নীল আঁচল,পর্ব_৪

0
1959

নীল আঁচল,পর্ব_৪
সুলতানা সিমা

একটা সোফার পিছনে লুকিয়ে আছে, নীলের বাবা মা বোন আর সে। নীলের বাবা হাঁপাচ্ছেন। আর তাঁর মা তো এক নাগাড়ে দোয়া পড়ে যাচ্ছেন। নীরা ফ্যাসফ্যাস করে কান্না করছে। নীল দু হাত জড়ো করে ভয়ে কাঁপছে। এদের এমন কান্ড দেখে আঁচল রুমে দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। তাঁর হাসির শব্দ দেয়ালে লেগে ভয়ানক প্রতিধ্বনি হচ্ছে। চেষ্টা করেও সে হাসি থামাতে পারছে না। নীলের বাবার লুঙ্গি পেছাতে পেছাতে দৌঁড়ানোর দৃশ্যটা মনে পড়লেই তাঁর পেট ফেটে হাসি আসছে। নীলের মায়ের জোরে জোরে দোয়া পড়ার কথা মনে হলে তো, হাসি আর থামছেই না। আঁচলের হাসির শব্দ শুনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো ভূত হাসছে। নীলের মা কাঁপা কাঁপা গলায় বলছেন “লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তুম মিনাজ্জুয়ালিমিন।” নীলের বাবা বললেন “এ এ এই নীল। ব ব বউমা কে ডাক দে।” নীল ক্ষেপে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল “চুপচাপ মুখ বন্ধ করে বসে থাকো। ওই মেয়েটা তো বেড়ালের রূপ ধারন করেছে।” নীরা কেঁদে কেঁদে বলল “ক্যাটবেরী রে ওই ক্যাটবেরী, তুই কই গেলি রে ক্যাটবেরী” নীরার কথা শেষ হতে না হতেই মিউউউউউ বলে বেড়াল এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁদের উপর। সবাই এক সাথে “ওরে বাবা রেএএএ” বলে যে যেভাবে পারে সেভাবে দৌঁড় দিলো। নীল আগে আগে দৌঁড়াচ্ছে, নীলের পিছু পিছু সবাই। নীল গিয়ে তাঁর রুমে ঢুকে দেখল আঁচল দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে তাকিয়ে দেখল বেড়াল আছে কিনা। বিড়াল দৌঁড়ে আসছে। নীল আঁচলের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলের বাবা মা বোন সবাই এসে আঁচলের পিছনে গেলো। নীলের মা এখনো দোয়া ইউনুস পড়ছেন। বেড়াল এসে আঁচলের সামনে দাঁড়ালো। যেহেতু এটা পোষা বেড়াল। আর আঁচল তাকে একটু আগে ধরে রঙে রাঙানোর জন্য অত্যাচার চালিয়েছে। তাই আঁচলকে দেখে সে উল্টো পথে দৌঁড় দিলো। আঁচল পিছন ঘুরে তাকালো। সবাই জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আঁচল বলল”

“ছিঃ ছিঃ ছিঃ,আমার শশুড় বাড়ির মানুষ এতো ভিতু। সামান্য একটা বেড়াল দেখে দৌঁড়ায়। আর স্বামী সেও কিনা পুরুষ মানুষ হয়ে কোনো সাহস নাই।” বলেই আঁচল রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আঁচল যাওয়ার পরে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। সারাদিন আর কেউ রুম থেকে বের হলো না। রাতে আঁচল সবার রুমে রুমে নিয়ে খাবার দিয়ে আসলো। আঁচলের মনে হলো সে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। বেড়াল ধরে নিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে একটা টাওয়াল নিয়ে মুছে দিয়ে,সেটা ছেড়ে দিলো।

ঘড়ির কাঁটায় রাত দেড়টা বাজে। ফোনের ভাইব্রেশনের কাঁপানো শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আঁচলের। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নীল কল দিচ্ছে। পাশ ফিরে তাকাল আঁচল। নীল বিছানায় নেই। ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় উঁকি দিলো। কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে। আঁচল ফোন কেটে দিলো। ফোন কাটার পরে মেসেজ আসলো “তোমায় খুব মনে পড়ছে।” আঁচল মৃদু হাসলো। নীল যে এখনো তাঁকে ভালোবাসে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো রিপ্লাই না করে ফোন সুইচঅফ করে ঘুমিয়ে গেলো সে। আর মাত্রই তো পাঁচদিন। তারপর তাঁরা আবার আগের মতো এক হয়ে যাবে। তখন না হয় ভালোবাসা বাসি হবে।

সকালে ঘুম থেকে উঠতে আঁচলের একটু দেরি হলো। ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে ওয়াসরুম গেলো। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়েই সে থমকে গেলো। একজন হুজুর ধোঁয়া উড়ানো বাটি হাতে নিয়ে ঘরের চারদিকে ঘুরছেন আর বিরবির করে কী সব পড়ছেন। আঁচলের যে কী পরিমাণ হাসি পাচ্ছে, তা বলে বুঝাতে পারবে না। লোকটাকে দেখেই লাগছে সে একটা ভন্ড। আর তাঁর ভিতু স্বামীর বাড়ির লোক কিনা এই ভন্ডকে আনছে ভূত তাড়াতে? আঁচল রাগি চোখে হুজুরের দিকে তাকিয়ে তাকলো।

খুব মনোযোগ দিয়ে হুজুর উনার মন্ত্র পড়ছেন আর ঘরের চারদিকে ঘুরছেন। হঠাৎ হুজুরের চোখ গেলো আঁচলের দিকে। নীল একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, কোমর সমান চুলগুলা খোলা। চোখগুলা কেমন ভয়ানক লাগছে। হুজুর হাতের বাটি ফেলে “ওরে বাবা রে ভূত নেমে এসেছে” বলে দৌঁড় দিলেন সদর দরজার দিকে। নীলের বাবা মা নীরা নীল তাঁরা সিঁড়ির দিকে না তাকিয়ে, তাঁরাও হুজুরের পিছু দৌঁড় দিলো।

দরজায় ঢুকার পথে গিয়ে কে কার আগে বের হবে এ নিয়ে সবাই ধাক্কাধাক্কি লেগে গেলো। এসব দেখে আঁচল উচ্চ স্বরে হা হা করে হেসে উঠল। যা সবার ভয় দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়িয়ে দিলো। ধাক্কাধাক্কিতে হুজুর নিচে পড়ে গেলেন। হুজুরের উপর দিয়ে দৌঁড়ে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। হুজুরের এক পা থেকে জুতা খুলে গেছে। লুঙ্গির গিট খুলে গেছে। তিনি উঠে এক হাতে জুতা অন্য হাতে কোমরে লুঙ্গি চেপে দৌঁড় দিলেন। নীলের বাবা মা আর হুজুর জোরে জোরে পড়ছেন “লা হাওলা লা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম।”

পাশের বাসার ছাদে কয়েকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। এদের এসব দেখে তাঁরা ভাবলো ভূমিকম্প হচ্ছে। তাঁরা ভূমিকম্প ভূমিকম্প বলে নিচে নামতে লাগলো। ওদের দেখাদেখি ওই বাসার সবাই বেড়িয়ে আসলো। নীলের মা হুজুরকে বললেন “আমাদের বাসা থেকে এদের বাসায় চলে গেছে।” জুহুর লুঙ্গি পেছানোর জন্য জুতা হাত থেকে রাখলেন। আঁচল ছাদে উঠছিলো ওদের কান্ড দেখার জন্য। হুজুরের চোখে পড়ে গেলো। “ওরেএএএএএ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে।” বলেই লুঙ্গি ছেড়ে দৌঁড়। উনার দৌঁড় দেখে নীলরাও দৌঁড় দিলো। এদের দৌঁড় দেখে উপস্থিত সবাই দৌঁড় দিলো। লুঙ্গি না থাকায়। পাঞ্জাবীর দুই দিক ধরে আগে আগে দৌঁড়াচ্ছেন হুজুর, আর উনার পিছে পিছে সবাই। একদল মানুষ ভাবলো সবাই হুজুরকে মারার জন্য দৌঁড়াচ্ছে। তাঁরা এসে হুজুরকে ধরে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো। পরিস্থিতি বিগড়ে গেছে দেখে নীলের বাবা পিছন ঘুরে দৌঁড় দিলেন। যারা তাঁদের পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছিলো। তাঁরা একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে। “এই এতোক্ষণ সবাই দৌঁড়ালাম কেন?” ওই লোকটা বলল “কী জানি আমিও তো জানিনা কেন দৌঁড়ালাম।

চলবে….।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here