নীলের_পরি (৩)

0
507

#নীলের_পরি (৩)

কিছুক্ষণ আগেই পরি কে অনুষ্ঠান মঞ্চে বসানো হয়েছে।
কাজী সাহেব দোয়া পড়ে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। পরির ভাবনা তে শুধু একটি মানুষ ই বিভোর হয়ে আছে। ইস আজকে যদি তার সাথে বিয়ে হত পরির, তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত? হয়ত হত কিংবা হত না। কিন্তু ভাগ্য যে পরি কে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা বোঝা দায়। কাজী সাহেব যখন পরি কে কবুল বলতে বললেন ঠিক সেই সময়ে ই গু লি র শব্দ পাওয়া গেল। আতঙ্কে সবাই আঁতকে ওঠল, হৈ হুল্লর পড়ে গেল। আবার গু লি র শব্দ হতেই সবাই থমকে গেল। স্টেজ এর গেট দিয়ে কালো পোশাক ধারী প্রায় ২০ জন ব ন্দু ক হাতে ভেতরে ঢুকছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেছে সবাই। পরির যেন এতে কোন হেলদোল নেই , সে তো মজে আছে তার ভাবনাতে। কালো পোশাক ধারী লোকদের মাঝ থেকে উঠে এল এক সুদর্শন তরুন। সাদা রঙের শার্ট এর সাথে ক্রিম কালারের ব্লেজার। কি স্নিগ্ধ রূপ তার! অনেক নায়ক কেই হার মানাতে সক্ষম সে। এই আতঙ্কের মাঝে ও তরুনীরা ছেলেটাকে দেখতে মিস করল না।
কিন্তু আঁতকে উঠল তখনি যখন ছেলেটার হাতে ব ন্দু ক দেখল। হঠাৎ করেই ছেলেটা স্টেজ এ ওঠে গেল, আর পরির পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। চারপাশের লোকজনের কৌতুহল সীমা নেই। অফুরন্ত কৌতূহল নিয়ে সবাই তাকিয়ে আছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে কেউ কোনো কথা বলতে ও পারছে না। তাই চোখ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন কেটে যাওয়ার পর পরির ধ্যান ফিরে। পরি সামনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠে। তার সামনে হাঁটু গেড়ে কেউ একজন বসে আছে। মুখ দেখার জন্য হালকা ঝুকতেই পরির সমস্ত শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে।
নীল। না,ওনি কি করে আসবেন? আর কেন ই বা আসবেন, নিশ্চয়ই পরি কোনো স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এই মুহূর্তে খুব করে চাইছে সে , স্বপ্ন টা যেন শেষ না হয়ে যায়। পরি এক দৃষ্টি তে নীলের দিকে চেয়ে থাকে। যখনি মনে পড়ে আজ অন্যজনের সাথে তার বিয়ে হয়ে যাবে তখনি পরি জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে। নীল দুহাতে জড়িয়ে ধরে পরি কে। না চাইতেও নীলের চোখের কার্নিশে পানি জমে যায়। আজ তার জন্য ই মেয়েটার এই অবস্থা শুধু মাত্র তার জন্য। কি করে পারল সে মেয়েটিকে এত কষ্ট দিতে! যাকে নিজের জীবনের সব টুকু দিয়ে ভালোবেসে গেল, নিজের অজান্তেই তাকে কষ্ট দিয়ে দিল। নীল পরির মাথা তে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আর কোন কষ্ট পেতে দিবে না তার পরি কে। কিছুতেই না, কোনো ভাবেই না।

চোখে পানির ছিটে তে জ্ঞান ফিরল পরির। চোখ খুলেই নিজেকে আবিষ্কার করল কারো বুকে। কোনো মতে ওঠে দাঁড়াতেই সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল তার পৃথিবী। নীল দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে,এটা মিথ্যে নয় তাহলে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে পরি, নীল ও তাই। দুজনের ই ইচ্ছে হচ্ছে হাজারো কথা বলতে কিন্তু এক অদৃশ্য দেয়াল কথা বলতে বাঁধা দিচ্ছে। কতক্ষণ তারা এভাবেই দাঁড়িয়ে রইল তা জানা নেই। একজন ছেলে এসে নীলের কাঁধে হাত রেখে বলল, “নীল ৯ টা বেজে গেছে।
এখন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার সময় নয়। তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে।”

ছেলেটার কথায় নীলের ধ্যান আসল। চোখের পানি আড়াল করে বলল,”ইয়া। অনিক তুই সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা কর।”

অনিক হালকা হেসে চলে গেল। পরি এখনো সেভাবে ই তাকিয়ে আছে। নীল পরির কাছে এসে কাঁপাকাঁপা হাত দিয়ে পরির দু গাল স্পর্শ করল। নীলের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে পরির শরীর শিউরে ওঠল। পরি ছলছল চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল, “নীল, আপনি।”

নীল মলিন হেসে বলল, “হ্যাঁ আমি। তোমার সামনে নীল দাঁড়িয়ে আছে পরি।”

নীলের মুখে পরি নাম টা শুনে চমকে উঠল মেয়েটি। কত বছর পর আজ তার মুখ থেকে পরি নাম টা শুনতে পেল ও।
নীলের পরি বলে ডাকটা বার বার কানে বেজে চলছে।
মনে হচ্ছে কেউ রেকডিং ছেড়ে দিয়েছে। নীল পরির গালে হাত রেখেই বলল,”এই মুহূর্তে তোমায় আমি বিয়ে করব পরি। তোমার মতামতের প্রয়োজন নেই আমার কাছে।
তুমি যদি বলো আমায় বিয়ে করবে না তবু ও আমি তোমায় এই মুহূর্তে ই বিয়ে করব।”

পরি বিয়ে কথা টা শুনে স্থির হয়ে গেল। বিয়ে, নীল তাকে বিয়ে করবে? সমস্ত ঘটনাই আশে পাশের সবাই নীরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছিল। নীল কিছু একটা ভেবে ,পরি কে দুটো বিউটিশিয়ান দিয়ে রুমে পাঠাল।

পরির বাবা আফজাল সাহেব চেচিয়ে বললেন, “কি হচ্ছে কি এসব!”

নীল আফজাল সাহেবের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। তারপর কাউকে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করতেই দুটো লোক এসে আফজাল সাহেব কে সরিয়ে নিলেন। ভাই কে সরিয়ে দেওয়ায় সুলতানা বেগম হুমরি খেয়ে পড়লেন। সে চেচিয়ে বলল,”এই ছেলে তুমি কে?
আর পরির সাথে তোমার বিয়ে দিব না আমরা। পরির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”

সুলতানা বেগমের কথায় নীল উচ্চ শব্দে হেসে উঠল।
এই মূহুর্তে সুলতানা বেগমের মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সবথেকে বড় মজার কথা শুনিয়েছে। নীল কে এমন ভাবে হাসতে দেখে সুলতানা বেগম ভ্রু কুচকালেন। নীল হাসি থামিয়ে সুলতানা বেগমের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর বাঁকা হেসে বললেন,”ফুপি শাশুড়ি যে। খুব তেজ দেখছি, তা ফুপি আম্মা খুব বেশি লাগল বুঝি? সমস্ত প্ল্যান নষ্ট হয়ে গেল নাকি?”

নীলের কথাতে সুলতানা বেগম ভড়কে গেলেন। কোনো রকম নিজেকে সামলে বললেন, “কি বলছ কি তুমি!
প্ল্যান,কিসের প্ল্যান?”

নীল কোমরে হাত গুজে বলল,”আভী তো পিকচার অর ভি বাকি হে। বড্ড ধরিবাজ আপনি, ফুপি আম্মা নিজের চালাকি বন্ধ করুন। আর কত দিন চালাকি করবেন? এবার তো নিজেকে সামলান। এত কালে ও তো কিচ্ছুটি করে ওঠতে পারলেন না। আর আজ এত সুন্দর প্ল্যান করে নিলেন। বাহ ফুপি শাশুড়ি আম্মা বলতে হবে আপনার ধৈর্য আছে। নাহলে এত দিন খেটে খুটে সুন্দর প্ল্যান টা করতে পারতেন না। কিন্তু জানেন তো পৃথিবী টা গোল, তো আপনি যেই প্ল্যান ই করুন না কেন শেষ মেষ হয়ে যায় গোল্লা। আর বলা বাহুল্য মানুষ হাত করার জন্য আপনি বেস্ট। কত সুন্দর ভুলিয়ে ভাই আর ভাইয়ের বউ কে হাত করে নিয়েছেন! কি ট্রিক টাই না ইউস করেছেন। মৃ ত মানুষের নামে জলজ্যান্ত মিথ্যে বানিয়ে নিয়েছেন। তা ও সেই ব্যক্তি টা নিজের মা। বাহ ফুপি শাশুড়ি আম্মা বাহ।” এই বলেই হাত দিয়ে তালি বাজাতে শুরু করল নীল। তারপর আবার বলল,” বলতেই হয় আপনার এলেম আছে বটে। দুই কাল গিয়ে তিন কালে ঠেকেছেন কিন্তু মাথার মধ্যে বদ বুদ্ধি গুলো এখনো ঘোরাঘুরি করছে। আজ আছেন তো কাল নেই তারপর ও বদ বুদ্ধি গুলো গেল না। শয়তান আসলে শেষ কালেও শয়তানি করে যায়।”

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here