নিরালায় ভালোবাসি-০৩,০৪
কলমে : তুহিনা পাকিরা
৩.
সন্ধ্যা সাতটার দিকে ধীর অফিসের কিছু কাজ করতে বসেছিল, তখনই নীর এলো ঘরে। নীর এই ঘরে ধীরের সাথেই থাকে। রোজ দুই ভাইয়ে গল্প করে তারপর ঘুমাতে যায়। ধীরকে কাজ করতে দেখে নীর কিছুক্ষন এই দিক ওইদিক হাঁটতে লাগলো।
– ” যা বলার আছে বল। তোর এমন হাঁটার শব্দে সবাই ভাবতে পারে ভূমিকম্প হচ্ছে।”
নীর রাগলো না, ও জানে ওর দাদা ওকে ইচ্ছে করে রাগিয়ে দিচ্ছে। ও যে কথাটা বলতে এসেছে সেটাই বললো,
– ” দাদা তুমি জানো বাবা ইচ্ছেদির বিয়ে দেবে আবার।”
থেমে গেলো ধীরের হাত। চট করে পেপারস গুলো গোছাতে গোছাতে বললো, ” তোকে এই কথা কে বললো?”
– ” কেনো বাবা।”
ধীর আর দাঁড়ালো না। দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
———–
প্রভা দেবী বিছানায় বসে জামাকাপড় পাট করছিলেন। হঠাৎই ওনার নজর গেলো তার স্বামীর দিকে। মানুষটা দিন দিন কেমন যেনো একটা হয়ে যাচ্ছে। মেয়ের চিন্তায় চিন্তায় বড্ড চুপ হয়ে গিয়েছেন। ইচ্ছের ঘরের দরজায় দিয়ে রোজ মেয়েকে দেখে পালিয়ে আসেন। তিনি বোধ হয় রোজ ভাবেন তার জন্যে মেয়ের এতো কষ্ট। রোজ রাতে তিনি প্রভা দেবীকে বলেন, বড্ড তাড়াতাড়ি বিয়েটা দেওয়া ঠিক হয়নি। প্রভা দেবীর ভয় হয়, মানুষটা না অসুস্থ্য হয়ে যায়।
প্রভা দেবীর ভাবনার মাঝেই বাইরে থেকে ধীর ডাকে। ধীরের ডাকে তিনি বাইরে বেরিয়ে যান।
– ” কিছু বলবি!”
– ” হ্যাঁ ।” ঘরের ভিতরে কাকাকে দেখার চেষ্টা করে ধীর। কিন্তু দেখতে না পেয়ে বলে, ” কাকাই নেই?”
– ” না আছে। ঘরে আয়। উনি বারান্দায় বসে আছে। ”
অনুপ বাবু তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিছু বিষয়ে তিনি চিন্তা করছিলেন। তখনই প্রভা দেবী ওনাকে ডাকলেন।
– ” কিছু বলবে?”
– ” হ্যাঁ, বাইরে এসো। ধীর ডাকছে।”
————-
– ” কাকাই তুমি ইচ্ছের বিয়ে ঠিক করেছো?”
অনুপবাবু ক্লান্ত গলায় বললেন,
– ” হ্যাঁ। তোমাকে কিছুক্ষণ পড়েই বলতাম।”
অনুপ বাবুর কথাটা পছন্দ হলো না ধীরের। কিছুটা চেঁচিয়ে উঠলো সে।
– ” ইচ্ছের বিয়ে আমি হতে দেবো না কাকাই। একবার তোমরা সবাই ইচ্ছের জীবন নষ্ট করেছো আর না। ইচ্ছে আমাদের কাছেই থাকবে। ওকে আমি কোথাও যেতে দেবো না।”
ছেলের চিৎকারে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন নবনীতা দেবী। তিনি সবটাই শুনেছেন এতক্ষণ। ছেলের ঔদ্ধত্য দেখে রেগে যান তিনি।
– ” এটা কিরূপ আচরন তোমার ধীর! ভুলে যেও না উনি তোমার কাকা হন। তোমার বাবার মতোই তিনি তোমাকে ভালোবাসে। আর তুমি এইভাবে কথা বলছো। তুমি না বড়ো হয়েছ, সংসারের হাল ধরেছ। নীর কী শিখবে তোমার থেকে। ”
থেমে গেল ধীর। আস্তে করে গিয়ে অনুপ বাবুর পায়ের কাছে বসে তার হাতটা ধরে বললো,
,-” সরি কাকাই আমি এই ভাবে বলতে চাইনি। কিন্তু তুমি আমার একটা কথা শোনো ইচ্ছের বিয়ে দিও না। এমনিতেই ও অনেক কিছু সহ্য করেছে। কাউকে জানায়নি পর্যন্ত। ”
প্রভা দেবী গিয়ে ধীরের কাঁধে হাত রাখলেন। ওকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, ” ইচ্ছে এখন যে পরিস্থিতিতে আছে তার থেকে বের করার একটাই উপায় ‘ বিয়ে’ । তাই ওর বিয়ের কথা ভাবছে তোর কাকাই। জানিস তো, ভয় কে ভয় দিয়েই জয় করা যায়। ”
অনুপ বাবু ধীরের হাতটা শক্ত করে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
– ” আমি জানি ধীর তুই ইচ্ছেকে খুব ভালবাসিস। ওকে নিয়ে ভাবিস। কিন্তু ওকেও তো ভালো হতে হবে বল। ও নিজে থেকে চেষ্টা না করলে এই পরিস্তিতি থেকে কীকরে বেরোবে বলতো। হাসি খুশি মেয়েটা সারাক্ষণ এই ভাবে চুপচাপ থাকলে আমাদের কী ভালো লাগে বল! তাই আমি ওর বিয়ে ঠিক করেছি, নীরবের সাথে। ”
ধীর এতক্ষণ শান্ত ছেলের মত বসে থাকলেও এই কথায় আবার রেগে গেল। নীরবের সাথে ইচ্ছের বিয়ে এটা ও কিছুতেই মানতে পারছে না।
– ” নীরব কখনো রাজি হবে না। আর আমিও রাজি না। ওর সাথে আমার বোনের বিয়ে আমি দেবো না। ইচ্ছের থাকার জন্যে ওর দাদা, ভাই বেঁচে আছে। ”
– ” বোঝার চেষ্টা করো ধীর। আজ হয়তো ইচ্ছে এখানে থেকে গেলো। কিন্তু সারাজীবন ওকে কথা শুনতে হতেই পারে। কয়েক দিন পর তোমার বিয়ে হবে তখন কোন মেয়ে ওর সাথে মানিয়ে নেবে বলতো। তাই বলছি যা হবে হতে দাও। নীরব তো খারাপ না।”
– ” কাকিমা তুমি এইসব কি বলছো। তপতী কে তো তোমরা চেনো। তোমাদের মনে হয় ও এই রূপ কাজ করবে বলে। ”
– ” আমরা জানি তপতী খুব ভালো। ও এইসব কিছু করবে না। কিন্তু নীর, ওর বউ যে কিছু বলবে না সেটার গ্যারেন্টি কে দেবে বলো আমাকে?”
প্রভা দেবীর কথা শেষ না হতেই পিলারের আঁড়াল থেকে নীর বেরিয়ে গেলো,
– ” আমার দিদিকে কিছু বললে তখন আমি আমার বউকে এমন মারবো আর কিছু বলার সাহসই পাবে না।”
ধমকে উঠল ধীর, ” কী করছিস এখানে? তোর পড়া নেই ? যা পড়তে যা। খালি টো টো করে ঘুরে বেড়ানো কিসের?”
ভয় পেয়ে গেলো নীর। খুঁজে পায় না বয়সে বড়োরা কথায় কথায় এত বকে কেনো। তাও বিনা কারণে। ওর কী এখন পড়ার সময় নাকি। এই ডিসেম্বরে আবার কিসের পড়া। পড়বে তো জানুয়ারি থেকে, নতুন বই পেলে। ওর কাছে কী এখন বই আছে নাকি। কিন্তু ভুলেও নীর মুখে কথা বাইর প্রকাশ করলো না। চুপচাপ ঘরে চলে গেল।
ধীর চুপচাপ ওর যাবার দিকে তাকিয়ে বললো, ” নীরব নিশ্চয় বিয়েতে রাজি না!”
– ” না রাজি ও।”
থমকে গেলো ধীর। কী শুনলো নীরব রাজি।
-” কাকাই ভুলে যেও না নীরব একসময় ইচ্ছেকে বিয়ে করতে চাইনি। আজ হঠাৎ কি হলো যে ও বিয়েতে রাজি। নিশ্চয় ও করুণা করছে। নাহলে তো ও রাজি হবার কথা না। ”
অনুপ বাবু মৃদু হাসলেন। ” মানুষের বাইরের রূপ দেখে আমি মনে করেছিলাম মেয়েটা সুখে থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। কিন্তু তুই তো জানিস নীরব খুবই ভালো ছেলে। ওকে আমরা ছোটো থেকে দেখছি। আর রুমা দিদিও খুব ভালো। আমাদের দুই পরিবার তো একে অপরকে খুব ভালই চিনি। আর ইচ্ছেও তো বাড়ির কাছেই থাকবে তাইনা। আর এমনিতে রুমা দিদিই বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। না করতে পারলাম না। ”
ধীর চুপ করে কথা গুলি শুনলো, ” আমার কিছু বলার নেই। যা ভালো মনে হয় করো। তবে ইচ্ছের যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। ”
( চলবে)
নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
৪ .
কয়েক গুচ্ছ ফুলের মালায় ঘেরা বিছানায় বসে রয়েছে ইচ্ছে। লাজুক নববধূর ন্যায় মুখে তার লজ্জার আভা টুকুও নেই। আছে কেবল ভয়; অজানা এক ভয়। যেই ভয়ে থেকে থেকেই কেঁপে উঠছে ও। ঘরে নীরবের দেখা এখনও পাওয়া যাইনি। বাইরে থেকে কিছু আত্মীয়ের হাসাহাসির আওয়াজ ভেসে আসছে ইচ্ছের কানে। গতকালই নীরব ও ইচ্ছের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। খুব সহজ ভাবেই সব হয়েছে, বিয়েতে যাদের না বললেই নয় তাদেরই কেবল বলা হয়েছিল। তাও কেবল পাড়া প্রতিবেশীদের।
হঠাৎই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে চমকে উঠলো ইচ্ছে। মাথা তুলে দেখলো নীরব এসেছে। পরনের শেওয়ানী টায় ওকে বেশ ভালোই মানিয়েছে। ইচ্ছে ওকে ভালোকরে হয়তো এখনই দেখলো। নাহলে বিয়ের সময় ইচ্ছে ছিল নির্লিপ্ত, মাথা কাজ করছিল না। চিৎকার করে নিজের ভয়টা সকলকে বোঝাতে গিয়েও সে ব্যর্থ হয়েছে। আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল বাবার দিকে কিন্তু ওখানেই যে ওর সব আশা শেষ ছিল। ইচ্ছের বিয়েতে সব থেকে খুশি হয়তো অনুপ বাবুই ছিলেন। তার বহু আশা মেয়েটা কে সুখে দেখার। আর সেটা যখন পূর্ণ হচ্ছে খুশি তো হবেনই। যার চমক তার চোখে মুখেতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল। আর সেই চমকই আটকে দিলো ইচ্ছেকে। বাবাকে এতো খুশি হয়তো ও আগে কখনো দেখেইনি। তাই কিছুই করতে পারেনি। জীবনের এতো বড়ো সিদ্ধান্তটা ও না পারলো নিজে নিতে, আর না কেউ ওর সম্মতি চাইলো। আসলে মেয়েদের জীবনের ইচ্ছে গুলো পাখির ডানার মতো স্বাধীন না। তারা চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছু করে উঠতে পারেনা। জলের স্রোতে কেবল ভেসে চলে এই ঘাট থেকে ওই ঘাট।
– ” এখন ওর সঙ্গে আমার থাকতে হবে। মানুষ জীবনে যা একেবারেই চায় না তাই পেতে হয়। আমাকেও হলো।”
নীরবের বিড়বিড় করে বলা কথা গুলো হয়তো ইচ্ছে বুঝতে পারে। হঠাৎই মনের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার হয় ইচ্ছের। চোরা চোখে নীরবকে দেখে, বোঝার চেষ্টা করে নীরব কি রেগে আছে! কিন্তু কোনো কিছুই বোঝে না। তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে একপাশে সরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ও। ইচ্ছের এইরূপ ব্যবহারে আহাম্মকের মতো ওর দিকে তাকায় নীরব। ইচ্ছে কী করতে চাইলো তা নীরবের মাথার উপর দিয়ে গেল। দুইহাতে মাথার চুলগুলো টেনে ধরে নীরব। এখন এই শীতের মাঝেও ইচ্ছেকে দেখে ওর প্রচুর গরম লাগছে।
ইচ্ছের পরনের সাউথ ইন্ডিয়ান ভারী শাড়ি দেখে সত্যিই যে কারোরই কেমন এক তীব্র অসস্তি হবে।
_” যা এই ভারী শাড়িটা চেঞ্জ করে আয়। যতই শীতকাল হোক এই শাড়িতেই মনে হয় তুই এবার হেলে পড়ে যাবি।”
দীর্ঘ নয় মাস পর নীরবের গলায় নিজের সম্পর্কে কোনো কিছু শুনলো ইচ্ছে। মনের মধ্যে দিয়ে ওর যেনো কোনো এক শীতল বাতাস বয়ে গেল। কিন্তু সেই শীতল স্রোতকে ঠান্ডার আভাস ভেবে ইচ্ছে ভুল করলো। নীরবের কথায় ঘাড় নেড়ে সায় দিলো। ইচ্ছে তো এখান থেকে পালানোর সুযোগেই ছিল। তাই সুযোগটা পেতেই তারাহুরো করে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
ইচ্ছের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নীরব তপ্ত শ্বাস ফেললো। পকেট থেকে মায়ের দেওয়া হাতের বালা জোড়া বিছানার পাশের টেবিলের একটা ড্রয়ারে রাখলো। রুমা দেবী বারবার করে নীরবকে জানিয়েছে এই বালা জোড়া যেনো ইচ্ছেকে নীরব নিজের হাতে পরিয়ে দেয়। আর নিজের তরফ থেকে একটা গিফট যেনো ও ইচ্ছেকে দেয়; এটা নিয়ম। নীরবের মনে কেবল একটাই প্রশ্ন, ও বিয়ে করেছে বলে ইচ্ছেকে উপহার দেবে। তাহলে ইচ্ছে কি দেবে? ওর ও তো উচিত নীরবকে কিছু গিফট দেওয়া। প্রতিটা মানুষ গিফট ভালোবাসে। তেমনি ইচ্ছে যদি কোনো গিফট দেয় তাহলে নীরবেরও বেশ ভালো লাগবে।
—————
– ” পেনের নীব, তুমি প্লিজ আমাদের বিয়েটা মেনে নাও।”
বিকেল শেষের মুহূর্তে নীরব দাঁড়িয়ে ছিল নিজের বাড়ির ছাদে। হঠাৎই ইচ্ছের আগমনে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে নীরব।
– ” এই ইচ্ছে কি করছিস, যা তো এখান থেকে। দেখছিস না আমি হাওয়া খাচ্ছি। ”
ইচ্ছে দমলো না। চোখ মুখ শক্ত করে বললো, ” আমি জানতে চাই তুমি বাবাকে কেনো না বলেছো? আমাকে বিয়ে করলে তোমার কি এমন ক্ষতি হবে ! আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।”
তীব্র বিরক্ত হলো নীরব। বিয়ে করতে চায় না এর জন্যে আবার কৈফিয়ত লাগবে নাকি।
– ” তোর এই এতো এতো বকবকানি অসহ্য লাগে আমার। মাঝে মাঝে মনে হয় কানে কালা হয়ে যাই। আর সত্যি বলতে আমার তোকে বউ হিসেবে পছন্দও না। ছার এতো কথায় কী কাজ! তুই অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারিস, সমস্যা কি? শুনলাম তো তোর বাবার কাছে একটা ছেলের সম্বন্ধ এসেছে। নাম সুবীর দেববর্মণ। দেখতেও ভালো, জব করে, তোর সাথে দারুন মানাবে। যা এখানে না দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি যা, সাজুগুজু কর। কাল তোকে দেখতে আসবে। বেশি না বকে বিয়েটা করে নে। ”
কথা গুলো মন দিয়ে শোনে ইচ্ছে। চোখের কোনায় যে কখন জল জমেছে তা ও বোঝেনি। তবে সেই মুহূর্তে ও পারে না কেবল দৌড়ে সেখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু যাবে কিভাবে, ওর পা গুলো যেনো ওই খানেই আটকে রয়েছে। নীরব খানিক অন্যমনস্ক হয়ে অন্য দিকে তাকাতেই ইচ্ছে চলে যায় সেখান থেকে। সিঁড়িতে পায়ের শব্দে নীরব বোঝে ইচ্ছে চলে গেছে। কিন্তু ওর মনে জাগে না কোনো মায়া কি অনুতাপ। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ছাদ ময় পায়চারি করে ও।
———–
হঠাৎই সেন্টার টেবিলের উপর থেকে নিজের পা জোড়া ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে গেলেই তন্দ্রা ভাব কেটে যায় নীরবের। তখন বালা জোড়া রেখে সোফায় বসে। হঠাৎই হারিয়ে যায় ওদের পুরোনো সেই ছোটো গল্পে। যেই গল্পের শেষটা ওর জানা হয়নি; তবে এইবার হয়তো এই গল্পটা ওদের উপন্যাসের আকার ধারণ করতে চলেছে। যার শেষটা হয়তো ওদের জন্যে নিরালায় ভালোবাসাময় হয়ে উঠবে।
কিন্তু নীরবের ভাবনার মাঝেই ওর ঘুম এসে যায়। হঠাৎ করেই বারান্দা থেকে আসা শীতল বাতাসে সারা শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে নীরবের। যার জন্যে চোখ খুলতে হয় ওকে। ঘড়ির কাঁটায় তখন সবে সাড়ে বারোটা। নীরবের মনে আছে বারোটা দশ পনেরোয় ও ঘরে এসেছিল। তারমানে বেশিক্ষণ হয়নি।
উঠে দাঁড়ালো নীরব, ইচ্ছেকে বালা জোড়া দিতে হবে। নাহলে কাল সকালে ওর মা ইচ্ছের হাতে বালা দুটো না পেলেই ওকে বকবে। কিন্তু ঘরের কোথাও ইচ্ছেকে না দেখে নীরব ওয়াশ রুমের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু ইচ্ছে সেখানেও নেই। ভয় হলো নীরবের। কোথায় গেলো এতো রাতে! পরমুহূর্তেই কিছু ভেবে নীরব বারান্দায় ছুটলো। কিন্তু বারান্দাতেও ইচ্ছে নেই। নীরব ‘ ইচ্ছে ‘ বলে ডেকে ঘরের দিকে যেতে গিয়েও থেমে গেল। ওর দৃষ্টি কিছু একটা আকর্ষণ করতে চাইছে, কিন্তু সেটা কি?
হাতের চুড়ির ঝনঝন শব্দের উৎপত্তি খুঁজে নীরব দেখলো , বারান্দার কোণার দিকে মেঝেতে একটা বেডশিট পেতে তার উপরে ইচ্ছে শুয়ে রয়েছে। গায়ে রয়েছে একটা চাদর।
ইচ্ছেকে এই অবস্থায় দেখে রেগে গেল নীরব। এই ঠান্ডার মধ্যে কী করছে ইচ্ছে? হনহন করে ইচ্ছের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর মাথাটা ধরে ওকে উঠে বসালো।
আচমকা এই কাজে ইচ্ছে চমকে উঠে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করলো। ইচ্ছের মুখ দেখলেই যেনো বোঝা যাবে ও যেনো খুব ভয়ের সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু নীরব ইচ্ছের মুখ থেকে হাত দুটো সরিয়ে দাঁড় করিয়ে গায়ের চাদরটা ভালো করে ইচ্ছেকে জড়িয়ে দিলো।
– ” এই বাড়ির বউ তুই, কাজের মেয়ে না। এই ভাবে কে এখানে শুয়ে থাকে? ঠাণ্ডায় মরে যাবি তো। আমি তোকে নাহয় একবার বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু এখন তা বলে আগের ঘটনার জন্যে আমার উপর রাগ করে নিজেকে কষ্ট দিবি। ”
নীরবের বলা প্রথম কথা টুকু শুনেই হারিয়ে গেলো ইচ্ছে। কানের মধ্যে ভেসে উঠছে কিছু কথা। যতবার কথা গুলো মনে পরছে ইচ্ছের তত মাথা দপদপ করছে। বারবার যেনো কেউ বলে চলেছে, “এই বাড়ির কাজের লোক তুই, বউ না।”
– ” কী রে কি বললাম কানে গেলো?” শান্ত চোখে নীরবের দিকে তাকাতে নীরব আবারও বললো,
– ” যা ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়। ”
ইচ্ছে বিনা বাক্যে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।
– ” শোন!”
পিছন ফিরে তাকালো ইচ্ছে। কিন্তু নীরবের গম্ভীর গলা শুনে ও আরও ভয় পেয়ে গেলো।
– ” বিছানার ডান পাশটা আমার। ওই দিকটা ছেড়ে অপর দিকে ঘুমিয়ে পড়। আমি ডান দিক ছাড়া ঘুমাতে পারি না। ”
( চলবে )