নীরবে ভালোবাসা,পর্ব:০৮
লেখিকা:সুরভী আক্তার
এক গাড়িতে ড্রাইভার চাচা আমি আর সৈকত বসলাম।এখনো ফুপানোর সাউন্ড আসতেসে।
না জানি! সৈকতের কতটা বিরক্ত লাগছে?
বারবার আমি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছিলাম। বারবার চোখে হাত লাগার কারণে এখন চোখও হালকা জ্বলছে।তাই চুপচাপ বসলাম। তখন সৈকত আমার দিকে একটা রুমাল এগিয়ে দিল আর এক হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি যেন সাহস খুঁজে পেলাম।আমি তার দিকে তাকালে সে মৃদু হাসলো।
আমি আবার সামনের দিকে তাকিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম”আমার কান্নায় অনেক বিরক্ত লেগেছে না আপনার?”
সৈকত বললো”এমন কেন মনে হলো তোমার?”
“কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করলে যে কারোরই তো বিরক্তি লাগবে তাই না?”
“আমার তো লাগছে না”
“জানেন সৈকত?আমি আমার ফ্যামিলিকে ছাড়া দূরে কখনো কোথাও যায় নি।এই যে চাচার বাড়ি আসতাম সেটাও কেন জানেন? কারণ বাসাটা কাছে ছিল।
যদি অন্যকোথাও যাওয়ার ইচ্ছা হত তাহলে আব্বু আম্মু আর আমি যেতাম। আমাকে কখনো ওরা একা ছাড়েনি আর এইজন্যই আমার স্কুল ট্রিপ এও যাওয়া হয় নি কখনো।যদি ঘুরতে যেতে চাইতাম তাহলে আব্বু ঘুরাতো।সবাই বলে বিয়ের পরে মেয়েরা পর হয়ে যায় তাহলে আমিও কি সেই আদর থেকে বঞ্ছিত হবো?”
সৈকত এবার কোন উত্তর দিল না।আমি আশাও করি নি কারণ এসব মেয়েলি জিনিস ছেলেরা চাইলেও কখনো বুঝতে পারবে না।
সৈকতের বাসায় আসার পর মানহা আপুই আমাকে সবকিছুর থেকে এভোয়েড করে একদম রুমে নিয়ে আসলো আর বললো”এভাবে একটা reason এর জন্য তোর হঠাৎ বিয়ে হবে ভাবি নি, কিন্তু আমি খুশি যে দুইবোন এখন একসাথেই থাকব আর চিন্তার কিছু নেই কারণ তোর বিয়েও একটা ভালো ছেলের সাথে হয়েছে।ফ্রেশ হয়ে নে।”
এই বলে আপু চলে গেল।ফ্রেশ তো হওয়া দরকার বাট শুধু চেহারা না পুরো বডি। কারণ অনেক গরম লাগছে। গোসল করা লাগবে।
গোসল করার পর দেখলাম টি-টেবিলে খাবার রাখা দুই প্লেটে। একটু পর মানহা আপু পানি দিয়ে গেল আর বললো সারাদিনের খাওয়ার হিসেব তো কেউ নেইনি তাই এখন পুরাটা খেতে হবে।
আরেকটু পর সৈকত আসলো। অনেক ঝামেলা করার পর, ওর ফ্রেন্ড আর কাজিন দের সাথে।ওর চেহারা দেখেই বোঝা যায় বেচারাকে ওরা কত খুঁচিয়েছে।
আমি ওকে বললাম ফ্রেশ হতে।সেও একদম বিয়ের গেটআপ ছেড়ে নরমাল ড্রেস পরে বের হলো।
তারপর আমার সামনে এসে বসে জিজ্ঞেস করল”গোসল করেছ?”
“হ্যাঁ, অনেক গরম লাগছিল তাই”
“আমিও,সেম”
“হেয়ার ড্রায়ার আছে?”
“হ্যাঁ”
“কোথায়?আমি তো দেখলাম না!”
সৈকত উঠে আলমারি থেকে হেয়ার ড্রায়ার টা বের করে দিল।আর বললো,”আসছোই তো আজকে ফার্স্ট!জানবা কিভাবে কোথায় কি আছে?”
আসলেই তো!এটা তো আমার বাসা না।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রায়ার টা নিয়ে সৈকতকে বললাম”সবই তো বুঝলাম কিন্তু হেয়ার ড্রায়ার টা আলমারিতে রাখার সাইন্স টা বুঝলাম না।”
“আচ্ছা,আমি বুঝাই। হেয়ার ড্রায়ার মূলত আমার তাড়াতাড়ি যেকোন কাজে যাওয়ার সময় চুল শুকাতে কাজে লাগত এই যেমন ধরো, বিকালে ক্রিকেট খেলে এসে প্রচুর গরম লাগত তখন আম্মু গোসল করতে নিষেধ করত তখন লুকিয়ে গোসল করে চুল শুকিয়ে বেরিয়ে যেতাম আর এতে আম্মু টেরও পেত না কিংবা এই যে এখন অফিসে যাওয়ার আগে যদি টাইম কম থাকে তখন এরকম করি বাট বেশীরভাগ এটা কাজে লাগে না and বাইরে থাকলে তো এইটাই ধুলা পড়বে তাই।”
সৈকতের এত বড় explanation এ আমার চুল শুকাও হয়ে গেছে।আমি ওকে হেয়ার ড্রায়ার টা ফেরত দিয়ে বললাম”এখন বাইরেই রাখেন! আমার কাজে লাগবে!”
“সো? এখন কি করবা?”
“কি করার ইচ্ছা আছে??”
সৈকত আমার আরেকটা কাছে এসে বললো”যা সবাই করে তাই?”
“ওহ তাই? তাহলে চলেন ঘুমাই”এই বলেই আমি শুয়ে পড়লাম।
“হুহ!”
______________
সারাদিনের ক্লান্তিতে আজও আমি আর সৈকত ঘুমিয়ে পড়লাম।আজ সবার সাথে শুধু পরিচিত হয়েছি। আমার আর সৈকতের মিলেমিশে থাকাকে কেউ কেউ ভাল বলছেন আবার কেউ কেউ শাশুড়ি মাকে যেয়ে বলছেন এটা লাভ ম্যারেজ ছিল কিনা?
তখন শাশুড়ি মা বলেছেন আমাদের বিয়ে কয়েকমাস আগেই ঠিক হয়েছিল তাই ভাবটা আছে আমাদের মধ্যে।
সত্যিই তাই!
যদি চাচার বলার সাথে সাথে আব্বুও মেনে যেত তাহলে বিয়েটা কয়েকদিনের মধ্যেই হয়ে যেত। তখন হয়তো আমি বা সৈকত কেওই এটা মানতে পারত না।
কাল আমাদের বাসায় যাওয়া হবে আহ! আম্মুকে দেখতে পাব।
চলবে….
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)