#নীল_আকাশের_পরী
#এম_আর_এ_আকিব
#পর্ব_১০
শব্দসংখ্যা: ১১৫৬
রাত বারোটা। আকিব আর নিশি বসে আছে নদীর তীরে। নিশি বলল, “কেমন আছ?”
আকিব বলল, “হুম ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?”
“আমিও ভালো আছি। সেই জলপ্রপাতে যাবে? জলপ্রপাতটি অনেক সুন্দর। আমি আগে প্রায় সময় ওখানে যেতাম। ওখানে গোসল করতাম। আমার সখীরাও যেতো। এখন আর তেমন যাওয়া হয় না। তবে এই জলপ্রপাতটি শহর ছেড়ে অনেক দূরে হওয়ায় সাধারণত কোনো মানুষ ওখানে যায় না। সবাই ভয় পায় বলে যে এখানের পরীদের আসর আছে।” কথাটি বলে হাসতে লাগলো।
আকিব বলল, “আচ্ছা, তাহলে চলো।”
নিশি বলল, “আমার কাছে এসে শক্ত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরো। শক্ত করে ধরবে যেন পড়ে না যাও। আমি কিন্তু খুব দ্রুত-ই উড়বো। তুমি ভয় পেতে পারো।”
আকিব বলল, “আচ্ছা।”
আকিব নিশির কাছে এসে শক্ত করে তার গলা জড়িয়ে ধরে রইলো। আকিব খানিকটা অস্বস্তি লাগলেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো৷ নিশি ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগলো। প্রথমে ধীরে ধীরে উড়তে লাগলো। আকিবের বেশ ভালোই লাগছে এভাবে উড়তে। সে কখনো বিমানে করে কোথাও যায়নি৷ তাই বিমান চড়লে কেমন লাগে সে জানে না। কিন্তু পরীর সাথে আকাশে উড়তে তার খুব-ই ভালো লাগছে। ধীরে ধীরে নিশি আরো আরো দ্রুত বেগে উড়তে লাগলো। এবার আকিবের খানিকটা ভয় পেতে শুরু করলো। সে নিশিকে আরো শক্ত করে জড়িতে ধরে নিচের দিকে তাকালো। নিচের দিকে তাকাতেই তার ভয় যেন আরো দ্বিগুণ হয়ে গেল। সে ভূমি থেকে অনেক উপরে অবস্থান করছে। এখান থেযে ভুলক্রমে মাটিতে পড়ে গেলে তার জীবন শেষ। সে এটা ভেবে চোখ বন্ধ করে ফেলল আর নিশিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নিশি বলল, “কী ব্যাপার? ভয় পাচ্ছ না-কি?”
আকিব চোখ বন্ধ করেই বলল, “হ্যাঁ। কত উপরে উঠে গেছি।”
নিশি বলল, “আরো একটু ধীরে চলবো না-কি?”
“হুম, তাই চলো।”
এবার নিশি একটু ধীরে চলতে শুরু করলো। কিন্তু আকিব এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। নিশি বলল, “কী ব্যাপার? চোখ বন্ধ করে আছ কেন? চোখ খুলো।”
আকিব বলল, “না, ভয় করছে।”
নিশি বলল, “আরে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি নিচের দিকে তাকাও কেন? নিচের দিকে তাকাবে না তাহলেই হবে। দেখবে অনেক ভালো লাগবে৷ কী সুন্দর পরিবেশ! রাতের আকাশে এভাবে উড়ে বেড়াতে কতোই না ভালো লাগে। চোখ খুলো তো।”
আকিব এবার ধীরে ধীরে চোখ খুললো। কিন্তু এবার আর নিচের দিকে তাকালো না। নিশির মুখের দিকে তাকালো। সে নিশির একেবারে কাছে চলে এসেছে। নিশির শরীরের সাথে তার শরীর লেগে আছে৷ প্রথম কিছুটা দূরত্ব থাকলেও যখন সে নিশিকে ভয় পেয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তখন একদম শরীরের সাথস লেগে যায়। এবার সে লজ্জা পেয়ে একটু দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলো। নিশি বলল, “আরে করছ কী? পড়ে যাবে তো। যেভাবে আছ সেভাবেই চুপচাপ থাকো।”
আকিবও আর কিছু করলো না। নিশির শরীরের সাথে তার শরীর লেগে আছে৷ তার শরীরে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। সে মুগ্ধ হয়ে নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ভয় নামক জিনিসটা এখন আর কাজ করছে না। ভয়কে জয় করতে পারলে ভালো লাগা কাজ করে। আকিবের এখন খুব ভালো লাগছে। সে চাচ্ছে এভাবেই সারারাত যদি উড়ে বেড়াতে পারতো তাহলে হয়তো ভালো লাগতো। তার একটা গানের কথা মনে পড়লো। গানটি হলো, “এ পথ যদি শেষ না হতো, তবে কেমন হতো তুমি বলো না?” এই গানটি অনেকবার-ই শুনেছে সে৷ কিন্তু প্রতিবার-ই মজা করে শুনেছে৷ কখনো এই গানটি কথাগুলো উপলব্ধি করতে পারেনি। আজ নিশির সাথে পথ চলে এতো ভালো লাগছে তা বুঝানোর মতো নয়।
কিন্তু সময় আপেক্ষিক। সুখের সময় দ্রুত-ই চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশি তার বেগ কমিয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলো। আকিব বলল, “কী ব্যাপার? নেমে যাচ্ছ না-কি?”
নিশি বলল, “হুম, চলে এসেছি তো।”
আকিব বলল, “এত তাড়াতাড়ি?”
নিশি বলল, “হুম, কত বেগে আসলাম দেখলে না?”
“হুম।”
মাটিতে নামার পর আকিব দেখলো পাশেই একটা অসম্ভব সুন্দর জলপ্রপাত। নিশি যেমন বলেছিল ঠিক তেমন৷ এমন সুন্দর জলপ্রপাত সে এর আগে কখনো দেখেনি। চাঁদের আলো এসে জলপ্রপাতের পানিতে পড়ছে। আহ! কী সুন্দর দৃশ্য! জলপ্রপাতের চারদিকে নানারকম গাছগাছালি। এগুলো অনেকটার নামই আকিবের অজানা। কয়েকটি ফুলের গাছও রয়েছে৷ ফুলের গাছ থেকে কী সুন্দর মিষ্টি ঘ্রাণ তার নাকে এসে লাগলো। এই ফুলগুলোও তার অচেনা। পৃথিবীতে এমন ফুল সে কখনো দেখেনি। সে নিশিকে বলল, “আচ্ছা, এটা কি আদৌও পৃথিবী? না কি তোমাদের পরীস্থান?”
নিশি হেসে বলল, “আরে, এটা পৃথিবী। এ জায়গায় সাধারণত কোনো মানুষ আসে না তাই এ ফুলগুলো তোমার অচেনা মনে হচ্ছে। আর আমাদের পরীস্থানও সুন্দর। কিন্তু তারপরেও আমার প্রিয় জায়গা হলো এই জলপ্রপাতটি। আমি এবং আমার সখীরা সময় পেলেই এখানে আসি।”
আকিব বলল, “সত্যিই অপূর্ব সৃষ্টি। এত সুন্দর জায়গা ইতোপূর্বে আমি আর দেখিনি।”
নিশি বলল, “চলো, জলপ্রপাতের জলে পা ভিজিয়ে বসে থাকি।”
আকিব বলল, “তুমি বসো, আর আমি তোমার কোলের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে থাকি।”
নিশি হেসে বলল, “বাব্বাহ! কত রোমান্টিক! দেখে তো মনে হয় না।”
আকিব হেসে বলল, “দেখে মনে হবে কেন? দেখে কি বুঝা যায়? আর আমি একটু লাজুক তো তাই মনে অনেক কিছু চাইলেও বলতে পারি না। ওগুলো বললে বুঝতে আমি কেমন রোমান্টিক।”
নিশি বলল, “ওমা! কী বলো? তোমার মন কী কী চায় শুনি?”
আকিব হেসে বলল, “আপাতত কিছু না। পরে বলবো। এখন শুধু তোমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকি।”
নিশি বলল, “আচ্ছা।”
নিশি জলপ্রপাতের জলে পা দিয়ে বসে আছে আর আকিব তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আকিব বলল, “আমার মাথায় একটি হাত বুলিয়ে দাও।”
নিশি বলল, “এত আবদার তোমার?”
আকিব বলল, “তা-ও তো কম। আরো অনেক আবদার বাকি।”
“বলো না কী কী? শুনি একটু?”
“পরে শুনবে। এখন যে আবদার রাখলাম তা পূরণ করো।”
“আচ্ছা করছি।”
নিশি আকিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আকুব বিমুগ্ধ হয়ে নিশির দিকে তাকাচ্ছে। নিশির মুখ থেকে যেন চাঁদের আলো চারদিজে ছড়াচ্ছে। পূর্ণিমার চাঁদের থেকেও নিশির রূপ অনেক বেশি সুন্দর। নিশির রূপের বর্ণনা এর আগেও একবার দিয়েছিলাম। তাই এখন আর দিলাম না।
নিশি বলল, “তোমার আবদারগুলো তো আমি পূরণ করলাম।”
“হুম, করছো।”
“আমার একটা আবদার পূরণ করবে?”
“কী আবদার বলো?”
“আমায় নিয়ে একটা কবিতা লিখবে?”
আকিব হেসে বলল, “তুমি নিজেই একটা কবিতা৷ আর কবিতা কেন?”
নিশি বলল, “কোনো বাহানা চলবে না। বলতে হবে।”
“আমি কবিতা লিখতে পারি না। আমি কি কবি না-কি?”
“এমন সুন্দরী মেয়ের কোলে মাথা রাখলে মুনি-ঋষিরাও কবিতা লিখতে পারতো। তুমি পারবে না কেন?”
আকিব বলল, “তুমি কি সুন্দরী না-কি?”
নিশি বলল, “তো আমি কি কুৎসিত না-কি?”
“না, নিজেই দেখি নিজেকে সুন্দরী বলছ।”
“ভালোবাসার মানুষটি তো সবসময় সুন্দর হয়। আমি সেই সুন্দরের কথা বলেছি। ভালোবাসার মানুষটির কাছে একটা কালো মেয়েও কিন্তু খুবই সুন্দর।”
“তা ঠিক বলেছ।”
“তাহলে একটা কবিতা বলো।”
“ভাবতে দাও।”
“আচ্ছা।”
আকিব কিছুক্ষণ নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এ মুখের দিকে তাকালেই সে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। সে কবিতা লেখার জন্য নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল কিন্তু এখন নিজেকেই কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছে।
আকিবকে অন্যমনস্ক দেখে নিশি বলল, “কী? কবিতা বলো না।”
নিশির ডাকে তার হুশ ফিরলো। বলল, “দাঁড়াও, বলছি।”
তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“তোমার ওই মায়াবী বদন,
যেন পূর্ণিমা চাঁদের মতোন।
আমি হারিয়ে ফেলি আমাকে,
মনটা তোমার মাঝে পড়ে থাকে।
বলতে চাই আমি খুব করে,
ঠাঁই দিয়ো তোমার মনের ঘরে।
যদি কভু দাও তাড়িয়ে,
চলে যাও কষ্ট দিয়ে,
দুঃখ বুঝবে কে বলো?
তাই সদা আমার সঙ্গে চলো।
তোমার মনের কোণে,
আমার ভালোবাসার গুণে
করে নেবো আমি ঠাঁই,
জন্ম-জন্মান্তরে আমি যেন
শুধু তোমাকে-ই পাই।
ওগো প্রিয়তমা,
ভালোবাসি তোমায় যুগ যুগ ধরে,
কাছে চাই তোমায় খুব আপন করে।
তোমার ভালোবাসার টানে,
কত পা’গল আমি-
শুধু এ মন জানে।
জোছনা গায়ে মেখে,
ভালোবেসে কাছে রেখে,
দিয়ো এক বুক ভালোবাসা।
এ মিনতি শুধু তোমার তরে,
রাখবে জানি তুমি-
এ মনের আশা।
চলবে…
[কবিতাটি আমার লিখা।]