নিয়তির সংসার,পর্ব_০২
Mst Liza
-আপনি জানেন ঠিক সময়ে বিয়ে করলে আজ আপনার থেকে হাজার গুণ স্মার্ট ছেলে আমার স্বামী হতো? কি যোগ্যতা আছে আপনার আমার মতো সুন্দরী এবং কুমারী মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পাবার? যান বালিশ দিয়েছি মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ুন গিয়ে। আমি খাটে ঘুমাচ্ছি।
নিজের কথাটা শেষ করে মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় আসলাম। গহনাগুলো খুলে খাটের এক সাইটে লাইন দিয়ে সাজিয়ে রেখে অন্য সাইটটাতে শুয়ে পরলাম আমি।
মাঝ রাত। ঘুমিয়ে আছি। ঘুমের মধ্যে কারও মৃদু গলার কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম আমি।যেন আমার নাম ধরে ডাকছে কেউ।আমি হালকা চোখ মেলতেই চোখে মুখে পানির ছিটা অনুভব করলাম। উঠে বসে চোখের সামনে মানুষটাকে দেখে দিলাম এক ধাক্কা। উনি ছিটকে গিয়ে নিচে পরতে আমি দাড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
-কোন সাহসে আপনি আমার মুখে পানির ছিটা দিয়েছেন? আর বিছানার কাছেও বা এসেছেন কোন সাহসে?
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত দুইটার কাছাকাছি সময়।আমার মেজাজ আরও খারাপ হতে লাগলো। উনার মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে বললাম,
-মাথা ঠিক আছে আপনার? এতো রাতে আমাকে আপনি জাগিয়েছেন।আপনি জানেন আমি রাতে ঘুমালে সকাল দশটার আগে উঠি না?
আমার কথা শেষ হতেই উনি আমার হাতটা ঘুরিয়ে পেছনে নিয়ে মুচড়ে ধরলেন। আমাকে দরজার দিকে ইশারা করে বললেন,
-ওই যে দরজাটা দেখছেন। এখান থেকে সোজা বের হয়ে আপনার বাবার বাড়িতে চলে যান।
আমি হাত ছাড়াবার চেস্টা করে ক্ষিপ্ত মেজাজে বললাম,
-হাত ছাড়ুন আমার।সকাল হলেই আমি চলে যাবো।আপনার মতো একটা গুন্ডার সাথে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার নেয়।
উনি আমাকে ঘুরিয়ে নিজের সামনে এনে বললেন,
-আয়নায় কখনো নিজেকে দেখেছেন? এতো অহংকার কিসের আপনার? মাথার চুল আধ্যেক পেকে গেছে। শরীরের চামড়া ভাজ হতে শুরু করেছে।এরপরও বলেন আপনি সুন্দরী? আমার তো মনে হয় আপনি মাথা মোটা একটা বুড়ি।
-কি বলতে চান আপনি?
-দেখুন আপনাকে কিছু বলার কোনো ইচ্ছা আমার নেয়। আমার একটা ছোট মেয়ে আছে।ছয় বছর বয়স।একমাত্র ওর কথা ভেবেই আমি এই বিয়েটা করেছি।কারণ ও আপনাকে মা হিসেবে পছন্দ করেছিলো।
-বাহ চমৎকার! একটা বাচ্চা মেয়ে চাইলো আর আপনি বিয়ে করে নিলেন? আসল কথা বলতে বুড়া বয়সে আপনার বিয়ে করার সক জেগেছিলো তাই আপনি বিয়ে করেছেন।এখন যান তো।আমাকে ঘুমাতে দিন। অসহ্য লাগছে আপনার কথা শুনতে আমার।
-আপনি কিন্তু বেশি বলছেন।আর কি বলেছিলেন যেন আমাকে? মেঝেতে ঘুমুতে? আমার ঘরে আমি কেন মেঝেতে ঘুমুবো?
-বেশ করেছি বলছি।বিয়ে কেন করেছেন আমাকে? আপনি রাজি না হলে এই বিয়েটাই হতো না।বিয়ের আগে না বলে দিতে পারেন নি?
-হ্যাঁ বলতাম। যদি জানতাম আপনি এতো অসভ্য। তাহলে কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করতাম না আমি।
-কি বললেন আপনি? আমি অসভ্য? আপনি কি হ্যাঁ? একটা আনস্মার্ট, ঝগড়ুটে গেঁয়ো ভুত কোথাকার।আমি তো বিশ্বাসী করতে পারছি না যে আমার মতোন একটা সুন্দর মেয়ের আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে।
,
,
,
,
এভাবে কথা কাটা কাটি আর ঝগড়া করে সারাটা রাত পাড় করে দিলাম।একই তো বিয়ের এমন ভারী সাজ। তার উপর সারাটা দিনের ভীর ভাট্টার মধ্যে ক্লান্ত শরীর। রাতে ঘুমও পড়তে পারলাম না।সকাল হতেই নিজের লাগেজটা গুছিয়ে নিলাম।রুমের দরজা খুলতেই চিৎকার চেচামেচির হট্টগোল শুরু হয়ে গেলো। আমাকে দেখেই দুই তিনটা মেয়ে ছুটে এলো।আর আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
-কাকিমা তুমি খুব মিস্টি দেখতে।দেখলে মনে হয় তোমার বয়স এখনো সেই আঠারো, ঊনিশ।
ওদের কথা শুনে নিজের ভেতরে একটা ভাব আসলো।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললাম,
-এই কথাটা তোমাদের কাকুমণির সামনে বলতে পারবে? কাল রাতে উনি বললেন আমি নাকি বুড়ি, দেখতে অসুন্দর।
মেয়েগুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-মোটেও না।তোমাকে দেখতে এখনো সেই রাজকুমারীর মতোন লাগে।
ওদের কথা শুনতে আমার বেশ ভালো লাগছে।খুব অল্প কথা বলে অনেকটা মিশে গেছি ওদের সাথে। ব্রেকফাস্ট করতে টেবিলে বসে তাকিয়ে শুধু মানুষ গুনছি।এক থেকে শুরু করে একুশ পর্যন্ত এসে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখছি আর কেউ আছে কিনা।বাপরে একটা যৌথ পরিবারে যে এতো মানুষ হতে পারে তা এখানে না আসলে বোঝা হতো না।যাই হোক বউ ভাতের অনুষ্ঠানটা শেষ হলেই আমি চলে যাবো।এই বাড়িতে আর ফিরবো না।
মনে মনে বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে খাবার মুখে দিতে যাবো এমন সময় কোথা থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে এসে পেছনের থেকে আমার চোখদুটো টিপে ধরলো।আর হেসে উঠে বললো,
-বলো তো আমি কে?
আচমকা মেয়েটার আসা।আর আমার চোখ টিপে ধরায় ব্যাপারটাতে আমার অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো।আমি মেয়েটাকে মুহূর্তে ঘুরিয়ে সামনে টেনে এনে কষিয়ে গিলাম গালে এক চড়!
গালে হাত দিয়ে মেয়েটা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সকলের দৃষ্টি আমার দিকে।আমি চিৎকার করে মেয়েটাকে আঙুল উঁচিয়ে সাশন করছি।মেয়েটাকে বলছি আমি,
-ভদ্রতা শেখও নি? তুমি কি আমাকে চেনো? কি মনে করে আমার চোখ টিপে ধরলে পেছনের থেকে এসে? বেয়াদব মেয়ে দেখছো না আমি খেতে বসেছি?
চলবে,,,,,