নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৫

0
5222

নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৫
লেখিকা:সুরভী আক্তার

সেখানে আরো কিছুক্ষণ থাকায় যে আমার কাল হবে সেটা তো তখন বুঝি নাই!

আপনারাও বুঝেন নাই?আমি বলছি!

ফ্ল্যাশব্যাক,
তখন সৈকতের কথায় থেকে গেলাম।একটু পর এদিক ওদিক হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে আছাড় খেলাম। কারণটা ইট,ইটে বেঁধে পড়ে গিয়েছি। অন্ধকারে দেখতে পায় নি। পড়েছি তো পড়েছি আর শব্দও সেই জোরে হয়েছে।আমার তো এখন ভয় হচ্ছে চাচা যদি এসে আমাদের দুজনকে দেখে তাহলে কি ভাববে?
আমার ভয়টাই সত্যি হলো! আমি পড়ে যাওয়ায় সৈকত এসে আমাকে উঠালো। আমি এখন দাড়াতেই পারছি না।
পা মচকে গেছে মনে হয়!
আমি সৈকতকে বললাম সে যেন সাইডে গিয়ে লুকায় কিন্তু সে আমাকে উঠাতে ব্যস্ত!
আর এই দৃশ্য টায় চাচা এসে দেখে ফেলল।

প্রথমে আমাকে ঘরে নেওয়া হলো। সেখানে বসিয়ে চাচী তেল গরম করতে গেল আর বাকি সবাই গম্ভীর মুখে বসে রইল। আমার এখন ভয় হচ্ছে! চাচা যদি একবার আব্বুকে এসব বিষয় বলে দেয় তাহলে আমার সব স্বাধীনতা শেষ! একদম বিয়ে দিয়ে ছাড়বে!

চাচা সৈকতকে নিজের সামনা সামনি বসতে বললেন।সবার কোলাহলে সবাই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।
রাত তখন সাড়ে এগারোটা।
আপুর শশুর শাশুড়ি একসাথে সাইডের সোফায় বসে আছে।আপু আমাকে তেল মালিশ করে দিল তারপর আমি যখন এইসব ভাবতে ব্যাস্ত তখনই পা মচকিয়ে দিল। প্রথমে একটু ব্যাথা পেলাম কিন্তু আসল ব্যাথাটা দূর হলো।আমি বাইরে যেতে গেলে আপু আমাকে ইশারায় দরজার পাশে দাঁড়াতে বললো আর নিজেও তেলটা রেখে আমার পাশে দাড়ালো।

“কি করছিলে তোমরা ছাদে?”

“জ্বি আসলে..

“কি হলো বলো?”

“জ্বী আমি ওর ওড়না দিতে গেছিলাম।”

চাচা বিস্ফোরিত নয়নে সবার দিকে তাকিয়ে আবার সৈকতকে জিজ্ঞাসা করলেন “এগুলো সবার সামনে বলতে লজ্জা করে না?”

সৈকত সাথে সাথে উত্তর দিল “এগুলো কি বলছেন আঙ্কেল?সাকিরের রুমে আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য শার্ট খুলে রেখেছিলাম আর সেটা নিয়ে আসার সময় ওখানে যেটা ওড়না ছিল সেটা শার্টের সাথে চলে এসেছিল তাই দিতে..

“চুপ করো! ইয়ার্কি পেয়েছ আমাদের সাথে?যা বলবা বিশ্বাস করে নিব?সামান্য ওড়না দিতে গেলে রাত বিরাতে ছাদে যাওয়া লাগে?মানহাকে দিলেই তো সে লাবণ্যকে দিয়ে দিত”

চাচা আরেকটু থেমে আপুদের ঘরের দিকে তাকালেন আর আমাকে দেখতে পেয়েই ডাকলেন।আমি একবার আপুর দিকে তাকালাম,সে আমাকে যেতে বলছে। আমিও এগিয়ে গেলাম সেইদিকে।চাচা সহজে রাগেন না।সবসময় লাগামহীন কথা বলেন কিন্তু রেগে গেলে ‌রক্ষা নাই।

“হ্যাঁরে লাবণ্য! তুই তো একবার তোর বাবার কথাটা ভাবতে পারতি, তোর এইসব করতে লজ্জা করল না?”

আমি চুপচাপ শুনলাম।চাচা আবার বললেন”পড়াশোনার বয়সে এগুলো করা হচ্ছে?দাড়া তোর আব্বুকে বলে তোর বিয়ের ব্যাবস্থা করছি!”
আমি এবার চুপ থাকতে পারলাম না।দৌড়িয়ে চাচার কাছে গিয়ে বললাম”যাই করো চাচা আব্বুকে বলোনা! আব্বু ভেঙে পড়বে আমার উপর বিশ্বাস করবে না।প্লিজ!”

“বিয়ে তো তোর আমি দিয়েই ছাড়ব তোর!তা তোর আব্বুকে এসব বিষয় জানিয়েই হোক আর না জানিয়েই”

সব শুনে আপুর শশুর মশাই মুখ খুললেন”দেখেন বেয়াই,আমি আমার ছেলের কৃতকর্মের জন্য ভীষণ দুঃখীত আর মেয়েটারও যেহেতু বিয়ে দিয়েই দিচ্ছেন তাহলে বলছি কি দুজনের বিয়ে দিয়ে দেই।”

এই কথা শুনে চাচা যেন একটু শান্ত হলেন তারপর বললেন”আমি রাজি! শুধু একটু সময় প্রয়োজন।আর লাবণ্য? তুই বলছিলিস না তোর আব্বুকে কিছু না বলতে?বলবনা কিন্তু এই বিয়ে তোকে করতেই হবে।সারা পৃথিবীর কাছে এটা হবে এরেন্জ ম্যারেজ কিন্তু আসল সত্যটা আমাদের মাঝেই থাকল।”

এই বলে চাচা সবাইকে ঘুমাতে বলে চলে গেলেন। সৈকতের আম্মু আমার কাছে এসে বললেন তিনি নাকি আমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছিলেন আর নিজের ছেলের জন্যই এমন মেয়ে চাইছিলেন তাই হয়ত আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নিয়েছেন আর আমার মত মেয়ে না দিয়ে ডাইরেক্ট আমাকেই দিয়েছেন।আর আমার যদি কোন কথা সৈকতের সাথে থাকে তাহলে যেন আমি বলে নি।
এই সব বলেই উনি চলে গেলেন।

চাচি আমার দিকে উদাসীন তাকিয়ে ঘরে চলে গেলেন। তিনি হয়ত আমার থেকে এটা আশা করেন নি। এখন ডাইনিংয়ে শুধু আমি সৈকত আর আপু রইলাম।

আপুও আমার কাঁধে হাত রেখে ঘরে চলে গেল।আমি সৈকতের দিকে তাকালাম। তার চোখ দেখে আমি কিছুই বুঝলাম না।

“সৈকত! আপনার কি মত এই বিষয়ে?”

“আমাদের মত এখানে কোন কাজেই আসবেনা লাবণ্য! আপনার বা আমার কোন কথায় তারা বিশ্বাস করে নাই তাহলে মত দিয়ে কি হবে? আপনার কথা শুনে সরে আসলে আজ এই অবস্থা হত না। আপনার বা আমার জীবন আজ এই পরিস্থিতিতে থাকতো না।”

এবার আমি সৈকতের চোখের দিকে অনুতাপ দেখতে পেলাম। সৈকত চলে যেতে নিলেই আমি তার হাতটা ধরে ফেললাম,সে হাতের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো আমি আরো একটা হাত দিয়ে তার হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম”রাজি হয়ে যান সৈকত! নিজেকে দোষ দিবেন না। হয়তো নিয়তি এটাই চাইছিল আর নিয়তির লেখা তো কেউ পাল্টাতে পারে না,তাই না?”

“হুম”

সৈকত চলে গেল। আমিও ঘরে এসে চোখ বন্ধ করলাম।আমি এই বিয়েতে রাজি আছি।সৈকতের সাথে যদি পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক করত তাহলে আমি খুশি হয়েই বিয়েটা করতাম কারণ সৈকত ভালো ছেলে।
কিন্তু দুঃখ একটাই সেটা হচ্ছে চাচা আমাদের উপর অপবাদ দিয়ে বিয়েটা চাপিয়ে দিচ্ছেন। আবার বলেছেন পড়ালেখাও পুরোপুরি অফ করতে হবে নয়ত তিনি আব্বুকে সত্যটা বলে দিবেন।যদিও সেটা সত্যি নয়!

চলবে…

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here