নিষিদ্ধ সে,(৫+৬)

0
869

নিষিদ্ধ সে,(৫+৬)
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
(৫)

ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় ছটফট করছি। ঘুম থেকে উঠলে ততক্ষণাৎ আমার ব্রেন কাজ করে না। তার মধ্যে শ্বাস নিতে পারছি না। কেউ দুইহাতে শক্ত করে আমার গলা চেপে ধরে আছে। মুখ থেকে শব্দ বের করতে পারছি না। কেমন ভোটকা গন্ধ এসে বারি খাচ্ছে নাকে। হাত দিয়ে পাশে বেঘোরে ঘুমানো সায়রিকে ইচ্ছে মতো বারি দিতে লাগলাম। এমনভাবে অন্ধকারে মানুষটা আমার গলা টিপে থাকলে আরো একটু পর আমি দমবন্ধ হয়ে মরবো। খামচি দিয়ে বলিষ্ঠ হাতদুটোতে ইচ্ছেমতো আচড় কাটছি। লোকটা কিছুটা ব্যাথাদায়ক শব্দে গলা ছেড়ে দিলো শেষে। ঘন ঘন দম নিয়ে উঠে বসলাম। কিছুক্ষন ধাতস্থ হয়ে বুঝলাম কে জানি ড্রিম লাইটের আলোটাও নিভিয়ে দিয়েছে। কানের কাছে কারোর মাদকতা মাখা ছাড়া ছাড়া কিছু শব্দ ভেসে এলো “সব তোর দোষ! সব! তোর জন্য আমার সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। আমিও পাল্টে যাচ্ছি। তুই এসেছিস পর থেকে আমার জীবনের ছন্দটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। আমি এখন আর নির্মার রাগ সহ্য করতে পারি না। তাকে মানাতে পারছি না। তুই এসেছিস পর থেকে নরক বানিয়ে দিয়েছিস আমার জীবনটা। আমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যে কাজগুলোয় মুগ্ধ হয়ে নির্মা আমার জীবনে এসেছে তোর জন্য এখন তা তার কাছে নাকি বিষের মতো।” ভয়ে ভয়ে বেড থেকে উঠে হাতড়ে হাতড়ে সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে ড্রিম লাইটের আলো জ্বালালাম। এতোক্ষন অন্ধকার চোখে সয়ে আসায় ড্রিম লাইটের আলোই কেমন দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল লাগছে। সায়র ভাইকে ঢুলুঢুলু হয়ে দাঁড়াতে দেখলাম আমার বেডের কাছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি পরে যায় সে। তার কিছু পাশে নিচে কিছু পরে আছে। এগিয়ে গেলাম তার কাছে। কাঁপা হাত তার কাধে রাখতে আমার দিকে ফিরলো।

সায়রঃ তুই শেষ করে দিচ্ছিস আমাকে নিষ্ঠা। [ঢুলতে ঢুলতে পরে যেতে গিয়েও বেড সাইডের টেবিলে হাত রেখে দাঁড়ালো] তোর জন্য নির্মা আমার জান আমায় ভুল বুঝছে।

এবার পরেই গেলো ব্যালেন্স না রাখতে পেরে। আমি সাথে সাথে গিয়ে উনাকে তুলতে চাইলাম হাত ঝারা মারলো।

সায়রঃ ডোন্ট টাচ! আমার ভার্জিনিটিতে হাত দিবি না বেশরম বেহায়া। কি মনে করেছিস আমি বুঝি না? এমনিতে তুই আমার ঠোঁটকে চেপ্টা বানিয়ে দিয়েছিস তোর ধামড়া ঠোঁটের চুমুতে। ইয়াক! [বুকের দুই পাশে দুই হাত ক্রস করে আগলে] স্টে এওয়ে ফ্রম মি। ইউ রেপিস্ট গার্ল!

আক্কেলগুড়ুম হয়ে চেয়ে আছি বলে কি! গাঞ্জা খেয়ে এসেছে নাকি? কেমন দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে মুখ থেকে। আসলেও খেয়েছে কিনা পরখ করতে আরো সামনে গেলাম।

সায়রঃ আয়ায়ায়ায়া বাঁচাও! সি উইল রেপ মি! সাম ওয়ান হ্যাল্প!

চিৎকার করতে গেলে মুখ চেপে ধরলাম। ব্যাপার কি সায়রি এখনো উঠে না কেন! সে তো একটা টু শব্দে জেগে যায়। সায়র ভাইয়ের মুখ চেপে ধরে বিছানার দিকে তাকালাম। আমি যেখানে সুয়ে ছিলাম তার পাশে বড়সড় কোল বালিশ রাখা। বৈইমান মেয়ে। সায়র ভাই মুখ চেপে ধরা অবস্থাতেই আরো কেমন কেমন করে চিল্লাচ্ছে। শব্দটা বিকৃত হয়ে মুখ থেকে বেরোচ্ছে। হাতে কামড় দেওয়ায় ছেড়ে দিলাম হাত। আবারো চেঁচাতে গেলে মুখ চেপে ধরলাম আবার। বেশ জোরে এবার কামড় দেওয়ায় রেগে মাথায় কয়েকটা গাট্টা মারলাম।

সায়রঃ প্লিজ ডোন্ট ডু দিস। আ’ম এ পিওর ভার্জিন হ্যান্ডসাম ওম্যান!

আমিঃ শালা, নিজের জেন্ডারই পাল্টিয়ে ফেলসে!

সায়রঃ ইটস ভেরি প্রাউড থিং ইউ নো! আমি ওম্যান! [হাত দুইপাশে মেলে] আ’ম ওম্যান! এন্ড ইউ রেপিস্ট গার্ল ডোন্ট ডেয়ার টু ডু এনিথিং টু মি! আদারওয়াইজ এক লাত্থি দিবো বেশরম।

হা হয়ে চেয়ে এর কাহিনী দেখছি। আমার গলা চেপে ধরে রাখার সময় মনে হলো নিজ তালে আছে অন্তত এখন পরে গিয়ে মাথায় বারি খেয়ে বোধহয় যতোটুকু তাল ছিলো সবটাই খেয়ে ফেলেছে।

সায়রঃ [আমার মুখের কাছে মুখ এনে] ক্যান আই টেল ইউ আ সিক্রেট? বাট ফার্স্টলি ইউ হেভ টু প্রমিজ মি, ইউ উইল কিপ ইট এজ সিক্রেট এজ আই কিপ ইট। উইল ইউ?

এর থামা থামা কণ্ঠে আর মুখের গন্ধে মুখ সরিয়ে দূরে যেতে গেলে মাথায় ধরে নিজের মুখের কাছে টেনে আনলো আমাকে।

আমিঃ ছাড়েন সায়র ভাই।

সায়রঃ উমহু, তুই শুনবি আমার কথা। চুপচাপ শুন।

আমিঃ আচ্ছা, মাথাটা ছাড়েন তাহলে।

সায়রঃ নোহ, তুই ভেগে যাবি নিশ্চিত। [সব দাঁত বের করে পিচ্চিদের মতো কাধ উচিয়ে হেসে] আমি যেমন রনকের থেকে পালিয়ে এই রুমে এসেছি। হাহাহাহা।

হালকা আলোয় উনার মুগ্ধকর হাসি দেখছি। সত্যি খুব সুন্দর উনি। আজ প্রথম এতো কাছ থেকে উনাকে হাসতে দেখলাম। হাসলে চোখ দুটো ছোট হয়ে আসে। কাছ থেকে উনাকে দেখে হৃদস্পন্দনও তুমুল গতিতে ছুটছে। মন রেড এলার্ট দিচ্ছে। গেলাম এবার গেলাম। পা পিছলে এর প্রেমে পরলাম। কিন্তু ব্রেন আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে মন চাইলেও আপোস করতে পারছে না বিবেক আর ব্রেনের তাড়নায়। কানে বাজছে একটাই কথা “নিষিদ্ধ সে!” “নিষিদ্ধ সে!” “নিষিদ্ধ সে!”

সায়রঃ কি হলো প্রমিজ কর।

আমিঃ আ আ আব, তাহলে বাংলায় বলুন। আমি ইংরেজিতে কাঁচা।

সায়রঃ মূর্খ! কি পড়ে মেডিকেলে উঠলি! [দাঁত বের করা হাসি হেসে] আমি তো তাহলে ইংলিশেই বলবো। তোকে গালি দিলেও বুঝবি না হাহাহা।

আমিঃ ঘাড় ব্যাথা করছে সায়র ভাই। বলুন আমি শুনছি আপনার মূল্যবান সিক্রেট।

সায়রঃ [ঘাড় চেপে আরো কাছে নিয়ে এসে আঙুল নাড়িয়ে] কারোর কাছে বলবি না গট ইট?

মুখের উপর পরা উনার গরম নিশ্বাস বারবার কাপাচ্ছে। উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন।

সায়রঃ তোর শীত লাগছে নিশু?

চোখ বড়বড় করে তাকালাম। ছোট্টবেলায় যখন মুড ভালো থাকতো উনার মুখে এই “নিশু” নামটা আমার জন্য প্রযোজ্য ছিলো। অবশ্য খুব কম শুনেছি উনার মুখ থেকে নামটা।

আমিঃ ঘা ঘাড় ছাড়েন।

সায়রঃ [পৈশাচিক হাসি দিতে দিতে] ভয় পাচ্ছিস রেপিস্ট?

আমিঃ [কাঁদোকাঁদো হয়ে] আমি কিন্তু শুনবো না আপনার সিক্রেট!

সায়রঃ নো নো নো, তোকে শুনতে হবে। আর এভাবেই।

আমিঃ তো ব বলেন।

সায়রঃ [ফিসফিসিয়ে] আমি না একজন ওম্যান! সো ইফ ইউ ওয়ান্ট টু রেপ মি দ্যান ফার্স্টলি ইউ হেভ টু বি আ ম্যান। [ঘাড় ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে] আমাকে রেপ করলে তুই সমকামী হয়ে যাবি। লজ্জা লাগবে না তোর?

মাদক বা গঞ্জিকা যাই খাক এই ছেলে প্রচুর ভালো এফেক্ট ফেলছে জিনিসটা বেশ বুঝতে পারছি। পাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা লাল ছোট আলো দেখে ফোন হাতে নিয়ে দেখি বেশ অনেকক্ষন হলো আমাদের কথাবার্তা রেকর্ড হয়েছে। পা মুড়ে বসে গেলাম ফোন হাতে। বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ হাসি দিচ্ছে এখন সায়র ভাই। আমি একদৃষ্টে ফোন হাতে তার দিকে চেয়ে আছি। সে আমার মুড়ে রাখা পায়ে হঠাৎ মাথা রেখে সুয়ে পরলো ফ্লোরেই হাত-পা ছড়িয়ে। কোলে সুয়ে আমার সামনে আসা চুলগুলো কানে গুজে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।

সায়রঃ তুই না ছোট থেকেও বেশ সুন্দরী হয়ে গেছিস। বিশেষ করে তোর [থুতনিতে এক আঙুল দিয়ে] এই থুতনির খাজ বড্ড আকর্ষণ করে। মনে হয় ঢিল ছুড়ে মেরে ভর্তা করে দেই একবারে। কেন এসেছিস তুই? ছোটবেলার________

গাল থেকে হাত পরে গেলো। উনি চোখ বুজে নিলেন। বিরবির করছেন চোখ বন্ধ করে। কান উনার মুখের কাছে নিয়ে গেলাম।

সায়রঃ তোকে আমি বাঁচাবো! ডাকাত আসছে? শক্ত করে ধর আমায়। আমি, আমি_____

উনি ঘুমিয়ে গেলে উনাকে দেখতে লাগলাম কাছ থেকে। মানুষের চোখ দুটো মনে হয় সৌন্দর্য নির্ধারণ করে। যার চোখ যতো সুন্দর সে ততো সৌন্দর্যের অধিকারী। বুদ্ধিদীপ্ত মায়াময় চোখ দুটোর জন্যই ছেলেটাকে বেশি সুন্দর লাগে। মনকে মানাতে না পেরে একটা নিষিদ্ধ কাজ করে ফেললাম। মানুষ হিসেবে বড্ড খারাপ আমি। মস্তিষ্ক মানুষটা নিষিদ্ধ বলে সিগনাল দিলেও আমি সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উনার সোজা চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে আলতো চুমু দিলাম। জানি না কেন করলাম কাজটা। খালি জানি এই মূহূর্তে আমার মন বারবার তাড়না দিচ্ছিলো নিষিদ্ধ কাজটা করতে। ঠোঁটটা হাসির রেখায় রেখে মানুষটা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আমার কোলে। রেকর্ডার অফ করে সময় দেখলাম। তিনটা বাজতে চললো। উনাকে রুম থেকে সরাতে হবে। রনক ভাইকে কল লাগালাম।

রনকঃ [ঘুম ঘুম কণ্ঠে] হ্যালো!

আমিঃ ভাইয়া, আমাদের রুমে এসে আপনার জানে জিগার দোস্তকে ভোরের আলো ফোটার আগে নিয়ে যান। নয়তো সকাল হলে মানুষজন আমাদের ভুল বুঝবে।

কি বুঝলেন কে জানে। কলটা কেটে দিলেন। বেশ কিছুক্ষন পর দরজা খোলার শব্দ পেলাম। রনক ভাই হালকা স্বরে আমার নাম ধরে ডাকছেন। আমি নিচ থেকে উনাকে ডাকলাম আস্তে।

রনকঃ [সায়র ভাইকে কাধে নিতে নিতে] ও উল্টা বাল্টা কিছু করেনি তো?

আমিঃ আমাকে গলা চেপে মারতো আরো একটু হলে।

রনক ভাইয়া হাসলো। সায়র ভাইকে নিয়ে যেতে লাগলো। আমি দরজার কাছ পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম। তাকিয়ে আছি যাওয়ার দিকে। মনটা এখন খচখচ করছে। আবেগের বসে নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলায়।

চলবে__________?

এ্যাগ্নেস_মার্টেল
“নিষিদ্ধ সে”

(৬)

খাবার টেবিলে বসে আঙ্কেল আর আমি বেশ খোশমেজাজে গল্প করছি। আঙ্কেল উনার যৌবনের শ্রেষ্ঠ অকাজগুলো বর্ণণা করছেন আমি ভালো শ্রোতার মতো তা শুনে হাসছি। আন্টি কিছুটা লজ্জিত হয়ে ধমকালেন আঙ্কেলকে। সায়রি ঘুমে ঢুলুঢুলু। বারবার ঝিমোচ্ছে। একটু পর পর আন্টির হাতের বারিতে চোখ খুলে “আম্মু” বলে আবারো ঝিমোচ্ছে।

আমিঃ আঙ্কেল সবই তো বললেন এটা তো বললেন না আন্টি আর আপনার এরেঞ্জ ম্যারেজ না লাভ ম্যারেজ?

আন্টিঃ খাওয়ার সময় এতো কথা কেন?

আমিঃ হিহিহি আঙ্কেল [আঙ্কেলের হাত নাড়তে নাড়তে] বলেন না!

আঙ্কেল আন্টির দিকে চেয়ে মুচকি হাসলেন। আন্টি বারবার রেগে না বলতে ধমকাচ্ছে। আমি আরো উৎসাহ দিচ্ছি আঙ্কেলকে বলার জন্য।

আঙ্কেলঃ বেশ শুনো তাহলে!

আন্টিঃ এই একদম বলবে না। তোমার কি লজ্জা লাগছে না? বাচ্চাদের সামনে নিজের জীবনী তুলে ধরতে? তবু ভালোগুলো হলে মানতাম।

আঙ্কেলঃ কি যে বলো! ওদের বয়স এখন দাবানলের মতো। পানসে গল্পে ওদের মন ভড়বে?

আন্টিঃ তবু তুমি___

আমিঃ [সব দাঁত বের করে]আন্টি আমি তো আপন মানুষই আপনাদের স্টোরি শুনলে আমাদের বন্ডিং আরো মজবুদ হবে। বুঝেন না__!

আঙ্কেল বেশ রসিয়ে গল্প বলতে লাগলেন। আন্টি আঙ্কেলকে থামাতে না পেরে রান্নাঘরে চলে গেছেন। কো-ইন্সিডেন্টের ব্যাপার হলো উনার আর উনার ছেলের কাজিন কাজিন প্রেম! দূর্ভাগ্য উনার সেই কাজিনকে উনি বিয়ে করেননি। করেছেন আমার ভোলা ভালা সহজ সরল আন্টিকে। সেই সময়ে প্রেম পিরীতির ঘোর নিষেধাজ্ঞা ছিলো পরিবারে তার মধ্যে কাজিন কাজিন প্রেম। আঙ্কেলের বাবা আর সেই মেয়েটার বাবা আপোসে না আসতে পেরে আঙ্কেলের প্রাক্তনকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেন। মজার ব্যাপার আঙ্কেল সেই মেয়েটার বিয়েতে নাকি ধুমসে নেচেছিলেন।

আমিঃ অবজেকশন অবজেকশন! আঙ্কেল আপনি তাহলে মেয়েটার সাথে খালি আলগা প্রেম করেছেন?

আঙ্কেলঃ [মুখটা ভাবুক বানিয়ে] আমারো মনে হয় প্রেম আমার আলগাই ছিলো। মেয়েটার বিয়েতে অনুষ্ঠান নাচ গান হবে শুনে আমার মন আরো পুলকিত হচ্ছিলো। ছ্যাকা খেয়ে বাকা হয়নি তখন হাহাহাহা।

আমিঃ [বেশ উৎসুক হয়ে] বাই এনি চান্স যদি আপনার ছেলে বা মেয়ে “কাজিন প্রেম” রোগে আক্রান্ত হয় আপনি কি ভেকসিন হিসেবে ওদের “বিয়ে” দিবেন?

আঙ্কেলঃ ভাবনার বিষয়! এই প্রশ্ন কেন?

আমিঃ এই প্রশ্ন অবশ্যই আসে। কারন আপনি একজন অভিজ্ঞ বাবা যিনি “কাজিন প্রেম” রোগে আক্রান্ত হয়ে ভেকসিন পাননি। আপনার এই ভেকসিনের গুরুত্ব বোঝার ক্ষেত্রে একটা অভিজ্ঞতা থাকবে। কারন আপনি পাননি। সুতরাং পরিশেষে বলতে পারি ইহার গুরুত্ব আপনার কাছে অপরিসীম!

আঙ্কেলঃ হাহাহাহাহা, উম এক্ষেত্রে কিন্তু আমি খুব কাঁচা হবো আরো।

আমিঃ কেন?

আঙ্কেলঃ কারন আমার ঠিকমতো “কাজিন প্রেম” রোগ হয়নি। হলে তো আমি দেবদাস হয়ে অ্যালকোহল গিলে পরে থাকতাম। তবে আমার ছেলে যদি এই রোগে আক্রান্ত হয় আমি তার সঠিক অনুভূতি আর মেয়েটা কেমন তা দেখে মেনে নিবো।

আমিঃ [পাশে দুইহাত মুড়ে তাতে মাথা রেখে ঘুমানো সায়রির পিঠে হাত মুঠো করে বারি দিতে লাগলাম] জিয়ো আঙ্কেল! জিয়ো! আপনার মতো বাবা ঘরে ঘরে জন্মাক।

আঙ্কেল আমি এই সেই কথা বলে জোরে জোরে রুম কাপিয়ে হাসছি সায়রি বিরক্ত হয়ে পাশে বসে। আমার মার খেয়ে তন্দ্রা মহাশয় বোধহয় পালিয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর রনক ভাইয়া মৃদু হেসে আঙ্কেলকে সকালের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামনের চেয়ারে বসলো। আঙ্কেল উঠে গেলেন খাওয়া শেষে। কালকে নাকি সায়রির দুই চাচা আসবে। পরশু সায়রির সব কাজিন আসবে। তার পরেরদিন থেকে মানুষ আসা শুরু করবে বিয়েতে সাথে আমার আব্বু-আম্মু, ভাইয়াও আসবে। কাজের চাপ বাড়বে। রম-রমা হবে বিয়ে বাড়ি। এখন তো ইয়াং জেনারেশন নেই বাড়িতে আমরা বাদে। শুক্রবার ছিলো কি কাজে জানি চলে গেছে। অনেকক্ষন ধরে মনে হচ্ছে কেউ দেখছে আমায়। চারপাশে তাকাচ্ছি সেই কেউটাকে খোজার জন্য! কিন্তু পাচ্ছি না।

আমিঃ আচ্ছা ভাইয়া হ্যান্ডসাম ওম্যান কই গো?

রনক ভাই কিছুটা ভ্রু কুচকে চেয়ে রইলেন। সায়রির দিকে চাইলেন বোঝার জন্য। আমি চারপাশে তাকাচ্ছি সায়র ভাইকে দেখার আশায়।

সায়রিঃ মাথা নষ্ট হয়েছে তোর? হ্যান্ডসাম কখনো ওম্যান হয়?

আমি মুখভর্তি হাসি নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পরলাম। সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে দেখি সায়র ভাই নামছে। পথ আগলে দাঁড়ালাম। সামনে দাঁড়াতে দেখে পাশ কেটে যেতে চাইলেন। ঐপাশেও সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আরেকবার পাশ কেটে যেতে চাইলে সামনে যেয়ে আবারো বাধা দিলাম। না পেরে বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন।

সায়রঃ কি সমস্যা রাস্তা ছাড়।

আমিঃ [কোমড়ে হাত দিয়ে] কি সমস্যা? রাস্তা ছাড়।

সায়রঃ সর সকাল সকাল ঝগড়া করার মুড নেই।

আমিঃ [মুখ গম্ভীর করে] আমার একটা ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে আপনার সাথে।

সায়র ভাই আমাকে পাশে ঠেলে ভ্রু কুচকে নামতে লাগলো লাফিয়ে কয়েক সিড়ি টপকে সামনে দাঁড়ালাম।

সায়রঃ সকাল সকাল ঢং করবি না সর!

আমিঃ বলছি তো ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে।

সায়রঃ [ভ্রু কুচকে] কি এমন ইম্পোর্টেন্ট কথা যে ঐটা বলতে বারবার ইম্পোর্টেন্ট ইম্পোর্টেন্ট বলছিস।

আমিঃ [ক্লোজআপ হাসি হেসে] বেশি কিছু না আপনি আগে খেয়ে নিন পরে বলছি নয়তো খাওয়া পেটে যাবে না।

সায়রঃ তো সর সামনে থেকে! [দাঁত বের করে সরে গেলাম] সরতেই হবে জানে তবু ঢং দেখাবে!

সায়র ভাই চেয়ারে গিয়ে বসলে তার মুখোমুখি রনক ভাইয়ার পাশে বসে গেলাম। সে খাচ্ছে আমি গালে হাত রেখে তা দেখছি। বিরক্ত হয়ে কয়েকবার চোখ রাঙিয়েছে। যতোবারই আমায় চোখ রাঙাচ্ছে ততোবারই আমি আরো সব দাঁত বের করে হাসি দিচ্ছি।

সায়রঃ [খাওয়া ছেড়ে] কি সমস্যা তোর? চেয়ে আছিস কেন?

আমিঃ [হাসি চেপে] আপনি প্রচুর সুন্দর! কি হ্যান্ডসাম! কি হট! আউইইইইইই!

সায়রঃ রনক ওকে নিয়ে যা তো!

রনক ভাইয়া একবার আমার দিকে চেয়ে ফোন টিপায় মন দিলেন। সায়র ভাই বিরক্ত হয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠতে লাগলেন।

আমিঃ বাহঃ বাহঃ ডাইটিং করা শুরু করেছেন? বেশ ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুকনো হলে আপনাকে গরম ঠান্ডা কম্বিনেশনে আরো সুন্দর লাগবে।

সায়র ভাই বসে গেলো ধুপ করে চেয়ারটায়। হাসতে হাসতে এর খাওয়া দেখতে লাগলাম।

আমিঃ [রনক ভাইয়াকে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে] দেখেন দেখেন ভাইয়া কি সুন্দর করে খাচ্ছে মিস ইউনিভার্স হওয়ার জন্য যথেষ্ট পুরো। আলতো করে খাবার তুলে গপগপ করে খাচ্ছে। বহুদিন ধরে না খেতে পেরে যেমন ক্ষুধার্তরা খায় না? ঠিক ঐরকম।

সায়র ভাই না পেরে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন প্লেট হাতে। চেয়ার হালকা ঘুরিয়ে আমার দিকে উল্টো মুড়ে বসে খেতে লাগলেন। এবার হাসতে লাগলাম মুখে হাত চেপে।

আমিঃ ব্যাকসাইড দেখেছেন ভাইয়া? পুরো কালো রঙের। কুয়ালিটি আছে টি-শার্টের। ঐ যে দেখেন কালোর মধ্যে কি কিছু দেখতে পারছেন?

রনক ভাই হালকা হেসে ফোন টিপছে। আবারো কনুইয়ের গুতো দিলাম যাতে উত্তর দেয়। অলস ছোকরা মাথা নাড়লো শুধু। আমার কি তাতে? আমি তো নিজের সাপোর্টিং উত্তর পেয়ে গেছি।

আমিঃ এই তো ঐ টি-শার্টের মধ্যে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না তাই না? [মাথা নেড়ে] দেখবেন কিভাবে এটা ভালো ব্রান্ডের টি-শার্ট। আপনার মতো সদরঘাট থেকে কেনা “একদাম পঞ্চাশ ” টি-শার্ট পেয়েছেন নাকি!

রনকঃ একদাম পঞ্চাশে শুধু জাঙ্গিয়া পাওয়া যায়। তোমার মতে কি এখন আমি টি-শার্ট এর বদলে গায়ে বড় জাঙ্গিয়া পরে আছি?

খেতে খেতে কাশি উঠে গেলো সায়র ভাইয়ের। আমি পানি এগিয়ে দিয়ে শব্দ করে হাসছি। রনক ভাইয়া তার সীমিত হাসি দিচ্ছেন। সায়রি এক ভ্রু উচিয়ে আমাকে টিভি দেখা বাদ দিয়ে পরখ করছে।

সায়রঃ আমাকে কি খেতে দিবি না তোরা? কি শুরু করেছিস?

আমি হাসতে হাসতে রনক ভাইয়া আছে মনে করে তার কাধে মেরে হাসবো ভাবছিলাম। কিন্তু ভাইয়া কখন উঠে গেছে বুঝতে পারিনি। মারতে গিয়ে কাঠের চেয়ারে মাথা ঠুকে গেলো। হাসি নিমিষে বন্ধ হয়ে গেছে। সায়র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। সে কিছুক্ষন আমার দিকে চেয়ে রইলো। যখন কাহিনী বুঝলো এবার সে নিজে হাসতে লাগলো।

সায়রঃ অতিরিক্ত করলে এমনি হয়! আয় আরো টিজ করতে আয় আমায়।

সায়র ভাই খাওয়া শেষে উঠলে আমিও উঠলাম। সে যেখানে যাচ্ছে যা দেখছে আমিও পিছু পিছু ঘুরে সেগুলো চোখ বড়বড় করে দেখছি। যেনো জীবনে এই প্রথম দেখলাম সেগুলো। উনার পিছনে যেতে যেতে উনি হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় মাথায় তখনের বারি খাওয়া যায়গায় উনার পিঠের সাথে বারি খেলাম।

সায়রঃ [ভ্রু কুচকে] কাজ নাই কোন? সারাক্ষন পিছে পিছে ঘুরছিস যে!

আমি ডানে বায়ে মাথা নাড়তে লাগলাম ছন্দ মেনে। পিচ্চিরা গান গাওয়ার সময় যেমন হেলেদুলে গান গায় সেভাবে হেলছি।

সায়রঃ তুই আমার সাথে এখন মল ত্যাগ করতে শৌচালয়েও ঢুকতে চাইছিস?

কথাটা ঠিকমতো না শুনে আগের মতো মাথা নাড়ছি। উনি এবার আমাকে টানতে লাগলেন। দেখি উনি বাথরুমে টেনে ঢুকাচ্ছেন। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। ষাড়ের মতো শক্তির সাথে আমার মতো এক বালিকার শক্তিতে কি একে থামানো সম্ভব?

আমিঃ [বাথরুমের দরজার বাইরে ধরে] ঐ বাথরুমে ঢোকান কেন আমায়?

সায়রঃ [আমার একহাত টানতে টানতে] আজকে তোকে নিয়েই একসাথে মলমূত্র ত্যাগ করবো।

চলবে__________?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here