নিশির_অন্তিম_প্রহরে #পর্বঃ০৯,১০

0
200

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ০৯,১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
০৯

তিন জন পুলিশ অফিসারের সামনে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হোন ইয়ান। হান একবার তার ঘরটাতে চোখ বুলিয়ে নিলো। সারা বাড়ি অগোছালো। এখানে ওখানে জামা-কাপড়, স’জুর বোতল, প্যাকেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

” তুমিই তো পার্ক জিসুর বান্ধবী হোন ইয়ান। আমি কি ঠিক বলছি?”

” হ্যাঁ।” ভয়ে ভয়ে বললো সে।

” পার্ক জিসুর সম্পর্কে তো জানো?”

” হ্যাঁ, তার সাথে যে এরকম কিছু হতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি।”

” জিসুর সাথে তোমার শেষ কবে দেখা হয়েছে?”

” তার মৃ’ত্যুর দিন, বারে আমাদের দেখা হয়েছিলো। আমরা পার্টি করে যে যার বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলাম।”

” জিসুর মা আমাদের বলেছে তার নাকি বয়ফ্রেন্ড আছে। তুমি কি এই ব্যপারে কিছু জানো?”

” হ্যাঁ জানি। কিম সনহু তার নাম।”

” তার ঠিকানা জানো তুমি?”

” না তবে আপনারা তাকে বারে পেতে পারেন। সে প্রায় সময়ই বারে যেয়ে থাকে।”

” গামসাহামনিদা হোন ইয়ানসি। সাবধানে থাকবেন, কোন প্রকারের তথ্য জানতে পারলে আমাদের ফোন করবেন আশা করি।”

হোন ইয়ানের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো তারা। গাড়িতে বসার আগে হান পেছন ফিরে তাকালো। গাড়িতে বসেই সে নির্দেশ দিলো হোন ইয়ানের উপর নজর রাখতে এবং দ্রুত কিম সনহু এর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য।

কায়ানকে নিয়ে একটা শপিং মলে এসেছে এনাক্ষী। তার কিছু জামা-কাপড় কেনার প্রয়োজন ছিলো এবং কায়ানের রান্নার জিনিস। প্রথমে তারা একটা স্টোরে গেলো যেখানে রান্নার জিনিস পাওয়া যায়। কায়ান নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনছে এবং এনাক্ষী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। কিছু সময়ের মধ্যে কায়ানের ট্রলি প্রায় ভর্তি হয়ে গেলো। তা দেখে এনাক্ষী মজা করে বললো,

” এতো সব কিছু নিচ্ছো সব ন’ষ্ট হওয়ার আগে শেষ করতে পারবে তো?”

” কেন পারবোনা? আমি তো প্রায় সময় আরো বেশি জিনিস নিয়ে থাকি।”

” বাহ্ বাহ্ তুমি তো দেখছি খুবই ফুডি মানুষ। কত ধরনের জিনিস নিলে।”

” তা তো বটেই। তুমি কি কিছু নেবে?”

” না আমার বাড়িতে অলরেডি অনেক কিছু আছে।”

” তাহলে চলো বিল পে করে আসি।”

কাউন্টারে যাওয়ার পর বিল দেখে এনাক্ষীর চোখ কপালে উঠে গিয়েছে। এতো বিল এসেছে যেটা এনাক্ষী সারামাসেও খরচ করেনা। কিন্তু সে দেখলো কায়ান হাসিমুখে নিজের কার্ডটা দিয়ে বিল মিটিয়ে দিলো। তা দেখে এনাক্ষী বিরবির করে বললো,

” বড়োলোক্স পিপল।”

” কিছু বললে কি?”

” আনি।” (না)

এবার তারা দু’জন এসেছে একটা কাপড়ের দোকানে। এনাক্ষী এটা ওটা ট্রাই করছে এবং মাঝেমাঝে কায়ান থেকেও জিজ্ঞেস করছে তাকে কেমন লাগছে। অবশেষে অনেক কিছু দেখার পর এনাক্ষী কিছু কাপড় কিনে নিলো।

দোকানটা থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম সামনে যেতে এনাক্ষী থেমে গেলো।

” কি হলো এনা থেমে গেলে যে? এখান থেকে কিছু নেবে?”

” না তবে এই পুতুলগুলো দেখে একটা ঘটনা মনে পড়লো?”

” কোন ঘটনা?”

” এটা আমাকে আমার মা বলেছে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন নাকি একবার আমাকে শপিং মলে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আমি বাড়িতে ফেরার সময় বায়না ধরেছিলাম এই স্ট্যাচুগুলোও নিয়ে যাবো। আমাকে নাকি অনেক বোঝানোর পর মা বাড়ি নিয়ে যেতে পেরেছিলো। এই কারণে এরপর থেকে মা কখনোই আমাকে শপিং মলে নিয়ে যাইনি।”

” সত্যি? হাহাহা…… এনাক্ষী তোমার ছোটবেলাতো দেখছি অনেক মজার ছিলো। তো এখনো কি এই স্ট্যাচুগুলো বাড়িতে নিয়ে যাবে?”

” তুমি কিনে দেবে? তুমি কিনে দিলে আমার কোন সমস্যা নেই। আমি তা সাদরে গ্রহণ করে নেবো।” চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললো এনাক্ষী।

” পা’জি মেয়ে একটা।” কায়ানের কথা শুনে এনাক্ষী হেসে দিলো।

কায়ানের সাথে কথা বলছিলো এনাক্ষী। সেইসময় আচমকা একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো এনাক্ষীর সামনে। ছেলেটির আচমকা আগমনে এনাক্ষী ভড়কে গেলো।

” আনেংহাসেও।”

এনাক্ষী একবার কায়ানের দিকে তাকিয়ে হেসে বো করে বললো, ” আনেংহাসেও।”

” ফারেনার?”

” নে।”

” আরুমদাওএও।” ( ইউ আর বিউটিফুল।)

ছেলেটার কথা শুনে এনাক্ষী আবারো ভড়কে গেলো। সে কখনো আশা করেনি এভাবে কেউ কিছু বলবে।

” গামসাহামনিদা।”

ছেলেটা চলে এসে এনাক্ষী বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কায়ানের দিকে তাকালো।

” এভাবে কি দেখছে?”

” না দেখছিলাম ছেলেটা তোমার মধ্যে হঠাৎ কি এমন দেখলো যে এতো সুন্দর কমপ্লিমেন্ট দিলো।”

” হু…. তার চোখ আছে তাই সে দেখতে পেয়েছে। তোমার চো’খ নেই তাই দেখতেও পাবেনা। একদম আমার সাথে আর কথা বলবেনা।”

ধুপধাপ পা ফেলে এনাক্ষী সামনে দিকে এগিয়ে গেলো।

চিপস খেতে খেতে সামনের স্ক্রিনে চলমান নিজের প্রিয় কে-এক্টরের এড দেখছে এনাক্ষী। কিছুদূরে দাঁড়িয়ে কায়ান ফোনে কথা বলছে। হঠাৎ নিচে চোখ পড়তেই সে নিচে দৌড় দিলো। উল্টো দিকে ফিরে কথা বলার কারণে কায়ান খেয়ালই করলোনা যে এনাক্ষী নিজের জায়গায় নেই।

বারে বসে ড্রিং’কের গ্লাসটা নাড়াচাড়া করছে সনহু। সে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার মনোযোগ অন্যদিকে। আচমকা নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সে পেছন ফিরে তাকালো। টিপটপ সাজে দাঁড়িয়ে থাকা কোরিয়ান মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির চোখের ভাব দেখেই সনহু তার মনের ভাবটা বুঝতে পেরে গেলো। সে মেয়েদের চোখের ভাব দেখেই বুঝতে পেরে যায় তারা কি চাইছে। মেয়েদের ব্যপারে বড়ই জ্ঞানী সে। কোমড়ে হাত রেখে মেয়েটিকে নিজের কাছে টেনে নিলো সনহু।

” সেই বিউটিফুল হট লেডি তোমার নাম কি? আগে তো কখনো এখানে দেখিনি।”

” দেখতে চাইলে তো দেখতে। তুমি তো নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে মজে থাকো। আজ একা পেলাম তাই নিজের দেখা দিতে চলে এলাম।”

” তা শুধু দেখা দিতেই এসেছো নাকি আরো কিছু করতে?”

” তুমি যদি রাজি থাকো তবে আমার কোন সমস্যা নেই।” নেশাভরা কন্ঠে ড্রিংকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললো মেয়েটি। মেয়েটির কথা বলার ধরণ দেখে সনহু আগ্রহ প্রকাশ করলো মেয়েটির প্রস্তাবে। মেয়েটি তাকে প্রস্তাব দিলো বাইরে যাওয়ার।

” বাইরে কেন? এখানেই তো ব্যবস্থা আছে।”

মেয়েটি আঙ্গুল দিয়ে সনহুর গালে স্লাইড করতে করতে বললো,

” এখানে না। এখানে আমাদের কাজে ডির্স্টাব হতে পারে। আর আমি তা চাইনা। আমি একদম শান্ত পরিবেশ চাই। যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকবো।”

মেয়েটির কথা শুনে সনহু হাসলো। মেয়েটিকে নিজের আরো কাছে নিয়ে এসে নিচু স্বরে বললো,

” এভাবে বলোনা, পা’গ’ল হয়ে যাবো।”

” আমি তো সেটাই চাই।”

মেয়েটি সনহুর হাত ধরে তাকে বারের বাইরে নিয়ে এলো। সনহুর গাড়িতে উঠে বসলো দু’জনে। গাড়িতে সনহু মেয়েটিকে কিস করতে চাইলে মেয়েটি বাঁধা প্রদান করলো।

” কি হলো? আটকালে কেন?”

” এখন কিছুই হবেনা৷ যা হবে সব একেবারে। একটু ধৈর্য্য ধরো জান। ধৈর্য্য ধরলে এর ফল মিষ্টি হয়। তাড়াহুড়ো করলে তেঁ’তো ফল খেলেই নিজের খু’দা মেটাতে হবে। তুমি কি তাই চাও?”

” না।”

” তাহলে একটু ধৈর্য্য ধরো। আমি কথা দিচ্ছি আজকের রাতটা তোমার জীবনের স্মরনীয় রাত হতে চলেছে। এমন একটা রাত তুমি উপহার হিসেবে পাবে সেটা তুমি কখনোই ভুলতে পারবেনা। এবার দেখি ড্রাইভিং সিট থেকে সরো।”

” কেন? যাবে না?”

” আমি ড্রাইভ করবো।”

মেয়েটি সনহুকে সরিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো। সিট পরিবর্তন করার পর মেয়েটি একটি কালো কাপড় দিয়ে সনহুর চোখ জোড়া বেঁধে দিলো।

” আরে চোখ বাঁধছো কেন?”

মেয়েটি সনহুর একদম কাছে এসে নিচু কন্ঠে বললো,

” এই যে বলেছিলাম আজকের রাতটা তোমার জন্য স্মরণীয় হতে চলে, তারই পূর্বপ্রস্তুতি।”

চলবে……

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

ফোনে কথা শেষ করে কায়ান যখন পেছনে ফিরলো তখন এনাক্ষীকে কোথাও দেখতে না পেয়ে সে ঘা’বড়ে গেলো। এনাক্ষীকে কয়েকবার ফোন করলো তবে সে রিসিভ করলো না। এবার কায়ানের বেশ ভ’য় হতে লাগলো।

” হে ঈশ্বর মেয়েটা কোথায় গেলো? কতবার বলেছিলাম আমাকে না জানিয়ে কোথাও না যেতে। যদি আমার একটা কথা শুনতো সে। এবার আমি তাকে কোথাই খুঁজবো?”

অন্যদিকে,

এনাক্ষী দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচের ফ্লোরে নেমে এলো।

” ফিলিক্স।” হাঁপাতে হাঁপাতে বললো সে। ফিলিক্স ঘুরে তার দিকে তাকাতেই সে বিজয়ের হাসি হাসলো। যে অনেক সাধনার পর কিছু পেয়েছে।

” আরে এনাক্ষী, তুমিও এখানে! আমি তো আশা করিনি তোমার দেখা পাবো। কিন্তু তুমি এভাবে হাঁ’পা’চ্ছো কেন?”

” তোমাকে দেখতে পেয়ে ছুটে এসেছি তো তাই আরকি।”

” তুমি আমাকে দেখে ছুটে এসেছো? বাহ্ কি কপাল আমার। তো কার সাথে এসেছো?”

” আমি তো কায়…… এইরে আমি যে তোমাকে দেখে এভাবে ছুটে এলাম কায়ানকে তো একবারও বলিনি। নিশ্চয়ই সে আমার জন্য চিন্তা করছে।” এনাক্ষী নিজের ফোন বের করলো কায়ানকে ফোন করার জন্য। কিন্তু ফোন বের করতেই সে জিহ্বায় কা’ম’ড় দিলো। তাড়াতাড়ি সে কায়ানকে কলব্যাক করলো তবে কায়ান ফোন রিসিভ করলোনা উল্টো কেটে দিলো। এনাক্ষী আবার ফোন দিলো তবে রিংটোনের শব্দ তার আশেপাশে থেকে ভেসে এলো। এনাক্ষী আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো তার থেকেই কিছুটা দূরে কায়ান দাঁড়িয়ে আছে। এনাক্ষী ফিরে তাকালে সে নিজের ভ্রু-জোড়া উঁচু করে তাকে চোখের ইশারা করলো। এনাক্ষী ঠোঁট নাড়িয়ে তাকে সরি বললো। কায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তাদের কাছে এসে দাঁড়ালো।

” আমাকে কি একবার বলে আসা যেতো না এনাক্ষী? আমি কি তোমাকে আসতে বাঁ’ধা দিতাম? আমার তো সেই অধিকারটা নেই। তবে তুমি যদি একবার আমাকে বলে আসতে আমি এতোটা চিন্তা করতাম না। যেহেতু তুমি আমার সাথে এসেছো তোমার কিছু হলে এটা আমার ভিতর অ’পরা’ধবোধ সৃষ্টি করবে।”

” সরি কায়ান। আসলে ফিলিক্সকে দেখে এক্সাইটেড নিচে চলে এসেছি, তোমাকে বলার কথা মনে ছিলোনা।”

” সমস্যা নেই। পরের বার থেকে অন্তত একটা মেসেজ করে কোথাও যেও।”

এবার কায়ার ঘুরে ফিলিক্সের দিকে তাকালো।

” হ্যালো ফিলিক্স। কেমন আছো তুমি? অনেকদিন পর দেখা হলো আমাদের।”

” গডের কৃপায় আমি বেশ ভালোই আছি। তুমি কেমন আছো?”

” আমিও বেশ ভালো আছি। তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?”

” হুম চলছে ভালোই। তোমাদের তো এখন অনেক চাপ যাচ্ছে তাই না? যা দেশের অবস্থা, তোমাদের নিউজ চ্যানেলের তো একেবারে ভালোদিন যাচ্ছে।”

ফিলিক্সের কথাটা এনাক্ষীর মোটেও পছন্দ হলোনা।সে বিরবির করে বললো,

” ইডিয়ট।”

” আব.. এনাক্ষী তুমি কি আরো কিছুক্ষণ থাকবে ফিলিক্সের সাথে?”

” না আমি এবার বাসায় চলে যাবে। শরীরটা খা’রা’প লাগছে। ফিলিক্স তুমিও কি যাবে আমাদের সাথে?”

” ধন্যবাদ কিন্তু আমি এখন যাবোনা। তোমরা যাও, পরে আবার দেখা হবে। সাবধানে যেও।”

এনাক্ষী আর কায়ান মল থেকে বের হয়ে বাসে উঠে বসলো। সিটে বসার পর কায়ান এনাক্ষীকে প্রশ্ন করলো,

” তোমার কি খা’রা’প লাগছে?”

” হুম।” বাসের জানালায় মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো এনাক্ষী। এনাক্ষী অসু’স্থবোধ করছে দেখে কায়ানও আর প্রশ্ন করলোনা।
.
.
বেশকিছুটা সময় পর গাড়ি থামালো মেয়েটি। সনহু চোখের বাঁধনটা খুলতে নিলে মেয়েটি বাঁধা দিলো।

” কি হলো এখনো খুলতে দিচ্ছো না কেন? আর কতক্ষণ বেঁধে রাখবো।”

” আর কিছুক্ষণ বেবি। তারপরই তুমি তোমার সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে।”

সনহু বুঝতে পারলো মেয়েটি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। এরপর মেয়েটি সনহুকেও ধরে বাইরে বের করালো। সনহু অনুভব করলো মেয়েটি তাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিক্ষার অবসান ঘটেছে ভেবে সনহু মনে মনে খুশি হলো।

একটা চেয়ারে বসানো হলো সনহুকে। চোখ বন্ধ থাকায় সে দেখতে পেলোনা তাকে কোথায় নিয়ে আসা হয়েছে তবে কিছুসময় পরেই তার দু’টো হাত কিছু একটার সাহায্য বেঁ’ধে দেওয়া হলো।

” কি হলো তুমি আমার হাত বাঁধছো কেন?”

প্রতিউত্তরে কেউ কিছু বললোনা তবে তার চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হলো। চোখ খুলে দেওয়ার পর সনহু জায়গাটা দেখে অবাক হয়ে গেলো কারণ এটা পুলিশ স্টেশন এবং তার চারিপাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। সনহু মেয়েটির কথা জিজ্ঞেস করবে তখন তার মনে পড়লো সে তো মেয়েটির নাম জানে না। কিন্তু তার বুঝতে অসুবিধে হলোনা তাকে চালাকি করে কোন ধস্তাধস্তি ছাড়া পুলিশরা ধরে এনেছে এবং তার ধারণা একদম পরিষ্কার হয়ে গেলো যখন হানের সাথে সেই বারে দেখা হওয়া মেয়েটি পুলিশ ইউনিফর্ম পড়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। মেয়েটিকে দেখে সনহু বাঁকা হাসলো।

” বাহ্ রুপের সাথে সাথে ভালোই বুদ্ধি আছে তোমার। খুব ভালো এক্টিং করতে পারো তুমি। আমি আজ পর্যন্ত কত মেয়ের সাথে এরকম অভিনয় করেছি আর সেই আমি কিনা ধরতে পারলাম, ইমপ্রেসিভ। ড্রামায় অভিনয় করতে পারো, বেশ ফেইম পাবে।”

” আমার কথা বাদ দে, নিজের কথা চিন্তা কর।”

” বাহ্ বেশ ভালো তে’জ দেখি। আচ্ছা এসব বাদ, আমাকে এখানে তুলে আনা হয়েছে কেন? উপস….সরি তুলে আনা হয়নি রুপ দেখিয়ে ফাঁসিয়ে আনা হয়েছে কেন?” বিদ্রুপ করে বললো সনহু। সনহুর কথা শুনে ইনস্পেক্টর কাং হু বেশ ক্ষিপ্ত হলেন। তবে হান তাকে চোখের ইশারায় শান্ত থাকার নির্দেশ দিলো।

” হ্যালো সনহু। আমি ইনস্পেক্টর চোই হান সক।”

” হ্যালো ইনস্পেক্টর হান। আমি কি জানতে পারি কেন আমাকে এভাবে মি’থ্যা কথা বলে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে? তাও নারী লো’ভ দেখিয়ে।” শেষ কথাটা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো সে। এতে মেয়েটি রা’গী চোখে তার দিকে তাকালো।

” এভাবে আনার জন্য আমরা সত্যি দুঃখিত তবে আমাদের কাছে এটাই বেটার অপশন বলে মনে হয়েছে। এতে আমাদেরও তোমার পেছনে ছুটে সময় অপচয় হয়নি আর না তোমারও দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে।”

” কিন্তু আমাকে কেন এখানে আনা হয়েছে? আমি তো কোন দোষ করিনি। যদি বারে যাওয়ার জন্য আমাকে তুলে আনা হয়ে থাকে তবে বলে রাখি আমি টিনএজ নয়, ড্রিংক করার বয়স হয়েছে আমার।”

” না ড্রিংক কিংবা বারে যাওয়ার জন্য আমারে তোমাকে এখানে নিয়ে আসিনি, সেটা আমাদের অধিকার নেই। তুমি কি পার্ক জিসুকে চেনো?”

” কেন চিনবো না? সে আমার গার্লফ্রেন্ড।”

” বাহ্ তুমি দেখি খু্ব ভালো ছেলে। সহজেই সত্যিটা বলে দিলে। আমি তো ভেবেছি তুমি তাকে চিনতেই পারবেনা।”

” কেন পারবোনা? সে আমার গার্লফ্রেন্ড, তাকে না চেনার তো কোন কারণ নেই।”

” তুমি তো জানোই জিসুর খু’ন হয়েছে এবং জিসুর ফ্রেন্ড হোন ইয়ান আমাদের বলেছে সে শেষবার তোমার সাথে জিসুকে দেখেছিলো।”

” ইনস্পেক্টর আপনি কি সন্দেহ করছেন যে আমিই জিসুকে হ’ত্যা করেছি?”

” সন্দেহ না করার কোন কারণ দেখাও।”

” শুনুন ইনস্পেক্টর হান এটা ঠিক জিসুর সাথে আমি কোন সিরিয়াস রিলেশনশিপে ছিলাম না, সে শুধু টাইম পাস ছিলো আর সেইম জিসুর ক্ষেত্রেও। আমাদের মধ্যে কোন ঝা’মেলা ছিলোনা। যে যার মতো থাকতাম, প্রয়োজন হলে দেখা করতাম তারপর আবারো যে যার ইচ্ছে মতো চলাফেরা করতাম। হ্যাঁ সেদিন আমি জিসুর সাথে ছিলাম তবে সে মাঝরাস্তা নেমে যায়। এরপর সে কোথায়, কার সাথে ছিলো আমার কোন ধারণা নেই। আমি সেইদিন ড্রাং’ক ছিলাম বিদায় তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম এবং ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”

” কিন্তু আমরা তা কিভাবে বিশ্বাস করি যে তুমি সব সত্যি কথা বলছো? তুমি আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য মি’থ্যা কথাও তো বলতে পারো।”

” আপনারা চাইলে আপনাদের মতো খোঁজ নিতে পারেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন আমি কতটা স’ত্যি বলছি।”

এবারো সবাই হতা’শ হলো। তারা ভেবেছিলো সনহু থেকে অন্তত কোন ক্লু পাবে কিন্তু সনহু যতটা আত্নবিশ্বাস নিয়ে তাদের সামনে বসে আছে তাতে তারা স্পষ্ট বুঝতে পারছে জিসুর খু’নের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। আরো কিছু খুটিনাটি কথা জিজ্ঞেস করে তারা বাধ্য হলো সনহুকে ছেড়ে যেতে। তাদের কাছে সনহুকে আটকে রাখার কোন শক্ত কারণ নেই। যাওয়ার আগে সনহু মেয়ে ইনস্পেক্টরটাকে বললো,

” আমার কথা ভেবে দেখতে পারো, ভালোই লাভ হবে এতে। আর হ্যাঁ বারে যেই ইঙ্গিত দিয়েছিলে চাইলে সেটা সত্যি করা যেতে পারে। ইচ্ছে হলে বারে আসতে পারো।”

সনহুর কথা শুনে মেয়েটি তাকে গা’লি দিলো তবে সনহু তা গায়ে মাখলোনা।

চলবে……

( চরিত্রের নাম বুঝতে কোন সম’স্যা হলে পর্বটি আরেকবার পড়বেন। এরপরও না বুঝতে পারলে কমেন্টে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here