নিশির_অন্তিম_প্রহরে #পর্বঃ৩৫,৩৬ শেষ ১ম অংশ

0
221

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ৩৫,৩৬ শেষ ১ম অংশ
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
৩৫

” তুমি ফিলিক্সের বাসায় কেন গিয়েছিলে?” মুখ মুছতে মুছতে বললো এনাক্ষী।

” তুমি ছিলে না তাই গিয়েছিলাম।”

” তাহলে বাড়ি চলে যেতে। তার বাসায় যাওয়ার কি দরকার ছিলো? আর তুমি আসবে যে আমাকে বলবেনা? তাহলে আমি রেস্তোরাঁয় যেতাম না।”

” একটু গিয়েছি আরকি বকছো কেন?” এনাক্ষীকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো হিতোমি।

” বকছি না তবে এভাবে হুটহাট কারো বাসায় যাওয়া ঠিক নয়, আর যেওনা।”

” আচ্ছা বাবা যাবোনা। জানো ফিলিক্স কি বলেছে?”

” কি বলেছে সে আবার?”

” বলেছে আমার হাতগুলো নাকি সুন্দর। দেখেছো কত বড় গাধা একটা ছেলে। কোথায় বলবে আমার চোখ সুন্দর, নাক সুন্দর, ঠোঁট সুন্দর। কিন্তু সে কি বললো আমার হাত সুন্দর। গাধা ছেলেটা মেয়েদের প্রশংসাও করতে জানেনা।”

” তার কথায় কান দিওনা। সে আমাকেও বলেছে আমার চোখ জোড়া নাকি সুন্দর, তার ভালো লাগে।” এনাক্ষীর কথা শুনে তাকে ছেড়ে দিলো এনাক্ষী। এতোক্ষণ তার মধ্যে একটা চঞ্চল ভাব ছিলো, যা এখন আর নেই।

” সে তোমাকেও বলেছে বুঝি?”

” তা নয়তো কি? আর বড্ড বেশি বাজে কথা বলে ফিলিক্স। আমার তো মাঝেমধ্যে মনে হয় তার চোখের সাথে সাথে মাথাতেও সম’স্যা আছে। দেয়ালে দু’টো বারি মারতে পারলে ভালো হতো।” এনাক্ষীর কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো হিতোমি। সে আবারো এনাক্ষীকে জরিয়ে ধরে বললো, ” তা যা বলেছো, তার মাথাও কিছুটা সম’স্যা আছে, না হলে কি এরকম বলতো? তবে এরকমটাই ঠিক আছে, অনেক কিউট লাগে।”
.
.

” কি ব্যপার এনাক্ষী কয়েকদিন ধরে দেখছি তুমি একটু চুপচাপ থাকছো। কোন সমস্যা হয়েছে কি?”

” না সমস্যা কেন হবে?” বিস্কিটের প্লেটটা টেবিলে রেখে বললো এনাক্ষী।

” তো হাই স্কুলের স্টুডেন্টদের সাথে মা’রামা’রির অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?”

কায়ানের কথা শুনে এনাক্ষী চোখ বন্ধ করে ফেললো। তারপর স্বাভাবিক ভাবে বললো,

” তুমি এতোদিনে জানতে পারলে এটা?”

” না মোটেও না তবে এতোদিন বলতে ইচ্ছে হয়নি। আজ মনে হলো জিজ্ঞেস করেই ফেলি তোমার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো। যদি ভালো লাগে তাহলে আমাদের চ্যানেলে দেখানো যেতে পারে। তো মিস ফরেনার এনাক্ষী বসু আপনার অভিজ্ঞতাটা আমাদের সাথে একটু শেয়ার করুন।”

” এদিকে এসো তোমাকে মে’রে বোঝাচ্ছি আমার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো।”

” যাই বলো এনাক্ষী আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি শেষ পর্যন্ত কিনা হাই স্কুলের পিচ্চি বাচ্চাদের সাথে মা’রামা’রি করে পুলিশ স্টেশনে গিয়েছো।”

” উফ…..এবার চুপ করো তো। আচ্ছা তুমি ইনস্পেক্টর হানের সাথে কি কথা বলেছিলে? সুজি অন্নির ব্যপারটা নিয়ে কোন কিছু পেয়েছো?” এনাক্ষীর কথা শুনে কায়ান চুপ হয়ে গেলো।

” না এখনো কিছু পাইনি তবে চেষ্টা করছি।”

” অন্নির বাবা-মার সাথে দেখা করেছো তুমি? কি অবস্থা এখন ওনাদের?”

” হুম করেছি। দু’জনেই অনেক ভেঙে পড়েছেন, একমাত্র সন্তান ওনাদের। যাক বাদ দাও, সাবধানে থেকো। সুজি তো আমাকে রেখে চলে গেলো, তার পরে আমি তোমাকেই আপন ভেবেছি। তুমিও আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যেওনা।”

কায়ানের কথা শুনে এনাক্ষী কিছু বললোনা, শুধু মাথানিচু করে হাসলো।
.
.

বিল্ডিং থেকে বের হতেই এনাক্ষী সেই বৃদ্ধ লোকটিকে দেখতে পেলো।

” আরে গ্র্যান্ডপা আপনি এখানে? কোন কাজে এসেছেন এদিকে?”

” না, হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম। তোমাকে কতদিন পর দেখলাম।”

” আপনি চলুন না আমার বাড়িতে। এইতো আমার বাসা।”

” তোমার বাড়িতে? আচ্ছা চলো।”

বৃদ্ধ লোকটিকে এনাক্ষী নিজের বাড়িতে নিয়ে এলো। লোকটি সোফায় বসলো এবং এনাক্ষী দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।

” তুমি এখানে একা থাকো। ভয় লাগে না?”

” ভয় লাগবে কেন? ভয় লাগার তো কিছু নেই। আর আমি তো কোরিয়াতে বেশ অনেকটা সময় ধরে আছি। আরে গ্র্যান্ডপা আপনি না খেয়ে বসে আছেন যে। নিন খান, চা না হলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

” না আমি খাবোনা, তুমি এসব নিয়ে যাও।”

” আরে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আপনি খান, অন্তত অল্প করে হলেও।”

” না তুমি নিয়ে যাও।”

এনাক্ষী হতাশাভরা নিশ্বাস নিলো। সে খেয়াল করে দেখলো এই গরমেও বৃদ্ধ লোকটি একটা চাদর দিয়ে নিজের মাথা, হাত এবং শরীরের অর্ধেকাংশ ঢেকে রেখেছেন। যেটা এনাক্ষীর কাছে বেশ অদ্ভুত লাগলো। সে কৌতূহল দমাতে না পেরে প্রশ্ন করেই বসলো,

” গ্র্যান্ডপা আপনি এই গরমেও চাদর পড়ে আছেন যে? কোন সমস্যা?”

” কি আর বলবো বলো। বয়স হয়েছে, এখন একেক সময় একেক রকম লাগে। কখনো শীত তো কখনো গরম।”

এনাক্ষী কিছু বললোনা, শুধু বিজ্ঞদের মতো মাথা নাড়লো।
.
.

একা একা রাস্তা হাঁটছিলো হিতোমি। বাড়িতে একা তার ভালো লাগছেনা তাই বাইরে বেরিয়েছে। তার বাইরে হাঁটতে আসাটা আজ যেন তার জন্য সুখকর হলো।

” এইদিকে কি করছো তুমি?”

সাইকেল থামিয়ে পেছনে ঘাড় গুড়িয়ে থাকালো ফিলিক্স। হিতোমির হাসিমাখা মুখ দেখে সে দীর্ঘশ্বাস নিলো। সে নিজের মনে মনে কিছু বিরবির করে হিতোমির দিকে তাকালো।

” তুমি আবার আমার সামনে। রাস্তায় এতোগুলা মানুষ থাকতে তুমি আমাকেই দেখতে পেলে।”

” হ্যাঁ পেলাম কারণ আমার চোখ তোমাকেই দেখেছে। সাইকেল চালিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”

” কাজে যাচ্ছি। তুমি কোথায় যাচ্ছো? বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে নাকি?”

ফিলিক্সের কথা শুনে হিতোমি বিরক্ত হলো।

” হ্যাঁ বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। তোমার সমস্যা?”

” হুম সমস্যা, তাতে তোমার কি?”

” শোন তোমার সাইকেলটা আমাকে একবার চালাতে দিও তো। তোমার সাইকেলটা আমার ভালো লেগেছে।”

” আমার সাইকেল চালাবে? এই নাও, এখনই চালাতে পারো।” সাইকেল থেকে নেমে পড়লো ফিলিক্স এবং মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে হিতোমির দিকে বাড়িয়ে দিলো। হিতোমি একবার সাইকেলের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ফিলিক্সের দিকে।

” কি হলো নাও। চালাবে না?”

” ইচ্ছে তো আছে কিন্তু আমি সাইকেল চালাতে জানিনা।”

” কি! তুমি সাইকেল চালাতে জানোনা আবার আমাকে বলছো আমার সাইকেলটা দিতে। ও গড, তোমাকে নিয়ে যে আমি কি করি।”

” তুমি শিখিয়ে দাও না, তাহলেই তো হলো।” মিষ্টি করে হেসে বললো হিতোমি৷

” বসো, আমি সাহায্য করছি।”

হিতোমি চটপট হেলমেট পড়ে সাইকেলে চড়ে বসলো। ফিলিক্স তার হাত দু’টো ঠিকমতো সাইকেলের হ্যান্ডেলে রাখলো এবং পা গুলো ঠিকমতো রাখতে বললো কিন্তু হিতোমির সে দেখিকে খেয়াল নেই। সে তো মুগ্ধ নয়নে ফিলিক্সের দিকে তাকিয়ে আছে।

” এইযে কোথায় হারিয়ে গেলে? পা টা প্যাডেলে রাখো।” হিতোমিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো ফিলিক্স।

” আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে সবসময় এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে নাকি? নজর লেগে যাবেনা? এবার সাইকেল চালাতে হলে প্যাডেলে পা রাখো।”

এরপর ফিলিক্স আস্তে আস্তে হিতোমিকে সাইকেল চালানো শিখাতে লাগলে। হিতোমির একটা বিশেষ গুণ আছে সে স্বল্প সময়ে যেকোন কিছু শিখে ফেলতে পারে। এবারো তার ব্যক্তিক্রম হলোনা। ফিলিক্স সাইকেল ছেড়ে দিলো, এখন আর হিতোমির সমস্যা হচ্ছে না। সে মোটামুটিভাবে সাইকেল চালাতে পারছে। হিতোমির বেশ ভালো লাগছে, সে ছোট বাচ্চাদের মতো খিলখিল করে হাসছে এবং নতুন কিছু শেখার আনন্দ উপভোগ করছে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফিলিক্স এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” হিতোমি তুমি অনেক অনেক সহজ সরল যাকে বলে বোকা। তোমার ব্রাদার যেখানে পুলিশ সেখানে তোমার এতোটা বোকা হওয়াটা ঠিক মানায় না। কাউকে এতোটা বিশ্বাস করা ঠিক নয় হিতোমি, একদম ঠিক নয়।” নিজের মনে মনে বললো ফিলিক্স।

চলবে…….

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ৩৬ (প্রথমাংশ)
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

একটা রেস্টুরেন্টের সামনে অপেক্ষা করছে হান এবং হিতোমি। হান বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।

” সিস্টার এনাক্ষী আসবে তো?”

” বিগ ব্রাদার তুমি এই পর্যন্ত কতবার এই কথাটা জিজ্ঞেস করেছো গুণে দেখেছো? একটু ধৈর্য ধরো, এনাক্ষী সিভি স্টোরে কাজ শেষ করে বাড়িতে যাবে, সেখান থেকে এখানে আসবে। একটু তো সময় লাগবেই। চলো আমরা ভিতরে গিয়ে বসি।”

” না এখানেই অপেক্ষা করি, যদি আবার সে আমাদের খুঁজে না পেয়ে ফিরে যায়।”

হানের অবস্থা দেখে হাসলো হিতোমি। আজকে হানের জন্মদিন, প্রতিবছর জন্মদিনে দুই ভাই-বোন ঘুরতে বের হয়। এবছরও হয়েছে তারা, তবে এবার হিতোমি বলেছে এনাক্ষীকেও যেন তাদের সাথে ডিনারে যুক্ত হওয়ার জন্য বলা হয়। হানও দেরি করেনি, হিতোমির কথা শেষ হতেই হ্যাঁ বলে দিয়েছে। এনাক্ষী প্রথমেই বারণ করে দিয়েছিলো তবে হিতোমির নানা রকম ব্ল্যা’কমেই’লের কাছে প’রা’জিত হয়ে আসার জন্য রাজি হয়ে গেলো।

” হিতোমি।”

এনাক্ষীর কন্ঠে শুনে হান দ্রুত তার দিকে তাকালো। লাল-সাদা রঙের পোশাকে তাকে বেশ লাগছে। এনাক্ষী এগিয়ে এসে হানের দিকে একটা ছোট বক্স বাড়িয়ে দিলো।

” শুভ জন্মদিন ইনস্পেক্টর চোই হান সিওক। দুঃখিত এতোটা সময় অপেক্ষা করানোর জন্য।”

” ঠিক আছে এনাক্ষী, কোন সমস্যা নেই। তোমার আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?”

” একদম নয়।”

” বাহ্ পুতুলটাতো খুব সুন্দর।” তাদের দু’জনের কথা মাঝে হান বক্সটা খুলে ফেলেছে, যার মধ্যে ছিলো একটা সুন্দর ছেলে পুতুল।

” এনাক্ষী তুমি ব্রাদারকে পুতুল দিয়েছো! হাহাহা একদম উপযুক্ত একটা উপহার দিয়েছো, তার জন্য এসবই ঠিক আছে।” হাসতে হাসতে বললো হিতোমি।

” হিতোমি তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো।” মি’থ্যা রা’গ দেখিয়ে বললো হান।

হানের কথা শুনে হিতোমি মুখ ভেঙিয়ে বললো,
” সত্যি কথা বলছি তো তাই বলবেই। এনাক্ষী চলো আমরা ভিতরে যাই। ব্রাদার বরং পুতুল নিয়ে খেলুক।”

তিনজনেই একটা টেবিলে বসলো। হান খাবার অর্ডার করার আগে বারবার এনাক্ষীকে জিজ্ঞেস করলো সে কি অর্ডার করতে চাই তবে এনাক্ষী বললো তারা যা চাই তাই যেন অর্ডার করে। খাবার এলে হান সর্বপ্রথম এনাক্ষীকে সার্ভ করলো এবং সর্বক্ষণ খেয়াল রাখলো এনাক্ষীর। এনাক্ষীর প্রতি হানের এতো কেয়ারিং ভাব দেখে হিতোমি মিটিমিটি হাসছে। কিছুক্ষণ পর হিতোমির ফোনের এলে সে উঠে চলে গেলো। হিতোমি চলে যাওয়ার পর এনাক্ষী প্রশ্ন করলো,

” ইনস্পেক্টর হান কেসের কোন খবর? মানে কোন সমাধান হলো?”

” না এখনো কিছু জানা যায়নি। আচ্ছা এনাক্ষী যদি কিছু মনে না করো তবে এটা প্রশ্ন করি।”

” হ্যাঁ কেন নয়।”

” কায়ানকে তোমার কেমন লাগে? মানে তার ব্যবহারে কি তুমি কোন সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পেয়েছো?”

” না সেরকম তো আমার কখনো কিছু মনে হয়নি কিন্তু আপনি এরকম বলছেন কেন?”

” না কিছু না।”

এরই মধ্যে হিতোমি চলে এলে তারা আর কেসের ব্যপারে কোন কথা বললো না। তবে এনাক্ষী খেয়াল করলো হিতোমি নিচের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে, যা এনাক্ষীর কাছে অদ্ভুত লাগলো।
.
.

বেশ সুন্দর করে সেজেছে হিতোমি। আয়নায় নিজেকে আরেকবার দেখে বেরিয়ে পড়লো সে। আজ অনেক খুশি সে, আর হবে নাইবা কেন? ফিলিক্সের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে সে, ফিলিক্স নিজেই প্রস্তাবটা দিয়েছে। হিতোমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছে আজ ফিলিক্সে নিজের মনের কথা বলেই ফেলবে, বাকিটা পরে দেখা যাবে। নিজের অনুভূতি সে আর লুকিয়ে রাখতে পারছেনা।

মাত্রই রাতের খাবার খেতে বসেছিলো এনাক্ষী। তবে খাবার মুখে নেবে তার আগেই ফোনের শব্দ শুনে সে উঠে এলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো হিতোমির নাম ভেসে উঠেছে। এনাক্ষী ফোনটা নিয়ে চেয়ারে বসলো।

” হ্যালো হিতোমি বলো। রাতের……” এনাক্ষী পরবর্তীতে আর কিছু বলতে পারলোনা। হিতোমির কন্ঠ শুনে তার অন্তরআত্না কেঁপে উঠলো।

” এনাক্ষী বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও। ও আমাকে মে’রে ফেলবে, প্লিজ বাঁচাও। তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এই ঠিকানায় চলে এসো, প্লিজ এনাক্ষী। তুমি ক….”

হিতোমি আর কিছু বলতে পারলোনা তার আগেই ফোন কেটে দেলো। এনাক্ষী দ্রুত আবারো কল ব্যাক করলো কিন্তু ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অঝোরে কান্না করছে এনাক্ষী, সে দৌড়ে বেরিয়ে এসে কায়ানের দরজায় কড়াঘাত করলো কিন্তু কেউ দরজা খুললোনা। এনাক্ষী কোনক্রমে দরজাটা বন্ধ করে সেই অবস্থায় সাইকেল নিয়ে দ্রুত যেতে লাগলো। একদিকে সে সাইকেল চালাচ্ছে, অন্যদিকে চোখের জল মুছছে।

” ঈশ্বর প্লিজ হিতোমির যেন কিছু না হয়। সুজি অন্নিকে তো আমি বাঁচাতে পারিনি কিন্তু হিতোমির যেন কিছু না হয়৷ হিতোমি তুমি ভ’য় পেও না আমি আসছি, তোমার এনা আসছে। আজ সেই সা’ইকো’র দিন শেষ, তুমি একটু ভরসা রাখো। আমরা পারবো, তোমার কিছু হবেনা।”

দ্রুত সাইকেল চালিয়ে হিতোমির বলা জায়গাতে পৌঁছালো এনাক্ষী। সাইকেলটা একটা কোণায় রেখে ধীর পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। জায়গাটা অনেকটা অন্ধকার, অনেক দূর থেকে একটু একটু আলো আসছে যাতে কিছুই স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছেনা। এনাক্ষী প্রথমে ভাবলো ফোনের টর্চ জ্বালাবে তবে জ্বালালে যদি খু’নিটা বুঝতে পেরে যায় সেই ভয়ে আর জ্বালালো না। এনাক্ষী ফোনে কিছু একটা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে এনাক্ষী একটা রুমের মধ্যে ঢুকে পড়লো। অনেক অন্ধকার রুমটা, বেশ ধুলোবালি জমে আছে। একদম গা ছমছম করা একটা পরিবেশ। এনাক্ষী যতটা সম্ভব নিঃশব্দে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভ’য়ে সে হিতোমির নামও নিতে পারছেনা। সে থেমে কায়ানকে ফোন করলো তবে কেউ ফোন রিসিভ করলোনা, হানকেও সে করেছে তবে তার ফোন ব্যস্ত। এনাক্ষীর এবার দু’জনের উপর প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে। আরো কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সে হিতোমিকে দেখতে পেলো। হাত-পা, মুখ বাঁধা অবস্থা মাটিতে পড়ে আছে। এনাক্ষী দৌড়ে তার কাছে গেলো।

” হিতোমি, উঠো। চোখ খোলো দেখো আমি এসেছি। প্লিজ চোখ খোলো আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে। হিতোমি, শুনতে পাচ্ছো?” হিতোমির গাল আস্তে আস্তে থা’প্পড় দিয়ে বললো এনাক্ষী। কিছুটা সময় পর হিতোমির হালকা হালকা জ্ঞান ফিরলো।

” হিতোমি দেখো আমি এসেছি, চোখ খেলো।”

হিতোমির এখন জ্ঞান অনেকখানি ফিরেছে তবে মাথার প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা করছে।

” হিতোমি তুমি ঠিক আছো? কে তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে? কে করেছে এসব? আচ্ছা দাঁড়াও আমি তোমার বাঁধন আগে খুলি তারপর আমরা স্টেশনে যাবো। তুমি একদম ভ’য় পাবেনা, আমরা পারবো।” কথা বলতে বলতে হিতোমির পায়ের বাঁধন খুলে দিলো এনাক্ষী। তবে মুখের বাঁধন খোলার জন্য এগিয়ে যাবে তার আগেই হিতোমি হু হু করতে লাগলো, তার চোখে মুখে তীব্র ভয়ের আভাস ফুটে উঠলো। এনাক্ষী কিছু বুঝে উঠার আগেই তীব্র আঘাতে সে মাটিতে হেলে পড়লো।

” হিতোমি…. কায়…..”

জ্ঞান ফেরার পর এনাক্ষী কয়েক মূহুর্তের জন্য সব অন্ধকার দেখলো। মাথাটা খুব ভারী ভারী লাগছে, মাথায় হাত দিতে যাবে তখন সে খেয়াল করলো তার হাত কিছু একটার সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। এনাক্ষীর বুঝতে বাকি নেই সে-ও পা’গ’ল খু’নির কাছে ধরা পরে গিয়েছে, এটা বুঝতে পেরেই তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো হিতোমি তার থেকে কিছুটা দূরে তার পায়ের কাছে পড়ে আছে।

” হিতোমি, চোখ খোল। হিতোমি শুনতে পাচ্ছো?” যতটা সম্ভব চিৎকার করে বললো এনাক্ষী। তবে হিতোমি এক বিন্দুও নড়লোনা।

” আস্তে এনাক্ষী, এভাবে চিৎকার করে কোন লাভ নেই। হিতোমি এখন ঘুমিয়ে আছে, তুমি বরং নিজের কথা চিন্তা করো।”

ব্যক্তিটি একদম এনাক্ষীর পেছনে দাঁড়িয়ে তার কানের কাছে এসে বললো। কারো শীতল শান্ত কন্ঠ শুনে এনাক্ষীর হৃদস্পনন্দ থেমে যাওয়ার উপক্রম, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো তার।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here