নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৪

0
5229

নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৪
লেখিকা:সুরভী আক্তার

সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেকটা লেট হয়ে গেল। মানে আমি সবসময় যে দেরিতে উঠি তা কিন্তু না।
আমার ভার্সিটি যেতেই ১০ মিনিট লাগে(বলে রাখা ভাল মানহা আপুদের বাড়ির একটু দূরে ভার্সিটি)।তাই নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে ওড়না টা শুধু মাথায় পেঁচিয়ে দৌড় দিলাম।
সৈকত যে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমি তো ভুলেই গেছি।
ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকতে যাবো তখনই আমার হাতে কেউ টান মারল সেটা হচ্ছে মানহা আপু। সৈকত ওদের গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
বুঝিনা!আপুদের বাড়ি থেকে ভার্সিটি আসতে দুই মিনিটও লাগে না সেখানে গাড়ি এনে ফুটানি দেখানোর কি আছে?

তোমরা কথা বলো আমি ওই বেন্ঞিটাতে বসি।বলে আপু চলে গেল।
দাড়িয়ে রইলাম আমি আর সৈকত।
সৈকত কি বলবে বুঝতে পারছে না হয়তো,কিন্তু ওর জন্য দাড়ায় থাকতে গেলে তো আমার দেরি হয়ে যাবে তাই আমি বললাম-
“কিছু বলেন!”

“আসলে আমি আমার কাজের জন্য ভীষণ দুঃখিত।আমি না জেনেই আপনাকে অনেক কথা বলেছি যেগুলা আমার জানা উচিৎ ছিল।
সৈকত এতক্ষণ মাথা নিচু করে কথা বলছিল তারপর মাথা উচু করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “আমাকে ক্ষমা করবেন,I am really sorry”

সৈকত আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললাম “it’s ok”

সৈকত আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো
“আপনার ঘাড়ের তিলটা সত্যি আকর্ষণীয়!”

আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম তারপর চোখ ছোট ছোট করে বললাম ‍”এখন তো সত্যিই মানহানির মামালা দিতে মন চাচ্ছে!”
আমার কথা শুনে সৈকত হো হো করে হেসে দিল। তার হাসি সত্যিই আকর্ষণীয়!

“ভালো কথা বলেন তো আপনি!” বলল সৈকত তারপর আবার বললো,”আপনার একটা..
তার আগেই ওর ফোনে একটা কল আসলো। কথাবার্তায় বোঝায় যায় অফিসের ফোন এসছে।কল কেটে সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল”আজ আপনার আপুর বাসায় আসবেন। আপনার একটা জিনিস আমার কাছে আছে”
আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই সে গাড়িতে করে চলে গেল।ও চলে যাওয়ার পরে আপু এসে বললো”কি?সব মিটেছে”

আমি হ্যাঁ‌ বললাম আর বললাম আজ তোমাদের বাসায় যাব। অনেক কথা আছে!
_______________
আমি আজ যাব বলে আপু তার শশুর শাশুড়কেও বাসায় যেতে দেয়নি।

আমি যাওয়ার পরে আপুর সাথে অনেক কথা বললাম।সবটাই সৈকতকে ঘিরে।
এই যেমন, দুলাভাই আর সৈকত নাকি এক বছরের ছোট বড়। এলাকার সবাই নাকি ওনাদের টুইন ব্রাদার্স নামে চেনে।যদিও চেহারা আলাদা অনেকটা।
দুলাভাইয়ের জব পাওয়ার পরে তিনিই নাকি সৈকতকে জব দিয়েছেন তাদের অফিসে।
সৈকত সন্ধ্যায় বা বিকেলে বাসায় ফিরবে। ততক্ষন আমি কি করব?যদিও বিকেল হতে বেশি সময় নেই।
সিদ্ধান্ত নিলাম এই সময়টা ছাদে কাটাব।
ফেসবুকে ঢুকেই অনেকটা সময় পার করে দিলাম। একটু পর আপু আসল।সবাই মিলে নাস্তা করলাম। দুলাভাই আর সৈকত বাদে। কারণ তারা অফিসে।
দুলাভাই আর সৈকত ফিরল একদম সন্ধ্যার পরে।আপু তাদের ফ্রেশ হতে বলে তাদের টেবিলে ডাকল। তাদের জন্য আলাদা করে নাস্তা রাখা হয়েছিল।
আমি সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম। সৈকতের নাস্তা খাওয়া হলে সে তার পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে আমার দিকে ছুঁড়ে মারল। চারিদিক দেখেই মেরেছে অবশ্য। চিরকুট টা সোজা আমার কোলে এসে পড়ল।আমি তার দিকে হা করে তাকালাম।সে আমাকে মুখের ইশারায় পড়তে বলল।
আমি চুপচাপ টিভিটা অফ করে চিরকুট টা হাতে মুঠো করে নিলাম।তারপর একটু সাইডে এসে চিরকুট টা খুললাম। সেখানে লিখা আছে-
“জানি ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছ যে আমার কাছে তোমার এমন কি জিনিস আছে?সেটা বলব কিন্তু তার জন্য তোমায় আজ রাত ১১ টার সময় ছাদে আসতে হবে”

ব্যাস! এইটুকুই?
কি এমন আছে? দেখায় তো কালকে হলো! নাকি সে আমাকে আগে থেকে চিনে?উফ!দেখা যাবে।
______________
রাতে ডিনার করে আপুর সাথে আপুর রুমে ঘুমাতে গেলাম। দুলাভাই আর সৈকত একরুমে ঘুমাবে।
আপুর সাথে রাজ্যর গল্প করলাম কিন্তু মন তো এখানে নেই।১০ টার দিকে আপু ঘুমিয়ে গেল। আপুর রাত জাগার অভ্যাস নেই।
১০:৫০ এই ছাদে পৌঁছালাম।I think সৈকত আর আমি ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
ছাদে গিয়েই দেখলাম সৈকত আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।আমি গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালাম।সে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। চারিদিকে মৃদু বাতাস বইছে।
সে চোখ বন্ধ করেই বলল”এসেছ?”

“হুম”

“এত বিশ্বাস?মাত্র একদিনের পরিচিত ছেলে বলল আর চলে এলে?”

কি করবেন?

সৈকত আমার দুই পাশের রেলিংয়ে ভর করে আমার দিকে একটু ঝুঁকে বলল “অনেক কিছুই তো করতে পারি তাই না? আমিও তো একটা ছেলে right?”

আমি ওর বুকে হাত দিয়ে আমার থেকে একটু দূরে সরালাম কারণ আমার অস্বস্তি হচ্ছিল তারপর হাত ভাঁজ করে বললাম “যদি করার হতো তাহলে বন্ধ ঘরেই করতে পারতেন,এভাবে খোলামেলা ডাকতেন না”

সৈকত রেলিংয়ে পিঠ ঠেকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল”বেশ intelligent মেয়ে তো তুমি!”

“ওসব বাদ দেন আর কি বলতে ডেকেছেন সেটা বলেন”

“কেন?অন্যকোথাও যাবা?”

“আরে,,আপনি আমার চাচাকে চিনেন না! মানুষ একটু জোরে হাটলেও তিনি জেগে যান”

“আচ্ছা এই নাও, তোমার আমানত”

“এটা তো আমার এক্সট্রা ওড়নাটা!আপনি কোথায় পেলেন?”

“বিছানা‌ থেকে শার্ট নেওয়ার সময় শার্টের সাথে চলে গেছিল।”

“আচ্ছা!আজ আসি?”

“আরেকটু থাকা যায় না?”

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here