নিয়তির সংসার,পর্ব_০৭(শেষ)

0
4386

নিয়তির সংসার,পর্ব_০৭(শেষ)
Mst Liza

???
ঘুম যখন ভাঙলো আমার, নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করলাম।চোখ উল্টিয়ে দেখতে পেলাম বাবা আমার মাথার কাছে খুব রাগি দৃস্টিতে বসে আছেন।আর আবির! ও আমার থেকে খানিকটা দূরে। আমি উঠে বসে কিছু বলতে যাব বাবা আমাকে বলে উঠলেন,

-আমারই ভুল।তোর ভালো করতে গিয়ে একটা পরিবারকে তোর মতোন একটা বদমেজাজি মেয়েকে সর্পে দিয়েছি।নিজের ভালো কখনোই তুই বুঝবি না।

কথাটা বলে মুখ ফিরিয়ে নিলেন আমার দিক থেকে বাবা। আবির আমার পাশে এসে বসে ছলছল চোখে বলল,

-কাল রাতে তোমার কথাগুলো শুনে আরেকটা বার তোমাকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম আমি।কিন্তু তুমি এখনও সেই নোংরা খেলাটাই খেললে? এভাবে আমাকে কস্ট দিতে ভালো লাগে তোমার? তুমি জানো তোমাকে আমি এখনো ভালোবাসি আর তাই আমার দূর্বল জায়গাটাতেই আঘাত করো বারবার।নিজে জিতবে বলে?

আবিরের কথার কোনো অর্থ বুঝতে পারলাম না আমি।আবিরের কাছে আমি জানতে চাইলাম,

-কি বলছো এসব আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।হসপিটালে আমি কিভাবে আসলাম আবির?

আবির উঠে দাড়িয়ে উল্টো ঘুরে বলল,

-নাটক বন্ধ করও আদিবা।কিচ্ছু বুঝতে পারছো না তাই না? সকালে যখন তোমার মাথার কাছে ঘুমের ওষুধের পাতাটা দেখতে পেলাম আমি, কি অবস্থা হয়েছিলো আমার বুঝতে পারছো?ভেবেছিলাম এবার হয়তো তোমাকে আমি সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম।কিন্তু না তোমাকে তো জিততে হবে। মন ভাঙার খেলা আর কতো খেলবে আদিবা? হসপিটালে না আনলে আমরা তো জানতেই পারতাম না তুমি দুইটা ঘুমের ওষুধ খেয়েছো। বাকি ওষুধগুলো নিশ্চয় ফেলে দিয়েছো।

আবিরের বলা কথাগুলো শুনে এতোক্ষণে বুঝলাম কি করেছি আমি।কিন্তু সামান্য একটা বিষয়কে এতো বড় করে দেখার কি আছে? আবিরকে বললাম আমি,

-সামান্য একটা বিষয়। রাতে ঘুম না আসলে মাঝে মাঝে ওষুধ খাই আমি।কাল রাতে তোমার কথা ভেবেই ঘুম হচ্ছিলো না আমার।অনেক টেনশনে ছিলাম।তাই দুইটা খেয়েছি ওষুধ। ভুল করেছি আমি? এটাও নাটক মনে হলো তোমার? আচ্ছা আবির সবসময় তুমিই সত্যি বলো তাই না।এতোই বলো ভালোবাসো, আমি কস্ট দিই তোমায়।তুমি কি কস্ট দাও না আমায়? আমার এতোগুলো বছরের কস্ট সব একান্তই আমার।তুমি দেখও নি তাই ওগুলো মিথ্যা।আমার থেকে সুখি তো তুমি হয়েছো।বিয়ে করেছো একটা মেয়েও হয়েছে তোমার।আর আমি? তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে, তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে আমার মাথার চুলও পাকিয়ে ফেলেছি।সকলের কাছে এখন আমি অহংকারি, জেদি, বদমেজাজি। আর কাউকে কিছু বোঝানোর নেই আমার।তোমার যা ভাবতে হয় ভাবো।

বাবাকে বললাম,

-তোমাকেও কিছু বোঝাতে চাই না আমি।আবিরের সাথে তুমিও আমাকে ভুল বুঝেছো।তাই আর বললেও তোমাদের কারও কাছে যাবো না আমি।কস্ট দিয়েছো তোমরা আমাকে।এখন আবিরের মতো তুমিও বলো বাবা এটা আমার নাটক।

কাউকে আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করি না আমি।যতোটুকু বোঝানোর, বলার তা হয়ে গেছে।উঠে দাড়ালাম আমি।দু’জনকে একটা বার ভালোভাবে দেখে নিয়ে হসপিটাল থেকে মুহূর্তে ছুটে বেড়িয়ে আসলাম।আর তাকালাম না পিছনে ঘুরে।হসপিটালের সামনে তুলিকে দেখতে পেলাম।আবিরের তিন ভাতিজার সাথে আইসক্রিম খাচ্ছে।আমাকে দেখে কাছে এসে বলল,

-আইসক্রিম খাবা নতুন মা?

আমি হালকা মাথা ঝাকিয়ে কেঁদে উঠলাম। নিচু হয়ে একবার তুলিকে জড়িয়ে ধরে ওর সারা মুখে চুমু দিয়ে গালটা ধরে বললাম,

-আমি কি খুব খারাপ তুলি? এতো জঘন্য আর বদমেজাজি যে আমাকে বিশ্বাস করা যায় না?

তুলি ওর আইসক্রিম ভেজা ঠান্ডা হাতে আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,

-কেঁদো না নতুন মা।তুমি অনেক ভালো।

পেছনের থেকে আবিরের কন্ঠ শুনতে পেয়ে তুলিকে ছেড়ে দিলাম।আবির আমার হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।আমাকে কিছু বলতে যাবে আমি ওর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,

-একদম ছোবে না আমাকে।ভালোবাসো নি আমাকে কখনো।সত্যিকারের ভালো আমিই বেসেছি তোমাকে।বিয়ে কেন করলে আমাকে তুমি আবির? বেশ ভালোই তো ছিলাম।দূরে থেকে যতোটা না কস্ট পেয়েছি তোমাকে ভেবে।কাছে এসে তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি কস্ট দিয়েছো আমাকে তুমি।নিজেকে খুব মহান মনে করো তাই না? হ্যাঁ, আমি খারাপ।তাই খারাপ হয়েই থাকি।আসল কথা কি সেটাও যানি।তুমি আর আমাকে ভালোবাসো না।তুলির জন্য আমাকে তোমার প্রয়োজন।তুলি ভালোবাসে আমায়।

-আদিবা।

-চুপ করো আবির আর কিচ্ছু বলো না।কাল রাত থেকে অনেক কস্ট দিচ্ছো আমায় তুমি।

আমার কথা শেষ না হতেই আচমকা আবির আমার মাথাটা ঝাপটে ধরলো নিজের বুকের মাঝে।আমি নিথর হয়ে আছি।দুচোখ বেয়ে পানি পরছে।কোনো কথা বলছি না।আবিরকে স্পর্শও করছি নি।আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি নিজের মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম।আবির আমার থুতনিটা ধরে নিজের দিকে মুখটা ঘুরিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,

-ছরি।

-কিসের জন্য?

-তোমাকে কস্ট দেওয়ার জন্য। ভুল বোঝার জন্য।

আমি আবিরের শার্টের কলারটা হাতের আঙুলে পেচিয়ে টেনে ধরে বললাম,

-আমাকে বিশ্বাস করো না। ভালোও বাসো না সেই আগের মতোন।

আবির হালকা মাথা নাড়িয়ে বলল,

-বাসবো।একটা সুযোগ দাও আমাকে।

-দেবো, বলে আবিরকে জড়িয়ে ধরলাম।

আর এই মুহূর্ত থেকে আবির, আবিরের মেয়ে আর ওর এতো বড় সংসার সব আমার হয়ে গেলো।সত্যি নিয়তি আজ আমার সাথে।তাই আবারও একবার সুযোগ পেয়েছি।নিয়তিতে না থাকলে দুজন ভালোবাসার মানুষ এতো বছর পর মিলতে পারতো না।সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো হারায় না।সময় ভেদে ফিরে আসে।আল্লাহ হাফেজ।

।।।সমাপ্ত।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here