নীল ক্যানভাস
পর্বঃ০১
লেখিকা:তানজিল মীম
—“তুমি তো বলেছিলে তোমার লাইফে আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে নেই “তানভীর” তাহলে এসব কি…?’
“প্রচন্ড হতাশা নিয়ে কথাটা বলে উঠল মেঘলা তানভীরকে’!!আর মেঘলার কথা শুনে মাথা নিচু করে রইলো তানভীর আর একটা মেয়ে,,হয়তো তারা ভাবতেই পারে নি এমন সময় হুট করে মেঘলা ঢুকে পড়বে রুমে’!!তানভীর কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘলা বলে উঠলঃ
—“কি করে পারলে তানভীর আমার সাথে এমনটা করতে…
—“তুমি আমায় ভুল বুঝছো মে…
“তানভীর আর কিছু বলার আগেই মেঘলা বলে উঠলঃ
—“ভুল!’আমি নিজের কানে শুনেছি তুমি ওকে প্রপোজ করেছো…
—“কিন্তু মেঘলা…
“তানভীরের কথার মাঝখানে হাত দেখিয়ে বলে উঠল মেঘলাঃ
—“ব্যস,তানভীর তোমায় কিছু বলতে হবে না…
“তানভীর মেঘলার দিকে এগোতে এগোতে বলে উঠলঃ
—“মেঘলা আমার কথাটা তো শোনো….
—“একদম কাছে আসবে না তানভীর দূরে থাকো..
—“প্লিজ মেঘলা,,
—“স্যাট আপ তানভীর,তোমার মুখে আমি আমার নাম শুনতে চাই না!’
—“তোমার একটা…
“তানভীরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায়’!!আর তানভীর পুরো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,,,যেন যেগুলো হলো সবই তার কল্পনার বাহিরে ছিল….
_______________
“ব্যস্তহীন রাস্তায় নীবরে হেঁটে চলেছে মেঘলা,চোখ বেয়ে পরছে তার নোনা পানি,,বহুদিনের রিলেশন তার সাথে তানভীরের,নিজের বার্থডের দিনে যে এমন কিছু দেখবে সেটা ভাবতে পারে নি মেঘলা,,বার্থডে হিসেবে সকাল সকাল সে এসেছিল তানভীরের কাছে যাতে তার বার্থডে দিনে সবার আগে তানভীরের মুখ দেখে সে!’কিন্তু মুখ দেখার আগেই দরজার আড়াল থেকে তানভীরের সাথে একটা মেয়ের ভয়ানক দৃশ্য দেখে কলিজা কেঁপে উঠল তার,সে দেখলো তানভীর একটা মেয়েকে হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করছে,,মেঘলা কোনোদিন ভাবে নি তানভীর তাকে এইভাবে ঠকাবে সে তো বলে ছিল তার জীবনে মেঘলা ছাড়া আর কেউ নেই!’অথচ আজ সেই তাকে ঠকালো,,কষ্ট হচ্ছে মেঘলার!’বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে তার,,সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না তানভীর তার সাথে এমন করলো….
“মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায়!’প্রিয় মানুষের কাছ থেকে এইভাবে ধোঁকা খাবে সে এটা একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল তার,কি করে বাঁচবে মেঘলা তানভীরকে ছেড়ে ভাবতেই বুকের ভিতর ছারখার হয়ে যাচ্ছে তার,,মাঝখানে কেটে যায় কয়েকদিন!’এই কয়েকদিনে বহুবার কল করেছে তানভীর মেঘলাকে কিন্তু মেঘলা ফোন তোলে নি,শেষে বাধ্য হয়ে সিম ভেঙে ফেলে মেঘলা!’
“পুরো পাগল পাগল লাগছে মেঘলার সব!’ মেয়েকে এইভাবে ভেঙে পরতে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে মেঘলার বাবা-মা,,এমনটা নয় যে তারা জানে না তানভীর আর মেঘলার সম্পর্কের কথা,তাঁরা তো ভেবেছিল তানভীর নিজের পায়ে দাঁড়ালেই ওঁদের বিয়ে দিয়ে দিবে!’কিন্তু ভাবতেই তাদেরও খারাপ লাগছে…..
“২ বছর পর…..
“সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে মেঘলা!’পরনে তার সাদা রঙের জর্জেট থ্রি-পিছ,চুলগুলো খোলা,হাতে সাদা রঙের কাচের চুড়ি,চোখে কাজল সবমিলিয়ে সুন্দর লাগছে তাকে!’খুশি মনেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে মেঘলা,সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সোজা চলে যায় মেঘলা রান্না ঘরে,,সেখানে কাজ করছিল তার খালামনি তাকে দেখে খুশি হয়ে বললো মেঘলাঃ
—“গুড মর্নিং খালামনি….
“আচমকা মেঘলার ডাক শুনে মুখ তুলে তাকালো ঊর্মিলা বেগম(মেঘলার খালামনি)!’সকাল সকাল মেঘলার মুখ দেখে মুচকি হাসলেন উনি!’তারপর বললেনঃ
—“মনিং,তুই একা আরেকজন কই?’
“মেঘলা দৌড়ে এসে ঊর্মিলা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো’!!তারপর বললোঃ
—“আরেকজন তো পরে পরে ঘুমাচ্ছে খালামনি…
—“টেনে উঠা ওইটাকে ভার্সিটি যাবে না নাকি?’
—“এক্ষুনি উঠাচ্ছি খালামনি,,
—“হুম আর শোনটেবিলে তোদের খাবার বারছি তাড়াতাড়ি ওটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আয়…
“মেঘলা মুচকি হেঁসে বললোঃ
—“ঠিক আছে খালামনি….
||
“কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানা লেপ্টে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে দিয়া’!!এমন সময় তার রুমে প্রবেশ করল মেঘলা’!!দিয়াকে বেঘোরে ঘুমাতে দেখে পা টিপে টিপে চলে যায় মেঘলা দিয়ার কাছে তারপর আস্তে আস্তে দিয়ার গায়ের কাঁথা সরিয়ে নেয় সে’!!
“হঠাৎই গায়ের কাঁথা সরতে দেখে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল দিয়া’!!
—“আমি জানি মেঘলা তুই ইচ্ছে করে এমনটা করছিস,, এমন করিস না আমায় ঘুমোতে দে…
—“আর কত ঘুমাবি দেখছিস ঘড়িতে কয়টা বাজে…
—“কয়টা বাজে হায়েস্ট হলে ৮ঃ০০টা….
—“না ১০ঃ০০টা বাজে…
“সাথে সাথে লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠলো দিয়া,,তারপর ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে মেঘলার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো সেঃ
—“কি,তুই আমায় আগে বলবি না, আজকে ভার্সিটি যেতে লেট হয়ে যাবে,তারপর ওই রবিন স্যারের এক ঘন্টা লেকচার শুনতে হবে,,উফ!মেঘলা তুই আমায় আরো ডাকতে পারলি না….
“বলেই হন হন করে ওয়াশরুমে চলে যায় দিয়া!’
“দিয়া যেতেই হাসলো মেঘলা’!!তারপর সুন্দর মতো বিছানা গুছালো সে’!!এরই মাঝে দিয়া হাজির,,কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসেছে সে’!!তারপর চটজলদি ড্রয়ার থেকে জামা বের করতে করতে বলে উঠল সেঃ
—“উফ,,আমি এখন কি করি,,আজকে একটু সাজতেও পারবো না,,ধুর,,শালার ড্রয়ার টাও খুজছে না জ্যাম হয়ে গেল নাকি,,
“বলে টানতে লাগলো ড্রয়ার কিন্তু ড্রয়ার খুলছে না,শেষমেশ বাধ্য হয়ে ড্রয়ার রেখে আলমারি খুললো দিয়া, আলমারি খোলার সাথে সাথে এক গাট্টি জামাকাপড় অগোছালোভাবে এসে পরলো দিয়ার গায়ের ওপর,,
“দিয়ার এমন কান্ডে মেঘলা হাসতে হাসতে শেষ!’মেঘলার হাসি দেখে দিয়া বলে উঠলঃ
—“ওই তুই হাসছিস কেন,,এটা আলমারি নাকি জামাকাপড়ের গোডাউন,,
—“গোডাউন,,
—“উফ,মেঘলা এখন কথা না বলে তাড়াতাড়ি তৈরি হ ভার্সিটি যাবি না আজ তো তোর আবার প্রথম দিন…
—“আমি তো কখন তৈরি,,
—“ওহ,দেখছো আর আমি তৈরি হতে পারলাম না,,
—“এত তাড়াহুড়োর কি আছে…
—“কি আছে মানে দশটা বাজে…
—“তোকে কে বললো ১০টা বাজে ঘড়িতে তো কেবল সাড়ে আটটা বাজে….
“সাথে সাথে অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠল দিয়াঃ
—“কি….
“দিয়ার চিল্লানী শুনে কানে আঙুল গুজালো মেঘলা!’তারপর বলে উঠল সেঃ
—“কেমন দিলাম,এটা হলো তোকে ঘুম থেকে ওঠানোর নিনজা টেকনিক…
—“তবে রে আজ তোর একদিন কি আমার একদিন মেঘুর বাচ্চা…
“বলেই দৌড় লাগালো দিয়া মেঘলার পিছন পিছন!’আর মেঘলা দিয়াকে দৌড়াতে দেখে সেও ছুটতে লাগলো,,তারপর শুরু হলো দুই বোনের ছোটাছুটি…
“এক পর্যায়ে ছোটাছুটি করতে করতে মেঘলা লুকিয়ে পড়ে খালামনির পিছনে,,দুজনকে ছুটতে দেখে বলে উঠলেন উনিঃ
—“ওই তোরা দুটো কি শুরু করলি…
—“আম্মু তুমি আমাদের মাঝখানে একদম আসবে না ও আমাকে দশটা বেজেছে বলে আট বাজে ঘুম থেকে উঠিয়েছে,কি সুন্দর স্বপ্ন দেখতে ছিলাম ওর জন্য আমার সাধের ঘুমটা ভেঙে গেল…(দিয়া)
—“আমি কি করবো খালামনি আটটা বাজে বললে তো ওহ উঠতো না তাই তো..(মেঘলা)
—“তাই তো, তোকে তো আমি..(দিয়া)
—“খালামনি বাঁচাও..(মেঘলা)
“বলেই চেপে ধরে মেঘলা ঊর্মিলা বেগমকে!”দুজনের কান্ডে বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলেন ঊর্মিলা বেগমঃ
—“তোরা দুজন থামবি কি শুরু করেছিস দুটোতে,
—“কিন্তু আম্মু…
—“থাম তুই,,মেঘলা যা করেছে একদম ঠিক করেছে….
—“আম্মু তুমিও, ঠিক আছে বাবা আসুক আমিও বলবো…
—“কি বলবি শুনি খালুকে…
—“বলবো..
“বলেই চুপ হয়ে যায় দিয়া’!!সাথে সাথে সবাই একসাথে হেঁসে দেয়’!!
—“হইছে তোকে আর কিছু বলতে হবে না ব্রেকফাস্ট করে নে আগে…
“উওরে দিয়া আর কিছু বললো না!’তারপর দুজন মিলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসে পরলো!’
____________________
“ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দিয়া আর মেঘলা!”বুক ধড়ফড় করছে মেঘলার’!!এক অদ্ভুত ভয় এসে গ্রাস করেছে তাকে,,এমন সময় দিয়া বলে উঠল তাকেঃ
—“কি হলো দাঁড়িয়ে পরলি কেন চল…?’
—“হ্যাঁ…
“এতটুকু বলে বুকে ফু দিয়ে চললো মেঘলা!’ক্যান্টিনের সামনে পর্যন্ত আসতেই অনিক এসে হাজির ওদের সামনে’!!অনিক হলো দিয়ার ক্লাসমেট!’
“অনিক দিয়াকে দেখে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বললোঃ
—“ওই “এলইডি বাল্ব” কেমন আছিস…
—“ঠাসস করে একটা থাপ্পড় দিবো বান্দর কোথাকার?’
—“ওরে বাবা আমি তো ভয় পাইছি তা কেথায় যাচ্ছিস বল তো,
—“তোকে বলবো কেন, কানা হনুমান কোথাকার?’
—“আমি মটেও কানা নই,তা তোর পাশে মেয়েটাকে নতুন নাকি…
—“তোকে কেন বলবো,
—“যা তোকে বলতে হবে না আমি নিজেই পরিচিত হয়ে নিচ্ছি…
“এই বলে অনিক মেঘলার দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“হাই আমি অনিক,,
“মেঘলা হাল্কা হেঁসে বলে উঠলঃ
—“আসসালামু আলাইকুম….
“কিছুটা বিব্রত ফিল করে অনিক সাথে সাথে হাত সরিয়ে হাল্কা হেঁসে বললো সেঃ
—“ওলাইকুম আসসালাম,তোমার নাম..
—“মেঘলা…
—“ওহ নাইস নেইম!’
“মুচকি হাসে মেঘলা,মেঘলার হাসির মাঝখানে বলে উঠল অনিকঃ
—“একটা কথা বলো তোমার মতো এত ভালো মেয়েটার সাথে ওই সাতচুন্নির সাথে দেখা মিললো কি করে(দিয়ার দিকে তাকিয়ে)
“অনিকের কথা শুনে দিয়া রেগে বলে উঠলঃ
—“কি বললি তুই আমায়, তোর বউ সাতচুন্নি, শয়তান পোলা..
“বলেই কিল ঘুষি মারতে লাগলো দিয়া অনিককে!’
“এদিকে মেঘলা এদের কান্ডে হাসতে হাসতে শেষ!’
!!
“এমন সময় গিটারের টোনে গান বেজে উঠল কারো গলায়ঃ
“আমি তোমাকে, আরো কাছে থেকে
তুমি আমাকে, আরো কাছে থেকে..(২)
“যদি জানতে চাও,তবে ভালোবাসা দেও ভালোবাসা নেও…
“ভালোবাসা দেও,ভালোবাসা নেও’!!
“কারো গলার গান শুনে অনিক দিয়া দুজনেই থেমে গেল’!!দিয়া তো বলে উঠলঃ
—“ওহ, তানভীর ভাইয়া গান গাইছে…
“এতটুকু বলে মেঘলার হাত ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো দিয়া তানভীরের দিকে,,
“এদিকে…..
“তানভীর” নামটা শুনতেই বুকের ভিতর দক করে উঠল মেঘলার,,এতবছর পর আবার তার অতীতের সাথে দেখা হবে এটা ভাবতে পারে নি মেঘলা,,একরাশ বিস্ময় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মেঘলা দিয়ার সাথে,আর মনে মনে চাইছে সে, এই তানভীর যেন সেই তানভীর না হয়…..
_________________________________________
__________________________
“ভার্সিটির প্রথম দিন আজ শুভ্রতার!’একরাশ ভয় নিয়ে চোখের চশমাকে একটু নাড়িয়ে বুকের সাথে একটা বই লেপ্টে জড়িয়ে ধরে এগিয়ে চলছে সে’!!বুক কাঁপছে তার এমন সময় তাকে ডাক দিলো একটা ছেলে’!!বলে উঠল সেঃ
—“এই যে মিস চাশমিন…
“সাথে সাথে ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠল শুভ্রতার’!!বেশি কিছু না ভেবেই আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সে ছেলেটির দিকে’!!ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে মিন মিন কন্ঠে মাথা নিচু করে বলে উঠল সেঃ
—“আমায় ডাক ছিলেন ভাইয়া…
চলবে……….