নিষিদ্ধ সে,(৩+৪)

0
843

নিষিদ্ধ সে,(৩+৪)
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
(৩)

নির্মা আপুর দিকে আড়চোখে তাকালাম। আপু হাসছে মিটিমিটি। সাপোর্ট পেয়ে এবার তেড়ে গেলাম সায়র ভাইয়ের দিকে। এতেই ঘটলো বিপত্তি। আমি যে বিছানার শেষ মাথায় ছিলাম তা খেয়ালে ছিলো না। বিছানা থেকে পরলাম তো পরলাম সামনে সায়র ভাই দাঁড়িয়ে ছিলো তাকে সহ নিয়ে পরলাম। কপাল কপাল বারি খেয়ে ঠোঁট ছুয়ে গেলো দুজনের। নিচে পরে ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনই ঠোঁট লাগা অবস্থায় স্ট্যাচু হয়ে আছি। যখন বুঝতে পারলাম কি সিচুয়েশনে বর্তমানে আছি ছিটকে সরে এলাম দুজন দুজনকে ধাক্কা দিয়ে! ভয় নিয়ে ঠোঁট ঘষতে ঘষতে নির্মা আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি শান্ত অথচ মুখটা শক্ত করে বসে। হয়তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। যে কারোরই এমন অবস্থায় মাথা গরম হবে! আমি হলে তো সবার সামনে বয়ফ্রেন্ডকে ডিভোর্স দিতাম! যাতে ডিভোর্সি হয়ে পরে কোন মেয়ের সাথেই রিলেশনে যেতে না পারে! সায়রি হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে। রনক ভাইয়া সেই আগের ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে। সায়র ভাই চলে গেলো গটগট করে! আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে এদের অবস্থা দেখছি।

নির্মাঃ আমি আসছি।

নির্মা আপু চলে গেলে বিছানায় বসে গেলাম। কান্না পাচ্ছে খুব নির্মা আপুর ভয়ে! যেমন চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছিলো মনে হচ্ছিলো এখুনি জান বের করে নিবে আমার।

সায়রিঃ এখানে কি একটু আগে কিছু হয়েছিলো ভাইয়া?

রনক ভাই কাধ দুটো উঁচু করে না জানার সাইন দেখিয়ে চলে গেলো। সায়রি হতভম্ব হয়ে এবার আমার দিকে তাকালো।

সায়রিঃ এখানে_____

রেগে চোখ মুখ শক্ত করে তাকালাম। ঠোঁটে এক আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গেলো। রেগে বাথরুমে এলাম। ঠোঁট সাবান দিয়ে ইচ্ছেমতো ঘষছি আর ঐ হনুমানকে বকছি! না খেয়ে ঘুমিয়েছি সন্ধ্যা বেলায়। আন্টি, সায়রি এসে অনেকবার ডেকেছিলো। উঠিনি। সারারাত জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি এক্সকিউজ দেখিয়েছি। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো। উঠে বসলাম। এই এক সমস্যা যতো জলদি ঘুমাবো ঠিক ততো জলদি মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙবে! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় চুলে চিড়ুনি করলাম। বেডে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে সায়রি। গলায় উড়না পেঁচিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। গন্তব্য না পেয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সায়র ভাইয়ের সামনে যাবো কিভাবে ভেবেই জমে যাচ্ছি! যখনই সায়র ভাইকে মনে পরছে ঠোঁট হাতের উল্টো পিঠে ঘষে নিচ্ছি। শেষ সারির সিড়িতে এসে দেখি ছাদের দরজা হাট করে খোলা। আন্টি কি আজকে দরজা বন্ধ করে ঘুমায়নি? আমি তো আরো ভয় পাচ্ছিলাম সিড়ি থেকে না আমাকে ঘুরে যেতে হয় ছাদের দরজা বন্ধ বলে। ছাদে পা রাখতে রনক ভাইয়ের কণ্ঠ ভেসে এলো কানে।

রনকঃ ঘুমাতে যা! এভাবে ফুলে ফেপে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকলে তুই আর দেখতে চার্মিং থাকবি না!

সায়রঃ সর ইয়ার! লাইফের ফার্স্ট কিস স্পয়েল হলো ঐ জঙলির জন্য! ভেবেই তো মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে। নির্মা কি পরিমাণ রেগে আছে তুই ভাবতে পারছিস? নির্মাকেই আমি এখনো কিস করিনি! আর ঐ জঙলি_____

আমায় দেখে থেমে গেলো। রেগে ফোস ফোস করতে করতে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় ছাদে থাকা একটা টবে এমনভাবে লাথি দিলো সে জায়গায় আমি থাকলে একদম গুড়াগুড়া হয়ে যেতাম। রনক ভাইয়া শান্ত ভঙ্গিতে পকেটে হাত রেখে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো।

আমিঃ রনক ভাই!

দরজার কাছে থেমে গিয়ে আমার দিকে তাকালো।

আমিঃ সরি ভাইয়া ঐটা এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছে করে___

রনকঃ আমি ভুল বুঝিনি তোমায়।

আমিঃ কিন্তু আপনি রেগে আছেন নিশ্চিত আমার উপর!

রনকঃ আমি রেগে থাকতে যাবো কেন?

আমিঃ কারন আমি ভুলে ভুলে সায়র ভাইকে কি____

রনকঃ কৈফিয়ত দিতে হবে না। অন্যের বিষয়ে আমার আগ্রহ নেই!

শান্ত কণ্ঠে তিরস্কারে আরো লজ্জা লাগলো। চুপ করে আছি। রনক ভাইয়া চলে গেলো। এমন হবে জানলে ঝগড়াই করতাম না সায়র ভাইয়ের সাথে। রাতের আকাশে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকাতে লাগলাম। ফোন চেক করে দেখি আব্বু আম্মুর অনেকগুলো কল এসে বসে আছে। জোরাজোরি করে রেগে এখানে এসেছ। আব্বু অবশ্য সহমত কিন্তু আম্মু ছিলো না। সাত সাতদিন নাকি অনেক ডিফারেন্স! পিছিয়ে যাবো পড়ালেখা থেকে!
.
.
.
সায়রিঃ ঐ মেয়ে উঠ! ঐ ঐ উঠ না! নিষ্ঠার বাচ্চা! ঐ উঠ!

কাধ থেকে সায়রির হাত সরিয়ে পাশ ফিরে ঘুমালাম। সায়রি আরো ধাক্কিয়ে আমাকে ডাকতে লাগলো। না পেরে চোখ মেলে তাকালাম। এবার চোখ টেনে ধরলো আমার।

সায়রিঃ এতো ঘুমায় কেউ? কখন ঘুমিয়েছিস জানিস তুই? সেই সন্ধ্যায়! আর এখনো ঘুমাচ্ছিস। [কোমড়ে খোচা দিয়ে] আগে তো শুধু খেতি। এখন ঘুমও এড করে নিয়েছিস রুটিনে?

আমিঃ সর তো ঘুম হয়নি গতকাল!

সায়রিঃ ও মোর খোদা! কি বলে এই মেয়ে! ঘুম হয় নাই তোর? তোর হয় নাই?

আমিঃ ঢং বাদ দিয়ে আমার উপর থেকে সর।

সায়রিঃ [চোখ টেনে ধরে] আবার ঘুমাতে যাচ্ছিস! তোর আব্বু আম্মু কল করে তোর ফোনের ভাইব্রেশনে কান খতম করে দিলো উঠ!

উঠে গেছি না পেরে। চুল নিচু করে খোপা করে ফোন হাতে গলায় উড়না পেচানি দিয়ে বারান্দায় এলাম। রিং হচ্ছে ফোন। বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফোন ধরার আশায় নেতিয়ে আছি। সামনে কিছু চুল এসে বারবার থুতনি ছুয়ে বিরক্ত করছে। তবু নাক মুখ কুচকে চোখ বন্ধ করে আছি। অনেকক্ষন রিং হবার পর ফোন তুললো আব্বু।

আব্বুঃ হ্যালো মা, কেমন আছো? গতকাল ফোন তুলোনি যে? সব ঠিকঠাক ঐদিক?

আমিঃ হুম! তোমাদের অবস্থা? নিভৃত ভাইয়া কি বাসায় আছে?

আব্বুঃ ভালোই! না নেই সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে। কি করো?

আমিঃ মাত্র উঠেছি আব্বু। আম্মু____

বলতে বলতে আম্মুর কণ্ঠ ভেসে এলো। “ঐ মেয়ে ফোন করেছে না? দেখি দাও ফোনটা দাও! একবার আসুক বাসায়। পিটিয়ে চামড়া তুলে ফেলবো। ফোন না তুলে কিভাবে দেখবো! দেখি!” মনে হলো আব্বুর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। আব্বু কি কি জানি বলছে।

আম্মুঃ তুই একবার বাসায় আয়! থাপড়ে তোর আমি ব্যাবস্থা করবো। জন্মের_____

ফোন কেটে দিলাম। সকালটা আবারো আম্মু বকায় শুরু হলো। অলস ভঙ্গিতে চোখ খুলে নিচে তাকিয়ে দেখি সায়র ভাই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরক্তি দেখিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। ভ্রু কুচকে তাকালাম। একটু পর সায়র ভাইয়ের এমন গট গট করে সামনে থেকে চলে যাওয়ায় রনক ভাই উপরে তাকালো। বারান্দা ছেড়ে এসে গেলাম।
.
.
.
আপেল খেতে খেতে সোফায় বসে থাকা নির্মা আপু আর সায়র ভাইয়ার কর্মকান্ড দেখছি। সায়র ভাই বারবার ইশারা করে কান একহাতে ধরে সরি বলছে। নির্মা আপু দেখেও না দেখার ভান করছে। একটু চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকাতে শান্ত ভঙ্গিতে রনক ভাইকে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দেখলাম। মানুষটা সব সময়ই কেমন শান্ত ভঙ্গি নিয়ে থাকে। হাসি এসে গেলো। অলস মানুষ! রনক ভাই আমাকে তাকাতে চোখ গোল গোল করে তাকালো। হেসে চোখ সরিয়ে দেখি সায়র ভাই কটমট করে তাকাচ্ছে আমার দিকে। কিছুক্ষন পর উনি জায়গা বদল করে আমার পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে কানে ফিসফিস করে গেলো।

সায়রঃ এতো খুশি হওয়ার কারন নেই! নির্মার সাথে আমি সব ঠিক করে নিবো দেখিস! তুই ছোটবেলার রিভেঞ্জ নিচ্ছিস তো? আমিও নিবো আমার সময়ে।

তার যাওয়ার দিকে আক্কেলগুড়ুম হয়ে চেয়ে আছি। কি বলে গেলো? আমি এদের ভাঙ্গনে হাসছি? হাহ! যে যেমন সে তেমনই চিন্তা ভাবনা করে! নির্মা আপুকে একা পেয়ে এগিয়ে গেলাম। আমাকে নির্মা আপুর দিকে এগোতে দেখে সায়র ভাই রেগে কটমট করে তাকাচ্ছে। চোখ দিয়েই হয়তো ওয়ার্নিং দিচ্ছে যেনো উল্টা পাল্টা কিছু না করি। আন্টি, আঙ্কেলরা আছে বলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে না। আমিও যা ভাবছে তাই সত্যি করতে যাচ্ছি বোঝাতে পৈশাচিক হাসি দিলাম তার উদ্দেশ্যে। এবার পুরো মুখটাই বিকৃত করে ফেললো। হাসতে হাসতে নির্মা আপুর কাছে এগিয়ে গেলাম।

আমিঃ নির্মা আপু!

আপু আমার দিকে তাকালো। চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছি না আমার সাথে রেগে আছে নাকি স্বাভাবিক। কেমন জানি চেহেরা গোমট গোমট ভাব।

নির্মাঃ কিছু বলবে?

আমিঃ [ঠোঁটে হাসি নিয়ে] আপু একটু ঐদিকে সরে কথা বলি?

আপু মাথা নেড়ে সায় দিলো। সিড়ির কাছে নির্মা আপু আর আমি বসে আছি। লম্বা দম টেনে আপুর দিকে তাকালাম।

আমিঃ আপু সরি। আমি ভাবি নাই ঐরকম কিছু হয়ে যাবে। সরি প্লিজ আমার জন্য সায়র ভাইয়ার উপর রেগে থেকো না। আমি বুঝি নাই এক্সিডেন্টলি_____

নির্মাঃ [হালকা হেসে] একই কথা বারবার বলতে হবে না। আমি ঐটার জন্য রেগে নেই।

আমিঃ সায়র ভাইয়ার সরি এক্সেপ্ট করে নাও আপু। [মাথা নিচু করেই] আমি কথা ঘুরিয়ে বলতে গেলে কথাটা বলাই হয় না। তাই সরাসরি বলছি রাগ লাগছে? রাগ লাগলে আমার উপর ঝারো। হেজিটেট করছো কেন? আমি থাকলে তিন চারটা লাগিয়ে দিতাম।

আপু হেসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আপুর একশনের জন্য চোখ বন্ধ করে নিলাম।

নির্মাঃ সত্যি বলতে আমার জেলাস লেগেছে খুব তোমার প্রতি। আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে অনেক। পাতানো বোন হবা?

আমিঃ [নাক মুখ কুচকে] পাতানো বোন?

নির্মাঃ [ভেবাচেকা খেয়ে] কেন আমাকে পছন্দ না তোমার?

আমিঃ তাই বলে পাতানো বোন? তোমাকে তো সোল সিস্টার বানাবো! ব্লাড কানেকশন না থাকলেও সোল কানেকশন থাকবে। হিহিহিহি।

আপু আমার মাথায় মেরে নিজেও হাসতে লাগলো। অনেকক্ষন গল্প করলাম। আজকে নাকি ঘুরতে যাবো সবাই।

আমিঃ [উঠে দাঁড়িয়ে] সায়র ভাইয়ের সরি গ্রান্টেড করবা না আপু?

নির্মাঃ [আমার গাল টেনে] তোমার প্রথম আবদার অবশ্যই গ্রান্টেড করবো।

চলবে_____?

এ্যাগ্নেস_মার্টেল
“নিষিদ্ধ সে”

(৪)

ঝর্ণার কাছে রাস্তার বাকে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছি আমি আর সায়রি। কিছুদূরে সায়রির ফিয়ন্সে সাইফ দাঁড়িয়ে। রনক ভাইয়া গাড়ির ডেকে বসে কোক খাচ্ছে একা একা। বাকি দুইজন নিজেদের টাইম স্প্যান্ড করছে একসাথে।

সাইফঃ সায়রি সেলফি তোলা শেষ হয় নাই?

সায়রিঃ [চোখ কুচকে] ঘুরতে চাইলে যাও না ঘুরো গিয়ে। আমার সেলফির পিছনে পরছো কেন?

সাইফঃ এখানে একা একা ঘুরতে আসছি?

সায়রিঃ রনক ভাইয়া আছে ওর সাথে যাও তাহলে।

আমিঃ [সায়রিকে ধাক্কিয়ে] যা তো অনেক তুলেছিস সেলফি এবার ঘুর গিয়ে ভাইয়ার সাথে।

সায়রিঃ তুই?

আমিঃ [দুই কাধ উচিয়ে] পিওর সিঙ্গেল।

সায়রি কিছুক্ষন তাকিয়ে চলে গেলো। ঝর্ণার কাছাকাছি জায়গায় বসে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি একা একা। সবাই শাড়ি পরেছে আমি পরিনি। শাড়ি পরে আমার মতে বেশি লাফালাফি করা ঘোরাঘুরি করা যায় না। হেসে হেসে পা নাড়াচ্ছি আর গুন গুন করে গান গাইছি। আসলে সব গানেরই সুর পারি শুধু লিরিক পারি না। গান শুনি আবল তাবল যা লিরিক কানে আসে তা দিয়েই গান গাই। মুখের সামনে হঠাৎ কেউ কোকের বোতল এগিয়ে দিলো। পাশ ফিরে দেখি সায়র ভাই বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে।

আমিঃ কি সমস্যা?

সায়রঃ তোর পাতানো বোন তোর জন্য কোক পাঠিয়েছে নে ধর।

কোকের বোতলের ক্যাপ খুলে গিলছি বিরক্ত মহাশয় দেখি এখনো পাশে বসে।

আমিঃ কিছু বলবেন?

সায়রঃ [অন্যদিক চেয়ে] ধন্যবাদ!

আমিঃ কি বললেন? শুনিনি।

সায়র ভাই বিরক্ত হয়ে তাকালো। হাসতে লাগলাম। সায়র ভাই কতোক্ষন একদৃষ্টে চেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।

সায়রঃ [বিরক্তিমাখা সুরে] এতে হাসির কি আছে? নাকি তুই তোর তেড়াবেকা একটা দাঁতের উপর আরেকটা দাঁত বেকে আছে ঐটা দেখাতে চাচ্ছিস আমায়। বন্ধ কর মুখ।

আমিঃ [হাতে থাকা কোকের ক্যাপ ছুড়ে মেরে] এগুলোকে গেঁজ দাঁত বলে। নাম না জানলে বিকৃত করবেন না।

সায়রঃ [ছোড়া ক্যাপ আবার আমাকে ছুড়ে] তুই আসলেও একটা জঙলি।

আমিঃ আমি জঙলি?

সায়রঃ তা নয়তো কি? তুই____________ [চেঁচিয়ে] আয়ায়া এগুলো কি নিষ্ঠা!

আমিঃ আমার সাথে লাগতে এসেছেন কোন দুঃখে? বেশ হয়েছে ফেলে দিয়েছি। এখন___

হঠাৎ আমাকেও কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। এমনিতেই সাঁতার জানি না। পানিতে পরে হাত-পা ছুড়ছি সাহায্যের জন্য। ভয়ে মনে হচ্ছে আর কখনোই পানির উপরে উঠতে পারবো না। বিষাদগ্রস্ততা গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। প্রচণ্ড বেগে হৃদস্পন্দন বাড়ছে।

সায়রঃ ঢং করবি না। আমি জানি তুই আমাকে আবার ঘোল খাওয়ানোর জন্য এমন করছিস।

পানির জন্য কিছু বলতে পারছি না। সাহায্যের জন্য আরো জোরে হাত-পা ছুড়ছি। কেউ পানিতে পরার আওয়াজ পেলাম। কিছুক্ষন পর কেউ আমাকে পানির উপরে তুললো। কিছুক্ষন কেঁশে ধাতস্থ হয়ে আশপাশ তাকালাম। সায়রি, নির্মা আপু বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে চেয়ে আছে। রনক ভাই এসে কোথা থেকে শার্ট এনে জড়িয়ে দিলো আমায়।

রনকঃ ঠিক আছো?

আমি ম্লান হেসে মাথা নাড়লাম। নির্মা আপু বকতে লাগলো সায়র ভাইকে। সায়র ভাই অপরাধী চোখে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়েছে। রনক ভাই আমাকে ধরে গাড়িতে এনে বসালো। মুড সবার নষ্ট হয়ে গেছে দেখে হেসে ওদের ঘুরতে বললাম। রনক ভাইকে খোচা দিতে সে সবাইকে মেনেজ করে পাঠিয়ে দিলো। সামনের এক দোকান থেকে আমার জন্য গরম গরম চা আর রুটি এনে দিলো খাওয়ার জন্য।

আমিঃ আমাকে পানিতে কে ধাক্কা দিয়েছিলো?

রনকঃ [আমার সামনের সিটে বসে] এক পিচ্চি।

আমিঃ ওহ!

ধোয়া উঠা কাপে চুমুক দিচ্ছি আর চারপাশ দেখছি সায়র ভাই দূর থেকে আমাকে দেখছে।নির্মা আপুর রাগ এখনো কমেনি। নিরুপায় বান্দা পিছনে ঘুর ঘুর করে ক্লান্ত। তাকে অসহায় অবস্থায় দেখে হাসি এসে গেলো।

রনকঃ সায়রকে পছন্দ করো?

বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছি রনক ভাইয়ের দিকে।

আমিঃ [আঙুল নিজের দিকে ঘুরিয়ে] আমি?

রনক ভাই চিরায়ত ভঙ্গিতে হেসে সামনের দিকে তাকালো। এক বন্ধু ইগোওয়ালা তো আরেক বন্ধু জন্মের অলস! কি কম্বিনেশন এদের বন্ধুত্বের! চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে হঠাৎ কালকের বলা রনক ভাইয়ের কথাগুলো মনে পরে গেলো।

আমিঃ [রনক ভাইয়ের দিকে চেয়ে] আপনি তো অন্যের ব্যাপারে জানতে আগ্রহী নন সাহেব! তো এই প্রশ্ন?

এবারো হাসলো সেই শান্ত ভঙ্গিমার হাসিটা। পকেটে হাত রেখে বসে দূরে দাঁড়ানো লম্বুকে দেখছে। আমিও তাকালাম মানুষটার দিকে।ভেজা কাপড় বদলে নতুন শার্ট গায়ে জড়িয়েছে। আকাশি রঙা শার্ট একদম মানিয়েছে খাপে খাপ গায়ের রঙের সাথে। সোজা ঘন কালো চুলগুলো মাঝে মাঝে উড়ে বেড়াচ্ছে কপালময়। জোড়া ভ্রু কুচকে কি জানি বিরবির করছে। ভাবনার বিষয় এই ছেলে কি সিগারেট ফুকে না? ঠোঁট দুটো কালো না কেন? অবশ্য উড়া কিছু খবরে শুনেছি কারোর কারোর সিগারেট ফুকলে ঠোঁট আরো গোলাপি হয়। কে জানে এর সত্য মিথ্যা। আমি তো সব কয়লা ঠোঁটের অধিকারিকেই দেখি।

রনকঃ ওর ঠোঁট নিয়ে গবেষণা করে লাভ নেই। ঐ অধিকার অন্যের।

রনক ভাইয়ের এহেন মন্তব্যে মুখ থেকে চা ছিটকে পরে গেলো। কাশি উঠে গেছে। রনক ভাই হাসছে মিটিমিটি।

আমিঃ কে বলেছে আমি উনার ঠোঁট বিশ্লেষণ করছিলাম?

রনকঃ যে কেউ তোমার চাহনি দেখে বলে দিবে যে তুমি সায়রের ঠোঁটের উপর আগ্র_____

আমিঃ কি হলো অর্ধেক বললেন যে? শেষ করেন কি বোঝাতে চেয়েছেন।

রনক ভাই আর কিছু বললেন না। হাসতে লাগলেন মিটিমিটি।

আমিঃ অশ্লীল!

মন্তব্যে হেসে কানে ইয়ারফোন গুজে নিলেন। এর সবকিছুই বোঝা দায়! হালকা ঢেউ খেলানো ঝাকরা চুল। চোখে মুখেও কেমন শান্ত শান্তভাব বিরাজ করছে। আমার স্ক্যানিং করায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে আমার দিকে ঘুরলেন।

রনকঃ এখন কি আমায় মনে ধরেছে?

আমিঃ [শয়তানি হাসি হেসে] দিওয়ানি হা দিওয়ানি মে দিওয়ানি হো গায়ি।

কিছু বললেন না শুধু হাসলেন। পাশে রোবটের মতো শীতল স্বভাবের মানুষ বসে। রোবট বললেও ভুল হবে! রোবট তো কর্মঠ। ইনি তো আস্তে আস্তে নড়াচড়া করে। কথা যে এতোগুলো বলেছে ঐটাই বিস্ময়ের ব্যাপার। মাইক্রো থেকে নামার ক্ষেত্রে সবার শেষে নামলাম আমি। সবাই বের হয়ে বাসায় চলে গেছে। লাস্টে নেমে হাঁচি দিলাম। কিছুক্ষন পর তাকিয়ে দেখি সায়র ভাই দাঁড়িয়ে।

আমিঃ কি?

সায়র কিছুক্ষন কি বলতে চেয়েও বলতে না পেরে উল্টো আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে তাকালো।

আমিঃ কি? এভাবে তাকান কেন?

সায়রঃ তুই একদম অসহ্যকর একটা মানুষ!

আমিঃ [সামনে গিয়ে] আমি তো তবু অসহ্যকর মানুষ আপনি তো অসহ্যকর জন্তু!

সায়রঃ থাপড়ে গাল ভেঙে দিবো বেয়াদব!

আমিঃ আমি কি বসে আঙুল চুষবো ভেবেছেন?

সায়রঃ আরেকবার তর্ক করলে তোর হাড্ডি-গুড্ডিও কেউ পাবে না!

আমিঃ না পেলে পুলিশ স্টেশনে ডায়রি লিখাবে!

সায়রঃ তোকে তো__!

দুজনই চুপ করে পাশে তাকালাম। পানিতে ভিজে অবস্থা কাহিল দুজনার। পাইপ হাতে রনক ভাই তার বিখ্যাত শব্দহীন হাসি দিচ্ছে বাগানে দাঁড়িয়ে। সামনে এগোতে গেলে স্লিপ কাটলাম রাস্তায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুঠো করে সায়র ভাইয়ের শার্ট ধরলাম। সায়র ভাই হঠাৎ আমার ভর দেওয়াতে তাল সামলাতে পারলেন না। সদ্য ছিটানো পানিতে রাস্তা কিনারে থাকা ধুলো কাদায় পরিনত হয়েছে। দুজন সেখানে পরে কাদা মেখে রনক ভাইয়ের দিকে রেগে তাকিয়ে আছি। হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো সে।

সায়রঃ ঠিকমতো হাঁটতে পারিস না?

আমিঃ জায়গাটা যদি পিছলানো ধরনের হয় আমার কি করার তাতে?

সায়রঃ তুই একদম বিরক্তিকর একজন। [আমাকে কাদা তুলতে দেখে] খবরদার কাদা ছুড়বি না।

কথা অমান্য করে মুঠো ভর্তি কাদা নিয়ে ছুড়তে গেলে চেঁচিয়ে উঠলেন উনি।

সায়রঃ কেঁচো কেঁচো!

চিৎকার দিয়ে উঠে লাফাতে লাগলাম সেই কাদাগুলো ছুড়ে মেরে। লাফাতে লাফাতে গলা ফাটাচ্ছি। আন্টি বাগানে ছিলেন চিৎকারে এগিয়ে এলেন।

আন্টিঃ কি হয়েছে এখানে?

সায়রঃ নিষ্ঠা কাদা মুঠো করে ধরে ভেবেছে কেঁচো ধরেছে।

আমিঃ এক এক মিনিট আপনিই____

নিচে তাকিয়ে দেখি সায়র ভাইয়ের মুখ কাদাতে কালো হয়ে আছে। হাতের দিকে তাকিয়ে তার দিকে একবার তাকালাম। হো হো করে হাসতে লাগলাম। আন্টি আমার তাকানো দেখে নিচে তাকিয়ে নিজেও হাসছে। নিচে সায়র ভাই আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। এর প্রাংকে মুঠো ভর্তি কাদা নিশ্চিত এর উপরই পরেছে লাফিয়ে লাফিয়ে সবকিছু ছুড়ে ফেলার সময়।

আন্টিঃ তোমরা ভিতরে আসো। রাস্তায় কেউ আসলে তোমাদের দিকে চমকে তাকাবে।

সায়র ভাই চুপ করে আছে। চোখে মুখে এখন রাগের আভা বিরাজ করছে। আরো একবার হাঁচি দিলাম। হাত এগিয়ে দিয়েছি তার দিকে। হাত ঝারা মেরে সরিয়ে একাই উঠে গেলো। ভাব দেখিয়ে আগে আগে চলে এসেছে। সাওয়ার ছেড়ে চুপ করে বসে আছি। চোখ বন্ধ করলে সায়র ভাইয়ের ঝগড়ার সময় বিরক্ত হয়ে তাকানোর দৃশ্য ভেসে উঠছে।

আমিঃ আআআআ মাথা ঘুরছে চোখ বন্ধ করে এর চেহেরা দেখতে দেখতে।
.
.
.
সায়রঃ তুই কি পাগল?

রনকঃ [মৃদু হেসে] তুই যা করিস অলয়েজ আমি তোকে সাপোর্ট করি। কিন্তু___

রনক ভাই নিশব্দে শান্ত ভঙ্গিমায় হাসতে লাগলো কথাটা অসম্পূর্ণ রেখে। উৎসুক হয়ে ওদের কথা শোনার জন্য চেয়ে আছি। সায়র ভাই একবার আমাকে দেখে নিয়ে পাশ কেটে চলে গেলো। রনক ভাইয়ের দিকে এবার উৎসুক চোখ নিবদ্ধ করলাম।

রনকঃ মানুষের পার্সোনাল কথা শোনায় এতো আগ্রহী হতে নেই!

আমিঃ [হেসে] ইটস নট এ বিক ডিল ব্রুহ!

সায়র ভাইয়ের রুম পাস করে যখন সায়রির রুমে যাবো ঝগড়া করতে শুনলাম নির্মা আপুকে। দরজা হালকা খুলে দেখি নির্মা আপু রেগে দাঁড়িয়ে আছে। সায়র ভাইয়ের মুখ লাল হয়ে আছে। নির্মা আপুর অবজেকশন সায়র ভাইয়া সময় দেয় না আগের মতো। সায়র ভাইয়া নিশ্চুপ। চেহেরা দেখে মনে হচ্ছে সায়র ভাইয়া এখুনি ফেটে পরবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। কিন্তু নির্মা আপুর শেষ কথাটা ট্রমায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ।

নির্মাঃ [রাগমিশ্রিত কণ্ঠে] তোমার মতো এমন চাইল্ডিস ছেলের সাথে আমার পক্ষে সম্পর্কে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তখন নিষ্ঠার যদি কিছু হতো দায়ভার তুমি নিতে? দেখতে পারো না বুঝলাম তাই বলে এত্তো?

সায়র ভাইয়া এখনো কিছু বললেন না। প্রথম কথাটা আমার নিজের কানেই বারবার বারি খাচ্ছে। আর ওদের তিন বছর হবে সম্পর্কের। খারাপ লাগছে খুব।

নির্মাঃ বাবা পাত্র দেখছে আমার জন্য! যদি পছন্দ হয়ে যায় তবে তার গলায় ঝুলে পরবো। এতো ইরিস্পন্সেবল ছেলের সাথে সারাজীবন কাটানো সম্ভবপর নয়।

সরে এলাম জায়গাটা থেকে। মন খারাপ লাগছে সায়র ভাইয়ের কথা ভেবে। ছাদে থাকা সিড়িতে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। নির্মা আপু খুব ভালো। মিশুক একটা মেয়ে। সায়র ভাই লাকি খুব!

রনকঃ ওরা এমন প্রায়শই ঝগড়া করে তা নিয়ে ভেবো না তোমার সায়র ভাই কষ্টে থাকবে না।

মাথা তুলে সামনে তাকালাম। রনক ভাইয়া সামনে দাঁড়িয়ে। রুমাল এগিয়ে দিচ্ছে। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে গালে হাত দিতে পানি হাতে ঠেকলো। অবাক হয়ে আরেক গালে হাত দিলাম। এবারো হাতে পানি ঠেকলো। আমি এতো ইমোশনাল এটা তো আগে জানতাম না! রনক ভাইয়া পাশে বসে রুমাল এগিয়ে দেওয়ায় তা না নিয়ে চোখ হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিলাম।

রনকঃ মাঝে মাঝে আমরা যা দেখি যা ভাবি ঐটা সত্যি হয় না প্রকৃতি বা পরিস্থিতিই বলো তা আমাদের নিয়ে বারবার খেলতে ভালোবাসে নিজের মাঝে আমাদের সম্পর্কিত রহস্যগুলো খুব যত্নে আড়াল করে রাখে।

কান্না পাচ্ছে আরো। কিন্তু কেন কান্না আসছে বুঝছি না। এমন তো কিছুই হয়নি।

রনকঃ সায়রকে পছন্দ করো?

প্রশ্নটা আমায় করেছে কিন্তু তাকিয়ে আছে সামনে। নাক মুখ কুচকে তার দিকে চেয়ে আছি। সায়র ভাই আর আমি? অসম্ভব! ঐ ছেলেকে দেখলেই আমার মস্তিষ্ক শুধু রেড এলার্ট দিয়ে সতর্ক থাকতে বলে। আর আমি ওকে মন দিবো?

আমিঃ ডাবলদের প্রতি ইন্টারেস্ট নাই। ওরা আগে থেকেই নিষিদ্ধ তালিকায় থাকে সিঙ্গেলদের জন্য। আর সায়র ভাইয়ের কথা? সবার আগে “নিষিদ্ধ সে”।

রনক ভাইয়া মৃদু হাসলো। আমি কালো হয়ে আসা আকাশে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে হঠাৎ মন খারাপের কারন খুজতে লাগলাম।

চলবে____________?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here