নীরবতা পর্ব_৩০

0
1997

নীরবতা পর্ব_৩০
#নাইমা_জাহান_রিতু

-“হাতটা দাও..”
মেসবাহর কথায় হাত বাড়াতেই সুহার হাতে চকলেট পুরে দিল সে। চোখমুখে প্রশান্তির ছায়া ফুটিয়ে বললো,
-“ছিঁড়ে দেই?
সুহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই চকলেটের প্যাকেট ছিঁড়ে তা আবারও তার হাতে ধরিয়ে দিল মেসবাহ। ছোট সুহাকে কোলে চাপিয়ে এগুলো ড্রইংরুমের দিকে। ছোট্ট এই কোমলমতি মেয়েটিকে বেশ মনে ধরেছে তার। হরিণীর মতো টানাটানা চোখ দুটো দিয়ে যখন ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকায় তখন বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠে। ইচ্ছে হয় পৃথিবীর সকল সুখ এনে ছড়িয়ে দিতে তার পায়ের তলায়। ছোট এই মেয়েটি যে সুখের দেখা পায়নি কখনোই! সোফায় সুহাকে বসিয়ে তার পাশে বসলো মেসবাহ। টেলিভিশনে কার্টুন ছেড়ে তার দিকে চেয়ে বললো,
-“বিকেলে কিছু খেয়েছো?”
-“হু…”
-“এখন কি ক্ষুধা পেয়েছে?”
-“উহু…”
-“এই চকলেটটা খেতে ভালোলাগছে?”
-“হু।”
মাথা নেড়ে সুহার জবাবগুলো দেখে সামান্য হাসলো মেসবাহ। টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“বড়টা দেখছো না? ওই যে বিড়ালের মতো.. ওটা টম। আর ছোট পিচ্চি ইদুরটা হলো জেরি। দেখো.. সারাসময় কিভাবে এরা একে অপরের পিছনে লেগে থাকে!”
মেসবাহর কথায় আগ্রহী চোখে টেলিভিশনের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো সুহা। তবে তাতে বেশি একটা মজা খুঁজে না পেয়ে সে আবারও মেসবাহর দিকে ফিরে মাথা নেড়ে নাকমুখ কুঁচকে ফেললো।
-“ভালো লাগছেনা দেখতে?”
-“হু..”
-“ঠিকাছে। আমরা টিভিই অফ করে দিলাম।”
ঠোঁটে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটিয়ে সুহা দু’হাত বাড়িয়ে দিল মেসবাহর দিকে। একহাতের তালুতে অন্য হাতের তালু লাগাতেই পাশ থেকে মেসবাহ বলে উঠলো,
-“খেলতে ইচ্ছে করেছে? কী খেলবে? দশ বিশ?”

ডাইনিং থেকে মেসবাহ এবং সুহার মাঝের মিষ্টি বন্ধন দেখে বিবর্ণ ঠোঁটে হাসি ফুটলো উল্লাসীর। সুহা এবাড়িতে দিন তিনেক হলো এসেছে। এর মাঝে সুহার না বলা কথাগুলো বেশ বুঝতে শিখে গেছে মেসবাহ। প্রতি রাতেই তার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে তবেই বাড়ি ফেরে সে। তারপর সাথে নিয়ে বসে রাতের খাবারের আগ পর্যন্ত টেলিভিশন দেখে। খেলাধুলায় সঙ্গ দেয়। মাঝেমধ্যে বেশ খুনসুটিও চলে দুজনের মাঝে। যা দেখলেই মনের ভেতরটায় প্রশান্তিতে ভরে উঠে উল্লাসীর। যেখানে প্রত্যেকেই সুহার মাঝের প্রতিবন্ধকতার জন্য তাকে ধুর ছাই ধুর ছাই করেছে, সেখানে এই প্রথম কেউ এতটা কাছে টানছে তাকে! অপরদিকে সুহাও মেসবাহ বলতে পাগল। সারাদিন তার সঙ্গে সময় কাটালেও খেলার ফাকে বারবার জিজ্ঞেস করে বসে কখন আসবেন উনি? রাতে বাড়ি ফিরলেই একদম শরীরের সাথে লেপ্টে বসে থাকে। দুজনের মাঝের এই ভালোবাসার মুহূর্ত দেখলেই আত্মা জুড়িয়ে যায় উল্লাসীর। সে এ পৃথিবীতে যদি কাওকে মনের অন্তস্তল থেকে ভালোবেসে থাকে সে শুধুমাত্রই সুহা। তার খুশিতে অনায়াসে নিজের জান কুরবান করতেও সে ভাববে না দুবার। তার সেই কলিজার টুকরোকে যেভাবে মেসবাহ আগলে রাখে তা বেশ প্রশান্তি এনে দেয় তার বুকজুড়ে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ডাইনিং ছেড়ে শোবার ঘরে এল উল্লাসী। তার নানা সিকান্দার মির্জা এবং ইভানার বলা প্রতিটি কথা নিয়ে এই দু’রাত ভেবেছে সে। প্রচুর ভেবেছে। কষ্ট দেবার মানুষের অভাব নেই এই জগতে। অনেকে আসবে কষ্ট দিয়ে চলেও যাবে। তবে সেই নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে ধরে তার সবটা আপন করে নেবে যে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসতে জানে। দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেই যে সাথেসাথে তাদের মাঝে ভালোবাসা আপনাআপনি তৈরি হয়ে যায়, তার এই ধারণা ভুল। বিপরীত স্বভাবের মানুষটির প্রতি ভালোলাগা, তার প্রতি ভালোবাসা সবটাই আসে নিজের ভাবনার দ্বারা। আজকাল সে ভাবে মেসবাহকে নিয়ে। তার করা কার্যক্রমে অভিভূত হয়। ভালোলাগা এমনই জিনিস যা মন দিয়ে অনুভব করলে এর গভীরতা শুধু বাড়তেই থাকে। যা তার ক্ষেত্রেও ঘটছে। দিনেদিনে মেসবাহকে নিয়ে তার ভাবনার গতিপথ গহীন থেকে গহীনতর হচ্ছে…

এমাদের সঙ্গে আজ রাতে পালিয়ে যাবার কথা থাকলেও তা আরও একদিন পেছাতে হয়েছে। এনিয়ে অবশ্য এমাদকে এক দফা ঝেড়েছে অনা। গভীর রাতে সকলে ঘুমোলে না হয় আরেকদফা ঝেড়ে দেবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও হঠাৎ করে একদিন পেছানোর অবশ্য যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। তবে তা গায়ে মাখতে নারাজ অনা। আজ রাতে বেরুলে কাল রাতের মাঝেই বিয়ের কাজটা মিটে যেত! সেখানে আরও চব্বিশটা ঘন্টা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে তা ভেবেই অস্থিরতায় ফেটে মরছে সে।
-“কী রে? এভাবে ঘরের ভেতর বারবার চক্কর কাটছিস কেন?”
চৈতালির গলার স্বর শুনতে পেয়ে নিজেকে শান্ত করলো অনা। লম্বা একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো,
-“তুই এত রাতে হঠাৎ?”
-“ভালোলাগছিল না.. তাই চলে এলাম। মাকে বলে এসেছি আজ তোর সঙ্গেই ঘুমোবো।”
কপাল কুঁচকে ফেললো অনা। ভাগ্যিস পালানোর দিন একদিন পেছানো হয়েছে। নয়তো আজ বারোটা বেজে যেত তার!
-“দেখি সর। শুতে দে।”
অনা সরে বসতেই বিছানায় শরীর মেলে দিল চৈতালি। উদাস দৃষ্টিতে ফ্যানের দিকে চেয়ে বললো,
-“মুহিব ভাই আবার আসবে কবে রে?”
-“জানি না.. কেনো বল তো?”
-“এমনিই.. আচ্ছা শোন। তুই একদিন আমায় বলেছিলি আমায় নাকি কী গিফট দিবি। তা কবে দিবি?”
দীর্ঘশ্বাস ফেললো অনা। চৈতালি এবং মুবিনের ব্যাপারে তার বাবা আলাউদ্দিন শেখকে ইনিয়েবিনিয়ে কিছু একটা বলে তাদের চার হাত এক করে দেবার ব্যবস্থা করার কথা ভেবেছিল অনা। তবে সেসবে এখন সেগুড়ে বালি। কালই বাবার মন থেকে উঠে যাবে সে। সেখানে চার হাত এক করা তো দূরের কথা.. চোখমুখ ছোট হয়ে এল অনার। হতাশ গলায় সে বললো,
-“সেটা আর দেয়া হবে বলে মনে হয় না!”
-“ওমা! কেনো? এখন হাতে টাকাপয়সা নেই? তাহলে পরে দিস।”
-“ঠিকাছে।”
ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরলো চৈতালি। ধীর গলায় বললো,
-“জানিস? কাল সবুজ স্যার কী বলেছে আমায়?”
-“কী?”
-“দৌড়ঝাঁপ কমাতে। আমার মতো মেয়েদের নাকি এসব মানায় না। আমিও মনে মনে বললাম, শালা টাকলু। আমি দৌড়ঝাঁপ করলে তোর কী? আমি কী তোর বউ লাগি যে তোর কথা শুনবো!”
-“অহ..”
-“ওই টাকলার মাথা যে আমি কবে ফাটাবো! চুল নেই একটাও মাথায়। অথচ ওই টাক মাথা নিয়ে আসে আমায় প্রেম নিবেদন করতে! সাহস দেখেছিস! ভাবছি আর ওর কাছে প্রাইভেটই পড়বো না।”
-“তাহলে আর কার কাছে পড়বি?”
-“জানি না। তবে ওই টাকলাকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না।”
ম্লান হাসলো অনা। চৈতালিকে রাগাতে তার দিকে ফিরে আরাম করে বসে বললো,
-“কেনো? উনি খারাপ কী? চেহারা সুন্দর। কলেজের টিচার। শুধু মাথায় একটু চুল কম।”
-“তুই ওর হয়ে সাফাই গাচ্ছিস কেন? তোর এত ভালো লাগলে তুই-ই প্রেম কর।”
-“আমাকে প্রেম নিবেদন করলে আমিই করতাম। তোকে তখন বলতে হতো না!”
নাক ছিটকে চৈতালি বললো,
-“ছিঃ! তোর পছন্দ এত খারাপ?”
-“খারাপ আবার কী! সবুজ স্যারের মতো দ্বিতীয় কাওকে পুরো কলেজে খুঁজে পাবি?”
অনার কথার পিঠে চৈতালি কোলবালিশ দিয়ে তার শরীরে আঘাত করতেই চেঁচিয়ে উঠলো অনা।
-“ইশ! মারলি কেন? ব্যাথা পেলাম না!”
-“হ্যাঁ.. তোমার তো তুলোর শরীর। ধরলেই ব্যথায় অস্থির হয়ে পড়ো। এই তুই স্বামীর আদর কিভাবে সহ্য করবি তা ভেবে ভেবে আমি পাগল হয়ে যাই!”
-“ছিঃ! বাজে কথা বলিস না তো।”
-“বাজে কথা? এটা বাজে কথা? তাহলে লজ্জায় তোর মুখ লাল হয়ে গেছে কেন?”
একদন্ড থম ধরে বসে উঠে দাঁড়ালো অনা। পাশ থেকে বালিশ তুলে তা দিয়ে চৈতালিকে মারতে মারতে বললো,
-“চিতৈ পিঠা! আজ তোরে আমি খাইছি!”

খাবারের পাঠ চুকেছে অনেক্ক্ষণ। সুহাও ঘুমিয়ে পড়েছে এর মাঝে। খুব সাবধানে তার পাশ থেকে উঠে পড়লো উল্লাসী। আলমারী খুলে লাল রঙের একটি জর্জেট শাড়ি বের করে তা সময় নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিজেকে দেখে নিল আয়নায়। শাড়ি পরা তার কর্ম নয়। কুচির অবস্থা নাজেহাল। আঁচলটাও ঠিকঠাক ভাবে তুলতে পারছে না। এভাবে উনার কাছে যাওয়া কি ঠিক হবে? ভাবামাত্রই হাত খোঁপা খুলে চুল পিঠজুড়ে ছড়িয়ে দিল উল্লাসী। কপালে ছোট্ট একটি লাল টিপ বসিয়ে এগুলো পাশের ঘরের দিকে।

-“ঘুমিয়েছেন?”
বই পড়তে পড়তে চোখ লেগে এসেছিল মেসবাহর। তাই বুকের উপর বই রেখে খানিকক্ষন হলোই চোখজোড়া বুজেছিল সে। হঠাৎ উল্লাসীর গলার আওয়াজে ঘুমের ভাবটা কেটে গেল তার। দুচোখ মেলে সম্মুখে চাইতেই অবাক হলো সে। উল্লাসী এই সময় তার ঘরে? তাও শাড়ি পরিহিত অবস্থায়! তাহলে কি সেদিনের মতো আবারও উল্লাসী চাইছে তার সঙ্গ? শরীর জুড়ে শীতল এক রক্তস্রোত বয়ে যেতেই নিজেকে শান্ত করায় উঠেপড়ে লাগলো মেসবাহ। একবারের করা অন্যায়ের মাশুল গুনতেই অনেক কিছু হারাতে হয়েছে তাকে। আবারও সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আর কিছু হারাতে চায় না সে। তবে শাড়ির ফাঁকে বেরিয়ে থাকা উল্লাসীর সাদা মসৃণ কোমর, জর্জেট শাড়ির আবরণে ঢেকে থাকা শরীরের গঠন না চাইতেও বারবার ভেসে আসছে মেসবাহর চোখের পাতায়। বুকের ভেতরটায় তার উথালপাতাল শুরু হলেও বাইরেটা শক্ত রাখলো মেসবাহ। সহজ গলায় সে জবাব দিল,
-“না.. কিছু বলবে?”
বিছানার এক কোণায় বসে উল্লাসী বললো,
-“হ্যাঁ, আজ সারাদিন কেমন কাটলো আপনার?”
বিস্ময়ের শেখরে পৌঁছে গেল মেসবাহ। যে মেয়ে কিছুদিন যাবৎ তার সঙ্গে ঠিকভাবে কথাই বলছিল না তার আজ কী হলো? সে আজ নিজে থেকে তাকে এসে প্রশ্ন করছে! তাও অস্বাভাবিক প্রশ্ন। যা আজীবনেও তাকে কেউ করেছে কিনা তাতেই সন্দেহ! বিস্ময়ভাব মুখে ফুটিয়েই মেসবাহ জবাব দিল,
-“কেটেছে ভালোই।”
-“কী কী করলেন আজ সারাদিন?”
-“অনেক কিছুই করেছি।”
-“অহ..”
অজস্র ইতঃস্তত এসে জড়িয়ে ধরতেই চুপসে পড়লো উল্লাসী। এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে তো সে আসেনি। মেসবাহকে অনেক কিছু বলার আছে তার। অনেক কিছু…
-“কিছু বলতে?”
নীরবতা ভেঙে মেসবাহ প্রশ্নটি করতেই স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো উল্লাসী। মাথা নেড়ে বললো,
-“আপনার বান্ধবী এসেছিল..”
-“কে? ইভানা?”
-“হ্যাঁ..”
-“কবে?”
-“দুদিন আগে।”
-“কই? আমাকে তো ও কিছু বলেনি! তা কী বলেছে ও?”
-“জানি না..”
-“তাই? তা কী জানো তুমি?”
-“তাও জানি না।”
এই প্রথম উল্লাসীর মুখে লাজুকলতার খোঁজ পেল মেসবাহ। ঠোঁটজোড়া কাঁপছে তার। কিছু কি বলতে চাইছে সে? বুকের ভেতরের তুফান ক্রমশ বাড়তেই উঠে বসলো মেসবাহ। মনে সাহস জুগিয়ে কয়েক কদম এগিয়ে উল্লাসীর পাশে এসে বসে ঢোক গিলে বললো,
-“কী বলেছে বললে না তো!”
শাড়ির আঁচল ঠিক করে হাতের আঙুল কচলাতে কচলাতে উল্লাসী ধীর গলায় বললো,
-“আপনি না বলেছিলেন স্বামী স্ত্রীর মাঝের ঘটনা তৃতীয় কাওকে বলতে নেই। তাহলে আপনি কেনো উনাকে বলেছেন?”
প্রশ্নটি করে একদন্ড অপেক্ষা করলো উল্লাসী। তবে মেসবাহর দিক থেকে কোনো উত্তর না পাওয়ায় পাশ ফিরে তার দিকে চেয়ে ক্ষীণ স্বরে আবারো বললো,
-“আমার কাছে আপনার কিছু চাওয়ার থাকলে এখন থেকে আপনি নিজেই চাইবেন। আমি না করবো না।”
এবারও কিছু বললো না মেসবাহ। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো উল্লাসীর জ্বলজ্বল করে উঠা মুখের দিকে। যে মুখের দিকে তাকিয়ে অনায়াসে সে কাটিয়ে দিতে পারবে বছরের পর বছর।
-“আপনি কি আমার ব্যবহারে খুব কষ্ট পেয়েছেন?”
-“উহু..”
-“তাহলে আমি যদি এখনো আদর চাই তাহলে দেবেন?”
-“হু।”
চোখজোড়া বুজলো উল্লাসী। আহ্লাদী গলায় বললো,
-“তাহলে কপালে একটি ছোট আদর দিন না!”
ঠোঁট ভর্তি হাসি নিয়ে উল্লাসীর কপাল আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে তাকে বুকে টেনে নিল মেসবাহ। গভীর কিছু নিঃশ্বাস ফেলে তার চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে বললো,
-“তুমি জানো.. তোমায় বুকে জড়িয়ে ঠিক কতটা শান্তি পাই আমি?”
-“হু।”
-“কেনো এত ভালোলাগে তোমায়? কেনো তুমি পাশে না থাকলে অস্থির লাগে? ভালোবাসি বলেই তো.. না?”
-“হু..”
আরও নিবিড়ভাবে উল্লাসীকে বুকে চেপে ধরলো মেসবাহ। নিস্তব্ধ রাত। কোথাও কোনো শব্দ নেই। সব প্রাণীই ঘুমের রাজ্যে। শুধু ঘুম নেই দুজনের চোখে। নিষিদ্ধ কিছু চাওয়া এসে বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে মেসবাহর মনে। সকল বারণ ভেঙে ডুব দিতে ইচ্ছে করছে উল্লাসীর গহীনে। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নীরবে বসে থাকার পর উল্লাসীর শরীর বিছানায় আলতোভাবে রেখে উঠে দাঁড়ালো মেসবাহ। ধীর পায়ে দরজার দিকে এগুতেই শোয়া অবস্থায় উল্লাসী বলে উঠলো,
-“কোথায় যাচ্ছেন?”
-“দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আসি।”
-“ওঘরে তো সুহা আছে! ও ভয় পাবে।”
-“এজন্যই তো বলছিলাম..”
-“লাগাতে হবে না। লাইট অফ করে দিয়ে আসুন।”
ঘরের আলো নিভিয়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালো মেসবাহ। চিন্তিত মুখে তাকালো আবছা আলোয় ভেসে উঠা উল্লাসীর শরীরের দিকে। আবারও একই ভুল করে বসছে না তো সে? তবে মনের ভেতরে চলা তুফানের কাছে এবাঁধা হার মেনে নিজের শরীরের ভর উল্লাসীর উপর ছেড়ে দিল মেসবাহ। তার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
-“শাড়িতে মারাত্মক লাগছে..”
পুরো শরীর শীতল হয়ে এল উল্লাসীর। চোখজোড়া বুজে সে সজোরে কিছু নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
-“আপনার জন্য পড়েছি…”
-“তাই?”
-“হু..”
-“আমার জন্য তো তাহলে খুলতেও বারণ নেই..”
-“ইশ.. মোটেও না।”
-“না?”
-“জানি না..”
লজ্জায় চোখমুখ লাল হয়ে উঠতেই দু’চোখ বুজলো উল্লাসী। হাতজোড়া দিয়ে মেসবাহর গলা আঁকড়ে ধরতেই সে বললো,
-“আগাবো কি?”
-“হু…”
-“কাল সকালে উঠে আবারও জেদ করবে না তো?”
-“উহু.. তবে আস্তে। ব্যথা পেলে কিন্তু কেঁদে দিব।”
দুষ্ট হাসির রেখা ঠোঁটে ফুটিয়ে উল্লাসীর কানে সামান্য দাঁত বসিয়ে গলায় নেমে এল মেসবাহ। একেরপর এক এলোপাথাড়ি চুমুর বন্যা বইয়ে দিতেই কাঁপা গলায় উল্লাসী বলে উঠলো,
-“সুড়সুড়ি লাগে..”
মাথা উঠিয়ে উল্লাসীর কথা শুনে মৃদু হাসলো মেসবাহ। মাতাল চোখে শাড়ির আঁচল সরিয়ে মুখ ডোবাতেই শরীর অবশ হয়ে এল উল্লাসীর। এক নিমিষেই তার মনের সকল জল্পনা কল্পনা ভয় কেটে সেখানে প্রবেশ করলো একরাশ ভালোলাগা। যা তাকে ধীরেধীরে পোঁছে দিল নামহীন এক সুখের রাজ্যে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here