নিষিদ্ধ_সে,৭,৮
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
(৭)
সায়রঃ তুই আমার সাথে এখন মল ত্যাগ করতে শৌচালয়েও ঢুকতে চাইছিস?
কথাটা ঠিকমতো না শুনে আগের মতো মাথা নাড়ছি। উনি এবার আমাকে টানতে লাগলেন। দেখি উনি বাথরুমে টেনে ঢুকাচ্ছেন। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। ষাড়ের মতো শক্তির সাথে আমার মতো এক বালিকার শক্তিতে কি একে থামানো সম্ভব?
আমিঃ [বাথরুমের দরজার বাইরে ধরে] ঐ বাথরুমে ঢোকান কেন আমায়?
সায়রঃ [আমার একহাত টানতে টানতে] আজকে তোকে নিয়েই একসাথে মলমূত্র ত্যাগ করবো।
আমিঃ ছিঃ আপনার লজ্জা লাগছে না এসব বলতে?
সায়রঃ তোর যদি মেয়ে হয়েও লজ্জা না লাগে তো আমার লজ্জা লাগিয়ে লাভ কি?
আমিঃ আমি শুনিনি আপনার কথা ঠিকমতো হাত ছাড়েন।
আমি মুখ কাচুমাচু করে তাকিয়ে আছি। সায়র ভাই পৈশাচিক হাসি দিচ্ছে আমায় জব্দ করতে পেরে। কিছু একটা ভেবে আমিও হাসি দিতে লাগলাম এবার।
আমিঃ আচ্ছা চলেন একসাথে মল-মুত্র ত্যাগ করা হোক তাহলে!
সায়রঃ [কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে চেয়ে উনিও হাসতে লাগলেন] আমার সমস্যা নেই আয়!
আমিঃ হাত ছাড়েন আমি একাই ঢুকছি।
সায়রঃ [আমাকে টেনে ভেতরে ঢুকাতে ঢুকাতে] আরে সমস্যা নেই আমিই তোকে টেনে ঢোকাচ্ছি।
আমিঃ কি যে বলেন ভাই! নিজেকে কোরবানির গরু গরু লাগে এভাবে টানলে।
সায়রঃ তুই তো গরুই।
আমিঃ তওবা তওবা কি বলেন এসব? নিজের বিষ্ঠাত্যাগী সহকর্মীকে এসব বলতে নেই!
সায়র ভাই আমার হাত ছেড়ে দিলে স্প্রিংয়ের মতো ছিটকে দূরে সরে গেলাম। কিন্তু স্প্রিংয়ের শেষ কাজ সমাধা করিনি পুনরায় তার কাছে এগিয়ে গিয়ে। দরজা মুখের উপর লাগিয়ে দিলেন।
সায়রঃ [ভেতর থেকে চেঁচিয়ে] বেহায়ার রেসে আমি তোর থেকেও বেহায়া। ভয় পাওয়াতে আসিস না আমায়।
আমিঃ [নাক চেপে ধরে] ছিহ! আমি এখান থেকে গন্ধ পেয়ে মুখই খুলতে পারছি না আর আপনি ঐখানে ডিরেক্ট____ ইয়াক!
সায়রঃ আহা রে! কেন তোর ত্যাগকৃত মলের গন্ধ বুঝি সুবাস ছড়ায়! বেশরম মেয়ে এখনো আমার টয়লেটের দরজার হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে আছিস। আবার গন্ধ গন্ধ চেঁচাস!
নাক মুখ কুচকে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। বের হতেই নির্মা আপুর মুখোমুখী পরলাম। আপু চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে।
নির্মাঃ কই ছিলে তুমি? আমি খুজছিলাম তোমায়!
আমিঃ না মানে______
নির্মাঃ আজকে শপিং এ যাবো! ঐটাই বলতে আসছিলাম তোমাকে! সারা বাড়ি খুজেছি পায়নি তোমাকে। কই ছিলা?
আমিঃ না মানে হ্যা মানে ঐ ঐদিকটায়____
নির্মাঃ আচ্ছা, রেডি হও, বেরোবো। আমি বাসা থেকে রেডি হয়ে আসছি। সায়রিকে বলে দিয়েছি।
নির্মা আপু চলে গেলে তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়ার দিকে। একবারো সায়র ভাইয়ের খোজ নিলো না। বাসায় এসেছে অন্তত সায়র ভাইয়ের রুমে ঢুকে কথা তো বলে যেতো!
আমিঃ [বিছানায় বসে সায়রির সাজা দেখতে দেখতে] বিয়ে বাড়ির সজ্জাই শেষ হতে চললো আর কনের জাব্বাজুব্বা কেনা হয়নি এখনো?
সায়রিঃ কে বলেছে তোকে কেনা হয়নি? মা একমাস আগে থেকে নেমেছে বিয়ের কাজকর্মে।
আমিঃ তো?
সায়রিঃ [চোখে কাজল দিতে দিতে] কিসের তো?
আমিঃ আবার কি জন্যে যাবি মার্কেটে? আমার ড্রেস চেঞ্জ করতে বিরক্ত লাগছে!
সায়রিঃ [ভ্রু কুচকে] রনক ভাইয়ার হাওয়া লেগেছে তোর গায়ে?
আমিঃ আমি যাবো না!
সায়রিঃ থাপ্পড় চিনিস? নির্মা আপু, নির্মা আপুর বান্ধবীগুলো থাকবে সেখানে। কতোজনের কেনাকাটা____
আমিঃ সেখানে আমার কি কাজ?
সায়রিঃ তুই কিছু কিনবি না?
আমিঃ [বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে] নাহ! সব নিয়ে এসেছি বাসা থেকে। ইচ্ছে নাই এখন বাইরে যাবার!
সায়রিঃ ঢং ধরবি না। [আড়চোখে তাকিয়ে] সায়র ভাইয়াও যাবে!
অলসতার দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বুজে পরে রইলাম। কিছুক্ষন চোখ বুজে থেকে সায়রির শেষ কথাটা আউড়িয়ে উঠে পরলাম লাফ দিয়ে।
আমিঃ কি বললি তুই?
সায়রিঃ [ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে] সায়র ভাইয়াও যাবে।
আমিঃ হ্যা তো?
সায়রিঃ তুই তো এটাই শুনতে চেয়েছিস।
আমিঃ [সদ্য বাধা চুলগুলো টেনে বের করে] ঐ আমি এটা শুনতে চেয়েছি?
সায়রিঃ হারামজাদি, তোর জন্য আমার আবার কষ্ট করে চুলগুলো বাধতে হবে। তুই তো আমার শেষ কথাটাই শুনতে চেয়েছিস।
আমিঃ সায়র ভাই যাচ্ছে তাতে আমার কি?
কিছু না বলে আমার দিকে চেয়ে রইলো। এর হাবভাব অন্য কিছু বলছে। আমি বিরক্ত হয়ে কাবার্ডে রাখা জামা বের করে ওয়াশরুমে চলে এলাম। রেডি হয়ে নিজেকে আয়নায় দেখছি ঘুরে ঘুরে। সায়রি বেডে বসে তাকিয়ে আমার দিকে। আয়নায় তার দিকে ভ্রু নাচালাম সে হাসলো।
সায়রিঃ নিষ্ঠা, একটা সত্যি কথা বলবি?
আয়নায় নিজেকে দেখে পোস দিতে দিতে ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “কি?”
সায়রিঃ তুই কি সা________
নির্মাঃ তোমরা রেডি তাহলে। চলো চলো।
নির্মা আপুকে খুটিয়ে খুটিয়ে স্কেনিং করছি। সুন্দরী আপু তার মধ্যে গরমের মাঝে কিছুটা ভারী মেকাপ। দেখে নিজেরই গরম লেগে যাচ্ছে।সাজ জিনিসটা একদম বিরক্তিকর লাগে। আবার সেজে আয়নায় নিজেকে তৃপ্তি নিয়ে দেখতেও ভাল্লাগে এদিকে আমি দুমুখো। মুড যখন যেমন আমি তখন তেমন। বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে আপু তখন থেকে একবারো সায়র ভাইয়ার সাথে টু শব্দ কি তার দিকে আড়চোখেও তাকায়নি। সায়র ভাই গাড়ি ম্যাকানিকাল দোকানে বলতে গেলেও ভাব দেখিয়ে ইগনোর করেছে। ব্যাপারটা মাত্রাতিরিক্ত লাগছে আমার কাছে। প্রিয় মানুষদের একজন বলে সেই বিরক্তিও ফুটিয়ে তুলছি না চেহারায়।সায়র ভাই জোড়া ভ্রু কুচকে নির্মা আপুর ইগনোরেন্স দেখছে।
নির্মাঃ কি হলো গাড়ি বের করে না কেন?
সায়রঃ [আপুর দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে] গাড়ির কিছু প্রবলেমের জন্য মেকানিক্সের দোকানে পাঠানো হয়েছে।
নির্মাঃ [আমার দিকে তাকিয়ে] চলো রিকশা করে যাই।
আপু ডিরেক্ট আমার দিকে চেয়ে থাকায় মৃদু হেসে মাথা নাড়লাম। আপুর বান্ধবীরা নাকি ঐখানে অপেক্ষা করছে। সায়র ভাই রিকশা ডেকে এনে দিলো দুইটা। সায়রিকে নিয়ে আগেই চলে গেছে সাইফ ভাইয়া। দুইটা রিকশা আসায় নির্মা আপু আমাকে টেনে বসাতে চাইলো তার পাশে আমি রনক ভাইয়ার হাত ধরে ক্লোজ আপ হাসি নিয়ে নির্মা আপুর দিকে তাকালাম।
আমিঃ আপু তোমরা যাও। আমি রনক ভাইয়ার সাথে যাবো।
সায়রঃ [ভ্রু কুচকে] কিসের জন্য? আমার বন্ধুকে পটাতে চাচ্ছিস নাকি? নেভার! [আমার হাত রনক ভাইয়ার থেকে ছাড়িয়ে] তুই নির্মার সাথে যা। বন্ধুর দিকে নজর দিবি না!
সায়র ভাইকে পাশ কাটিয়ে রনক ভাইকে ঠেলে ঠুলে রিকশায় উঠাতে লাগলাম। রনক ভাই উঠার আগেই সেই মহাশয় নিজে উঠে বসে পায়ের উপর পা তুলে ভাব নিয়ে আমাদের দিকে তাকালো।
আমিঃ [রেগে] ঐ আপনি নামেন!
সায়রঃ তোর বাপের সম্পত্তি এই রিকশা?
রাগে গজগজ করতে করতে রনক ভাইয়া উঠে গেলেও টেনে নামালাম উনাকে। সায়র ভাই ভ্রু কুচকে আমাকে দেখছে। রনক ভাইয়াকে নিয়ে নির্মা আপুর বসে থাকা রিকশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। নির্মা আপু উৎসুক হয়ে চোখ-মুখ শক্ত করে বসে।
নির্মাঃ আমি ঐ রিকশায় যাবো না।
আমিঃ [অসহায়ের মতো] আপু প্লিজ! আমি না তোমার বোন লাগি। আমার ডেটে তুমি এমনভাবে বাধা দিবা?
নির্মাঃ কিহ! ডেট? তোমরা তোমরা_____
রনক ভাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে। এহেন কথা উনাকে একটুও টলায়নি। আমি আরেকবার তাকালে আপু দীর্ঘশ্বাস ফেলে নেমে গেলো। আমাদের রিকশা ছুটে চলেছে আপন গতিতে। আমি মুখ বিকৃত করছি তখন এক্সপ্রেশন না দিতে পেরে।
রনকঃ ওদেরকে মিটমাট করার জন্য জায়গা দিলে?
আমিঃ নাহলে কি? আপু অতিরক্ত করছে। তাছাড়া আপুর পাশে আমাকে মানাচ্ছিলো না।
রনক ভাইয়া মৃদু হাসলো। ঢেউ খেলানো এলোমেলো চুল রিকশার হাওয়ার তোড়ে উড়ছে। দেখতে ভালোই লাগছে।
আমিঃ আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই ভাইয়া?
রনকঃ নজর দিয়ে লাভ নেই।
আমিঃ কেন? হিহিহিহি, বুকিং আপনি?
রনকঃ ডেটে নিচ্ছো বুকিং কিনা জানো না?
আমিঃ [হাসতে হাসতে] রিলেশন খুব প্যারার হয় তাই না রনক ভাইয়া?
রনকঃ কখনো করিনি তাই জানি না।
আমিঃ [দীর্ঘশ্বাস ফেলে] ওদের কি এমনি দিনকাল চলে? সামান্য বিষয়ে ইগনোর এটা সেটা নিয়ে?
রনকঃ [সামনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে] নির্মা প্রায়শই এমন করে। সামান্য বিষয়ে রেগে যায় শুধু শুধু। তখন সায়র এটা সেটা বলে রাগ ভাঙায়। আগে এমন ছিলো না। কয়েকমাস ধরে এমন হচ্ছে। সায়র একটু বেশিই কেয়ার করে নির্মার। আমার মনে হয় এই বেশি কেয়ারটুকু বার বার দেখতে ইগনোর করে নির্মা। এমন হয় আমরা কাছের মানুষকে কষ্ট দিয়ে মনের ভিতর একটা পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করি।
আমিঃ পৈশাচিক আনন্দ?
রনকঃ ওর কষ্ট হবে সে আমার কাছে ফিরে আসবে কেয়ার করবে বাড়তি এটাতেই পৈশাচিক আনন্দ হয়।
আমিঃ আচ্ছা আপনার মুখ ব্যাথা করছে? [ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো] এতো কথা একসাথে বললেন মুখ ব্যাথা হচ্ছে কিনা তাই জিজ্ঞেস করছি।
উনার একসাইডে টোল পরা হাসি হাসলো। টিপে দিলাম সেই টোলটা।
রনকঃ আআ!
আমিঃ হিহিহি বাজে অভ্যাস আমার। টোল দেখলেই টিপে দিতে ইচ্ছে করে। আপনি তো সায়র ভাই থেকে কম যান না রিলেশন করেন না কেন?
উত্তর না দিয়ে হাসতে লাগলো ঠোঁট হালকা চওড়া করে। আমি ফোন বের করে ভাইয়াকে তাকাতে বললাম। সেলফি তুলতে লাগলাম ফটাফট। রনক ভাইয়ার ছবিগুলো দারূণ এসেছে।
আমিঃ আপনার ছবি দারূণ এসেছে ভাইয়া। আপনাকে পাঠিয়ে দিয়েছি মেসেজে। [দাঁত বের করে] আমার যখন বিয়ে হবে তখন এই ছবিগুলো দেখে স্মৃতিচারণা করবেন। আমি আপনার কতো সুন্দর সেলফি তুলে দিয়েছিলাম।
মার্কেটে পৌছে আমার মাইগ্রেনের ব্যাথা উঠে গেলো। সাইড ব্যাগ থেকে চশমা বের করে পরে নিলাম।সবাই হালকা পাতলা সেজে এসেছে। আমিই মুখে কিছু না দিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে এসেছি।
রনকঃ [আপুদের দিকে একবার তাকিয়ে হালকা হেসে] তোমাকে কিন্তু চশমায় খুব সুন্দর লাগছে।
গাল ফুলিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। গাল টিপে দিলেন উনি। কেউ এসে আমাকে ধাক্কিয়ে রনক ভাইয়া আর আমার মাঝে এসে দাঁড়ালেন। দেখি সায়র ভাই আমার দিকে সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে। রনক ভাইকে নিয়ে সামনে যেতে লাগলেন। ইচ্ছে করছে রাস্তা থেকে ছোট ইটের টুকরো তুলে ঢিল ছুড়ি বেহায়ার দিকে। আপু হেসে আমার কাধ চাপড়ে হাত ধরে হাটা দিলো সামনে। সবার সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে রিয়া নামের এক আপু কেমন কেমন করে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আর নির্মা আপুর কানে ফিসফিস করে কিছু বলছে। সবাই নিজেদের জিনিস কেনাকাটায় ব্যস্ত আমি দোকানের উচু টুলে বসে জুস খাচ্ছি আর ওদের কেনাকাটা দেখছি। রনক ভাইয়া পাশে বসে অলস ভঙ্গিতে ফোন টিপছে তখন থেকে। কিছুক্ষন পর সায়র ভাই রনক ভাইয়ার পাশ থেকে উঠে টুল হাতে আমার সামনে দাঁড়ালেন।
সায়রঃ ঐদিক চাপ!
আমিঃ [বিরক্ত হয়ে] কি জন্য?
সায়রঃ চাপতে বলেছি চাপবি। এতো কিসের কথা!
বিরক্ত হয়ে আমি সেই অবস্থাতেই ঠায় বসে রইলাম। আমাকে সরাতে না পেরে রনক ভাইয়াকে বললেন সরতে। ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে টুল সরিয়ে বসলো। সায়র ভাইয়া জায়গা পেয়ে তৎক্ষনাৎ ধপ করে পাশে বসে গেলো টুল নিয়ে শব্দ করে। দোকানে থাকা প্রত্যেকে ফিরে তাকালো আমাদের দিকে। আমি জুস খেতে খেতে ওদের দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে আনতে গিয়ে দেখি রিয়া আপুটা এবারো বিরবির করে কি জানি ঢোকাচ্ছে নির্মা আপুর কানে।
সায়রঃ [কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে] খবরদার রনকের দিকে নজর দিবি না।
রিয়া আপুর কটমটানি দেখে আমি পৈশাচিক হাসি দিলাম তার দিকে। সে দ্রুতহাতে নির্মা আপুকে আমাদের দেখাতে চাইলো। কিন্তু নির্মা আপু যেখানে সায়র ভাই আছে সেখানে তাকাতে নারাজ।
সায়রঃ [জুস ধরা হাতে চিমটি কেটে] কথা বলিস না কেন?
আমিঃ [হাত ঘষে এক ভ্রু উচিয়ে] আপনি কি জেলাস করছেন আমাকে আর রনক ভাইয়াকে?
সায়রঃ [নাক মুখ কুচকে] আমার চয়েজ এতো খারাপ না। পিচ্চিদের জুস সবার সামনে স্ট্র হাতে খায় এমন মেয়েকে পছন্দ করবো।
আমিঃ করতেই পারেন। আঙ্কেলের পথ অনুসরণ করেছেন কিনা কে জানে!
সায়রঃ [ভ্রু কুচকে] মানে?
আমিঃ [এক সিপ জুস খেয়ে] আঙ্কেল প্রথমে “কাজিন প্রেম” রোগে আক্রান্ত ছিলো পরে জানা গেলো তাহার সে রোগই হয়নি। সে পরে বিবাহ করিল আমার আন্টিকে। [হাসতে হাসতে] আপনি আবার নির্মা আপুকে ধোকা দিয়ে আমার সাথে স্বপ্ন বুনছেন না তো? আমি কিন্তু রেডি। চলেন আপনার রোগের ভেকসিন নিয়ে আসি। বেশি না তিনবার কবুল বলবেন। কাহিনী খতম।
সায়রঃ [আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে] নিষ্ঠা তোকে ভালোবাসি নির্মাকে এর জন্য আমি ছাড়তেও রাজি চল পাটক্ষেতে যাই____
রিয়াঃ দেখেছিস দেখেছিস আমার কথাই সত্যি হলো।
দুজন পাশ ফিরে তাকালাম ততক্ষনাৎ। নির্মা আপু আর রিয়া আপু চোখ বড় বড় তাকিয়ে। সায়র ভাই হাত ছেড়ে দিয়েছে আমার।
আমিঃ [রিয়া আপুকে আড়চোখে দেখে সায়র ভাইকে ফিসফিসিয়ে] আমি কি এখন নাটকের মতো “ধুম তানা না!” মিউজিক দিবো?
চলবে________?
এ্যাগ্নেস_মার্টেল
#নিষিদ্ধ_সে
(৮)
নির্মাঃ কি বললি তুই এই মাত্র?
সায়রঃ পা পাটক্ষেতে____
নির্মাঃ নিষ্ঠা ও সত্যিই তোমায় প্রপোজ করলো?
আমি হাসতে হাসতে নিরীহের মতো মাথা নাড়লাম।
সায়রঃ ঐ মিথ্যে বলিস কেন? আমি____
নির্মা আপু গজগজ করতে করতে বকতে লাগলো সায়র ভাইকে। মাঝখান থেকে কেটে পরলাম। ফোনের রিংটোনে ফোন বের করে দেখি মা কল করেছে।
আমিঃ হ্যালো মা?
মাঃ [ধমকে] কল ধরতে এতোক্ষন লাগে?
আমিঃ কই সাথে সাথেই তো ধরলাম।
মাঃ তুই এখনি চট্টগ্রাম থেকে রওনা দে ঢাকায়।
আমিঃ মানে? সায়রির বিয়ে____
মাঃ তোর ভাইয়ের বিয়ে আগে না সায়রির বিয়ে আগে?
আমিঃ [চিল্লিয়ে] ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছে?
মাঃ উমহু করবে! তুই বাসায় আয় তাড়াতাড়ি।
আমিঃ [কাঁদোকাঁদো হয়ে] আমি কি সায়রির বিয়ে খাবো না তাহলে?
মাঃ আরে পরশু আমাদের সাথে আবার যাবি। এখুনি তুই ঢাকায় আয়!
আমিঃ [দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে] আচ্ছা আসছি।
ফোন কেটে পিছন ঘুরে দেখি মার্কেটের সবাই কেমন করে তাকিয়ে। একটু দূরে রনক ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে কৌতুহলি হয়ে। সায়রিকে ফোন লাগালাম। ফোন তুললো না সে। শেষে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।
আমিঃ আমাকে ঢাকায় যেতে হবে।
রনকঃ [ভ্রু কুচকে] কোন সমস্যা হয়েছে?
আমিঃ [হেসে] ভাইয়াকে মনে হয় বিয়ে করার ক্রিমি কামড়েছে! সায়রিকে ফোনে পাচ্ছি না আপনি একটু কষ্ট করে বলে দিয়েন।
রনকঃ মেসেজ করে দাও। চলো তোমাকে বাসায় পৌছে দেই।
ব্যাগ গুছিয়ে আন্টিকে বলে রওনা হয়েছি। রনক ভাইয়া আমাকে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। টিকেট কেটে হাতে চিপস, চকলেট খাবারের প্যাকেট এনে ধরিয়ে দিয়েছে। বাসে উঠতে সিট ঠিক করে দিয়ে নিচে নামলেন।
আমিঃ থাংকু ভাইয়া!
রনকঃ বাস তো ছাড়বে কিছুক্ষন পর। ঝগড়া করো না আবার কারোর সাথে সায়র ভেবে।
আমি হাসতে লাগলাম মাথা নেড়ে। উনি মৃদু হেসে আমার জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন।
রনকঃ আগামী কাল যদি কল পেয়ে কারোর খাপছাড়া কথাবার্তা শুনো তাহলে অবাক হয়ো না।
আশ্চর্য হয়ে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। এই সময়ে এই ডায়লগ কেন? হাত নেড়ে চলে যেতে লাগলেন।
আমিঃ [জানলা দিয়ে মুখ বের করে] ভাইয়া, কারনটা তো বলে যান!
রনকঃ [পেছন মুড়ে] সময় আসলে ঠিকই বুঝতে পারবে!
•
•
•
রেগে সোফাতে বসে আছি। ভাইয়া সামনে বসে হাসছে। আম্মু তখন থেকে ফ্রেশ হতে তাড়া দিচ্ছে। এখনো ঠায় বসে আছি। কিসের বিয়ে কিসের কি? আমাকে শুধু শুধু চট্টগ্রাম থেকে এনেছে আম্মু। দুইদিনের জন্য শুধু শুধু সায়রি মেয়েটাকে মন খারাপ করানো।
নিভৃতঃ আম্মু সিরিয়াসলি তোকে ঐটা বলে আনিয়েছে যে আমার বিয়ে হচ্ছে?
আমিঃ তা নয়তো কি? বলেছে তুই নাকি বিয়ে করছিস!
নিভৃতঃ হাহাহা, তোর মা আসলেও পাগল!
আমিঃ [উঠে দাঁড়িয়ে] ধুরু! আমি আবারো রওনা দিচ্ছি। আমার ভালো লাগছে না এখানে!
আম্মু রান্নাঘর থেকে খুন্তি হাতে তেড়ে এলো। আমি লাফিয়ে লাফিয়ে ভাইয়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আম্মুঃ কি বললি? আবার বল! মানুষের বাসায় এতোদিন থাকার এতো শখ কিসের তোর? তার মধ্যে বললাম তোর খালামনির বাসায় গিয়ে থাক। তা না সে ঐখানেই থাকবে!
আমিঃ ওরা কি পর? আমার বেস্টফ্রেন্ডের বাসাই তো।
আম্মুঃ তাতে কি হয়েছে? ওদের আত্মীয় সজন এসে তোকে বিনা নোটিশে থাকতে দেখলে সমালোচনা করবে না?
আমিঃ উফ আম্মু তুমি এর জন্য আনলে আমাকে?
আম্মুঃ নাহ, কালকে তোর ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। রেডি হয়ে থাকিস। শুনেছি পাত্রীর নাকি সুদর্শন বড় ভাই আছে। পছন্দ হলে গছিয়ে দিয়ে আসবো তোকে কালকে।
আমিঃ আম্মু!
আম্মুঃ মেউ মেউ চেঁচাবি না। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
আম্মু আবার রান্নাঘরে চলে গেলো। ভাইয়াকে পিঠে চিমটি কাটলাম সজোরে।
নিভৃতঃ আহ! নিষ্ঠা! লাগে তো।
আমিঃ শালা বিয়ের এতো তাড়া তোর! প্রেম করেও এরেঞ্জ ম্যারেজ করছিস লজ্জা লাগে না?
নিভৃতঃ [গালভরা হাসি নিয়ে মাথায় গাট্টা মেরে] তাকেই তো দেখতে যাচ্ছি!
আমিঃ [ব্যাগ ভাইয়ার দিকে ছুড়ে মেরে] এর জন্যই এতো লাড্ডু ফুটছে!
গোসল করে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি। অবচেতন মন বারবার সায়র ভাইয়ের স্মৃতি চোখে মেলে ধরছে। চোখ বন্ধ করলেও উনার চেহেরা ভেসে উঠে। ভাবনায় যাই ভাবি ঘুরে ফিরে সেই সায়র সম্পর্কিত ভাবনা দিয়েই সমাপ্তি হচ্ছে তাদের। মনে খুব অযৌক্তিক একটা ইচ্ছে জাগছে।
আমিঃ [মাথা চেপে ধরে] ও খোদা! এই ছেলে তো দেখি মাথার ভিতর ভন ভন করা শুরু করেছে!
নিভৃতঃ সেই আনলাকি ছেলে কে রে?
মাথা ছেড়ে দরজার দিকে তাকালাম। ভাইয়া দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।
আমিঃ [হেসে] এতো টিটকারি মেরে লাভ নাই। সেই ছেলেটা আগে থেকেই নিষিদ্ধ আমার জন্য!
ভাইয়া কতোক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে হেসে পাশে বসে গেলো। নিজের ফোন এগিয়ে দিলো আমার জন্য। অবাক হয়ে ভাইয়ার ফোন নিয়ে দেখি “ছোটু” লেখা জ্বলজ্বল করছে। লাইনে এখনো আছে।
আমিঃ ছোটু আবার কে?
নিভৃতঃ সায়র ফোন করেছে।
অবাক হয়ে ফোন স্ক্রিনে আবারো তাকালাম। কানে ঠেকালাম ফোন। কোন শব্দ নেই।
আমিঃ [ফোন কানে ঠেকিয়ে হাসতে হাসতে] হ্যালো!
সায়রঃ কই তুই?
আমিঃ কি অসামাজিক কথা এগুলা? নিভৃত ভাইকে ফোন দিয়ে আমাকে যেহেতু পেয়েছেন তাহলে নিশ্চিত বাসায় আছি।
সায়রঃ থাপ্পড় খেয়েছিস কখনো? থাপড়ে গাল লাল করে দিবো। অসভ্য বেহায়া বদমেয়ে। সামাজিকতা কি বুঝিস? জঙলি কোথাকার!
আমিঃ এই গালিগুলো দেবার জন্য ফোন দিয়েছেন?
সায়রঃ তোকে বলতে হবে?
আমিঃ আজকেও কিছু খেয়েছেন নাকি?
সায়রঃ তুই বিরাট বড় একটা আজাইরা!
ফোন কেটে দিলেন। আমি ভ্রু কুচকে চেয়ে আছি। এইগুলো বলার জন্য ফোন দিলো। আজব! আমি দেখি সব পাগলের ভিড়ে তলিয়ে যাচ্ছি।
নিভৃতঃ কি বললো রে?
আমিঃ হুহ, গালি দিলো কয়েকটা! এই বেটা ফোন দিলে আর আমাকে দিবি না।
নিভৃতঃ [হাসতে হাসতে] এগুলোই ওর ইম্পর্টেন্ট কথা! আমাকে ফোন দিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে বললো কি নাকি আছে তোকে বলার তুই ফোন বন্ধ করে রেখেছিস।
ভ্রু কুচকে অন্যদিকে তাকালাম। ভাইয়া মুচকি হাসি হেসে উঠে দাঁড়লো।
নিভৃতঃ সায়রই কি সে? [আমি চমকে তাকালাম] তার সাথে কথা বলার আগেই হাসছিলি অযথা!
আমিঃ [দীর্ঘশ্বাস ফেলে] আমার চয়েজ এতোটাও বাজে না!
নিভৃতঃ [রুম থেকে যেতে যেতে] আমার মনে হয় সেও তোকে পছন্দ করে!
ভাইয়া চলে গেলে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। শেষ কথাটা সত্যি হলে খুব কি খারাপ হতো? ফোন অন করে দেখি বেশ কিছু কল এসেছে আননোন নাম্বার থেকে। বিছানায় পরে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। নিষিদ্ধ হলেও আমার অনুভূতিগুলো তার জন্য ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
•
•
•
“নে এই শাড়ি পরে রেডি হয়ে নিস!”
ভ্রু কুচকে তাকালাম। সকালের খাবারও ঠিক মতো খেতে দিচ্ছে না। ভাইয়া, আব্বুরও সেম রিয়েকশন।
আম্মুঃ এটা পরে নিস।
আব্বুঃ মেয়েটা কি ছেলে দেখতে যাচ্ছে নাকি? ও কেন শুধু শুধু গরমে শাড়ি পরতে যাবে?
আম্মুঃ তোমার মেয়ে তো জীবনে প্রেম করলো না। ছেলের তো তাও বিয়ের সম্ভবনা আছে! এর তো সেইটাও নেই।
খাওয়া চুপচাপ চাবাতে লাগলাম। আব্বুর কথায় আম্মু শেষে শাড়ি নামক ঝামেলা থেকে রেহায় দিলো আমাকে। বেশ অসন্তুষ্ট তিনি আমার উপর। বুঝি না সব মায়েরা প্রেম বিরোধী আমার মা কেন এমন! পাত্রী দেখতে সোফায় বসে আছি। বেশ আলোচনা চলছে বড়দের মধ্যে। আমি পুরো বাসাটা স্ক্যান করে দেখছি। মাঝখানে আবার ফোন ভাইব্রেশন করে উঠলো। দেখি সায়রি কল দিচ্ছে। কল কেটে টেক্সট পাঠালাম ওকে। কিছুক্ষন পর আম্মুর তথাকথিত সেই “সুদর্শন” পুরুষ সামনে এসে বসলো। চা খেতে খেতে কাশি উঠে গেলো আমার। আম্মু পিঠ থাপড়াচ্ছে।
আমিঃ [ফিসফিসিয়ে] তুমি এই গর্ভবতী ছেলের জন্য আমায় সাজিয়ে আনতে চেয়েছিলে আম্মু? একে তো অলরেডি মেরিড লাগছে।
চলবে_______❤