নিয়তির সংসার,পর্ব_০৫
Mst Liza
???
-আপনার কি মনে হয়, বিয়ে করে আমাকে আপনি দয়া করেছেন? এতোই যদি সুন্দরী হন তাহলে এতোদিন কেন বিয়ে করেন নি? আজ আপনি আমার স্ত্রী। সেটা মানেন আর না মানেন সত্য কখনো মিথ্যা হয়ে যাবে না।একটা কথা মনে রাখবেন আপনার বিয়ে আমার সাথে হয়েছে।মানে স্রষ্টার নির্দেশেই হয়েছে।স্রষ্টা চেয়েছে আপনি আমার স্ত্রী হোন তাই হয়েছেন।আপনার নিয়তিতে লেখা ছিলো আমার স্ত্রী হবেন এজন্য আপনার বিয়ে হয় নি এতোদিন।এখন আমার সংসার, আমার মেয়ে সবকিছু আপনাকে নিজের ভেবে দেখতে হবে।আর কি যেন বলেছিলেন, ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেওয়ার কথা? কক্ষনো পাঠাবো না।কারণ সম্পর্ক বিচ্ছেদ আমি পছন্দ করি না।নিজের সাথে তো মোটেও নয়।
কথাগুলো একদমে বলে নিশ্বাস ফেলে ঘুরে দাঁড়ালেন উনি।হালকা ঘাঢ় ঘুরিয়ে এক পাশ হয়ে আমাকে বললেন,
-আপনি কি যাবেন? নাকি আপনাকে উঠিয়ে কোলে করে নিয়ে যাবো আমি?
আমি মাথাটা উপরে নিচে নাড়িয়ে হাতের ইশারায় চলুন বলে এগোলাম সামনে।উনি এসে আমার হাতটা ধরে বসলেন। আমি কৌতুহল নিয়ে উনার দিকে তাকালেই উনি বললেন,
-স্বামী হই আমি আপনার।এখন বলবেন না আপনার হাত ধরার অধিকার আমার নেই।
আমি চুপ করে আছি।উনি আমার হাত ধরে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসালেন।গাড়ি চলছে। উনি ড্রাইভ করতে করতে মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে চোখ নিয়ে বললেন,
-এরপর আর কখনো যদি আপনাকে আমার বাড়িতে গিয়ে চালাকি করতে দেখেছি তো বেঁধে ইচ্ছা মতো পিটানি দেবো আপনাকে।
-কি বললেন আপনি? অনেক্ষণ ধরে আপনার অনেক কথা শুনছি।আমার গায়ে হাত তুলবেন আপনি? এতোই যদি স্বামীর অধিকার ফলাতে চান তাহলে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলার কথা ভাবেন কি করে?
-আপনাকে সোজা রাস্তায় আনতে যা করতে হয় আমি তাই করবো।
-হয়েছে হয়েছে।আপনি মানুষ না বুঝলেন।আপনি একটা আস্ত জঙ্গলি।এখন চোখটা একটু সামনের দিকে রেখে ড্রাইভ করুন।আপনার অসাবধানতার জন্য আমি অকালে মরতে চাই না।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে। গাড়িটা যখন বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে তখন বললেন উনি,
-দেখুন আমার বাড়িতে ২৩ জন মেম্বার।প্রত্যেকেই আমরা মিলে মিশে থাকি।এমন কিছু করবেন না যেন আমার পরিবারে ফাটল ধরে।
-কি বলতে চান আপনি? আপনার বাড়িতে গিয়ে আমি একজনের সাথে অন্যজনের ফাটল ধরাবো? তাহলে নিচ্ছেন কেন আমাকে? এখানেই নামিয়ে দিয়ে যান আমি বাবার কাছে চলে যায়।
উনি নিশ্চুপ হয়ে রইলেন।গাড়িটা এসে বাড়ির সামনে দাড়ালে আমি নামলেই ছুটে এসে বাচ্চা মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমাকে নিচু হতে বলে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
-আমি জানতাম তুমি ঠিক চলে আসবে নতুন মা।
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি হা হয়ে আছি।এতোকিছু করার পরও মেয়েটা আমাকে এতো ভালোবাসে? অথচ সকালে মেয়েটার গালে চড় মারলাম আমি।দেখতে পেলাম গালটা এখনো লাল হয়ে আছে।নিজের অজান্তেই আমার হাতটা মেয়েটার গালের উপরে চলে গেল।আলতো হাত বুলিয়ে আমিও একটা চুমু একে দিলাম মেয়েটার গালে।পেছনের থেকে উনি বলে উঠলেন,
-এটা আপনার নতুন কোনো চাল নয়তো?
কথাটা শুনেই আমি উঠে দাড়ালাম।শুধু একটা কথা বলে হুড়মুড়িয়ে রুমে চলে আসলাম আমি।
-কোনো কিছুর জন্য আমি চাল দিই না।যেটা আমার মন চায় আমি সেটাই করি।
কথাটা বলে রুমে এসে আলো বন্ধ করে বসে আছি।কিছুক্ষণ পর আলো দেখতে পেয়ে রাগি দৃস্টিতে ঘুরে তাকালাম আমি।তারপর যেটা দেখলাম তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না।এটা কাকে দেখছি আমার সামনে? আমি আস্তে করে উঠে দাড়াতেই উনি চোখে নিজের চশমাটা লাগিয়ে নিলেন।
কিছু বলার ভাষা নেই আমার।একদম স্তব্ধ হয়ে আছি।উনি বলতে শুরু করলেন,
ভার্সিটির প্রথম দিন কিছু সিনিয়র ভাইদের পাল্লায় পড়ে একটা সুন্দরী মেয়েকে প্রপোজ করেছিলাম।যদিও মেয়েটা সেদিন চড় মেরেছিলো আমাকে।কিন্তু পরেরদিন সবটা জানতে পেরে মেয়েটা নিজে আমাকে ছরি বলতে এসেছিলো।এমনকি আমার সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলো।আমরা একই ক্লাসে একই ডিপার্টমেন্টে পরতাম।কখনো ভাবিনি তাকে ভালোবেসে যাবো।বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে ভালোবাসার কথাটা বলবো? তারপর একদিন সে নিজেই এসে বললো আমাকে ভালোবাসি।আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম।মনে হচ্ছিলো পৃথিবীর সব সুখ হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছি আমি।কিন্তু আমার জন্মদিনের দিন কেক কাটার পর সকলের সামনে সে আমার মুখে বিশ্রিভাবে কেক লাগিয়ে দিয়ে বলে আয়নার নিজের মুখটা দেখতে।তার মতোন সুন্দরী মেয়ের যোগ্য নাকি আমি নই।টাইম পাস করতে সে আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলেছে।তাকে অনেক বোঝানোর চেস্টা করেছিলাম সে বোঝে নি। লজ্জায় ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো আমার।তবুও ভালোবাসি তো পারি নি। চেস্টা করেছি অনেক তাকে ফিরিয়ে আনার।আমি অনেক কেঁদেছি আদিবা।চারটা বছর একই ভার্সিটিতে পরেছি আমরা।অনেক অপমান করতো সে আমাকে আমি শুধু তাকে বোঝাতাম সে ভুল করছে।আর সেটাকেও নাটক বলে আমাকে সকলের সামনে সে অপমান করতো।রোজ রাতে তার কথা ভেবে আমার বিছানার বালিশ ভিজতো আদিবা।আমার ভালোবাসাটা নাটক ছিলো না।এতোকিছুর পরও স্রষ্টার কাছে চাইতাম সে যেমনই হোক যেন আমি তাকে পাই।জব পাবার সাথেই বাবা মায়ের কথায় বিয়ে করে নিই।আমি চাইনি বাবা মাকে কস্ট দিতে।আমার বউ অনেক ভালোবেসেছিলো আমায় কিন্তু আমি কখনো তাকে ভালোবাসতে পারি নি।আমার মনে যে আমার প্রথম প্রেম ছিলো।বিয়ের পনের বছর পর আমি আমার বউয়ের কান্না শুনতে পায়। আর সেদিনই বুঝতে পারি আমি তাকে ভালোবেসেছি।ঠিক যেমন আমার প্রার্থণায় অন্য কেউ ছিলো তেমনই আমার স্ত্রীর প্রার্থণায় আমি ছিলাম। তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম।আর আমাদের ভালোবাসার ফসল আমার মেয়ে তুলি।তুলি জন্ম নেওয়ার সাথেই ওর মা মারা যায়।আমি আবার একা হয়ে যায়। বাবা মায়ের কথায় আর তুলির জেদে এই বিয়েটা করতে রাজি হয় আমি।কিন্তু আমি জানতাম না সেই মেয়েটার সাথেই আমার বিয়ে হবে।তুলির মা মারা যাবার পর থেকে নিজের যত্ন নেওয়াই ভুলে গেছি আমি।বয়সের ছাপও পরতে শুরু করেছে শরীরে।
আস্তে করে নাম নিয়ে ছোট্ট করে বললাম আমি,
-আবির।ছরি আবির।
-আমাকে বলতে দেও আদিবা।মেয়েটাকে আমি এখনো ভালোবাসি।ও যেমনই হোক।এখন তো আমার স্ত্রী।
চলবে,