নিষিদ্ধ সে,(১+২)
এ্যাগ্নেস মার্টেল
পর্ব-১
—আপনি ভুল জায়গায় বসে গেছেন। সিটটা আমার ছিলো।
কথাটায় মাথা বেকিয়ে তাকালাম। লম্বা ফর্সা মতন ছেলে সামনের সিটে একহাত দিয়ে হালকা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কথাটা বলছে। ভ্রু কুচকে এলো। ব্যাগ হাতড়ে তাড়াতাড়ি টিকেট খুজতে লাগলাম। এতো এতো যন্ত্রপাতির মাঝে ব্যাগে সামান্য টিকেট খুজে পাচ্ছি না। ছেলেটা হালকা ভ্রু কুচকে আছে। পাল্টা ভ্রু কুচকে চেয়ে আমিও ব্যাগ হাতরাচ্ছি। অবশেষে কাগজের মতো কিছু হাতে লাগলো।
আমিঃ [টিকেট দেখতে দেখতে] সিটটা তো আমারই ভাইয়া।
—দেখি টিকেকটা! [হাতে টিকেটটা দিলে] সরি, আপনার ভুল হচ্ছে। এইপাশের সিট আপনার।
আমিঃ ঐ তো একই। আমি জানালা ছাড়া বসতে পারি না। এর জন্য বসেছি। সহযাত্রীর জন্য একটু তো ফেভার দিতেই পারেন।
নিজের বিরক্তি ছাপিয়ে ছেলেটা ব্যাগ উপরের তাকে রেখে পাশে বসে গেলো। বিনাবাক্য ব্যায়ে কানে ইয়ারফোন গুজে নিলাম। গাড়ি ছাড়লে জানালার ওপাশের ছুটন্ত গাছগাছালি দেখে গান শুনে আনমনে হেসে দেওয়া অভ্যাস। ব্যাগ থেকে চিপস বের করতে করতে পাশে চোখ গেলে ছেলেটাকে মহাবিরক্ত হয়ে বসে থাকতে দেখতে পাই।
আমিঃ যাচ্ছেন কই?
প্রশ্নটায় একবার ঠিকমতো আমার দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে নিলো। হাহ, ভাবে বাঁচে না। আমিও কেমন গাধা যার তার উপর ইম্পোর্টেন্স ঢালছি। মুখ ভেঙচে চিপস শেষ করে চকোলেটের প্যাকেট খুলছি। ছেলেটা এবারো কেমন করে তাকিয়ে। ভাব দেখানোয় মেজাজ এমনিতেই তেতে আছে। তার উপর আমার আহারে এমন চাহনি!
আমিঃ [ঝাঝালো স্বরে] খাবেন?
ঝাঝালো স্বরটায় ভ্রু কুচকে বিরবির করে কি জানি বললো। আমার কি!
—[অনেকক্ষন পর] আমার কাছে পানির বোতল আছে ঐটাও খাবেন?
রেগে কিড়মিড় করে তাকাচ্ছি। এতো বিরক্তিকর কেন এই ছেলে। মন চায়ছে তুলে আছাড় মেরে জানলা দিয়ে ফেলতে।
আমিঃ আপনি খান না! আমাকে জিজ্ঞেস করেন কেন?
—তখন থেকে আপনার এই প্যাকেট ঐ প্যাকেট খোলার কচকচানিতে আমি বিরক্ত। পানি তো একবারো খেতে দেখলাম না খাবেন? সাথে বোতলটাও গিলে ফেলেন। প্লাস্টিক কামড়ালে আপনার কচকচানির শব্দ বেশি হবে!
আমিঃ আজব!
—কথাটা আপনার মুখে মানায় না।
পাশের সিটের এক মেয়ের সাথে ভেজা বিড়ালের মতো ভদ্র হয়ে সিট চেঞ্জ করে নিলো। চোখের চশমা নাকে আলতো করে ঠেলে দিয়ে রেগে চেয়ে আছি। আমায় তাকাতে দেখে চোখ ঘুরিয়ে ফেললো। ইচ্ছে করছে হাতের চিপসগুলো ছুড়ে মারি। ময়লা ছেলে! অন্ধকারে সানগ্লাস পরে আসছে ফুটানি দেখাতে! নিজেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভাবে হাহ! চারপাশে বাসে জ্বলে থাকা লাইটের টিমটিমে আলোটাই যা আলোর উৎস। সাথে প্রিয় গান। আহা, বেস্ট জার্নি। ঠোঁটে হাসি চওড়া করে পাশ ফিরলাম। তখনের ছেলেটা সানগ্লাস পরেই মাথা কাত করে ঘুমিয়ে। হাতে থাকা চিপসের অবশিষ্টাংশ কামড়ে ছোট আকারে পরিণত করে বেটার মুখে ছুড়ে অন্যপাশ ফিরে নিরীহের মতো চোখ বুজে নিলাম।
—ওয়াট দা হেল! [কিছুক্ষন পর] ঐ মেয়ে চিপস খেতে পারো না ঠিকমতো? ঢিলাঢিলি করছো যে? জঙলি!
মিটিমিটি হাসছি চোখ বন্ধ করে। পাশের আপুটাও হাসছে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলায় সে হাসলেও ততোটা খেয়াল করছে না ছেলেটা। একটু পর উকি দিলাম আবার ছেলেটা ঘুমিয়েছে কিনা দেখতে। একবার চিপ্স মেরে বেশ মজা লেগেছে। এবার চিপ্সের বড় টুকরা মারবো! আমার সাথে পার্ট নেওয়া ঘুচে যাবে একদম। উকি দিতেই ভালুকের মতো মুখ খিচে তাকাতে দেখলাম।
—আর একবার আমার মুখে কোন কিছু এসে পরলে____!
আমিঃ [অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোঁট বেকিয়ে] আমাকে শাসান কেন? আপনার মুখে পরবে সেটা আপনার মুখকে ওয়ার্নিং করুন যাতে আজেবাজে জিনিসকে এলাও না করে!
ইগো দেখিয়ে পাশে মুড়তে গিয়ে ঘুমন্ত এক ভাইয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বেশ হয়েছে এবার সংঘর্ষ হলে কি যে খুশি হবো!
—[গাল টেনে] তুমি খুব দুষ্টু!
আপুর কথায় সব দাঁত বের করা হাসি দিলাম। আপুটা ফোন রেখে আমার দিকে ফিরলো।
—নাম?
আমিঃ নিষ্ঠা আহমেদ। তুমি?
—মিশা জাহান। [ফিসফিস করে]পাশের ছেলেটা খুব মুডি তাই না?
আমিঃ মুডি মানে? মুডির চেয়েও মুডি!
মিশাঃ ক্রাশ খেয়েছো? আমি কিন্তু খেয়েছি হিহিহি সমস্যা হলো সিঙ্গেল নই নয়তো_____
নাক মুখ কুচকে ড্রেনের পোকা দেখার মতো চেয়ে আছি আপুটার দিকে। আরেকবার ছেলেটার দিকে তাকালাম।
আমিঃ রাতের বেলা সানগ্লাস পরে ফকিরের মতো ভাব নেওয়া ঐ ছেমড়াকে পছন্দ হলো আপু? এর উপর ক্রাশ নামক সেন্ডেল ছুড়ে দিলে? এর উপর? [নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে] তোমার চক্ষু উপরওয়ালা ঠিক করে দিক! আমিন!
মিশাঃ হাহাহা সত্যি তো ক্রাশ খাওয়ার মতোই।
আমিঃ [গাল ফুলিয়ে] আমার ভাল্লাগে নাই ওকে! বাদ দাও, [হাতের চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে] চিপস খাবা?
আপু নাবোধক মাথা নাড়লো। আমি হেসে হেসে আবারো খাবারে মন দিলাম।
মিশাঃ তোমার মতো মানুষদের জন্যই জাঙ্কফুড বোন। আমরা এমনিতেই হাতি আরো এগুলো খেলে তো! আচ্ছা সব সময়ই তুমি এতো খাও?
আমিঃ হিহিহি কেন আপু?
মিশাঃ তোমার সাইজ দেখে কেউ বলবে না তুমি এতো খাও!
আমিঃ খাওয়া ইজ ভালোবাসা আপু! এসব জিজ্ঞেস করে আমায় লজ্জিত করো না।
মিশাঃ হাহাহা কিসে পড়ো?
আমিঃ এবার মেডিক্যাল ফাইনাল ইয়ার।
মিশাঃ অহ দারূণ। আনমেরিড না মেরিড?
আমিঃ উফ আপু, মেরিড হলে এখন জামাই পাশে থাকতো।
মিশাঃ নাও তো থাকতে পারে। এই আমাকেই দেখো জামাই থাকতেও আমি সিঙ্গেল হয়ে বাস জার্নি করছি রাগারাগি করে।
নানা কথায় ভোর নাগাদ চিটাগং এসে পৌছুলাম। একটা মাত্র বেস্টুর বিয়ে কলেজ ছুটি নাও, পড়ার চাপ থেকে বিরতি, দুইজনের জন্য ক্লাসমেটকে নোট করে রাখতে রাজি করানো এক কথায় আমি ক্লান্ত! বাস থেকে নেমে মোচড়ামোচড়ি করছি কর্কশ কণ্ঠ ভেসে এলো আমার উদ্দেশ্যে।
—সামনে দাঁড়িয়ে নড়াচড়া না করে সাইডে যান। যাত্রীদের নামতে দিন।
পাশ ফিরলাম। কালকের ঐ ইগোয়স্টিক ছেলেটা!
আমিঃ [হেসে] হ্যাল্পার মামা, আপনি আগে যাত্রীদের সম্মান দিতে শিখুন। কালা চশমা পরে ফুটানি দেখালেই আপনি সিদ্ধার্ধ কাপুর হতে পারবেন না। যে পেশায় যাকে মানায়। আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না। হুহ!
—তু______
চশমা নাকে ঠেলে ভেংচি কেটে এসে গেলাম। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। একটু দূরে ছেলেটা কাকে জানি খুজছে। ফোনে বারবার বিরক্তি প্রকাশ করছে পাচ্ছেনা বলে। আমি রিকশা করে চলে এলাম বান্ধবীর বাসাতে। বাসাটা নতুন সাজে সাজছে। ঝারবাতি দিয়ে গেট থেকে বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত সাজানো। গেটটা বিভিন্ন রঙিন কাপড়ে সুন্দর করে সাজিয়েছে। সাজানো গেট দিয়ে ঢুকতেই সায়রির চিৎকার শুনতে পেলাম। চিৎকার শুনে সামনে তাকাতে বাসায় পরা ট্রাউজার, ফতুয়া আর গলায় পেচানো উড়না পরে দৌড়ে আস্তে দেখছি। এসে ঝাপ্টে ধরলো আমায় ক্লান্ত আমি হাতের ব্যাগ ছেড়ে দিলাম। আন্টি হেসে হেসে হাতের কাজ রেখে এদিকটায় এগিয়ে আসছে।
সায়রিঃ আমি ভেবেছি সত্যিই আসবি না।
আমিঃ [ছাড়াতে ছাড়াতে] এতো আগে থেকে বাসাটা সাজানো হচ্ছে যে?
সায়রিঃ [গাল ফুলিয়ে আন্টির দিকে চেয়ে] উনার তৃপ্তির জন্য!
আন্টিঃ [হেসে সায়রির মাথায় মারলেন] মেয়েটা মাত্র আসলো ক্লান্ত ঢুকতে না দিয়ে গেটে রেখেই এগুলো বলছিস। পরে কি বলবি? ইস, চশমা নিয়েছো দেখছি।
আমিঃ ঐ মাইগ্রেনের সমস্যা হলে তখন একটু আধটু পরি।
আন্টিঃ [নিচে থেকে ব্যাগগুলো তুলে ঠেসে সায়রির হাতে ধরিয়ে দিলো] মেয়েটা অতিথি হিসেবে এসেছে নিয়ে যা ওর ব্যাগটা।
প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে করতে আন্টি আমাকে নিয়ে বসার ঘরে নিয়ে এলো। আঙ্কেল বাড়ির পাশটায় পেন্ডেল টানানোর কাজ করছেন। সোফায় বসে ফ্যানের নিচে জিরোচ্ছি। সায়রিদের গ্রামের বাসাটা দারূণ লাগে আমার। দাদার বানানো পুকুর, বাড়ির সামনের বেশটুকু রাস্তা ইটের। বাড়ির পাশে জঙ্গলের মতো বনানী। সায়রিদের বাসার পাশে তার তিন চাচার বাসা। যৌথ পরিবার ছিলো আগে এখন ভেঙে গেছে একক পরিবার হিসেবে। তবে বেশি দূর থাকতে পারবে না বলে পাশাপাশিই বাসা বানানো। হাস্যকর ব্যাপার কেউই ছুটিছাটা ছাড়া এখানে আসেন না। তাদের মধ্যে সায়রির পুরো পরিবার শুধু ঢাকায় থাকে। বাকিরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বাঁচার তাগিদে। ছুটির সময় উনারা যখন একসাথে গ্রামের বাড়িতে আসেন তখন নাকি উৎসব উৎসব ধুম পরে চারপাশে। সায়রির বিয়েতেও সাতদিন আগে থেকে ধুম পরে গেছে। বেশ কিছুক্ষন বসার ঘরে সায়রির কাজিনদের সাথে গল্প করে উঠে এলাম। গা মেজমেজ করছে। গোসল করতে হবে। রুমের কাছে আসতে সায়রির ঝগরুটে গলার স্বর শুনতে পাচ্ছি।
সায়রিঃ ভাইয়া, ও তো এসেই গেছে। তুই ঐখানে কি খুজিস এখন!
কিছুক্ষন নীরব থেকে ঐপাশের জনের বলা কথাটা শুনলো।
সায়রিঃ [এক ভ্রু উঁচিয়ে]তুই কি আসলেও খুজেছিস নিষ্ঠাকে? হাহ, ফোন রাখ।
ফোন রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধুম করে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে পরলো। ব্যাগ থেকে কাপড় বের করতে করতে ওর ঢং দেখছি। মনে হচ্ছে আমার জায়গায় সে সারারাত জার্নি করেছে।
সায়রিঃ জানিস, বিয়ে এতো প্যারার জানলে শুধু রিলেশনই করতাম ঐ খাম্বুর সাথে ডেটিং এ যেতাম না। এতে অন্তত বিয়ে ঝঞ্জালটা হতো না। উফ, খোদা! নিজের বিয়েতে নিজেরই গরুখাটা খাটতে হচ্ছে! মানে হয় এসবের?
হাসতে হাসতে ফ্রেশ হতে চলে এলাম। দরজা খুলে বের হবো এমন সময় বাথরুমের দরজায় কেউ ধাম ধুম করে মেরে গরুর মতো চেঁচাতে লাগলো।
—সায়রির বাচ্চা দরজা খুল! গেন্দা পেন্দা সব আমার বাথরুম নষ্ট করে রেখেছে। বলি ঢাকাতে তোর বিয়ে দিলে কি হতো?
কণ্ঠটা চেনা চেনা লাগছে। ভুল না হলে এইটা ঐ ইগোওয়ালা ছেলের কণ্ঠ। দরজা খুলে দিতে দরজাটা মাথায় এসে বারি খেলো। মাথায় কিছুক্ষন হাত বুলিয়ে রেগে দরজাটা একদম খুলে বেরিয়ে এলাম।
আমিঃ জংলির মতোন দরজা বারি দিচ্ছেন কেন? ইউরেটারে কি অস্বাভাবিক চাপ পরেছে?
চলবে__________?
এ্যাগ্নেস মার্টেল
“নিষিদ্ধ সে”
(২)
কণ্ঠটা চেনা চেনা লাগছে। ভুল না হলে এইটা ঐ ইগোওয়ালা ছেলের কণ্ঠ। দরজা খুলে দিতে দরজাটা মাথায় এসে বারি খেলো। মাথায় কিছুক্ষন হাত বুলিয়ে রেগে দরজাটা একদম খুলে বেরিয়ে এলাম।
আমিঃ জংলির মতোন দরজা বারি দিচ্ছেন কেন? ইউরেটারে কি অস্বাভাবিক চাপ পরেছে?
ছেলেটা বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। হাতে থাকা তাওয়াল দিয়ে দিলাম বারি। কথা না বলে এখানেও ইগো! আরে ভাই এই ইগো দেখানোর জন্যই তুই দরজাটা হনুমানের মতো ধাক্কাচ্ছিলি!
—ম্যানার্স জানেন না? ব্যবহৃত ভেজা তাওয়াল দিয়ে হুটহাট একজনকে মারেন!
আমিঃ [তাওয়াল আরেকবার উচু করে ধরলাম] বেশি বকবক করলে আবার মারবো! এমনিতেই আপনি আমার কান পঁচিয়ে দিয়েছেন দরজা ধাক্কিয়ে। আসছে ম্যানার্স শিখাতে! নিজেই তো ম্যার্নাসের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন! অচেনা মানুষ বাথরুমে থাকলে আপনার এতোই তাড়া পরে বাথরুমে ঢোকার?
—আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! আমার বাসায় এসে আমাকেই ধমকাচ্ছেন।
আমিঃ এটা আপনার বাসা? মিথ্যা বলতে লজ্জা লাগে না? মানে সামান্য সেল্ফরেস্পেক্টও নেই এদের।
—সেল্ফরেস্পেক্ট কাকে শেখাও? আগে নিজে_____
সায়রি মাঝে এসে ধাক্কাতে লাগলো ছেলেটাকে। রেগে চোখ-মুখ লাল হয়ে এসেছে। সায়রির হাত ঝারা মেরে আবারো এলো আমার সাথে ঝগড়া করতে।
—[সায়রির দিকে তাকিয়ে] ঐ এই মেয়ে এখানে কেন?
আমি তাওয়াল দিয়ে আবারো বারি মারলাম ছেলেটাকে। রেগে তেড়ে এলো। সায়রি এবার এমন ধাক্কা দিলো কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেলো ছেলেটা।
সায়রিঃ ভাইয়া ও নিষ্ঠা, এমন করছিস কেন?
ভুত দেখার মতো দুজন দুজনের দিকে চেয়ে আছি। এটা সায়র ভাইয়া! ও মোর খোদা! এতো চেঞ্জ!
সায়রঃ [নাক মুখ কুচকে] এই মেয়ে নিষ্ঠা?
তাওয়াল একদম মুখে ছুড়ে মেরে এসে গেলাম রুম থেকে। চুলে চিড়ুনি করা হলো না বদ ছেলের জন্য! নিচে নামতে আন্টি হাতে খাবার ধরিয়ে দিলো। আমি নাকি শুকিয়ে গেছি না খেতে খেতে। হিহিহিহি আমি যে কি পরিমাণ খাই দিনে এটা যদি দেখতো আন্টি একবার স্ট্রোক করতো! টিভি দেখে দেখে খাচ্ছি আর একটু পর পর হেসে উঠছি। পাশে দুটো পিচ্চি বসে আছে। টিভিতে টম এন্ড জেরি হচ্ছে। বাংলা ভার্সন কোন চ্যানেলে জানি দিচ্ছে। ফ্যাক্ট তো কার্টুন দেখা, চ্যানেল দিয়ে কাজ কি? পিচ্চি দুইটা হাসছে আর আমি মুখে খাবার নিয়ে সোফায় হেলেদুলে হাসছি। পিছন থেকে সায়র ভাইয়ের কর্কশ কণ্ঠ ভেসে এলো।
সায়রঃ এই মেয়ে তো পাগল কারন ছাড়াই এমনি এমনি হুটহাট হাসে। বাসেও একা একাই কারন ছাড়া হাসছিলো। পাব্লিক পাগল বলে জুতার বারি দেয় নাই এটাই বিশাল ভাগ্য এর।
হাতে খাবার নিয়ে রেগে তাকালাম। আন্টি কিছুদূর টুলে বসে কাজ করতে করতে হাসছে মিটিমিটি। এখান আন্টি অনুপস্থিত থাকলে হাতে থাকা খাবার নিসন্দেহে ছেলেটার মুখে সজ্জিত হতো। হাতে প্লেট দেখে আরো জ্বলে উঠলেন উনি।
সায়রঃ [আড়চোখে তাকিয়ে] সারাক্ষনই দেখি খায় খায় স্বভাব।
না পেরে চেঁচিয়ে উঠলাম “আন্টি!” আন্টি ধমকে উঠলেন সায়র ভাইকে। সায়র ভাই বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে চলে গেলো।
.
.
.
সায়রি ফোনালাপে ব্যস্ত। পুরো বাসাটা ঘুর ঘুর করে দেখছি একা একা। সিড়ি বেয়ে বেয়ে যখন চিলেকোঠায় এসে পৌছেছি তখন কিছু কিছু কথার টুকরো কানে ভেসে আসতে লাগলো। মনে হচ্ছে সায়র ভাইয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে। কোন মেয়েকে মানাতে চাইছেন। মেয়েটা মানতে নারাজ। কাজিন-কাজিন প্রেম গন্ধ পাচ্ছি! যেখানে সায়র ভাইয়ের কথা সেখানে আমি গেঞ্জাম না বাজালে চলে? ছোট থাকতে জীবনটা ছেড়া ত্যানা বানিয়ে দিয়ে ছিলো। চিলেকোঠার বন্ধ দরজায় আলতো করে কান পাতলাম। মেয়েলি কণ্ঠে ঢঙ্গী কান্নার শব্দ আসছে।
—সরো! তোমার সাথে ব্রেকাপ। তুমি তুমি কতোদিন আমার ফোন ধরোনি দেখেছো।
কান ঠেকিয়ে মুখ ভেঙাচ্ছি। এহ নেকামি করার জায়গা পায় না।
সায়রঃ জান, আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই ফোন ধরিনি। তুমি সারপ্রাইজ হওনি?
কান সরিয়ে চোখ মুখ বিকৃত করে চিলেকোঠার দরজার দিকে চেয়ে আছি। আহা কি প্রেম! নেকার গার্লফেন্ড নেকামির ঢেকি একদম। একশন টাইম! লম্বা দম টেনে যেই দরজা খুলবো অমনি কেউ টেনে ছাদে নিয়ে এলো। বিকেলের ম্লান হয়ে আসা আলোয় এক যুবকের চেহেরা দেখে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।
আমিঃ এই আপনি আমার হাত ধরে আছেন কেন? ছাড়ুন ছাড়ুন বলছি।
—[ভাবলেশহীনভাবে হাত ছেড়ে ধীর কণ্ঠে] অন্যের পার্সোনাল সময়ে আড়ি বা উকিঝুকি দিতে নেই জানো না?
আমিঃ আড়ি কই পাতছিলাম। আমি তো ডিরেক্ট যাচ্ছিলাম একশন! বাদ দেন আপনি কে?
—সায়রের বেস্টফেন্ড রনক। তুমি?
আমিঃ [হালক দম ছেড়ে] পাত্রীর বান্ধবী। আপনার জন্য স্টার জলসার ড্রামা মিস গেলো আমার।
রনকঃ [হালকা হাসি নিয়ে] ঐটা তো তুমি করতে যাচ্ছিলে!
আমিঃ হাহ, আপনি কতো ভালো শান্ত মেজাজী আপনার ফ্রেন্ড ছোট থেকেই জাইরার জাইরা! [আফসোসের সাথে চোখ বড় বড় করে] জানেন আমায় সেই ছোট থাকতে খাবারে লোভ দেখিয়ে নিজে রাক্ষসের মতো খেতো। পিছনে কতো সুন্দর ভাইয়া ভাইয়া বলে ঘুরঘুর করতাম। আর ঐ ছেলে পাছায় তিন চার ঘা মেরে “যা ভাগ!” বলে দৌড়ানি দিতো! একে আদো মানুষ বলা যায় আপনিই বলেন ভাইয়া?
সায়রঃ খালি খাওয়াটাই মনে রাখবে! এই মেয়ে এতো খায় জানিস রনক পুরো জার্নিতে কতোগুলো বড় বড় চিপস আর চকলেটের প্যাকেট যে শেষ করেছে তুই হিসাবও করতে পারবি না। ছিঃ খাদকের____
পিছনে ঘুরলাম রেগে। রনক ভাইয়া হাসছেন মিটিমিটি। বিরক্তি নিয়ে সায়র ভাইয়ের দিকে চেয়ে আছি। আপনি থেকে ডিরেক্ট তুই! কি অভদ্রতামি!
সায়রঃ [অন্যদিকে ঘুরে] এই অসহ্যকর মেয়ের সাথে তুই এখানে কি করিস রনক? চল! এসব মেয়েদের একদম দুচোখে দেখতে ইচ্ছে করে না। দেখলে মন চায় তুলে আছাড় মারতে। চল, চল! বাসার ভিতরে চল!
হাতের কাছে ফোন বাদে কিছু না পেয়ে বাগানে থাকা সদ্য ফুটন্ত গোলাপের ডালটা পাতাসহ ছিড়ে তৎক্ষনাৎ ছুড়ে মারলাম সায়র ভাইয়ের দিকে। আমার দিকে রেগে তাকালো। আমিও রাগে ফুসছি।
সায়রঃ তুই গোলাপ ছিড়লি কেন আমার গাছের?
আমিঃ বেশ করেছি! আপনি থেকে ডিরেক্ট তুই! পারলে কাটাগুলো এক একটা করে তুলে বন্দুকে ভরে গুলির মতো ছুড়ে মারতাম ময়লা ছেলে!
সায়রঃ তোকে তো____
এসে মারতে গেলে সরে গিয়ে মার্শাল আর্ট দিয়ে উনাকেই হাটুমুড়ে বসিয়ে দিলাম মাথায় কয়েক ঘা। কিছুদূরে সরে হাত ঝারছি। সায়র ভাই রেগে তাকাচ্ছেন মাথা ঢলতে ঢলতে। রনক ভাইয়া হালকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে।
রনকঃ তুমি মার্শাল আর্ট পারো?
আমিঃ [সায়র ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে] আব্বু শিখিয়েছে যেনো যে কারোর সাথেই লাগতে পারি ন্যায় বিচারের জন্য!
সায়র ভাইকে ভেংচি কেটে চলে এসেছি। রুমে এসে দেখি সায়রির সাথে বসে একটা আপু গল্প করছে। কণ্ঠটা ছাদের আপুটার মতো!
সায়রিঃ এদিকে আয়। নির্মা আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
হেসে ঠিক ওদের মধ্যে গিয়ে ধুপ করে বসে গেলাম। নির্মা আপু হেসে উঠলো খিলখিল করে। সুন্দরী অনেক আপুটা। সায়র ভাইয়ের চয়েজ আছে বলতে হয়।
সায়রিঃ নির্মা আপু ও আমার বেস্টু নিষ্ঠা! আর [আমাকে] এই আপুটা আমার বড় চাচার মেয়ে। সায়র ভাইয়ার ক্লাসমেট সাথে আমার ভবিষ্যৎ ভাবি! হিহিহিহি!
আপুটা কিছুক্ষনের মধ্যে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসলো। কিছুক্ষন পর দুষ্টুহাসি নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
নির্মাঃ তোমার আর রনকের মাঝে কি কিছু চলে?
চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছি। রনক ভাইয়াকে আজকে মাত্র চিনলাম।
সায়রিঃ মানে মানে? আমার এই ক্রাশকেও নিয়ে নিলি?
আমিঃ [নাক মুখ কুচকে] কিসের কি?
নির্মাঃ নয়তো রনক তোমাকে টেনে ছাদে নিয়ে যাচ্ছে দেখলাম যে চিলেকোঠার জানালা দিয়ে!
সায়রিঃ [আমাকে চেপে ধরে] সত্যি করে বল!
আমিঃ আরে বাবা! নাই কিছু আমাদের মাঝে বলছি তো! গড প্রমিস! কিচ্ছু নাই!
দুজন আমার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে। মস্তিষ্কে নিশ্চিত এদের ছত্রাক পরেছে!
সায়রঃ থাকলেও ভেঙে দিবো! এমন জঙলি মেয়ের কাছে আমার বেস্টফ্রেন্ডকে সঁপে দিতে পারি না আত্মহত্যা করতে!
ভ্রু কুচকে তাকালাম সায়র ভাইয়ের দিকে! পাশে রনক ভাই শান্তভাবে মুখটা হালকা হাসি হাসি করে দাঁড়িয়ে।
আমিঃ [উঠে বিছানায় দাঁড়িয়ে সায়রের থেকে উঁচু হয়ে] হেই খাম্বু! শেষবার ওয়ার্নিং করছি আমার পিছনে লাগবেন না!
সায়রঃ [কোমড়ে হাত দিয়ে সামনে এগিয়ে এসে] আলবাদ লাগবো। কি করবি পিছনে লাগলে?
নির্মা আপুর দিকে আড়চোখে তাকালাম। আপু হাসছে মিটিমিটি। সাপোর্ট পেয়ে এবার তেড়ে গেলাম সায়র ভাইয়ের দিকে। এতেই ঘটলো বিপত্তি। আমি যে বিছানার শেষ মাথায় ছিলাম তা খেয়ালে ছিলো না। বিছানা থেকে পরলাম তো পরলাম সামনে সায়র ভাই দাঁড়িয়ে ছিলো তাকে সহ নিয়ে পরলাম। কপাল কপাল বারি খেয়ে ঠোঁট ছুয়ে গেলো দুজনের। নিচে পরে ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনই ঠোঁট লাগা অবস্থায় স্ট্যাচু হয়ে আছি।
চলবে__________?