নীরবতা পর্ব_১৭_১৮
#নাইমা_জাহান_রিতু
শুভ্র বিকেলের সঙ্গে মেঘেদের প্রণয়.. আজ কয়েকদিন যাবৎ প্রচুর দেখা যাচ্ছে। বিকেল শুরু হতে না হতেই মেঘেরা এসে ভীড় জমায় দূর ঐদেশে। যার কারণে রোজ ঠিকমতো প্রাইভেট পড়তেও যাওয়া হচ্ছে না। তবে আজ চৈতালি এসে উপস্থিত হওয়ায় শান্তির বিছানা ছেড়ে উঠতেই হলো অনাকে। ঝটপট জামা বদলে চুলে চিরুনি বোলাতে বোলাতে বললো,
-“আজ না গেলে হয় না?”
-“উহু.. হয় না। দ্রুত কর তো।”
ব্যাগে ম্যানেজমেন্টের একটি খাতা ঢুকিয়ে বেরিয়ে পড়লো অনা। পড়তে তার ভালোলাগে না.. তবে সবাই বলে পড়। প্রেম করতে ভালোলাগে.. অথচ কেউ বলেনা প্রেম কর। অদ্ভুত না? না পড়ে প্রেম-ভালোবাসায় মগ্ন থাকলে বুঝি জীবনে সুখী হওয়া যায় না?
-“তোর কাছে প্রেম-ভালোবাসা মানে কিরে?”
হঠাৎ অনার প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে গেল চৈতালির। তীক্ষ্ণ গলায় সে বললো,
-“তুই কি প্রেমে পড়েছিস?”
-“ধুর! বল না!”
-“কী বলবো?”
-“তোর কাছে প্রেম-ভালোবাসা মানে কী?”
থেমে পড়লো চৈতালি। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে বললো,
-“ভালোবাসা কিছুটা এক পাক্ষিক। এক পক্ষ থেকে কাওকে নিঃস্বার্থ ভাবে চাওয়া, তার ভালোলাগাকে নিজের ভালোলাগা বানিয়ে নেয়ার নামই ভালোবাসা। আর প্রেম দু’পক্ষের সেই ভালোবাসার সমন্বয়।”
-“দারুণ এক লজিক দিয়েছিস তো। তা এসব কোত্থেকে জানলি? কাওকে কখনো ভালোবেসেছিস?”
-“তাহলে কী তোকে জানাতাম না?”
চৈতালির কথার পিঠে কথা বাড়ালো না অনা। আবারও হাটতে শুরু করলো রাস্তা ধরে। সামনেই বড় বাজার। বড় বাজারেই ছোট একটি ঘর নিয়ে সেখানে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান সবুজ স্যার। স্যারের বয়স খুব একটা বেশি নয় এবং এখনো অবিবাহিত। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, স্যার পছন্দ করে চৈতালিকে। সকলের অগোচরে প্রায়ই চৈতালির দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসি দেয়। যেনো তার শরীরের প্রতিটি অংগসমূহ সর্বক্ষণ লজ্জায় ভরপুরই থাকে। ঠোঁট চেপে নিজের হাসিকে নিয়ন্ত্রণে আনলো অনা। তারপর চৈতালির কাঁধে হাত রেখে গলি ধরে এগুতেই নজরে এলো এমাদ। সাথেসাথেই তার মনজুড়ে খেলে গেল খুশির জোয়ার।
-“তুই যা.. আমি আসছি।”
-“কেনো? তুই কই যাবি?”
-“আরে তুই যা না! আমি আসছি তো..”
বেশ জোর করেই চৈতালিকে সামনে এগুতে বলে পেছন ফিরলো অনা। কয়েক কদম এগিয়ে এসে এমাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার মুখের সিগারেট নিজের হাতে নিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
-“সিগারেট খাচ্ছিলে কেনো?”
মৃদু হাসলো এমাদ। দেয়ালের সাথে নিজের শরীর ঠেসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোমার দেখা না পেয়ে বোর হচ্ছিলাম। তাই আরকি…”
মুখ ভেংচি কেটে অনা বললো,
-“তোতার তেখা তা তেয়ে তোর তত্তিলাম… না? আজ যদি না আসতাম, তখন কী হতো? তখন কী সিগারেটের ফ্যাক্টরি খুলে বসতে?”
-“আরে না.. কী যে বলো!”
-“কিছুই বলি না। চুলে চিরুনি লাগাওনি না? এলোমেলো চুলেই বেরিয়ে পড়েছো?”
-“হুম..”
-“দাঁড়াও।”
আশেপাশে তাকিয়ে লোকজনের উপস্থিতি দেখে এমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে চুল গুলো ঠিকঠাক করলো অনা। তারপর তার গাল টেনে বললো,
-“ওরে আমার প্যাঁচাটা! এখন দেখো কত সুন্দর লাগছে দেখতে! তা তুমি এখানে কতক্ষণ হলো এসেছো?”
-“এই দশ মিনিট..”
-“এই দশ মিনিটে এই রাস্তা দিয়ে কয়টি মেয়ে গেছে?”
-“আমি কী করে বলবো!”
-“তুমি সেভাবেই বলবে যেভাবে তাদের ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখেছো!”
-“আমি তো ওসব দেখিনি।”
-“মিথ্যে..”
-“সত্যিই।”
-“তিন সত্যিই?”
-“চার সত্যি। এবার বিশ্বাস হলো তো?”
-“কচু হয়েছে। আমি যাচ্ছি।”
-“সিগারেটটা তো দিয়ে যাও!”
-“এই সিগারেট এখন আমি খাবো।”
বলেই দৌড়ে সামনে এগুলো অনা। তার যাত্রা পথের দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো এমাদ। তারপর উঁচু স্বরে বললো,
-“এই অনা। অনা… কাল কিন্তু কলেজের সামনে থাকবো। জলদি এসো…”
লিমনের সাথে ফোনে কথা বলে মাথায় চিরুনি লাগিয়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে তা লক করলো মেসবাহ। তারপর জোর গলায় কয়েকবার উল্লাসীকে ডাকতেই বেরিয়ে এল সে মুন্নি সরকারের ফ্ল্যাট ছেড়ে। নীল শাড়িজমিনের মাঝে সাদা রঙের সুতোর কাজের একটি শাড়ি পড়েছে সে। সোজা পিঠসমান চুলগুলো খুলে ছড়িয়ে রেখেছে। সাথে কানের একপাশটায় সাদা ফুল গুঁজে দিয়েছে। ঠোঁট ভর্তি করে লাগিয়েছে টকটকে লাল লিপস্টিক, চোখে এঁকেছে গাঁঢ় কাজলের রেখা। অপূর্ব সুন্দর লাগছে। ঈদের দিনটিতেও কি ঠিক এতটাই অপূর্ব দেখাচ্ছিলো উল্লাসীকে? হয়তোবা। তবে কেনো সেদিন তা নজরে আসেনি তার?
-“নাও.. তোমার বউকে সাজিয়ে দিলাম।”
মুন্নি সরকারের দিকে তাকিয়ে সৌজন্য সূচক একটি হাসি দিল মেসবাহ। তারপর এগুলো লিফটের দিকে। এই মহিলা উল্লাসীকে বড্ড পাকামো শেখাচ্ছে। সকালে উল্লাসীর হঠাৎ ওমন আচারণে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো সে। তবে শুক্রবারের নামাযের কথা ভেবে খানিক পরে আবারও ফিরে আসায় উল্লাসীর সেই অদ্ভুত আবদার আবারও শুরু হয়ে গিয়েছিলো। সারাদিন ভর সেই একই কথা বলে বলে জ্বালিয়ে মেরেছে তাকে। এই মেয়ে যে বড় অবুঝ তা আর বুঝতে বাকি নেই তার। তবে অবুঝেরও তো একসময় বুঝ হয়, তা এর কবে হবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেসবাহ লিফটের বোতাম চেপে সরে দাঁড়াতেই তার গা ঘেষে দাঁড়ালো উল্লাসী। চোখজোড়া বুজে সজোরে একটি নিঃশ্বাস ভেতরে টেনে নিয়ে বললো,
-“মাথা ঘুরছে আমার।”
উল্লাসীর হাত আঁকড়ে জোরে একটি চাপ দিল মেসবাহ। তারপর নরম স্বরে বললো,
-“আমি তো আছি.. চোখ খোলো।”
-“মাথা ঘোরে..”
-“চোখ বন্ধ করে রাখলে তো মাথা ঘুরবেই। আমার দিকে তাকাও। আমার সাথে কথা বলো। দেখবে কিছুই ফিল হবে না.. এই মেয়ে, চোখ খোলো।”
সময় নিয়ে উল্লাসীকে পর্যবেক্ষণ করলো লিমন। এরপর মেনুকার্ড হাতে নিয়ে বললো,
-“কী খাবি বল?”
-“নরমাল কিছু অর্ডার কর। যাতে উল্লাসীর জন্য খেতে সুবিধা হয়।”
বলেই পাশ ফিরে উল্লাসীর দিকে নজর দিল মেসবাহ। ক্ষীণ গলায় বললো,
-“খারাপ লাগছে?”
-“উহু..”
-“তাহলে কথা বলছো না যে!”
মেসবাহর হাতের আঙুলের মাঝে নিজের আঙুল ডুবিয়ে চোখ তুলে তার দিকে তাকালো উল্লাসী। অস্পষ্ট গলায় বললো,
-“অস্থির লাগছে…”
-“কেনো? আমি তো আছি..”
-“কী গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছিস দুজনে?”
লিমনের প্রশ্নে মৃদু হেসে মেসবাহ বললো,
-“কিছু না.. অর্ডার করেছিস? দ্রুত ফিরতে হবে।”
-“করলাম তো। তা ছুটির দিনে বউকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েও তোর তাড়াহুড়ো? বড্ড বেরসিক মানুষ তুই! উল্লাসী, আমার এই বেরসিক বন্ধু তোমাকে খুব জ্বালায়… না?”
-“চুপ করতো। এসব কী বলছিস?”
-“আরে ব্যাটা তুই চুপ কর। আমাকে আর উল্লাসীর সঙ্গে কথা বলতে দে। তো যা বলছিলাম, মেসবাহ তোমাকে খুব জ্বালায়?”
মাথা নেড়ে উল্লাসী অসম্মতি জানাতেই ফের প্রশ্ন করলো লিমন।
-“তাহলে কি তুমি জ্বালাও?”
-“না.. আমি কেনো উনাকে জ্বালাবো?”
-“তাই তো! তুমি তো আর ছোট বাচ্চা নও। তবে আমার বন্ধু কিন্তু তোমাকে বাচ্চাই ভাবে। পারলে তোমাকে কোলে করে পুরো দুনিয়া ঘুরলে বাঁচে!”
খিলখিল করে হেসে উঠলো উল্লাসী। লোকটি তো বেশ মজার!
-“তুমি হাসছো? আর আমি কাঁদি.. ভাবি আমার একটা বাচ্চা বউ হলে কী হতো!”
-“আপনার বউ আছে?”
-“থাকবে না? আছে আছে.. বউ আমার বাচ্চা নয়। বুড়ো বউ।”
পাশ থেকে কপাল কুঁচকে মেসবাহ বললো,
-“এই.. তুই কী শুরু করলি! থাম তো এবার!”
-“তুই চুপ করতো.. এই উল্লাসী, আমাকে ভালো করে দেখো তো! কী.. দেখেছো?”
একমুহূর্ত লিমনকে দেখে উল্লাসী বললো,
-“হ্যাঁ..”
-“আমাকে দেখে কী মনে হলো তোমার?”
-“কিছুই তো মনে হয়নি।”
-“সুন্দর অসুন্দর কিছুই না?”
-“হয়েছে। সুন্দর মনে হয়েছে।”
-“গ্রেট। এবার মেসবাহর দিকে তাকাও। তারপর বলো, আমাদের দুজনের মাঝে কে বেশি ফর্সা?”
সময় নিল না উল্লাসী। সাথেসাথেই বললো,
-“আপনি।”
-“তার মানে মেসবাহর চেয়ে আমিই সুন্দর৷ এই তো?”
আবারও পাশ থেকে কপাল কুঁচকে মেসবাহ বললো,
-“এসব কী শুরু করলি তুই?”
-“চুপ কর তো তুই। আচ্ছা উল্লাসী.. তোমার পাশে মেসবাহ না থেকে আমি থাকলে কেমন হতো? সেই হতো না?”
উল্লাসীর জবাব দেবার আগেই উঠে দাঁড়ালো মেসবাহ। শক্ত গলায় লিমনকে বললো,
-“এদিকে আয়। কথা আছে।”
-“কী কথা? এখানেই বল! সুন্দরী ভাবিকে ফেলে তো উঠতে মন টানে না!”
-“ব্যাটা তুই উঠবি?”
মেসবাহ ক্ষেপেছে বুঝতে পেরে উঠে দাঁড়ালো লিমন। দু’হাতজোড়া প্যান্টের পকেটে গুঁজে ধীরেসুস্থে এগুলো মেসবাহর পিছুপিছু।
-“তুই কী করছিস এসব?”
আকাশ থেকে পড়ার ভান করে লিমন বললো,
-“কী?”
-“বুঝিস না কী? আমার বউ, আমি তার পাশে.. অথচ তুই কিনা নিঃসংকোচে ফ্লার্ট করে যাচ্ছিস!”
মেসবাহর কথার তাল না দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে ক্ষীণ গলায় গেয়ে উঠলো লিমন,
-“তোমার কেনো জ্বলেরে বন্ধু তোমার কেনো জ্বলে? তোমার বাচ্চা বউ কারো হলে, তোমার কেনো জ্বলে?”
-“তুই কিছু বললি?”
-“উহু.. গান গাইছি। গান”
-“বাজে বকিস না তো! আমার কোথাও জ্বলে না। আমার জ্বলবে কেনো শুধুশুধু?”
ফোন আবারও পকেটে পুড়ে মেসবাহর কাঁধে হাত রাখলো লিমন। পাশ ফিরে উল্লাসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“বউ তোর কোনো দিক থেকেই বাচ্চা নেই। এমন সুন্দর একটা বউ পাশে রেখে তুই ঘুমাস কেমনে? বলিকি.. এসব জ্বলাজ্বলি বন্ধ করে এবার তোর বাচ্চা বিড়ালটা মেরেই ফেল।”
বলেই মেসবাহর মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলো লিমন। যাক! কাজে দিয়েছে। ব্যাটা প্রচুর ক্ষেপেছে। এতই ক্ষেপেছে যে খানিকক্ষণ এভাবে থাকলে ফুলে ফেঁপে বেলুন হয়ে আকাশে উড়াল দেবে। একগাল হেসে মেসবাহর কাঁধে চাপড় দিল লিমন। তারপর কোমল গলায় বললো,
-“জোক্স আ পার্ট। চলো বন্ধু, সুন্দরী ভাবি আমার অপেক্ষা করছে। ভাবির কাছেই যাই।”
(চলবে)
#নীরবতা
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_১৮
সময়ের সাথে মানুষের অভ্যাস বদলে যায়, ভালোলাগাগুলো পাল্টে যায়। ছাত্র অবস্থায় একসময় রাতের এই ঢাকায় রিকশা নিয়ে এলোমেলো ভাবে ঘোরা হতো। তবে আজকাল নানান দায়বদ্ধতায় বাঁধা পড়ায় তা আর হয়ে উঠে না। কেনো যেনো আগের মতো ইচ্ছেও করে না। কিন্তু আজ করছে। সারাটা রাত রিকশায় করে উল্লাসীর পাশে বসে পুরো ঢাকায় ঘুরতে ইচ্ছে করছে। উল্লাসীর কোমরে হাত চাপিয়ে তাকে নিজের দিকে টানতে ইচ্ছে করছে৷ ইচ্ছে করছে মৃদু বাতাসের ছোঁয়াকে উপেক্ষা করে উল্লাসীর চুলের মাঝে নাক ডোবাতে। দেবে কি সে তাকে এসবের অনুমতি? বাতাসে সজোরে একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে হাতের সিগারেট ফেলে দিল মেসবাহ। তারপর পাশে তাকিয়ে বললো,
-“রাতের ঢাকা অপরূপ সুন্দর না?”
-“হ্যাঁ.. বেশ লাগছে আমার।”
-“আগামী শুক্রবার আবার বেরুবো।”
চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো উল্লাসীর। ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
-“সত্যিই?”
-“হ্যাঁ.. তবে সেদিন লিমন থাকবে না।”
-“শুধু আপনি আর আমি?”
-“হ্যাঁ।”
-“ঠিকাছে।”
ফুটপাতের রাস্তার দিকে নজর দিল মেসবাহ। লিমন আজ যথেষ্ট জ্বালিয়েছে তাকে। এটাসেটা নানান কথাবার্তার মাঝে ফুটিয়ে তুলেছে, উল্লাসী সুন্দর। এবং উল্লাসীর মতো সুন্দরী এক মেয়ের পাশে তার মতো সুদর্শন এক পুরুষকেই মানায়। বিষয়টি হয়তো হাসি ঠাট্টার হলেও একদম ভালোলাগেনি মেসবাহর। লিমনের স্ত্রীর সঙ্গে তো বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে তার। তবে কখনোই এমন বিশ্রী রসিকতা তো করেনি সে। আর না কখনো করবে…
-“লিমনকে কেমন লাগে তোমার?”
হঠাৎ মেসবাহর এমন প্রশ্নে তার দিকে তাকালো উল্লাসী। সহজ গলায় বললো,
-“ভালোই তো লাগে। মানুষটা অনেক মজার।”
-“আর আমাকে?”
-“আপনিও ভালো.. তবে উনার মতো মজার নন।”
-“অহ। আচ্ছা.. লিমন কি সত্যিই আমার চেয়ে সুন্দর?”
-“হ্যাঁ.. উনি তো অনেক বেশি ফর্সা।”
মন অসম্ভব রকমের খারাপ হয়ে এল মেসবাহর। তবে এর ঠিক যৌক্তিক কারণ খুঁজে পেল না সে। লিমন সুন্দর। এবং তার চেয়ে কয়েকগুনে বেশিই সুন্দর। উল্লাসী তো ভুল কিছু বলেনি! তাহলে শুধুশুধু খারাপ লাগছে কেনো তার? উল্লাসীর মুখে লিমনের প্রশংসা শুনে? লম্বা একটি দম ছেড়ে আরেকটি সিগারেট ধরালো মেসবাহ। চলন্ত রিকসায় বসে সিগারেট ফোঁকার মতো মজা এজীবনে আর কিছুতে আছে বলে আগে মনে হতো না। তবে আজ ভিন্ন কিছুর সুখ অনুধাবন করতে পারছে সে। এসুখ সকল সুখের উর্ধ্বে।
-“কিছু খাবে?”
-“উহু..”
সিগারেট শেষ করলো না মেসবাহ। আবারও তা রাস্তায় ফেলে শীতল গলায় বললো,
-“কেনো? ফুচকা, চটপটি বা আইসক্রিম.. কিছু একটা খাও।”
-“ঠিকাছে, খাবো। জানেন, অনা আপা যে কলেজে পড়ে তার সামনে রোজই ফুচকাওয়ালা ফুচকা, চটপটি নিয়ে আসে? তবে ছোটমা ওসব খাবার জন্য টাকা দিত না। আমি প্রায়ই দেখেছি ওসব, কিন্তু কখনো খাওয়া হয়নি।”
বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো মেসবাহর। ছোটমার কথা এর আগে অনেকবারই বলেছে উল্লাসী। তবে প্রায়ই তা উপেক্ষা করে গেছে সে। জিজ্ঞেস করবে করবে করেও করা হয়ে উঠেনি। একজন সন্তান কতটা নিঃস্ব তার মাকে ছাড়া তা আজ খুব করে অনুভব করতে পারছে। বুকচিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁট হালকা প্রশস্ত করলো মেসবাহ। তারপর বললো,
-“চলো.. আজ আমি খাওয়াই তোমাকে। মামা, রিকশা এক সাইড করে থামাও তো।”
চুলের ফুল খুলে বাসায় পড়ার জামা হাতে ওয়াশরুমে ঢুকলো উল্লাসী। অসম্ভব মজার ছিল আজকের বিকেল। প্রথমে অস্বস্তি হলেও পরবর্তীতে তা কাটিয়ে উঠে সময়কে বেশ উপভোগ করেছে। উচ্ছ্বাসে ভরপুর মনে মাথার চুলগুলো হাত খোপা করলো উল্লাসী। তারপর শাড়ি খুলতেই নজরে এল শাড়ির মাঝবরাবর লেগে থাকা দাগ। দ্রুত জামা বদলে কল ছেড়ে শাড়ি এবং পেটিকোট ধুয়ে ফেললো সে। ভাগ্যিস উনার নজরে পড়েনি এসব। নয়তো কেলেংকারী হয়ে যেত!
ব্যালকনিতে কাপড় মেলে ঘরে এল উল্লাসী। গ্রাম থেকে আনা কাপড়ের ব্যাগ খুঁজতে সে পা বাড়ালো পাশের ঘরের দিকে। ব্যাগপত্র এখনো যেভাবে আনা হয়েছিলো সেভাবেই রয়েছে ওঘরে। যখন যা দরকার পড়ে তা ব্যাগ থেকেই বের করা হয়। অবশ্য এতে নানান ঝামেলা পোহাতে হয় তাকে। কোনো কাপড় ঠিকঠাক ভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। যার দরুন পুরো ব্যাগের কাপড়চোপড় বের করতে হয়। এবং আবারও তা পুনরায় গুছিয়ে রাখতে হয়। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে ধীরেসুস্থে মেঝেতে বসলো উল্লাসী। তল পেটে হালকা ব্যথা অনুভব হচ্ছে। যা কিছুক্ষণের মাঝে আরও বাড়বে। অসহনীয় এই ব্যথা নিয়ে আবারও তিন রাত জেগে কাটাতে হবে। ভাবতেই উল্লাসীর চোখমুখ ছোট হয়ে এল। কেনো এসব হয় মেয়েদের? এসব না হলে কী এমন ক্ষতি হতো তা হাজার ভেবেও মাথায় আসে না তার। কপাল কুঁচকে পুরো ব্যাগ হুলস্থুল করে খুঁজেও মাসিকে ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দেখা পেল না উল্লাসী। তাহলে কী সেসব নিয়েই আসেনি সে? মনে পড়ছে না। তবে বিয়ের আগের রাতে ছোটমার কথায় ব্যাগ গুছিয়েছিল সে। তাতে মোটামুটি তার সকল ব্যবহার্য জিনিসই উঠিয়েছিল। তাহলে এসব কিভাবে বাদ পড়ে গেলো?
রাত দশটার খবর শেষ করে সোফা ছেড়ে উঠলো মেসবাহ। এগুলো শোবার ঘরের দিকে। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর উল্লাসী একবারও আজ টেলিভিশন দেখতে ড্রইংরুমে আসেনি। বিষয়টি খানিকটা গোলমেলে লাগলেও টক শো দেখায় এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিল সে যে উল্লাসীর ব্যাপারটি মাথা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করছে কী একা ঘরে মেয়েটি? এতক্ষণ যাবৎ একবারও যে দেখা মিললো না তার!
-“কী ব্যাপার? আজ তোমার ভূতেরা ভূতগিরী দেখাতে আসেনি নাকি? একাই ঘরে বসে রয়েছো যে!”
মেসবাহর প্রশ্নের জবাব দিল না উল্লাসী। বিছানায় গুটিসুটি মেরে দু’হাতে পেট চেপে চুপচাপ বসে রইলো। ওদিকে উল্লাসীর উত্তরের অপেক্ষা করে মেসবাহ এগুলো রান্নাঘরের দিকে। রাত অনেক হয়েছে। খাওয়াদাওয়ার পালা এবার চুকাতে হবে। আসার সময় রাতের জন্য হালকা খাবার কিনে এনেছিল তারা। সেসব ফ্রিজ থেকে বের করে ডাইনিংয়ে রেখে জোর গলায় কয়েকবার উল্লাসীকে ডেকে উঠলো মেসবাহ। তবে ঘর থেকে উল্লাসীর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কুঁচকানো কপাল নিয়ে মেসবাহ এগুলো তার খোঁজে।
-“কী ব্যাপার? আসছো না যে! খাবে না?”
এবারো জবাব দিল না উল্লাসী। আতংকিত মনে চুপচাপ বসে রইলো নিজের জায়গায়। বিছানা ছেড়ে উঠলেই সবটা দেখে ফেলবেন উনি। মাসিকে ব্যবহার্য জিনিসপত্রাদি না থাকার কারণে পুরো পায়জামা জামা লেপ্টে গেছে। বিছানার চাদরের অবস্থাও নাজেহাল। যেখানে এসব ব্যাপারে পুরুষদের সামনে টু শব্দ করাও পাপ সেখানে বিছানার চাদরের এঅবস্থা দেখলে কী হবে! ভেবেই ভয় লাগছে। এদিকে তল পেটের ব্যথায় অসহ্য লাগছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে ভেতরটা। তবে কিচ্ছুটি করার নেই। ষষ্ঠ শ্রেণীতে থাকতে যখন প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার পর পেটের ব্যথায় কাতরাচ্ছিল সে তখন বারবার ছোট মা বলেছিল, এই অসুখের ব্যাপারে তোর বাবারে বলবি না। এইটা একটা লজ্জার কথা। কোনো পুরুষ মানুষ এসব জানলে তোর পেটের ব্যথা আরও বাড়বো। মেয়েগো আল্লাহ এসব ব্যথা মুখ বুজে চুপচাপ সহ্য করার আদেশ দিছে.. বুঝছিস? তারপর থেকে মাসের পর মাস চুপচাপ মুখ বুজে অসহনীয় এই ব্যথা সহ্য করলেও ছোটমার নির্দেশ মেনে চলেছে সে। কখনোই কিচ্ছুটি জানায়নি বাবাকে। সেখানে উনাকে কিভাবে জানাবে?
-“কী হয়েছে উল্লাসী? শরীর খারাপ লাগছে?”
উল্লাসীর পাশে বসে তার কপালে হাত রাখলো মেসবাহ। তবে গাড়ে জ্বরের উপস্থিতি না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“জ্বর তো নেই।”
-“আপনি খেয়ে নিন। আমি খাবো না।”
-“কেনো? খাবেনা কেনো? এতবড় একটি রাত না খেয়ে কাটাতে পারবে?”
-“পারবো।”
-“পারবে না.. দেখি ওঠো।”
উল্লাসীর হাতের দিকে দৃষ্টি দিতেই মেসবাহর নজরে এল দু’হাতে পেট চেপে জড়সড় হয়ে বসে রয়েছে সে। চোখমুখে তার কোথাও একটি ভীতি ফুটে উঠেছে।
-“পেটে ব্যথা করছে?”
মেসবাহর প্রশ্ন শোনামাত্র মাথা নেড়ে উল্লাসী বললো,
-“উহু…”
-“তাহলে দু’হাতে পেট চেপে বসে রয়েছো কেনো?”
হাত সরিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বসতেই তল পেটের ব্যথা মাথা নাড়া দিয়ে উঠলো। ঠোঁট চেপে চোখজোড়া বুজে উল্লাসী ক্ষীণ স্বরে বললো,
-“আপনি যান। আমি খাবো না।”
-“আশ্চর্য! তোমার কিছু হয়েছে। কী হয়েছে তোমার? আমাকে বলো।”
-“কিছু হয় নি। আপনি যান।”
-“আমি একা নই.. তুমিও যাবে।”
জোর করে উল্লাসীকে বিছানা থেকে উঠানো মাত্র চোখজোড়া প্রশস্ত হয়ে এল মেসবাহর। চাদরের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উল্লাসীর দিকে তাকালো সে। চোখভর্তি জল নিয়ে চুপচাপ তার টিশার্ট খামচে দাঁড়িয়ে রয়েছে উল্লাসী। ভয় পাচ্ছে মেয়েটি। প্রচুর ভয় পাচ্ছে…
-“পিরিয়ড হয়েছে?”
মেসবাহর প্রশ্নের জবাবে মাথা নাড়ালো উল্লাসী। ভয়ে তার আত্মা শুকিয়ে আসছে। কী করবে এখন সে?
-“না বলছো কেনো? তাছাড়া এত ভয়েরই বা কী আছে? প্যাড এনেছো?”
প্যাডের কথা শুনলেও কখনোই তা ব্যবহার করা হয়ে উঠেনি উল্লাসীর। প্রথমবার ছোটমা তার পুরোনো শাড়ি কেটে দিয়েছিল। প্রায় এক বছর তা দিয়েই চালানোর পর দ্বিতীয়বার সুহার পুরোনো জামা কেটে তাই ব্যবহার করে এসেছে সে। তবে উনি প্যাডের কথা কিভাবে জানলেন? পুরুষদের তো এসব জানার কথা নয়!
-“আচ্ছা.. তুমি চুপচাপ বসো। আমি আসছি। আর শোনো ভয়ের কিছু নেই। আমি আসছি।”
উল্লাসীকে বসিয়ে বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে মানিব্যাগ নিয়ে দ্রুত বাসা ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো মেসবাহ। আপাতত উল্লাসীর কাছে এসব প্রশ্ন করা অহেতুক। গ্রামে জন্ম, সৎমার ঘর.. এক্ষেত্রে বিলাসবহুল জীবন তো তার পাবার কথা নয়। বাদবাকি রইলো চিন্তাভাবনা.. তাতে ওর ছোটমা কী বলে দিয়েছেন তা না হয় উল্লাসীর মুখ থেকেই শোনা যাবে..
একটি শপিং ব্যাগ উল্লাসীর হাতে দিয়ে তাকে পরিষ্কার হয়ে আসতে বললো মেসবাহ। তারপর এগুলো পাশের ঘরের দিকে। মেয়েটির জামাকাপড়ের জন্য আলমারিতে কিছু তাক খালি করে দিতে হবে। আসার পর জামা কাপড় ব্যাগ থেকে কিছুই নামায়নি সে। হয়তোবা সাহস করে উঠতে পারেনি অথবা এসব মাথাতেই আসেনি তার। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে একটি কামিজ নিয়ে আবারও শোবার ঘরে ফিরলো মেসবাহ। এবং তা উল্লাসীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-“দ্রুত যাও।”
দাঁড়াতে একরাশ অস্বস্তি এসে চেপে ধরলেও ধীরেসুস্থে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো উল্লাসী। পেট আঁকড়ে এগুলো ওয়াশরুমের দিকে। অপরদিকে উল্লাসী উঠার পর বিছানার চাদর তুলে তা এককোনায় রেখে নতুন চাদর বের করে তা বিছানায় বিছালো মেসবাহ। তারপর এগুলো রান্নাঘরের দিকে। বেশ ক’বছর আগে পায়ের কিছু অসুবিধার কারণে হট ওয়াটার বোতল কিনেছিল সে। যা দিয়ে প্রায়ই সেঁক নিয়ে যেমন পায়ের সমস্যা লাঘব করতো তেমন শীত কালেও হাত পা গরম করার কাজে ব্যবহার করতো। তবে বোতলটি কোথায় রাখা হয়েছে তা ঠিক মনে পড়ছে না। চুলোয় গরম পানির হাঁড়ি উঠিয়ে দিয়ে আবারও ঘরে ফিরে এল মেসবাহ। পুরো ঘরজুড়ে চিরুনী অভিযান শুরু করলো বোতলের আশায়।
-“দাও.. টাউয়েল আমার হাতে দাও। আমি মেলে দিচ্ছি।”
মেসবাহর কথায় তার হাতে টাউয়েল দিয়ে বিছানায় এসে বসলো উল্লাসী। গোসলের পর একটু আরাম অনুভব হলেও তল পেটের ব্যথায় অস্থির লাগছে। সটানভাবে পেট আঁকড়ে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো উল্লাসী। কিছুই ভালোলাগছে না তার। খুব অসহায় লাগছে নিজেকে।
-“উল্লাসী? তোমার পেট ব্যথা কী খুব বেশি?”
-“হু..”
-“সহনীয় না অসহনীয়?”
-“জানিনা। কিচ্ছু জানি না।”
ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে পাশের ঘরে গিয়ে ঔষধের কার্টুন খুলে এলজিনের একটি পাতা বের করলো মেসবাহ। তারপর এক গ্লাস পানি হাতে উল্লাসীর পাশে বসে বললো,
-“এটা খাও।”
-“কিচ্ছু লাগবে না আমার। আপনি এখান থেকে যান।”
ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো উল্লাসী। সেদিকে তাকিয়েই হাতের গ্লাস নামিয়ে রাখলো মেসবাহ। নরম গলায় বললো,
-“এটা খেয়ে নাও। আর আমি পানি গরম দিয়েছি। বোতলে ঢেলে দিয়ে যাচ্ছি। তল পেটে সেঁক নিলেই ব্যথা অনেকটা কমে আসবে।”
-“আপনি কী করে জানলেন? আপনি জানার পরই আমার পেটের ব্যথা এত বেশি হয়েছে!”
-“কে বলেছে এসব তোমায়? নিশ্চিত ছোটমা!”
-“হ্যাঁ..”
-“তো এটা বলে দেয়নি স্বামীর কাছে এসব বিষয় নিয়ে হেজিটেট অর্থাৎ সংকোচ বোধ করার কিছু নেই।”
-“কেনো? থাকবে না কেনো? স্বামী কি পুরুষ নয়?”
উল্লাসী ফোঁপাতে ফোপাঁতে একথা বলতেই হেসে উঠলো মেসবাহ। জোর করে তাকে উঠিয়ে ঔষধ মুখে পুড়ে দিয়ে বললো,
-“আমাদের সমাজে পিরিয়ড হওয়াকে একটি মেয়ের দুর্বলতা হিসেবে ভাবা হয়। যদিও তেমনটি নয়। এই পিরিয়ড নামক শব্দটি আছে বলেই আজ আমি এই পৃথিবীর বুকে এসেছি, তুমি এই পৃথিবীর বুকে এসেছো। তাহলে কেনো একে নিজের দুর্বলতা ভাববে? বরং একে নিজের সবলতা মনে করে মাথা উঁচিয়ে চলাই কী প্রতিটি নারীর উচিৎ নয়? কেনো আমরা সবাই পিরিয়ডকে দুর্বলতা ভাবি? কেনো মেয়েরা দোকানে প্যাড কিনতে গিয়ে লজ্জা পায়? যেনো পিরিয়ড এমন একটি ব্যাপার যেটি কাওকেই বলা যাবে না। বিশেষ করে পুরুষদের তো না-ই। অথচ যে শারীরিক প্রক্রিয়াকে মানুষ নোংরা ভাবে, অসুস্থতা ভাবে.. সেটি না ঘটলে এই পৃথিবীতে বংশ বিস্তারের প্রকিয়াই বন্ধ হয়ে যেত।”
অবাক চোখে মেসবাহর দিকে তাকিয়ে তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো উল্লাসী। সত্যিই কী এটি তার অসুস্থতা নয়? তবে যে ছোটমা বলেছিল এটি মেয়েদের অসুখ!
-“পুরুষেরা জানলেই যে পেটের ব্যথা বাড়বে এটি আসলে কুসংস্কার। তাছাড়া শুধু পিরিয়ডের ক্ষেত্রে নয়, আমি তোমার স্বামী। সেক্ষেত্রে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র সমস্যা হলেও তুমি সেগুলো আমাকে বলবে। তবেই না আমাদের মাঝের বন্ধন দৃঢ় হবে।”
মাথা নেড়ে উল্লাসী মেসবাহর কথায় সম্মতি জানাতেই উঠে পড়লো সে। বোতলটি পাওয়া গেছে। তবে তাতে ধুলোবালির স্তর পড়েছে। ধুয়ে মুছে ঠিকঠাক করে তবেই পানি উঠাতে হবে তাতে।
বোতল ধোয়ার কাজে লেগে পড়লো মেসবাহ৷ সময় নিয়ে ধুয়ে তাতে পানি উঠিয়ে ফিরে এল শোবার ঘরে। উল্লাসীর হাতে বোতলটি দিয়ে বললো,
-“খাবার আনি?”
-“খেতে ইচ্ছে করছে না।”
-“না করলেও সামান্য খেয়ে নাও।”
-“উহু…”
-“কিসের উহু? না খেলা আমি কিন্তু বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাবো। তখন থেকো রাতে একাএকা।”
কপাল কুঁচকে ফেললো উল্লাসী। অভিমানী সুরে বললো,
-“যান না.. যান! আমিও মুন্নি ভাবিকে ডেকে আনবো।”
(চলবে।)