নীল আঁচল❤,সূচনা পর্ব

0
3779

নীল আঁচল❤,সূচনা পর্ব
সুলতানা সিমা

আচঁলঃ ওই নীলের বাচ্চা নীল। তুই জীবনে আমারে ফোন দিবিনা। তোরে বলছি না, তর লগে আমার ব্রেকআপ?
নীলঃ ওই শুন, প্রথমত আমি আফজালের বাচ্চা। দ্বিতীয়ত, আমি তর সাথে প্রেম করতে ফোন দেইনাই। আমার বিয়ের দাওয়াত দিতে ফোন দিছি। তুই না বলছিলি, আমি নীল রংয়ের মেয়ে পাবোনা। শুন মেয়ে পেয়ে গেছি, আজ দেখতে যাচ্ছি। সত্যি সত্যি মেয়েটা নীল রংয়ের হলে আজই বিয়ে হবে।
আচঁলঃ আগে জানতাম তুই পাগল। এখন মনে হচ্ছে তর চৌদ্দগুষ্টি পাগল। রাখ ফোন।


ছেলেটার নাম নীল। সে নামে যেমন কাজেও তেমন। নীল রং তাঁর খুব প্রিয়। তাঁর ঘরের জানালা, দরজার পর্দা, কার্পেট,বিছানার চাদর,ঘরের আসবাবপত্র সব কিছুতে নীলের সমাহার। পুরু বাড়িটা নীল রঙে সাজানো। শুধু তাই নয় বাথরুমের কমোডটাও তাঁর এই নীল রং থেকে রক্ষা পায়নি। তাঁর বাড়ির নাম নীল মহল। তার একটা জামা কাপড়ও নীল রং ছাড়া অন্য কোনো রংয়ের নেই। সমস্যা এসবে না। সমস্যা হলো তার জিএফ কে নিয়ে। তাঁর জিএফ আচঁলের নীল রং ভালো লাগেনা। সবার পছন্দ তো আর এক হয়না। কিন্তু নীল এটা মানতেই চায়না। তার কথা হলো আচঁল যেন নীল রং দিয়ে একেবারে লেপ্টে থাকে। খুঁজলে পাওয়া যায় আচঁলের একটা জুতাও নাই নীল রংয়ের।

নীল একদিন আচঁলের জন্য একটা শাড়ি কিনলো। আচঁলের সামনে হাটু গেড়ে দু’হাতে শাড়িটা বাড়িয়ে ধরলো। তারপর নীল রং নিয়ে যত কবিতা গান আছে সব গাইতে লাগলো। আচঁল প্রথমে খুশি হলেও নীলের এমন কান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার রাগ উঠে গেলো। তাই সে রাগে শাড়ীটি ফেলে দিলো নিলের হাত থেকে। এতে নীল রাগে আগুন। সেই বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে ওদের ব্রেকআপ হয়। তারপর আচঁল শর্ত দেয়, তার সাথে রিলেশন রাখতে চাইলে নীল রংয়ের ভূত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। নীল বলে সে আচঁলকে ছেড়ে দিবে তবু নীল রং ছাড়বে না। নীল আচঁলকে চ্যালেঞ্জ করে সে নীল রংয়ের একটা মেয়ে বিয়ে করবে। কথাটা শুনে আচঁল মজা উরায়। নীলকে নিয়ে মজা করায় নীলের মাথায় জেদ চেপে বসে। সে বিয়ে করলে নীলের রংয়ের মেয়ে বিয়ে করবে। ভাগ্যের জোরে একটা মেয়ে পেয়েও গেছে। তাই আজ ফোন দিছিলো। কিন্তু কালনাগিনী গালাগালি করে ফোন রেখে দিলো।

নীলের বাবাকে সে জানিয়ে দিয়েছিলো নীল রংয়ের মেয়ে ছাড়া সে বিয়ে করবেনা। ছেলের কথায় নীলের বাবার অবস্থা প্রায় পাগল হওয়ার মতো ছিলো। নীল রংয়ের মানুষ কি আছে যে তিনি নীল একটা মেয়ে এনে দিবেন। যেখানে কোনো সুন্দরী মেয়ের সন্ধান পেতেন সেখানে ছেলেকে নিয়ে যেতেন তিনি। সুন্দরী মেয়ে দেখে নীল রংয়ের মেয়ের ভূত মাথা থেকে বের হয় কিনা এই আশায়। কিন্তু দিন শেষে তিনি হতাশ হতেন । ঘুরে ফিরে নীলের একটাই আবদার, তার বউ নীল রংয়ের হতেই হবে। একমাত্র ছেলে তাও জেদি কী আর করতেন। চুপ করে সব হজম করা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা উনার। নীলের বাবা এ নিয়ে কারো সাথে কথাও বলতে পারতেন না। মানুষ এসব শুনলে তাঁকে নিয়ে যে শুধো হাসাহাসি করবে তা নয়। পাগল বলে গণধোলাই খাওয়াবে, সেটা উনার জানা ছিলো।

হঠাৎ একদিন উনার শালা একটা সুখবর নিয়ে আসলেন। নীল রংয়ের একটা মেয়ে আছে। কথাটা শুনে নীলের বাবা দুই ঘন্টা অজ্ঞান ছিলেন। উনার ৬০ বছরের জীবনে উনি এই প্রথম শুনলেন নীল রংয়ের মানুষ আছে।

যাইহোক মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য সবাই রেডি হলো।নীল, নীলের বাবা-মা,নীলের বোন সবাই নীল রংয়ের জামা পরছে। নীলের বাবার মাথায় একটা নীল টুপি,নীল পাঞ্জাবীর সাথে নীল পায়জামা, পায়ে নীল রংয়ের জুতা। দেখতে সবার কাছে জুকার লাগলেও নীলের কাছে অনেক সুন্দর লাগছে। নীল রংয়ের গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সবাই।

দু’ঘন্টা পরে গাড়ি এসে থামলো কনেদের বাড়ির সামনে। বিশাল বড় একটা বাড়ি। এই বাড়ির নামও নীল মহল। বাড়ির রংটাও নীল। আহা নীলের কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে। হাঁ করে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে তাকে সে। যেন এমন বাড়ি জীবনেই দেখেনি। আসলে তো সে বাড়িটা দেখছে না, সে তো নীল রং দেখছে। সার্ভেন্ট এসে তাদের মিষ্টি মিটাই এগিয়ে নিলো। সার্ভেন্টের গায়েও নীল জামা। নীল রংয়ের জামা পরা দুইটা পিচ্চি মেয়ে এসে নীলকে ধাক্কা দিয়ে বললো। দুলাভাই হাঁ করে আছেন কেন? মশা ডুকে যাবে, মুখ বন্ধ করেন।” বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো দুজন। নীল লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। এইটুকু মেয়েগুলা তাঁকে লজ্জায় ফেলছে। ইচ্ছে করছে নীল পানিতে এদের ছুঁড়ে ফেলতে।

ঘরের ভেতরে ডুকে নীলের মনে হলো সে ভুল করে কোনো নীল রংয়ের ডিব্বাতে ডুকে গেছে। তাঁর বাড়িতেও মনে হয় এতো নীল রংয়ের জিনিসপত্র নাই যা যা এখানে আছে। নীল রংয়ের সোফাতে বসে পড়লো তাঁরা। তাঁদের নাস্তা দেওয়া হলো। অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরে কনেকে আনা হলো। মেয়েটিকে দেখেই সে ক্রাশ খেলো, এটাতো তার স্বপ্নের নীল পরি। কনেকে দেখা মাত্রই নীলের বাবা মা এক লাফ দিয়ে সোফায় উঠে গেলেন। বোনতো এক চিৎকার দিলো পুরো ঘর কাপিয়ে। নীলের বাবা ছেলেকে ফিসফিসিয়ে বললেন। “বাবারে তর দাদা আমার বাবার কসম লাগে তুই এই মেয়েরে বিয়ে করিস না। নয়তো দেখবি তর মা তর বাবাকে হারিয়ে বিধবা হয়ে তার বাবার কাছে চলে গেছে।

নীল তার বাবার দিকে কঠিন চোখে তাকালো। উনি চুপ হয়ে গেলেন। ছেলেকে ভয় পান তিনি। নীলের মা পরপর চার গ্লাস পানি খেলেন তবুও তৃষ্ণা মিটছেনা উনার। ভয় পেলে এমনটা হয় উনার। নীলের বোন যে তাঁকে আঁকড়ে ধরছে আর ছাড়ছেনা। যেন ছেড়ে দিলেই সামনে বসে থাকা নীল মেয়েটি তাকে গিলে খাবে। নীল মেয়েটিকে একদম ভূতের মতো লাগছে। সব নীলের মাঝে একটা নীল মানুষ দেখাই যাচ্ছেনা। শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। সবার নিরবতা ভেঙে নীল কথার সূত্রপাত করলো। মৃদু হেসে মেয়েটিকে বললো।

_আপনার নাম যেটাই হোক আমি আপনাকে নিলা বলে ডাকবো।” নীলের কথায় মেয়েটা সরু গলায় বলল”
_আমার নামতো জন্ম থেকে নীলা।
_ওকে, নীল রং পছন্দ তো?
_আমি তো মানুষটাই নীল।
নীল তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বললো।
_হিহিহি তাইতো।

নীলের হাসি দেখে নীলাও হাসলো। নীলার হাসি দেখে নীলের মা তাঁর বাবার পাঞ্জাবি খামছে ধরলেন, ভয়ে তিনি থরথর করে কাঁপছেন। নীলা হাসলে তার চোখ আর দাত ছাড়া কিছুই দেখা যায়না। কি ভয়ানক দৃশ্য। নীল তাঁর বাবাকে বললো।

_বাবা নীলাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবো না। আমি নীলাকেই বিয়ে করবো এবং আজকেই।” নীলের কথা শুনে নীলার বাবা বললেন” বাবা দেখো,আজ মাত্র দেখাদেখি হলো। দুদিন পরেই বিয়ে হোক।” নীলের উত্তর উত্তর না দিয়ে তাঁর বাবাকে বলল” বাবা আমি কিন্তু বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো আজকে বিয়ে না করালে।” ছেলের কথায় টাসকি খেলেন নীলের বাবা। কী আর করার উনার ছেলে যেটা বলে সেটাই করে। যদি সত্যি সত্যি চলে যায়। সবাইকে বুঝিয়ে রাজি করালেন তারপর কাজি আনা হলো। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করবে তখন নীলা বলে উঠল “আমার কিছু শর্ত আছে”।

_বলো তোমার সব শর্ত আমি মানতে রাজি।
_বিয়ে পরে নীল নীল নীলাঞ্জনা গান গেয়ে গেয়ে এই গানের স্বরেই আমার সাথে কথা বলতে হবে। নয়তো আমি শুনবো না।

নীলার কথায় কিছু না ভেবেই নীল রাজি হয়ে গেলো। তারপর তাঁদের বিয়ে পরানো হলো। শেষে নীলাকে নিয়ে নীলের বাসায় আসে তাঁরা।

বাসায় এসে নীল ছাদে গেলো। আঁচল কে একে একে অনেকগুলা ফোন দিলো। কিন্তু ফোন বন্ধ। নীলের ইচ্ছে করছে আঁচলকে টেনে এনে দেখাতে। দেখো আমি নীল রংয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছি। খুব তো মজা উড়াছিলা। কিন্তু আঁচলের ফোন তো বন্ধ, বলবে কীভাবে? নীল আঁচলে মেসেজ দিলো। আমার বউ দেখে যেও নীল মেয়ে বিয়ে করছি।

রাত ১২টা বাজে। নীল তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ১১টা থেকে তার বউ কে ডাকছে,কিন্তু তাঁর বউ দরজা খুলছেনা। হঠাৎ তার মনে পড়লো শর্তের কথা। সে গলা খাঁকারি দিয়ে গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে গান ধরলো।

নীল নীল নীলাঞ্জনা, দরজাটা খুলে দাওনা।

সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো। তারমানে এই বজ্জাত মেয়েটা দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তবুও দরজা খুলেনি? নীলের ইচ্ছে করছে নিলাকে একটা থাপ্পড় দিতে। বাসর রাতে স্বামীর জন্য মেয়েরা অপেক্ষা করে আর মহারাণী কিনা দরজা খুলে দেননা। কিন্তু ঘর তো একেবারেই অন্ধকার। থাপ্পড় মারবে কেমনে? নীল হাতড়ে লাইট অন করতে সুইচ খুঁজছে। তাঁর চোখের সামনে মারবেলের মতো কি যেন চিকচিক করছে। নীল সুইচ দিলো লাইট জ্বলেনি। ড্রিম লাইট জ্বালালো সেটা জ্বলে ওঠল। ড্রিম লাইটটা নীল রংয়ের। নীল আলোতে নীল মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

নীলের কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মানুষ বাসর ঘরে কতো রোমাঞ্চ করে। আর সে কিনা বাসর ঘরে সে কানামাছি খেলছে। কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল”
নীল নীল নীলাঞ্জনা, বউ তোমায় খুঁজে পাইনা।

_এইতো আমি।

গম্ভীর এক কন্ঠ শুনে সামনে তাকালো নীল। চুল খুলা অবস্থায় নীলা দাঁড়িয়ে আছে। তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে। দাঁত আর চোখ গুলা চিকচিক করছে। দেখতে একদম ডাইনি রাক্ষসী লাগছে। ভয়ে নীল এক লাফে “ও মা গোওওওওওও” বলে রুমে থেকে বাইরে গিয়ে লাফ দিয়ে পড়লো। তাঁর বাবা মা দৌঁড়ে আসলেন। উনারা যেন আগে থেকেই এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। ভয়ে নীল হাঁপাচ্ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে,একের পর এক ঢোক গিলছে আর ভয়ার্ত চোখে রুমের দিকে তাকাচ্ছে। নীলের বাবা বললেন ” আমি আগেই বলেছিলাম বিয়ে করিস না এই ভূতকে”। বাবার কথা শুনে নীল দাঁড়িয়ে গেলো। সে ভয় পেয়েছে এটা কিছুতেই বুঝানো যাবেনা। নীল তাঁর বাবা মাকে বললো।

_আজ আমার বাসর রাত তোমারা জানোনা? এখনে কি করছো?
_নীলের মা বললেন “আগে তুই বল, তুই এসে বলের মতো উড়ে পড়লি কেন,নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছিস?
_আজব তো। ভয় পেয়ে উড়ে পড়বো কেন? আগে মানুষ বাসর ঘরে ক্রিকেট খেলতো। এখন পাবজি খেলে। আমরাও তাই খেলছি, যাও ঘুমাও গিয়ে।

গল্পটা এক মাস আগে লিখেছিলাম। হুটা করে ভালোবাসি প্রিয় গল্পের থিম টা মাথায় আসায় এটা আর পোস্ট করা হয়নি। যেহেতো ভালোবাসি প্রিয় শেষে অন্য একটা গল্প শুরু করবো তাই এটা এখন দিয়ে দিলাম। আপনাদের রেন্সপন্স দেখে নেক্সট দিবো। যদি ভালো রেন্সপন্স হয় তো চালু করবো। ইন শা আল্লাহ।❤

চলবে…।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here