নিষিদ্ধ_সে,১১,১২
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
(১১)
সায়রিকে স্টেজে নিয়ে যাচ্ছি আর ফিসফিসিয়ে কথা বলছি। সায়রি হাসছে মৃদু মৃদু। আমিও হেসে সায়রিকে নিয়ে যাচ্ছি। স্টেজে নিয়ে বসিয়ে নেমে এলাম। এককোনে দাঁড়িয়ে আছি। আস্তে আস্তে অনুষ্ঠান শুরু হলো। হঠাৎ কাধে কেউ ধাক্কা দিলো। দেখি রনক ভাই দাঁড়িয়ে।
রনকঃ তুমি যাচ্ছো না যে?
হালকা হেসে, “পরে যাবো একেবারে। সবাই দিয়ে নিক।”
রনকঃ [স্টেজে তাকিয়ে] গতকাল মুখ চুপসে ছিলো। নির্মার সাথেও কথা বলেনি। এমনকি আমার প্রতিও বিরক্ত ছিলো। হুটহাট রেগে পায়চারি করছিলো তো শান্ত হয়ে একবার বসে কি কি বিরবির করছিলো মাথা চেপে ধরে। ফোনে তোমার নাম্বার ডায়াল করে বারবার মুছে ফেলছিলো।
ভ্রু কুচকে, “কে এমন পাগলামি করেছে? হিহিহি শুনে তো আমার পুরানা জামানার প্রেমিক লাগছে!”
রনক ভাইয়া স্টেজে ইশারা করলো। নির্মা আপু আর সায়র ভাইয়া একসাথে হলুদ লাগাচ্ছে সায়রিকে হেসে হেসে। তিনজনের মুখে হাসিরা টইটম্বুর পুরো।
বিস্মিত হয়ে, “সায়র ভাই?”
মাথা নাড়লো রনক ভাইয়া। অবাকচোখে তার দিকে চেয়ে আবারো সায়র ভাইয়ের দিকে তাকালাম, “কিন্তু কেন?”
রনকঃ তোমার মেসেজটা আসলে ফোন সায়রের হাতে থাকার সময় এসেছিলো।
কিছুক্ষন ভেবেও কূলকিনারা না পেয়ে আবারো তাকালাম রনক ভাইয়ার দিকে। তিনি আমার দিকে শান্তভঙ্গিমায় তাকিয়ে। মুখ হা হয়ে এসেছে।
“আমার বিয়ে তো উনার এতো কিসের মাথাব্যাথা?”
উনি কাধ উচিয়ে মৃদু হেসে পকেটে হাত রেখে সামনে এগিয়ে গেলেন। একবার পিছন ফিরে আমাকেও আসতে বললেন। কিছু না বোঝা আমি স্টেজের দিকে তাকালাম আবার! সায়র ভাই বোনের সাথে হাসছে খুব। হাত টিস্যু দিয়ে মুছে উঠে আসছে। এখনো স্তব্দ হয়ে চেয়ে আছি হিসাব মিলাতে না পেরে! কখন উনি সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন কে জানে! তুড়ির শব্দে চমকে তাকালাম।
সায়রঃ [ভ্রু কুচকে] কি এতো ভাবিস? হলুদ মাখাবি না?
কিছুক্ষন সায়র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে স্টেজের দিকে এগোতে লাগলাম। সায়রিকে হলুদ লাগালে আমাকে চেপে ধরে গালে লাগিয়ে দিলো। আমিও মুঠোভর্তি হলুদ নিয়ে ওর সারামুখে একদম লেপ্টে দিলাম। হেসে স্টেজ থেকে নেমে এলাম। সারা সময় শুধু রনক ভাইয়ার কথাগুলো ঘুর ঘুর করেছে মাথায়। বিষয়টা নিষিদ্ধ জেনেও হৃদকোনে সূক্ষ্ম সুখ সুখ অনুভুতি হচ্ছে। নির্মা আপুর সাথে অজান্তে নিজের তুলনা করছি বারবার। আবার মনের এককোনে এলার্মিং দিচ্ছে সে “নির্মা” আপুর মতো ভীষণ ভালো একটা আপুর বয়ফ্রেন্ড তার দিকে কেন নজর দিচ্ছিস? তালগোল পাকিয়ে একবার খেই থাকে তো নিজের চোখ সংযত রেখে স্ট্রেট হয়ে বসে থাকি। কিছুক্ষন পর খেই হারিয়ে যাচ্ছে আর
মনে বারবার নিষিদ্ধ চাওয়া পোষণ করছি। ভুল হলে হোক। সময়ের জোয়ারে ভেসে ঠিক সময়ে পৌছিয়ে তখন না হয় পস্তাবো। সায়র ভাইয়ের দিকে আবারো তাকাতে গিয়ে দেখি সে সামনে নেই। উকিঝুকি দিয়ে খুজছি নির্মা আপু হঠাৎ ভুতের মতো কানের কাছে এসে “কাকে খুজছো?” জিজ্ঞেসা করলো। আত্মা পুরো লাফিয়ে উঠলো। সাথে আমি চেয়ার ছেড়ে ভিতু চোখমুখ নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আপু কিছুক্ষন আমার দিকে চেয়ে হাসতে লাগলেন।
নির্মাঃ ভয় পেয়েছো? সত্যিই দেখি কাউকে খুজছিলে!
আমি অপ্রস্তুত হাসি হাসতে লাগলাম। নির্মা আপু আমার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে সামনে হাটা দিলেন। দুজনে এখানে সেখানে হাত ধরে ঘুরছি দুই বান্ধবীর মতো। বলতে গেলে আপুই আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এদিক ওদিক। রিধিতা আপুকে সঙ্গি করে এনে দেখি তাকে একাই পাওয়া যায় না। সায়রির কোন কাজিন জানি রিধিতা আপুর ক্লোজফ্রেন্ড। বুঝেছি নির্মা আপু না থাকলে আমার এতিম হয়ে ঘুরতে হতো! আপু হাত ধরে ইচ্ছেমতো কথা বলছে আর আমি তার দিকে চেয়ে আছি। সত্যিই মারাত্মক ভুল করছি। একটু একটু করে পছন্দের যাত্রায় সায়র ভাইয়ের দিকে অগ্রসর হতে হতে। আপুর কথা অন্তত ভাবা উচিত আমার।
নির্মাঃ এমন করে কি দেখো?
মৃদু হেসে, “আজ অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় আপু!”
আপু লাজুক হাসি হেসে আমায় নিয়ে ছাদে যেতে লাগলো।
“আজকে কি থেকে যাবে এখানে?”
“আমার আম্মু মহাশয়া বেশ একরোখা হয়ে আছেন। তিনি আমাকে এখানে মোটেও রাখবেন না। কালকে এসে যাবো ঠিক সময়ে!”
“থেকে যাও আজকে। আমাদের বাসায় থেকো। বেড শেয়ার করে সারারাত গল্প করবো। সেলফি তুলবো। তুমি তো বেশ সেলফি পাগল!”
হাসতে হাসতে, “আম্মুকে মানানো দায়। তার মধ্যে বিয়েতে পরার শাড়ি তো আমি নিয়ে আসিনি। এতো কষ্ট করে বান্ধবীর বিয়ের জন্য কিনলাম সাইফ ভাইয়াকে খিড়িয়ে ঐটা পরবো না!”
“তোমার ভাইয়াকে দিয়ে আনিয়ে নিয়ো!”
“তোমার চাচি আজকে আম্মুর সামনে রনক ভাইয়াকে যদি কথা না শুনাতো আমাকে রেখে যাবার চান্স ছিলো আম্মুর। এখন তাও নেই!”
দাঁড়িয়ে যেয়ে, “রুবি চাচি কথা শুনিয়েছে রনককে?”
“হ্যা!”
আপুর গাল লাল হয়ে এসেছে। রাগে ফোস ফোস করছে। আপুর রাগান্বিত চোখ মুখের দিকে চেয়ে আছি।
“বাদ দাও, কাহিনি খতম হয়ে গেছে আগেই। এখন তোলপাড় করোনা চলো আমরা বরং ছাদে যাই!”
আপু আমার দিকে চেয়ে কিছুক্ষন দম নিতে লাগলেন। লাল আভায় গাল দুটো ছেয়ে গেছে।
“এর জন্যই আমার রুবি চাচিকে ভালো লাগে না। রনককেও ছাড় দিলো না। বলি সে কি তোর বাপের কোন ক্ষতি করেছে? সায়র ছিলো না তখন সেখানে?”
“সায়র ভাই কি জানি করছিলো।”
ছাদেও কোলাহলের শেষ নেই। বিশেষ করে এক সাইডে সায়র ভাইয়ার ছেলে কাজিনগুলো আর সায়র ভাইয়ারা দাঁড়িয়ে বেশ জোরে জোরে কথা বলছে নির্মা আপুর হাত টেনে উল্টো পথে ফিরতে চাইলাম। আপু খোশমেজাজে আমাকে আশ্বাস দিয়ে আরো সেখানটায় নিয়ে গেলো। আমাদের দেখে ভাইয়ারা উৎসুক হয়ে তাকালো। রনক ভাই আমাকে দেখে সায়র ভাইয়ের দিকে তাকালেন।
“নির্মা ও কে রে?”
ওদের প্রশ্নে নির্মা আপু হেসে কিছু বলার আগে সায়র ভাই উঠে এসে আমার হাত ধরে ছাদের দরজার দিকে টেনে আনতে লাগলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছি প্রত্যেকে। শাড়ির কুচিতে বেজে পরে যাবার যোগার উনি পারলে ছ্যাচড়িয়ে নিয়ে যায় আমাকে।
“সায়র ভাই ছাড়েন হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো এভাবে!”
চোখ লাল করে আমার দিকে তাকালেন। আমি রেগে উনার থেকে হাত ছাড়াতে চাইছি। উনি একটু থেমে আবারো টেনে নিয়ে সিড়ির কাছে এলে বেশ জোরেই বলে ফেললাম, “আরে ভাই শাড়ি খুলে যাবে আমার!” উনি সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলেন। সিড়ি হওয়ায় কথাটা হালকা জোরে বললেও প্রতিধ্বনিত হলো বেশ জোরে। উনি কটমট করে আমার দিকে চেয়ে।
“কোথায় কি বলতে হয় জানিস না?”
হাত ডলতে ডলতে, “আমার দোষ কই? আমি তো আপনাকে সুন্দর করে আস্তে আস্তেই বলছিলাম হাত ছাড়েন! আপনি আরো গরুর মতো টেনে আনছিলেন আমাকে! জীবনে প্রথম শাড়ি পরেছি। হঠাৎ খুলে হা হয়ে গেলে দায়ভার আপনি নিতেন?”
অন্যদিক তাকাতে তাকাতে, “মুখে একটু লাগাম লাগিয়ে বল কিছু। তোর কথাগুলো কিন্তু নিচ অবদি শোনা যাচ্ছে!”
“তো?”
দাঁত খিচে আমার পাশে একটু সরে, “আমার মা ঠিক নিচের সিড়িতে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুকি মারছে! তোর কি সেল্ফরেস্পেক্ট নাই?”
ভয়ে ভয়ে উনাকে সরিয়ে সিড়ির রেলিঙে ভর দিয়ে নিচে তাকালাম। সরাসরি আন্টির মুখখানা পরলো সামনে। লাফিয়ে সরে এলাম জায়গা থেকে। কান গরম হয়ে এসেছে। লজ্জায় কি করবো বুঝছি না। সায়র ভাইয়ের দিকে তাকাতে বাড়ির বাইরে জ্বলতে থাকা ঝারবাতির আলোতে তাকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতে পেলাম। দম বন্ধ হয়ে আসবে এমন শীতল শিহরণ বয়ে গেলো ভেতর দিয়ে। কিছু না বলে উপরে উঠতে গেলে উনি আমার হাত আবার চেপে ধরলেন।
“কই যাচ্ছিস?”
“কেন ছাদে! নির্মা আপু সেখানে আছে আপুকে রেখেই যাবো?”
“মানুষকে কোমড় দেখানোর শখ খুব তাই না? চটকানি মেরে একদম ঘুরিয়ে দিবো! শাড়ি পরতে পারিস না পরেছিস কেন শুধু শুধু!”
লাফিয়ে সরতে গিয়ে সিড়ির ধাপে পা পিছলে পরে যেতে নিলাম। উনি কোমড়ে হাত রেখে ধরে ফেললেন। হাত ঝারি মারলাম তৎক্ষনাৎ। সোজা করে দাঁড়িয়ে রেগে চেয়ে আছি।
“ছিঃ আপনি এতো লুচু কেন?”
“যাহ, তোকে______”
গাল ফুলিয়ে, “আমার জানামতে আমার শাড়ি এদিক ওদিক হয়নি। আম্মু বেশ ভালো করে পিন লাগিয়ে দিয়েছে।”
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে, “নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ তাহলে!”
নিজের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। উনি হাসতে হাসতে নিচে নেমে গেলেন। শাড়ি ঠিক মতো আটকে গাল ফুলিয়ে রিধিতা আপুর পাশটায় দাঁড়িয়ে আছি। আপু বারবার আমাকে গাল ফোলানোর কারন জিজ্ঞেসা করছে। মাথা নাড়ছি শুধু। সায়র ভাই সামনে দাঁড়িয়ে সেই তখন থেকে গা জ্বালানো হাসি হাসছেন। বারবার রেগে তাকাচ্ছি। উনি আরো হেলেদুলে হাসছেন।
চলবে_________❤
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
#নিষিদ্ধ_সে
(১২)
মধ্যরাত্রি চোখ দুটো মেলে বাসার সিলিং এর দিকে চেয়ে আছি। রিধিতা আপু পাশে নেই। হয়তো ভাইয়ার সাথে প্রেমালাপনে ব্যস্ত। সায়র ভাইকে নিয়ে মগজের এক একটা নিউরন যুদ্ধ বাজিয়ে দিয়েছে মনে হয়। একচিন্তা থেকে আরেক চিন্তায় পদার্পণ করছি তবু চিন্তার রেশ কাটছে না। সারাদিনের সায়র ভাইয়ের সাথে করা খুনসুটি ঝগড়াগুলো চোখের পাতায় ভাসছে। কিছুক্ষন পরই আবার নির্মা আপুর চেহেরা ভেসে উঠে অপরাধবোধ জাগ্রত করছে মনে। এতোদিনে এটা দেখেছি আপু সায়র ভাইয়ের প্রতি বেশ পজেসিভ থাকলেও ইগনোর করে বেশি। সম্পর্কটা ওদের কেমন নদীতে ভাসমান ভেলার মতো। ভেলার কাঠামো ঠিক রেখে তৈরি করলে ভাসবে নয়তো ডুবে যাবে একসময়। নির্মা আপু রিলেশনে হিট দিচ্ছে না। আরেকদিকে মনে হচ্ছে সায়র ভাইও হাল ছেড়ে দিচ্ছে। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু আর শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য আমি এখন ওদের বিচ্ছেদ চাইছি। খারাপ আমি বড্ড! যে আপু আমার প্রতি এতো ভালো ব্যবহার করে তারই বিচ্ছেদ চাইছি। স্মৃতির পাতা বন্ধ করার প্রচেষ্টায় আস্তে আস্তে ঘুমে তলিয়ে যেতে লাগলাম। আলোর ঝলকানি তীব্র হয়ে চোখে পরায় চোখ মেলে তাকালাম। আম্মু রুমের পর্দা টেনে দিচ্ছে। উঠে বসলাম চোখে হাত দিয়ে।
“আম্মু আজকে সকাল সকাল এতো কড়া রোদ উঠেছে যে বাইরে?”
“কয়টা বাজে দেখে নে!”
অলসহাতে বালিশের পাশে হাতড়ালাম। ফোন হাতে এসে বারি খেতে তাকিয়ে দেখি বারোটা বাজে! আম্মুর দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালাম। আম্মু স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আমার দিকে চেয়ে বিছানা থেকে উঠতে বলে চাদর ঝেরে ঠিক করতে লাগলো। এখন ঘটে এলো আজকে সায়রির বিয়ে আর মা কেন আমাকে আগে আগে ডাকেনি।
“আম্মু আগে আগে ডাকোনি কেন? আজকে না সায়রির বিয়ে!”
আম্মু স্বাভাবিক চেহারায় আমার দিকে তাকালো, “কারন ঘুম থেকে উঠেই তুই বিয়ে বাড়িতে দৌড় দিবি। সায়রির চাচির কথাগুলো কালকে শুনিসনি? বেয়াদবের মতো তো কিছু কথা শুনিয়ে দিলি! আজকে গেলে তোর হাড় ভেঙে দেওয়া কথা শুনাবে!”
মুখটা বিকৃত করে তাকালাম, “এর ভয়ে তুমি আমাকে ডাকোনি? আমার রেডি হতে হবে। বিয়ে বাড়িতে কি কি করবো প্ল্যানিং করতে হবে। সায়রিকে সাপোর্ট দিতে হবে। এটা ভুলে গেলে?”
আম্মু বিছানা ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ অসন্তুষ্টি চেহেরায় খেলা করছে, “বিয়ে রাতের বেলা। এতো তাড়াতাড়ি যাবি তুই?”
“সায়রির পাশে থাকবো না? বেস্টফ্রেন্ড আমি সবসময়।”
আম্মু আমার কথাগুলো মাঝপথে থামিয়ে দিলো, “ফ্রেন্ডশিপের নীতি শুনাতে হবে না।” রুম থেকে যেতে যেতে, “ওনাদের শক্ত খোটা শুনতে চাইলে রেডি হয়ে চলে যা।”
ফ্রেশ হয়ে সোফার রুমে বসে আছি। আম্মুর শক্তচোখ মুখের ভয়ে বিয়ে বাড়িতে যাবার নাম তুলতে পারছি না। ভাইয়া দিব্যি চলে গেছে রিধিতা আপুকে নিয়ে। আমিই সে অভাগা যে কিনা বিয়ে বাড়িতে যেতে ভয় পাচ্ছি।
“বসে আছিস কেন তুই না বিয়ে বাড়িতে যাবি!”
রিমোট দিয়ে চ্যানেল বদলাতে বদলাতে, “যাবো তো। টিভি দেখে নেই আগে!”
খালা রান্নার কাজ ছেড়ে হাত মুছতে মুছতে সোফার রুমে এসে গেলো। আমায় বাসায় অলস ভঙ্গিতে রিমোট হাতে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো, “নিষ্ঠা, তোর না বান্ধবীর বিয়ে। এখানে এমন করে বসে আছিস যে? রিহাম তো চলে গেলো আরো সকাল সকাল!”
গাল ফুলিয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। তিনি একধ্যানে রান্নার জন্য আদা বেটে দিচ্ছে।
“পরে যাবো খালা। আম্মু।”
আমার কথাটুকু থামিয়ে দিয়ে আম্মু গর্জে উঠলো, “খবরদার, আমার নাম নিয়ে মিথ্যে বলবি না।” রেগে ভ্রু কুচকে, “আমি তোকে আটকে রেখেছি?”
“ওহ আপা, বাচ্চা মানুষ। বান্ধবীর বিয়েতে মজা করবে ইচ্ছে মতো আর তুমি ওকে আটকে রেখেছো।” আমার দিকে ফিরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, “যাও মা, তুমি রেডি হয়ে চলে যাও বিয়েতে।”
“হ্যা, হ্যা লায় দিয়ে যেতে দাও! ঐখানে গিয়ে যখন শক্ত খোটা শুনে কাঁদতে কাঁদতে আসবে তখন আবার কিছু বলো না!”
খালা আম্মুর দিকে তাকিয়ে কিছুটা গর্বিত ভঙ্গিমায় বলতে লাগলেন, “আপা, ও তোমার মেয়ে। মনে নেই তুমি সামান্তা আপার বিয়েতে তার ভাবিকে কি জবাবটাই না দিয়েছিলে?”
উৎসুকচোখে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু খালাকে মৃদুস্বরে ধমক দিলেন। খালা হাসতে লাগলো।
“আমি কি যাবো তাহলে?”
আম্মু আমার দিকে একবার চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। খালা মৃদু হেসে আমাকে যেতে বললেন। ড্রেস চেঞ্জ করে চুলগুলো নিচু খোপা করে রুম থেকে বেরিয়েছি। আম্মু চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন, “সাজলি না?”
“এখন সেজে কি করবো? বিয়ে তো রাতে তখন সাজবো!”
“বিয়ে বাড়িতে তাই এমন করে যাবি? কেউ তাকাবে তোর দিকে?”
খালা রান্নাঘর থেকেই আম্মুকে জবাব দিলো, “আপা তোমার মেয়ে ন্যাচারাল বিউটি। না সাজলেও ছেলেরা ঘুরে ঘুরে তাকাবে!” কথা শেষে রান্নাঘর থেকে চোখ টিপ দিলো আমাকে।
“যা ডায়লগ দিলা খালা!”
আম্মুকে একহাতে জড়িয়ে গালে চুমু দিয়ে দাঁত ভেটকানি দিয়ে বেরিয়ে পরলাম। আম্মু উপর থেকে সিড়ির রেলিঙ ধরে চেঁচিয়ে উঠলেন,”কেউ খোটা শোনালে আবার কেঁদে দিস না যেনো!”
বিয়ে বাড়িতে ঢুকে দেখি কিছু পিচ্চি নতুন জামা পরে ছোটাছুটি করছে। বড়রা রান্নার কাজ করছে। সায়র ভাই হ্যাল্প করছেন আঙ্কেলকে। চেয়ার রেখে কপালের ঘাম একহাতে মুছে ঝেরে ফেললেন। অতিথিদের ভিড় জমে গেছে বাসাটায়। গুটিগুটি পায়ে বাড়ির অবস্থা পরখ করতে করতে এগুচ্ছি দেখি রনক ভাইয়াও কাজে লেগে গেছেন। আমাকে দেখে হাসলেন। উনার কাছে এগিয়ে গেলাম।
রনক ভাইয়া নিজের কাজ ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, “এতো দেরিতে এলে যে?”
“আম্মু ঘুম থেকে ডেকে তুলেনি সকাল সকাল।”
“তুমি তো সাজোনি দেখছি। আজকের দিনেও না সাজলে চলে?”
“আরে ভাইয়া, রাতে সাজবো। বরপক্ষের মাথা একদম ঘুরিয়ে দিতে হবে না?”
উনি হেসে আবারো কাজে লেগে গেলেন। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে গামছা খুজতে লাগলাম। আমাকে চারপাশে তাকাতে দেখে কাজ করতে করতে প্রশ্ন ছুড়লেন, “কি খুজো?”
“দাঁড়াও আসছি।”
আন্টির কাছে গিয়ে গামছা চাইলাম। আন্টি প্রশ্ন না জিজ্ঞেসা করে রুমের দিক নির্দেশনা দিয়ে দিলেন। সেখানে গেলে নাকি ইনটেক গামছা পাবো। আমিও কোন বারতি কথা না বলে গামছার লোকেশন অনুসারে গিয়ে গামছা হাতে সুরসুর করে বেরিয়ে এলাম। গামছা হাতে রনক ভাইয়ার কাজের জায়গার কিছুটা আগে দাঁড়ালাম।
“ভাইয়া কাজ থামিয়ে এদিকটায় আসেন তো!”
সপ্রশ্ন চোখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন। হাত নেড়ে তাকে আবারো কাছে আসতে ডাকলাম। উনি এগিয়ে এলেন।
“এক হাটু ভাজ করে নিচু হোন!”
উনি কিছু না বলে নিচু হলেন। গামছা ভাজ করে উনার মাথায় পেচিয়ে গিট্টু দিলাম কয়েকটা। উনি অবাকচোখে আমার কাজগুলো দেখছেন।
“এখন দুইহাটুই ভাজ করে বসেন তো।”
কথানুসারে উনি দুইহাটু ভাজ করে বসলে ফোন বের করে সেলফি তুলতে লাগলাম। ব্যাপারটা যখন বুঝলেন তখন তিনি হাসতে লাগলেন সেই শব্দহীন টোলপরা হাসি। হঠাৎ সায়র ভাই এসে রনক ভাইয়ার মাথার গামছা খুলতে লাগলেন।
বাধা দিতে লাগলাম হাতে ছাড়াতে চেয়ে, “আরে আরে খুলছেন কেন?”
সায়র ভাই গিট খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকিয়ে একহাতে বাতাস করার মতো নাড়িয়ে বলতে লাগলেন, “আজকে প্রচুর গরম পরেছে!”
কাহিনী না বুঝে হাত সরিয়ে উনার দিকে চেয়ে আছি। উনি রনক ভাইয়ার মাথার গামছা খুলে নিয়ে নিজের কপাল আর মুখের ঘাম মুছছেন। মোছা শেষে গামছাটা হাতে ধরিয়ে দিলেন।
“নে এবার ব্যবহার কর। ঘামে ভেজা ঘামছা ওকে পরিয়ে ছবি তুললে তোর সেলফিটা আরো সুন্দর হবে!”
সায়র ভাই হেলেদুলে চলে গেলেন। আমি হাত থেকে ফেলে দিলাম গামছাটা। রনক ভাইয়া মৃদু হেসে গামছা উঠিয়ে তিনিও নিজের ঘাম মুছছেন। ঘাম মুছে আমার দিকে বাড়ালে আমি নাক মুখ কুচকে সরে গেলাম সামনে থেকে। সায়রি বেশ ততস্থ হয়ে বসে কাজিনদের মাঝে। চোখে-মুখে বিব্রতভাব। কিছুটা ভয়। কিছুটা অনিশ্চয়তার রেখা। আমি গেলে আমাকে হাত চেপে বসিয়ে দিলো। ওর কাজিনগুলো এক সময় চলে গেলো রুম থেকে। সায়রি আমার হাত চেপে ধরলো।
“নিষ্ঠা, ভয় লাগছে রে।”
“বোইন আমি শান্তনা দেওয়ায় খুব কাঁচা। কিন্তু তুই যদি এখন ভয়ে কান্না করিস আমি তোকে মাথায় পিঠে বারি মেরে আশ্বাস দিতে পারবো!”
“হুর মাইয়া, মজা করিস না। সত্যি ভয় লাগছে।”
একহাতে সায়রিকে জড়িয়ে ধরলাম, “ভয় পাস না সব ঠিকঠাকই হবে।” চোখ টিপ মেরে, “তুইও বাসরে ঢুকে যাবি সবশেষে!”
সায়রি হাত ঝারা মেরে সরিয়ে দিলো, “তুই আরো কেমন!”
মাথা চুলকে, “বোন আমার তো বিয়ে হয় নাই শান্তনা কিভাবে দেয়? তোর হাত ধরে আছি তুই আশ্বাস নে আমার থেকে!”
সায়রিকে রেখে বিকেল দিকে খালার বাসায় এসে গেলাম। রেডি হয়ে সেজে আবারো এসেছি বিয়ে বাড়িতে। আমাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে আবারো হেসে উঠলেন সায়র ভাই। তড়িঘড়ি নিজের দিকে তাকালাম। না ঠিকই আছে শাড়ি। উনি তবু হাসছেন। ভেংচি কেটে সায়রিকে দেখতে উপরে চলে এলাম। সায়রিকে সাজানো শেষ। বরযাত্রী আসার পালা। রুমটাতে সায়রি একা বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। আমি গিয়ে কাধে হাত রাখতে ম্লান হাসি হাসলো।
“নার্ভাস হচ্ছিস কেন আমি আছি! দরকার পরলে আমাকে নিয়েই তুই তোর বাসরে ঢুকিস!”
“উফ, নিষ্ঠা আশ্বাস তো ঠিক মতো দিতে শিখ!”
হাসতে লাগলাম, “তোর ২য় বিয়েতে দেখিস ঝাকানাকা শ্বান্তনা দিবো! এবারেরটা অভিজ্ঞতায় যোগ করে নিচ্ছি।”
বরপক্ষ এসেছে গুঞ্জন নিচ থেকে আসছে। নিচে যেতে গেলে সায়রি হাত চেপে ধরলো।
“ভয় পাস না সাইফ ভাইয়া আছে তো।”
সায়রি হাত ধরে আমার দিকে চেয়ে আছে। কি জানি বলতে চেয়েও থেমে যাচ্ছে। জানালার কাছ থেকে এসে এর এমন গম্ভির মুখাবয়ব দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি?”
“তুই কি সায়র ভাইয়ার প্রতি দূর্বল? না আমি তোকে যতোটুকু চিনি তুই সবার সাথেই ফ্রি হয়ে মিশিস ঠিক আছে। কিন্তু তোর বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে আমার মনে হচ্ছে সায়র ভাইয়াকে তুই পছন্দ করতে শুরু করেছিস। হয়তো পছন্দ থেকেও_”
থেমে অন্যদিকে তাকালো। এই মূহূর্তে এই প্রশ্নটার আশা করিনি। থতমত খেয়ে ওর দিকে চেয়ে আছি। মিথ্যে বলতে যেয়েও থেমে গেলাম। আজ পর্যন্ত আমার সব সিক্রেটগুলো কাউকে না বললেও সায়রিকে বলেছি। চোখ বন্ধ করে লম্বা দম নিলাম। সত্যিটা বলে দিবো। বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে আমার খারাপ দিকটাও ওর জানা উচিত। আচ যেহেতু করেছে মিথ্যে বলে কি লাভ!
“হ্যা আমি সায়র ভাইকে পছন্দ করি।”
কথাটা বলে সায়রির দিকে তাকালাম। সে বিস্মিতচোখে আমাকে দেখছে। কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসার জন্য পিছনে ঘুরলে নির্মা আপুকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।
চলবে__________❤