#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২৭,২৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
২৭
আজ বন্ধের দিন। কাজ থেকেও ছুটি নিয়েছে এনাক্ষী। সেইদিনের পর থেকে আজ প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে তবে এনাক্ষীর মন দিন যত যাচ্ছে খা’রা’প হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনা, কাজ কিংবা খাওয়া কোনটাতেই তার মন নেই। কায়ান ব্যপারটা লক্ষ্য করেছে এবং সুজির সাথে কথা বলেছে। যেহেতু সুজি মেয়ে তাই তার থেকেও সুজি ভালো তাকে বুঝতে পারবে।
ম’ন মরা হয়ে সোফায় শুয়ে ছিলো এনাক্ষী। শান্ত, নির্জীবদৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে সে। মাথায় তার হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। দরজায় কড়াঘাতের শব্দে সে মেঝে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো। ধীরে সুস্থে উঠে দরজা খুলে দিলো।
” নিজের একি অবস্থা করেছো তুমি? ইশ… চোখ-মুখ এ কয়েকদিনে শুকিয়ে কি অবস্থা হয়েছে তোমার?”
” তুমি আজ আমার বাড়িতে যে সুজি অন্নি? অফিসে যাওনি বুঝি?”
” এনাক্ষী তুমি বোধ ভুলে গিয়েছো আজ বন্ধের দিন।”
” ও হ্যাঁ, দেখো তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুমি বসো আমি কফি বানিয়ে আনছি।”
” না লাগবেনা। তুমি বরং তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুয়ে জামা পরিবর্তন করে এসো। আমাদের সাথে বাইরে যাবে তুমি।”
” তোমাদের সাথে? না অন্নি তোমরাই বরং যাও। তোমাদের মাঝে গিয়ে আমি কি করবো।”
” চুপ করো। যাও তাড়াতাড়ি, কায়ান অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। আমার জন্য না হোক অন্তত কায়ানের কথা ভেবে হলেও চলো।”
অতঃপর অদৃশ্য কারণে এনাক্ষী আর বারণ করতে পারলোনা।
কায়ান নিচে দাঁড়িয়ে দু’জনের অপেক্ষা করছিলো। দু’জনকে আসতে দেখে কায়ান মিষ্টি করে হাসলো। এগিয়ে এসে এনাক্ষীর মাথায় হালকা করে হাত বুলিয়ে দিলো।
” এতো অযত্ন করলে হবে? নিজের যত্ন নিজে না নিলে কে নেবে? নিজেকে যে অকারণে ক’ষ্ট দিচ্ছো তুমি কি বুঝতে পারছোনা শুধু তুমি নও আরো অনেকেও কষ্ট পাচ্ছে। নিজেকে কষ্ট দিতে বুঝি খুব ভালো লাগে তোমার?”
” আ…. কায়ান এতো কথা বলছো কেন? যেটার জন্য এসেছি সেখানে চলো। না হলে তুমি থাকো আমরা দু’জন চলে যাই। চলো তো এনাক্ষী, না হলে এই পা’জি ছেলেটার জন্য সারাদিনের পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যাবে।”
” আরে আমাকে ছাড়া যেওনা।”
দক্ষিণ কোরিয়া বর্তমানে সজ্জিত হয়েছে গোলাপি রঙের চেরি ব্লসমে। দেশী-বিদেশী সবধরনের মানুষ ভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে এসেছে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
এখন তারা এসেছে “জিনহে চেরি ব্লসম ফেস্টিভলে”। দক্ষিণ কোরিয়ায় বসন্তকালে হওয়া ফেস্টিভলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। অনেক কপোত-কপোতী হাতে হাত রেখে হাঁটছে। ছোট বাচ্চারা নিচে পড়ে থাকা চেরি ব্লসমগুলো নিয়ে খেলা করছে। এনাক্ষী মুগ্ধ নয়নে চারপাশে দেখছে। এতো সুন্দর পরিবেশে এসে এনাক্ষীর মন আগের তুলনায় অনেকটা ভালো হয়ে গিয়েছে। মজার ব্যপার এনাক্ষীর হাত একপাশে সুজি এবং অন্যপাশে কায়ান ধরে রেখে। যেন কোন ছোট বাচ্চাকে তার বড় ভাই-বোন ধরে রেখেছে।
একটা ছোট লেকের মতো জায়গার সামনে দাঁড়ালো এনাক্ষী। বেশি পানি নেই এতে তবে এই অল্প পানিতে পরিপূর্ণ জায়গাটা দেখার জন্য মানুষের ভীড় অনেক। পানির উপরে শোভা পাচ্ছে গোলাপি রঙের চেরি ব্লসম সেইসাথে দু’টো সুন্দর হাঁস। যারা পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এনাক্ষীর কেন যেন মনে হলো হাঁসগুলো বুঝি নিজেদের নিয়ে খুবই গর্ভ অনুভব করছে কারণ তাদের দেখার জন্য যে শত শত মানুষ ভীড় করেছে। নিজের ভাবনায় হাসলো এনাক্ষী।
” ভালো লাগছে?”
কায়ানের কথা শুনে মিষ্টি এসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো এনাক্ষী।
পুরো রাস্তা চেরি ব্লসমে ভরে গিয়েছে। গাছ থেকে ঝরে ঝরে মাটিতে পড়ছে চেরি ব্লসম, যেন চেরি ব্লসমের বৃষ্টি হচ্ছে। এনাক্ষীর খুব করে ইচ্ছে হলো কোন একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে এই সুন্দর মূহুর্তটা উপভোগ করতে কিন্তু এখানে এতো ভীড়, সেইসাথে তার বলতেও সং’কোচ লাগচ্ছিলো। তাই আর বললোনা, মনের কথা মনেই রেখে দিলো সে।
” সুজি চলো একটা গাছের নিচে দাঁড়াই। ঝরে পড়া চেরি ব্লসম গায়ে পড়ার বিষয়টা উপভোগ না করলে পুরো বছরটাই বৃথা।”
” হ্যাঁ কায়ান তুমি ঠিক বলেছো। মনে আছে আগের বছর আমি ভীড়ের জন্য একটুও মজা করতে পারিনি। বছর আমি তা পুষিয়ে নেবো। এনাক্ষী এসো, দেখবে ভালো লাগবে।”
উপর থেকে চেরি ব্লসম ঝরে পড়ছে। এনাক্ষী হাত বাড়িয়ে দিলো আর সঙ্গে সঙ্গে টুপটাপ করে তুলার মতো নরম কতগুলো চেরি ব্লসম এসে তার হাতে পড়লো। এনাক্ষীর মন এবার খুশিতে নেচে উঠলো। সে একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। অজানা হালকা একটা গন্ধ তার নাকে এসে বারি খেলো, বেশ ভালো লাগলো এনাক্ষীর।
” মন যা চাই যদি তা সঠিক হয় তবে মনকে মোটেও বাঁধা দেওয়া ঠিক নয়। পরবর্তী দিনের অপেক্ষা করা বড্ড বোকামি। মন আজ চাইছে, তোমার উচিত মনের ইচ্ছে মনের মধ্যে না রেখে পূরণ করে ফেলা।”
ধপ করে চোখ খুলে ফেললো এনাক্ষী। কায়ানের মুখ এখনো তার কানের কাছেই আছে। এনাক্ষীর গোলগোল চোখে তাকানো দেখে হাসলো কায়ান। তার মুখে হালকা ফু দিয়ে সরে এলো সে। এনাক্ষী পাশে তাকিয়ে দেখলো সুজির এসবে কোন খেয়াল নেই। সে চেরি ব্লসম কুড়াতে এবং ছবি তুলতে ব্যস্ত।
রেল লাইনের মতো একটা সুন্দর জায়গা আছে এখানে, যার চারিপাশে পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সুজি দৌড়ে পাথর ছাড়ানো রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলো। এনাক্ষী দেখলো লোহা দিয়ে তৈরি পাতের উপর অনেকেই হাঁটছে। সেও আর দেরি করলোনা। একটা পাতের উপর দাঁড়িয়ে পড়লো। তবে দু-তিন কদম এগিয়ে যেতেই এনাক্ষী দাঁড়িয়ে পড়লো। সে এতো নাড়াচাড়া করছে যে মনে হচ্ছে এই বুঝি পড়ে হাত পা ভেঙে গেলো। আবারো হাঁটার চেষ্টা করবে কিন্তু পা উল্টিয়ে পড়ে যেতে নিলো তবে পাশ থেকে কায়ান তার একটা হাত টেনে ধরে ফেললো।
” ইশ এনাক্ষী এখনো পর্যন্ত ঠিক মতো হাঁটা শিখলেনা। তোমার যে কি হবে মাঝে মাঝে তা চিন্তা করি আমি।”
” তো করো কেন? আমি কি বলেছি করতে?”
” ওরে বাবা এতটুকু মেয়ের কথা দেখো। চলো আমার সাথে হাঁটবে, না হলে দেখা যাবে আজ আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেনা।”
রেল লাইনের একটা পাতে কায়ান এবং একটাতে এনাক্ষী হাত ধরে হাঁটছে দু’জনে। এনাক্ষীর এবার ভয় লাগছেনা, সেইসাথে আগের তুলনায় কম নড়াচড়া করছে সে। দু’জনেই বেশ উপভোগ করছে মূহুর্তটা। দূর থেকে সুজি তাদের দু’জনকে দেখছে, শান্ত দৃষ্টি তার। তার মুখশ্রী দেখে বোঝার উপায় নেই তার মনে কি চলছে।
অনেকগুলো ফুড স্টলসহ বিভিন্ন ছোট ছোট জিনিসের স্টল আছে এখানে। এনাক্ষী ঘুরে ঘুরে দেখছে সবকিছু। একটা ছোট দোকানে এসে তারা দাঁড়ালো। খুব সুন্দর সুন্দর অনেকগুলো ছোট বড় ক্লিপ সাজিয়ে রাখা আছে টেবিলে। সুজি নিজের পছন্দ মতো ক্লিপ দেখছে আর নেওয়ার জন্য সরিয়ে রাখছে। এনাক্ষীর একটা বেগুনি রঙের ক্লিপ খু্ব পছন্দ হলো, ক্লিপটার উপর বড় একটা ফুল লাগানো আছে। সে ক্লিপটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলো এবং ভাবতে লাগলো নেবে কিনা।
” পছন্দ হয়েছে?”
” হুম তবে চিন্তা করছি নেবো নাকি রেখে দেবে।”
কায়ান এনাক্ষীর হাত থেকে প্যাকেটটা টেনে নিয়ে তার থেকে একটা ক্লিপ বের করলো। এনাক্ষী সামনে থাকা চুলগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিলো সে। তারপর দু’কদম পিছিয়ে গিয়েছে চোখ পিটপিট করে তাকে দেখলো।
” বাহ্ বেশ সুন্দর লাগছে। কি বলো সুজি?”
” হুম এনাক্ষী তোমাকে সুন্দর লাগে ক্লিপটাতে।”
” এই নাও আরেকটা ক্লিপ, এখন থেকে এগুলো তোমার। আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য উপহার। আর শোন সাবধানে রাখবে ক্লিপগুলো। আবার হারিয়ে ফেলোনা।”
কায়ানের এতো কথার মাঝে এনাক্ষী কোন কথা বলার সুযোগই পেলোনা। সে হাত দিয়ে মাথায় থাকা ক্লিপটা ছুঁয়ে দেখলো। কিছুসময় পর তার ঠোঁটের কোণে আপনাআপনি হাসি ফুঁটে উঠলো।
চলবে…….
#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” আরে ফিলিক্স কেমন আছো তুমি? কতদিন পর তোমার দেখা পেলাম। কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলে তুমি?”
এনাক্ষীর কথা শুনে ফিলিক্স দাঁড়িয়ে পড়লো। এনাক্ষী লক্ষ্য করে দেখলো ফিলিক্সের চেহারার ভাবভঙ্গিটা একটু অন্যরকম লাগছে, যা এনাক্ষীর মনে অন্যরকম ভাবনার সৃষ্টি করছে।
” ফিলিক্স তুমি ঠিক আছো?”
” হ্যাঁ এনা আমি ঠিক আছি। আসলে আমার কিছু জরুরি কাজ ছিলো তাই অনেক ব্যস্থ আছি। তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
” সিভি স্টোরে।”
” আচ্ছা যাও তাহলে। আমার এখন একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।”
এনাক্ষীকে পরবর্তীতে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো ফিলিক্স।।এনাক্ষী একটু অবাক হলো বটে তবে বেশি কিছু ভাবলোনা।
.
.
” কি ভাবছো কায়ান?” কায়ানকে অন্যমনস্ক দেখে প্রশ্ন করলো সুজি।
” ভাবার বিষয়ের কি অভাব আছে সুজি?” দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কফির প্লাস্টিকের কাপটা টেনে নিলো কায়ান।
” হুম বুঝলাম। তা কোন বিষয় নিয়ে ভাবছো? তুমি কি এখনো এনাক্ষীর বিষয়টা নিয়ে ভাবছো?”
” সেটা নিয়েও ভাবছি তবে সাথে আরো কিছু।”
” তুমি কি আবারো ওসব নিয়ে ভাবছো নাতো?”
” হুম। কোন কিছু কি পেলে? কোন উপায় কিভাবে কাজটা করা যায়?”
” না তবে চেষ্টা করছি। তবে কায়ান তোমার কি মনে হয়না এখন এসব ছেড়ে দেওয়া উচিত? তুমি তো ভালো আছে তাহলে কেন….”
” না সুজি এটা সম্ভব নয় তা তুমি জানো। আমাদের যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে হবে। বেশি দিন গেলে আরো অনেক কিছু হারিয়ে যাবে।”
” চিন্তা করোনা সব ঠিকভাবে হবে। আমি আছি তো তোমার পাশে।” কায়ানের হাতের উপর হাত রেখে বললো সুজি।
” তুমি আছো বলেই আমি এখনো এই পথে এগিয়ে যেতে পারছি। তুমি না থাকলে কবেই এই বিশাল সাগরে আমি ডুবে যেতাম। আমাকে ছেড়ে যেওনা সুজি, তুমি হা’রিয়ে গেলে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারবোনা।”
.
.
তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে গিয়ে ভুলবশত একটা প্লেট ভেঙে ফেলেছে সিন হারি। যার জন্য শা’স্তি হিসেবে তাকে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। হারির দেহে এখন একটুও শ’ক্তি বেঁচে নেই, তার কাছে বাড়তি খরচ করার মতো টাকা নেই যে সে বাস কিংবা অন্যকিছু নিয়ে বাড়ি ফিরে আসবে। অগত্য না চাইতেও তাকে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। একটা নির্জন গলির দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে হারি। আর দু’টো গলি পরেই তার বাড়ি। আচমকা হারি অনুভব করলো কেউ তার পেছন পেছন আসছে, তার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে ব্যক্তিটি। হারির নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে গেলো। সে পেছনে না তাকিয়ে ব্যাগটা শক্ত করে ধরে যেই সামনে এগিয়ে যাবে তখন কারো শীতল কন্ঠে আপনাআপনি থেমে গেলো।
” সিন হারি।”
হারির ঠোঁট কাঁপতে লাগলো, চোখ দিয়ে না চাইতেও পানি বেরিয়ে এলো। সে শক্ত করে ব্যাগটা ধরে প্রাণপণে ছুটতে শুরু করলো।
চোখ বন্ধ অবস্থায় হারি অনুভব করতে পারলো তার শরীরের ব্যথা, তাকে যে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে তাও সে বুঝতে পারলো। এবার সে চোখ খুলে চারিদিকে দেখে নিলো। ময়লা একটা জায়গা, এখানে ওখানে নানা জিনিস পড়ে আছে। হারির পুরো শরীরে ময়লা লেগে আছে, হাত-পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। নিজের অবস্থা দেখে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সিন হারি। এরই মাঝে কেউ জুতোতে শব্দ করে ভেতরে প্রবেশ করলো।
” কে তুমি? কেন এরকম করছো? দেখো আমি তো তোমার কোন ক্ষ’তি করিনি, প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।”
কালো পোশাকে আবৃত লোকটি চুপচাপ হারির দিকে তাকিয়ে রইলো।
” প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। আমার মা অসুস্থ, আমার কিছু হয়ে গেলে আমার মা আর ছোট ভাই যে বাঁচবেনা। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।”
” তোমার হাসিটা না অনেক সুন্দর। এতো সুন্দর কেন তোমার হাসি?”
এইরকম পরিস্থিতিতে এধরণের কথা শুনে যে কেউই অবাক হয়ে যাবে, হারির বেলায়ও তার ব্যক্তিক্রম হলোনা।
” প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও তুমি। তোমার কাছে হাত জোড় করে ভি’ক্ষা চাইছি আমাকে ছেড়ে দাও।”
” আচ্ছা এতোজন থাকতে আমার চোখ তোমার হাসিতেই আটকে গেলো কেন বলো তো? একটু হাসো তো।”
এবার হারি রেগে গেলো। সে চিৎকার করে বললো,
” তোমার কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? দেখো যদি তুমি কোন প্র্যাংক ভিডিও করার জন্য এসব করো তাহলে প্লিজ বন্ধ করো আর আমাকে যেতে দাও।”
” তুমি হাসছো না কেন? সেইদিন না কত সুন্দর করে হেসেছিলে। তাহলে এখন হাসছো না কেন? হাসো, হাসো বলছি। আমি হাসতে বলেছি সিন হারি।” শেষের কথাটা চিৎকার করে বললো লোকটি। লোকটির চিৎকার শুনে হারি কেঁপে উঠলো এবং কান্না করে দিলো। লোকটি একটা ছু’রি হারির মুখে বুলাতে লাগলো। ভ’য়ে হারি চোখমুখ খিঁচে ফেললো।
” হাসো সিন হারি, হাসো৷ না হলে কিন্তু আমি তোমার পরিবারকে মে’রে ফেলবো।”
” না না তুমি প্লিজ আমার পরিবারকে কিছু করোনা। আমি হাসছি, এই দেখো।” হারি জোড় করে হাসলো।
” হয়নি আরো সুন্দর করো হাসো।”
হারির চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে নিরুপায়। মুখের হাসি আরো চওড়া করলো হারি। তবে এবারো লোকটি সন্তুষ্ট হলোনা। লোকটি এগিয়ে এসে হারির মুখে আকার পরিবর্তন করলো।
” এবার ঠিক আছে।”
লোকটি আচমকা ছুড়ি দিয়ে হারির মুখে দাগ কে’টে দিলো। ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো সে। লোকটি হারির মুখ চেপে ধরে ঠোঁটের কোণা থেকে আস্তে আস্তে কাঁটতে শুরু করলো। মূহুর্তেই র’ক্তে ভরে গেলো হারির মুখমন্ডল এবং শরীরের কিছু অংশ। একটা পাশে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে লোকটি সরে এলো। হারি বুঝতে পারলো তার আর ঘরে ফিরে যাওয়া হবেনা, তার জীবনের সমাপ্তি কিছু সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে।
” মা, ভাই তোমাদের আমি খুব ভালোবাসি। আমি চলে গেলে নিজেদের খেয়াল রেখো। মা ক্ষমা করো তোমার এই অ’ধ’ম মেয়েকে, নিজেদের খেয়াল রেখো। শেষবারের মতো তোমাদের দেখার ভাগ্য আর আমার হলোনা। ভালোবাসি তোমাদের।”
আরেকটি দিন অতিবাহিত হলো, নতুন দিনের নতুন প্রহরের আগমন ঘটলো। এই নতুন প্রহর কারো জন্য সুখের, আবার কারো জন্য দুঃখের। মেয়ে হারা আরেকজন মায়ের কান্নার শব্দে ভারী হয়ে আছে পরিবেশ, আশেপাশের মানুষরা হারির মাকে সান্তনা দিতে ব্যস্ত।
ছাই রাঙা প্লাস্টিকের ব্যাগটা থেকে লা’শ বের করে আনলো পুলিশ। ডাক্তাররা নেড়েচেড়ে দেখছে মৃ’তদে’হটি। লাশটার বীভৎস রুপ দেখে কেঁ’পে উঠলো সবাই৷ ঠোঁটের দু’কোণে বড় করে দাগ কাটা। পুরো শরীরে র’ক্তের ছোপ ছোপ দাগ। মুখটা পুরো ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। কাল রাতে মেয়ে বাড়ি ফিরেনি বলে অনেক চিন্তিত ছিলেন হারির মা, আলো ফুটতেই তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মেয়ের খোঁজ নিতে। কিন্তু তিনি তো আর জানতেন না দরজা খুলতেই প্লাস্টিকের বস্তায় নিজের মেয়ের মৃ’তদে’হ দেখতে পাবেন।
” কিছু জানতে পেরেছো সানা?”
” না স্যার কিছু জিজ্ঞেস করিনি এখনো।”
” ম্যাম আপনি প্লিজ একটু নিজেকে সামলান। আমাদের সাহায্য করলে আমাদের কাজে কিছুটা সুবিধা হবে।”
কিন্তু তাদের কথায় কোন কাজ হলোনা, হান বুঝতে পারলো হারির মাকে এই মূহুর্ত প্রশ্ন করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই সে প্রতিবেশীদের কাছে গেলো।
” আপনারা কি সন্দেহজনক কাউকে এখানে দেখেছেন? মানে যাকে আগে কখনো দেখননি, হঠাৎ দেখেছেন?”
সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়লো। আরো কিছু প্রশ্ন করলো হান তবে এবারো আশানুরূপ কোন উওর সে পেলোনা। এখানে সিসিটিভিও নেই যে তার মাধ্যমে কিছু জানা সম্ভব। এরই মাঝে সবার আড়ালে হারির ভাই সং জুন ঘরে চলে গেলো।
চলবে……