নীল ক্যানভাস
পর্বঃ০৮
লেখিকা:তানজিল_মীম
“রেস্টুরেন্টে বসে আছে তানভীর, দিয়া,শুভ্রতা, মেঘলা,মীরা আর আয়ুশ!’সবার মুখেই রয়েছে মিষ্টি হাসি!’পাশাপাশি একসাথে সবাই মিলে খাবার খাচ্ছে…
“তানভীরদের থেকে দুই টেবিল দুরত্বে একটা মেয়ের সাথে বসে আছে অনিক!’হাসাহাসি করছে আর খাচ্ছে!’
“এদিকে দূর থেকে এমন দৃশ্য দিয়া দেখে রাগে গা হাত পা জ্বলে যাচ্ছে তার!’
“এমনতেই সকাল থেকে অনিককে না দেখে মিস করতে ছিল সে!’কোনো কারনে আজ ভার্সিটি আসে নি অনিক!’যার কারনে দিয়ার সাথেও তার ঝগড়া হয়নি,,!’বিষয়টা খুব মিস করেছে দিয়া!’
—“তার মানে ভার্সিটি না গিয়ে এখানে বসে চান্দু হাসাহাসি করছে..?'(মনে মনে)
“দিয়া অনিকের দিকে একটা রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে আর হাতে থাকা কাটা চামচাটাকে শক্ত করে প্লেটের সাথে চেপে ধরে রেখেছে!’রাগ হচ্ছে তার ভিষন রাগ,,ইচ্ছে করছে এই কাটা চামচ দিয়েই অনিকের পেটটা ফুটো করে দিতে!’
“দিয়াকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মেঘলা বলে উঠলঃ
—“কি হলো তুই খাচ্ছিস না কেন?’
“মেঘলার ডাকে নিজের ভাবনা থেকে বের হলো দিয়া!’আমতাআমতা করে বললো সেঃ
—“হুম হ্যাঁ খাচ্ছি তো…
“বলেই দিয়া খাওয়া শুরু করে সাথে কিছুক্ষন পর পর অনিকের দিকে তাকায় সে!’
||
“এদিকে….
“অনিকের কোনো হুস সে তার মতো দিব্বি খাচ্ছে কেউ যে তার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে তা অনিক বুঝতে পারি নি!’হঠাৎই অনিক বলে উঠল তার সামনে বসে থাকা মেয়েটিকেঃ
—“তোর হলো নাকি আজ পুরো রেস্টুরেন্ট খেয়ে ফেলার ইচ্ছে আছে…
—“দেখ ভাইয়া একদম আমার খাবারের দিকে নজর দিবা না….
—“হুম আইছে সাতচুন্নি কোথাকার, খাস তো এইটুকু কিন্তু সময় লাগাস পুরো পাঁচ ঘন্টা,তোর জন্য আজ ভার্সিটিও যেতে পারলাম না…
—“আমি কি করছি,তুমি তো প্রমিজ করেছিলে আমার জন্মদিনের দিন রেস্টুরেন্টে খাওয়াবে…
—“হুম জানি জানি…
—“জানো যখন তাহলে আবার জিজ্ঞেস করো কেন?’
—“বেশি কথা বললে তোকে রেখে চলে যাবো আমি…
—“হুম,তা পারবে নাকি আমিও বাড়ি গিয়ে আম্মুকে সব বলে দিবো..
—“কি বলবি তুই ঠাটিয়ে গাল লাল করে দিবো,,তাড়াতাড়ি খা তনু…
—“আরে বাবা খাচ্ছি তো এত তাড়া দিচ্ছো কেন,তোমার বউ কি বাড়িতে অপেক্ষা করছে নাকি …
—“বেশি বকলে কিন্তু সত্যি সত্যি ঠাটিয়ে দিবো একটা…
—“আরে ভাইয়া রাগ করছো কেন? কাউকে ভালোবাসলে আমায় বলো আমি আম্মু আব্বুকে বলে তোমাদের লাইন ক্লিয়ার করে দিবো…
—“বেশি পেকে গেছিস না তুই…
—?
—“দাঁত একদম ভেঙে দিবো…
—?
“তনুর কাজে অনিক বিরক্ত নিয়ে বললোঃ
—“তনু তাড়াতাড়ি কর…
—“উফ!’বাবা করছি তাড়াতাড়ি এমন করছো যেন বউ ছেলে মেয়ে তোমার জন্য বাড়িতে বসে কান্না কাটি করছে…
“তনুর কথা শুনে একটা রাগী লুক নিয়ে বলে উঠল অনিকঃ
—“তনু…
“সাথে সাথে তনু চুপ!”কারন সে বুঝে গেছে অনিক রেগে গেছে!’তনু হলো অনিকের ছোট বোন ক্লাস নাইনে পড়ে!’আজ ওর জন্মদিন সেই উপলক্ষে অনিক দিয়াকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছে,এর আগের বারও অনিক প্রমিজ করেছিল রেস্টুরেন্টে খাওয়াবে কিন্তু সেবার কলেজে আঁটকে যাওয়ায় খাওয়াতে পারি নি,তাই এবার আর কোনো রিস্ক নেয় নি অনিক,ভার্সিটি অফ দিয়ে বোনকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছে সে!’
___
“অন্যদিকে দিয়া চরম প্রকার রেগে গেছে ভিতর থেকে রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে তার,সে বুঝতে পারছে না এত রাগ কেন হচ্ছে তাঁর!’আর এটাও বুঝতে পারছে না সে রাগটা তার অনিকের উপর,নাকি অনিকের সামনে থাকা মেয়েটার ওপর…
.
“চুপচাপ খাবার খাচ্ছে আয়ুশ আর আঁড়চোখে বার বার দেখছে সে শুভ্রতাকে!’আজ এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে তার ভিতর শুভ্রতার ওপর!’অবশ্য আজ থেকে বললে একটু ভুল হবে কাল রাত থেকেই শুভ্রতার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো চোখে ভাসে আয়ুশের,শুভ্রতার ভয় পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরা সাথে শুভ্রতার লাজুক ফেস সবকিছুই!’হঠাৎ করেই কোনো এক ঘোরে আঁটকে গেছে সে!’আয়ুশ নীরবে চেয়ে আছে শুভ্রতার দিকে!’আজকে শুভ্রতা ওয়াইট জর্জেট থ্রি-পিচ পড়ে এসেছে, চুলগুলো খোলা,চোখে কাজল দিয়েছে ঠিকই কিন্তু চশমার কারনে অদৃশ্য সেটা!’তবে শুভ্রতা যেমন তেমনই ভালো লাগছে আয়ুশের!’
“আনমনেই মুচকি হাসলো সে!’
“অন্যদিকে শুভ্রতা খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে তার!’সকালে ঘুম থেকে দেরি করে ওঠায় সকালে নাস্তা না করেই এসেছিল সে,যার জন্য ক্ষুধাটা একটু বেশি লাগছে তাঁর!’তবে খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সেও আঁড়চোখে তাকাচ্ছে আয়ুশের দিকে!’সে বুঝতে পেরেছে আয়ুশ তার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু সে তাকালেই এমন একটা ভাব নিচ্ছে আয়ুশ যেন সে কিছুই করে নি!’শুভ্রতাও বিষয়টা নিয়ে খুব একটা ভাবলো না আর!’খাওয়ায় মনোযোগ দিল সে…
“আধ ঘন্টা পর….
“তনুর খাওয়া শেষ হতেই অনিক তনুকে নিয়ে বেরিয়ে যায়!’সে খেয়ালই করেনি যে একই রেস্টুরেন্টে দিয়াও ছিল!’কিন্তু দিয়া…
“অনিক যতক্ষণ ছিল পুরোটা সময়ই রাগী লুকিং এ তাকিয়ে ছিল সে অনিকের দিকে!’আর মনে মনে ভেবেছেঃ
—“কালকে অনিকের একদিন কি তার একদিন?’
“অবশেষে খাবার খাওয়া শেষ করে একে একে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো সবাই,মীরাও সবাইকে বাই বলে চলে যায়!’তানভীর, মেঘলা দুজনেই থ্যাংক ইউ বললো তাকে সেও মুচকি হাসলো!’তারপর চলে গেল মীরা!’
“মেঘলা দিয়াকেও একটা গাড়িতে উঠিয়ে দিল তানভীর!’মেঘলাও খুশি মনে চলে যায়!’আজ মেঘলা তানভীর দুজনেই খুব খুশি!’
“এদিকে…
“আয়ুশ দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ আর শুভ্রতা একটা গাড়ি জন্য অপেক্ষা করছে কারন তার বাড়ি উল্টোদিকে,হঠাৎই আয়ুশ বলে উঠলঃ
—“তুমি কিছু মনে না করলে আমি তোমায় পৌঁছে দেই বাড়িতে…
“আয়ুশের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো শুভ্রতা!’আয়ুশকে মানা করবে সেটাও পারছে না,আবার সাথে যাবে সেটাও ইচ্ছে করছে না তার!’শেষমেশ মনের সাথে যুদ্ধ করে মাথা নাড়ায় শুভ্রতা!’শুভ্রতার কাজে আয়ুশ মুচকি হাসে’!!যে হাসিটার কারন শুভ্রতা বুঝতে না পারলেও তানভীর ঠিক বুঝতে পেরেছে!’
“শুভ্রতা গিয়ে বসে পরলো বাইকে!’শুভ্রতা বসতেই আয়ুশ বলে উঠল তানভীরকেঃ
—“তাহলে আমি যাচ্ছি বিকেলে কথা হবে..
—“হুম যা তাড়াতাড়ি আর সাবধানে নিয়ে যাস বাকিটা পড়ে শুনবো…
“তানভীরের কথায় মাথা চুলকায় আয়ুশ!’তারপর বাইক স্ট্যার্ট দেয় সে!”
“তানভীর কিছুক্ষন ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে নিজেও বাইক স্ট্যার্ট দেয়!’আজকে অনেক ভালো লাগছে তার!’অনেক দিনের জমানো কষ্ট আজ অবসান ঘটলো তার,,ভাবতেই সস্থির নিশ্বাস ফেললো সে!’
“তারপর খুশি মনে চললো সে!’
____________
“নীরবে বাইকে করে যাচ্ছে শুভ্রতা আর আয়ুশ!’লুকিং গ্লাসে বারবার আয়ুশ দেখছে শুভ্রতাকে!’হঠাৎই আয়ুশ বলে উঠলঃ
—“আচ্ছা তুমি কি সবসময়ই চশমা পড়ো…
“শুভ্রতা শুরুতে আয়ুশের কথায় চমকে উঠলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সেঃ
—“না তেমন ব্যাপার নয়!’
—“তারমানে তুমি সবসময় চশমা পড়ো না…
—“না,আমি শুধু বাহিরে বের হলে চশমা পড়ি,আর পড়তে অথবা মেবাইল দেখলে,,
—“ওহ,তা একদিন চশমা ছাড়া ভার্সিটিতেও তো আসতে পারো…
“আয়ুশের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো শুভ্রতাঃ
—“কেনো হঠাৎই চশমা ছাড়া আসতে যাবো কেনো?’
—“না এমনি বললাম,,বাকিটা তোমার ইচ্ছে..
—“ওহ,,
—“হুম মিস চাশমিশ…
—“আচ্ছা আপনি আমায় চাশমিশ ডাকেন কেন?’
—“ভালো লাগে তাই…
“উওরে আর কিছু বলে না শুভ্রতা!’শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে আয়ুশও কিছু বললো না!’
“কিছুক্ষনের মধ্যেই আয়ুশরা পৌঁছে গেল শুভ্রতাদের বাড়ির সামনে, শুভ্রতাও বাইক থেকে নেমে আয়ুশকে থ্যাংক ইউ বলে চলে যায়!’
“আয়ুশ কিছুক্ষন শুভ্রতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে চলে যায়!’
.
.
“বাড়িতে ঢুকেই নিজের রুমে প্রবেশ করে পায়চারি করছে দিয়া রাগে গা পিওি জ্বলে যাচ্ছে তার!’দিয়া হাঁটছে আর বলছেঃ
—“টেনিস বলের বাচ্চা তোর এত বড় সাহস তুই ভার্সিটি না এসে রেস্টুরেন্টে বসে তানদুরী চিকেন খাচ্ছিস,কালকে একবার শুধু ভার্সিটিতে দেখা হোক তোকে ভালো মতো মুরগীর ঠ্যাং খাওয়ামু ওয়েট,,শালা উতচিংড়ের বাচ্চা,শালা তোর একদিন কি আমার একদিন?বান্দর হনুমান..
“আরো নানা কথা বলে গালি দিচ্ছে দিয়া অনিককে!’আর পায়চারি করছে কিছুতেই তার রাগ কমছে না…
.
রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা,দিয়ার কান্ডে সে হাসবে না কি করবে বুঝতে পারছে না,যে ছেলেটাকে দিয়া পছন্দ করে না সারাদিন ঝগড়া করে তাকে কিনা একটা মেয়ের সাথে দেখে দিয়ার এই অবস্থা,,মেঘলা রেস্টুরেন্টে বসেই দিয়ার কান্ডটাকে লক্ষ্য করেছে পরেই সামনের দিকে তাকাতেই সে দেখলো অনিক আর ওর সাথে থাকা মেয়েটাকে!’পরক্ষণেই মেঘলা বুঝতে পারলো দিয়ার চোখে মুখের রাগ থাকার কাহিনিটা…
“মেঘলা এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল দিয়ার কাছে’!!তারপর বললোঃ
—“কি হলো তুই এইভাবে পায়চারি করছিস কেন?’
—“ইয়ে না মানে কিছু না…
“বলেই একটা ড্রেস হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় দিয়া!’দিয়া যেতেই মেঘলা হাসতে হাসতে বলে উঠলঃ
—“মনু এখনো কি খাই সুজি, তাই না বললেও অনেক কিছু বুঝি…
“এরই মাঝে ফোনটা বেজে উঠল মেঘলার উপরে তানভীরের নাম দিয়ে মুচকি হাসলো সে’!!তারপর জুড়ে দিল “প্রেমআলাপ”!!আজ বহুদিন বাদে আবার সবকিছু আগের মতো হচ্ছে ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে মেঘলার….
_________________________________________
______________________
“পরেরদিন ভার্সিটিতে অনিক ঢুকতেই সুযোগ বুঝে একটা ফাঁকা রুমে টেনে নিয়ে যায় দিয়া’!!তারপর অনিকের কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বললো সেঃ
—“ফাটা টেনিস বলের বাচ্চা তোর সাহস কি করে হলো ভার্সিটি না এসে রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাওয়ার….
“আচমকা এমন এটাকের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিল না অনিক!’পরক্ষণেই দিয়াকে দেখে আরো চমকে উঠলো সে’!!অনিককে চুপ থাকতে দেখে দিয়া রাগী কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কি হলো কথা বলছিস না কেন?’
“অনিক দিয়ার কাজের আগামাথা বুঝতে না পেরে বললোঃ
—“এলইডি বাল্ব” কি হলো তোর?ভূতের ধরলো নাকি…
—“ভূতে ধরে নায় পেত্নীতে ধরছে…
“দিয়ার কথা শুনে চোখ বড় বড় বললো অনিকঃ
—“কি…?
চলবে….