নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৬
লেখিকা:সুরভী আক্তার
সৈকতের সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার খুবই সুন্দর প্লান সাজিয়েছেন চাচা।কে জানি? চাচীকেও এভাবে বিয়ে করেছেন কিনা!
আজ চাচা আব্বুকে বাসায় থাকতে বলেছে। কারণ বলেনি শুধু বলেছে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আর বলেছে যেন আমিও থাকি।
২০ মিনিট পর চাচা আমাদের বাসায় পৌঁছালেন।এসেই এমনি দু চার কথা বললেন।আমি ঘরে বসে অপেক্ষা করছিলাম কখন আমার ডাক পড়ে আর কখন যেয়ে চাচার শিখানো বুলি বলি।
____________
“মেহরাব(আব্বুর নাম) তোর মনে হয় না লাবণ্যর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে?”
“কি বলছেন ভাইজান?একটাই তো মেয়ে আমার! পড়ালেখা টা অন্তত শেষ করুক তখন নাহয় এগুলো চিন্তা করা যাবে!”
“বিয়ের পর কি মানুষ পড়াশোনা করে না?যদি ওর শশুর বাড়ির লোকজন চায় তাহলে করাবে!”
“যদি চায়?আমার এত টাকা-পয়সা থাকতে আমার মেয়ে অন্যর বাড়ি যেয়ে পড়াশোনা করবে?আর যদি অনুমতি দিয়েও দেয় তাহলে প্রত্যেকদিন পড়াশোনার জন্য কথা শোনাবে। আমার মেয়ের কষ্ট আমরা কিভাবে মানবো?”
“আচ্ছা! তোর যদি এতই সমস্যা থাকে তাহলে লাবণ্য কেই জিজ্ঞেস করে নে তার কি মত? তখন সে যদি রাজি হয় তাহলে তো তোর আর সমস্যা থাকবেনা তাই না?
ডাক দে লাবণ্যকে।”
আব্বুর ডাক আসতেই নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নিলাম।চাচা কি কি বলতে বলেছিল সব মনে করে নিলাম তারপর ঠিকঠাক ওড়না গায়ে দিয়ে বাইরে এলাম।
আব্বু আমাকে তার রুমে যেতে বললেন।চাচা ডাইনিংয়েই আছে। এখানে আব্বু আমাকে প্রাইভেট জিনিস জিনিস জিজ্ঞেস করতে ডেকেছেন I guess!
“লাবণ্য?”
“হ্যাঁ আব্বু”
“তুই কি এখন বিয়ে করতে চাস?”
“এ্যাঁ?এটা কেমন প্রশ্ন আব্বু?”
“তোর কি কোন মনের মানুষ আছে?”
আমি আব্বুর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম “তুমি কি আমাকে এটাই শিখিয়েছ?”
আব্বু বললেন “তাহলে কি বিয়ে করবে?”
আমি বললাম “তোমাদের মতই আমার মত”
“নাহ!আমি আমার মত তোমার উপর চাপাতে চাচ্ছি না তুমি নিজ থেকে বলো”
আমি একটু ভাবার এক্টিং করে বললাম “আমার বিয়েতে কোন সমস্যা নেই আব্বু! তুমি চাইলে দিতে পারো আর না চাইলে নাই”
“আর যদি পড়াশোনা অফ হয়ে যায় তাহলে?”
“কি হবে আব্বু এত পড়ে? প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ তো সোসাইটি মেয়েদের কেউ দিবে না”
আব্বু উঠে চলে গেলেন।চাচা কে নিজের মত জানাবে এখন।কি মত হবে কে জানি?
এদিকে,চাচা ঠিক করেই রেখেছেন আজ আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য আব্বুকে মানাবেই আর যদি না মানে তখন সত্যটা বলে দিবেন। কোন বাবাই চাইবে না তার মেয়ে অনর্থ ঘটিয়ে মানুষের সামনে তাদের আর নিজেকে লজ্জিত করুক।
আব্বু রাজি হয়েছেন কিন্তু তার একটা শর্ত আছে আর তা হচ্ছে হাজারের মধ্যে ভালো ছেলে তার লাগবে আর চাচা বলেছেন এই দায়িত্ব তিনি পালন করবেন আর কালকের মধ্যেই এরকম ছেলে আনবেন।
যদিও সৈকতের ফ্যামিলি আমাকে দেখেছে আগেই কিন্তু ফর্মালিটি মানতে সবাইকে একটু নাটক চালিয়ে যেতে হবে।
আজও আমার ভার্সিটি যাওয়া হলো না।না জানি আর কখনো যাওয়া হয় কিনা!
আম্মু আমাকে একটা আনকমন কালারের শাড়ি দিল রেডি হওয়ার জন্য।আনকমন কালার এইজন্য বলছি কারন এই কালার আমি চিনি না এটাকে মিক্সড কালারও বলা যায়।এত জামা কাপড় থাকতে শাড়িই কেন পরা লাগবে বুঝি না। কারণ টা এইটা না যে আমি শাড়ি পড়তে পারি না কিন্তু নিয়মটা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়।
শাড়ি পরা হয়ে গেলে মানহা আপু আমায় হালকা সাজিয়ে দিল। সাজিয়ে দিল বলতে চুলটা জাস্ট বেঁধে দিল স্টাইল করে আর চুড়ি পড়লাম। I think এটাকে সাজ বলাও অপমান।
সৈকতরা আসার পরে আমায় নিয়ে যাওয়া হলো।ওরা অনেক প্রশংশা করল আমার। গুনাগুণ জানতে চাইল আর কয়েকটা সিম্পল প্রশ্ন। মানে usually যেগুলো question ask করে সেগুলাই।তারপর আবার সৈকতের সাথে কথা বলতে পাঠানো হলো আমার রুমে।আমি নিয়ে গেলাম ওকে।
পাঞ্জাবিতে ওকে আরো সুন্দর লাগছে।Chocholate boy ও বলা যায়।
আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
“So? কেমন লাগছে আমাকে?”
সৈকত আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো জেনো আমি কিছু ভুল বলেছি।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“লাবণ্য আমাদের লাভ ম্যারেজ হচ্ছে না যে ফ্যামিলি মেনে গেছে তো আমরা খুশি হয়ে গেছি সেখানে আপনি?”
আমি হতাশ ভঙ্গিতে সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললাম “আমি সম্পর্ক টা কিছুটা হলেও সহজ করতে চাচ্ছি সৈকত!আপনি কি চাচ্ছেননা সেটা হোক?আপনি কি আমাকে নিয়ে এতই উদাসীন?আপনার কি কোন মনের মানুষ আছে?আমি কি আপনাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি?আপনি যদি চান তাহলে এখনি না করতে পারেন। সময় আছে এখনো।
আপনার সাথে বিয়ে না হলেও আমার বিয়ে অন্যকারো সাথে ঠিক হবে।যদি ভাবেন আপনার ফ্যামিলি আপনার উপর রাগ করবে এই বিয়েতে না করলে আর এই কারণে যদি আপনি রাজি হন তাহলে বলছি এসব ধারণা বাদ দিন! আপনি পরিবারের ছোট ছেলে!রাগ করে থাকলে কেউ দুইদিন করবে কেউ চারদিন করবে কিন্তু তারপর মাফ করে দিবে।যদি আমি সত্যিটা বলি তাহলে আমার পড়ালেখা এমনিতেও বন্ধ হয়ে যাবে তাই বলছি এরকম বিয়ে করে কি লাভ? যেখানে মনের মিল ই থাকবে না? সময় আছে সৈকত,ভেবে নিন।”
এই বলে আমি চলে আসতে নিলেই সৈকত আমার হাত টা ধরে বললো”don’t mind but নিজেকে মানিয়ে নিতে আমি time নিচ্ছি। আপনার সাথে যদি আমার ফ্যামিলি থেকে বিয়ে ঠিক করত then আমার problem ছিল না বাট সবাই এইটা বিশ্বাস করছে যে আমরা প্রেম করে ধরা পড়েছি তাই বিয়েটা করছি যেটা কাল থেকে আমার মনে বসে আছে।একটা মিথ্যা অপবাদ! ঠিক কতটা hurt করে now I understand! না জেনে আপনাকে আমি যেমন বলেছিলাম তেমনি আমার উপর পড়ল। ”
আমার আর সৈকতের দুঃখ একজায়গায়। তার মানে সৈকতের ভালোবাসা পাওয়ার একটা chance আছে। আমি কি তা পাবো?
চলবে…
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)