নিয়তি,পার্ট ৮,৯

0
814

নিয়তি,পার্ট ৮,৯
লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
পার্ট ৮

-আমি এখানে কেন?

জ্ঞান ফিরতেই ভয়ার্ত কন্ঠে নার্সকে প্রশ্ন করে হৃদি।নার্স শান্ত গলায় হৃদির কথার জবাব দেয়।এবং বাইরে অপেক্ষা মান নারী কনস্টেবলকে জানায় যে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।নারী কনস্টেবল কেবিনে প্রবেশ করতেই হৃদি ভয়ে কুঁকড়ে উঠে।অসহায় কন্ঠে আকুতি জানায় হৃদি যাতে সে হৃদির কাছে না আসে।নার্স ডাক্তারকে খবর দেয়।কিন্তু সেই একই অবস্থা।ডাক্তারকে দেখেও হৃদি ভয় পাচ্ছে।কোনো উপায় না পেয়ে নারী কনস্টেবল অফিসার বুখারীকে ফোন লাগায়।বিভোর তখন থানার কাজ সামলাতে ব্যস্ত।কনস্টেবল হাসপাতালের পরিস্থির সবটা খুলে বলে।এই মুহুর্তে থানায়ও কাজের চাপও বেশি আবার হাসপাতালেও যেতে হবে যেহেতু ওপরমহল থেকে হুকুম দেওয়া আছে মেয়েটার যাবতীয় ভালো মন্দের খোঁজ বুখারীকে নিতে হবে।এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফাইল গুলোকে টেবিলে ছুড়ে ফেলে বুখারী।বাইক নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়।হাসপাতালে গিয়ে সেই একই পরিস্থির সম্মুখীন হয় বুখারী।ডাক্তার জানায় হৃদি এখনো মানসিক চাপের মধ্যে আছে।আশে পাশের মানুষকে সে ভয় পেতে শুরু করেছে।বুখারী আস্তে আস্তে করে হৃদির কাছে যেতে লাগে।হৃদিও ভয় পেয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে গুঁটিয়ে নিতে থাকে।বুখারী হৃদিকে নির্ভয় করার জন্য শান্ত গলায় বলে,,

-ভয় পাবেন না।আমি পুলিশ। আপনাকে আমি সাহায্য করবো।
-প্লিজ কাজে আসবেন না।
-আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।টাস্ট মি
-আমি বলেছি আমার কাছে আসবেন না।

বুখারী বুঝতে পারে এভাবে হৃদির মুখ থেকে কোনো কিছু শোনা যাবে না।উলটে হৃদি আরও নিজেকে গুটিয়ে নেবে।বুখারী হৃদির বেডের পাশে একটা টুল নিয়ে বসে।আর বলে,,

-আচ্ছা আমি কাছে আসছি না।আপনি দূর থেকেই আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।আপনার বাবার নাম কী?আর বাড়ির ঠিকানা নাম্বার মনে আছে?

বুখারীর কথা শুনে হৃদি তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।যার মা মারা গেছে তার আর বাবা!বাবা নামক প্রানীটা মা মারা যাওয়ার সাথে সাথেই বদলে গেছে।হৃদির এমন অস্বাভাবিক হাসি দেখে বুখারী কিছুটা চমকে যায়।মানসিক চাপের কারণে মেয়েটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো না তো!

-আর ইউ ওকে?

হৃদি ইশারায় হ্যা বোধক উত্তর দেয়।বুখারী শান্ত গলায় হৃদিকে আবার প্রশ্ন করে,,

-আপনার নাম ঠিকানা কিছু কি মনে আছে?
-নাম হৃদি।মা মারা গেছে বহুদিন হলো।বাবা থেকেও নেই।মা মারা যাওয়ার পর, বাবা পর হওয়ার পর মামার বাড়িতেই থেকে মানুষ হয়েছি।
-তো আপনি নারী ও শিশু পাচারকারী এবং মাদক সম্রাজ্ঞী বিউটি আম্মার ডেরায় গেলেন কিভাবে?

হৃদি আর কিছু বলে না।চুপচাপ বসে থাকে।অদ্ভুত দৃষ্টিতে আনমনে তাকিয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। বুখারী আবার প্রশ্ন করলে তার ধ্যান ভাঙে।লম্বাশ্বাস নিয়ে হৃদি বলে,,

-আপনি আসতে পারেন।আমায় একা থাকতে দিন।আর হা আমার সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর নিবেন না।আল্লাহর দোহাই লাগি।

বুখারী বুঝতে পারে হৃদি এখনো মানসিক ভাবে ঠিক হয়ে উঠতে পারেনি।তবে তার ধারণা সম্পুর্ণ ভুল। হৃদি সুস্থ মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর মামা বাসায় ফিরবে না।মানুষের ঘাড়ে বোঝা হয়ে সে আর থাকতে চায় না।

রাত তখন প্রায় দেড়টা।পুরো হাসপাতাল তখন নিঃস্তব্ধ।গা ছমছমে একটা পরিবেশ।তার মধ্যে মেডিসিনের গন্ধ পরিবেশটা আরও ভুতুরে করে তুলুছে।এই রকম পরিবেশে যে কারও গা শিউরে উঠবে।কিন্তু হৃদি সে সম্পুর্ন স্বাভাবিক।পা টিপে টিপে হাসপাতালের মেইন গেটের দিকে যাচ্ছে সে।যেভাবেই হোক আজ পালাতেই হবে।পুলিশ দিয়ে বিশ্বাস নেই।তারা যতই আশ্বাস দিক যে হৃদির ব্যপারে কোনো খোঁজ খবর নেবে না কিন্তু তলে তলে তারা ঠিকই হৃদির সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিচ্ছে।তাই হৃদিকে পালাতেই হবে।শরীর দুর্বল থাকায় স্যালাইন দেওয়া হয়েছিলো তাকে।সুঁচটা ঠিক মতো খুলতে পারেনি হৃদি।কোনোরকমে সুঁচটা খুলে ফেলে রেখে এসেছে সে।বা হাতটায় স্যালাইন দেওয়া হয়েছিলো।সেখান দিয়ে গল গল করে রক্ত ঝড়ছে।ব্যথাও করছে প্রচন্ড।
এদিকে আলভী ও তার মা হৃদির ডান পায়ের তলায় খুন্তি গরম করে ছ্যাকা দিয়েছিলো।হাঁটার কারণে ফোস্কাটা গলে গেছে।প্রচন্ড জ্বালা হচ্ছে পায়ে।কতবার যে হোঁচট খেয়েছে হিসাব নেই।
ঠিক হাসপাতালের মেইন গেটের সামনে এসে হৃদির মাথা ঘুরাতে শুরু করে।ঝাপসা হয়ে আসে চারপাশটা।মুহুর্তেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হৃদি।


জ্ঞান ফিরতেই পাশে বুখারীকে দেখতে পায় হৃদি।মাথা নীচু করে দুই হাত কপালে মুষ্টিবদ্ধ করে টুলে বসে আছে বুখারী।হৃদির জ্ঞান ফিরতেই সে উঠে দাঁড়ায়।এবং কাছে এগিয়ে আসে।হৃদিও কিছুটা গুটিয়ে নিতে লাগে নিজেকে।

-প্রবলেম কি আপনার? পালাইতে চাইছিলেন কেন?
-পালানো?এইখানে পালানো আসলো কিভাবে?
-তো হাসপাতালের গেটের সামনে পড়ে আছিলেন কিভাবে?
-ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস আছে।হাঁটতে হাঁটতে হয়তো…!
-হ্যা।খুব বুদ্ধিমান আপনি!কি ভাবছেন যা বলবেন তাই বিশ্বাস করবো?ঘুমে হাঁটার অভ্যাসের সময় মানুষ হ্যাঁচকা টান দিয়া স্যালাইন খুলে?পায়ের ফোস্কা গলে গেছে তাও সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে!

বুখারীর যুক্তির কাছে হৃদি কি বলবে ভেবে উঠতে পারে না।মামা না বলতো পুলিশরা মাথামোটা হয়।কিন্তু এই বেটা তো প্রচুর সিয়ানা।বুখারী হৃদির সামনে তুরি বাজালে ওর ধ্যান ভাঙে।

-পালানোর কারণটা কি জানতে পারি?
-ঘুমে হাঁটা।
-মিথ্যা বলিয়েন না।পাপ হবে।
-পুলিশরা না মাথামোটা হয়।আপনি এত সিয়ানা হলেন কিভাবে?

বিড়বিড় করে কথাটা বলে হৃদি।হৃদির কথার কিছু হলেও বুখারী শুনতে পায়।

-মাথামোটা,সিয়ানা মানে?
-কিছু না।
-কারণটা বললেন না।
-মন চাইছে তাই পালাইতে চাইছিলাম।
-আমায় বোকা ভাববেন না।আমি আন্দাজ করতে পারছি আপনি কোনো বড় এক কারণে পালাতে চাইছিলেন।আপনি কোনো ভাবে ওই মাদক কারবার আর নারী পাচারের সাথে যুক্ত নন তো!
-আস্তাগফিরুল্লাহ!এইগ্লা কী বলতেছেন?
-তো পালানোর কারণ কি?
-আপনি যদি আমায় আবার মামা মামির কাছে দিয়ে আসেন।
-আপনি ফিরতে চান না?
-একদম না।
-কেন?উনারা কী আপনার ওপর কোনো ধরণের টর্চার করছে?
-নাহ।উনারা খুব ভালো মানুষ তবে মানুষের ঘাড়ে আর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
-দেখে তো মনে হচ্ছে ক্লাস নাইন টেনের বাচ্চা মেয়ে।
-মোটেও না।আমি এইচএসসি দিছি।
-তো মামাবাসায় যাবেন না তো যাবেন কই?
-যেখানে দু চোখ যায়।
-আমার বাসায় যাবেন?

বুখারীর কথা শুনে হৃদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।আলভীকে বিশ্বাস করে ঠকেছে।সাম্যও পালটে গেছে।আর কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছে না।

-সরি। লাগবে না আপনার দয়া করুণা।
-তো যাবেন কোথায়?
-বললাম তো জানি না।আপনি আসতে পারেন।একা থাকতে দিন আমায়।
-পালাবেন না তো!
-জানেন আপনি পায়ের ফোস্কা গলে গেলে।পালানোর কোনো উপায় আছে?
-কি জানি।যে মেয়ে বিউটি আম্মার মুখে মুখে কথা বলতে পারে।তার মার খেয়ে দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে তার দ্বারা কোনো কিছুই অসম্ভব না।

কথাটা বলে বুখারী কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।হৃদি মুখ ভেংচি কেটে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।


-কিরে মেয়েটার কী খবর?

কথাটা বলে টেবিলের ওপর কফির কাপ রাখেন মিসেস ছায়া।বুখারী টাওয়েল দিয়ে মুখটা মুছে বেল্কনিতে রোদে দিয়ে বলে,,

-বুঝোই তো বিউটি আম্মার সঙ্গে লাগতে পারে যে মেয়ে। সে তো আর কোনো সাধারণ মেয়ে না।
-বাড়ির খোঁজ খবর নিয়েছিস?
-হু নিয়েছি।কিন্তু উনি যেতে নারাজ।
-তো কই যাবে মেয়েটা?
-বলে যেখানে দু চোখ যায় চলে যাবে।
-আমাদের বাসায় আনলেই তো পারিস।
-বলেছিলাম।কিন্তু উনি না করেছেন।
-আমি কালকে যাবো হসপিটালে?
-যাবে?আচ্ছা যেও।

চলবে,,,

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট৯

(সবাই হিরোর নাম চেইঞ্জ করতে বলছিলেন।তাই হিরোর নাম বদলে দিলাম বিভোর)

-বিভোর মেয়েটা যেন কোন হাসপাতালে আছে?

বিভোরের আলমারি গুছাতে গুছাতে প্রশ্নটা করেন মিসেস ছায়া।বিভোরও তখন থানায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।হাত ঘড়িটা পড়তে পড়তে বলে,,

-সদরেই ভর্তি করাইছি।ওপর মহল থেকে অর্ডার আসছিলো।আল্লাহর রহমতে মেয়েটা সুস্থ হইছে।কিন্তু ঐ মামাবাড়িতে যাবে না।তাই হাসপাতালে পড়ে আছে।বাচ্চা পেশেন্টদের সাথে দুষ্টুমি করে দিন ভালোই কাটছে মেয়েটার।
-কিছু টাকা দিয়ে যাস তো থানায় যাওয়ার আগে।

বিভোর ওয়ালেট বের করে মিসেস ছায়ার হাতে হাজার পাঁচেক টাকা দেয়।চাকরি হওয়ার পর থেকে বিভোর মায়ের কাছেই স্যালারি রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু মিসেস ছায়া তাতে সায় দেন না।ছেলে বড় হয়েছে।মার কাছে কেন স্যালারি রাখবে!তার চেয়ে ভালো হয় নিজে রাখবে আর মিসেস ছায়া দরকারের সময় চেয়ে নেবেন। হৃদির মতো বিভোরও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান।বাবা ছিলেন সৎ পুলিশ অফিসার।স্ট্রোক করে দুনিয়ার মায়া ছেড়েছেন বহুদিন হলো।ছোটবেলা থেকে বিভোরেরও স্বপ্ন ছিলো বাবার মতো সৎ পুলিশ অফিসার হবে।দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আজ সে তা করে দেখিয়েছে।বিউটি আম্মা কতবার বিভোরকে টাকা দিয়ে হাত করতে চেয়েছে তার হিসাব নেই।কিন্তু পারেনি।অন্যান্য পুলিশ অফিসারকে টাকা দিয়ে হাত করতে পারলেও বিভোরকে টাকা দিয়ে হাত করতে সে ব্যর্থ। তাই তো বিভোর এখন বিউটি আম্মার দুই চোখের বিষ।

ছেলেকে থানায় পাঠিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রেডি হোন মিসেস ছায়া।পারলে আজই হৃদিকে নিয়ে আসবেন। একা থাকতে মোটেও ভাল্লাগছে না।সাথে কিছু টাকা নিলেন।যদি হৃদিকে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে আসার সময় ওর জন্য কেনাকাটা করবেন।

বিল্ডিং থেকে বেরুতেই এলাকার কুকুর বিড়ালগুলো মিসেস ছায়াকে ঘিরে ধরে।একা মানুষ মিসেস ছায়া।বিভোর কাজে ব্যস্ত থাকায় এলাকার কুকুর বিড়ালগুলোকে খাওয়াতেন মাঝে মাঝে তিনি।কখন যে তারা মিসেস ছায়াকে আপন করে নিয়েছে!মিসেস ছায়ায় তাদের সন্তানের মতো দেখে।মানুষ আর কুকুর বিড়ালের মধ্যে বিশাল পার্থক্য। মানুষকে আপনি নয় দিন খাওয়ান।একদিন খাওয়াননি। সেই এক দিনটার কথাই মনে রাখবে সে।আর কুকুর বিড়ালকে একদিন খাওয়ান। তারা সেই দিনটার কথা সারাজীবন মনে রাখবে।নিজের জীবন দিয়ে হলেও সেই ঋণ শোধ করবে। মানুষকে ভালোবেসে ঠকতে হয় কিন্তু কুকুর বিড়ালকে নয়।সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিস্রুতি দিয়েও মানুষের বিচ্ছেদ হয়।অন্যদিকে সঙ্গী হারালে পাখি উপোসে মরে।সত্যি বলতে অবলা প্রানীগুলোর ভালোবাসাই খাঁটি হয়।

কুকুর বিড়ালগুলোকে খাইয়ে মিসেস ছায়া হাসপাতালের দিকে রওনা দেন।হাসপাতালে গিয়ে বিভোরকে ফোন দেয়।তাড়াহুড়োর মাথায় হৃদির কেবিন নাম্বার জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গিয়েছিলেন মিসেস ছায়া।বিভোরের বলা কেবিনে যান মিসেস ছায়া।কিন্তু গিয়ে দেখেন কেউ নেই।ওয়ার্ডবয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন এই কেবিনের পেশেন্ট বাচ্চাদের ওয়ার্ডেই সারাদিন থাকে।ওয়ার্ডে গিয়ে মিসেস ছায়া দেখেন হৃদি একটা বাচ্চাকে খাইয়ে দিচ্ছে।বিভোর তাকে হৃদির ছবি দেখিয়েছিলো।তাই তিনি হৃদিকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেন।

-হৃদি?

মিসেস ছায়ার ডাকে হৃদি ঘুরে তাকায়।মিসেস ছায়াকে হৃদি চিনে না।কিন্তু একটা অচেনা অজানা মহিলা হৃদির নাম জানলো কিভাবে?হৃদি অবাক হয়।আর অবাক হওয়াটাই তো স্বাভাবিক নয় কী!হৃদি উঠে দাঁড়ায়।মিসেস ছায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

-সরি আপনাকে তো চিনলাম না!
-আমি বিভোরের মা।
-পুলিশ অফিসার বিভোর?
-হ্যা।
-ওহ আচ্ছা আচ্ছা।আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।

হৃদি বাচ্চাটাকে টুলে বসে খাওয়াচ্ছিলো।মিসেস ছায়ার জন্য সে টুলটা ছেড়ে দেয়।বিছানায় বসে বাচ্চাটাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে,,

-বসুন আন্টি।

হৃদির কথা মতো মিসেস ছায়া টুলে বসে।হৃদি বাচ্চাটাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে,,

-আমার কাছে তো ঠিকই খাচ্ছো?মার কাছে খেলে কি হতো?
-মা তো তোমার মতো গল্প শুনিয়ে খাইয়ে দেয় না
-এরপর থেকে মাও গল্প শুনিয়ে খাইয়ে দেবে।মার একটু মন খারাপ তো।তাই গল্প বলেন না। তুমি কিন্তু দুষ্টুমি করবে না।ডক্টর আঙ্কেল তোমায় রেস্টে থাকতে বলছে।খাওয়া শেষ হলেই ঘুম দিবা।
-আচ্ছা আন্টি।

বাচ্চাটাকে খাইয়ে দিয়ে হৃদি মিসেস ছায়াকে নিয়ে নিজের কেবিনে যায়।হৃদি ইলেকট্রিক কেটলিতে চা বানানোর জন্য পানি গরম দেয় হৃদি।মিসেস ছায়া হৃদির দিকে তাকিয়ে বলে,,

-বিভোরের কাছে শুনলাম তোমার মামা বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
-জ্বী ভুল শুনেন নি।মানুষের ঘাড়ে বসে আর খেতে চাই না।
-তো যাবে কোথায়?
-যেখানে দু চোখ যায়।
-আমার সাথে যাবে?
-কোথায়?
-আমার বাসায়।

হৃদি তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।মিসেস ছায়ার হাতে কাপ দিয়ে বলেন,,

-বুজতেছি না আপনি আর আপনার ছেলে বাসায় নেওয়ার জন্য এমন উঠে পরে লাগছেন কেন?
-ভুল করলে একটু মা।আমার ছেলে না শুধু আমিই।ওকেই আমি বলেছিলাম তোমায় আমাদের বাসায় নেওয়ার প্রস্তাব দিতে।
-কেন?
-একা মানুষ। তারমধ্যে ছেলে আইনী পেশার সাথে জড়িত।কখন বেরিয়ে যাবে কখন আসবে!কোনো কিছুরই ঠিক নেই।

হৃদি খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।এভাবে উনাকে কি খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া আদৌ ঠিক হবে?আর কত দিনই বা এভাবে হাসপাতালে পড়ে থাকবে।তার চেয়ে বরং উনার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাই।

-আমি রাজি আন্টি।আমি আপনাদের বাসায় যাবো।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here