নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৭
লেখিকা:সুরভী আক্তার
একটামাত্র মেয়ের বিয়েতে কিছুই বাদ রাখবেন না আব্বু।
সব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে ফিনিশ করা হবে। লাইক: গায়ে হলুদ,মেহেদী ইত্যাদি ইত্যাদি।আব্বুকে আমি বলেছি এত কিছু করার দরকার নেই জাস্ট গায়ে হলুদ এন্ড বিয়ে দিয়ে সবটা ফিনিশ করতে।
এরই মাঝে কেটে গেছে কয়েকমাস। আপুর কাছ থেকে সৈকতের নাম্বার নিয়েছিলাম।তার সাথে কথা বলে তাকে একটু Easy ফিল করানোর জন্য। তাকে এটা বুঝানোর জন্য যে দোষটা কারোরই ছিল না।
সে আমার সাথে এখন অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। আমিও তার সম্পর্কে অনেকটা জেনেছি।এখনো আমি ভার্সিটি যাই। আব্বু জাস্ট সৈকতের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আব্বুর ওত তাড়া নেই আমার বিয়ে নিয়ে।তাই পড়াশোনা না করে এখন নিজেকে ঘরবন্দি রেখে কি করব? বিয়ে হওয়া অব্দি পড়ি!
এরই মাঝে আমার পরিক্ষাও হয়েগেছে একবার।
আব্বুও এই কয়েক মাসে সৈকতকে চিনার চেষ্টা করেছেন।কয়েকবার বাসায় দাওয়াতও দিয়েছেন আবার নিজে থেকে দেখাও করতে পাঠিয়েছেন আমাকে। Just to know, সৈকত কেমন? আর কেমন ছেলের হাতে তিনি মেয়ে তুলে দিচ্ছেন?
এখন আব্বু সৈকতের উপর অনেকটাই বিশ্বাস করেন। আব্বুর এও বিশ্বাস সৈকতকে একটু ভালো করে বুঝালে সে নাকি আমায় পড়ার পারমিশনও দিতে পারে।
বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে অনেক আত্ময়ই এসেছিল।দুরাত্মীয়
তারা।আমি চিনি না তাদের। Even দেখছি ও ফার্স্ট, maybe?
Finally আব্বু জানিয়েছে দুই দিন পর গায়ে হলুদ হবে।এটা তার সিদ্ধান্ত। তিনি এখন জানতে চাচ্ছেন সৈকতের পরিবারের এই বিষয়ে কি মত?
সৈকতের family জানিয়েছে তারা নাকি মেয়ের বাড়ির মতকেই প্রাধান্য দিবে তার কারণ মেয়ে বাড়ি থেকে পুরা মেয়ে দিয়ে দিচ্ছে আর তাদের সামান্য আবদার টুকু মেনে নেয়া হবে না?
সেই থেকে সব আয়োজন শুরু হয়েছে আর এখন finishing touch দেওয়া হবে। কারণ কাল গায়ে হলুদ।
আজ সকাল থেকেই সবাই ব্যাস্ত। I mean বিয়ে মানেই ব্যস্ততা কিন্তু আজ একটু বেশিই ব্যাস্ত সবাই।কেউ মেহমান দেখছে কেউ নাস্তা দেখছে আরো কত কি!
যখন থেকে সৈকতের ছবি আমার খালাতো আর মামাতো বোনদের দেখিয়েছি তখন থেকে ওরা শুরু হয়ে গেছে। পারেনা যে সৈকতকে এখনি বিয়ে করে ফেলে।তার প্রশংশায় পঞ্চমুখ হয়ে আছে সবাই।কেউ কেউ বলছে সামলে রাখিস তোর এত সুন্দর জামাই!
ওদের কথা শুনে আমার ওদেরই ঝাড়তে মন চাচ্ছে ?। বলছে সামলে রাখিস!আর নিজেই নজর দিয়ে গিলে খাচ্ছে যত্তসব!
এখন তো আরো সামলে রাখব শাকচুন্নীরা! তোদের হাতে আমি আমার জামাই পড়তে দিব না।
আমার খালাতো বোনকে বললাম মানহা আপুকে ডেকে দিতে কারণ তার কাছেই আমার ফোন আছে।
ফোন নিয়ে সৈকতকে মেসেজ দিলাম”রেডি হয়েছেন?”
একটু অপেক্ষা করার পর রিপ্লাই এলো”সরি,রেডি হচ্ছিলাম।ফ্রেন্ডদের কাছে ফোন ছিল।”
“আপনার ছবি দিবেন একটা?”
বলেছিলাম একটা বাট কয়েকটা দিয়েছে। একটাই ও একাই আর অন্যন্যগুলোতে ওর ফ্রেন্ডদের সাথে।
ওদের দেখে আমার মনে একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো।আমি আমার সব বোনেদের ডেকে তাদের কাছে ফোনটা দিয়ে বললাম”দেখ কোনটাকে পছন্দ হয়! সব কয়টা আমার দেবর।দরকার হলে তুলে এনে বিয়ে দিয়ে দিব”
ওরা তো সেই হুড়োহুড়ি লাগিয়ে ফেলল। একটু পর আমায় ফোন দিয়ে বলল”ওরা যখন ওদের এভাবে ছবি তুলে দিয়েছে তাহলে আমরাও দেই কি বল?”
আমি ভাবলাম আইডিয়াটা মন্দ না।মানহা আপুকে দিয়ে কয়েকটা ছবি ক্লিক করিয়ে সেন্ড করে দিলাম আর নিচে লেখলাম”আমার দেবরদের জন্য একেকটা গিফট!চুস করে নিতে বলেন!”
রিপ্লাই আসলো”কিন্তু তুমি তো আমার!”
আমি মেসেজটা পড়ে মুচকি হেসে রিপ্লাই দিলাম”আমাকে ইমুজি দিয়ে ঢেকে দেন”
ওমা! এবার দেখি মেসেজে লাভ রিয়েক্ট।তাও ভালো!
সব কিছু শেষ করে একদম ক্লান্ত হয়ে গেছি। আব্বুর মনে হয় আর আত্মীয় ছিল না!
প্রত্যেকজন হলুদ ছুঁয়ে দিয়েছে।আর বসে থাকতে থাকতে আজ আমার কোমর শেষ!
আজ সৈকতের সাথে কথা বলা হলো না কারন আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। ওকে বাই জনগণ!?
বিয়ের দিন দেখা হচ্ছে!
__________
সকালে দেরি করে উঠেছিলাম।বেশী দেরি হয় নি তবুও ঘর থেকে বেরিয়ে যে এত ভিড় দেখব আমি ভাবিও নি।
নিজের বাসায় নিজেরই চলাচলের জায়গা নেই। মেলার মত ভীড় হয়ে আছে।কেউ হারিয়ে গেলে খুঁজেই পাওয়া যাবে না!
আম্মু আমাকে তাড়াহুড়োই নাস্তা দিয়ে আবার চলে গেল।এত কেয়ার আম্মু ছাড়া কি কেউ আমাকে করবে?
ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল!
আমি আবার সহজে কেঁদে ফেলার মত মেয়ে।কেউ কিছু বললেই আমি কান্নাই শেষ হয়ে যাই।
বিদায়ের সময় যে কি হবে, আল্লাহই ভালো জানেন!
আমার কজিনরা আজ আমাকে ওত জ্বালায় নি কারণ ওরা ওদের বাবুদের নিয়ে ব্যস্ত।আরে সন্তান না,প্রেমিক!
আমার আর সৈকতের মাঝে এতদিন কথা বলে বন্ধুত্ব পর্যন্ত হয়েছে কিনা সন্দেহ আর কালকে ছবি দেখেই নাকি উনাদের প্রেম হয়ে গেছে ?
আম্মু আমার কাছে আজ এক বারও আসে নি। সেই যে সকালে নাস্তা দিয়েছিল সেটাই। আমিও চাচ্ছি না আর মায়া বাড়াতে।
আজও আমাকে জাস্ট হালকা মেকআপ দেওয়া হবে তাই কোন মেকআপ আর্টিস্টকে ডাকা হয় নি।
আমার সব বোনেরা তবুও তাদের ময়দার বস্তা এনেছে।যেটা আর যারটা আমার ড্রেস আর লুকের সাথে ম্যাচ করবে সেটাই আমি দিব।
সৈকতকে আমার আগে থেকেই ভাল্লাগে।সেটা আপনারা সবাই জানেন ?।তাই আমার বোনেদের বলেছিলাম যাতে তার একটা ফটো তার অগোচরে তুলে আমাকে দেখায় আর তার জন্যও আমি আমার প্রফেশনাল বোনকে পাঠিয়েছি যে টেরাব্যকা না করে সোজা করে ছবি তুলে দিবে।
আহা!ছবিটা কি সুন্দর আসছে। সৈকত তার বন্ধুদের সাথে হেসে কথা বলছে আর সে সাইডে ঘুরে আছে।
তখনই আমার ফোনে একটা মেসেজ আসলো।মেসেজটা সৈকতের”একা একা আমার ফটো দেখছ?নট ফেয়ার! এজন্যে দেখ আমিও তোমার ফটো দেখছি”
আর আমার একটা ফটো পাঠালো যেটাতে আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছিলাম। মানে এটা রিসেন্ট তোলা যখন আমি সৈকতের ছবি দেখছিলাম।
এটা আমার শাকচুন্নী বোনেদের কাজ। এক্সট্রা টাকা পাওয়ার লোভে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো?
কবুল বলার সময় মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছিল না। তবুও বলে দিলাম।
বিদায়ের সময় আম্মু আর দূরে থাকতে পারলো না আমাকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে দিলেন।
আব্বু সৈকতের হাতটা ধরে বললেন”আমার মেয়েকে আমি সব শিখিয়েছি আশা করি সে তোমাদের অপছন্দের হবে না কিন্তু সব বাবার মত আমারও যে বুকটা ফেটে যাচ্ছে! আমার মেয়েকে আগলে রেখো বাবা!”
চলবে…..
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)