কয়দিন হয়েছে। কারণ এখন দেখা যায় ইরার সাথেই নীরবের যত ভাব। নীরব আঠার মতো ইরার পিছনে পড়ে থেকে কথা শিখিয়েছে। যেমন ‘ নীরব ‘ আর ‘ ইছে ‘। নিজের নামটা খুব ভালোভাবেই ইরার ঠোঁটোস্ত করিয়েছে নীরব। কেবল ইচ্ছের বেলায় গাফিলতি দিয়ে এই কাজ করেছে। তাই তো নামটা ইচ্ছে পর্যন্ত পৌঁছায়নি। মাঝের স্টেশনে ট্রেন না থেমে সোজা গন্তব্যে পৌঁছিয়ে গেছে যেনো। ইরা আবারও ডানা ঝাপটিয়ে ‘ ইছে ‘ বলতেই ইচ্ছে ইরার খাঁচায় একটা হালকা করে বারি মেরে ঘরে চলে গেল। শুধু বলা হলো না, ” আমার নামের পিন্ডি চটকাবিনা। নামটা কে নিয়ে মাঝে মাঝে আমি দুঃখ প্রকাশ করলেও নামটা আমি বড্ড ভালোবাসি।” জীবনে নামটাই কেবল ওর অজান্তে কেউ একজন অন্তত ভালো রেখেছে। নাহলে অনেকের এমন এমন নাম হয় তারা ভাবে জন্মের সময় যদি নিজের পছন্দের নামটা চুজ করতে পারতো। কিন্তু সব কিছু সম্ভব হয় না।
———-
বিছানা জুড়ে কম করে পাঁচটা শাড়ি ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু কার শাড়ি তা ইচ্ছে জানে না। ওর তো নয় আবার রুমা দেবীর ও না। তাহলে?

নীরব টিশার্ট গায়ে জড়াতে জড়াতে বললো, ” দেখ তো শাড়ি গুলো পছন্দ কিনা?”

ভ্রু কুঁচকে শাড়ির দিকে তাকালো ইচ্ছে। শাড়ি গুলো যে ওর জন্যে আনা তা ইচ্ছে ভালো মতোই জানে। আর শাড়ি গুলো যে ইচ্ছের পছন্দ হবে তা নীরব ও ভালো মতোই জানে। সামনেই ধীরের বিয়ে। সেই উপলক্ষেই নীরব শাড়িগুলো ইচ্ছের জন্যে এনেছে। যদিও বা ওরা শপিং এ গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে ইচ্ছে কিচ্ছুটি নেই নি। ওর মতে শাড়ি ওর লাগবে না। টাকা নষ্ট করার কী আছে। কিন্তু নীরব অন্য প্রকৃতির। শুধু শাড়ি তো সে কেনেনি পাশে রয়েছে প্রতিটা শাড়ির সাথে ম্যাচিং পাঞ্জাবি, কোট। ধীরের বিয়ের প্রতিটা অনুষ্ঠানে ওদের ড্রেস যেনো একই হয়, এই ভাবনায় শপিং। যদিও বা ভাবনাটা এসেছে ইপশি আর রজতের ড্রেস কম্বিনেশন দেখে। তাই নীরব ও অ্যাপ্লাই করলো নিজের ক্ষেত্রে।

ইচ্ছে র শাড়ি তো খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সব থেকে বেশি কিছু যদি ওকে আকৃষ্ট করে তবে তা নীরবের নীল পাঞ্জাবিটা। কী অসম্ভব সুন্দর! তাই হয়তো শাড়ির থেকে আগে পাঞ্জাবিটা খুলেই দেখে নিলো। যেনো ভাবাও হয়ে গেলো এই পাঞ্জাবিতে কেমন লাগতে পারে নীরবকে।

লাল একখান শাড়ি নীরবের ভারী পছন্দের। সেটাই নীরব হাতে নিয়ে ইচ্ছেকে দেখালো। ইচ্ছেও নীরবের দেখাদেখি নীল পাঞ্জাবিটা ওর চোখের সামনে তুলে অঙ্গভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলো কতো সুন্দর।

– ” বাহ্, লাল রঙে মিশে গেছে নীল।”

————————

সকাল থেকেই বিয়ে বাড়িতে হাঁক পড়ে গেছে। এই মুহূর্তে বাড়ির সকলে মিলে তারাহুরো করছে গায়ে হলুদের জন্যে। ছেলের হলুদ যত তাড়াতাড়ি হবে ততই না মেয়ের বাড়িতে হলুদ যাবে। পাশের বাড়ির বোস গিন্নি থেকে শুরু করে ইচ্ছের পরিবারের কতো আত্মীয় জড়ো হয়েছে আজ। ধীরকে বসানো হয়েছে হলুদ মাখাতে। বোস গিন্নি হাঁক দিয়ে বললো, ” কী গো নবনীতা? ইচ্ছে কে পাঠাবে তো এখানে তো আরেক এঁয়ো লাগবে। তাড়াতাড়ি পাঠাও। ওদিকে তেল হলুদে দেরি হয়ে যাবে তো।”

কথা শেষ হতে দেরি তার আগেই ইচ্ছের দূর সম্পর্কের এক পিসি বলে উঠলো, ” একই বলো বৌদি, ইচ্ছেকে জি করে এই কাজ করবে? ও তো বিধবা।”

কখনো শুয়ে, কখনো হেলে ধীরের জবরদস্ত ছবি তুলছিল নীরব। কিন্তু নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বলা কথায় চমকে যায় নীরব। হাতের ক্যামেরা দিয়ে দূর থেকে আসা ইচ্ছের কয়েকটা ছবি তুলতে তুলতে বলে, ” জীবিত এই আমাকে এতো তাড়াতাড়ি মারবেন না প্লিজ।”

সেই পিসি কে বোস গিন্নি কানে কানে বলে দিলেন ইচ্ছের বিয়ের কথা। আসলে তিনি তা জানতেন না। পাশ থেকে ইচ্ছের বয়সী সেঁজুতি নিজের মাকে সবার সামনেই বলে, ” বিধবা আবার কী? পৃথিবী থেকে কারোর বিদায় নেওয়া মানে এটা না যে সেই মানুষটা নেই তাই আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই। কেউ চলে গেলো মানে জীবন আমার জন্যে নতুন কিছু রেখেছে। ”

নীরব সাবলীল ভাবে মেয়েটির নিকটে গিয়ে বললো, ” আপনার নাম জানতে পারি.? ”

নিজের মন মর্জি চলা, রাগী মেয়েটি বিরক্তির সাথে বললো, ” আমি সেঁজুতি। ” বলেই মেয়েটি সেখান থেকে পালিয়ে যাই।

নীরবের মেয়েটাকে কেমন যেনো মনে হলো। যেনো নিজেই নিজের রাজা। দূর থেকে নীরবকে এইভাবে কারোর সাথে কথা বলতে দেখে ইচ্ছের ভালো লাগলো না। কেমন যেনো জেলাস দিল হলো।

_(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here