নীল ক্যানভাস পর্বঃ০২

0
1063

নীল ক্যানভাস
পর্বঃ০২
লেখিকা:তানজিল মীম

“হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘলা তানভীরের দিকে!’এতবছর পর নিজের প্রাক্তন প্রেমিককে ভার্সিটির সিনিয়র হিসেবে দেখবে এটা একদমই আশা করেনি সে!”চোখ ছলছল করছে মেঘলার সাথে বুকের ভিতর পুরনো ক্ষতটা আবারো জাগ্রত হচ্ছে তার,যাকে ভোলার জন্য রাজশাহী থেকে ঢাকাতে পা রাখলো সে, আর সে কিনা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে মেঘলার’!!আর বেশি ভাবলো না মেঘলা সবকিছু এলেমেলো লাগছে তার’!!অস্থির হয়ে পরলো মেঘলা,,মেঘলাকে অস্থির হতে দেখে বলে উঠল দিয়াঃ

—“কি হলো তোর শরীর খারাপ লাগছে….

—“আমি বাড়ি যাবো দিয়া…

—“কি…

—“আমার শরীর ভালো লাগছে না এক্ষুনি বাড়ি যাবো…

—“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে চল আমার সাথে…

“এতটুকু বলে দিয়া নিয়ে যায় মেঘলাকে!’আর অন্যদিকে দূর থেকে মেঘলাকে দেখে হাল্কা হাসে “তানভীর”…

_____________

“ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে শুভ্রতা সামনের ছেলেটির দিকে’!!কারন তার সামনেই বাইকের উপর খুব স্টাইল দিয়ে মাথার ক্যাপটাকে মুখের সামনে রেখে শুয়ে আছে একটা ছেলে!’মুখ দেখা যাচ্ছে না তার,ছেলেটির পরনে ব্লাক জিন্স আর ব্লাক কালার শার্ট, শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ব্লোড করা,,হাত পায়ের রং দেখে শুভ্রতার বুঝতে বাকি নেই ছেলেটা ভয়ংকর সুন্দর!’আর তাকে ডেকেছিল ছেলেটির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা একটা চিকনা – চাকনা শ্যামবর্ন চেহারার একটা ছেলে,আশেপাশে আরো কয়েকজন ছেলে দাড়িয়ে আছে,সবার চোখ শুভ্রতার দিকে!’চিকনা- চাকনা ছেলেটি শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকা ছেলেটির কানে কানে বললোঃ

—“চাশমিশ চলে এসেছে আয়ুশ!’….

“ছেলেটির কথা শুনে হাত পা কাঁপছে শুভ্রতার,এই জন্যই সে ভার্সিটি আসতে ভয় পাচ্ছিল সে জানে ভার্সিটির সিনিয়র ভাইয়ারে নতুন কাউকে পেলেই রেগিং করে!’এক বুক অস্থিরতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা’!!হঠাৎই মিনমিন কন্ঠে মাথা নিচু করে আবারো বলে উঠল শুভ্রতাঃ

—“আমায় ডাকছিলেন ভাইয়ারা…

“এতক্ষণ পর বাইকের উপর শুয়ে থাকা ছেলেটি মাথার ক্যাপটাকে সরিয়ে সোজা হয়ে উঠে বসলো!’তারপর তাকালো সে শুভ্রতার দিকে,চোখে কালো ফ্রেমের চশমা,চোখে মুখে ভয়ের ছাপ,পরনে ব্লাক জিন্স, ওয়াইট টিশার্ট,সাথে ব্লাক লেডিস জ্যাকেট চুলগুলো দু-দিকে নিচু করে দুটো জুটি করা ,ফর্সা গাল আর বাম গালের কানের পাশ থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে ছোট্ট করে একটা তিল,আয়ুশের কাছে শুভ্রতাকে একদন বাচ্চাদের মতো লাগছে!’

“আয়ুশের ভাবনার মাঝখানেই বলে উঠল হেলাল(চিকনা-চাকনা ছেলেটির নাম):

—“কিছু বলছিস না যে,,

“আয়ুশ হেলালের কথা শুনে আর একবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলো শুভ্রতাকে তারপর একটু ভাব নিয়ে বলে উঠল সেঃ

—“নতুন…

“আয়ুশের কথা শুনে বুক কাঁপছে শুভ্রতার,,আয়ুশের দিকে না তাকিয়েই মাথা নাড়িয়ে হা সমর্থন দিলো শুভ্রতা’!!শুভ্রতার মাথা নাড়ানো দেখে বিস্ময় নিয়ে বলে আয়ুশঃ

—“নাম কি…

“আয়ুশের কথা শুনে হাল্কা মাথাটা উঁচু করলো শুভ্রতা,,এতেই আয়ুশের মুখটা স্পর্শ দেখতে পাচ্ছে শুভ্রতা,অসম্ভব সুন্দর দেখতে ছেলেটাকে,শুভ্রতার তো ছেলেটিকে দেখেই চোখ আঁটকে যায়!’কিন্তু এই মুহুর্তে চোখ আটকানোর চেয়ে ভয় বেশি হচ্ছে তার তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে’!!

“শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল আয়ুশঃ

—“কি হলো নাম কি…

“সাথে সাথে কেঁপে উঠল শুভ্রতা’!!হাল্কা মিনমিন কন্ঠে বলে উঠল সেঃ

—“জ্বী শুভ্রতা…

—“ফাস্ট ইয়ার…

“মাথা নাড়ায় শুভ্রতা!’আয়ুশ আরো কিছু বলতে যাবে এমন সময় তানভীর হাজির,আয়ুশকে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে বলে উঠল সেঃ

—“কি করছিস এখানে তোরা আর এ মেয়েটা কে?’..

“আয়ুশ তানভীরকে দেখে হেঁসে বললোঃ

—“তুই কখন এলি,

—“অনেকক্ষণ!’ এই মেয়েটাকে কে আয়ুশ,তুই আবার?’

“এতটুকু বলে রাগী লুকিং এ তাকায় তানভীর আয়ুশের দিকে’!!আয়ুশ তানভীরের দিকে তাকিয়ে মাথায় চুলকায় তারপর বলেঃ

—“তুই যা ভাবছিস তা কিন্তু নয়?’আমি আসলে..

—“হইছে তোকে আর কিছু বলতে হবে না…

“এতটুকু বলে তানভীর শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ

—“তুমি যাও…

“সাথে সাথে শুভ্রতা মাথা নাড়িয়ে আর দু’মিনিট না দাঁড়িয়ে দ্রুত চলে গেল সে ওখান থেকে!’

“ছোট বেলা থেকেই ছেলেদের ভয় পায় শুভ্রতা কেন পায় জানা নেই তার,ছেলে দেখলেই শরীর কাঁপে তার,বেশি কাঁপে অপরিচিত কোনো ছেলেকে দেখলে,,আজকে একটু বেশিই ভয় হচ্ছিল শুভ্রতার,একই নতুন ভার্সিটি, নতুন জায়গা,কোনো চেনা কেউ নেই,তারওপর অপরিচিত ছেলের ডাক সব মিলিয়ে একদম অন্যরকম আর অজানা ভয় হচ্ছিল তার!’তাই তো সে যতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল বুকের সাথে লেপ্টে ধরা বইটাকে শক্ত করে চেপে ধরেছিল,,সবার কাছ থেকে দূরে আসতেই জোরে শ্বাস ফেললো শুভ্রতা,যেন এতক্ষণ শ্বাস আঁটকে ছিল তাঁর!’তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে হাঁটতে লাগলো সে উদ্দেশ্যে নিজের ক্লাসরুম খুঁজে বের করা..

“এদিকে…

“আয়ুশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার যাওয়ার পানে সে বুঝে গেছে এই মেয়ের ছেলেদের সাথে কথা বলতে এলার্জি আছে,হাল্কা হাসলো আয়ুশ,আয়ুশের ভাবনার মাঝখানে ওর কাঁধে হাত দিলো তানভীর তারপর বললোঃ

—“তোকে কতবার বারন করেছি নতুন কাউকে পেলে রেগিং করবি না…

—“তুই যা ভাবছিস তা একদমই আমি তো জাস্ট মেয়েটার নাম আর কোনটা ওর ক্লাসরুম সেটা খুঁজতে সাহায্য করছিলাম…

—“সত্যি বলছিস…

—“হুম, তোকে আমি কখনো মিথ্যে বলেছি নাকি…

—“ঠিক আছে,আচ্ছা শোন আমায় একটু বাসায় যেতে হবে…

—“কেন?’

—“একটু কাজ আছে,

—“আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু…

—“হুম…

“তানভীর চলে যায়!’তানভীর যেতেই আয়ুশ বেশি কিছু না ভেবে চুপটি করে বসে পরলো বাইকে!’

“তানভীর আর আয়ুশ দুজন হলো বেস্ট আর ভার্সিটির দুই সিনিয়র ক্রাশ বয়,,দুজনকেই দেখতে অসম্ভব সুন্দর,,,

__________________

“ফাঁকা একটা ক্লাস রুমে পাশাপাশি বেঞ্চে বসে আছে মেঘলা আর দিয়া’!!দিয়া তার ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে মেঘলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“পানি টা খেয়ে নে ভালো লাগবে…

“দিয়ার কথা শুনে মেঘলা কিছু না বলে পানির বোতলটা হাতে নিলো তারপর ঢকঢক করে অর্ধেক পানি খেয়ে ফেললো সে’!!মেঘলার পানি খাওয়া শেষ হতেই বলে উঠল দিয়াঃ

—“এখন কেমন লাগছে তোর?’

“চুপ করে রইলো মেঘলা,এখনও সে কিছুক্ষন আগের ঘটনার কথা ভুলতে পারে নি!’মেঘলাকে চুপ থাকতে দেখে দিয়াও আর কিছু বললো না’!!এমন সময় রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠল কেউঃ

—“মেঘলা…

“সাথে সাথে দিয়া মেঘলা দুজনেই তাকালো দরজার সামনে,মেয়েটাকে দিয়া চিনতে না পারলে মেঘলা ঠিকই চিনেছে,,মেঘলা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর অবাক হয়ে বললোঃ

—“শুভ্রতা তুই…

“মেঘলার মুখ আর কথা শুনেই দৌড়ে চলে আসলো শুভ্রতার মেঘলার সামনে,তারপর খুশি হয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল সে মেঘলাকে তারপর বললোঃ

—“ওহ,দোস্ত তোর সাথে দেখা হবে এটা একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল আমার,আই রিয়েলি মিস ইউ…

“শুভ্রতার কথা শুনে মুচকি হাসে মেঘলা তারপর সেও শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলঃ

—“আই মিস ইউ টু…

—“আমি তো ভেবেছিলাম আমি একা হয়ে গেছি কিন্তু এখানে এসে তোকে পাবো স্বপ্নেও ভাবি নি…

—“আমিও…

—“কেমন আছিস তুই…

—“হুম ভালো তুই,,

—“আমিও ভালো তুই তো সেই লাস্ট এক্সামের পর যে উধাও হলি আর আজ দেখলাম, তোকে কতবার ফোন করেছি জানিস,,

—“সরিরে আসলে আগের সিমটা হারিয়ে গেছে তাই আর কি…

“এদিকে দিয়া নিরব দর্শকের মতো দুই বান্ধবীর কান্ড দেখছে’!!শুভ্রতা নামটা এর আগেও শুনেছে দিয়া মেঘলার মুখে,আজ যে সরাসরি দেখা হয়ে যাবে সেটা ভাবে নি দিয়া’!!দিয়া দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলে উঠলঃ

—“বাহ্!’দুই বান্ধবী দু বান্ধবীকে পেয়ে আমায় ভুলে গেছে,আর এই আমি কিনা একজনের শরীর খারাপ লাগছিল বলে ফাঁকা রুমে নিয়ে আসলাম….

“এতক্ষণ পর মেঘলার মাথায় আসলো দিয়ার কথা!’সে শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে দিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো শুভ্রতাকে…..

“নিজের রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানভীর!’আজ খুব খুশি সে কতবছর পর আজ সে মেঘলাকে দেখতে পেয়েছে,সেদিনের ছোট্ট ভুলের জন্য পুরো দু’বছর কষ্ট পেয়েছে তানভীর,কিন্তু আর নয় এতদিন নানাভাবে চেষ্টা করেও মেঘলার সাথে যোগাযোগ করতে পারো নি তানভীর,মেঘলার নাম্বারটাও বন্ধ আর তার সাথে মেঘলারা যে বাসায় থাকতো সেটাও খালি ছিল,এতদিন পর আজ মেঘলাকে নিজের ভার্সিটিতে দেখে খুব অবাক হয় তানভীর,তার সাথে খুশিও হয় কালই তানভীর মেঘলার সব ভুল বোঝাবুঝি দূর করে দিবে,,ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে তানভীর’!!তানভীর চোখ বন্ধ করে ভাবলো সেদিনের কথা যেদিন তার সাথে মেঘলার ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল…

“সেদিন ছিল মেঘলার বার্থডে,,সেই বার্থডের সারপ্রাইজ হিসেবে তানভীর সুন্দর একটা আন্টি কিনেছিল মেঘলার জন্য সে চেয়েছিল তার যত ফিলিংস আছে মেঘলাকে নিয়ে সব বলে দিবে সে মেঘলাকে!’ সাথে আন্টি পরিয়ে নতুন করে প্রপোজ করার ইচ্ছে ছিল তার,কিন্তু আর ভাবলো না তানভীর চোখ খুলে ফেললো সে’!!মুহুর্তের মধ্যে চোখের সামনে সবকিছু এলেমেলো হয়ে গেল কিন্তু তানভীর কিছুই করতে পারে নি,,অবশ্য করতে পারে নি বললে ভুল হবে মেঘলা তাকে কিছু করার সুযোগই দেয় নি…

“দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তানভীর,,প্রিয় মানুষকে ছেড়ে থাকা যে কতটা কষ্টকর সেটা তানভীর হারে হারে টের পেয়েছে এতদিন,,

“আর কিছু না ভেবে চলে যায় তানভীর ওয়াশরুমে,

.
.
.

“আজকের মতো কোনোরকম ক্লাস করে পুরো ভার্সিটি ঘুরে বাড়ি ফিরবে মেঘলা,দিয়া আর শুভ্রতা!’

“সারাদিন শুভ্রতার মেঘলা আর দিয়ার মাঝখানে ছিল!’সকালের কান্ড এখনও ভুলতে পারে নি শুভ্রতা!’

“এমন সময় হুট করে কোথা একটা বল এসে পরলো দিয়ার গায়ের উপর’!!ঘটনাটা আচমকা হয়ে যাওয়াতে তিনজনই পুরো ঘাবড়ে গিয়েছিল,,পরক্ষণেই নিজেদের সামলে নিলো তিনজন!’এমন সময় ওদের দিকে দৌড়ে আসলো অনিক’!!দিয়ার হাতে বল দেখে বলে উঠল সেঃ

—ওই “এলইডি বাল্ব” বলটা দে…

—“তার মানে বলটা তুই মেরেছিস…

—“হুম আমি মারছি এখন তাড়াতাড়ি দে…

—“দিবো না করবি কি তুই..?

—“মজা করিস না বল না পেলে হেরে যাবো আমরা..?

—“আমি চাই তোরা হেরে যাস বল তো দিবো না…

—“এর ফল কিন্তু ভালো হবে না “এলইডি বাল্ব”..

—“তোর যা করার করে নে “ফাটা টেনিস বল”….

“বলেই একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যায় দিয়া!’আর ওর পিছন পিছন মেঘলা শুভ্রতা…

“এদিকে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে অনিক’!!দিয়া তাকে কি নাম দিলো সেটা ভাবতে ভাবতেই দিয়া চলে গেল’!!এমন সময় অনিকের ফ্রেন্ড রিমন বলে উঠলঃ

—“তুই বল আনতে আনতে ওরা জিতে গেল,তোর জন্য হেরে গেলাম আমরা…

—“আমার জন্য নয় ওই “এলইডি বাল্ব” এর জন্য,
আমাদের হারিয়ে দিল না কাল ওকে মজা দেখাবো একবার আসুক ভার্সিটি….

“বলেই রাগে হন হন করে চলে গেল অনিক!’

“ভার্সিটির গেট পর্যন্ত আসতেই হাসতে হাসতে শেষ মেঘলা,শুভ্রতা আর দিয়া’!!তারপর তিনজনই হাসতে হাসতে চলে যায় যে যার বাড়ির দিকে…

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here