নীলচন্দ্র
পর্বঃ০৩
জাহান আরা
চাচীঃ চন্দ্র এক ছেলের সাথে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে এই শোকে ওর বাবা স্ট্রোক করে মারা গেছে।আপনি এই মেয়ের রূপ দেখে ভাবছেন ভালো,যতোটা দেখতে মনে হয় ততোটা ভালো না।
চন্দ্রর চাচীর মুখে এই কথা শুনে ইমতিয়াজ সাহেব গম্ভীর হয়ে যান।
শায়লাঃ কি হয়েছে??
ইমতিয়াজঃ চন্দ্র মেয়েটা এক ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে,ওর বাবা মেয়ের শোকে স্ট্রোক করে মারা গেছে।
আমি বলে ছিলাম ওর আমাদের লেভেলের না,এসব থার্ডক্লাশ ফ্যামিলির মেয়ের প্রেমে তোমার গর্দভ ছেলে কিভাবে পড়ে আমি সেটাই বুঝি না,তোমার ছেলেকে বুঝিয়ে বলো যে আমি আগামী মাসেই সিমির বাবা দেশে ফিরলে বিয়ের দিন তারিখ পাকা করবো,ও যাতে বিয়ের জন্য মেন্টালি প্রিপারেশন নেয়।
”
”
”
”
”
”
”
ঢাকায় এসে আমার ভার্সিটির এক ফ্রেন্ডে রুমার সাথে দেখা করলাম,ওর কাছে নিজের সব কথা শেয়ার করলাম।
ওর সাথে ১ মাস থাকার ব্যবস্থা ও করে দিলো,এই একমাসে আমি জব ট্রাই করবো।
সেদিন দুপুরেই রুমা জানালো আমি চাইলে একটা টিউশনি করাতে পারি একটা ভীষণ বড়লোকের ছেলে তবে ভীষণ দুষ্ট ছেলে তাই কোনো টিচার ২ মাস থাকে নি এখনো,রুমাকে অফার করেছে কিন্তু পিচ্চির এসব রেকর্ড শুনে রুমা আর ট্রাই করে দেখে নি ভুলে ও।
আমিঃ তাহলে তুই ব্যবস্থা করে দে,আমি আপাতত ১ মাস টিউশনি টা করি,পাশাপাশি জবের ট্রাই করবো।
রুমা তখনই যোগাযোগ করলো,ওনারা বিকেলে যেতে বললো আমাকে,রুমা আমাকে বাসার এড্রেস দিলো।
”
”
”
”
”
”
শুভকে নিয়ে বাসায় আসতেই দেখি মা মুখ কালো করে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
শুভ মায়ের মন খারাপ দেখে কোনো কথা না বলে উপরে চলে গেলো।
আমি গিয়ে মায়ের পাশে বসতেই মা আমাকে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আমিঃ কি হয়েছে মা,কান্না করছো কেনো?
মাঃ বাবা তুই ওই মেয়েকে ভুলে যা,ওই মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হবে না,তোর বাবা বলেছে আগামী মাসে তোর আর সিমির বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে সিমির বাবা আসলে দেশে।
আমিঃ কিন্তু কেনো মা??
মাঃ চন্দ্র বাড়ি থেকে একটা ছেলের সাথে পালিয়ে যায়,ওর শোকে ওর বাবা স্ট্রোক করে মারা যায়।ও গ্রামে নাই বাবা,তোর বাবা নিজে ফোন দিয়েছে ওদের বাড়ি,তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে কথা দে কোনো পাগলামি করবি না,নিজের ক্ষতি করবি না তুই।
মায়ের কথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে লাগলো,এ হতে পারে না,আমি কখনো তো এটা ভেবে দেখি নি,কিন্তু এখন তো চন্দ্র নাই,আমি কি করবো,আমি চন্দ্রকে ছেড়ে অন্য কাউকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।
আমি কিছু না বলে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।আমার আনন্দ,খুশী সব এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো।
হায়রে ভালোবাসা!!!
বড়ই অদ্ভুত তুই!!!!
”
”
”
”
”
”
রুমার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী এসে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম,এটা কারো বাড়ি নাকি রাজপ্রাসাদ!!!
এতো সুন্দর ডিজাইন,এতো আধুনিক।
আমার মতো কারো জন্য কি এরা গেইট খুলবে??
আমি কিছু বলার আগেই দারোয়ান এসে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি মিস চন্দ্র??”
আমিঃ হ্যাঁ আমি চন্দ্র।
দারোয়ানঃ আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছে।
আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম ধীর পায়ে।ভিতরে যেতেই একজন আমাকে নিয়ে এলো ছাত্রের পড়ার রুমে।
আমি বসতেই কিছুক্ষণ পর ছাত্র এসে হাজির।
আমিঃ কি নাম তোমার??
শুভঃ শুভ চৌধুরী
আমিঃ কোন ক্লাসে পড়ো??
শুভঃ ক্লাস থ্রি মিস।
আমিঃ প্রতিটি ক্লাসের কিছু রুলস থাকে,প্রতিটি মানুষের ও কিছু রুলস থাকে,আমার ও আছে।
আজকে আমি তোমাকে কিছু জিনিস জিজ্ঞেস করবো,তোমার সম্পর্কে জানবো,তারপর পড়াবো।
শুভঃ ওকে মিস
আমিঃ তোমার সবচাইতে প্রিয় সাব্জেক্ট কোনটা?
শুভঃ গণিত।
আমিঃ সবচাইতে অপ্রিয় কোনটা?
শুভঃ বাংলা
আমিঃ তোমার জীবনের লক্ষ্য কি??
শুভঃ ইমরান হাশমি হওয়া
শুভর এই কথা শুনে আমি বিষম খেলাম,এই ছেলে কি বলছে এসব।নাকি আমি ভুল শুনছি???
ও ইমরান হাশমি হতে চায়!!!
আমিঃ ইমরান হাশমি কে?
শুভঃ একজন অসহায় মেয়েদের সাহায্যকারী,যে সব মেয়েদের বিপদে পাশে দাঁড়ায়।
আমিঃ বুঝতে পেরেছি।
আচ্ছা এটা বলো তোমার এরকম একটা লক্ষ্যের কথা বলো যেটা ফুলফিল করবাই তুমি যেকোনো মূল্যে?
শুভঃ লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়া।
ওর ফ্ল্যাট টা কিনে নেওয়া।
আমি বুঝতে পারলাম এই ছেলের কেনো টিচার থাকে না।
আমি অন্য লাইনে চেষ্টা করতেছি এবার।
আমিঃ তুমি কখনো গরীব মানুষ দেখেছো শুভ?
এই কথা জিজ্ঞেস করতেই শুভর মন খারাপ হয়ে গেলো,প্রতিটি শিশুরই গরীব,অসহায় মানুষের প্রতি বিশেষ এক মায়া কাজ করে।
শুভঃ হ্যাঁ মিস দেখেছি,স্কুলে যাওয়ার সময় সবসময় দেখি।
আমিঃ ওনাদের দেখলে তোমার কেমন লাগে?
শুভঃ আমার খুব খারাপ লাগে মিস,যখন দেখি আমার বয়সী ছেলেমেয়েরা ভিক্ষা করছে,কাজ করছে অথবা খুব বৃদ্ধ কেউ।
আমিঃ তুমি যদি অনেক টাকার মালিক হও কখনো তখন ওদের জন্য কিছু করতে চাইবে কি??
শুভঃ হ্যাঁ মিস করবো।
আমিঃ শুভ,ইচ্ছে থাকা উচিৎ যেকোনো ভালো কাজের জন্য, নিয়ত পরিমাণে বরকত আল্লাহ দেয়,হাদিসে আছে,প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
তোমার যদি নিয়ত থাকে লিটনের ফ্ল্যাট কেনার তাহলে তোমার জীবন এখন থেকেই সেই রকম হবে,আর যদি নিয়ত থাকে অসহায়দের সাহায্য করার তাহলে জীবন অন্যরকম হবে,এখন তোমাকে ভাবতে হবে তুমি কি চাও,একটা তোমার ভালো চাওয়া আরেকটা খারাপ চাওয়া।
শুভঃ মিস আমি অবশ্যই অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে চাই।
আমিঃ গুড,এবার শুনো,অসহায়দের সাহায্য করার জন্য তোমাকে অবশ্যই আগে লেখাপড়া ঠিকমতো করতে হবে।
জীবনে লেখাপড়ার বিকল্প নাই,থাকুক না বাবার অনেক টাকা পয়সা,কিন্তু তাতে লাভ নেই,নিজের সম্বল ইহকালের জন্য লেখাপড়া আর পরকালের জন্য নেক আমল। লেখাপড়া মরলে এই জীবন সুন্দর হবে সেই সাথে নেক আমল করতে হবে পরকালের জন্য।
পরকাল কি তুমি জানো?
শুভঃ মৃত্যুর পরের জীবন।
আমিঃ হ্যাঁ,মানুষ পৃথিবীতে যা করে তার সব কিছুর হিসাব আমাদেরকে মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে দেওয়া লাগবে,এখন তুমি ভালো কাজ যদি করো তো পরকালে পুরস্কার পাবে আর খারাপ কাজ করলে তিরস্কার,মানে শাস্তি। দুনিয়া হচ্ছে শস্যক্ষেত,তুমি যেমন ফসল ফলাবে তেমন ফল আখিরাতে পাবে।
আমরা দুনিয়ার সুখ শান্তির পিছনে,ধন দৌলতের পিছনে এরকম করে ছুটতে থাকি যে ভুলেই যাই আমাদের পরকালে সবকিছুর জবাব দিতে হবে,দুনিয়াবি সুখ শান্তিতে ঢুবে পরকাল কে নষ্ট করি,অথচ আমরা চাইলে খুব সহজেই আমাদের দুনিয়া আখিরাত ২ টাই ভালো রাখতে পারি।
শুভঃ মিস একটা প্রশ্ন❓
আমিঃ বলো।
শুভঃ আপনি এভাবে বোরকা পড়েছেন কেনো?
আমি আমার আম্মুকে কখনো বোরকা পরতে দেখি নি,আমার স্কুলে কোনো টিচারকে ও না,শুধু আমার বড়বুকে দেখি বাহিরে যেতে বোরকা পরে,আমি তো জানতাম এটা বৃদ্ধ হলে পরে মানুষ।
আমিঃ পর্দা করা ফরজ,নামাজ রোজার মতো।
শুধু যে বৃদ্ধ হলে কেউ পর্দা করবে তা না শুভ,আমি যখন ক্লাস ৯ এ উঠি,তখন থেকে পর্দা করতে শুরু করি।তবে মাঝেমাঝে আমাকে পর্দার বাহিরে যেতে হয়েছে অনিচ্ছাকৃত ভাবে,যার জন্য আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
শুভঃ মিস আমাকে কেউ কখনো এভাবে বুঝায় নি।আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে মিস,আমি আপনার কাছে অবশ্যই পড়বো,আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই চলবো।
আমিঃ মাশাল্লাহ। আল্লাহ তোমাকে কবুল করুক।
তারপর শুভকে পড়াতে শুরু করলাম।
পড়িয়ে বের হবার আগেই শুভর আম্মু মিসেস শুভ্রা এলো।
শুভ্রাঃ হাই মিস
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।
উনি থতমত খেয়ে গেলেন সালাম শুনে।
শুভ্রাঃ ওয়ালাইকুম সালাম,মিস আমি আপনাকে কি বলে কৃতজ্ঞতা জানাবো আমি জানি না,আমার ছেলেকে কোনো টিচার প্রথম দিন এসে ১ ঘন্টা পড়ায় নি,প্রথমদিনেই ২০ মিনিট পড়িয়ে চলে যেতে হয়েছে,এটা তাদের দোষ না,আমার ছেলে অতিরিক্ত দুষ্ট,আজকে প্রথম দেখালাম ও পড়ছে ১ ঘন্টা মিস।
আমিঃ সবই আল্লাহর মেহেরবানী,আমার টিউশনি টা খুব বেশী দরকার তাই হয়তো উনি এভাবে মিলিয়ে দিলেন।
শুভ্রাঃ আমি কি আপনার সম্পর্কে জানতে পারি মিস??
আমিঃ আমি চন্দ্র,অনার্স মাস্টার্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে,একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট।বর্তমানে চাকরি খুঁজছি,এই টুকুই বলার মতো আছে আমার সম্পর্কে।
শুভ্রাঃ আপনার ফ্যামিলি?
আমিঃ আমার ফ্যামিলি নেই।
এই কথা বলেই ওখান থেকে বের হয়ে এলাম আমার আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না ওনাকে নিজের সম্পর্কে।
সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুনি উপরে কোনো একটা রুমে খুব ভাঙচুর হচ্ছে।
বড়লোকের খামখেয়ালি মেজাজ এরা সব কিছুই করতে পারে।
সেদিনের মতো চলে এলাম রুমার বাসায়।
”
”
”
”
”
”
মায়ের কথা শুনেই রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম,ঝিম মেরে বসে রইলাম বিছানায়।
বসে থাকতে থাকতে একসময় মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো,উঠে রুমের সব কিছু ভাঙতে শুরু করি,ভাঙচুর না করলে কখনো আমার মেজাজ ঠান্ডা হয় না।
আমি কিছুতেই মানতে পারছি না যে আমার চন্দ্র অন্য কারো সাথে পালিয়ে যেতে পারে,চন্দ্র এরকম মেয়ে হতেই পারে না,সেই প্রথম বার আমি চন্দ্রকে দেখেছি ক্যাম্পাসে,আশেপাশে সব মেয়ের মাঝে চন্দ্র ছিলো বোরকা নেকাব পরা,যে সহজেই আমার চোখে পড়ে যায়।
আমি তো চন্দ্রকে ভালোবাসি,আমি তো ওর সাথে প্রেম করতে চাচ্ছি না,ওকে বিয়ে করতে চেয়েছি তাহলে আল্লাহ কেনো আমার ভাগ্যে রাখলো না চন্দ্রকে।
চন্দ্রকে আমি জীবনে একবার দেখেছি,তাও দুর্ঘটনা ছিলো যেদিন ওর বাবাকে আমি মেরেছিলাম,আমার ভালোবাসা তো পবিত্র ছিলো,আমি কই খুঁজবো এখন চন্দ্রকে???
”
”
”
”
”
”
”
বাসায় ফিরতেই দেখি রুমা হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে।
আমিঃ কিরে কি হয়েছে??
রুমাঃ তোর স্টুডেন্টের মা,ডাক্তার শুভ্রা নিজে কল দিয়েছে আমাকে তোর সম্পর্কে জানার জন্য।
আমিঃ কি বলেছে উনি??তুই কি বলেছিস??
রুমাঃ তোর সম্পর্কে জানতে চেয়েছে,আমিও তোর সম্পর্কে সব বলেছি ওনাকে,আমার তো মনে হয় তোকে ওনার বেশ মনে ধরেছে,উনি তো বললো ওনার ছেলে নাকি তোর কাছে পড়বে বলেছে তোকে ছেলের ও পছন্দ হয়েছে।
আমিঃ আমার অনুমতি ছাড়া আমার ব্যক্তিগত জীবন ওনার সাথে শেয়ার করা তোর উচিৎ হয় নি রুমা।
রুমাঃ আমি তো ভুল কিছু দেখছি না এখানে,যা সত্যি আমি তাই বলেছি।তোর চাচীর মতো এতো জঘন্য একজন মহিলার কথা সবাইকে জানানো উচিৎ।
রুমাকে কিছু না বলে আমি কিচেনে চলে গেলাম খাবার বানানোর জন্য।
পরেরদিন বিভিন্ন জায়গায় চাকরি খুঁজতে বের হলাম,একটা ছোটখাটো চাকরি হলেই আমি খুশি,যাতে খেয়েপড়ে বাঁচা যায় আমার।
কোথাও কিছু হলো না,সব জায়গায় নো ভ্যাকান্সি দেওয়া।
বিকেলে শুভকে পড়ানোর জন্য গেলাম,শুভ খুব ট্যালেন্টেড,আমার নিজের ও ওকে পড়াতে ভালো লাগতেছে।
আমিঃ শুভ তুমি কি জানো তুমি যে খুব মেধাবী??
শুভঃ হ্যাঁ মিস জানি তো আমি,আমার চাচ্চুর মতো মেধাবী আমি।
আমিঃ বাহ!! ভালোই তো।
শুভঃ মিস আজকে আমার খুব মন খারাপ জানেন।
আমিঃ কেনো??
শুভঃ আমার চাচ্চু আমার ভীষণ প্রিয়,আমাকে ভীষণ আদর করে উনি,গতকাল থেকে উনি রুম থেকে বের হচ্ছে না,খাবার খাচ্ছে না,কারো সাথে কথা বলছে না,রুমে শুধু ভাঙচুর করে যাচ্ছে।
আমিঃ এরকম করার কারণ কি ওনার??
শুভঃ আমি এসব বললে আপনি আমাকে খারাপ ভাববেন না তো?
আমিঃ না কেনো ভাববো??
বলো তুমি
শুভঃ আমার চাচ্চু একজনকে খুব ভালোবাসতো,কখনো তাকে নাকি বলতে পারে নি,চাচ্চু ওনার রুমের সামনে গিয়ে নাকি গিটার বাজাতো,ওনার জন্য অনেক রকমের গিফট পাঠাতো,অনেক সারপ্রাইজ দিতো।দুজনেই একই ভার্সিটির ছিলো,ওই আন্টি নাকি জানেই না আজ পর্যন্ত যে ছেলেটা কে।চাচ্চু কখনো নিজেকে তার সামনে প্রকাশ করে নি,অথচ আড়ালে ভালোবেসে গেছে।
শুভর কথা শুনে আমার বুকের ভিতর কেঁপে উঠে,এই কি সেই তাহলে???
শুভঃ চাচ্চু দাদুভাই,বড়বুকে বলেছে নাকি ওই আন্টির কথা,দাদুভাই চাচ্চুর বিয়ে ওনার বন্ধুর মেয়ের সাথে দিতে চেয়েছে কিন্তু চাচ্চুর পাগলামি আর ভালোবাসা দেখে আমার দাদুভাই ও রাজী হয়েছে,দাদুভাই নিজেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে বলেছে,কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার চাচ্চুর,দাদুভাই ফোন করে তাদেরকে বলতে নিছে তখনই জানতে পারে ওই আন্টি নাকি অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে,এবং ওই আন্টি পালিয়ে যাওয়ায় নাকি ওনার বাবা ও স্ট্রোক করে মারা যায় গতকাল।
আমি এবার একটু স্বস্তি পেলাম,কি অদ্ভুতভাবে আমার সাথে মিলে যাচ্ছিলো সব কিছু,আমি তো ভেবেছিলাম এই মানুষ টাই সেই মানুষ,কিন্তু ওনার ভালোবাসার মেয়ে তো অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে আর আমি তো আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়ে সব ছেড়ে চলে এসেছি।
শেষের টুকু যদি মিলে যেতো আমি একটা ভরসার মানুষ পেতাম বাবার পরে,সোজা গিয়ে তাকে বলতাম আমাকে বিয়ে করবেন,আমি একটা নিরাপদ আশ্রয় চাই এই জীবনে আমার আপন আর কেউ নাই।
আমি কবে তাকে খুঁজে পাবো,অনার্সের পর আর তাকে পাই নি,হয়তো এতোদিনে বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছে সে ও।
শুভর মন খারাপ, আমার ও আজ অনেক দিন পরে কাউকে ভেবে মন খারাপ হয়ে গেলো।
শুভঃ মিস আম্মু আপনার জন্য একটা খাম দিয়ে গেছে, আম্মু তো হাসপাতালে আমাকে বলেছে আপনাকে দেয়ার জন্য।
আমি খাম খুলতেই দেখি জয়েনিং লেটার।
আমি পুরোপুরি শকড হয়ে গেলাম এটা দেখে।
শুভঃ এটা আপনার জয়েনিং লেটার মিস,আমার আব্বুর অফিসের,আম্মু রাতে আব্বুকে বলার পর আপনার কথা আব্বু খুব খুশি হয়েছে,আব্বু বলেছে যে আমার মতো ত্যাঁদড় ছেলেকে সোজা করে ফেলতে পারে সে একটা ডায়মন্ড না হয়ে যায় না,অবশ্যই তাকে মূল্যায়ন করা উচিত,আপনার বায়োডাটা কালেক্ট করে দেখেছে আব্বু আপনি ও নাকি খুব ট্যালেন্টেড মেয়ে,আব্বু নিজেই আপনাকে জব অফার দিচ্ছে তাই মিস।
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ,তোমার আম্মুকে আমার সালাম জানিও।
শুভকে তারপর পড়িয়ে বাসায় ফিরে এলাম,ইশশ আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছে।
বাসায় গিয়ে রুমাকে সব জানালাম।
রুমা ও খুব খুশী হলো শুনে।
রাতে একটা কল এলো আমার নাম্বারে।
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম
~ আপনি কি চন্দ্র বিনতে হাবিব বলছেন?
আমিঃ জ্বী
~ আমি চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে বলছি,আগামীকাল থেকে আপনার জয়েনিং আমাদের কোম্পানিতে,আপনি কি আপনার জয়েনিং লেটার পেয়েছেন?
আমিঃ জ্বি পেয়েছি।
~ কংগ্রাচুলেশনস ম্যাডাম,আগামীকাল সকাল ৯ টায় আপনার জয়েনিং,সকালেই আপনার বাসার সামনে গাড়ি পৌঁছে যাবে।
আমার কাছে সবকিছু স্বপ্ন মনে হতে লাগলো।
পরদিন থেকে অফিস,শুভর টিউশন ২ টাই করে যাচ্ছি।
”
”
”
”
”
”
১ মাস হয়ে গেলো বাসা থেকে বের হচ্ছি না,অফিসে যাচ্ছি না,আমার চন্দ্র আমার পুরো জীবন এলোমেলো করে দিলো,আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই চিনতে পারছি না,চুল-দাড়ি অনেক বড় হয়ে গেছে।
দরজায় কে যেনো নক করলো,আমি জানি মা ছাড়া আর কেউ না।
দরজা খুলতেই দেখি শুভ দাঁড়িয়ে আছে।
শুভ এই একমাসে অনেকবার এসেছে আমি দরজা খুলি নি।
শুভ এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো আর কান্না করতে লাগলো।
আমিঃ আরে কি হয়েছে তোর?
শুভঃ চাচ্চু আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া তুমি আমার অনেক প্রিয়,আজ কতোদিন তুমি আমার সাথে কথা বলো না,খেলো না,চাচ্চু আমার একা একা ভাল্লাগেনা,তোমাকে কতোদিন দেখি না,আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাও না তুমি এখন আর।
চাচ্চু চলো না আমার সাথে আজ আমি তোমাকে ট্রিট দিবো চাচ্চু,আমি এখন নিয়মিত পড়ি আর এবার মান্থলি এক্সামে আমি টপ টেনে এসেছি জানো তো আমার নতুন মিস খুব ভালো পড়ায় আমাকে।
শুভর কথা শুনে মনে হলো অনেক দিন বাহিরে বের হই না,এভাবে তো আমি চন্দ্র কে আরো বেশী মিস করি,তারচেয়ে কোনোকিছুতে ব্যস্ত থাকলে আমার কষ্ট কম হতো,আমি আসলেই বোকা।
আমিঃ চল তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো,দাঁড়া চাচ্চু শেভ করে নিই আগে।
শুভঃ না চাচ্চু তোমাকে দাড়িতে বেশী স্মার্ট লাগে,চুল কেটে নিও সেটা ভালো,তবে বড় চুলেও তোমাকে ভাল্লাগে।
আমি শুভর কথা শুনে হেসে দিলাম।
আমিঃ ঠিক আছে তুই রেডি হ,আমি চুল একটু ছোট করে আসি।
শুভঃ আমার মিস আসবে এখন পড়াতে,তারপর যাবো আমি,তুমি ততক্ষণে চুল কেটে আসো।
আমিঃ বাহ!!
শুভ তো বেশ মনোযোগী হয়েছে লেখাপড়াতে।
শুভঃ সব আমার মিসের কারিশমা চাচ্চু,সি ইজ এ ডায়মন্ড,এটা আমার বাবা বলে মিস কে চাচ্চু,জানো না তো মিস বাবার অফিসে চাকরি করে,মিস নাকি অনেক এক্সপার্ট ভাবে সব হ্যান্ডেল করে,ক্লায়েন্টদের সাথে নাকি অনেক স্মার্টলি ডিল করে করে ফেলে কথাতে তাদেরকে কনভিন্স করে।
আমার অফিসের কি অবস্থা কে জানে,সব এলোমেলো হয়ে আছে মনে হয়।
চন্দ্র শুভকে পড়িয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে,নীল চুল কেটে বাসায় যাচ্ছে।
দাড়ি রাখাতে চন্দ্র নীলকে চিনতে পারে নি,যদি চিনতে পারতো তাহলে বাবার মৃত্যুর জন্য একবার হলেও তাকে দোষারোপ করতো।
বোরকা পরা একটা মেয়েকে বের হতে দেখে নীলের ভিতরটা কেঁপে উঠে,এই কে যাচ্ছে!!!
পিছন থেকে তাকিয়ে দেখে অফিসের গাড়িতে উঠে যাচ্ছে,তখন বুঝতে পারলো শুভর মিস।
এতো কাছাকাছি থেকেও নীল অথবা চন্দ্র কেউই কাউকে চিনতে পারলো না,ভাগ্য ওদের নিয়ে যে মজার খেলা খেলছে তা কেউই বুঝতে পারে নি।
চলবে??