নীল আঁচল,শেষ পর্ব
সুলতানা সিমা
আজ আঁচলের ভিতুর ডিমের জন্মদিন। মানে তাঁর স্বামী নীলের জন্মদিন। নীলের বাবা মা বোন তো তিনদিন ধরে ঘর থেকেই বের হননি। নীলের মা সারাদিন তাসবীহ হাতে নিয়ে তাসবীহ পড়েন। নীরা তো এখন আমলদার হয়ে গেছে। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আঁচল কাল সারাদিন বসে বসে লিষ্ট করেছে । কী কী লাগবে না লাগবে। যেহেতু সে নীলকে সারপ্রাইজ দিবে তাই বাজারটা সে করবে। আর নীল বাইরে বের হবে বলেও তাঁর মনে হয়না। একটু আগে আঁচলের তিনটা কাজিন এসেছে। তিনজনই আঁচলের সমবয়সি৷ সবাই গেস্ট রুমে আছে। তাঁদের এখনো কেউ দেখেনি। দেখবে কিভাবে সবাই তো রুম থেকেই বের হচ্ছেনা। বিকালের দিকে নীলের বাবা মা নীরা নীল সবাই যে যার রুমে ঘুমাচ্ছে। আঁচল এই ফাঁকে বাজারে চলে গেলো। যেহেতু সে নীল রঙে লেপ্টে আছে, তাই বোরকা পড়ে হাত মুজা পা মুজা লাগিয়ে গেলো।
আঁচলের কাজিনরা গেস্ট রুমে টিভি দেখছে। একজন বলে উঠল “এই চলনা হরর মুভি দেখি।” তাঁর কথায় সবাই রাজি হলো। মুভি দেখা শুরু করলো সবাই। একজন টিভির ভলিউম বারিয়ে দিলো। হরর মুভি দেখে ভয় না পেলে কী চলে? নাইকা বের হতেই সবাই খুব জোরে হোঅঅঅঅঅঅ বলে চিৎকার করে উঠল।
হঠাৎ এমন চিৎকারে নীলদের বাসার সবার ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে সবাই দৌঁড়ে যে যার রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। সবাই সিঁড়ির কাছে এসে একজন আরেকজনকে জাপ্টে ধরে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। অনেক্ষণ কোনো শব্দ শুনা যায়নি দেখে কিছুটা ভয় কেটে গেলো সবার। নীলের বাবার খুব চাপ দিছে তাই তিনি ওয়াসরুমে গেলেন। কোমডে বসা মাত্রই ভূতের অদ্ভুত এক চিৎকার শুনা গেলো। সাথে উঠে তিনি হাফপ্যান্ট টানতে টানতে বেড়িয়ে আসলেন।
নীল তাঁর মা বোনকে ফেলে তাঁর বাবার রুমের দিকে দৌঁড়ে গেলো। নীলের মা লুঙ্গি ধরার মতো একহাতে শাড়ি ধরে এক হাতে নীরাকে ধরে দৌঁড়াতে দোঁড়াতে দোয়া পড়তে লাগলেন “লা লা লা লা ” ভয়ে উনি মুখ থেকে লা হাওলা লাকুয়াতা,,, বের করতে পারছেন না।
সবাই গিয়ে নীলের বাবা মায়ের খাটের নিচে ঢুকলো। নীলের বাবা ঢুকতে পারছেন না সবাই টেনে ঢুকালো। একের পর এক ভূতের চিৎকার ভেসে আসছে। নীলের মা ভয়ের চোটে ভুলবাল দোয়া পড়ছেন। নীলের বাবা পেটে হাত দিয়ে কাচুমাচু করছেন। উনার বায়ু চাপ পাচ্ছে। একটুপরে টাস করে পাঁদ মারলেন। সবাই নাক ছিটকে তাকালো। উনি মুখটা এমন করে রাখছেন যেন উনি অনেক কষ্টের মাঝে আছেন।
কিছুক্ষণ পরে খাটের নিচে থাকা অসম্ভব হয়ে গেলো। নীলের বাবার বায়ু ত্যাগের গন্ধে সবার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নীল নাকে ধরে তাঁর মাকে বলল “আম্মু এই বেটাকে বের করে দাও তো।” নীলের বাবা অসহায় গলায় বললেন “না না আর মারবো না।” মারবেন না বলা মাত্রই উনার এরেকটা পেলো। অনেক কষ্টে চেপে রাখলেন। কিছুক্ষণ পরে আবার আসলো। নীলের বাবা পাদ আটকাতে মুছড়াচ্ছেন। দাঁতে দাঁত চেপে জোর করে আটকাতে চাইছেন কিন্তু পারলেন না। এবারেরটা আরো শব্দ করে বের হলো। নীল আর নীরা নাক চেপে খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসলো। নীলের মাও আর বসে থাকতে পারলে না তিনিও বেরিয়ে আসলেন। কেউ রুম থেকে বের হলোনা। সবাই রুমের ভেতর থাকলো। নীলের বাবা খাটের নিচ থেকে মাথা বের করলেন। অনেক্ষণখানি বের হয়ে আর বের হতে পারলেন না। নীলকে ডাক দিয়ে বললেন “বাবা নীল একটা টান দে” নীল রেগে বলল “এখন বের হবা কেন ওখানে বসে পাদো।” নীলের বাবা কাতর গলায় বললেন “বাবা বের কর প্লিজ। আর একটাও মারিনি বিশ্বাস কর।” নীল তাঁর বাবাকে টেনে বের করলো। উনি বের হয়ে বসলেন মাত্র একসাথে অনেকগুলা মেয়েলী কন্ঠে চিৎকার ভেসে আসলো। নীলের মা খাটে উঠে বসছিলেন মাত্র। চিৎকার শুনে “লা হাওলা লা হাওলা লা লাওলা বলে খাটের নিচে ঢুকতে লাগলেন। নীরা নীলও আবার খাটের নিচে ঢুকে পড়লো। কিন্তু নীলের বাবা ঢুকতে পারছেন না। নীলকে টান দিতে বললেন নীল টান দিলো না। নীলের মা টান দিতে গেলে নীল বলল ” এই বেটার পাছা ঢুকাতে দিবানা। খাটের বাইরে থাকুক” নীলের বাবা কাতর স্বরে বললেন “বাবা আর মারবো না। একটা টান দে।” নীল টান দিলোনা। উনি এভাবেই থাকলেন, অর্ধেক খাটের ভেতর অর্ধেক বাইরে। কিছুক্ষণ পরে নীলের মা টাস করে পাদ মেরে দিলেন। নীল রাগি লুকে উনার দিকে তাকালো। খাটের তল থেকে বের হওয়ার ভয়ে তিনি না সূচক মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললেন,”আমি না তোর বাপ মারছে।” নীল তাঁর বাবার দিকে রাগি লুকে তাকালো। তিনি বললেন “আমি মারিনাই আল্লাহর কসম।” চুপচাপ বসে থাকলো সবাই।
ভূতের হুংকার শুনা যাচ্ছে। এক ভারি গলায় ফ্যাসফ্যাস করে কেউ বলছে “আমি চার হাজার বছরের পুরোনো আত্মা। আমার থেকে বাঁচা সহজ নয়।” তখনই নীলের বাবার পিঠের উপর এসে ক্যাটবেরী বসলো। উনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন। নীল ধমক দিয়ে বলল “চুপ চুপ একদম আওয়াজ করবা না।” নীলের বাবা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন “নী নী নীল আমার পিঠের ওপর নরম তুলতুলে কী একটা বসে আছে।” কথাটা শুনে নীল তাঁর বাবাকে ধাক্কিয়ে বের করে দিতে লাগলো। উনি আটকে থাকতে নীলের মাকে আঁকড়ে ধরলেন। নীলের মা কাঁপতে কাঁপতে শুধু পড়ছেন “ইন্নি কুন্তুম ইন্নি কুন্তুম ইন্নি কুন্তুম” ভয়ে উনি সব দোয়া ভুলে গেছেন।
অনেক্ষণ পরে শব্দগুলা আর শুনা যাচ্ছে না। সবাই আস্তে আস্তে বের হলো। নীলের বাবা আগে ওয়াসরুমে গেলেন। উনি ওয়াসরুম থেকে আসার পরে সবাই এক সাথে রুম থেকে বের হলেন। নীলের মা তাসবীহ হাতে নিয়ে কিচেনে গেলেন। নীরা ডাইনিং টেবিলে পানি খেতে গেলো। নীলের বাবাও এসে টেবিলে বসলেন। নীল ভয়ে ভয়ে নিজের রুমে গেলো। কালো বোরকা পড়া আঁচলকে দেখে “ওরেএএএ বাবারেএএএএ” বলে উল্টা পথে দৌঁড় দিলো। নীল দৌঁড়ে এসে নিচে নামছে দেখে নীরা আর তাঁর বাবা সব কিছু ফেলে ছুঁড়ে সদর দরজার দিকে দৌঁড় দিলেন। নীলের মা কিচেন থেকে ওদের দৌঁড় দেখে হাতের কুন্তি নিয়েই তিনিও দৌঁড়ে বেরিয়ে আসলেন।
নীল আর নীরা একটা পিলারের আড়ালে লুকালো। নীলের বাবা মা দৌঁড়ে এসে ছেলের মেয়ের পিছনে লুকালেন। নীলের মায়ের হাতের গরম কুন্তি নীলের পিঠে লাগলো। নীল লাফ দিয়ে উঠতেই তাঁর মায়ের হাতের কুন্তি গিয়ে পড়লো তাঁর বাবার উপর। উনি আহহহ বলে লাফ দিয়ে উঠলেন। নীল আর তাঁর বাবা দিলো দৌঁড় পুকুরের দিকে। নীলের মা নীরাকে টেনে দৌঁড়ে নীলদের পিছু পিছু গেলেন। সাথে উনার দোয়া তো আছেই।
আঁচল এবার প্রচন্ড রেগে গেলো নীলের উপর। এই ভিতুটাকে সে এতো ভালোবাসে ভাবতেই তাঁর রাগ উঠছে। ছাদে উঠে গিয়ে দেখলো নীলরা পুকুর পাড়ে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। আঁচল রুমে এসে তাদের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজালো। আঁচলের বোনরা সবাই তাকে হেল্প করলো। ১১ বাজে। আঁচল টর্চ লাইট হাতে পুকুর পাড়ে গেলো ভিতুর দলদের আনতে। কিন্তু তাকে দেখা মাত্রই নীলরা সবাই অন্যদিকে দৌঁড় দিলো। বাড়ির ডান পাশে ঘুরে এসে বাড়িতে ঢুকলো সবাই। আঁচল কপাল চাপড়ালো। সে এলো ঘরে নিতে আর সবাই তাকে দেখে উল্টা পথে দৌঁড়ে গিয়ে ঘরে ঢুকলো। আঁচল চলে গেলো তাঁর বাবা মাকে আনতে।
বাসায় এসে নীল ও তাঁর বাবা মা বোন সবাই অবাক হয়ে চারিদিকে তাকালো। কত সুন্দর করে চারদিক সাজানো হয়েছে। রুমের ডানদিকে অনেক সুন্দর করে ফুলদিয়ে লেখা হ্যাপি বার্থডে ভিতুর ডিম। অনেকগুলা রঙ বেরঙের বেলুন দেয়ালে বাঁধনো। কেউ জানেনা কী হচ্ছে এখানে। নীলের মা মনে মনে ভয় পাচ্ছেন। এগুলা জ্বীন-ভূতের কাজ কিনা ভেবে।
অনেক্ষণ পরে দরজা খুলার শব্দে সবাই সদর দরজার দিকে তাকালো। দরজা একটু একটু করে পুরোটা খুলতেই চোখে ভেসে উঠল আঁচলের মুখ। এক পা এক পা করে এসে আঁচল ঘরে ঢুকলো। দুধে আলতা গায়ে নীল রংয়ের একটা শাড়ী। লম্বা চুল গুলা খুলা, দু’হাত ভরে নীল চুড়ি। দেখতে একদম পরী লাগছে। নীলের চোখে মুগ্ধতা নেমে আসলো। আঁচলের মায়াবী চোখ দুটি তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। নীল আঁচলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকালো। এই শাড়ীটা আঁচলকে সে ওইদিন দিয়েছিলো যেদিন তাদের ব্রেকআপ হয়। আঁচল নীলের সামনে এসে দাঁড়ালো। নীলের বাবা মা নীরা সবাই আঁচলের দিকে তাকিয়ে আছেন। উনারা তাকে চিনতে পারছেন না। দেয়ালের ঘড়িতে ১২টার ঘন্টা বাজলো। আঁচল নীলকে বলল “হ্যাপি বার্থডে আমার ভিতু স্বামী।” আঁচলের কথায় সবার কপালে ভাঁজ পড়ল। নীল বলল”স্বামী মানে?” আঁচল বলল “নীল নীল নীলাঞ্জনা,নীল রংয়ের ভূত। নীল মেয়েকে বিয়ে করার ভূত আশা করি মাথা থেকে চলে গেছে।” নীল এখনো হাঁ হয়ে আছে তাঁর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আঁচল বলল “বুঝনি?” নীল না সূচক মাথা নাড়ায়। আঁচল ডাক দিলো তাঁর বাবা মাকে। আঁচলের বাবা মা আসতেই সবাই ৪৪০ ভোল্টের শকড খেলো। নীল আঁচলকে বলল,
_এ এরা তো আমার শশুড় শাশুড়ী।
_হ্যাঁ। আমার বাবা মা তো তোমার শাশুড় শাশুড়ী হবে।
_কিন্তু এরা তো নীলার বাবা।
_আমিই তো সেই নীল নীলা।
_কিইইইইইইই?” নীলের বাবা মা নীল সবাই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। নীল অবাক হয়ে আঁচলের দিকে তাকালো। তারপর বলল “তুমি এতোকিছু করেছো?” আঁচল বলল”আমি কিছুই করেনি। আমি শুধু তোমার মাথা থেকে নীল রংয়ের ভূত ছাড়াতে চাইছিলাম। কিন্তু তোমার যে উল্টো ভূতে ধরবে আমি কী জানতাম?” নীল ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। প্রচন্ডরকমের শকড খেয়েছে সে। এতোদিন তাহলে শুধু শুধু দৌঁড়ের উপির ছিলো? নীলের বাবা মা বললেন” তারমানে আমাদের বাড়িতে কোনো ভূত টূত নাই?” আঁচল মুচকি হেসে না সূচক মাথা নাড়ালো। নীলের মা বললেন” দেখেছেন আমি আগেই বলেছিলাম। ভূত বলতে কিছু নেই।” নীরা বলল” তুমি এটা কখন বললে আম্মু।”
_আমার একটা প্রশ্ন আছে।” সবার কথার মাঝখানে বলে উঠল নীল। সবাই থেমে গেলো। নীল আঁচলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল “আচ্ছা তুমি নীল হইছিলা কীভাবে?
_রং লাগিয়ে।
_তারমানে তুমি এতোদিন গোসল করো নাই?
_অবশ্যই করেছি।
_তাহলে রং ছুটে নি কেন? বোকা বানাও আমায়? নীলকে বোকা বানাও? ” খুব ভাব নিয়ে বলল নীল। আঁচল রেগে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “একটা বেড়াল দেখে যে পুরুষ দৌঁড়ায় তাঁর এভাবে ভাব দেখানো মানায় না। তুমি পুরুষ তো? আমার না সন্দেহ হচ্ছে।” নীল চোখ বড় বড় করে তাকালো। আঁচল বলল “আচ্ছা তুমি এতো ভিতু কেন বলোতো? কোথায় তুমি সবাইকে সাহস দিবে উল্টো তুমি সবার পিছু পিছু দৌঁড়াও।” নীল মাথা নিচু করে ফেলল। আঁচল নীলের বাবা মাকে সালাম করলো। তারপর সবাইকে বলল “আপনারা সবাই আমার জন্য অনেক ভয়ে ছিলেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন আপনারা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলেন। আমি আপনাদের কখনো ভয় দেখাতে চাইনি। আমি যা করেছি নীলের পাগলামো দূর করতে করেছি।” নীলের মা আঁচলকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললেন “মাশা আল্লাহ। আমার বউমাটা দেখি অনেক মিষ্টি।” আঁচল মৃদু হাসলো। তারপর নীলের হাত ধরে কেকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলের কাজিনরা নীলের পরিবারের সবাই এসে দাঁড়ালেন। নীল কেক কাটলো। প্রথমেই আঁচলের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ঠিক তখনই টাস করে একটা শব্দ হলো। নীল কেক ফেলে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। নীলের বাবা মা নীরা তারাও নীলের পিছন পিছন দৌঁড়। নীলের মা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলছেন “লা হাওলা লাকুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম”। “এদিকে আচমকা এমন দৌঁড় দেখে আঁচলের বাবা মা বোকার মতো তাকিয়ে থাকেন। আর তাঁর কাজিনরা হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খায়।
সমাপ্ত।
Good Story
Good Story
আজকে ইংলিশ দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা।
গল্পঃ পরে হাসতে হাসতে আমি শন ভুলে গেছি😂😂🤣🤣
এখন মুর পরীক্ষার কি হবে??😤🔪😂😂🤣🤣🤣