#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ৩৬ (দ্বিতীয়াংশ)
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
লোকটি ধীরপায়ে হিতোমির কাছে গিয়েছে তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসলো।
” ইশ….বেচারি, বুঝেও পারেনি তার সাথে এসব হবে। কিন্তু আমার জন্য ভালোই হলো, আমি যা চাই সে তো নিজের অজান্তেই তাই করেছে। এর জন্য তাকে একটা উপহার তো দেওয়া দরকার, কি বলো এনাক্ষী?”
ব্যক্তিটির কন্ঠ শুনে এনাক্ষী শুকনো ঢোক গিললো। এই কন্ঠটা সে চেনে,খুব ভালো করে চেনে। তবে সে মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকছে যেন তার ধারণা ভুল হয়।
” কে তুমি? আমাদের ছেড়ে দাও। আমাদের কিছু হলে ইনস্পেক্টর হান তোমাকে ছাড়বেনা,ছাড়ো আমাদের।”
” এনাক্ষী তুমি এখনো আমাকে চিনতে পারবোনি?” আফসোসের শুরু বললো ব্যক্তিটি।
” ফিলিক্স।” অবিশ্বাসের সুরে বললো এনাক্ষী।
” বাহ্ চেহারা দেখার আগেই চিনতে পেরে গিয়েছো। এতোটা চেনো আমাকে?” জ্যাকেটের টুপিটা মাথা থেকে ফেললো দিলো ব্যক্তিটি। তবে তার চেহারা দেখে এনাক্ষী আরো শক খেলো। চোখে তার চশমা নেই, তবে মুখে সাদা দাঁড়ি, চামড়া হালকা কুঁচকানো। অনেকটা একজন বৃদ্ধ লোকের মতো। এই চেহারাটাকে সে চেনে। এনাক্ষীর নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছেনা, প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তার।
” গ্র্যান্ডপা! তার মানে সেই বৃদ্ধ লোকটা ফিলিক্স তুমিই!”
” একদম, ইশ….. বড্ড আফসোস হচ্ছে না এনাক্ষী। এতোদিন চিনতে না পারার কারণে? কিন্তু কি করবে বলো আমি মানুষটাই এরকম নিজে ধরা না দিলে কারো সাধ্য নেই আমাকে ধরার। আর তার প্রমাণ আমি এখন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
” কেন করছো তুমি এসব? আমি তোমাকে নিজের বন্ধু মনে করেছিলাম, আমার কথা বাদ দাও হিতোমি তার দোষটা কোথায়? মেয়েটাকে তো তুমি অনেক আগে থেকে চেনো। মেয়েটা তোমাকে ভালোবাসে আর সেই তুমি কিনা! একমিনিট তার মানে তুমিই সুজি অন্নিকে…….! ফিলিক্স তোমার মাথা ঠিক আছে? তুমি সুজি অন্নিকে…… হে ঈশ্বর? তুমি কেন এসব করছো? কি দো’ষ ছিলো তাদের? কি দো’ষ আমার আর হিতোমির যে আমাদের এই পরিস্থিতিতে পড়তে হলো? কেন তুমি নিষ্পাপ মানুষের জীবন নিয়ে খে’লা করছো?”
” তোমাদের অন্যতম একটা দো’ষ হচ্ছে তোমরা আমার দৃষ্টিতে পড়েছো। কি করবে বলো, তোমাদের জীবনের সমা’প্তি যে আমার হাতেই লেখা ছিলো। জানো এনাক্ষী তুমি না খুব বোকা, খুব খুব বেশি। আমি তোমাকে যতবার হিন্ট দিয়েছি ততবার অন্যকাউকে দেয়নি। আমার প্রতি আমার কেন যেন মায়া হতো, সত্যি বলছি আমি মন থেকে চাইতাম তুমি যেন আমার হিন্ট গুলো বুঝতে পারো কিন্তু তুমি বোকা মেয়ে দেখেও দেখলেনা। তুমি যে বোকা তার অনেক প্রমাণ আমার কাছে আছে। এই ধরো সেইদিন আমি তোমাকে কিন্তু বলেছিলাম যেন তুমি রুমের দরজা, জানালা চেক করো এবং দেখো তোমার রুমে সবঠিক আছে কিনা। কিন্তু তুমি বোকা মেয়ে কিছুই বুঝলেনা। তোমার একটা ক্লিপ তোমার মাথা থেকে খুলে পড়ে গিয়েছিলো, যেটা আমার কাছে ছিলো। তবে সেটা আমার পকেট থেকে সুজির পাশে পড়ে গিয়েছিলো, যেটা আমি দেখলেও আনিনি। আর এতোকিছু হয়ে গেলো কিন্তু তুমি টেরও পেলেনা তোমার একটা জিনিস তোমার কাছে নেই। এমনকি আমি তোমার সামনে কতবার বৃদ্ধ বেশে এলাম, তোমার বাড়িতে গেলাম তাও তুমি বুঝতে পারলেনা। এর থেকে বড় প্রমাণ কি হতে পারে এনাক্ষী?” বিদ্রুপ করে বললো ফিলিক্স। এনাক্ষীর এখন নিজের প্রতি প্রচুর রা’গ হচ্ছে, ইচ্ছে করছে নিজেকে দু’টো থা’প্পড় মারতে।
” তুমি সুজি অন্নিকে কেন মে’রে’ছো? তার দো’ষটা কি ছিলো?”
” তোমার সুজির অন্নিকে আমি মা’রতা’ম না কিন্তু সে একটু বেশিই চালাক। আমার ব্যপারে সব কিছু জানতে পেরে গিয়েছিলো। কি করতাম বলো, আমার যে কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। তাই কাউকে কিছু বলার আগেই তাকে মে’রে দিয়েছি।”
” তোমার সম্পর্কে মানে? সুজি অন্নি তো দেশের বাইরে ছিলো, তাহলে তোমার সম্পর্কে কি এমন জানতে পেরেছিলো যে তুমি তাকে মে’রে ফেলেছো? আর কোন কাজ সম্পূর্ণের কথা বলছো? কে তুমি ফিলিক্স?”
” তোমার সুজি অন্নি আমার আসল পরিচয় জানতে পেরে গিয়েছিলো। তুমি বড্ড বেশি কথা বলো এনাক্ষী, তোমার এতো আগ্রহ না আমার অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পর্কে জানার? তাহলে শোন আমার অসম্পূর্ণ কাজটা হচ্ছে তোমার চোখ জোড়া বাইরে নিয়ে আসা। তোমাকে আমি কতবার বলেছিলাম তোমার চোখ জোড়া অনেক সুন্দর, আমাকে দিয়ে দিতে কিন্তু তুমি তো কিছুই বুঝতে পারলেনা। হাহাহা……” ফিলিক্সের হাসি শুনে এনাক্ষীর ভ’য়ে গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে গেলো। খুবই ক্রু’র হাসি ফিলিক্সের। আচমকা সে হাসি থামিয়ে দিলো এবং মূহুর্তেই একটা ছু’ড়ি জাতীয় জিনিস বের করে এনাক্ষীর মুখের সামনে ধরলো।
” এনাক্ষী শেষবারের মতো নিজের চোখ দিয়ে এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখে নাও। কিছুক্ষণ পর যে তোমার এই সুন্দর চোখজোড়া আর থাকবেনা।”
” না ফিলিক্স তুমি এটা করতে পারোনা।” কান্না করতে করতে বললো এনাক্ষী। এবার মনে হয় তার আর রক্ষে নেই। সে অনবরত মাথাটা নেড়ে চলেছে। ফিলিক্স ছুড়িটা এনাক্ষীর চোখে গেঁথে দেবে তখনই পেছন থেকে হিতোমি তার পায়ে হাঁটুর কাছে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে লা’ত্থি মারলো। আচমকা আক্রমণ সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো সে। হিতোমি গড়িয়ে গড়িয়ে আরেকটু সামনে এসে পা দিয়ে ফিলিক্সের মুখে জোড়ে আ’ঘা’ত করলো, ব্যথায় হালকা চিৎকার করে উঠলো সে। তবে হিতোমি থেমে থাকলোনা। আবারো পা দিয়ে তার পেটে আ’ঘা’ত করলো। সে জানে এতটুকুতে ফিলিক্সের কিছুই হবেনা, তার মূল উদ্দেশ্য খানিকের জন্য হলেও ফিলিক্সকে দুর্বল করা যেন তারা কোনভাবে ছাড়া পেতে পারো। দ্রুত গড়িয়ে এনাক্ষীর কাছে এলো হিতোমি।
” এনাক্ষী তাড়াতাড়ি আমার হাতের বাঁধনটা খোলো। বেশি সময় নেই আমাদের কাছে।”
এনাক্ষী নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে হিতোমির বাঁধন খোলার জন্য। যেহেতু তার হাত দু’টো চেয়ারের সাথে বাঁধা তাই সহজে সে পারছিলো তবে দু’জনের কেউই হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রি নয়। দু’জনের চেষ্টার হিতোমির হাতের বাঁধন খুলে গেলো। হিতোমি দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে এনাক্ষীর পায়ের বাঁধনটা খুলে দিলো কিন্তু হায় সে হাতের বাঁধন সম্পূর্ণ খোলার আগেই ফিলিক্স তার চুলের মুঠি ধরে তাকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
” হিতোমি! ফিলিক্স হিতোমিকে ছেড়ে দাও, তোমার তো আমার চোখ চা’ই তাহলে তুমি হিতোমিকে ধরেছো কেন? প্লিজ ওকে যেতে দাও।”
” না আমার তো তোমাদের দু’জনকেই চাই। মনে আছে হিতোমিকে আমি কি বলেছিলাম? তোমার আঙ্গুলগুলো অনেক সুন্দর? জানো আমার যা ভালো লাগে সেটা আমার চাই। আমি চাইনা সেটা আর কেউ দেখুক, স্পর্শ করুক। আমি তা নিজের কাছে রাখতে চাই। তোমার আর এনাক্ষীর চোখ এবং আঙ্গুলও আমি আমার কাছে রাখবো। এবার চুপচাপ তোমার হাতটা দাও তো দেখি, লক্ষী মেয়ে দুষ্টুমি করেনা।”
হিতোমি জোড়ে ফিলিক্সকে একটা ধাক্কা করলো। সে ভেবেছিলো ফিলিক্স কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্যমনস্ক হলেও সে উঠে দাঁড়াবে কিন্তু তা হলেনা। সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই ফিলিক্স তার পা ধরে টান দিলো। ফলে সে ধম করে মাটিতে পড়ে গেলো। ফিলিক্স প্রচন্ডভাবে রেগে গিয়েছে, হিতোমির চুল ধরে তার মুখে খুব রেগে একটা থা’প্পড় মারলো। এতোটাই জোড়ে যে শব্দ শুনে এনাক্ষী কেঁপে উঠলো এবং হিতোমির ঠোঁট কে’টে রক্ত পড়তে লাগলো। হিতোমির খুব কান্না পাচ্ছে। একে তো প্রিয় মানুষের এই নৃশংস রুপ, তারউপর তো আ’ঘা’ত, নিজেদের ভবিষ্যতের চিন্তা সব মিলিয়ে তার শরীর আর সইছে না তবে সে ভেঙে পড়লোনা। দাঁতে দাঁত চেপে ব্য’থা হজম করে নিলো। লড়তে হবে তাকে, নিজের জন্য এবং এনাক্ষীর জন্য। হিতোমি খেয়াল করলো এনাক্ষীর হাতের বাঁধন হালকা হয়ে আসছে, সে চেষ্টা করছে পুরোটা খোলার। হিতোমির মনে আশার আলো জাগলো, সে ফিলিক্সের দৃষ্টি নিজের দিকে বজায় রাখার চেষ্টা করলো।
” ছিঃ ফিলিক্স ছিঃ৷ তুমি এতোটা নিচ! আমি কিনা তোমার মতো একজনকে পছন্দ করেছিলাম। আমার তো ভাবতেই ঘে’ন্না লাগছে। তোমার মতো সন্তান যেন ঈশ্বর আর কারো ঘরে না দেন। কতটা নি’ষ্ঠুর তুমি ফিলিক্স! কতগুলো নিরিহ মানুষের জীবন নিয়ে নিয়েছো তুমি। কতটা বি’কৃত মস্তি’ষ্কের মানুষ তুমি! শুধু তোমার পছন্দ হয়েছে বলে তুমি তার অঙ্গ তার দেহ থেকে আলাদা করে নিজের কাছে রাখবে! ফিলিক্স তুমি আধো মানুষ তো?”
” হ্যাঁ রাখবো। কেন রাখবোনা? আমার যখন পছন্দ হয়েছে সেটা আমি সারাজীবন নিজের কাছে রাখবো। এখন থেকে আমি তোমার আঙ্গুলগুলোও সুন্দর করে, যত্ন করে নিজের কাছে রাখবো।”
ফিলিক্স জোর করে হিতোমির একটা হাত টেনে সামরে আনলো। ছুড়িটা একটা আঙ্গুলে বসিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিতে লাগলো। যখন অনেকখানি ভেতরে ঢুকে গিয়েছে তখন হিতোমি না চাইতেও কান্না করে ফেললো। হিতোমির মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তার আঙ্গুলটা শরীর থেকে আ’লা’দা হয়ে গিয়েছে কিন্তু ঈশ্বর সহায় ছিলেন বিধায় এনাক্ষী পেছন থেকে মোটা একটা র’ড দিয়ে ফিলিক্সের মাথায় আ’ঘা’ত করলো। তবে সে সাবধান ছিলে যেন তার গুরুতর ভাবে আ’ঘা’ত না লাগে। না হলে মৃ’ত্যু হলে পরে সমস্যা হবে। ফিলিক্স মাটিতে ঢলে পড়তেই এনাক্ষী হিতোমির কাছে এলো। তার হাত থেকে অনেকখানি র’ক্ত গড়িয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছে। এনাক্ষী নিজের জামার খানিকটা অংশ ছিড়ে তার হাতে বেঁধে দিলো।
” হিতোমি হাঁটতে পারবে?” চিন্তিত স্বরে বললো এনাক্ষী।
” পারবো এনাক্ষী। আমাকে পড়তেই হবে। এই ন’রপ’শুটা থেকে বাঁচার জন্য পারতেই হবে। চলো আমরা পালাই।”
দু’জনে ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলো। তবে বাইরে এসে তাদের যে ভয়টা খানিকটা কমেছিলো তা আরো বেড়ে গেলো। কারণ বাইরে গুটগুটে অন্ধকার। এনাক্ষী আসার সময় যা একটু আবছা আবছা আলো ছিলো এখন তাও নেই। এতোটাই অন্ধকার যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দু’জনের কারো কাছেই ফোন নেই। কি করবে ভাবতে ভাবতে এনাক্ষীর মনে পরলো তার পকেটে একটা ছোট টর্চ ছিলো। সৌভাগ্যক্রমে সেটা পকেটেই ছিলো। এনাক্ষী টর্চটা বের করে আলো জ্বালানো। আশেপাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না, একদম নিরব পরিবেশ। এতেটাই নিরব যে একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দও শোনা যাচ্ছে। তারা আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। প্রায় অনেকটা সময় হাঁটার পরেও তারা বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পেলোনা। এনাক্ষী বুঝতে পারলেনা কেন এতোটা সময় লাগছে, সে তার সাইকেলটাও আশেপাশে দেখতে পেলোনা। আচমকা তৃতীয় ব্যক্তির পায়ের শব্দ শুনে তারা দু’জনে থমকে গেলো। তাদের বুঝতে বাকি নেই এটা কার পায়ে শব্দ। দু’জনে একটা জায়গায় লুকিয়ে পড়লো এবং এনাক্ষী দ্রুত আলো নিভিয়ে দিলো। একটা ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে জায়গাটাতে। পৃথিবী বড় অদ্ভুত। কেউ হয়তো এখন শান্তিতে ঘুমাচ্ছে, কেউ নিজের নিষিদ্ধ ইচ্ছে পূরণের চেষ্টা করছে আর কেউ নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ লড়ে যাচ্ছে। এমন একটা পরিস্থিতি যে এনাক্ষী এবং হিতোমি ঠিকমতো নিঃশ্বাসও নিচ্ছে না, যদি ফিলিক্স বুঝতে পারে এই ভ’য়ে। কিন্তু এতো কিছু করেও কিছু হলোনা। ফিলিক্সের চতুর মস্তিষ্ক তাদের ঠিকই খুঁজে পেয়েছে।
” এভাবে কতটা সময় লুকিয়ে থাকবে? এতোটা দৌড়াদৌড়ি করে কি লাভ বলো? এখান থেকে আমি না চাইলে তো ভেতর হতে পারবে না। কেন শুধু শুধু নিজেদের শরীর গুলোকে কষ্ট দিচ্ছো বলো?” দু’জনে যেখানে লুকিয়ে আছে ফিলিক্স তার বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললো। এনাক্ষী কাঁপা কাঁপা হাতে টর্চটা হিতোমির হাতে গুঁজে দিলো এবং নিচু স্বরে বললো দৌড়াতে। হিতোমি প্রথমে এবং এনাক্ষী পরে দৌড়ানো শুরু করলো। কিন্তু হিতোমি একটু এগিয়ে গেলেও পারলোনা এনাক্ষী। ফিলিক্স তার চুল মুঠো করে ধরে রেখে। এনাক্ষী আন্দাজ করেছিলো ফিলিক্স তাদের একজনকে নিশ্চয়ই ধরে ফেলবে। তাই তো সে হিতোমিকে আগে ছুটতে বলেছে।
” হিতোমি তুমি পালাও, এখান থেকে বেরিয়ে বাইরের মানুষদের জানাও। তোমার ব্রাদার আর কায়ানকে খবর দাও।” চিৎকার করে বললো এনাক্ষী।
” না এনাক্ষী এটা হয়না। তোমাকে ছেড়ে আমি যেতে পারিনা।” কান্না করতে করতে বললো হিতোমি।
” হিতোমি এটা আবেগের সময় নয়, তুমি এখন না গেলে আমরা কেউই বাঁচতে পারবোনা৷ তুমি প্লিজ যাও,আমার জন্য হলেও তুমি যাও।”
” আমি ফিরে আসবো এনাক্ষী। তোমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবো, তুমি ভয় পেওনা।” কথাটা বলেই ছুটে চলে গেলো হিতোমি। ফিলিক্স যেতে চাইলেও এনাক্ষী যেতে দিলেনা। সে পা দিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ফিলিক্সের পায়ে আঙুল চেপে ধরলো, এতে ফিলিক্সের হাতের বাঁধন কিছুটা হালকা হয়ে এলো। এনাক্ষী ধাক্কা দিয়ে ফিলিক্সকে দূরে সরিয়ে দিলো।
” এনাক্ষী তুমি কিন্তু কাজটা মোটেও ভালো করোনি। হিতোমিকে তো আমি ঠিকই খুঁজে পাবো কিন্তু তোমাকে তো তোমার কাজে শা’স্তি পেতেই হবে।” তীব্র রা’গ নিয়ে কথাগুলো বললো ফিলিক্স। এনাক্ষী অনুভব করলো তার পায়ে নিচে বালি আছে। সে চুপিসারে নিচু হয়ে কিছু বালি তুলে নিয়ে অন্ধকারেই সামনের দিকে ছুঁড়ে মারলো। ছুঁটতে শুরু করলো এনাক্ষী, তবে অন্ধকারে সে কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। পথ যেন আজ শেষই হচ্ছেনা। ছুঁটতে ছুঁটতে আবারো এনাক্ষী ধরা পরে গেলো ফিলিক্সের হাতে। ফিলিক্স এতোটাই রে’গে আছে যে সে এনাক্ষী মাথাটা ধরে জোড়ে দেয়ালে বা’রি মারলো। আচমকা এতো বড় আ’ঘা’ত সইতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো এনাক্ষী,মূহুর্তেই জ্ঞান হারালো সে। আস্তে আস্তে র’ক্ত পড়তে লাগলো তার কপাল বেয়ে। এনাক্ষীকে নড়াচড়া করতে না দেখে বিশ্বজয়ের হাসি হাসলো ফিলিক্স।
” এতোটা কষ্ট না করলেও পারতে এনাক্ষী। বৃথাই এতো চেষ্টা করলে।”
হালকা হালকা চোখ খোলার চেষ্টা করলো এনাক্ষী৷ তার শরীরে এতোটাই ব্যথা যে তার চোখ খোলার শক্তিটুকু নেই। পরিচিত কন্ঠ শুনে এনাক্ষী ব্যক্তিটিকে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলোনা। সে কানটা খাঁড়া করে শোনার চেষ্টা করলো। কান খাঁড়া করতেই এনাক্ষীর কানে এলো কায়ানের কান্নার শব্দ।
” এনাক্ষী তুমিও কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? আমি কি এতোটাই অ’ভা’গা যে যাকে ভালোবাসি সেই আমাকে ছেড়ে দূরে চলে যাই? আমার কি এতোটুকুও অধিকার নেই যে আমি কাউকে ভালেবাসবো? প্রথমে দিভাই, তারপর সুজি এখন কি তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? এই এনাক্ষী শুনতে পাচ্ছো? প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা। তাদের যাওয়াটা আমি সহ্য করে বাঁচতে পারলেও তোমার চলে যাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারবোনা।”
কায়ানের কথা শুনে ক্লান্ত হাসলো এনাক্ষী। সে হাতটা আস্তে করে কায়ানের হাতের উপর রাখলো। শুকনো ঢোক গিলে কোনভাবে বললো,
” নিজের খেয়াল রেখো কায়ান। এভাবে ভেঙে পড়লে সামনের পরিস্থিতি সামলাবে কে? আমার কিছু হলে ভেঙে পড়োনা। আমি যদি মা’রা যাই আমাকে ক্ষ’মা করে দিও তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য। তবে আমি দূর থেকেও তোমাকে দেখে যাবো। ভালোবাসি কায়ান, নিজের যত্ন নিও।”
এতটুকু বলেই চুপ হয়ে গেলো এনাক্ষী। আচমকা এনাক্ষীর চুপ হয়ে যাওয়াতে কায়ান আরো বেশি ভ’য় পেয়ে গেলো। এনাক্ষীকে অনেকবার ডাকলেও সে কোন সাড়া দিলোনা। কায়ান চিৎকার করে ড্রাইভারকে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে বললো।
.
.
এনাক্ষী এবং হিতোমি দু’জনের কারো অবস্থাই ভালো নয়, বিশেষ করে এনাক্ষীর। ফিলিক্সকেও এই হসপিটালে আনা হয়েছে চিকিৎসার জন্য, এনাক্ষীর রডের আ’ঘা’তে তার মাথাইও ক্ষ’ত সৃষ্টি হয়েছে। অনেক কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে তাকে। হিতোমি ছুটতে ছুটতে মাঝপথে এনাক্ষীর ফোনটা পেয়ে গিয়েছিলো। সে তাড়াতাড়ি করে ফোনটা অন করে হানকে ফোন করলো। পুলিশরা অনেক আগে থেকেই তাদের খুঁজে চলেছিলো তবে দু’জনেরই ফোন বন্ধ থাকায় নিদিষ্ট লোকেশনটা তারা পাচ্ছিলোনা। ফিলিক্স এতোটাই চা’লা’ক ছিলো যে হিতোমিকে বেঁধে ফেলা আগেই সে তার ফোনটা একদম ভেঙে ফেলেছে। এনাক্ষী হান এবং কায়ানকে মেসেজ করেছিলো। কিন্তু নেটওয়ার্কের কারণে হানের কাছে অর্ধেক মেসেজ পৌঁছে এবং কায়ানের কাছে কোন মেসেজই সেন্ড হতে পারেনি তার আগেই ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হানরা পথেই ছিলো তাই হিতোমির ফোন পেতেই তারা ছুটে এসেছে।
দু’দিন গত হয়ে গিয়েছে। হিতোমি এবং এনাক্ষী বর্তমানে আগের থেকে ভালোই আছে। ফিলিক্সকে স্টেশনে নিয়ে আসা হয়েছে, আজ সকাল থেকে তার ইনভেস্টিগেশন চলছে। হানের সিনিয়র, অন্য কিছু পুলিশ এবং কিছু ডাক্তার আছে ভেতরে। হান বাইরে কায়ানের সাথে বসে আছে৷ দীর্ঘসময় পর তারা বাইরে বেরিয়ে এসেছে। দু’জনেই ছুটে সিনিয়র ডাক্তারের কাছে গেলো। ডাক্তার হানের পূর্বপরিচিত ছিলো, তিনি বুঝতে পেরেছেন হান কি জানতে চাই।
” সব স্বীকার করেছে সে এবং আশ্চর্যের বিষয় তাকে খুব বেশি একটা জোড় করতে হয়নি। একটু কৌশলে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে দিয়েছে এবং তারমধ্যে কোন অ’পরা’ধবোধ ছিলোনা আর না এখন আছে।”
” কিন্তু ডাক্তার তার আচরণ মোটেও স্বাভাবিক নয়। এটা কি কোন ধরণের রোগ?”
” হুম এটাও একধরনের মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়ে। তার একধরনের মানসিক সমস্যা আছে,এর উৎপত্তি মূলক তার পিতা থেকে।”
” তার বাবা থেকে? কিন্তু কিভাবে? এটা কি জন্মগত?”
” না জন্মগত নয়, ব্যপারটা অনেকটা এরকম যে ছোট বাচ্চারা যখন কিছু দেখে তখন সেটাই আয়ত্ত করতে চাই কিংবা তার সেই দেখা জিনিসটা একসময় প্রয়োগ করতে ইচ্ছে করে। ব্যপারটা তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আমরা তাকে হিপনোটাইজ করেছিলাম। তার এই ধরনের নি’ষিদ্ধ মনোভাবের কারণ তার বাবা। ছোট বেলায় তার বাবা, তার মাকে খুবই নৃ’শংস’ভাবে হ’ত্যা করে এবং সেটা তার চোখের সামনেই। পরবর্তীতে তার বাবাকে পুলিশে নিয়ে গেলো এবং সে বড় হলো অনাথশ্রমে। কিন্তু সেই নৃ’শং’স খু’ন সে আজও ভুলতে পারেনি, যত বয়স বাড়ছিলো তার ভিতরে সেই চিত্রটা আরো ফুঁটে উঠতে থাকে এবং সে নিজের নি’ষি’দ্ধ ইচ্ছে পূরণে নেমে পড়লো।”
” এখন পরবর্তীতে তার সাথে কি হবে?”
” জানিনা, কোট যা সিদ্ধান্ত নেই। হয়তো আগে তার চিকিৎসা করানো হবে, তারপর বাকি সিদ্ধান্ত।”
সিনিয়র পুলিশরা বের হয়ে এলে হান এবং কায়ান সরে এলো।
” কায়ান তোমাকে কিছু বলার ছিলো।”
” কি কথা?”
” তোমার সন্দেহই ঠিকই। তোমার আপুর খু’নিও ফিলিক্স।”
” ফিলিক্স! কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? সে তো এসেছে ফ্রান্স থেকে আর আমার আপু ছিলো আমেরিকাতে। আর ফিলিক্সকে তো ওখানের কেউ চিনতোনা, তাহলে?”
” হুম ফিলিক্স ফ্রান্সেই থাকে তবে ড্যানিয়াল নয়।”
” মানে? ইনস্পেক্টর হান আপনি আমাকে একটু খুলে বলবেন বিষয়টা?”
” যাকে আমরা ফিলিক্স হিসেবে জানি, তার নাম ফিলিক্স, তার চেহারাটাও ফিলিক্সের মতো তবে দেহটা অন্যকারোর। ড্যানিয়াল অনেক চতুর একজন ব্যক্তি। সে শুধু সউলে নয় আরো অনেক জায়গায় এধরণের কাজ করেছে, তার মধ্যে আমেরিকা একটি। তাকে এতোদিনেও কেউ ধরতে না পারার কারণ সে একজন মানুষকে মে’রে তার জীবনটা লিড করে। সোজাভাবে বলি, আমাদের সামনে যে আছে সে আসল ফিলিক্স নয়, আসল ফিলিক্স আরো ১৮ মাস আগে মা’রা গিয়েছে। ড্যানিয়াল আমেরিকারতে তার নি’ষি’দ্ধ ইচ্ছেগুলো পুরোন করে ফ্রান্সে এসে থাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে সে ফিলিক্সের পিছু নিতে থাকে এবং একসময় তাকে মে’রে ফেলে। প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নিজের চেহারা পরিবর্তন করে এবং আসল ফিলিক্সের সব কাগজপত্র ব্যবহার করে সে সউলে এসে ফিলিক্সের পরিচয়ে বসবাস করছিলো।”
” কিন্তু এগুলো কতটা সত্য? আপনাদের কাছে কি প্রমাণ আছে?”
” আমরা এসব জানতে পেরেছি সুজির কারণে। সে শুধু আমেরিকাতে নয়, ফ্রান্সেও গিয়েছিলো এবং সব খোঁজখবর নিয়ে সে এসব তথ্য বের করেছে। সুজি দ্রুত দেশে ফিরে এসেছিলো তোমাকে সর্তক করার জন্য কিন্তু ফিলিক্স আগে থেকেই এয়ারপোর্টে লোক লাগিয়ে রেখেছিলো। সুজি এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই ফিলিক্স অর্থাৎ ড্যানিয়াল তার পিছু করতে থাকে। সুজির কাছে এসব প্রমাণ ছিলো, যা আমরা ফিলিক্সের বাসা থেকে পেয়েছি।”
কায়ান কিছু বলতে পারলোনা। সে অবাক হয়ে শুধু হানের কথা শুনেই গেলো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না একটা মানুষ খা’রা’প কাজের জন্য এতোটা বুদ্ধি ব্যবহার করতে পারে। সে তার বোনের খু’নিকে কোথায় কোথায় না খুঁজেছে কিন্তু সে তো তার চোখের সামনেই ছিলো, তার সাথে কথা বলেছে, হাঁটাচলা করেছে আর সে কিনা বুঝতেও পারেনি এটাই তার বোনের খু’নি।
” ইনস্পেক্টর সে কি জানতো আমি কায়াসার ভাই?”
” হুম, প্রথম থেকেই। তোমার বোনের ফোনে সে তোমাকে বহুবার দেখেছিলো।”
কায়ান পরবর্তীতে কিছু বলার অবস্থাতেই রইলোনা। তার এখন এটা ভাবতেই গা কেঁপে উঠছে এতো জ’ঘ’ন্য একজন মানুষের সাথে সে এতোটা সময় ছিলো। আসলেই কথাটা ঠিক ” নিরহ দেখতে মানুষরাই সবচেয়ে বেশি ভ’য়ংক’র হয়।”
.
.
পাঁচদিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। নকল ফিলিক্সের ব্যপারে কোর্টে কেস চলছে, জনগন চাইছে তার যেন অনেক কষ্টকর কোন শা’স্তি হয়। এনাক্ষী এবং হিতোমি দু’জনেই আগের থেকে কিছুটা সুস্থ আছে, একই কেবিনে রাখা হয়েছে দু’জনকে। পুলিশের কড়া পাহারায় থাকে দু’জনে। ফিলিক্সের সম্পর্কে তাদেরকে জানানোর পর এনাক্ষী অনেকটা সময় ভয়ে ছিলো তবে হিতোমি এসব জানার পর চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। এনাক্ষী তা ভালোভাবেই খেয়াল করেছে। তবে কিছু করার নেই, সে ভুল মানুষকে ভালবাসতে শুরু করেছিলো। ফল হিসেবে সাময়িক ক’ষ্ট তো পেতেই হবে।
হান এসে হিতোমির পাশে বসলো এবং কায়ান এনাক্ষীর কাছে গেলো।
” শরীর কেমন আছে এখন? কেন এতোটা ঝুঁকি নিতে গেলে? তোমার কিছু হলে তোমার পরিবারের কি হতো ভেবে দেখেছো?”
” কি হতো তা আমি করে জানতাম?”
” এই সময়েও তোমার বা’জে কথা গেলোনা। জানো আন্টি কতটা ভেঙে পড়েছেন? কিছুদিনের মধ্যেই ওনারা এখানে চলে আসবেন আর তোমাকে কান ধরে নিয়ে যাবে।”
” আমি চলে গেলে তুমি বুঝি ক’ষ্ট পাবেনা?”
এনাক্ষীর কথা শুনেও কায়ান শুনেনি তো নিজের কাজ করতে লাগলো।
” কি হলো বলো? আমি ইতালিতে ফিরে গেলে তুমি ক’ষ্ট পাবেনা?” কায়ানের শার্টের হাতা টেনে জিজ্ঞেস করলো এনাক্ষী।
” কার জন্য ক’ষ্ট পাবো? তুমি আমার কে? বাহাদুরি দেখিয়ে তো বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে তখন কি আমার কথা মনে ছিলো?”
” তো কি করতাম? হিতোমি বি’প’দে আছে জেনেও চুপচাপ বসে থাকতাম?”
” তাই বলে এতোটা ঝুঁ’কি নেওয়া মোটেও উচিত হয়নি।”
” আচ্ছা বাবা আর ব’কো’না, এবার একটু মিষ্টি করে কথা বলোতো। না হলে আমি আমার পরিবারের সাথে ইতালিতে ফিরে যাবো।”
” যাওনা, আমি ধরে রেখেছি নাকি?”
অন্যদিকে হান একদৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে হিতোমি নিচু স্বরে বললো,
” আর কত লুকিয়ে রাখবে ব্রাদার? এবার তো নিজের মনের কথাটা এনাক্ষীকে বলে দাও।” করুণস্বরে বললো হিতোমি। বোনের মুখে এধরণের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো হান।
” কি বলছো তুমি সিস্টার? কি লুকিয়ে রাখার কথা বলছো?”
” মিথ্যা বলে লাভ নেই ব্রাদার। আমি জানি তুমি এনাক্ষীকে পছন্দ করো, তাহলে কেন তাকে বলে দিচ্ছোনা?”
” তা হয়না সিস্টার। দেখো তারা দু’জন কত হ্যাপি আছে। আমি চাইনা তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে যেতে। হ্যাঁ আমি এনাক্ষীকে পছন্দ করি তবে কায়ান তাকে ভালোবাসে। আমি দেখেছি এনাক্ষীর অবস্থা দেখে সে কতটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলো। আর হয়তো এনাক্ষীও কায়ানকেই ভালোবাসে।”
” কিন্তু সে তো নিজের মুখে তা বলেনি। তাহলে একবার অন্তত বলে দেখো।”
” না, আমি বললে এনাক্ষী আর কখনোই আমার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবেনা। যেটা আমি চাইনা। থাকনা সে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে। আমি নাহয় দূর থেকেই তাকে ভালোবাসে গেলাম।” এনাক্ষীর দিকে তাকিয়ে বললো হান।
” তাও একটি বার চেষ্টা করলে হয়না ব্রাদার?”
” সে কখনোই আমাকে মেনে নেবেনা সিস্টার। তার ধর্ম আর আমার ধর্ম তো ভিন্ন। না সে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করতে পারবে আর না আমি করতে পারবো। আর তুমি তো জানোই আমাদের এখানে পরিবারের বড় সন্তানরা কোন ভিনদেশীদের বিয়ে করতে পারেনা। কখনোই আমাদের মিল হওয়া সম্ভব নয় সিস্টার। গড যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। তাই যা হচ্ছে তা মেনে নেওয়াই শ্রেয়।”
হিতোমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে তার ভাইয়ের মনে কি চলছে।
” বিগ ব্রাদার তুমিও আমার মতো ভুল মানুষকে ভালোবাসলে।” মনে মনে বলো হিতোমি।
.
.
প্রায় পনেরদিন পর এনাক্ষী এবং হিতোমি বাসায় ফিরেছিলো। তারপর আরো অনেকদিন এনাক্ষী বাড়িতেই ছিলো, কায়ান সর্বক্ষণ তার খেয়াল রেখেছে। বর্তমানে দু’জনে সুজির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কায়ান শক্ত করে এনাক্ষীর হাতখানা ধরলো।
” এনাক্ষী তুমি থাকবে তো আমার সাথে? নাকি আপু আর সুজির মতো তুমিও না বলেই চলে যাবে? আপুর কথা যখন সুজি জানতে পারে সে চেষ্টা করতো আমার খেয়াল রাখার। আমার ছোট হয়েও সে হয়ে উঠেছিলো আমার বড় বোন। সে কথা দিয়েছিলো সে ফিরে আসবে কিন্তু তাকে আসতে দেওয়া হয়নি। তুমি থাকবে তো আমার সাথে?”
” ভালেবাসবে আমাকে?”
” তোমাকে ছাড়া আর কেই বা আছে আমার?”
” তার মানে অন্যকেউ থাকলে আমার কাছে আসতেনা।”
” আ….. এতো সুন্দর মূহুর্তে উল্টাপাল্টা কথা বলো কেন?” একটু বিরক্ত হয়ে বললো কায়ান তবে পরমুহূর্তেই আবারো স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
” আমার সাথে বৃদ্ধ হবে এনাক্ষী?”
” প্রস্তাবটা খা’রা’প না। মনে নেওয়া যায়, কি বলো? আচ্ছা মিস্টার কায়ান মল্লিক আমি আপনার সাথে একসাথে বৃদ্ধ হবো। তাহলে এই ব্যপারটা আমার পরিবারকে জানাতে হবে। তারা তো কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে। তাদের তো জানাতে হবে আমি একসাথে বৃদ্ধ হওয়ার জন্য একজনকে পেয়ে গিয়েছি।”
” এই তুমি এতো কথা কেন বলো, একটু বলবে? এতো কথা বললে বৃদ্ধ হওয়া তো দূর আমি তোমার সাথে কাল থেকে দেখাই করবোনা।”
” আরে কায়ান সাহেব রা’গ করেছেন দেখি। আচ্ছা বাবা আর কথা বলবোনা। চলো পাশেই একটা সুন্দর জায়গা আছে, শরৎ তো চলেই এলো। নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর ম্যাপেল পাতা হয়েছে। চলো আমরা লাল, হলুদ, কমলা রঙের ম্যাপেল পাতা দেখে আসি।”
হাতে হাত রেখে ম্যাপেল পাতার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এগিয়ে যেতে লাগলো দু’জনে। এনাক্ষী একবার পেছনে ফিরে সুজির ছবির দিকে তাকালো, তবে বেশিক্ষণ তাকালোনা। শক্ত করে কায়ানের হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো। সে মনে মনে বললো,
” এক নিশিতে আমাদের দেখা, অন্য এক নিশিতে মিলন। কোন এক নিশির অন্তিম প্রহরে তুমি তোমার প্রিয় মানুষদের হারিয়েছো আর কোন এক নিশির অন্তিম প্রহরে আমি আমার প্রিয় মানুষটাকে পেলাম। পৃথিবী সত্যিই কত অদ্ভুত তাই না?”
__________________ সমাপ্ত ___________________